ধন্য মিলিটারি জান্তা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৩/২০০৭ - ৩:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে বাংলাদেশ। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এমন ধারনা মানুষের, তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামলে মানুষ আইনানুগ হয়ে উঠে এটার কারণ কোনো অবস্থাতেই সেনাবাহিনীর ন্যায়নিষ্ঠতা নয় বরং মূলতঃ আতঙ্ক। দেশের অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় 58 থেকে 71, 75 থেকে 90 এবং বর্তমানের 2007 এর ভেতরে বাংলাদেশে যারা জন্ম নিয়েছে এবং যারা মৃতু্যবরণ করেছে তাদের সবার জীবনেই ছাপ রেখে গেছে জলপাই রং।

সেনাবাহিনী স্বভাবে নেকড়ে,যুথবদ্ধ শৃঙ্খলাপরায়ন ঘাতক। শুধুমাত্র 71এর যুদ্ধাকালীন সময়ে ছাড়া অন্য কোনো সময়ই সেনাবাহিনীকে সাধারণ নাগরিক তাদের অন্তর্ভূক্ত ভাবতে পারে নি। সেনাবাহিনী দেশের নাগরিকবিচ্ছিন্ণ একটা সম্প্রদায় যাদের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা আছে, যারা ব্যক্তিগত অসূয়া যুথবদ্ধ অসূয়ায় রূপান্তরিত হয়,এবং সেই প্রতিশোধপরায়নতা কিংবা ক্ষমতার চর্চায় স্বভাবতই বিচ্ছিন্ন দৈনন্দিন মানুষ আক্রান্ত হয়।
বর্তমানে সেনাবাহিনীর ক্ষমতার চর্চা চলছে দেশে। এটাই আমাকে আতংকিত করে বেশীর ভাগ সময়। তাদের নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতনের প্রতিবাদ হচ্ছে না, কখনও হয়ও না, তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের ব্যবস্থা নেই, সুযোগ নেই, নির্যাতিত মানুষ প্রতিকার চেয়ে সাধারণ আদালতে মামলা করতে পারবে না, কোনো ভাবেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব না। যদি তাদের আইনের আওতায় আনতে হয় তবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর সেই কাজ করতে হবে।

সেনাবাহিনীর জন্য সেনাবাহিনীর আদালতে মামলা করা যায়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আনীত মামলা সামরিক আদালতে নিস্পন্ন হয়। শেয়ালের কাছে মুর্গি বর্গা দেওয়ার মতোই বিষয়। যদি আমজনতা কোন এক কারণে তাদের উপরের নির্যাতনের প্রতিকার চায় তাহলে সেটা কোথায় গিয়ে নিবে?

প্রায় নিয়মিত দৃশ্য হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্যাতন দৃশ্য। বাংলাদেশের রাস্তায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কাণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের হেনেস্থার প্রতিকার নেই কোনো। অবশ্যই রাস্তা ঘাটে হাঁটতে গেলে অনেক রকম অন্যায় হয়ে যায়, রাস্তায় থুতু ফেলানো, কলার ছিলকা ফেলানোর মতো অপরাধও হয়, অজ্ঞাতসারে ঘটে যাওয়া কিংবা উদাসীনতায় ঘটে যাওয়া এসব অপরাধের ক্ষইতপুরণ কোনো ভাবেই চৌরাস্তায় কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা হতে পারে না।

মোটর সাইকেলে চড়লে হেলমেট পড়ার বিধান আছে। না পড়লে নির্ধারিত জরিমানাও আছে, তবে সেনাবাহিনী যখন এই আইন ভঙ্গের জন্য কাউকে রাস্তায় কান ধরিয়ে দাড়া করিয়ে রাখে, সেটা রীতিমতো নির্যাতন। আইনি অধিকার আছে মানুষের। মানুষের আত্মমর্যাদা নিয়ে রাস্তায় ঘোরার স্বাধীনতা আছে। মানুষের মানহানী ঘটলে সেটার প্রতিকার দেওয়ার জন্য আছে আদালত। সেখানে মানহানী মামলা করা যায়। তবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করার ব্যবস্থা নেই। তাদের দ্বারা অপমানিত হলে কোনো ভাবেই প্রতিকার পাওয়া সম্ভব না। বাংলাদেশের সবাই তো মেজর না। শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যথোপযুক্ত সম্মান না দেখালে নিম্ম পদস্থ কর্মকর্তাদের কারণ দর্শাইতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি হয়, জরিমানা হয়। তবে রাস্তায় রাস্তায় কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো যেহেতু কোনো ভাবেই ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না, তাদের যেকোনো ভাবে হেনেস্থা করলেও সেটা রীতিসিদ্ধ বিষয়।

এসব ছোটো ছোটো নির্যাতনের পর, যেহেতু বেশ দীর্ঘ পরিসরে এখন বাংলাদেশে সামরিক সহায়তায় গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে তাই সেনাবাহিনীর হাতে হেনেস্থা হওয়ার পরিমানটাও বেড়েছে। এবং তাদের নির্যাতনের সীমাও বেড়েছে অনেক।

তবে আতঙ্কিত হওয়ার বদলে বিক্ষুব্ধ হলাম সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা জানতে পেরে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবকাশ যাপনে গিয়েছিলো 5 জন বন্ধু। এক জন সদ্য জার্মানী থেকে ফিরেছে। সেখানে গিয়ে সে গায়ে উল্কিও আঁকিয়েছিলো।
এই উল্কি মনা কাড়ে এক সামরিক কর্মকর্টার। তিনিও সেখানে ঘুরছিলেন, কোনো এক অশুভ গ্রহের ফেরে উল্কির দিকে চোখ গেলো জলপাই মহাত্মনের। তিনি জিজ্ঞাসিলেন, ওহে বৎসে তোমারে কাঁধে কি অঙ্কিত হইয়াছে।
বৎসে ছুটির আমেজে ছিলো, বললো আমার শরীরে যা অঙ্কিত হইয়াছে তা কি কোনো ভাবে জরুরি অবস্থার রীতি ভঙ্গ করে?
জলপাই বাবু কিঞ্চিৎ গোস্বা করিলেন। কহিলেন, বৎস তুমি উত্তর দাও, কেনো তুমি কাঁধে উল্কি আঁকিয়েছো।
বৎস গিয়েছিলো ছুটি উপভোগ করিতে তাই সেও খানিকটা উষ্মা প্রকাশ করিয়া কহিলো, বাবু আমি আমার শরীরে যাই আঁকাই না কেনো সেটাতে আপনার ক্ষতিবৃদ্ধি হইতাছে না।
জলপাই বাবু রেগে লাল হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি কহিলেন, তবে রে পামড় তোমাকে বুঝাইবো কিভাবে কি অঙ্কিত হয়, কোথায় অঙ্কিত হয়, তিনি অবশেষে সসৈন্য হাজির হইলেন।
সমুদ্রতট থেকে 5 জন বন্ধুকে গ্রেফতার করা হইলো, জিজ্ঞাসাবাদের নিমিত্তে তাদের সেন্ট মার্টিনের সেনা ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে, যেহেতু এখন জরুরী অবস্থা বিরাজমান দেশে তাই এই তথাকথিত ভদ্রলোকেদের আগমন তেমন সারা তুলে নাই।
যথারীতি রীতিসম্মত নির্যাতনের চর্চা হলো। বাংলাদেশ এখনও আটক ব্যক্তিদের আইন সঙ্গত নির্যাতনের অধিকার রাখে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে উচ্চ কথা বললেও এখনও আদালটে হেফাজতে না নিয়ে গিয়েও মেরে তক্তা বানিয়ে দিতে পারে ধৃত ব্যাক্তিকে। কোনো রকম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনীত হবে না দোষী ব্যাক্তির বিরূদ্ধে। অবশেষে তাদের সিলিং এ ঝুলানো হলো। 5 বন্ধুকে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে পিটানো হলো পায়ের তলায়।
কর্মকর্তা রসিক মানুষ, তিনি নির্যাতনের মাঝ পর্যায়ে ফোন করিলেন, কহিলেন, পামর ছোকরা বুঝিয়াছো আমার ক্ষমতার দৌড় কতদুর। কয়ামোন লাগছে এই অবস্থা।
তিনি ক্ষমতার চর্চা করিলেন সারা দিন। অবশেষে যখন আর নিঙরানো সম্ভব না, তাদের কাছ থেকে মুচলেকা হই করানো হলো।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সেনা বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাদের বিস্তর আপ্যায়ন করে তবে কোনো রকম নির্যাতন করে নি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অক্ষত শরীরে আমরা ফিরিয়া আসি। তামরা আমাদের জব্দকৃত মলাসামান ফিরিয়া পাইয়াছি।অবশ্য উহ্য থাকে যা তা হলো, এর পরের 3 দিন তারা ছিলো চিটাগাং হাসপাতালের বেডে। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, বিধ্বস্ত 5 জন এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে নি। এখনও তারা দুর্বল শরীরে বিছানায় পড়ে আছে।
আর জব্দকৃত মালসামানের ভেতরে ছিলো, আইপড, ডিজিট্যাল ক্যামেরা, সেগুলো এত টুকরো হয়েছে যে তাদের প্রস্তুত কারকদের দিলেও এখন তারা নির্ণয় করতে পারবে না, আসলে যখন তারা তৈরি করেছিলো তখনও এত যন্ত্রাংশ ছিলো কিনা তার ভেতরে।
অবশ্য নেকড়ে জলপাই বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিকার পাওয়া না গেলে এসব অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারি হবে।
চলতেই থাকবে, অনাদি কাল পর্যন্ত এই নির্যাতন, নিবর্তনমূলক বিধি। আমরা আতঙ্কিত জীবনযাপন করতে করতে কোনো সময়ই আতঙ্কিত অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারবো না। বলা যায় না হয়তো কয়েক মাসের ভেতরেই সামরিক উর্দি খুলে ফেলে একজন জেনারেল তখত বসবেন। তাকে আপ্যায়নের জন্য এগিয়ে যাবেন আমাদের সুশীল সমাজ, বলবেন, অনেক দিন যাবত দেশের পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে সেটা আপনার শাসনে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি আমাদের অভিনন্দন গ্রহণ করুন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।