আমাদের হলজীবনের ছারপোকাযাপন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: বুধ, ১৭/০৯/২০০৮ - ৯:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সিগমন্ড ফ্রয়েডকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, বলুন তো স্বপ্ন কি? উত্তরে ফ্রয়েড বলেছিলেন, প্রাণীরা কী স্বপ্ন দেখে আমার নিজের তা জানা নেই। তবে এ প্রসঙ্গে আমার এক ছাত্রের কথা উল্লেখ করতে পারি। সেটাও এই প্রশ্নটিকে নিয়ে। প্রশ্নটি হলো: হাঁস কি স্বপ্ন দেখে? তার উত্তর: দেখে, ভুট্টো দানার স্বপ্ন। অতএব, তত্ত্বটি দাঁড়াচ্ছে, আমরা যা আকাঙ্খা করি, স্বপ্নে তার পরিস্ফুট রূপটি দেখতে পাই।

ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব’র আলোকে, আমার বেলায় ঘটনা দাঁড়ালো কী? আমি ছারপোকা আকাঙ্খা করি? মাভৈঃ মাভৈঃ।

ঘটনাটা বলিই তাহলে। সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। এমনিতেই পরীক্ষা নিয়ে জান কয়লা। ইউনি লাইফের শেষ পরীক্ষা। সারাদিন নানা তত্ত্বকথা মুখস্ত করা আর রাতে কয়েক বন্ধু মিলে ম্যাথ আর কেসের সলিউশন করতে করতে ঘুমানোর সময় পাওয়া দায়। যাও সময় পাই, এরমধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখি, একটা ছারপোকা পিলপিল পায়ে আমার বেডের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি কী করছিলাম তা মনে নাই। হঠাৎ-ই ছারপোকাটি নজরে আসে। ততক্ষণে ছারপোকাটিও আমাকে দেখে ফেলেছে। আর দেখেই ভৌঁ দৌড়। আমিও দৌড়াচ্ছি পিছু পিছু। কিন্তু কিছুতেই নাগাল পাচ্ছি না। তখনই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘাড়ের কাছে কিছু কামড়ানোর ব্যথা অনুভব করলাম। কিছুক্ষণ চুলকিয়ে লাইট জ্বালাই। বালিশের তলা থেকে বের হলো দুটো আস্ত ছারপোকা। পেটে রক্ত টুইটুম্বর করছে। আক্রমণের আভাস পেয়ে পালাতে চেষ্টা করলো। বৃথা সে চেষ্টা। রাত ২:১৫ মিনিটে অক্কা পেলো ঢাবির সূর্যসেন হলের ৫৭১ নং রুমের দুটো তরতাজা ছারপোকা।

হলজীবনে ছারপোকা নিয়ে কম ভুগতে হয়নি। হলে উঠার শুরু থেকেই ছারপোকা নিত্য সঙ্গী আমাদের। মাঝে মাঝে বিছানাপত্তর ধুয়ে, জেষ্ঠ্যে’র খররোদে শুকিয়ে, চকের গুঁড়া তোষকের নিচে ছিটিয়ে সাময়িক মুক্ত থাকা গেলেও আবার কিছুদিন পর প্রবল প্রতাপে ফিরে এসেছে তারা। কখনো কখনো আমাদের শার্টে, প্যান্টে চড়ে কোনো রাশভারী অধ্যাপকের লেকচারও শুনতে গেছে ব্যাটারা। এ বিষয়ে আমার সাবেক রুমমেটের একখানা তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনা বলি। বিভাগের রাশভারী বলে পরিচিত স্যারের ক্লাস হচ্ছে। স্যার খুব রাগী। ক্লাসে টুঁ শব্দটি করা বারণ। ক্লাস ভালো না লাগলে নিঃশব্দে রুম ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি আছে। তবে ক্লাসে থাকলে নট নড়নচড়ন। তো সেই স্যারের ক্লাসে রুমমেটের পেছনের সারিতে বসা দুই ছাত্র হাসছে। স্যার দেখলেন ব্যাপারটা। দাঁড় করালেন তাদের। তবুও তাদের হাসি যায় না। ঘটনা কী? খোঁজ করতেই জানা গেলো আমার রুমমেটটির শার্টের কলারের নিচে ছারপোকা অলস ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করছে। ঘটনা শুনে সারা ক্লাস হেসে উঠলেও আমার রুমমেটটির মুখ চুন। বেচারা ক্লাস থেকে রুমে এসেই শুরু করলো ছারপোকা নিধন অভিযান। সে যাত্রায় বেশ কিছুদিন ছারপোকার হাত থেকে বাঁচা গিয়েছিল।

রুমমেটের কথা বললাম। এবার আমার একটা ঘটনা বলি। রাত্রে বালিশের নিচে মোবাইল রেখে ঘুমানোর অভ্যাস আমার। মোবাইলে অ্যার্লাম দেয়া থাকে। সময়মতো উঠতে পারি তাতে। তো একদিন মোবাইলে কথা বলছি। এক অচিন বালিকার সাথে। বালিকায় মাঝে মাঝে ফোন দেয়। বেচারী ভালোবাসবার চায়। সে বিষয়টি ফোনে নানাভাবে বলতে চেষ্টা করে। পাত্তা দিই না। সেই বালিকা ফোন দিলে অনেকক্ষণ কথা চলে। আমার আর কারো ফোন এতো লম্বা হয়না। একবার তার সাথে ফোনে কথা হচ্ছে। হঠাৎ অনুভব করি, কানের লতিতে কি যেন কুটকুট করে কামড়াচ্ছে। বুঝতে পারি না। ফোন শেষে ফোনের স্পিকারের গর্তের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওমা ছারপোকা, ব্যাটা স্পিকারের গর্তে লুকিয়ে আছে। কামড়ানোর কাণ্ডটি যে ছারপোকার তা বুঝতে আর দেরি হয় না।

এমবিএ পরীক্ষা শেষ হলো গতকাল। আর দেড়-দু'মাস পরেই হল ছেড়ে দিতে হবে। হলজীবনের আরো অনেক স্মৃতির মাঝে ছারপোকাো থাকবে অম্লান হয়ে। ছারপোকা তুমি সত্যিই মহান, তোমাকে ভোলা দায়।


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"কামড়ানোর কাণ্ডটি যে ছারপোকার তা বুঝতে আর দেরি হয় না। "
ভাইজান কি আর কারো কান্ড মনে করছিলেন নাকি? চোখ টিপি
০২
কোনো মেয়ে ভালোবাসতে চাইলে তাকে পাত্তা না দেয়া অন্যায়।
ছেলেদেরকে পাত্তা না দেয়া অবশ্য জায়েজ আছে। হাসি
০৩
অনেকদিন পরে দেখা দিলেন। ঘটনা কি?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুশফিকা মুমু এর ছবি

চিন্তা করেন শিমুল আপু, কত বড় বুকের পাটা, মেয়েকে পাত্তা দেয়না অ্যাঁ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বুকের পাটা নারে ভাই। যারে চাই তারে পাই না, যারে পাই তারে ভুল করে পাই।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লেডিস ফার্স্ট বলে কত কিছুই তো জায়েজ করেন @ শিমুল আপা।

আসলে এমবিএ পরীক্ষার কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলাম কিছুদিন। পরীক্ষা শেষ এখন নিয়মিত দেখা যাবে আশা করি।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লেডিস ফার্স্ট বলে কোনো কথা না, পান্থ।
মেয়েদের কথাই আইন হওয়া উচিত। দেঁতো হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বস্তায় ভইরা নিয়া যান কয়েকটা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নজরুল ভাই, আপনার বাসায় ইফতার কবে? সেদিন বস্তায় করে নিয়ে যামুনে।

রায়হান আবীর এর ছবি

আমি হলে থাকতে চাই আজীবন। মন খারাপ

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

রায়হান আবীর, তাইলে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তয় আজীবন হলে থাকতে চাইলে মাঝে মাঝে পল্টি দিতে হবে। মানে হলো গিয়া, যখন যে দল ক্ষমতায়, সে দলের রাজনীতি করতে হবে।

ব্রম্মচারী এর ছবি

প্রজন্ম ফোরামের এই পোস্টটি দেখেন। http://forum.projanmo.com/t5514.html

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

পড়ে আসলাম। হিট থেরাপি'র কথা আগে জানতাম না। ছারপোকা আবার উৎপাত করলে ট্রাই করমুনে।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

লেখা পড়ে দারুন মজা পেলাম গড়াগড়ি দিয়া হাসি আহারে প্রেমটাও ঠিক মত করতে দেয়না এই ছারপোকার দল হাহাহাহা গড়াগড়ি দিয়া হাসি
তবে ছারপোকার নাম শুনেছি অনেক, এগুলি যে রক্ত খায় সেটা জানতাম না। দেখিওনি কখনও, দেখতে কেমন?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

শুনেছি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে শেখা তা নাকি কোনদিন ভোলার নয়। তাই মুমু আপনাকে আহবান জানাই আমাদের হলে এসে কয়েকরাত যাপন করে ছারপোকা কী তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিতে। তয় বলে রাখি, আমাদের হল শুধুই ছেলেদের।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমার ডিসপ্লে পিকে ফুল দেখিয়া কি আপনার আমাকে ছেলে বলিয়া মনে হইতেছে? অ্যাঁ জি না, আমি মাইয়া। মাইয়া হইয়া ছেলেদের হলে রাত্রি যাপন, বলেন কি এইসব, আস্তাগফিরুললাহ ইয়ে, মানে... রোজা রাইখা আপনার ব্রেইন উল্টায়া গেল নাকি?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এই রে, আমি মানুষটা বড়োই ভালা। চিন্তা-ভাবনা সবই করি সহজসরলভাবে। এজন্যই কইছিলাম ছারপোকা জিনিসটা কী জানতে আমার হলে এসে থাকতে। ডাইরেক্ট অভিজ্ঞতা নিতে আর কি। আর আপনে কী'না জেন্ডার এবং রোজা নিয়া গ্যান্জ্যাম বাঁধাইলেন। আপনে না একটা ডট ডট ডট ।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আবার কয় ডট ডট ডট ইয়ে, মানে...
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আহারে, ইমো কী বলে?

সবজান্তা এর ছবি

আমার ধারণা কিছুদিনের মধ্যেই পত্রিকায় খবর আসবে, " অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক আবাসিক-হল সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত"

কয়েক সপ্তাহ আগে এক বন্ধুর রূমে বসে ছিলাম। ওই রূমে আসলে সবাই আমার বন্ধু, ক্লাসমেট। তো এর মধ্যে দেখি, এক বন্ধু খুব ব্যস্ত হয়ে পুরো খাট পরিষ্কার করে, তোষক বালিশ সব তুলে ফেলছে। একটু পর দেখি খাটের নিচে কাগজ বিছিয়ে দিলো। এরপর খাটের উপর পলাশী থেকে কিনে আনা এক বোতল কেরোসিন তেল ঢেলে দিলো। তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো কাগজে।

আমি পুরোপুরি হতবাক। মূহুর্তের মধ্যেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো খাটে। মাঝেই পট-পট শব্দ শুনতে পেলাম ছারপোকার বার-বি-কিউ হওয়ার। আমার কাছে সবচেয়ে ভীতিজাগানিয়া অংশ হচ্ছে, পুরো রুমের বাদ বাকি জিনিশপত্র সব ঠিক জায়গায় রেখে, রুমের মধ্যে এইভাবে দাউদাউ ভাবে আগুন জ্বালানো। যে কোন দিন ইলেক্ট্রিসিটির লাইনে আগুন ধরে, একটা অনর্থ হতেই পারে। অবশ্য এ নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা দেখলাম না।

এই নিয়ে কথা বলতেই আমার সেই বন্ধু রোষলোচায়িত নয়নে তাকিয়ে বললো, "শালা, এক রাত আমার বেডে থাইকা দ্যাখ, একটা সেকেন্ড ঘুমাইতে পারি না এই হারামীদের জন্য"

ওর উত্তেজনা দেখে আমি মানে মানে কেটে পড়েছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চিন্তার কথা @ সবজান্তা।

-

লেখা পড়ে আরাম পেয়েছি @ পান্থ ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সবজান্তা ভাই, আমাদের হলেো এমন হয়। কিন্তু এতোটা ব্যাপকভাবে নয়। আমাদের অভিযান চলে মোমবাতি দিয়ে। তবে আপাতত একটু শান্তিতে আছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছি, পান্থ!
ছারপোকা তো তোমার কানেও ঢোকা উচিত।
(বুরা না দেখ্না, বুরা না সুন্ না, অওর বুরা না ক্যাহ্ না ...)
ততোদিন থাকো প্রিয় ক্যাম্পাসেই।

_ সাইফুল আকবর খান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।