দ্য স্টোনিং অফ সোরায়া এম

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/০৭/২০১২ - ৩:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সোরায়া মানুতচেরি। তার বাবার মুখে না শুনলে পুরো নামটা জানাই হতো না।
গ্রাম জুড়ে প্রস্তুতি চলে। অনেক কাজ। কবর খোঁড়া, পাথর সংগ্রহ করা, নিক্ষেপকারীদের অবস্থান ঠিক করে দেওয়া। গ্রামের মোল্লাও তৈরি হয়। অন্যদিকে আলি, সে তো অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত।
জাহরা নিয়ে যাচ্ছে সোরায়াকে। রাস্তায় ছেলে-বুড়ো সব বয়সিদের হাতে পাথর। পাথরে পাথরে 'ঠকাঠক' শব্দ ।
ভাঁড়ের দল এসে খেলা দেখানো শুরু করে হঠাৎ করেই। হাটের দিন বলে কথা। গ্রামের মুরুব্বিরা বিরক্ত হন। আহ, এখন না, বিকালে বা সন্ধ্যা।
সোরায়া দাঁড়িয়ে আছে জনতার সামনে।
সোরায়া প্রশ্ন করে ওঠে, "How can you do this to me?"
জনতার উত্তর,"It's god's law"
বাবা হাতে পাথর তুলে নেন। হাতের ছড়ি ফেলে নিক্ষেপ করেন মেয়ের দিকে। না, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। "আল্লাহর সায় নেই এতে, তাই পাথর লাগছে না।" বলে ওঠেন ক্রন্দনরত মহিলা।
জাহরা আবারও চেষ্টা করে সোরায়াকে বাঁচাতে। গ্রামের প্রধান ইব্রাহিমকে বারবার আকুতি জানায়। এমনকি সবার আর সোরায়ার মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। সোরায়ার জীবনের বদলে নিজের জীবন দিয়ে দিতে চায়। ছোট ছোট মেয়ে দুটোর কথা ভাবতে বলে। তবে সব প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত বৃথা হয়।

পেছনে ভাঁড়ের দল প্রস্তুত হয় খেলা দেখানোর জন্যে। বেশি সময় বাকী নেই।
প্রস্তুত সবাই পাথর হাতে, পেছনে ড্রাম বাজার শব্দ। আলি বৃদ্ধের হাত থেকে পাথর তুলে নেয়। প্রথম পাথর কপালের ডান পাশে গিয়ে লাগে। আলি থামে না, পরের পাথর নিক্ষেপ করে..."আমি কাঁদবো না, তুমিও কেঁদো না জাহরা, আমার মেয়ে দুটোকে দেখো।"
"বুলস আই"।
নাহ, সোরায়া না কেঁদে থাকতে পারে না। পিছমোড়া করে বাঁধা হাতদুটো দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করে। পারে না।
বড় ছেলে রেজা, ছোট ভাইকে পাথর নিক্ষেপ করতে বলে। ছোট ছেলে কাঁদতে কাঁদতে নিক্ষেপ করে পাথর, এরপর বড় ছেলে যোগ দেয়। এরপর হাসেম। নাহ, হাসেম পারে না, সে পাথর হাত থেকে ফেলে দেয়। ছেলেকে সাথে নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে। এরপর জনতার আদালত।
কিছুক্ষণপর সব শান্ত হয়ে যায়। আলি সামনে গিয়ে নিজের স্ত্রীকে দেখে। নাহ, সোরায়া মরেনি। সবাই আবার পাথর হাতে নেয়। এবং ...

নাহ, তবু শেষ হয় না। মৃতের সৎকার হয় না, একটু মাটি কিংবা একটু আগুন কোনটাই তার ভাগ্যে জোটে না। পড়ে থাকে নদীর পাড়ে, কুকুর আর নেকড়ের খাবার হিসেবে। গ্রামে চলে ভাঁড়েদের উৎসব।

ফ্রিদন সাহেবজাম রচিত বইয়ের ওপর নির্মিত ছবিটির পটভূমি ১৯৮৬ সাল। স্থান ইরানের এক ছোট গ্রাম কুপায়াহ। ১১৪ মিনিটের সিনেমাটি তুলে ধরেছে সে সময়ের নারী-পুরুষ বৈষম্যের সার্বিক এক চিত্র।

কাহিনী সত্যি কি মিথ্যা তা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। তবে, ঘটনা ঘটেনি বা ঘটছে না বা ঘটবে না, একথা কেউ বলতে পারবে না। দুনিয়ার প্রায় পুরোটাই আমাদের অজানা। আর জানা জিনিস আমরা নিমেষেই ভুলে যাই। এরকম ভুলে যাওয়া কাহিনীর একটিই হয়তো বা " দ্য স্টোনিং অফ সোরায়া এম"।

ছবি: 
04/16/2010 - 3:19অপরাহ্ন

মন্তব্য

হিমু এর ছবি

এহহে, সিনেমাটার কাহিনীর শেষাংশ এভাবে গড়গড়িয়ে বলে দিলে ক্যামনে কী? শুরুতে একটা স্পয়লার অ্যালার্ট যোগ করে দেন না।

শিশিরকণা এর ছবি

সিনেমার নামের মধ্যেই তো স্পয়লার।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নীলকান্ত এর ছবি

দিলাম।


অলস সময়

অমি_বন্যা এর ছবি

খুব টাচি । দেখতে হবে।

সুমাদ্রী এর ছবি

মাস কয়েক আগে ইউটিউবে ফিল্মটা দেখতে বসেছিলাম আগ্রহ নিয়ে। অর্ধেক দেখার পর আর দেখতে পারি নি। সতীদাহের আগুনে পুড়িয়ে কিংবা পাথরের আঘাতে ব্যাভিচারি স্বামীপ্রবরদের মারার বিধান রাখে নাই কেন বিধাতা ভাবতে বসি। কিছুক্ষণ পরেই মনে পড়ে, বিধাতাকে তো পুরুষ হিসেবেই জানি এবং মানি, সুতরাং পুরুষের পক্ষেই উনি সাফাই গাইবেন এটাই স্বাভাবিক।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

বন্দনা এর ছবি

দেখতে হবে লিস্টি করে রাখলাম।

নীলকান্ত এর ছবি

হাসি


অলস সময়

ম্যাক্স ইথার এর ছবি

প্রথমেই ভাবলাম ছবিটা দেখতে হবে । এরপরেই মনে হোল, এই নৃশংসতা দেখবো কি করে?

তারেক অণু এর ছবি

ইরানি চলচ্চিত্র নিয়ে আরো লিখুন।

নীলকান্ত এর ছবি

আগে দেখতে হবে ইরানি চলচ্চিত্র, বিটিভিতে আগে অনেক দেখতাম। সেগুলো নিয়ে লিখবো দেখি।


অলস সময়

শিশিরকণা এর ছবি

নেটফ্লিক্সের লিস্টে সবার আগে এই সিনেমাটা অনেক দিন ধরে ঝুলছে, দেখার সাহস করে উঠতে পারি না, মনে হয় সারা রাত দিন ধরে দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকব।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমারও একই অবস্থা মন খারাপ । দেখবো দেখবো করে বছর দেড়েক ধরে ঝুলছে, দেখা হয়না

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লেখাটা পড়তে পড়তে বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিলো। মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেকদিন ধরেই দেখবো দেখবো করেও সময় জুটছে না
এবার দেখে ফেলতে হবে
তবে লেখাটা খুব কাঠকাঠ কাহিনী বর্ণনা হয়ে গেলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

সোরায়া কে পাথর মারা হয়েছিল কেন তা অবশ্য জানা হোল না। তবে দেখতে হবে সিনেমাটি। থ্যাঙ্কস সুন্দর রিভিউর জন্যে।

সজল এর ছবি

পাথর মারার ঘটনা আজো ঘটে। আজকের প্রথম আলোতেই দেখুন মালির ঘটনা।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমরা শুধু শুধু বলি, আমরা সভ্য সময়ে বসবাস করি।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নীলকান্ত এর ছবি

সময় হয়তো সভ্য, কিন্তু আমরা না।


অলস সময়

কড়িকাঠুরে এর ছবি

লিস্ট...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার দেখা সেরা ইরানীয়ান মুভি। কিন্তু গায়ে কাটা দিয়ে ঊঠে য্খ্ন মনে হ্য় এটা একটা রিয়েল ঘ্ট্না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।