মহাবিশ্ব কি আমাদের জন্যই বিশেষ ভাবে তৈরি? - ২

পুরুজিত এর ছবি
লিখেছেন পুরুজিত (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০৮/২০০৭ - ৭:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাকতালীয় বড় সংখ্যা!!

বিশ শতকের গোড়ার দিকে, হারমান ভেইল(১৯১৯) দুইটি ইলেকট্রনের মাঝে তড়িৎচুম্বকীয় বল আর মাধ্যাকর্ষণ বলের অনুপাত (ক১ = ১০^৩৯) কেন এত বড় তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এই মান বোঝায় তড়িৎচুম্বকীয় বল মাধ্যাকর্ষণ বলের তুলনায় ৩৯ ঘাত শক্তিশালী। ভেইলের বিস্ময়ের কারণ ছিল ক১ এর মতো বিশুদ্ধ সংখ্যা, যা কোন প্রাকৃতিক ধর্মকে সংখ্যায়িত করে, তাদের সজ্ঞাসিদ্ধভাবেই ১ এর অল্প কিছু ঘাতের মাঝে থাকা উচিত। আমরা প্রাকৃতিকভাবে সংখ্যা হিসেবে ১ বা ০কে আশা করতে পারি কিন্তু ১০^৩৯ ঠিক অতোটা প্রত্যাশিত না, তার চিন্তাধারা অনুযায়ী। কেন ১০^৩৯ এবং কেনই বা ১০^৫৭ বা ১০^(-১২৩) নয়?

স্যার আর্থার এডিংটন(১৯২৩) এই ব্যাপারে আরো বলেন, ‘ প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণে এককের চেয়ে খুব বড় বা ছোট সংখ্যার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে মহাবিশ্বে মোট কণার সংখ্যার সাথে মিলিয়ে দিলে ব্যাখ্যাটা সহজতর হয়ে আসে।‘ তিনি এই সংখ্যার একটা আসন্ন মানও দিয়ে গেছেন – ক = ১০^৭৯, যা কিনা ক১ এর বর্গের কাছাকাছি।

অনেক সংখ্যা নিয়ে যাদের কাজ তারা এসব সংখ্যার মাঝে মিলও খুঁজে পান। বেশির ভাগ পদার্থবিদই বড় সংখ্যার রহস্য নিয়ে রাতের ঘুম হারাম করেন না। এটা তাদের কাছে সংখ্যাতত্ত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় না। কিন্তু পল ডিরাক (১৯৩৭) খেয়াল করলেন যে আমাদের ক১ এর মান আরেকটা বিশুদ্ধ সংখ্যার মানের সাথে মিলে যাচ্ছে। এর নাম দেই আমরা ক২, যা একটা নক্ষত্রের আয়ু এবং আলোর একটি প্রোটনের ব্যাসার্ধের সমান পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করতে যে সময় লাগে তার অনুপাত। আপাতদৃষ্টিতে এ ক১ এবং ক২ এর মাঝে কোন সম্পর্কই নেই; তবুও এদের মান কাছাকাছি (একই ঘাতের)। যদি প্রথমটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হয়ে থাকে তবে আরেকটা সংখ্যার একই ধাঁচের মান থাকাটাতো আরো অপ্রত্যাশিত।

রবার্ট ডিক(১৯৬১) পরবর্তীতে ক২এর মানের একটা ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন কার্বনের মতো ভারী মৌলগুলো থাকার জন্য ক২ একটা বড় সংখ্যা হতেই হবে কারণ এই মৌলগুলোর জন্য লম্বা আয়ুর নক্ষত্র প্রয়োজন। তিনি আরো দেখান যে আমাদের বিশ্বের মতো ভারী মৌল আছে এমন যে কোন বিশ্বে ক১ আর ক২ সমঘাতবিশিষ্ট হবে। তার যুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান বার্নার্ড কার এবং মার্টিন রিজ (১৯৭৯)। তারা দেখান মহাবিশ্বের যেকোন ভর এবং দৈর্ঘ্য কেবল তিনটি বিশুদ্ধ ধ্রুবকের ওপর নির্ভর করে – তড়িৎচুম্বকীয় বলের তীব্রতা, মাধ্যাকর্ষণ বলের তীব্রতা আর ইলেকট্রন-প্রোটন ভরের অনুপাত।
(চলবে)


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ইন্টারেস্টিং ,,, চমৎকার
"কার্বনের মতো ভারী মৌলগুলো থাকার জন্য ক২ একটা বড় সংখ্যা হতেই হবে কারণ এই মৌলগুলোর জন্য লম্বা আয়ুর নক্ষত্র প্রয়োজন" বোঝানোর জন্য নক্ষত্রের গঠন নিয়ে সিম্পল একটা ধারনা পেলে ভাল হতো।

চলুক ,,,পড়ব নিয়মিত হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কেমিকেল আলী এর ছবি

কার্বনকে ভারি মৌল বললেন কিভাবে বুঝলাম না। এর ইংরেজিটা কি আছে একটু জানাবেন কি?

ধন্যবাদ

দিগন্ত এর ছবি

উল্টোটাও ভাবার বিষয়, ধ্রুবকগুলোর মান এভাবে সম্পর্কিত বলেই আমরা এখানে বসে এভাবে আলোচনা করছি ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

পুরুজিত এর ছবি

আসলে কার্বনকে হাইড্রোজেনের তুলনায় ভারি বলা হয়েছে। মূল ইংরেজিতে ছিল - 'heavy chemical elements such as carbon'

পুরুজিত এর ছবি

উল্টোটাও ভাবার বিষয়, ধ্রুবকগুলোর মান এভাবে সম্পর্কিত বলেই আমরা এখানে বসে এভাবে আলোচনা করছি ...

প্রবন্ধটা সেদিকে যেতে পারে পরবর্তীতে।

পুরুজিত এর ছবি

কার্বনের ব্যাপারে আরো বলা যায় এস্ট্রোনমিতে লিথিয়ামের পরের সব মৌলকেই ভারি বলা হয়। রসায়ন থেকে আলাদা এদের ভারি মৌলের কনসেপ্ট। সম্ভবত আদি মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম আর লিথিয়াম ছাড়া অন্য কোন মৌল ছিল না।

পুরুজিত এর ছবি

নক্ষত্রের জন্ম নিয়ে সহজভাবে বলা যায় -
বিগ ব্যাং তত্ত্ব মোতাবেক, আদি মহাবিশ্বে শুধুমাত্র হাইড্রোজেন, হিলিয়াম আর লিথিয়াম তৈরি হয়েছিল। কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, লোহা এবং অন্যান্য অপেক্ষাকৃত ভারি মৌল তৈরি হতে আরো বিলিয়ন বছর লেগে গিয়েছিল। এই সময় ধরে নক্ষত্রের ভেতর নিউট্রন আর প্রোটনের ক্রিয়ায় এদের নিউক্লিয়াস তৈরি হয়েছে। অপেক্ষাকৃত বড় নক্ষত্রগুলোর হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে একটা বিশাল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে এরা সুপারনোভায় পরিণত হয়। এতদিনে যে মৌলগুলো তৈরি হল তারা ছড়িয়ে পরে আর তৈরি করে দ্বিতীয় প্রজন্মের নক্ষত্র আর গ্রহদের।

অপ বাক এর ছবি

সামান্য সংযোজন,

নক্ষত্র তৈরি হওয়ার বিষয়টাকে এত সহজ ভাবে দেখবার কিছু নেই, এটা এখনও ব্যখ্যা করা যায় নি, তবে ধরে যদি নেওয়া হয় যে কোনো উপায়ে একটা নক্ষত্র কোথাও আছে- সেটার ভেতরে কি ধরনের ফিশন আর ফিউশন বিক্রিয়া চলে এটা নিয়ে বিভিন্ন অনুমান আছে-
অনেকগুলো ধারাবাহিক বিক্রিয়া চলতে পারে- যদি পর্যাপ্ত জ্বালানী থাকে তবে ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রুপান্তরিত হবে,হিলিয়াম লিথিয়ামে রুপান্তরিত না হয়ে বেশীর ভাগই রূপান্তরিত হবে কার্বনে- বর্ণনার এই অংশটুকু নিয়ে আপত্তি নেই- তবে যেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জায়গা সেটা হলো- সাধারণত নক্ষত্রের ঘনত্ব আর তাপমাত্রা বাড়বার সাথে সাথে কার্বন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন থেকে উপরে উঠতে উঠতে একেবারে লোহা পর্যন্ত তৈরি হইতে পারে ফিউশনের মাধ্যমে-

এর উপরের মৌলগুলো তৈরি হতে সুপারনোভা বিস্ফোরণ লাগে।

হিমু এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার একটা সিরিজ হতে পারে এটা!

চলুক


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।