স্পর্শের বাইরে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি
লিখেছেন অতন্দ্র প্রহরী (তারিখ: রবি, ১৫/০৭/২০১২ - ১:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা নাকি পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকি। বাবার এই কথা শুনে বিস্ময়ে চোখ গোল হয়ে যায় রাশেদের। এ কেমন কথা! "তাহলে টুপটাপ পড়ে যাই না কেন আমরা!" বাবা হাসেন। আধাশোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে রাশেদকে মাধ্যাকর্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। ওর বিস্ময় তাতেও কমে না। তবে যে ওর ধারণা ছিল আমরা পৃথিবীর ভেতরে বাস করি! যখন আকাশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, পৃথিবীর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে জানালার মতো গর্ত খুলে যায়, আর সেখান দিয়ে আমরা আকাশে যাই।

শুধু কি তাই নাকি, বাংলাদেশে বসে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় পৃথিবীর আরেক প্রান্তে চলে যাওয়ার কথা না আমাদের! এতে অবশ্য আরেক সমস্যা আছে। মাথা নিচে দিয়ে পা উপরে তুলে হাঁটতে হবে তো সেখানে! রাশেদের মাথায় সব তালগোল পেকে যায়। বাবা শুধুই হাসেন। তার হাসি দেখে নিজেকে আরও বোকা মনে হয় ওর। তিনি তখন হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেন রাশেদকে। তার প্রশস্ত কাঁধে মাথা রেখে রাশেদ রাতের আকাশ দেখতে থাকে। জ্বলজ্বলে কত তারা। মনে হয় বিশাল একটা বাগানে অজস্র ফুল ফুটে আছে। "আচ্ছা, আকাশের শেষ কোথায়?" বাবাকে জিজ্ঞেস করে ও। তিনি যে উত্তর দেন, তাতে ওর আরেক প্রস্থ অবাক হওয়ার পালা। এর নাকি কোনো শেষ নেই! রাশেদের একদমই বিশ্বাস হয় না। মনে হয় বাবা ওর সাথে মজা করছেন। বাবা আবারও হাসেন। হাত বাড়িয়ে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেন তিনি। রাশেদের ঘুম পেতে থাকে। লোডশেডিংয়ের এই সময়টাতে উঠোনে মাদুর পেতে বসে থাকে ওরা। রাতের খাওয়া শেষ অনেক আগেই। মাঝেমাঝে রাশেদের মা-ও ওদের সাথে বসেন বাইরে। আবার কখনওবা তিনি মোম জ্বেলে ঘরের ভেতরে টুকিটাকি কাজ সারতে থাকেন। এই আজকেই যেমন, রান্নাঘর থেকে খুটখাট আওয়াজ আসতে থাকে। ঘুমানোর আগে সব গুছিয়ে রাখছেন তিনি। চাঁদের আলোয় চারপাশ অনেকটাই উজ্জ্বল। কদিন পরেই মনে হয় পূর্ণিমা। পাশের বাড়ির লম্বা গাছটার মগডালে চাঁদটা যেন লটকে আছে। ঠিক রাশেদের সুতাকাটা ঘুড়িটার মতো। বাতাসে গাছের ডাল নড়তে থাকে। মনে হয় গোত্তা খেয়ে চাঁদটা বুঝি মাটিতে পড়ে যাবে। রাশেদ বেশি কিছু আর ভাবতে পারে না। ওর ঘুম পেতে থাকে। বাবা ওদিকে কী যেন বলেন ওকে। ওর কানে ঢোকে না। অস্পষ্ট হতে হতে যেন মিলিয়ে যায় তা। নিঃশ্বাস ভারী হতে থাকে ওর। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে মুহূর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ও।

রাশেদের জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। এর প্রায় সপ্তাহখানেক পরেই বাবা কাগজে মোড়ানো বেশ মোটাসোটা একটা বই এনে দেন ওকে। খুব উৎসাহের সাথে সেটা খুলতেই উত্তেজনায় ওর প্রায় ফেটে পড়ার দশা হয়। "মহাশূন্যের অসীম রহস্য"। ভেতরে হিবিজিবি অনেক কিছু লেখা। সাথে ছবি। অবাক করা, দমবন্ধ করা সব ছবি। বাকি সব ভুলে বইটা নিয়ে বসে পড়ে রাশেদ। আর কিছুক্ষণ পরপরই বাবার কাছে ছুটে যায় রাজ্যের প্রশ্ন নিয়ে। ওর আগ্রহ দেখে বাবাও যেন মজা পান। হাসিমুখে ওর নানান প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। যার বেশিরভাগই বোঝে না ও। তবে বাবা বলেছে বড় হলে নাকি সব বুঝবে। না বুঝলেও আগ্রহের কোনো কমতি নেই রাশেদের। শুধু ছবি দেখতেই ভালো লাগে ওর। ঘরের অন্য খেলনার চেয়ে এই বইটিই ওকে টানে বেশি। এরপর এটা অনেকটা রাশেদের প্রাত্যহিক কাজের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। বইটা নিয়ে সময় কাটানো, পাতা উলটে নানান ছবি দেখা, মাথার ভেতরে গিজগিজ করতে থাকা প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করা, আর সেগুলোর উত্তর খোঁজা। মা সারাদিন বাসার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এর মাঝেও রাশেদের প্রশ্নে তিনি বিরক্ত হন না। বরং উৎসাহ দেন। রাশেদও অপেক্ষা করে থাকে দিনশেষে বাবা কখন বাসায় ফিরবেন। এছাড়াও লোডশেডিংয়ের সময়গুলোতে উঠোনে বসে আকাশ দেখতে দেখতে রাশেদের মাথায় প্রশ্নগুলো ফিরে আসে আবার। সেই সাথে স্বপ্ন দেখে, বাবার মতো বড় হয়ে ওই আকাশে যাবে ও, দেখে আসবে আসলেই তার শেষ আছে কি না! এ কথা শুনে বাবা-মা দুজনেই হাসেন। রাশেদের স্বপ্নও ওকে ছাপিয়ে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে।

বহু বছর পরের কথা।

কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মহাশূন্যের উদ্দেশে যাত্রা করবে ইনফিনিটি-৭। এর যাত্রী দুইজন নভোচারীই অরবিটারে নিজস্ব জায়গা নিয়ে নিয়েছেন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ব্যতিব্যস্ত সবাই। বিশাল স্ক্রিনে অরবিটারের ভেতরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। নিয়মমাফিক সব নির্দেশনা অনুসরণ করছে সবাই। অনেকবার অংশ নেয়ার পরেও রাশেদ এখনও উৎক্ষেপনের আগে ভেতরে অদম্য এক উত্তেজনা অনুভব করে। কেমন অন্যরকম একটা অনুভূতি। চোখ বন্ধ করলে ছেলেবেলার সেইসব দিনগুলো যেন মুহূর্তের মধ্যে ভেসে ওঠে এখনও। নিজের ফেলে আসা দিনগুলো নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। রাশেদ তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একসময় সেই পাট চুকিয়ে উচ্চ শিক্ষার আশায় বৃত্তি নিয়ে এই দেশে পাড়ি জমায় ও। মা রয়ে যান মফস্বলের সেই বাড়িতেই। একে একে দশটা বছর পেরিয়ে যায় হাজার মাইল দূরের এই দেশে। এর মাঝে এখানে পড়াশুনা শেষ হয়, স্বপ্ন পূরণের এক ধাপ হিসেবে নাসায় চাকরিও পেয়ে যায় ও। এর বছর দুয়েকের মাথায় জীবনে নতুন মোড় আসে রাশেদের - বিয়ে। তারপর সন্তান। বিদেশি মেয়ে বিয়েতে রাশেদের মা অবশ্য কোনো আপত্তি জানান নি। শুরুর দিকে প্রতি বছর একবার করে দেশে গেলেও, এরপর নানান ব্যস্ততায় সেটা আর সম্ভব হয় না। তারপরও রাশেদ চেষ্টা করে প্রতি দুই বছরে হলেও একবার যেতে। এবং প্রতিবারই মায়ের চেহারায় বয়সের ছাপ খুব গভীরে কোথাও ধাক্কা দেয় ওকে। উপলব্ধি করে, জীবনের পরিবর্তনগুলো খুব ধীরে ধীরে হলেও, শিকড় থেকে দূরত্ব যেন ক্রমশ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। একলা সময়ে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় এর কোনো এক সীমানা হয়ত ফেলে আসা দেশ ছুঁয়ে আছে, ছুঁয়ে আছে সেই উঠোন। তখন অন্যরকম একটা প্রশান্তি অনুভব করে রাশেদ। খুব কোমল একটা অনুভূতি হয়। বাবার কথা মনে পড়ে যায় ওর, মনে পড়ে ছেলেবেলার কথা। কীভাবে একটা বই ওর বাকি জীবনটা বদলে দিলো, এ যেন মহাশূন্যের চেয়েও অসীম এক রহস্য! বাবার দেয়া সেই বইটা আর নেই। ইঁদুর আর উঁইপোকা সেটা দখল করলেও কিছু পৃষ্ঠা অক্ষত থেকে যায়। তারই একটা ছিল মহাবিশ্বের অনন্ত নক্ষত্ররাজির ছবি, যা কখনও কাছছাড়া করে না রাশেদ।

"টি মাইনাস এইট সেকেন্ডস"। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তখন টান টান উত্তেজনা। রাশেদও দম আটকে অপেক্ষা করে। "টি মাইনাস ফাইভ সেকেন্ডস"। বুক পকেটে রাখা ভাঁজ করা সেই ছবিটা আলতো করে স্পর্শ করে রাশেদ। আকাশ ছোঁয়া না হোক, মনে হয় যেন ফেলে আসা শৈশবকেই স্পর্শ করল ও।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে। মনে হচ্ছিলো কোন এক বাবার পাশে বসে তার ছেলের গল্প শুনছি।

সৌরভ কবীর

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক বড় প্রশংসা। ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

অমি_বন্যা এর ছবি

স্বল্প পরিসরে কল্পনার বিশাল ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দিলেন। শৈশবের অনেক কথাই মনে পড়ছে ঠিক রাশেদের মতই।
গল্পটা স্পর্শ করে গেল আমাকে।
ভালো লেগেছে অনেক অ প্র দা ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শৈশবের ছোঁয়া পেয়েছেন জেনে আমারও অনেক ভালো লাগল। সামান্য এই লেখার সার্থকতাই তো সেখানে। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ অনেক। হাসি

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

চমৎকার ফিকশন। আসলে কি আমাদের ফিকশন ডিটেইলস পড়ে অভ্যেস, গল্প পড়ে অভ্যেস নেই। ধারাবাহিক কিছু শুরে করে দিতে পারেন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখালেখি সেভাবে হয় না। গল্প তো আরও না। নিজেকে কখনও বড় কিছু লেখার জন্য প্রস্তুত মনে করলে অবশ্যই চেষ্টা করব। হাসি

নাশতারান এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে।

ছোটবেলায় আমিও ভাবতাম আমরা পৃথিবীর ভিতরে বাস করি। আমার আঁকা ছবিও আছে সেরকম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

ছবি দেখতে চাই!

দীপালোক এর ছবি

ছোটবেলায় আমরা সবাই 'রাসেদ'। সব কিছুই অবাক করে। বিষ্ময় লাগে।
কিন্তু প্রায় কেউই বড়বেলার 'রাসেদ' হতে পরি না। অবাক হতেও ভুলে যাই।
অদ্ভুত, না?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ বলেছেন। আসলেই অদ্ভুত একটা ব্যাপার। বয়সের সাথে সাথে আমাদের "ছেলেমানুষি" ব্যাপারগুলোও হয়ত কমতে থাকে। সেটা এক অর্থে খুব হতাশাজনকই!

শাব্দিক এর ছবি

কেন যে বড় হলাম, এত কিছু বুঝতে ভাল লাগে না।
লেখা চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বড় হতে আমিও চাই নি। তবে বয়সে বাড়লেও, এখনও অবশ্য "বড়" হই নি! হাসি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

তানিম এহসান এর ছবি

ভালো লেগেছে গল্পটা। কিশোর-কিশোরীদের ভেতর স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতে খুব কাজে দেবে মনে হচ্ছে হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পঞ্চম প্যারাটা বাদ দিলে মনে হয় গল্পটা আরো গভীর লাগতো হাসি

এছাড়া ছিমছাম সুন্দর হয়েছে অপ্রদা চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্যবাদ, সুহান। মতামত মনে রাখব। হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। বাংলাদেশের উল্টাদিকেই তো আম্রিকা
সবার আগে এই সূত্রটা আমি আবিষ্কার করে একা একটা খুঁড়তেও শুরু করেছিলাম
পরে দেখি আম্রিকা না। উঠে আসে পানি

(এইটা হয় আম্রিকার একটা পানিপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নাহয় বিজ্ঞানের ভুল)

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বাংলাদেশে মাটির নিচে পানি তাইলে আপনারই আবিষ্কার করা? চোখ টিপি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হো হো হো

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

শেষটা অতটা ভাল লাগেনি।

কিন্তু শুরুটা এক কথায় অসাধারণ। হাততালি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। এবং সত্যি বলতে, আপনার সাথে আমি নিজেও একমত। শুরুটা একরকম হলেও শেষটা নিজেরই ভালো লাগে নি আমার। হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গল্প অসম্পূর্ণ। মেন্যুতে মুরগির রানের ছবি দেখিয়ে পাতে মশুরের ডাইল তুলে দেয়ার মতো ব্যাপারে হইছে এখানে। গল্পে রাশেদের বিদেশি বউয়ের কথা লেখক বললেও গল্পে তার কোনো বর্ণনা নাই। ওগো বিদেশিনীর বোনটোন আছে কিনা, থাকলে তাদের হাল হকিকত কী, জামা কাপড়ের সিস্টেম কী- সেগুলো লিখতে গিয়ে কোবি নীরবতা অবলম্বন করেছেন। এই নীরবতাকে আমরা দেক্কার জানাই। লেখকের উচিৎ এই গল্পের সিক্যুয়েল লেখা। যেখানে কেবল রাশেদের বিদেশি বউ আর তার আলতো-তালতো-জ্যাঠাতো-মামাতো বোনদের কথা বয়ান হবে (সচিত্র হলে ভালো হয়)।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হা হা হা। ঠিকাছে, আপনার জন্য এই গল্পের একটা দ্বিতীয় পর্ব লেখা যায় কি না চেষ্টা করে দেখতে হবে। দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

রাশেদ একটা আঁতেল দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হয়! দেঁতো হাসি
ছেলেটার সাথে অনেকদিন যোগাযোগ নাই!

তারেক অণু এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আড়াই কি তিন বছরের আমি নানাবাড়ির উঠানে পা দিয়েই নানাকে পুরনো গ্লোবটা বারান্দায় বসে পরিষ্কার করতে দেখে প্রশ্ন করেছিলাম, এইটা কী? নানা বললেন, এইটা পৃথিবী। আমি বললাম, ধুর! কী যে বলো! পৃথিবী এরকম গোল হলে আমরা পড়ে যাচ্ছি না কেন!
আমি অনেক বড় হয়ে যাবার পরেও নানা এই গল্পটা বলতেন, তিনি না বললেও আমার মনে ছিলো ঘটনাটা, সেদিনই প্রথম মাধ্যাকর্ষণ নামের জিনিসটা সম্পর্কে জানি। তোমার গল্পটা পড়ে অনেকদিন পরে অনেক পুরনো কথা মনে পড়লো। ধন্যবাদ তোমাকে, অজান্তেই কিছু মিইয়ে যাওয়া পুরনো ইচ্ছা-আগ্রহ উশকে দিলে হয়তো... শেষের কিছু জায়গা বেশ ভালো লেগেছে।

[অট: ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম উঠি-উঠি করলেই শুধু লেখা হয়, না?] হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মজার স্মৃতি। হাসি
গল্পের সার্থকতা এই যে, এটা পড়ে অনেকেরই শৈশবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, জানা যাচ্ছে তাদের ছেলেবেলার কৌতূহলী মনের কথা।
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। হাসি

অফটপিকের উত্তর: আমি আসলেই নিয়মিত হতে চাই। কিন্তু লেখা আসে না আজকাল। এটা ইচ্ছাকৃত না। যখন হুটহাট কিছু এসে যায়, তখন পোস্ট করি। সেটা যদি ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম আসি-আসি করার আগে-আগে হয়ে যায়, তা নিছকই কাকতাল! চোখ টিপি

কাজি_মামুন এর ছবি

গল্পটি আমার ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল! ছোটবেলায় আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগত, মাটি খুড়লে কি পাওয়া যাবে? ভূত্বকের তিনটি স্তর তো পাওয়া যাবে। কিন্তু তারপর? এক সময় গোলাকার পৃথিবীর কল্পনা মাথায় নিয়ে খুশী হতাম, সত্যি তো আমেরিকা পাওয়া যাবে তাহলে! ভূগোলের বইতে কি এক বিন্দুর কথা বলা আছে যেন (আজ মনে নেই), তা দিয়ে পৃথিবীরা বিপরীত দু'প্রান্তের দুটি বিন্দুকে চিহ্নিত করা হয়! সে হিসাবে আমেরিকার কোন দেশকেই পাওয়ার কথা! যাইহোক লেখাটি শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর চিন্তা ও আনন্দের রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে গেল!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এসব চিন্তা ছোটবেলায় আমারও ছিল। গল্পের রাশেদের ওই প্রশ্নগুলো এক অর্থে আমাদের অনেকেরই। লেখা পড়ে শৈশবের সেই দিনগুলোর স্মৃতি এভাবে মনে পড়ায় যে আনন্দ পেলেন, এটা জেনে খুবই ভালো লাগল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। হাসি

ক্রেসিডা এর ছবি

খুবই সুন্দর গল্প ও তার উপস্থাপন। ভালো লাগলো।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। হাসি বেশ অনেকদিন লিখছেন না। সময় হলে আপনার মেয়ের কাণ্ডকীর্তি নিয়ে লিখবেন নাহয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

ভাল্লাগলো, সরস সাদাসিধে গল্প হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। হাসি

অনিকেত এর ছবি

ভালৈসে বস! বহুদিন পর পর তোমার দেখা মেলে---
আরেকটু নিয়মিত হওন যায় না?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমি আসলে অনেক বড় মাপের লেখক তো, তাই আমার রোগটাও অনেক বড় মাপের - রাইটার্স ব্লক! দেঁতো হাসি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, বস। চেষ্টা করব অবশ্যই। হাসি

জুন এর ছবি

বেশ লাগল। আরও অনেক লেখা চাই। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। চেষ্টা থাকবে। হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কিশোরবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ভাল লেগেছে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

গল্পের রাশেদের মতো বাস্তবের রাশেদও প্রশ্নবাজ একটা ছেলে!
গল্পের শেষ লাইনটার দরকারই ছিল না। এটা শুধু বাহুল্যই বাড়ায় নি, গল্পের জোরও কমিয়ে দিয়েছে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার নিবিড় পর্যবেক্ষণ নিশ্চয়ই সঠিক! দেঁতো হাসি

মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। গল্প তো লিখি না সেভাবে। পরবর্তীতে লিখতে গেলে আশা করি এইসব মাথায় রেখে আরও ভালো করার চেষ্টা করা যাবে। হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বহুদিন পরে আপনার গল্প পড়লাম। প্রথম অভিনন্দন সেজন্য--- হাসি
প্রশ্নঃ এইটা কি প্রথম ড্রাফট?

নামটা অন্য কিছু হতে পারত, টিভি নাটকটার কথা মনে পড়ে যায়---

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

শুধু যে প্রথম ড্রাফট, তা-ই না, লেখা শেষ করেই পোস্ট করা। শুরুর ৪/৫ লাইন বেশ কয়েক সপ্তাহ আগের লেখা। এরপর এটা শনিবারে অনেকটা জোর করেই শেষ করলাম। শেষ থেকে ২য় প্যারায় অনেক সময় গেছে। কীভাবে কী লিখব বা শেষ কেমন হবে, কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না।

নাম নিয়ে সবসময়ই সমস্যায় ভুগি। শুরুতে নাম ছিল "আকাশ ছোঁয়ার গল্প"। পরে কী ভেবে এটা লিখলাম। এখন আপনার কথা শুনে নাটকটার কথা মনে পড়ল। নাহলে তো দিব্যি ভুলে বসে ছিলাম! মন খারাপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্পর্শের বাইরে নামে আবুল বাশারের একটা উপন্যাস আছে। কেন জানি না আবুল বাশারের উপন্যাস বলতেই সবাই ফুলবউ ভাবে... আমার স্পর্শের বাইরেই একমাত্র পছন্দ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পড়া হয় নি এখনও। মন খারাপ

স্বপ্নাহত এর ছবি

গল্পের রাশেদ পড়তে পড়তে আমার খালি বাস্তবের রাশেদের কথা মনে পড়তেসিলো। হারামিডারে বহুদিন দেখিনা দেঁতো হাসি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সবাই দেখি নিবিড়ের উপর চেতসো! রায়হান কইল আঁতেল, এদিকে তুমিও! চোখ টিপি

চরম উদাস এর ছবি

ভালো লাগছে চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

সুরঞ্জনা এর ছবি

ইস, রাশেদের বাবা উভচর মানব কিনে দিলে রাশেদ ডুবুরী হতে পারতো।

এইজন্যই আমার এখন এই অবস্থা।
আমার প্রথম বই এর নাম টুনটুনির গল্প।
ইম্যাজিন আ টুনটুনি স্টাক ইন অফিস। মন খারাপ

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হা হা হা। তোমার বাচ্চাকাচ্চাকে কী বই পড়তে দিবা, এখন থেকেই চিন্তা করে রাখো। দেঁতো হাসি

ঝরাপাতা এর ছবি

ভালো লাগলো। প্রথম দুই প্যারা অসাধারণ লেগেছে। পরের দিকে একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। আপনার লেখা গল্প আগে পড়েছি বলে মনে পড়ে না। তবে পাঠক হিসেবে একটা ব্যাপার নিদ্বির্ধায় বলতে পারি, গল্প লেখার অসাধারণ ক্ষমতা আপনার আছে, যেটা প্রথম দুটি প্যারায় বোঝা যায়। আপনি আরো অনেক অনেক গল্প লিখুন।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার এই উদার মতামত পরের লেখাগুলোয় অনেক অনুপ্রেরণা দিবে, বিশ্বাস করি। আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। ভালো থাকবেন। হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বেশ চমৎকার লাগলো অপ্র!
এই থিমের একটা গল্প লিখে জমিয়ে রেখেছিলাম নিজের স্টোররুমে। আলসেমি করে দেয়া হয়নি।
আপনারটা পড়ে পোষ্টানোর উৎসাহ পাচ্ছি। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আমারও আগ্রহ হচ্ছে আপনার লেখাটা পড়ে দেখার। পোস্ট করেন না প্লিজ। হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মিষ্টি একটা গল্প। হাসি

আচ্ছা, রাশেদ নামটা কি আপনার খুব পছন্দ? আগেও বোধহয় একাধিকবার আপনার লেখায় এই নামটা দেখেছি। তাই যদি হয়, আপনার ছেলেপুলেদের কোনো একটার নাম রাশেদ রাখা যেতে পারে নিশ্চয়ই। দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্যবাদ।

রাশেদ নামটা আমার আসলেই পছন্দ। এর আগে একটা গল্প লিখেছিলাম। রাশেদের বাবা। এটাই দেখে থাকবেন হয়ত। হাসি এবং ইচ্ছা আছে, রাশেদকে নিয়ে আরও টুকিটাকি লেখার। যদি সম্ভব হয় আর কি।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আর ছেলেপুলে?

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এতো অল্প লিখলে কেম্নে কী?
গল্প ভালো লেগেছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এই কথা আপনি বললেন? চোখ টিপি

ধন্যবাদ, নজরুল ভাই।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

পাঁচতারা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।