মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা এবং আমাদের পাঠ্যবই

শব্দ পথিক এর ছবি
লিখেছেন শব্দ পথিক [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৯/১২/২০১৩ - ১:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিটি সুনাগরিকের দায়িত্ব নিজ জাতির সৃষ্টি এবং কৃষ্টি নিয়ে সম্যক ধারণা রাখা। বাঙালি জাতির সৃষ্টি এবং ঐতিহ্য গর্বময় স্বাধীনতা সংগ্রামকে ঘিরে। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে ঠিকঠাক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা সেটা কী আমরা ভেবে দেখেছি? জাতীয় ঐতিহ্য, সংগ্রাম এবং নিজের শেকড় সম্পর্কে জানতে হলে ইতিহাস জানা আবশ্যক। আর আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সংগ্রামের ইতিহাস, প্রতিবাদের ইতিহাস এবং পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাবার সময়কালে অতিক্রান্ত বন্ধুর পথের ইতিহাস। এখন প্রশ্ন হলো, ইতিহাস কীভাবে জানবো? আমাদের পাঠ্যবইতে লেখা ইতিহাস স্থায়ী হয়না, ক্ষমতার পালাবদলে ইতিহাস বদলে যায়, ভুল ইতিহাস গলধ:করণ করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

ইতিহাস শিক্ষার দুরবস্থা নিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খাই ২০০২ এর শুরুতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট তখন সদ্য ক্ষমতাসীন হয়েছে। দৈনিক দিনকালের তত্কালীন সম্পাদক কাজী সিরাজের জিয়াউর রহমানকে নিয়ে লেখা একটি অধ্যায় প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক শ্রেণীর বইতে জুড়ে দেয়া হয়। তাতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বঘোষিত প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, একই সাথে জিয়াউর রহমানকে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া প্রথম ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয় (অথচ ১৯৯১-১৯৯৬ সময়ে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বইতে বলা হয়েছিল মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ২৭ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন)।

একটু পিছনে ফিরে যাই, ১৯৯৬ সালে আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম। বাংলা বইতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিন্দুমাত্রও তথ্য ছিলো না, সমাজ বইয়ের ইতিহাস অংশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি অনুচ্ছেদ ছিল। অনুচ্ছেদগুলোর সারমর্ম অনেকটা এরকম:

..........ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে তাল-বাহানা শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এক জনসমাবেশে বলেন, ''........এবার সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।''

২৫শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৭শে মার্চ কালুরঘাটে স্থাপিত অস্থায়ী বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

এ অংশের বর্ণনার পর বইতে জিয়াউর রহমান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ছবি পাশাপাশি দেয়া ছিল। 'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি ব্যবহার করতে ইচ্ছেকৃত কার্পণ্য দেখানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কথা কম বলে জিয়াউর রহমানের কথা বেশি বলে সমতা তৈরী করার একটা উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট।

স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সম্পর্কে বক্তব্য দেড় লাইনেই শেষ করা ছিল।

হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস প্রভৃতি বাহিনী হানাদার বাহিনীকে সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দেয়।

এটুকু ইতিহাস জেনে সত্যি বলতে কোন কিছু ঠিকঠাক জানার উপায় নেই। তাহলে শৈশবে ইতিহাস শেখার বিকল্প উপায় কী? অন্যদের কথা জানিনা, আমি নিজের কথা বলতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আমার হাতে খড়ি পরিবার থেকে, নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আমি ইতিহাস নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করি বাবা-মা এবং নানাভাইয়ের কাছে। পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে পাওয়া শিক্ষায় সেই ছোটবেলাতেই মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতি তৈরী হয় বিশ্বাস, ভালবাসা এবং সন্মান। নষ্ট চরিত্রের মানুষ বলতেই আমার শিশুমনে একজন রাজাকারের প্রতিকৃতি তৈরী হতো। ছোটবেলায় একটা সময় বৃহত্তর চট্টগ্রামে ছিলাম, আমার স্কুলে একজন রাজাকার শিক্ষক ছিলেন, গণিত পড়াতেন। স্কুলের বাদবাকি সকল শিক্ষককে পথে-ঘটে, স্কুল প্রাঙ্গন যেখানে যতবার পেতাম সালাম/নমস্কার বলতাম, কিন্তু এই রাজাকার শিক্ষককে কখনো সালাম দেইনি, মন থেকে সালাম দেয়াটা আসেনি।

তৃতীয় শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার শেষ দিন ছিল ধর্ম পরীক্ষা, দেখাদেখি করতে যেয়ে এক সহপাঠী পরীক্ষা কক্ষে উপস্থিত এক শিক্ষকের বকুনি খায়, ''এই তুই ধর্ম পরীক্ষায় দেখাদেখি করিস, গোলাম আজম নাকি তুই?''-শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের আচরণ নির্মম ছিল, কিন্তু গোলাম আজম বলা হয়েছে এই লজ্জায় বন্ধুটি এরপর এক সপ্তাহ বিদ্যালয়ে আসেনি। এক সপ্তাহ পর তার বাবা তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে এসে শ্রেণীকক্ষে ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। এর কারণ, গোলাম আজম যে একটা চূড়ান্ত খারাপ চরিত্র সেই শিক্ষাটা সে তার পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে পেয়েছিল। আমাদের ইতিহাস বইয়ের পাতায় মীর জাফর স্থান পেলেও গোলাম আজমকে কোথাও স্থান দেয়া হয়নি, একটা নোংরা চরিত্রকে সবসময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমি ছোটবেলায় যেসব মানুষকে রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে চিনেছি, তাদের সবাইকে দেখেছি সমাজে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে অন্যদের উপর ছড়ি ঘুরাতে। অধিকাংশ শিশু-কিশোর তার নিজ এলাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কে জানেনা। পরিবার থেকে তা জানানো হয়নি, পাঠশালার সমাজবিজ্ঞান (ইতিহাস) ক্লাসেও শিক্ষকরা তা জানানোর প্রয়োজনবোধ করেননি, সাহস পাননি।

ইতিহাসের প্রাথমিক শিক্ষাটা পারিবারিক পরিমন্ডল থেকেই আসে। এখন একটি পরিবারে যদি ইতিহাস শিক্ষা দেয়া না হয় বা ভুল ইতিহাস গলধ:করণ করানো হয় তাহলে সেই পরিবারের সন্তান সঠিক ইতিহাস শিখবে কোথায়? একমাত্র স্থান পাঠশালা। পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস কারা লেখে? কাজী সিরাজের মতো লোকজন ইতিহাস লেখে এবং শিক্ষার্থীরা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পড়ে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও ইতিহাস শেখানোতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। বছরের পর বছর আমি সামাজিক বিজ্ঞান বইতে পাল শাসন, সেন বংশের শাসন এবং বাংলায় মুসলিমদের অনুপ্রবেশ নিয়ে পড়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দুই-চার পাতার বেশি কখনো কোন পাঠ্যবইতে পাইনি। এই অবস্থায় যারা পারিবারিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারেনা, তাদেরকে ভুল তথ্য দিয়ে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া খুবই সহজ। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমরা বন্ধুরা একটি মঞ্চ নাটক করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের উপর গল্প। ওই নাটকে রাজাকার চরিত্রে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানানো বন্ধুটিকে বছর তিনেক আগে ফেসবুকে শিবিরের সুরে কথা বলছে দেখতে পাই। আমরা একাডেমিক পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ইতিহাস শেখাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। বইতে ইতিহাস বিস্তারিত লেখা হয়নি, শিক্ষকরাও তেমন গুরুত্ব দিয়ে পড়াচ্ছেন না, সবমিলিয়ে একটা বড় শূন্যস্থান থেকে যাচ্ছে।

ভাল সংবাদ হলো, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর নতুন বইতে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ নামে একটি অধ্যায় আছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট না বলে মনে করি। স্বাধীনতার প্রশ্ন কেন আসলো এ নিয়ে বিশদ বর্ণনার দরকার আছে, দরকার আছে ৭১ এ সংগঠিত নির্মমতা ও হত্যাকান্ড শিক্ষার্থীদের জানানো। শুধুমাত্র রাজাকার, আল বদর, আল-শামস এই তিনটি নাম উচ্চারণ না করে এই তিনটি দলে কোন মতাদর্শের লোক যোগ দিয়েছিল, কারা এই তিন বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল, এই তিন বাহিনীর নৃশংসতার ব্যাপ্তি নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সম্বলিত অধ্যায় সংযুক্ত করা দরকার বইতে।

পঞ্চম শ্রেণীর 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব' বইয়ের 'আমাদের মুক্তিযুদ্ধ' অধ্যায়ের ৬ নং পৃষ্ঠায় যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে বলা আছে এভাবে,

এটুকু তথ্য আমার কাছে যথেষ্ট বলে মনে হয়নি।

৭ নং পৃষ্ঠায় শহীদ বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলা আছে এভাবে,

এখানে এই দোসর কারা সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

অষ্টম শ্রেনীর 'বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়' বইয়ের ১৯ ও ২০ নং পৃষ্ঠায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ঘোমটা একটু উন্মুক্ত করা হয়েছে,

কিন্তু ২৬ নং পৃষ্ঠায় বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে কারা জড়িত সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

একইভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তিদের নাম। ইতিহাসের পাতায় দেশপ্রেমিক বিখ্যাতদের নাম যেমন লেখা হয় ঠিক তেমনি দেশদ্রোহী কুখ্যাতদের নামও লিখে রাখতে হবে যাতে কুকীর্তির নায়কদের আজীবন ঘৃণা নিয়ে স্মরণ করা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের নাম উল্লেখ করে শূন্যস্থান পূরণ না করলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সুযোগ পেলেই সে শূন্যস্থান নিজের মতো করে পূরণ করে নিবে।

একাডেমিক পরিবেশে ইতিহাস শেখানোর শ্রেষ্ঠ সময় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত, এরপর বোধহয় সবাই তার সমাজ এবং পরিবেশ থেকেই শিক্ষা নেয়। সম্রাট অশোক ও চন্দ্রগুপ্তের ইতিহাস পড়তে আমার কখনোই আপত্তি ছিলোনা। আপত্তি নেই হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস জানতে, কিন্তু পরাধীনতার ইতিহাসের সমানসংখ্যক পৃষ্ঠা যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, তাত্পর্য এবং চেতনা বর্ণনায় বরাদ্দ হয় সেই দাবিটা আমার মনে আজ প্রায় ১৫ বছর ধরে। শ্রেণীকক্ষে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর ১৭ জন সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনকে দৌড়ানি দিয়ে বাংলা জয়ের কাহিনী বর্ণনা করার সময় শিক্ষকের চোখ যেভাবে গর্বে জ্বল জ্বল করে, ঠিক একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর সময়ও যেন গর্বে, আবেগে এবং দেশপ্রেমে শিক্ষকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।

ইতিহাস বিজয়ীরা লিখবে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লিখিত ইতিহাসে নায়কদের পাশাপাশি খলনায়কদেরও চিহ্নিত করতে হবে, তা নাহলে অপ্রকাশিত খলনায়কের নাম কালক্রমে নায়কের কাতারে চলে আসতে পারে। এজন্য পাঠশালার পরিবেশে নতুন আঙ্গিকে মমতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি, সেই ইতিহাস কখনো যেন কাজী সিরাজ এবং সমগোত্রীয় লোকদের লেখা ইতিহাস না হয়।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল বাচ্চাদের উপরে কিন্তু স্কুল এবং শিক্ষকদের প্রভাবই বেশি। আমার ক্লাস টু-এর নীস তার তার মা-কে বলে, তুমি ভুল বল, আমার ক্লাসের মিস ঠিক বলে। তাই স্কুলের বইতে যদি প্রপার ইতিহাস লেখা থাকে, এবং টিচার যত্ন করে পড়ায়, তাহলে তার ইমপ্যাক্ট অনেক বেশি হবে।

ওয়াইফাই ক্যানসার

শব্দ পথিক এর ছবি

সেটাই। স্কুল শিক্ষক যদি মমতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ায়, তাহলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে খুব কাজে দিবে।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

মাসুদ সজীব

শব্দ পথিক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- মাসুদ সজীব।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রথম হাচল পোস্টেই মুক্তিযুদ্ধ হাততালি দারুণ!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শব্দ পথিক এর ছবি

ধন্যবাদ সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ভাল বিষয় আর হতেই পারেনা।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এবার পড়ে আসলাম হাসি

৫ম আর ৮ম এর রেফারেন্স দিয়েছেন, বাকিগুলোর কি অবস্থা?

মীরজাফর বেচারা বহুদিন তো এই নামের ঘানি টানল। আহা, একদিন নিশ্চয় এর বদলে গোয়াজমের নামটা সবার মুখে মুখে এভাবে চলে আসবে।

শ্রেণীকক্ষে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর ১৭ জন সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনকে দৌড়ানি দিয়ে বাংলা জয়ের কাহিনী বর্ণনা করার সময় শিক্ষকের চোখ যেভাবে গর্বে জ্বল জ্বল করে

এইটা গর্বের কেন? বুঝি নাই। ইয়ে, মানে...

ইতিহাস বিজয়ীরা লিখবে কোন সন্দেহ নেই।

এই অংশটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে, ইতিহাস যদি ফ্যাক্ট এবং তার পুর্বাপর বিশ্লেষণ হয়ে থাকে তাহলে বিজয়ী-বিজিতের দরকারটা কি? বিজয়ীরা সবসময় ঠিক নাও তো হতে পারে। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে এই অতি-সরলায়িত লাইনটা দিয়েই জামাতিরা "৭১ এ জিতলে আমরাই বীরশ্রেষ্ঠ হতুম, বোজলা মনু" এই ত্যানাগুলা প্যাঁচায়

কিন্তু লিখিত ইতিহাসে নায়কদের পাশাপাশি খলনায়কদেরও চিহ্নিত করতে হবে

একমত, সাথে ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টসের ভান্ডার, তারপর বেছে নাও

তা নাহলে অপ্রকাশিত খলনায়কের নাম কালক্রমে নায়কের কাতারে চলে আসতে পারে।

ইতিমধ্যে কি আসেনি? মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শব্দ পথিক এর ছবি

তৃতীয় শ্রেণীর 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব' বইতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নেই, চতুর্থ শ্রেণীর বইতে আছে কিন্তু তার কন্টেন্ট পঞ্চম শ্রেনীর চেয়েও কম। ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু হয়েছে এবং অষ্টম শ্রেণীর বইতে শেষ হয়েছে, তাই মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস মূলত অষ্টম শ্রেণীর বইতে।

শ্রেণীকক্ষে ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর ১৭ জন সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনকে দৌড়ানি দিয়ে বাংলা জয়ের কাহিনী বর্ণনা করার সময় শিক্ষকের চোখ যেভাবে গর্বে জ্বল জ্বল করে

মুসলিম শিক্ষক অনেকেই তুর্কি/আফগান/মধ্য এশিয়ার মুসলিমদের যুদ্ধজয়ের কাহিনী এমনভাবে বর্ণনা করেন যেন তিনি নিজে যুদ্ধজয় করে এসেছেন। ফলশ্রুতিতে গর্ব তাদের চোখে-মুখে লেপ্টে থাকে।

হুম, ইতিহাসকে অন্যভাবে সাজানোর চেষ্টা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আর তাই, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার দিন একদিন এগিয়ে আসে, প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তার নাম প্রচারের ব্যবস্থা হয়। গোয়াজম হয়ে যায় ভাষাসৈনিক।

মীর জাফর, জগৎশেঠ এবং রাজভল্লব এই নামগুলো খল চরিত্র হিসেবে যতোটুকু পরিচিত গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ এবং কাদের মোল্লার নাম কী একাডেমিক পরিবেশে সেভাবে পরিচিত? মোটেও না, উল্টো টেক্সটবুকের ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের অনেকটা দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একজন যদি মুক্তিযুদ্ধের দরকারী সমস্ত তথ্য সম্পর্কে জানতে না পারে তাহলে এরপর তাকে ভুলপথে পরিচালিত করা সম্ভব এবং এটা হরহামেশাই হচ্ছে।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

এক লহমা এর ছবি

চলুক
সম্ভবত: বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর কোন একটা কবিতায় ছিল "ধরো বই, ওটা হাতিয়ার"। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধশক্তি সেই হাতিয়ার ভালমত ব্যবহার করেছে। তাদেরকে হারাতে গেলে এই হাতিয়ার তাদের উপরে ফিরিয়ে দিতে হবে - আরো বেশী করে। নুতন প্রজন্ম যত তাড়াতাড়ি সত্য জানতে পারবে তত বেশী করে অন্তরে ধারণ করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

শব্দ পথিক এর ছবি

তৃতীয় শ্রেণীর বইতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি অধ্যায় লেখা হয়েছে, এ ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ঠিক তেমনি তৃতীয় শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী এই ছয় বছরে ধাপে ধাপে একটি শিশু যখন কিশোরে পরিণত হবে সে সময়ে সে যদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা ক্লাসরুমেই জেনে ফেলতে পারে এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?

এর ফলে নবম শ্রেণীতে (মাধ্যমিকে) উঠার পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক ইতিহাস জানা, ৭১ এর চেতনায় উদ্দীপ্ত একটি কিশোর সমাজ পাবো।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

তানিম এহসান এর ছবি

আমাদের ইতিহাস বইয়ের পাতায় মীর জাফর স্থান পেলেও গোলাম আজমকে কোথাও স্থান দেয়া হয়নি, একটা নোংরা চরিত্রকে সবসময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চলুক

পোস্ট ভাল লেগেছে, এই বিষয়ে সচলে আগেও পোস্ট এসেছে যতদূর মনে পড়ে। পাঠ্য বই এর চাইতে পারিবারিক আবহ গুরুত্বপূর্ণ, পাঠ্য পুস্তকে যদি সব ঠিক থাকে কিন্তু ঘর ভর্তি থাকে ছাগু তাহলে লাভ নাই। পরিবার সবচাইতে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পাঠ্য বই এর চাইতে পারিবারিক আবহ গুরুত্বপূর্ণ, পাঠ্য পুস্তকে যদি সব ঠিক থাকে কিন্তু ঘর ভর্তি থাকে ছাগু তাহলে লাভ নাই। পরিবার সবচাইতে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

চলুক চলুক চলুক একমত,
আমি আগে এক পিচ্চিকে পড়াতাম। ফ্যামিলি ছাগু। সত্য কথা যেটা আমি সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেও তাকে ইতিহাস শেখাতে পারিনি কারন বাসায় প্রবল ওয়াশিং চলত। শেষ চেষ্টা হিসেবে পিচ্চির জন্মদিনে আমার বন্ধু রাশেদ গিফট করেছিলাম। সিনেমাটা চলার সময় যেখানে যেখানে রাজাকার সংক্রান্ত দৃশ্য ছিল সেখানে গৃহকর্তা প্রাণপণে সবাইকে অন্য দিকে ব্যাস্ত রাখলেন। আর লুটপাটের দৃশ্যে এসে বেশ করে ছবক দিলেন এটা ইতিহাস বিকৃতি, পাকিস্তানী সেনারা বৃহত্তম মুসলিম সেনা, তারা বরঞ্চ ... ...

আর কি কইত্তাম ?? মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তানিম এহসান এর ছবি

পিচ্চি’র খোঁজ নেন পারলে। এখনও যদি বিপথে না যেয়ে থাকে তাহলে সময় আছে কিছু করার। একটা পিচ্চি’কে ঠিক পথে রাখেন, যথেষ্ট!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সম্ভব না মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসিব এর ছবি

সচলে এই বিষয়ে আসা সমস্ত পোস্ট একত্র করে জায়গামতো পুশ করা দরকার।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

শব্দ পথিক এর ছবি

হাসিব ভাই
আপনাকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কিছুদিন আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইতিহাস শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে ঘাটতি থাকলে সেটা বোধহয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পূরণ করা অসম্ভব।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।