সালমান রুশদীকে অভিনন্দন

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ২২/০৬/২০০৭ - ৫:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রানীএলিজাবেথ তার জন্মদিন উপলক্ষে সালমান রুশদীকে নাইট উপাধিটে ভুষিত করেছেন- যেহেতু এই রাজটান্ত্রিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাজা এবং রানীগনের নিজস্ব তাই রাজা কিংবা রানী যদি তার নিজস্ব পছন্দ অনুসারে মানুষকে নাইটহুড দিয়ে ফেলেন সেটা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা-

তবে সালমান রুশদীর নাইটহুড নিয়ে ইসলামপন্থীদের উগ্রতা লজ্জাজনক, আবারও ফ্রিডম ওফ এক্সপ্রেশনের কথা বলটে হয়, বলতে হয় সহনশীলতার কথা- এবং লজ্জাজনক সত্য হলো সহনশীলতার মাত্রায় ইসলামপন্থীদের অবস্থান অনেক নীচুতে।

সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মুহাম্মদকে অবমাননার অভিযোগ- ইসলামপন্থীদের দাবী তার স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসে নবীকে অবমাননা করা হয়েছে- মনে নেই অনেক আগে যতটুকু পড়েছিলাম সেখানের কিছুই মনে রাখা সম্ভব হয় নি- জিব্রাইল এবং মুহাম্মদ পাশাপাশি বসে আছে এবং কথা বলছে এমন কিছু ছিলো হয়তো সেখানে- যাই হোক- যখন এটা পড়েছিলাম তখনও আমার দুধদাঁত খসে যায় নি- তাই ইংরেজীতে অনভিজ্ঞ আমি কোনো ভাবেই অনুধাবন করতে পারি নি এর বিরুদ্ধ আনা অভিযোগটা আসলে কি?

তবে এখন সামান্য হলেও বুঝতে পারছি, যদিও এখন স্মৃতিতে নেই উপন্যাসটা তবে স্যাটানিক ভার্সেস বলে কথিত আয়াত কিংবা বদআয়াতগুলোর বক্তব্য মনে আছে এখন-

স্যাটানিক ভার্সেস কিংবা শয়তানের ছলনায় নাজিল হওয়া ওহীগুলো সবই মক্কাকালীন সময়ে- তবে মুহাম্মদের নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ আছে এখানে- কারণ ইশ্বর এবং ইশ্বরের বিপক্ষ শক্তি শয়টানের বানীর ভেতরে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছে যে- তবে এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা।

মনে রাখতে হবে ইসলাম তার একত্ববাদীতায় বলীয়ান হয়ে উঠেছে সময়ের সাথে- এই ধারাবাহিক বিবর্তনে একত্ববাদ, একেশ্বরবাদ, একেশ্বরবাদীদের জন্য পুরস্কারসমুহ এবং শিরককারী এবং নাফরমানদের জন্য বরাদ্দ শাস্তিসমুহের বিস্তারিত বর্ণনায় পরিপূর্ণ মক্কাকালীন সূরাগুলোর মূল বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত স্যাটানিক ভার্সেসের মূল বক্তব্য- তাই মুহাম্মদ নিজেই একেশ্বরবাদ এবং শিরকের ভেতরের পার্থক্য অনুধাবন করতে সম্পূর্ন ব্যর্থ-
শয়তানের প্ররোচনায় পাওয়া ঐশী বানীতে ছিলো শিরকের আহ্বান- কাবা তখনও মুর্তিপূজারীদের আখরা- সেখানের দেবদেবীগনের ভেতরে সবার সম্মানিত এক দেবী ছিলো প্রধান পূজ্য- শয়তান ইশ্বর এবং সেই দেবীকে ভজনার নির্দেশ জারী করে ঐশী বানী এনেছিলো--

মুহাম্মদের উপলব্ধী ওহীর ঘোর কাটবার পরেই হয়েছিলো নাকি কোনো বিদধ নওমুসলিম এই যৌক্তিক বিভ্রান্তি তার সামনে উম্মোচিত করেছিলো এটা বলা এখহন কঠিন-

ঐতিহাসিক বাস্তবতা হলো মুহাম্মদ এটা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলো ইশ্বরপ্রদত্ত বানী হিসেবেই এবং পরবর্তীতে এটাকে কোরাণের আয়াতের তালিকা থাকে বাদ দেওয়া হয়-

জীবনীকারেরা বলেছেন মুহাম্মদ স্বীকার করেছেন শয়তানের প্ররোচনায় একবার বিভ্রান্ত হয়ে তিনি শয়তানের বানী এবং ইশ্বরের বানীর পার্থক্য নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েৈলেন- এবং আল্লাহ তা'লা তাকে সঠিক পথে এনেছেন-
এটার নানাবিধ ব্যাখ্যা আছে- ইবনে হিশাম আর আবু ইসহাকের লিখিত মুহাম্মদের জীবনির ভেতরে সুন্নীদের ভেতর জনপ্রিয় হলো ইবনে হিশাম বিরচিত মুহাম্মদজীবনী- যার ৮০ শটাংশই আসলে আবু ইসহাকের পান্ডুলিপির অনুকরণ এবং বাকী ২০ শতাংশ হলো কল্পনা এবং মানুষের গালগল্পে মুহাম্মদ-
তবে এই দুজনের গ্রন্থ থেকে সংকলিত করে একজন মুহাম্মদের জীবনী রচনা করেছেন- তার ব্যাখ্যাটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ-

তার বক্তব্য হলো মুহাম্মদ সব সময়ই একটা শক্তিশালী গোত্রের সাথে ঐক্য গড়তে সচেষ্ট ছিলো- মক্কায় থাকাকালীন সময়ে তার লক্ষ্য ছিলো মক্কার শক্তিশালী গোত্র এবং তার সগোত্র কুরাইশদের আনুকল্য লাভ করা- এবং সেখানের সীমিত একেশ্বরবাদী এবং মুর্তিপূজারীদের একত্রিত করা- এটার জন্যই যৌথ পূজ্যস্পদ নির্মাণ।

একই ধারাবাহিকটার মদীনায় প্রথমে মুহাম্মদের চেষ্টা ছিলো ইহূদিদের সাথে সখ্যতা তৈরী করা এবং এজন্য মুহাম্মদই যে তাওরাত বর্নিত শেষ নবী এটা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন ইহুদি ধর্মগুরুদের সাথে আলোচনা- তবে শেষ ফলাফল হলো ইহুদিরা তার নবীত্বে আপত্তি না তুললেও তার শেষ নবীত্বের প্রশ্নে আপোষ করে নি- এবং অবশেষে মদীনা থেকে ইহুদিদের বহিস্কার করা- তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- লড়াই- নির্মম হত্যা-

এর পরের লক্ষ্য ছিলো খ্রীষ্টানদের সাথে ঐক্য গঠন- তখন বিবি মরিয়ম- ইসার অলৌকীক জন্ম- তার প্রশস্তিমূলক আয়াতগুলোর জন্ম হয়েছে- এর পরে অবশ্য তারাও তাকে গ্রহন করতে অস্বীকৃত হলে মদীনার মানুষদের নিয়েই তার সম্পূর্ণ বিবর্তিত ইসলামের যাত্রা শুরু- এবং এসময়ই ইসলাম তার নিজস্ব বৈশিষ্ঠসমুহ আরও নির্দিষ্ট করে ফেলে-

যেহেতু মনে পড়ছে না এই বিষয়টাই স্যাটানিক ভার্সেসের মূল বক্তব্য কি না- তবে যদি তাই হয়ে থাকে- যদি এখানে মুহাম্মদকে মানবীয় করে নির্মান করা হয়- সেখানে প্রলুব্ধতা আছে- যেখানে রিরংসা আর লোভ আছে- তবে এটা তেমন দোষের কিছু নয়-

যদি বিষয়টা এমন হয় যে এখানে শয়তানই নায়ক তবে এমন উপন্যাসের কিংবা কাহিনীর ধারা পূর্বেও ছিলো- মাইকেল মধুসুদনের মেঘনাথ বধ - জন ব্লেকের ম্যারেজ ওফ হ্যাভেন এন্ড হেল- সবই প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বিপরীতে গিয়ে নায়ককে তৈরি করেছে- তবে এ জন্য গোঁড়া হিন্দু বা গোঁড়া খ্রিষ্টানরা কেউই তাদের মৃত্যুর দাবী তুলে নি-

গত বছরের আলোচিত ডেনিশ কার্টুন নিয়ে যে বৃথা মাতামাতি হয়েছিলো এখনও তেমন মাতামাতি হচ্ছে না সালমান রুশদীকে নিয়ে- তবে বাস্তব সত্য হলো- মৌখিক বিতর্ক, সশস্ত্র বিদ্রোহ কিংবা বৈজ্ঞানিকতা বিচার করে ধর্মের শ্রেষ্ঠত প্রমাণ করা সম্ভব না- যে যার নিজস্ব বিশ্বাসকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে- এবং এই বিশ্বাস করাটাই আদতে ভালো-

ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হয়ে ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা- তাদের সামগ্রিক আচরণ ধর্ম সম্পর্কে একটা ধারণা পৌঁছে দেয় ভিন্ন ধর্মের মানুষদের কাছে- ডেনিশ কার্টুন ছাপানোর প্রতিক্রিয়ায় যা দেখা গেছে যেটাই আসলে ডেনিশ কার্টুনে বিবৃত আছে- ব্যাঙ্গ ছিত্রগুলোতে মুহাম্মদের অনুসারীদের জঙ্গী চিহ্নিত করা হয়েছে- উন্মত্ব এবং কুমারীযোনী লোভি চিহ্নিত করা হয়েছে- তবে এর প্রতিক্রিয়ায় যা দেখা গেলো সেটা এই অনুমানকেই যথার্থ প্রমাণ করেছে-

সত্য হলো ইসলামপন্থী জঙ্গী দলের তুলনায় ইসলামী সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের কাজের জন্য পরিচিত না- কিংবা ইসলামী সাহায্য সংস্থাগুলো আসলে তেমন ভাবে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার বাইরের জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারে নি- এবং মানভিতৈষি ভুমিকায় আসলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় মুসলিমরা অনেক পেছনে পড়ে আছে- এবং ইসলামী জঙ্গীদলগুলোর কার্যকলাপ নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে-

ইসলামী সাহায্য সংস্ঠাগুলোর কর্ম তৎপরতার অভাব এবং জঙ্গী দলের সক্রিয়তা যে বক্তব্য পৌঁছে দেয় সবার কাছে সেটার জন্য আসলে মুসলিমরা বেশী ক্ষতইগ্রস্থ হচ্ছে -

প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা আন্দোলন কোনো ইসলামী জঙ্গী আন্দোলন নয়- তবে ইসলামপন্থী জঙ্গী দলগুলো এটাকে মুসলিম আর ইহুদিদের বিরুদ্ধের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত করে ফেলেছে-
ইরাকের ভেতরের গোলোযোগ যদি সম্পূর্ণটাই মার্কিন বিরোধি বিক্ষোভ হতো তাহলে বলা যেতো সেটা ইরাকের স্বাধীকার আর সার্বভৌমত্বের লড়াই তবে- দুঃখজনক হলো

এই লড়াইটা মার্কিন বিরোধী না এটা শিয়া সুন্নি বিরোধ- এটা কুর্দি- সুন্নি বোরোধ- এবং এই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আসলে কোনো পক্ষই নিজেদের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারছে না-
আফগানিস্তানের লড়াইটা এখন যেরূপ পেয়েছে সেটা স্বাধীনতার লড়াই তবে- আমার কাছে তালিবানী শাসনকে কোনোভাবেই উন্নত কোনো কিছু মনে হয় না- তালিবানী লড়াইকেও এখন সংবাদ মাধ্যমে ইসলামী জঙ্গী আন্দোলন চিহ্নিত করা হয়েছে- কারণটা সহজ- এখানেও একই ভাবে ইসলামের বিপন্নতা এবং খ্রীষ্টান বিরোধিতার উপাদান যুক্ত করা হয়েছে- যখনই কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বাতিল করবার চেষ্টা করা হবে- তখনই যেকোনো আন্দোলনই সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে সময়ের সাথে উগ্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকবে-

এখন আমরা ২৫০০ বছর আগের কোনো সময়ে নেই যেখানে আমাদের জাতিগত বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে- আমরা নিজেদের নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো এমন বাস্তবতা যেহেতু নেই -তাই উগ্র জাতীয়তাবাদ ধর্মীয় মৌলবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িকতা চর্চার সময় এটা না- এটা সহনশীলটার জায়গা- এখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ- তাই যেকোনো ধর্মাবলম্বিদের একটা ভুল এবং একটা বর্বরতা তাদের ধর্মাবলম্বি আরেকজনের কিংবা আরও অনেক জনের দুর্ভগের কারণ হয়ে উঠে-

সালমান রুশদীকে নিয়ে সদ্য জায়মান এই সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ব্যপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই এটা ভাবতে হবে সবাইকে-


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।