আমাদের ঋতুপর্ণ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি
লিখেছেন অতন্দ্র প্রহরী (তারিখ: শুক্র, ৩১/০৫/২০১৩ - ২:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গনে ঋতুপর্ণ ঘোষ একটি সুপরিচিত নাম। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রকে পাশে নিয়ে নিরলস হেঁটেছেন তিনি অনেকটা পথ, ক্লান্তি-ক্লেশ অবদমন করে পৌঁছে দিয়েছেন অন্য এক মাত্রায়। কে না জানে, গভীরে প্রোথিত শেকড়পুষ্ট প্রকাণ্ড এক বৃক্ষের মতোই এতকাল তিনি আগলে রেখেছেন সেলুলয়েডের এই মায়াবী জগতটাকে, যা বিস্তৃত হয়েছে তার বর্ণিল পদচারণায় এবং ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে, অগণিত দর্শকহৃদয়ে। নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন বারবার; সময় এবং নিজের ছায়ার সাথে পাল্লা দিয়ে হাত গলে একের পর এক বের করেছেন হাল আমলের নন্দিত, আলোচিত এবং প্রত্যাশিত সব মাস্টারপিস।

সত্যজিতের পাঁড়ভক্ত কোলকাতার এই চলচ্চিত্র নির্মাতা রূপালি জগতের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন শীর্ষেন্দুহীরের আংটি দিয়ে। তাও সেই ২১ বছর আগে, এবং কাকতালীয়ই বলতে হবে, সে বছরই সত্যজিতের প্রয়াণ ঘটে। এর ঠিক দুবছর পরেই ১৯৯৪-এ ঋতুপর্ণ জাতীয় পুরস্কার বগলদাবা করেন, পুরো ক্যারিয়ারে যেটার পুনরাবৃত্তি তিনি করেছেন আরও এগারোবার; এবং সমস্ত চোখ গিয়ে স্থির হয় উনিশে এপ্রিলে। এরপর আর কী—দহন, বাড়িওয়ালি, অসুখ, উৎসব, তিতলি—প্রতিবারই নিজের উত্তরণ দেখিয়েছেন ঋতুপর্ণ। অথচ এই মানুষটা চলচ্চিত্র নির্মাণ না করে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক হলেও হয়ত অবাক হবার কিছু ছিল না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিধারী ঋতুপর্ণ হিসাব অবশ্য রক্ষা করেছেন ঠিকই, তবে সেটা রূপালি পর্দায়—রুচি এবং পরিশীলতার, মানবিক সম্পর্ক এবং টানাপোড়েনের, শিল্প এবং নিরীক্ষার, মান এবং পরিমিতির। বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ শুরু করলেও, ধারণা করা যেতে পারে, চলচ্চিত্রে ঝোকার অনুপ্রেরণা তিনি পরিবার থেকেই পেয়েছেন। কারণ তার বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং একজন আঁকিয়ে।

গত দুই দশকে ঋতুপর্ণর মতো এমন অনন্য দক্ষতায় আর কে-ই বা আঁকতে পেরেছেন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, আবেগ-অনুভূতি এবং দোদুল্যমান সংসারজীবন? উনিশে এপ্রিল এবং তিতলির কথাই ধরা যাক না। বাস্তবধর্মী এই দুই রূপালি উপাখ্যানে মা-মেয়ের সম্পর্ক উন্মোচন করেছেন তিনি নিপুণ আঁচড়ে। একদিকে যেমন সাংসারিক তিক্ততা, মনস্তাত্ত্বিক দ্বৈরথ, অপ্রকাশিত ভালোবাসা এবং পুঞ্জীভূত অভিমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার নিয়ন্ত্রিত পরিচালনায়, একই সাথে সংলাপের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে অতীত এবং বর্তমানের যোগসূত্র। সবশেষে এসে জট খুলেছে, দূর হয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে ঋতুপর্ণ বানিয়েছেন অসুখ। অপত্যস্নেহ ছাড়াও ঋতুপর্ণর এই শুরুর দিকের কাজগুলো বেশিরভাগই ছিল পারিবারিক সম্পর্কের গোলকধাঁধা উপজীব্য করে বানানো, যার প্রতিটারই জয়জয়কার ছিল জাতীয় পুরস্কার অর্জনের ক্ষেত্রে।

২০০৩-এর পর ঋতুপর্ণ এই ধাঁচ থেকে কিছুটা মনে হয় বেরিয়ে আসেন। আরও বড় পরিসরে, ভিন্ন ভাষায়, খ্যাতনামা সব তারকাদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এর প্রকাশ ঘটে চোখের বালি, রেইনকোট, দ্য লাস্ট লিয়ার, অন্তরমহল, ইত্যাদি চলচ্চিত্রে; যার প্রথম দুটোয় তিনি কাজ করেন ঐশ্বরিয়া রায়কে নিয়ে, সাথে জুটি বাঁধেন প্রসেনজিৎ এবং অজয় দেবগন; অন্তরমহল-এ কাজ করেছেন অভিষেক বচ্চন, জ্যাকি শ্রফ, সোহা আলী খান; এবং শেষটায় ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, প্রীতি জিনতা এবং অর্জুন রামপালের মতো সব বলিউড তারকা। মণিষা কৈরালারও বাংলা সিনেমায় অভিষেক ঘটে ঋতুপর্ণর হাত ধরে, ২০০৮-এ, খেলায়। ঋতুপর্ণর দক্ষতার প্রতি সুবিচার করতেই যেন হিন্দি ভাষায় নির্মিত রেইনকোট এবং ইংরেজিতে নির্মিত দ্য লাস্ট লিয়ার জিতে নেয় সেরা চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার।

কাহিনির গাঁথুনি এবং দক্ষ নির্মাণ ছাড়াও ঋতুপর্ণর চলচ্চিত্রের আরও একটি বিশেষ যে দিক উল্লেখ না করলেই না, সেটা হলো বাংলা কবিতা ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রশংসনীয় সমন্বয়। আর কোনো চলচ্চিত্রকার কাহিনি, চরিত্র এবং বুনটের মাঝে এতটা সহজভাবে কবিতা ও গান, যা কোথাও এতটুকু আরোপিত লাগে না, মিশিয়ে দিতে পেরেছেন কি না মনে পড়ে না। ঋতুপর্ণর চলচ্চিত্রগুলোয় সঙ্গীতের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য। নিজের প্রতিটা কাজেই তিনি রুচি এবং পরিমিতিবোধের স্বাক্ষর রেখেছেন প্রবলভাবে। এক যুগেরও বেশি আগে মুক্তি পাওয়া তিতলির জন্য লিখেছিলেন মেঘপিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা, মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তাদেবজ্যোতি মিশ্রের সুরে শ্রীকান্তের গাওয়া অসাধারণ সে গানটি এখনও সমাদৃত হয় সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে—কী কথা, কী সুর। বাংলা কবিতার অনবদ্য উপস্থাপনা অবশ্য ঋতুপর্ণ দেখিয়েছেন সব চরিত্র কাল্পনিক-এ। পর্দায় হাজির করেছেন প্রথিতযশা কবি জয় গোস্বামীকে। “অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে”, “সেই কোন দেশে আমরা যাচ্ছিলাম, কোন দেশ ছেড়ে আমরা যাচ্ছিলাম, পেরিয়ে পেরিয়ে উঁচু-নিচু ঢালু মাঠ, শিশির ভেজানো কাঁটাতার গাছপালা, আলপথে নেমে আমরা যাচ্ছিলাম”... দুর্দান্ত সব কবিতা মিশিয়ে দিয়েছেন আগাগোড়া এবং শেষ করেছেন “এ পরবাসে রবে কে” রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। কবির চরিত্রে ছিলেন প্রসেনজিৎ এবং তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিপাশা বসু। কে-ই বা ভাবতে পেরেছিল বিপাশা অভিনয় করতে জানেন! অথচ ঋতুপর্ণর ছোঁয়ায় তিনি স্মরণীয় কাজ করেছেন এখানে। এমনকি আলোচিত পাওলি দামও সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে হাজির হয়েছেন। পুরো সিনেমায় সমালোচনার একমাত্র বিষয়বস্তু বলা যেতে পারে বিপাশার চরিত্রে কণ্ঠ দানকারী শিল্পী। এত খসখসে এবং নিরুত্তাপ কণ্ঠস্বর সব সংলাপ থেকে আবেগ কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।

আবহমান-এর কথা আলাদা করে উল্লেখ না করলে বিরাট ভুল হবে। ২০০৯-এ নির্মিত ঋতুপর্ণর আরও একটি অনবদ্য কাজ এটা। বরাবরের মতোই পারিবারিক সম্পর্ক কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এর কাহিনি, কিন্তু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতেই হয়, মূল প্রতিপাদ্য এক হলেও ঋতুপর্ণর প্রতিটা চলচ্চিত্রই তার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। একঘেয়ে লাগে না তাই কোনোভাবেই। এটি শাবানা আজমী, নাসিরুদ্দিন শাহ এবং বিদ্যা বালানকে নিয়ে হিন্দিতে নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে তিনি বাংলাতেই এটা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এবং সেরা চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি নিজেও বাগিয়ে নেন সেরা পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার।

ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে ঋতুপর্ণর কাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়ে আবারও। শেষদিকের বেশ কিছু কাজ সমকামিতা নিয়ে। সাহসী, কিন্তু বিতর্কিত বলা যাবে না মোটেও। এবারে সরাসরি অভিনেতা হিসেবে হাজির হন কৌশিক গাঙ্গুলীর সাথে আরেকটি প্রেমের গল্প, সঞ্জয় নাগেমেমোরিজ ইন মার্চ-এ; দুটোই মুক্তি পায় ২০১১-তে। অভিনেতা হিসেবে ঋতুপর্ণর আবির্ভাব ঘটে অবশ্য আরও আগে, ২০০৩-এ, ওড়িয়া ভাষায় নির্মিত হিমাংশু পারিজাকাথা দেইথিলি মা কু-তে। গত বছর নিজের বানানো চিত্রাঙ্গদায়ও নিজে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণ, যেখানেও কেন্দ্রবিন্দু সমকামী সম্পর্ক এবং সমাজে এ ব্যাপারে মনোভাব ও পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া। মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে মাধবন, কঙ্কনা সেন শর্মা, নাসিরুদ্দিন শাহ, জয়া বচ্চন অভিনীত গত বছরে নির্মিত হিন্দি চলচ্চিত্র সানগ্লাস এবং আশা করা যায় এ বছরই মুক্তি পাবে ঋতুপর্ণ নির্দেশিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র সত্যান্বেষী

Works of Rituparno Ghosh

মানবজীবন এবং মানবসম্পর্ক খুব গভীরভাবে নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে দেখার কারিগর ঋতুপর্ণকে গৎবাঁধা কোনো ছাঁচে ফেলা যায় না কোনোভাবেই। তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো এক শিল্পীকে নিয়ে বারবার কাজ করেননি, যদিও নিজস্ব গুণেই প্রসেনজিৎ হাজির হয়েছেন তার কাজে বেশ অনেকবার, বিশেষ কোনো এক ঘরানায়ও নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন কলাকুশলীর সাথে কাজ করেছেন এবং প্রতিটাতেই নিজস্ব ছাপ রেখেছেন সূক্ষ্মভাবে। তিনটি ছাড়া ঋতুপর্ণর সবগুলো চিত্রনাট্যই তার নিজের লেখা এবং পরিচালনা করা। এখানেও তিনি তার মেধা এবং মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। খুব কম নির্মাতাই আছেন যারা নামী কোনো উপন্যাস বা গল্পকে সফলভাবে এবং দর্শকনন্দিতভাবে চলচ্চিত্ররূপ দিতে পেরেছেন। ঋতুপর্ণ ব্যতিক্রম। এবং একবার না, অনেকবারই তিনি এই কাজটি করেছেন সাহস ও প্রজ্ঞার সাথে। শীর্ষেন্দুর হীরের আংটি দিয়ে শুরু, এরপর সুচিত্রা ভট্টাচার্যেদহন, আগাথা ক্রিস্টিদ্য মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড অবলম্বনে শুভ মহরত, ও হেনরিদ্য গিফট অভ দ্য মেজাই অবলম্বনে রেইনকোট, শেক্সপিয়রভিত্তিক উৎপল দত্তের নাটক আজকের শাহজাহান অবলম্বনে দ্য লাস্ট লিয়ার, রবীন্দ্রনাথেনৌকাডুবিচোখের বালি, এবং মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে চিত্রাঙ্গদা। মূল আমেজ বজায় রেখে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে নিজস্ব ধরনে এই চলচ্চিত্রগুলো তিনি তৈরি করেছেন। এর বাইরে ইংমার বার্গম্যান নির্মিত ১৯৭৮-এর অটাম সোনাটা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে উনিশে এপ্রিল নির্মাণ করেন তিনি।

চলচ্চিত্রের বাইরে টিভির জন্য ঋতুপর্ণ কাজ করেছেন ইটিভি বাংলার এবং ঋতুপর্ণ এবং স্টার জলসার ঘোষ এবং কোং নামের দুটো অনুষ্ঠানে। এছাড়া কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনে স্টার জলসার জন্য লিখেছেন গানের ওপাড়ে নামের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল।

মৃত্যুকে যিনি মহিমান্বিত করেছেন নিজের অনেক কাজেই, বাংলা চলচ্চিত্রের দিগ্‌গজ, সংবেদনশীল সেই স্মরণীয় লেখক ও নির্মাতা, ঋতুপর্ণ ঘোষ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গতকাল ৩০ মে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় অজানা-অদেখা এক জগতের উদ্দেশে পা বাড়িয়েছেন পার্থিব সমস্ত কিছু ছেড়ে। এভাবেই আমাদের হারানোর খাতায় উঠে গেল আরও একটি নাম। চলে গিয়ে যে তিনি অপূরণীয় ক্ষতি এবং শূন্যস্থান তৈরি করে গেলেন, এটা অনস্বীকার্য। তারপরও এ কথা আশাবাদ নিয়ে বলা যেতেই পারে, চলচ্চিত্রপ্রেমী ও বোদ্ধাদের মানসপটে জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্র হয়ে তিনি রয়ে যাবেন অনির্ধারিত কাল; আস্থা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার অপার্থিব এক প্রতীক হয়ে।

বিদায়, প্রিয় ঋতুপর্ণ। যেখানেই থাকেন, ভালো থাকবেন।


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

এত কম বয়সে!

তার "চোখের বালি" ছাড়া আর মুভি দেখা হয়নি। মুগ্ধ হয়েছিলাম। অনেকদিন ধরেই, বাকিগুলো দেখতে শুরু করবো ভাবছিলাম।
এই সংক্ষিপ্ত জীবনেই কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নিজেকে! এই অভাব পূরণ হবার নয়।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

প্রতিভাবানরা ক্ষণজন্মা হয়। এটা আরও একবার সত্য প্রমাণিত হলো। কিন্তু বিরাট মূল্যের বিনিময়ে। বেঁচে থাকলে মানুষটা অনেক কিছু দিতে পারত।

সময় করে ঋতুপর্ণর বাকি সিনেমাগুলোও দেইখো। নিরাশ হবা না, আশা করি।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আমি ভাবছিলাম একটা পোষ্ট লিখব।

কিন্তু আপনি এত অসাধারন সুন্দর ভাবে লিখেছেন যে তার আর প্রয়োজন নেই।
অল্প পরিসরে আমাদেরকে নিয়ে গেছেন সেইসব সিনেমাগুলোর কাছে, যা আমাদের রুচিকে নতুন ভাবে গড়ে তুলেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

শুধু একটা কথা। "দোসর" (২০০৬) এর ব্যাপারে একটু উল্লেখ প্রয়োজন ছিল।
এই ছবিতে উনি রঙের বাইরে বেরিয়ে সাদা-কালো ফ্রেমে অদ্ভুত এক সম্পর্কের জ্যামিতি তৈরি করেছিলেন।
প্রসেনজিতের অসাধারণ অভিনয়ের জন্যে জাতীয় পুরষ্কারে বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিল ছবিটি। এছাড়া পেয়েছিল বি,এফ,জে, এ পুরষ্কারও।

একজন অসাধারন প্রতিভাবান শিল্পীকে হারালাম আমরা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনি বলার পর মনে হচ্ছে "দোসর"-এর কথা না উল্লেখ করাটা খুব খারাপ হয়েছে। মাথায় ছিল, লিখতেও চেয়েছিলাম, বাদ পড়ে গেছে। আমার খুব পছন্দের সিনেমা। মেকিং তো অবশ্যই খুব ভালো, পাশাপাশি কঙ্কনা ছিল, আমার প্রিয় অভিনেত্রী। বিষয়টা বলার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার লেখাটাও পড়তে আগ্রহী আমি। প্লিজ দুইটা লেখা এসেছে জন্য নিজেরটা বাদ দিয়েন না। একই বিষয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন মত। অনুভূতিও একেকরকম। আপনার কথাগুলো সময় করে পোস্ট করবেন আশা করি।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

ভরসা যখন দিচ্ছেন তবে নিশ্চই লিখব। একটু গুছিয়ে নিই আগে।

আমি আপনার অবস্থাটা ধরতে পেরেছি, আসলে একে তো এত বড় একজন মানুষকে নিয়ে লেখা, তার ওপর একটা আকস্মিক বিহ্বলতা। এমনটা হওয়া খুব স্বাভাবিক।

তবে আপনি খুবই সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। হাততালি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অপেক্ষায় থাকব ভাই আপনার লেখাটার। সিনেমা আমার প্রিয় বিষয়। এটা নিয়ে জানতে, পড়তে, কথা বলতে ভালো লাগে।

অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং গোছানো মন্তব্যের জন্য। হাসি

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, এইমাত্র জানতে পারলাম, সত্যান্বেষী মুক্তি পাবে ৩০শে আগষ্ট, ঋতুপর্ণর জন্মদিনের আগের দিন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এ তো দেখি দারুণ ভালো খবর! দেখার জন্য খুবই আগ্রহ হচ্ছে।

মনি শামিম এর ছবি

আমরা যারা বাংলা সিনেমা নিয়ে গর্ব করি অহংকার করি, আমাদের জন্য এ এক বিরাট আঘাত। আজ অনেকেই তাঁকে সত্যজিত, মৃণাল, ঋত্বিক দের কাতারে দাঁড় করাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, জীবদ্দশায় উনাকে নিয়ে সবচাইতে কম আলোচনা হয়েছে। তাঁর সিনেমা নিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মী রচনা হাতেগুনেও কিছু পাওয়া যায় কি? আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝিনা। ঋতুপর্ণের মৃত্যু আমাদের সেটাই যেন বুঝিয়ে দিয়ে গেল। অতন্দ্র প্রহরীকে ধন্যবাদ জানাই এই চমৎকার রচনার জন্য। উনি সানগ্লাস নামক একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করছিলেন, জানিনা তা শেষ করতে পেরেছিলেন কিনা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, মনি ভাই। একমত আপনার সাথে।

"সানগ্লাস" মুক্তি পাবে জুন/জুলাইয়ে।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

বিদায় ঋতুপর্ণ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্মৃতিতে থাকবে মানুষটা...

তারানা_শব্দ এর ছবি

মন খারাপ
ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না, কিন্তু আপনি এতো সুন্দর লিখলেন কেমন করে? হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আসলে না লিখতে লিখতে তো কিবোর্ডে মরিচা পড়ে গেছিল। ঋতুপর্ণর খবরটা জানার পর থেকে মন খারাপের কোনো এক মুহূর্তে হুট করেই, ঠিক জানি না, কেমন কেমন করে যেন লিখে ফেললাম। থ্যাঙ্কু। হাসি

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

ঋতুপর্ণ ঘোষকে প্রথম চিনি তাঁর সবাইকে "তুই" বলার সহজ সাবলীলতার জন্য । উনিশে এপ্রিল দিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রের সাথে পরিচয় । এরপর একে একে অসুখ, তিতলি, অন্তরমহল, উৎসব, রেইনকোট, দোসর, খেলা, চোখের বালি, নৌকাডুবি, আবহমান চলচ্চিত্রগুলো দেখা । যার পরিচালনায় অভিনয় প্রাণ পায় ! ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে যে অভিনেতা, অন্য পরিচালকের চলচ্চিত্রে তাকে দেখে-শুনে মনে হতেই হবে "এই কি সেই?"
বিদায় প্রিয় পরিচালক ! 'এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর ।'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ঠিকই বলেছেন। আমি প্রথম মনে হয় দেখি "উনিশে এপ্রিল" অথবা "অসুখ"... টিভির পর্দায়। এরপর আগ্রহের সাথে ডাউনলোড করে আর ডিভিডি কিনে প্রায় সব সিনেমা দেখে ফেলেছি। এখনও কয়েকটা সিনেমা দেখা বাকি আছে। জমে আছে, থাকুক। ভালো জিনিস ফুরায়ে ফেললে খারাপ লাগে। দেখব আস্তে-ধীরে। ধন্যবাদ, পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তাঁকে নিয়ে লেখা সাম্প্রতিক কালে সেরা লেখাটা পড়লাম। সংগ্রহে রাখার মতো পোস্ট

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

নজরুল ভাইকে কাঁচকলা দেখানোর জন্য স্যাম ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। দেঁতো হাসি

স্যাম এর ছবি

ওহ! এইটা কাঁচকলা ? রঙ দেখে ভাব্লাম ...... দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

নজরুল ভাই, বিরাট বড় প্রশংসা করে ফেললেন। অনেক ধন্যবাদ, লেখাটা পড়ার জন্য। হাসি

তারেক অণু এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কীর্তিমান চলে যায়, কিন্তু রয়ে যায় তার কাজ - স্মৃতিতে, অগণিত ভক্তহৃদয়ে। ঋতুপর্ণ নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে, বেঁচে থাকবেন। হাসি

সুমাদ্রী এর ছবি

বিদায় ঋতুপর্ণ। যে মানুষটা জীবনকে ভালবেসেছেন বিচিত্রভাবে, এক জন্মেই পেতে চেয়েছেন পুরুষ ও নারীত্বের স্বাদ আপনার মাঝে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, সুমাদ্রী ভাই। ভাবতে খারাপই লাগে, এই মানুষটার নতুন আর কোনো কাজ আমরা পাবো না কখনো।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

একে একে বড় শূন্য হয়ে যাচ্ছে সময়টা!
অনেকদিন পর লিখলেন হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আসলেই, চলে যাওয়ার যেন মিছিল চলছে। গত বছর থেকেই মনে হয় শুরু। একের পর এক চলে যাচ্ছেন সবাই...

হুম, অনেক-অনেকদিন পর! থ্যাঙ্কু। হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

জয় গোস্বামীর কন্ঠে কবিতাটি ভীষণ কানে বাজছে। আমি মাঝে মাঝেই ল্যাপটপ খুলে 'সব চরিত্র কাল্পনিক' ছবির ভিটেমাটি ছাড়া সেই মানুষগুলোর ক্লান্তিহীন পথচলার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম।

সেই কোন দেশ দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম
কোন দেশ ছেড়ে আমরা যাচ্ছিলাম
পেরিয়ে পেরিয়ে উঁচু-নীচু ঢালু মাঠ
শিশির ভেজানো কাঁটাতার গাছপালা
আলপথে নেমে আমরা যাচ্ছিলাম
ধানখেত ভেঙে আমরা যাচ্ছিলাম
ছোটবোন আর মা-বাবা গ্রামের লোক
তার পাশে আমি দুলালী, না প্রিয়বালা...।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এই কবিতাটা আমারও খুবই প্রিয়। সিনেমাটাও আমি প্রায়ই দেখতাম, কখনও পুরোটা, কখনোও টুকরো টুকরো অংশ। অনেকদিন দেখা হয় না। ভাবছি আবার দেখব।

sabeka এর ছবি

আমার অন্যতম প্রিয় একজন চিত্র পরিচালক। তাঁর একটা ছবি দেখা শেষ হলে পরেরটা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতাম সব সময় । সবচেয়ে প্রিয় ছবি বাড়িওয়ালী । তাঁর আর কোন নতুন ছবি আসবে না, সত্যি অদ্ভুত শূন্য লাগছে ভাবতে ।
এরকম করে কীভাবে মানুষ চলে যায়,যেতে পারে মন খারাপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমার সবচেয়ে প্রিয় মনে হয় "উনিশে এপ্রিল" বা "সব চরিত্র কাল্পনিক"। খুব অসময়ে চলে গেল এই মানুষটা। বাস্তবতা আসলে এরকমই। মানতে কষ্ট হয়, তবুও অস্বীকার করা যায় না। মন খারাপ

লুব্ধক এর ছবি

শ্রদ্ধা: ঋতুপর্ণ ঘোষ....

আগস্ট ১৯৬৩ - মে ২০১৩

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শ্রদ্ধা...

মণিকা রশিদ এর ছবি

শিল্পী ফিরে চলেছেন, এ কেমন ফিরে যাওয়া তাঁর?
এমন নদীর ধার ঘেঁষে চলা,
যেখানে অজস্র কাঁটাঝোপ
এবং অদূরে রুক্ষ বালিয়াড়ি,
ওদিকে তো আর পথ নেই
এর নাম ফিরে যাওয়া? (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আগে পড়িনি কবিতাটা। কী অদ্ভুতভাবে মিলে গেল। দুজনের ক্ষেত্রেই...

সবজান্তা এর ছবি

দুর্দান্ত লাগলো অপ্র ভাই! দারুণ একটা লেখা হাসি চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ, সবজান্তা। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিভাবানরা ক্ষণজন্মা হয়। অসাধারন লেখা গুরু গুরু

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

একদম ঠিক বলেছেন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ, নাম-না-জানা অতিথি লেখক। হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

শ্রদ্ধাঞ্জলী এই মহান শিল্পীর জন্য। বাংলা ছবি দেখা মানেই ঋতুপর্ণ ঘোষের ম্যুভি এইটাই ছিল আমাদের অনেক দিনের অভ্যেস।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমি নিজেও তাই। আমার কাছে ভারতীয় বাংলা সিনেমা মানেই মূলত সত্যজিৎ, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণর সিনেমা। এর বাইরে খুব বেশি একটা ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখা হয়নি।

ধন্যবাদ, জাহিদ ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।