বই নিয়ে-৭// পিপ্পলকুমারী কথা

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৮/০৭/২০১০ - ১১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার একটা বাগান ছিল। আদর্শ ভেষজ বাগান। দামুদর নদের পাড়ে। তখন শিবকালী ভট্টাচর্যের শিষ্য ছিলাম। গুটি গুটি ঘুরে বেড়াতাম বনে জঙ্গলে। শুপারি বাগান থেকে খুঁজে আনতাম পিপ্পল। গন্ধ ভাদুল। কখনোবা গুনরী শাক। আহা, টাকি মাছ দিয়ে কী স্বাদ।

বাগেরহাটে আরেকটা লতা পাওয়া যায়। বলে--চই ঝাল।পাঠার মাংসে অতুলনীয়। কচি কাঁঠালকে কি বলে জানেন?-...-গাছপাঠা। এঁচোড়ও বলা হয়।

auto
সর্পাগন্ধার খোঁজ পেয়েছিলাম মরিচালে। খুব পুরনো বাড়িটা। ছোট ছোট ইট। দোতলা। মাধবীলতা উঠে গেছে ছাদ পর্যন্ত। একজন বুড়ো লোক ঝাড় দিচ্ছিলেন মসজিদের আঙিনাজুড়ে। কথা বললেন না। আমি বসে আছি--পুকুরঘাটে। ঝোপজঙ্গলে ঢেকে আছে। ঘাট থেকে একটু দূরে ছোট্ট ভেষজটি চোখে পড়ল। শিবকালী ভট্টাচার্য বললেন, রক্তচাপের অসুখ সারতে এটার জুড়ি নেই। দেখো, ফুলটি দেখো, সাদা। কোন কোন ফুল রক্তবর্ণ হয়। শেকড়ের রস মাথা ঠিক রাখে। শ্রান্তিময় ঘুম। এই হল--তোমার সর্পগন্ধা, বাবু।

নামাজ শেষ করে বুড়ো লোকটি এলেন। নিশিন্দাগাছের নিচে নিয়ে গেলেন। এটি ছোট গাছ পথের ধারে টোনা গ্র্রামে দেখেছি। আর এই বাড়িটিতে দীর্ঘ গাছে পরিণত। পাথর কুচি পাতা মুখে দিয়ে তিনি হাসলেন। এই বাড়িটিতে কেউ থাকে না। তিনি থাকেন একা। আর গাছগুলি।

গুলঞ্চের খোঁজে যেতে হয়েছে গন্ধর্ব গ্রামে। তারপাশে মেঘপাল। বেতকা--ওপারে কলাখালি। মাঝখানে কালীগঙ্গা। কেয়া ঝুঁকে আছে।
মেঘপাল বিধবাদের গ্রাম। কেউ তারা মুড়ি ভাজে। জালবোনে। মাছ বেঁচে। তাদের এণ্ডি গেণ্ডিগুলো বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। একদিন তাদের সমুদ্র ডাকে। তারা নাও খুলে চলে যায়। দূরে। ঝড়ের কাছে। কখনো ফেরে--কখনো ফেরে না। এই ফেরা--না ফেরা পথের দিকে চেয়ে চেয়ে বসে থাকে বিধবারা। তারা মৎসগন্ধা বটে। তাদের বাগানে পদ্মগুরুজ বেড়ে ওঠে। আমগাছে--আম্রগুরুজ। গুলঞ্চ বলেন শিবকালী বুড়ো।

আকন্দ ফুলের খোঁজে রাত হয়ে যায়। লখাকাঠির আমলকী বাগানের পাশে কে একজন বেরিয়ে আসে। হাত চেপে ধরে। ঠাণ্ডানলের ছোঁয়ার গা কেঁপে ওঠে। লোকটিকে দেখা যায় না। তার ফোঁস ফোঁস শব্দ কানে আসে। আর জোয়ারের জলের প্রবাহ। এই নদীর জলে যারা যায় তারা আর আকাশ দেখতে পারে না। এইটুকু ভেবে ভেবে যখন খুঁজছি কালপুরুষ তারাটিকে--সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটিকে--যাকে নিয়েএকটি দীর্ঘ দ্রাব্রিড় খ্যাপা কুকুর নিয়ে ছুটছে সামনে--অনন্ত অন্তকালে, তখন একটি হাওয়া গায়ে এসে লাগে। কপালের ঘাম শুকিয়ে যায়। কালপুরুষ বলেন ধীরে, যান। ভয় নেই। আকন্দ পাতাটিকে নিয়ে যান। গরুটির ঘাড়ের রোগে বড় দরকার।

শিবকালী ভট্টাচার্য এইসব গন্ধর্বকথা চুপ করে শোনেন আর ফিক ফিক করে হাসেন। বলেন, অ পোলা--চরক আর শুশ্রুত খুলে দেখ। দেখ কি লিখেছে রে।
কে খবর রাখে--কোন হাজার বছর আগে চরক অথবা শুশ্রুত বলে কারা ছিল? লিখেছিল আয়ুর্বেদ?
শুধু বাসক পাতাটির কথা জানে মসজিদের সামনে পাতা কুড়োতে মগ্ন বুড়ো একটি লোক। আর অই ডাকাত সর্দারটি। মেঘপালের বিধবা নারী। কোন কোন পিপ্পলকুমারী।

auto
চিরঞ্জীব বনোষধী
শিবকালী ভট্টাচার্য
১১ খণ্ড।


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমরা কাঁচাকাঠালের এঁচোড় বলি।
লং পিপারকে পিপুল বলি। খুব ঝাল হয়। পিপ্পল মনে হয় অন্য জিনিস।

___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কুলদা রায় এর ছবি

পিপ্পল মানে পিপুল শাক।
auto

পরিচিতি
বাংলা নাম : পিপুল
ইংরেজি নাম : Long paper
বৈজ্ঞানিক নাম Piper longum Linn
পরিবার Aiperaceae
...
পিপুল সুগন্ধিযুক্ত লতানো গাছ, মাটিতে বেয়ে বড় হয়। কখনো অন্য গাছে বেয়ে ওঠে। লতার প্রতি পর্বসন্ধি বা গিট node থেকে একটি করে পাতা একান্তভাবে গজায়। পাতা দেখতে অনেকটা পানের মতো। বোঁটা ছাড়া পাতা লম্বায় ৪-৬ সে.মি. এবং চওড়া ২-৪ সে.মি.। পাতার উপরিভাগ ঘন সবুজ এবং নিচের দিকটা হালকা সবুজ। প্রতিটি পর্ব ৭-১৩ সে.মি. লম্বা হতে দেখা যায়। জুলাই-আগষ্ট মাসে স্প্যাডিক্স ধরণের একলিঙ্গ ফুল ধরে। পুষ্পদন্ড ৩-৫ সে.মি. লম্বা হয়। ফুল কুঁড়ি অবস্থায় সবুজ। ফল পাকলে হলুদ ও পরে ধূসর রঙের হয়। সেপ্টম্বর-অক্টোবর মাসে ফল পাকে।
auto

নিচে ফলসহ পিপুল--
auto
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ঠিক। পিপুলের ফলটাই শুকাইলে রান্নায় দেয়। আমি দেই। পর্তুগীজরা আসার আগেই এইটা এবং গোলমরিচই বহুল ব্যবহৃত ছিল ভারতবর্ষে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কৌস্তুভ এর ছবি

আমার বাবা ডাক্তার বলে ঔষধি গাছপালা নিয়ে খুব আগ্রহী সেটা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, তাঁর সঙ্গে এসবের সন্ধানে গিয়ে গিয়ে এবিষয়ে আমারও একটা আগ্রহ হয়ে গেছে আস্তে আস্তে। লেখাটা টুক করে সেসব কথা মনে করিয়ে দিল।

কুলদা রায় এর ছবি

সর্পগন্ধা http://t1.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcQUFAaCCCiAQq-efbrfZ5CC-AI4doz7q9THk9TGtVKYf6ggz4U&t=1&usg=__U6d3A0HT20L2R839w91-YTccIT4=

সর্পগন্ধা শিকড়
Indian snake plant root

http://t2.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcTgDipLy0tcLZQyKrl2Qe6Oj8uydV5MlcJrWREh6DRxpiPkgHA&t=1&usg=__L0dYlize8C5WRbbeDKFajLeH8TI=
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

বুদ্ধদেব গুহের অদলে লেখাটা বড় ভালো লাগলো। না না আপনি ওঁর মতো করে লিখেছেন তা বলছি না। ওঁর মত ঘটনা বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে আশ পাশের এই নিবিড় বর্ণনা, ওর কথা মনে করিয়ে দিলো। বুদ্ধদেব গুহকে আমার বর বলতো "জঙ্গল গুহ"।

--------------------------------------------------------------------------------

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ। জালাল ভাই মাঝে মাঝে যুবায়ের ভাইয়ের কথা বলেন।
বুদ্ধদেব গুহর লেখা সামান্য কিছু পড়েছি ছেলেবেলায় দেশ পত্রিকায়। আমার প্রিয় মনোজ বসু।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সংসপ্তক এর ছবি

দারুন বর্ণনা!।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

কুলদা রায় এর ছবি

সর্পগন্ধা
auto

auto
নিচে সর্পগন্ধার শিকড়।
Indian Snake Root
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

তুলিরেখা এর ছবি

ভারী ভালো লাগলো লেখাটা।
পুরানো পাড়ায় আমার ক'জন প্রিয় লেখক লেখিকা ছিলেন, ইন্দ্রনীল, প্রগতি, ইন্দ্রাণী, বিক্রম, কৃষ্ণকলি। এ লেখার কোমল মনোহর মগ্ন কিছুটা শান্ত বিষাদ কিছুটা গভীর অন্যরকম কিছু, এইসব তাদের লেখাগুলো মনে পড়িয়ে দেয়।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কুলদা রায় এর ছবি

আনন্দ পেলাম এ মন্তেব্যে।

এ লেখার কোমল মনোহর মগ্ন কিছুটা শান্ত বিষাদ কিছুটা গভীর অন্যরকম কিছু
--এই রকম সময় নিয়েই তো চলছি চিরকাল। আর কিছু নয়। ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

চড়ুই [অতিথি] এর ছবি

লেখা পড়ে কবিতার মতো মনে হয়েছে। নদীর মতো বহমান বরননার সাথে মায়াময় সব গাছ, ফুল, লতা আর মিলে মিশে মানুষ, চমৎকার লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

কুলদা রায় এর ছবি

সব কিছু নিয়েই আমরা। আপনাকে ধন্যবাদ। আমি পাঁচটি বছর নদীর পরে কাটিয়েছি। আর গাছের ভেতরে সবুজ রোদ্দুরে ছাড়া আর তো কিছু দেখি নি। ধন্যবাদ এরকম চিনতে পারায়। আমার অবাক লাগছে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সৈয়দ আফসার এর ছবি

কুলদা,
আমার বেশ ভালো লাগল।
ধন্যবাদ।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ট্রিপল দা... গতরাতেই পড়েছিলাম, মন্তব্য করা হয়নি। গাছ গাছড়া সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিতর চেয়েও কম... লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

গন্ধ ভাদালের একটা গাছ ছিল পরিচিত একজনার বাড়ি। এটা ঠান্ডা লাগা, শ্লেষ্মা, কাশে কাজে দেয় বোধ করি। আমার ভাইয়ের ছেলেবেলায় খুব ঠান্ডা লাগত, মা খোঁজ পেয়ে এনে পাতা সেদ্ধ করে রস খাওয়াতেন কার কাছ থেকে জেনে। অত্যন্ত বিশ্রী গন্ধ ছিল! মন খারাপ
কিন্তু সেদ্ধ করার পরে গন্ধ চলে যেত, যদিও এই জিনিস আমার নিজের রুচে নি কখনো, আর ডালের বড়ায় দিতেন, এটা খাওয়া যেত। গাছ এনে লাগান হয়েছিল বাড়িতে কয়েকবার, কিন্তু অন্যেরা চিনত না বিধায় অযত্নে মরে গেছে।
সঝনে পাতাও অনেক কাজের। এটাও বড়ায় দিয়ে খাওয়া যায়। আকন্দ আর গুলঞ্চ নামে চেনা, কিন্তু দেখে চিনি না।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।