অসমাপ্ত ভালবাসা

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বুধ, ০৬/০৭/২০১১ - ১:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৯৮

প্রথম দেখা, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা। চেয়ারে পা দুলিয়ে দুলিয়ে একমনে পড়ে যাওয়া, দুই ঝুঁটি আর কানে ছোট দুল,সাথে লাজুক লাজুক কথা -এই ছিল সে।

আমার দিনশেষে একবুক সুখ নিয়ে বাড়ি ফেরা। না, তখনও অক্সফোর্ডের দেওয়া সুখের সংজ্ঞা মনকে স্পর্শ করেনি। তবু বুঝতে পেরেছিলাম, এরই নাম সুখ।

২০০১

এরপর যেন বহুকালের নির্লিপ্ততা।

কিন্তু ভালবাসা ছিল তারই গতিতে, মনের মাঝে এক-দু’রাত পরপর স্বপ্ন দেখে ফিরতো।

তারপর কোন এক ঝড়ে আবার দেখা হওয়া। ১০ দিনের বিতর্ক, ২ দিনের ধাঁধা আর সাথে নিজেকে ধাঁধায় ফেলা।

আবার দাড়ি।

২০০২

নাহ, দাড়ি না, কমা-ই হবে।হয়তো বা তার চেয়েও ছোট কিছু।

এবার যেন ছন্দ লয় সবই ঠিক আছে। ক্রিং ক্রিং ফোনটা বেজে চলে, আমি দৌড় দিয়ে ধরি। ফেব্রুয়ারির মৃদু উত্তাপ কখন জুনের অবিরাম বৃষ্টিতে পরিণত হয়, বুঝতে পারি না। এদিকে জানালার পাশে রাখা সিডি প্লেয়ারে গানের সুরও বদলে যায়। লাকী আলীর ‘কাভি এইসা লাগতা হ্যায় কে দিল মে এক রাজ হে’ হয়ে যায় হরিহারাণের ‘রোজা জানে মান”।

এক দিকভ্রান্ত দুপুরে আমার ‘পালে হাওয়া লাগা’ ভালবাসার তরী ভিড়াতে যাই একটু একটু করে। বলই-

“পাখিরা চায় আকাশের নীল,
কবিতা চায় ছন্দের মিল
আমি শুধু চাই তোমাকে।”

- “আমি তোকে ভাল বন্ধু মনে করি।”বিষাদঘন এক সময়ের আগমনবার্তা বেজে ওঠে তার কন্ঠে। আমি হতাশ চোখে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেই কিছুদিন।

না, হার মানি না। হার মানতে তখনও শিখিনি যে!
আশা বড়ই ভয়ংকর, বারেবারে আসে আর যায়। এই আশা আমায় পদার্থবিদ্যা আর রসায়নের পাতায় পাতায় ওর নাম লেখায়। জীববিজ্ঞানে লেখায় কবিতা । আর রাতভর শুধু কাঁদায়।

হয়তো তখনও পুরোপুরি ভালবাসিনি। কুঁড়ি ফুটেছে কেবল, ফুল সেতো সহস্র হস্ত দূর।
আস্তে আস্তে ভালবেসে ফেলি তার সবকিছুকে। ভাল, খারাপ, করুণা, কটাক্ষ, ভিক্ষা সবকিছুকে। শত কষ্ট বুকে নিয়ে, শত আঘাত সয়েও ভালবেসে যাই।

২০০৩

আমি দূরে দূরে থাকি। "নিজে জ্বলছি তবু আগুন ছড়াবো না", এ আমার প্রতিজ্ঞা।
হয়তো একটু হলেও বোঝে সে।
ফেব্রুয়ারি শীতের শেষে আবারও তার আগমনী বার্তা শোনায়। কষ্ট পেতে শুরু করে সে। হয়তো সেই কষ্ট থেকে বন্ধুত্বের প্রতিদানস্বরূপ একটুকরো ভালবাসা জন্ম নেয়। প্রশ্নবোধক এক ভালবাসা।

ভালবাসা তাই একমুখী ছিল ২৯ সেকেণ্ডের হাত ধরায়। তাইতো, ভালবাসা ছিল বন্দী তার বার তিনেক “আমি তোমায় ভালবাসি” বলায়। ভালবাসা ছিল আমার তীরবিদ্ধ হৃদয়ের মধ্যেখানে, সাথে তার তীরের যন্ত্রণায়। ভালবাসা ছিল তার নব্য প্রেমিকের হাতের লাঞ্ছনায়।

পরিণতি-অক্টোবরের এক বিকেলে আমরা চলে যাই। আমি হেঁটে, সে রিক্সায়।

২০০৪

শুরু হয় আমার পথ চলা, একা পথে। একা পথ বলা ঠিক না। পথের আশেপাশে সে ছিলই। দেখেও না দেখার ভান করি। ঘৃণা করতে চেষ্টা করি তাকে, নিজেকে, তার প্রতি আমার ভালবাসাকে। সে আমার মনটাকে বিবস্ত্র করে, সাথে আমাকেও।কখনও একা হাতে, কখনও সদলবলে।

অন্ধকার সীমাহীন দুর্গে তার দেয়া কষ্টগুলো অবিরত পায়চারি করে বেড়ায় । জানান দেয় তাদের উপস্থিতি। কিন্তু আমি শতভাগ চেষ্টা করেও আমার ভালবাসার একটি সুতোও খসাতে পারি না। স্মৃতি হাতড়ে তার কথাই যেন ফিরে ফিরে আসে। মনে করিয়ে দেয় তার কাছ থেকে পাওয়া প্রথম প্রেমের কথা, বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের প্রথম পাতায় ওর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা-

"ইয়ে ইশক নেহি হে আসান
বাস ইতনা সামাজ লিজিয়ে;
এক আগ কা দারিয়া হে
অর ডুবকে জানা হে"

সময় দাগ কাটা শুরু করে। সাথে বাস্তবতা। আস্তে আস্তে তার খেলার সাথী বেড়ে যায়। আমারও।
এভাবেই বহু বছর কেটে যায়। অক্টোবর তবু বছর বছর ফিরে আসে।


২০১১

হঠাৎ ফেব্রুয়ারিতে আবার দেখা হয়। কষ্টগুলো, ক্ষোভগুলো ছাপিয়ে ভালবাসার জয় হয়। হয়তো একারণেই ভালবাসা অন্ধ।

ভালবাসা তাই খুঁজে ফেরে তার হাতের স্পর্শ, গায়ের গন্ধ, কালো ঘন চুল, তার কানের দুল, কনুইয়ের কাটা দাগ।
বোধ হয়, প্রথম পরিচয়ের ১৩ বছর পর ঝুঁটি বাধা সেই মেয়েটাকে আজও তেমনি ভালবাসি, প্রচণ্ড ভালবাসি।

মাথা জুড়ে সে দাপাদাপি করে। রাতভর তারই চিন্তা ভেতরটাকে কুড়ে কুড়ে খায়, ক্ষণে ক্ষণে আনন্দ দেয়। এর সাথে যোগ হয় ফরেস্ট গাম্প আর ভালবাসার গান।

আবার দেখা করি, পৃষ্ঠাভর্তি কথা নিয়ে। কিন্তু...

একেই বলে বিধাতার পরিহাস-মুখোমুখি বসেও কিছু বলতে পারি না। তাকিয়ে থাকি তার দিকে অব্যক্ত এক যন্ত্রণায়।

শেষে এক মুখ ব্যর্থতার হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াই, হাতে এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে। বাইরে এসে হেসে হেসে নিজেকে বলি-

"বহুদিন মনে ছিল আশা
প্রাণের গভীর ক্ষুধা
পাবে তার শেষ সুধা
ধন নয় মান নয় কিছু ভালোবাসা
করেছিনু আশা।"


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

ভালোবাসার জয় হোক।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আর হইছে! কোবতের সিস্টেম দেখে বুঝেন না তাসনীম ভাই! পুরাই সিস্টেম লস একটা প্রজেক্ট। অবশ্য ভালোবাসা ব্যাপারটাই একটা সিস্টেম লস। বিটিভি'র রাত সাড়ে এগারোটার খবর দেখার পরের অনুভূতির মতো। 'সারাদিনে কী দেখলাম'— এই হিসাব মিলাইতে মিলাইতেই রাইত কাবার।

ফাহিম হাসান এর ছবি

অবশ্য ভালোবাসা ব্যাপারটাই একটা সিস্টেম লস

আপনার মুখে এই কথা ?? অ্যাঁ

নীলকান্ত এর ছবি

একই প্রশ্ন আসলেই কি সিস্টেম লস?


অলস সময়

ফাহিম হাসান এর ছবি

জটিল প্রশ্ন চিন্তিত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ফাহিম হাসান লিখেছেন:
অবশ্য ভালোবাসা ব্যাপারটাই একটা সিস্টেম লস

আপনার মুখে এই কথা ??

ক্যানো হে, আমি কি প্রেমের দেবতা জনাব কিউপিডের ইঞ্চার্জ নাকি! চিন্তিত

আচ্ছা, লুলদেবতা বলে কোনো ভ্যাকেন্ট পোস্ট নাই পুরানে? দেঁতো হাসি

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

"অবশ্য ভালোবাসা ব্যাপারটাই একটা সিস্টেম লস।" -- আসলেই কি?

তিথীডোর এর ছবি

চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

ভালোবাসা মানে আর্চিস গ্যালারী,
ভালোবাসা মানে গোপন গোপন খেলা
ভালোবাসা মানে কান্না ভেজা চোখে
ভালোবাসা মানে নীল খামেদের ভেলা।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দাড়ি না দাঁড়ি?

যাহোক... অভিনন্দন হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কীয়ের অভিনন্দন?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

বইখাতা এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।