সৎ মানুষের খোঁজ-

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৫/২০০৭ - ১২:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের সততা আর সদগুনের বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে যিশুর জন্মেরও কয়েকশত বছর আগে যখন আলেকজান্ডার আসলো সিন্ধু উপকূলে- সে সময়ের ঐতিহাসিক বিবরণীতে লিপিবদ্ধ আছে এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত সৎ এবং সবাই স্বাধীন-

আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় এটা- আমরা সবাই স্বাধীন ছিলাম- কাউকে কোনোদিন দাসবৃত্তিতে বাধ্য করি নি- আমাদের পৌরাণিক গাঁথায় আর্যগ্রহন হওয়ার আগে আমাদের গাঁথাগুলো কেমন ছিলো- সাঁওতালী মানুষের বিশ্বাসের মতো? নাকি চাকমা আদিবাসীর বিশ্বাসের মতো- ওদের পৌরাণিক গাঁথাগুলো- ওদের সরল বিশ্বাস কিংবা ওদের সততা এখনও অক্ষুন্ন, যদিও দারিদ্র ওদের পিছু ছাড়ে নি এরপরও এইসব আদিবাসী মানুষের সারল্য আর সততার ঐতিহাসিক বাস্তবতা মিথ্যে হয়ে যায় নি-
পৈরাণিক যুগে যখন আর্যরা ক্ষমতাদখল করলো, যখন তারা বিভিন্ন রীতি চাপিয়ে দিলো আমাদের বদ্বীপের আদিবাসীদের উপরে- আমাদের শ্রমজীবি- কৃষিজীবি মানুষকে তাদের সেবাদাস বানিয়ে ফেললো এর আগে হয়তো আমাদের ভেতরে যুদ্ধবন্দী গ্রহন কিংবা দাস ব্যবসার নজির ছিলো না-

ক্ষমতাধারীরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার শ্রেনীবিভাজনের আগে সম্ভবত ধর্মীয় বিদ্বেষ ছিলো না এখানে- সনাতন ধর্মাবলম্বী শাসকেরা বিভিন্ন ভাবে সমাজকে পেশাজীবিতার ভিত্তিতে বিভাজিত করলো- টিকিধারী মোল্লারা বিধান বেঁধে দেওয়ার আগে ধর্মীয় সহিংসতার বা সাংস্কৃতিক সহিংসতার ইতিহাস রচিত হয় নি এখানে।
তবে অন্য একটা কথাও সত্য- সে সময় সাংস্কৃতিক সহিংসতা না হওয়ার অন্য একটা কারণ ছিলো এই ভূমির উর্বরতা আর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা- যাযাবর বৃত্তি গ্রহন করতে হতো না বা জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিষের যোগানের জন্য এই ভূমির অধিবাসীদের অন্য কোথাও হামলা করতে হতো না।

ইতিহাস বলছে এই পলল বদ্বীপের মানুষেরা কোমল- অন্য দেশে যুদ্ধের পর যেভাবে স্থাপনা আর চাষক্ষেত্র পুড়িয়ে দেওয়া হতো এখানের কোমলপ্রাণ যোদ্ধারা তেমন করতো না- তাই চাষারা নিজনিজ ক্ষেতে কৃষিকাজ করতো আর সৈন্যরা নিজেদের সৈন্যবৃত্তি করতো সামনের যুদ্ধক্ষেত্রে এবং কেউ কারো ক্ষতিসাধন করতো না।
সেসময় আমাদের কৃষিজীবি উর্বর পাললিক সভ্যতায় অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষই ছিলো কৃষীজীবি- কৃষক- কিংবা পশুপালক-তবে এর বাইরেও পেশাজীবি গোত্র ছিলো সম্মিলিত ভাবে যাদের শুদ্র ঘোষণা করেছিলো বামুনেরা- এরা একটা বর্ণাশ্রম তৈরি করেছিলেন তবে মধ্যযুগে ইসলামী প্রভাব প্রসারিত হওয়ার আগে এই উপমহাদেশে দাস বলে কিছু ছিলো না- দাসত্ব প্রথাও অন্য একটা আমদানীকৃত ব্যধি।
যৌনদাসী এবং গুপ্তচর বৃত্তিতে কিছু নির্বাচিত নারী নিয়োজিত থাকলেও অধিকাংশ নারীর কর্মস্থল সীমিত পরিসরেই ছিলো।
এসব পেশাজীবি মানুষের সার্বিক সততা প্রশ্নাতীত।
দারিদ্র সম্পদের অসম বন্টন আর সুবিধাভোগীদের দ্বারা কৃত্রিমভাবে নির্মিত কাঠামো- এই কাঠামোর ঐতিহাসিক বিবর্তন ঘটে নি-

শ্রমিকের ন্যয্য পারিশ্রমিক শোধের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে গেলেও শ্রমিকের ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণের কোনো পন্থা আসলে তেমনভাবে তৈরি হয় নি- কে করবে এ কাঠামো নির্মান-

যেসব মানুষের নিজস্ব চাষক্ষেত্র আছে এবং যারা নিজস্ব উদ্যোগে ক্ষুদ্র কিংবা বৃহত ব্যবসায় নিয়োজিত তারাও শ্রমজীবি- তবে এসব শ্রমের সাথে পারিশ্রমিকের যোগ নেই- আমি শুধু যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রম প্রদান করে তাদের কথাই বিবেচনা করবো- উদ্যোক্তা কিংবা নিজস্ব ক্ষেত থাকা কৃষকের ভবিষ্যত শোষণ কাঠামোটা নির্ধারিত হয় মধ্যসত্ত্বভোগী ফঁড়ে দালালদের দিয়ে- তবে শ্রমিকের শ্রমশোষণে ছোটো বড় সব উদ্যোক্তাই সমানভাবে তৎপর।

অনেক ধাঁচেরশ্রমজীবি মানুষ আছে- নির্মাণ শ্রমিক- গেরোস্থালী কাজে নিয়োজিত নারী ও শিশু- যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা আছেন- যে লোকটা পোশাকের কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করে আর যে লোকটা বিদ্যালয়ের ছাত্র ঠেঙ্গায় সবাই বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক- কেউ কেউ একটু উঁচু পদের শ্রমিক কেউ নীচিগোত্রের শ্রমিক-অন্যের জমিতে বর্গা খাটা কৃষি শ্রমিক আর অন্যের প্রতিষ্ঠানে ন্যুনতম মজুরিতে জীবন দেওয়া সৎ শ্রমিক সবাই অভাবগ্রস্ত-

এদের সবাই আলস্যজমিত কারণে দরিদ্র না- বরং এরা সবচেয়ে বেশী পরিশ্রমী- যাদের অর্থের জোগান আসে পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের অভাবগ্রস্থতার প্রথমিক কারণ হিসেবে কম পারিশ্রমিক পাওয়াটাকেই প্রধান বলে চিহ্নিত করা যায়-
পারিশ্রমিক ভিত্তিক এই অর্থপ্রবাহে পারিশ্রমিকের পরিমাণ ও গুণগত মান শ্রমিকের অর্থনৈতিক শ্রেনী নির্ধারণ করে।
তবে পারিশ্রমিকের পরিমাণ অনুসারে অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষের পারিশ্রমিকের পরিমাণ তাদের কখনই প্রাণান্ত পরিশ্রম শেষেও নিম্ন মধ্যবিত্তের চেয়ে বেশী উপরে উঠতে দেয় না।

তবে পেশাজীবিদের ভেতরে খুব সীমিত পরিমানে উচ্চ বিত্ত শ্রনী গড়ে ওঠার কারণ বা ইতিহাসটা কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?- সবাই একই পরিবেশে একই সীমিত সুযোগে শুরু করলেও কেউ কেউ বিশিষ্ঠ হয়ে ওঠা বা নেতা বা প্রভাবশালী হয়ে উঠার বিষয়টা কিভাবে নির্ধারণ করে পরিস্থিতি- এখানে হয়তো ব্যক্তিগত ক্যারিশমার বিষয়টা চলে আসে- তবে পূর্বে যেমনটা সত্য ছিলো- একদা এই বদ্বিপের মানুষ নিজ উদ্যোগে নিজের ভাগ্য বদলাতে পারতো সেই ঐতিহাসিক বাস্তবতা মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে কেনো?
সারাদিন কলুর বলদের মতো জোয়ালে আটকে থাকা সৎ মানুষেরা কেনো কোনোভাবেই নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারছে না?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।