অমি রহমান পিয়ালের জন্য কিছু করতে না পারলেও একটা সংক্ষিপ্ত পোষ্ট দিতে পারি জন্মযুদ্ধকে নিয়ে

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০১/২০০৭ - ৩:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

1971এ পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর নৃশংসতার কথা বর্ণনার ভাষাগত শৈলী অপ্রয়োজনীয়। বিষয়টা এতবেশী অমানবিক যে সাধারন মানুষ খুব সাধারন ভাবেই তাদের নৃশংসতা উপলব্ধি করতে পারবে। খুব বেশী ভাষাগত শৈলী নিসপ্রয়োজন।
1971 এ 8ই এপ্রিল, ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড এ প্রত্যক্ষদর্শিদের বর্ণনায় একটা প্রতিবেদন ছাপানো হয়। 15 জন শরনার্থি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ছাপানো এই প্রতিবেদনের নৃশংসতা বা বর্বরতার কোনো তুলনা আসলে নেই।
1945 সালে যখন 2য় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয় সামগ্রিক অমানবিকতায় মুঢ় বিশ্ব জেনেভা কনভেশনে যুদ্ধাপরাধের একটা নীতিমালা নির্দিষ্ট করে দেয়। সেই নীতিমালা অনুয়ায়ী বেসামরিক এবং শস্ত্রহীন মানুষের উপর সৈন্যবাহিনীর পরিকল্পিত হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলা হয় বলা হয় বেসামরিক স্থাপনায় লুটপাট কিংবা কোনো রকম ক্ষতিসাধন যুদ্ধাপরাধ। মানবসেবামূলক যেকোনো প্রতিষ্ঠান যুদ্ধের আওটামুক্ত, কোনো মেডিক্যাল ভ্যান সেটা যদি যুদ্ধক্ষেত্রেও অবস্থান করে সেখানেও হামলা চালানো যাবে না। ত্রানবাহী কোনো গাড়িতেও হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধ বিবেচিত হবে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তারাসহ যারা যুদ্ধে অংশগ্রহন করছে না প্রত্যক্ষভাবে তাদের উপরে গুলি চালানোও যুদ্ধাপরাধ।
চট্রগ্রাম থেকে পালানো একজন প্রত্যক্ষদর্শি বলেন-
পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী মানুষ শিকার করছে, তারা মানুষকে জমায়েত করে তাদের উপর গুলি চালাচ্ছে নির্বিচারে, কোনো রকম জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই সেখানে। এইসময়ে প্রাণভয়ে দৌড়ে পালানো মানুষের উপরে পেছন থেকে গুলি করে তাদের কুকুরের মতো হত্যা করা হচ্ছে।যদি সৈন্যবাহীনি রাস্তায় কোনো মানুষ খুঁজে না পায় গুলি চালানোর মতো তারা বসতভিটার ভেতরে মর্টারের হামলা চালাচ্ছে। এইসব আক্রান্তবাসার অধিবাসীরা মূলত শিশু ও মহিলা। শতশত শিশু মৃতু্যবরণ করেছে তাদের নৃশংশ হামলায়।
অবশ্য পাকিস্তান রেডিও নিয়মিত সংবাদ প্রচার করছিলো পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পূর্ন স্বাভাবিক, কিছু পরিমান দুস্কৃতিকারী দেশের শান্তি শৃংখলা নষ্ট করছিলো, তাদের দমন করার জন্য দেশপ্রেমিক জনতা এবং পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে। কারা এই দেশপ্রেমিক জনগন? যখন পাখি শিকারের মতো হাস্যে লাস্যে মানুষ হত্যাযজ্ঞ চলছে দেশে তখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কর্মদক্ষতা ও গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে গলায় রক্ততুলে ফেলা মানুষের দলে কারা ছিলো? কারা পাকিস্তানী সেনাবাহীনির পাশাপাশি বিভিন্ন হিন্দুঅধু্যষিত এলাকায় অগি্নসংযোগ ও লুটপাট করেছিলো? এসব মানুষের ভেতরে মুসলীম লীগের কিছু নেতা থাকলেও আদর্শগত ভাবে পাকিস্তানী সেনাবাহীনর কর্মকান্ডের সম্পূর্ন সমর্থন করেছে নেজামে ইসলামী ও জামাতে ইসলামী নামক দল দুটো। এমন কি গঠিত রাজাকার বাহিনীর অধিকাংশ কর্মিই এই 2টো দল থেকে এসেছে। তাদের নেতারা যারা ইসলামী ছাত্র সংঘ করতো এবং যারা মূল দলের তাদের নেতৃস্থানীয়রা পেপারে পত্রিকায় যে বিবৃতি দিয়েছে এবং যেভাবে গভর্ণর হাউসে গিয়ে তৎকালীন প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে তার ছবি ও প্রমান আছে এখনও। অমি রহমান পিয়ালের ব্লগে পাওয়া যাবে ঘাতক দালালের দিনলিপি অংশে এদের বিস্তারিত কর্মকান্ডের বর্ণনা।
এই দেশপ্রেমিক জনতার বিভিন্ন দেশপ্রেমে উদ্্বুদ্ধ কর্মকান্ডের একটা ছিলো ডান্ডি পাট কলের শ্রমিকদের লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা। অবশ্য তাদের এই স্বদেশপ্রেমের নৃশংসতা তাদের এবং তাদের উত্তর প্রজন্মের কাউকেই স্পর্শ করে না। যুদ্ধ দেখে নি এমন মানুষের সংখ্যাই না কি বেশী। যখন শেরপুরের কোনো এলাকায় গর্তে মানুষ রেখে নির্যাতন করছে কামরুজ্জামান যিনি আবার বর্তমানের জামাটে ইসলামীর নেতা তখনও পাকিস্তান রেডিও খবর দিয়ে যাচ্ছে দেশপ্রেমিক জনতা আমাদের সাথেই আছে।
ডান্ডি পাট কলের সেই ম্যানেজার বর্ণনা শোনা যাক।
কতিপয় উশৃংখল মানুষ সহসা প্রবেশ করলো আমাদের পাট কলে, তাদের ভেতরে কোনো সৈন্য ছিলো না, তারা লোহার রড দিয়ে নির্বিচারে শ্রমিকদের উপর হামলা করলো। এবং কিছুক্ষনের ভেতরে সব মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আমি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর কোম্পানীর গাড়িতে করে যখন রওনা দিলাম মাঝপথে আমার গাড়ী জবরদখল করা হলো। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে 7 মাইল হাঁটার পর একটা গ্রাম পেলাম, সেখানে ছিলাম এক সপ্তাহ, এর পর 45 মাইল পাড়ি দিয়ে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে কোলকাতা এলাম। এবং কোলকাতা থেকেই 15 জনের এই শরনার্থি দলটি ব্রিটেনে রওনা হয়।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করার সময় এই ম্যানেজার জানান, জাতিসংহের অতিসত্ত্বর যুদ্ধপীড়িত এলাকায় ত্রান সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন। জাতিসংহের পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শকদের পাঠানো নিসপ্রয়োজন যদি সঠিক সময়ে সাহায্য না পাঠানো হয় তবে পরিপাবপরিকল্পনা সেবা গ্রহন করার মতো কোনো পরিবার অবশিষ্ট থাকবে না এই যুদ্ধপীড়িত এলাকায়।

একই সময়ে করাচীতে জমায়েত হয় যুদ্ধবিদ্ধস্ত ঢাকা ছেড়ে প্রাণভয়ে চলে যাওয়া আমেরিকান নাগরিকদের সাথে আলাপ হয় ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের এক সাংবাদিকের। তাদের ভাষ্যমতে ঢাকায় পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু নিধন চলছে।তাদের সন্দেহ স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পেছনে এদের ভুমিকাই প্রধান, রমনা কালীবাড়ি, বর্তমান সোহওয়ার্দি উদ্যানের পাশে হিন্দুদের ছোটো 2টা গ্রাম ছিলো, সেখানের অধিকাংশ মানুষদের হত্যা করা হয় এবং সেখানের সবগুলো বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ইতঃস্তত ছড়ানো মৃতদেহ এবং রক্ত ছড়িয়ে আছে গ্রামজুড়ে। লুটপাটের ঘটনা ঘটালো কারা তবে। এই যে শাঁখারী বাজারে হত্যাযজ্ঞ চললো এবং লুটপাট ঘটলো সেখানে কাজটা করলো কারা? রমনা কালীবাড়ীর বাসায় অগি্নসংযোগ এটা কিংবা লুটপাট কিংবা হাসপাতালে হামলা কিংবা শিশু হত্যা এসব যুদ্ধপরাধের বিচার চাওয়ার সময় হবে কবে?
যারা এদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে তাদের বিচারের জন্য গৃহীত ঘতক দালাল নির্মূল আইনের বাস্তবায়ন হবে কবে?আমাদের রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যাবস্থা হবে কবে? অনেক অনেক প্রশ্ন তোলা যায়। এসব প্রশ্নের উত্তর আসলে নেই আমাদের কাছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো মতিউর রহমান, আল মুজাহিদি,এরা কোনো ভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন করার অধিকার রাখে না। কোনো চিহি্নত রাজাকার এবং ঘাতক দালাল বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহনের অনুমতি প্রাপ্ত না। এর পরও নির্বাচন কমিশনের ভূত এদের নির্বাচন মনোনয়ন বাতিল করলো না। এরশাদের মতো একজন দূর্ণিতিবাজের নির্বাচনরে মনোনয়ন বাতিল ঘোষনা করে যে সততার পরিচয় রেখেছে নির্বাচন কমিশন সে রকম সততা নিয়ে যদি সাংবিধানিক ভাবেই পদক্ষেপ গ্রহন করতো নির্বাচন কমিশন তাহলে অনেক রাজাকার ও ঘাতক দালালা নির্বাচনে অংশগ্রহনের অনুমতি পেতো না। তবে সর্ষের ভেতরে যে ভুত থাকে তাকে তাড়ানো সম্ভব না। বি এন পির প্রাণপুরুষ জিয়াউর রহমান যেভাবে পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে ঘাতকদালালদের বাংলাদেশের রাজনীতিটে এনছেন এবং অবৈধ্য ঘোষিত সাংবিধানিক সংশোধন করে তাদের রাজনীতিতে পূনর্বাসনের প্রক্রিয়াটা বাতিল ঘোষনা করার মতো সাহসিকতার অভাবেই আমারা জাতিগত লজ্জায় আক্রান্ত হয়ে গেলাম। আমরা পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, সবাই ভাবছে আমারা সর্বান্ত করণে সমর্থন করছি তাদের, দেশপ্রেমের নজির রাখার এ সুযোগ আমরা ছাড়বো না কোনো ভাবেই, আমাদের পূর্বপ্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি, আমরাও ক্রমশ মধ্যবয়সে রওনা দিচ্ছি। উত্তরপ্রজন্মের কাছে জবাবদিহিতার দায়টা তাদের না থাকলেও আমাদের আছে। আমাদের আসলে সম্মিলিত সংঘ তৈরি করে একটা ইতিহাস প্রকল্প গ্রহন করা উচিত। অমি রহমান পিয়াল জন্মযুদ্ধ ওয়েব সাইট নিয়ে যে কাজটা করছে তার প্রতি সর্বাত্বক সমর্থন আছে আমার। অন্তত সংকলিত ইতিহাসের একটা ভার্চুয়াল ঠিকানা থাকলো আমাদের কাছে। যেসব মানুষ মাঠ পর্যায়ে ইতিহাস সংগ্রহের কাজ করছেন টাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কোনো সুযোগ আমরা পাই না, আমাদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারনে এই সম্মানজনক কাজ করেও তারা দুর্বৃত্তের মতো লুকিয়ে ঘুরে বেড়ান।আর বুক ফুলিয়ে রাস্তা দিয়ে সরকারী গাড়ি হাকিয়ে যায় চিহি্নত রাজাকাররা। এই বাস্তবতা বদলাবে একদিন এমন প্রত্যাশায় জন্মযুদ্ধের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করে এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী পন্থি মানুষের লেখা সমাপ্ত হলো।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।