হীরক রাজার দেশে ০৪

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০৪/২০০৭ - ১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিজয় কি ভাবে আসলো এটা বিবেচ্য নয়, জয়ী হওয়াটাই সবকিছু, এমন ভাবনা সঙ্গত নয় এখন, বিজয়ের লক্ষে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে ভাববার কারণ বিদ্যমান এখন। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে এমনটাই মনে হচ্ছে আমার।
বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দিয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রনের অপচেষ্টা করেছিলো সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গতকালের হাইকোর্টের আদেশে সে নাগপাশ থেকে মুক্ত হলো বিচার বিভাগ।

জরুরী অবস্থার সময়সীমার শেষ পর্যায়ে এসে সব লেজে গোবরে করে ফেলেছে সরকার, তবে এত কিছুর পরও ব্য মইনুল হোসেনের হাসি অমলিন। নির্লজ্জ বেহায়া আইন উপদেষ্টা গত কাল সরকারের রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি এখনও জলপাই মামাদের তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছেন।

যৌথ বাহিনীর হাতে আটক রাজনৈতিকদের জামিন নিয়ে ঘটনা শুরু হয়েছিলো, হাইকোর্ট সবার জামিন মঞ্জুর করে তবে সামরিক সমর্থিত সরকারের এ বিধি পছন্দ হয় নি, তারা ২য় দফা সংশোধন করে জরুরী অবস্থা বিধিমালায় ঘোষনা দেয় জামিন প্রদানের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে, এ বিষয়টা যে আইনসম্মত নয় এটা জানা থাকলেও জলপাই ঔদ্ধত্ব্য বলেই এ বিষয়ে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয় আদালতে, সেখানে গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে জামিন দেওয়ার অধিকার আছে হাইকোর্টের, সুতরাং নির্দেশ মতো অন্য কোনে জামিন অযোগ্য মামলা না থাকলে সরকার তাদের জামিন দিতে বাধ্য,

তবে আইনের কোনো তোয়াক্কা করে না সুশীল সমাজ কিংবা এদের প্রতিনিধি হয়ে রাষ্ট্র শাসন করা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তবে সেমিনারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন এরাই। আমি আশাবাদী অন্তত এবার তারা তাদের আইনানুগত্যের প্রমাণ রাখবেন।

পাকিস্তানের অনুকরণে বি এন পি আর আওয়ামি লীগের নেত্রীকে নির্বাসন দিতে পারে সামরিক প্রশাসন এমন কথা অনেক দিন ধরেই প্রচারিত হচ্ছে, এর ভেতরে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে যান, এর পর পরই তার বিরুদ্ধে চাদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়, সেটা বানানো মামলা ছিলো বলেই হয়তো আর কিছু হয় নি, এর পর প্রাথমিক অভিযোগ পত্রে নাম না থাকা সত্বেও পল্টনের ঘটনার চুড়ান্ত অভিযোগ পত্রে আসামি হিসেবে তার নাম যুক্ত করা হয়। শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে চাইলেও তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না এমনটাই সামরিক সিদ্ধান্ত, তাই লন্ডনে বোর্ডিং পাশ দেওয়া হলো না শেখা হাসিনাকে, এর আগে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এমনটাই বলেছিলো সামরিক সরকার,
তবে শেখ হাসিনার বিদেশ গমন এবং তার দেশে ফিরে আসার বিষয়টা নিয়ে গনমাধ্যমে এত বেশী আলোচনা হলেও বোধ হয় দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ সংবাদ ছিলো না, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পেছনে এ ছাড়া অন্য কোনো যুক্তি দেখানো যাচ্ছে না এখন।
পরোয়ানা জারি করারও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে- তবে এসব নিয়মের কোনো তোয়াক্কা যে করছে না সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এটা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে-

খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে এমনটা অনেক দিন ধরেই গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না দলের কেউই- তার টেলিফোন লাইনও নাকি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে- তিনি বাসা থেকে বের হতে পারছেন না, এসব প্রচারিত হলেও সরকার দাবি করছে তারা আসলে খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখে নি-
হাইকোর্টের নির্দেশ খালেদা জিয়াকে আগামি ৫ দিনের ভেতরে আদালতে আসতে দিতে হবে- এর ভেতরে অন্তত খালেদা জিয়া বিদেশে যাচ্ছেন না-

হাইকোর্টের ভূমিকা এখন হাইকোর্ট সুন্দর ভাবে পালন করছে- এই জন্য তাদের ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য-
তবে সকাল বিকাল কুচকাওয়াজ করে মাথার ঘিলু পায়ের কড়ে আঙ্গুলে নামিয়ে ফেলা সামরিক কর্মকর্তাদের ধারণা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে ইতস্তত করবেন- নির্বোধ জলপাই মামাদের ভাবনা দেখে আমি বিস্মিত হই প্রতিবারই-
তারা নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে- কোনো এক অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার লেখা এবং এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া সামরিক বাহিনীর প্রশস্তি গীতি প্রচারিত হচ্ছে- এরশাদের শাসনামলে বন্যার পর তোমাদেরই পাশে এসে গানটি মনে পড়ে আর মইন ইউ আহমেদের নির্বুদ্ধিতা দেখে আমোদিত হই- আমি এর আগেও কয়েক বার এমন প্রশস্তি গীতি শুনেছি- নীতইকথামূলক গান- আমাদের চরিত্র ভালো করতে হবে আমরা শক্তি আমরা বল জাতীয় এই সব গানের রচয়ীতা অবধারিত ভাবে কোনো অবসর প্রাপ্ত কিংবা কর্মরত সামরিক কর্মকর্তা- তাদের নৈতিকতার মান এত কম যে তারা নিয়মিত সঙ্গীতের সাহায্যে নিজেদের কর্তব্য নির্ধারণ করতে চায়-

রাম গর্দভ দলের প্রধান পান্ডা মইন আর সহকারী পান্ডা মাসুদ - এদের সাথে সহায়কের ভূমিকায় আছে আমাদের সুশীল সমাজের অধিকাংশ মানুষ- যদি রাজনৈতিক মেরুকরণ নতুন ভাবে হয় তাহলে তাদের পাতেও ঝোল আসতে পারে- পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাও রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবেন এমনটা ভাবা কতিপয় রাজনৈতিক এবং এদের সাথে আছে অবসর প্রাপ্ত গর্দভের দল- এরাই সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে যাচ্ছেন-

সব শেয়ালের একই রা বোধ হয় বাংলাদেশে আর প্রচলিত থাকবে না- নতুন প্ড়বাদ হলো সর গর্দভের একই স্বর-

রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে বলেছেন নির্বোধ মইনুল হোসেন- পরিবার তন্ত্রের হাত থেকে রাজনীতিকে রক্ষা করা- রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচন বিধিমালা সংস্কার- রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তনের সামরিক ধারণাগুলো সামনে এনেছেন তিনি-
বলেছেন কোনো ব্যক্তিই ২ বছরের বেশী প্রধান মন্ত্রী থাকতে পারবেন না- ডইউনুস তার ঐতিহাসিক ৭ দফায় মিলে মিশে রাজ্যশাসন প্রকল্পে বলেছিলেন এমনই একটা কথা- ২ দল থেকেই প্রতিবারই প্রধান মন্ত্রী হবে- একজনের পর আরেক জন- তাদেরও শাসন কালের মেয়াদ ২ বছর ৬ মাস হওয়ার কথা- তাই আমার মনে হয় বাক্য বাজিকর মইনুল হোসেন ভুল করে এটা বলেন নি- হয়তো তার উদ্দেশ্য ছিলো ২ টার্মের বেশী প্রধান মন্ত্রী হতে পারবে না বলা- এমনটা যারা ভাবছে তাদের সাথে আমার দ্বিমত এখানে- একজন মানুষ যাকে পেট চালানোর জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে হয় তিনি উলটাপাল্টা কথা বলবেন না গনমাধ্যমের সামনে-

পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিরক্ত সামরিক বাহিনী- পারিবারিক ঐতিহ্যে রাজনীতি করবার রীতি থাকলে সেই পরিবারের সদস্যরা রাজনীতি সচেতন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করবে-- এমন রাজনৈতিক পরিবার গনতান্ত্রিক প্রায় সকল দেশেই ছড়িয়ে আছে- গনতন্ত্রের হোল সেলার যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডী পরিবার- বুশ পরিবার- এদের সাথে আরও কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবার আছে যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিচ্ছে- ইউরোপ- এশিয়া- আফ্রিকা- আমেরিকা ভৌগলিক অবস্থান আসলে গুরুত্বপূর্ন না- তবে প্রায় সকল দেশেই এমন রাজনৈতিক পরিবার পাওয়া যাবে-
ভারতের নেহেরু পরিবার- বার্মার সুচি পরিবার- ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণবতী- শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েকে- পাকিস্তানের ভুট্টো- এমন করে তালিকা করতে থাকলে দেখা যাবে যুক্তরাজ্যের অনেক রাজনৈতিক পরিবার তাদের অবদান রেখেছেন রাজনীতিতে-
পারিবারিক ঐতিহ্য বলেই রাজনীতিতে অপাংক্তেয় হয়ে যেতে হবে এমন কোনো কারণ নেই-

এর পরও শেখ পরিবার আর জিয়া পরিবারের প্রতি বিতৃষ্ণা সামরিক সরকারের- অন্য কোনো রাজনৈতিক পরিবারের প্রতি তারা বিরুপ নন-
একটু হিসাব করলে দেখা যাবে তারা যদি পরিবার তন্ত্রকে রাজনীতিতে অংশগ্রহনের প্রধান অন্তরায় বলেন তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাবানদের অধিকাংশই ঘনিষ্ট মিত্রতা এবং বৈবাহিক সম্পর্কে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত- সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক আছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর- আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সাথে কারো পারিবারিক সম্পর্ক আছে- পারিবারিক সম্পর্ক থাকলেই রাজনীতিতে অংশগ্রহন করতে পারবেন না এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সুশীল সমাজ থেকে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসতে পারে -সামরিক বাহিনী থেকে কিংবা আমলাতন্ত্র থেকে অবর গ্রহনের পর রাজনীতিতে আসতে পারেন এমন মানুষজন পাওয়া যাবে না-
এই ক্ষমতাবানরা সবাই মিত্রতা এবং বৈবাহিক সুত্রে সম্পর্কিত-

বেয়াই তালুই ক্ষমতায়নের স্থলে মাতা পূত্র- পিতা কন্যা ক্ষমতায়ন দুষনীয় কেনো হবে- মইনুল হোসেন কেনোই বা পরিবার তন্ত্র নিয়ে বিব্রত-
রাজনৈতিক সংস্কার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়- নেতাদের আত্ম সম্মানের সন্ধান করা মইনুল হোসেন যদি নেতাদের দায়িত্ব বোধের উপর ভরসা করতে চান এবং তিনি যেভাবে দাবি করেছেন যে নেতৃত্বের ব্যর্থতা স্বীকার করে তাদের পদত্যাগ করতে হবে- এমন স্বচ্ছতা তিনি দাবি করলে
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যেসব অঞ্চলে ব্যর্থতা সেসব অঞ্চলের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে তারা কি পদত্যাগ করবেন-

আইন পরিস্থিতি কিংবা আইনের অপব্যাবহার রদ করতে ব্যর্থ নির্লজ্জ মইনুল হোসেন কি নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত?

যদি ব্যর্থতার দায় নিতে হয় তবে জনগনকে অহেতুক হয়রানীর জন্য কিংবা সামরিক বাহিনীর তল্পিবাহক হয়ে উদ্ভট আচরণ করে যাওয়া বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি সপর্ষদ পদত্যাগ করবেন-
যদিও rangs ভবন ভাঙ্গার নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তবে মনে হয় না এটা বাস্তবায়িত হবে- এই ভবনে জমি কেনা অনেকেই আবার পারিবারিক ভাবে সম্পর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘনিষ্ট এসব লোকের সম্পদের ক্ষতিসাধন করবেন না তারা-
অবশ্য অন্য সব স্থাপনা ভেঙে ফেললেও ক্ষতি নেই- আইন সবার জন্য সমান এসব নীতিকথা বলার এবং প্রচার করার মতো যথেষ্ট সভ্য আমরা হয়ে উঠতে পারি নি বলেই আমি আশা করি না এসব ব্যর্থতার পরও তারা যা দাবি করছেন- সেই রকম দাবি পূরণ করতে গিয়ে তারা বিবেকের তাড়নায় পদত্যাগ করবেন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।