সামরিক সুশাসন সোনার পাথর বাটি - ০১

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৭/২০০৭ - ৬:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই দুটি বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এখন অবশেষে- ছাগল দিয়ে হাল চাষ আর সামরিক বাহিনীর সহায়তায় সুশাসন এবং দুর্নীতি দমন সম্ভব না কোনো ভাবেই- যদিও ১১ই জানুয়ারীর পরের বাস্তবতায় কেউ কেউ অনুমান করেছিলো সোনার পাথর বাটির অস্তিত্ব সম্ভব তবে জিঘাংসু এবং প্রতিহিংসাপরায়ন একদল জঙ্গী মনোভাব সম্পন্ন সংঘবদ্ধ দলের সাহায্যে আসলেই কোনো ভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।

তারা কতৃত্বপরায়ন এবং তাদের প্রতিশোধস্পৃহার কারণে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহনে নিজস্ব অনুভবকেই বেশী প্রধান্য দিয়ে থাকে- এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমাদের মইন ইউ আহমেদ এবং মাসুদ চৌধুরী সাহেব বাংলাদেশের নীরো- তাদের নীরোত্ব এবং বাংলাদেশের মানুষের নীরত্ব এবং আমাদের নীড়ের খোঁজ সব এক বিন্দুতে মিলে এখন আমাদের সামনে শুধু অন্ধকারই বয়ে নিয়ে আসছে-

নীরোর প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমার মনে হয় গ্লাডিয়েটর ছবিটার পূনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন- সেখানে দুর্বল এবং প্রতিহিংসাপরায়ন অথর্ব একজন হঠাৎ করেই রোমান সম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ছলচাতুরির মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হয়- এবং তার নিজস্ব অগ্রহনযোগ্যতা ঢাকার জন্য সে রোমের ভেতরে যুদ্ধ বয়ে নিয়ে আসে-সাধারণ জনগণের মনোরঞ্জনের জন্য তার এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা- বর্তমাণ প্রশাসনের দুর্নীতি দমন অভিযানে এমন সব হঠকারী সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই সাধারণ মানুষের বাহবা পাওয়ার এবং তাদের ভীত এবং অনুগত করে রাখবার প্রচেষ্টাজাত। তারা প্রথমেই চাইছে সাধারন মানুষ একটু অবাক হয়ে ভাবুক এটা করা সম্ভব, তারা এমন কুতুব যে তারা যেকোনো কাউকেই কল্পিত অভিযোগে আটক করতে পারে- অনেক সময়ই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বাধ্য করতে পারে মানুষকে এমন কি তারা প্রয়োজনে প্ল্যান্টেড এভিডেন্সের মাধ্যমে কাউকে আটক করতে পারে- এবং যেহেতু পরিকল্পিত অভিযোগ গঠিত হচ্ছে তাই এই মামলার সাক্ষী সবুদ সবই সামরিক বাহিনীর পক্ষ্যে যাবে এবং প্ল্যান্টেড এভিডেনসের সকল সুবিধা তারা পাবে- এই ভাবে কাউকে অপরাধী প্রমাণ করা আইনের দৃষ্টিতে কতটুকু আইনানুগ এটার সিদ্ধান্ত দিতে পারবে যারা আইনজ্ঞ তারা তবে আমাদের সম্মানিত নির্বোধ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নিশ্চিত ভাবেই সে দলে পরেন না।

নীরো এমনই এক অঘটনের সময়ে রোমের শাসনভার গ্রহন করেন- তবে তাকে সিনেট অনুমোদন দেয় নি- বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সংসদ ব্যবস্থার একটা নমুনা ছিলো রোমে- সেই রোমে সম্রাটই সকল ক্ষমতার উৎস ছিলেন না, তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য- তার সিদ্ধান্তকে অসমর্থনের জন্য এবং বিশ্লেষনের জন্য সিনেটররা ছিলো উপস্থিত- সেই সিনেটররা নীরোকে গ্রহন করতে পারে নি- তবে নীরোর উচ্চাভিলাষ ছিলো ভিন্ন রকমের- তাই সে রোম নগরীর প্রধান বাজারে এবং সিনেটরদের প্রসাদের কাছাকাছি অংশ আগুনে পুড়িয়ে দিলো- সম্রাটের খেয়াল- শিল্প রসিক এবং সংগীত রসিক এই সম্রাট অবশেষে এই ধ্বংসাবশেষ রোমের সবচেয়ে আলীশান প্রসাদ নির্মান করেন- মনিমানিক্য খচিত এই প্রাসাদে তিনি দীর্ঘ সময় থাকতে পারেন নি- বরং তাকে হত্যা করা হয় কিংবা মানসিক অবসাদগ্রস্থ এই সম্রাট নিজেই আত্মহত্যা করেন- এবং তার এই প্রাসাদ গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে আবারও পুরোনো ধাঁচের স্থাপনা তৈরি করেন তার মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সেনাপতি-

নীরোর এই পারফেকশনিষ্ট মনোভাব- শুচিবাই কিংবা এই ধরণের মানসিক অবস্থার উপজাত যত বৈকল্য সবই বর্তমানের সামরিক সমর্থিত প্রসাশনের ভেতরে আছে- তারা প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থা কে ধ্বংস করেছে- তারা অহেতুক একটা সৌধ গড়তে চাইছে সুশাসন সৌধ এবং তাদের এই সৌধ নির্মাণের পথটাও অবৈধ- অনৈতিকতায় পরিপূর্ণ-

বাজার দরের সাথে সরকারের জনসমর্থন ব্যাস্তানুপাতিক এই সত্য উপলব্ধি করবার পরে তারা সেনাবাহিনী- সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এবং এলিট র্যাব দিয়ে বাজার দর নিয়ন্ত্ড়নের চেষ্টা করছে- তবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদক এবং সাধারণ ক্রেতার মাঝে ৩ থেকে ৫টা স্তর বিদ্যমান- এই বহুস্তরের বাজার ব্যবস্থাকে যদি ২ স্তরের করা যায় তাহলে উৎপাদক এবং ক্রেতা লাভবান হবে তবে এই মাঝের যেই অংশটা তাদের জীবিকায় টান পড়বে- মজুতদার- আড়তদার দালাল এবং পাইকারের জাল থেকে উৎপাদক আর ক্রেতাকে রক্ষা করতে হলে যেমন পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত সেই যোগ্যতা আসলে নেই এই সরকারের - বিডিআর সীমিত পর্যায়ে চেষ্টা চালালেও তাদের হাতে এত মজুত অর্থ নেই যে তারা সমস্ত বাংলাদেশ থেকে এই কাঁচামাল কিংবা খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ এবং বিতরণ করতে পারে- আর এ কাজে প্রয়োজনীয় লোকবল যদি এখানেই ব্যবহার করা হয় তবে সীমান্ত প্রহরায় থাকবে কারা? আইন শৃঙখলা রক্ষা করবে কারা? বাজার ব্যবস্থা বিশেষত একটা প্রতিষ্ঠিত বাজার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাপিত করা এতটা সহজ না- আর বাংলাদেশ সরকার নিজেই নিজের পরিবহন খাতকে বেসরকারীকৃত করে নিজেদের বিতরন ব্যবস্থায় একটা দূর্বল জায়গা তৈরি করে রেখেছে- এই অবকাঠামোগত দুর্বলতাও অতিক্রম করা সম্ভব না তাদের পক্ষে রাতারাতি দাম কমানো সম্ভব না- তাদের পক্ষ্যে বাজারে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না- এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি িয়ন্ত্রন করা তাদের পক্ষ্যে সম্ভব না- আর বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন পানির মতোই- যেই মাত্র পেটে পাথর বাধার উপক্রম হবে এই দুর্নীতি দমন, এই অহেতুক সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই রক্তপাত সবই ভুলে যাবে তারা- এবং তা তারা ভুলতেও শুরু করেছে- সারের দাবীতে কৃষকের বিদ্রোহের খবর আসছে- খবর আসছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের- সাধারন মানুষের মুখে এখন বড় বড় দুর্নীতিবাজকে ধরার জন্য বাহবা নেই বরং তাদের চাল ডাল আলু পিয়াজের দাম বাড়ছে এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশিত হচ্ছে-

আমাদের আমদানি নির্ভর বাজারে আমরা গম, ডাল, ভুট্টা তেল আমদানী করি-আন্তর্জাতিক বাজারে এসবের দাম বেড়েছে- অনেক খুঁজে দেখলাম সেখানে চালের দামের কোনো কথা নেই- ভালো লাগলো আমরা আদতে সে পরিমানে চাল আমদানী করি না- এটা যদি সত্য হয় তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বাড়ছে- সয়াবীনের দাম বাড়ছে এই যুক্তিতে আমি কিভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে সমর্থন করি- চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে তাহলে সরকরের কোনো দুর্বলতা কাজ করছে-


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।