নৈতিকতা – বাস্তব না অবাস্তব? : দ্য শেপ অফ থিংস*

পুরুজিত এর ছবি
লিখেছেন পুরুজিত (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৫/২০০৮ - ৩:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[এই সেমেস্টারে নৈতিক দর্শনের ক্লাস নিচ্ছিলাম বলে কিনা জানি না, ইদানিং অনেক সিনেমাতেই একটা দার্শনিক সাবটেক্সট খুঁজে পাচ্ছি। তাই ভাবলাম সবার সাথে ভাবনাগুলো ভাগাভাগি করে নেই।]
সব বাক্যই কি সত্য বা মিথ্যা হয়? সব বাক্যের সত্য মিথ্যা কি একই ভাবে জানা যায়? নিচের বাক্যদুটি খেয়াল করুনঃ
১। প্রোটন ইলেকট্রনের চেয়ে ভারি।
২। প্রতিশ্রুতি ভংগ করা অনৈতিক।
প্রথমটা হয় সত্য নয় মিথ্যা, সত্যতা যাচাই করাও অসম্ভব কিছু না। কিন্তু দ্বিতীয় বাক্যটার বেলায় সবার প্রতিক্রিয়া একরকম হয় না – কেউ বলে এটা ধ্রুবতারার মতোই সত্য, আবার কেউ বলে পরিস্থিতি নির্ভর।
এদের মাঝে এপিস্টেমোলজিক্যাল* পার্থক্য আছে নাকি নেই সেইটাই দর্শনের লাখ টাকার প্রশ্ন।আসলে লাখ টাকার ২টা প্রশ্ন। প্রথম বাক্যটির সত্য মিথ্যা মূল্যায়ন করা সম্ভব এবং সবাই মোটামুটি একমত যে বাক্যটি হয় সত্য নয় মিথ্যা ; একই সাথে সত্য আর মিথ্যা হওয়া সম্ভব নয় এবং সত্য মিথ্যা কোনটিই নয় এমনটাও হওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে কি একই কথা বলা চলে?এবং যদি বলা চলে তাহলে কিসের ভিত্তিতে?
গত পরশু দেখা দ্য শেপ অফ থিংসের একটা চরিত্রের (নায়িকা বললে রাজনৈতিক ভুল হবে, হেহে)মুখে ঠিক এই ধরনের একটা সংলাপ ছিল। নায়িকা তার আর্ট প্রজেক্টের জন্য এক মানুষ সাবজেক্ট বাছাই করে, তার প্রজেক্ট থাকে বাহ্যিক চেহারার সাথে মানুষের আচরণের সম্পর্ক দেখানো (এরা যে আর্ট প্রজেক্টের নামে কত কিছু করে!)। ঠিকই শেষ পর্‌্যন্ত দেখা যায় আমাদের সাবজেক্ট, যে কিনা সিনেমার শুরুতে একই সাথে কুৎসিত এবং লাজুক, সেই সিনেমার শেষে এসে ক্যাম্পাস রোমিও – চেহারা, আচরণ দুটোতেই।
সিনেমার শেষ দৃশ্য ছিল তাদের দুজনের বোঝাপড়া। এভেলিন (শিল্পী) এর যুক্তি ছিল, আমরা সবাই নিজেদের বাস্তবতা তৈরি করি এবং তার উপরেই আমাদের নৈতিকতাকে বসাই। যদি সে শুরু থেকেই তার আর্ট প্রজেক্টের জন্যই এডামের সাথে ফ্লার্ট করে থাকে তাহলে সে তার বাস্তবতা অনুযায়ী কোন অন্যায় করে নি। যদিও এডামের বাস্তবতায় সেটা ভুল হতে পারে।অর্থাৎ এভেলিন মনে করে যে নৈতিকতা চিরন্তন কিছু না, ব্যক্তিনির্ভর।
লেখাটার শুরুতে যে দুটা প্রশ্নের কথা তুলেছিলাম, তার তিন রকম জবাব নিয়ে এখনো ধুন্ধুমার লড়াই চলছে।
একদল বলেন যে, নৈতিক বাক্যের সত্য মিথ্যা হয় না; এধরনের বাক্য শুধুমাত্র কোন কাজে আমাদের আপত্তি প্রকাশ করে। আরেকটু ভেঙ্গে বললে তারা বলতে চান যে “চুরি করা অন্যায়” আর “চুরি!!!” দুটো বাক্যই আমাদের একই তথ্য দেয় আর তা হচ্ছে বক্তা চুরি কাজটা পছন্দ করছেন না। অন্যায় শব্দটা একটা বিস্ময়বোধক চিহ্নের বেশি কোন অর্থ বহন করে না।
আরেকদল বলেন নৈতিক বাক্যের সত্য মিথ্যা হয় আর এ ধরনের সব বাক্যই মিথ্যা। এখানে ভুল বোঝার অবকাশ আছে, তাই বুঝিয়ে বলছি। এ দলের মতে, কেউ যখন বলে “চুরি করা অন্যায়” তখন বাক্যটার একটা উহ্য অংশ থাকে। পুরো বাক্যটা হবে, “চুরি করা চিরন্তনভাবে অন্যায়” এবং এই পুরো বাক্যটাকে তারা মিথ্যা বলে দাবি করেন।
তৃতীয় দলের মতে নৈতিক বাক্যের সত্য মিথ্যা হয় এবং কিছু কিছু নৈতিক বাক্য সত্য। এদল বাকি দুই দলের যুক্তি খন্ডন করতে ওস্তাদ (নইলে তো তাঁদেরকেই বুঝাতে হবে কি করে নৈতিক বাক্য সত্য বা মিথ্যা হয়)। এঁরা মূলতঃ দেখান যে, যেসব যুক্তি ব্যবহার করে, নৈতিকতাকে খারিজ করে দেয়া হয় তা ব্যবহার করলে পুরো দর্শনকেই খারিজ করে দেয়া যায়।
জটিল সমস্যা!পাঠক (যদি এখনো কেউ থাকে), তুমি কোন দলে?
এখন বলে রাখা ভাল, এবারের ক্লাসটাতে ঢোকার আগে পর্‌্যন্ত আমিও এভেলিনের মতোই ভাবতাম। বলা বাহুল্য ক্লাসে ঢোকার মিনিট দশেকের মাঝে নিজের ভুল বুঝতে পারি।

* দ্য শেপ অফ থিংস সিনেমাটা খুবই ভাল। রাচেল ভাইৎস (দ্য মামি) আর পল রাড (ফ্রেন্ডস এর ফিবির শেষ বয়ফ্রেন্ড) দুজনেই অসাধারণ অভিনয় করেছে।
*এপিস্টেমোলজি : দর্শনের একটা শাখা যেটা আমাদের জ্ঞানের প্রকৃতি নিয়ে ভাবে - অর্থাৎ আমরা কী জানতে পারি এবং কোন ভাবে সেটাই এই শাখার আলোচ্য বিষয়।


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

আমার তো মনে হৈতেছে আমি ২য় দলে পড়ি। চুরি করার উদাহরণ হিসাবে যদি বলি, তাহলে তো কইতে হয় চুরি করা চিরন্তনভাবে অন্যায় না। অন্তত রবিন হুডের ফিলসফিকে নিয়ে কথা বলা যায়।

পুরুজিত এর ছবি

দ্বিতীয় দল নিয়ে সমস্যা হল, এই দলে থাকতে হলে ২টা অপশন -
১। সব নৈতিকতাকেই পরিস্থিতিনির্ভর বলতে হবে অথবা
২। খুব যত্ন করে নৈতিকতাকে ২ ভাগে ভাংতে হবে - একভাগ চিরন্তন আর আরেক ভাগ পরিস্থিতিনির্ভর।

প্রথম অপশনের দুর্বলতা হল, ধর্ষন বা শিশু নির্যাতনের মত অনৈতিক কাজগুলোকে পরিস্থিতিনির্ভর ভাবা কষ্টকর। অতএব মেনে নিতেই হয় সবকিছু আমরা পরিস্থিতিনির্ভর মনে করি না।
দ্বিতীয় অপশনটাও ঝামেলার - চুরি করা আর ধর্ষন ভিন্ন মাত্রার অপরাধ, কিন্তু কেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্লগরব্লগরটি পড়তে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সেই শ্রয়েডিংগারের বেড়ালের কথা মনে পড়ল। সে এক জটিল সমস্যা। তবে আমার মনে হয় নৈতিকতা পরিস্থিতি নির্ভর। পরিস্থিতির উপরই নির্ভর করে আমি কী করবো।

পান্থ রহমান রেজা

পুরুজিত এর ছবি

আমায় একটা জিনিস খুব ভাবায় - আমরা আমাদের চিন্তাচেতনায় কিন্তু নৈতিকতাকে পরিস্থিতিনির্ভর মনে করি না। আমরা যখন বলি মানুষ মারা অন্যায় তখন কিন্তু তা চিরন্তন সত্য মনে করেই বলি (দ্বিতীয় দলটি যেমন দাবি করে)। পরিস্থিতিনির্ভর হতে গেলে সবই শেষ পর্‌্যন্ত নেতিবাদে (Nihilism এর বাংলাটা কি ঠিক হল?) গিয়ে ঠেকে, কোন কিছুরই কোন অর্থ পাওয়া যায় না। আমরা হয়ত নিজেদেরকেই ভুলিয়ে রাখছি...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একটু আপত্তি করছি
মানুষ মারা অন্যায় এটা কিন্তু চিরন্তন অর্থে নয় পরিস্থিতি নির্ভর হিসেবেই সবাই বলে
আমরাও বলি

কারণ পৃথিবীর সব ধর্ম এবং আইনেই মানুষ মারা ন্যায় এই সিদ্ধান্তটাও সমানভাবে প্রচলিত
এবং সেটা হচ্ছে যুদ্ধে
যুদ্ধে যদি কেউ মানুষ (পরিভাষা= শত্রু) মারতে না চায় তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া হয় বেইমান বলে

তাহলে?

পৃথিবীর সব ধর্ম এবং আইনই যুদ্ধকে সমর্থন করে
এবং যুদ্ধ মানেই মানুষ মারার উৎসব

সুতারং মানুষ মারা অন্যায় এটা কোনোভাবেই চিরন্তন নয়
এটাও পরিস্থিতি নির্ভর

পুরুজিত এর ছবি

হ্যাঁ, আমিও একমত যে বেশির ভাগ জিনিসই পরিস্থিতিনির্ভর। আমার পয়েন্টটা ছিল, আমাদের ভাষা আর চিন্তায় কিন্তু নৈতিকতাকে চিরন্তন হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়। যখন কেউ বলে, মানুষ মারা (বাজে উদাহরণ হয়ে গেছে এইটা) অন্যায়, তখন কিন্তু সে সেইটা চিরন্তন মনে করেই বলে। সে হয়তো জানে যে, এইটা পরিস্থিতিনির্ভর কিন্তু তার পরেও এই ধরনের বাক্য বলার সময় আমরা সেইভাবে বলি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

বড় বেশী আপেক্ষিক ব্যপার। আস্তিক লোকের জন্য অবশ্য নৈতিকতার প্রশ্নের সহজ সমাধান আছে । ভুল বা সঠিক হঊক তারা আসলে একটা কিছু ধরে সব হিসেব শুরু করে। এবং সেই 'একটা কিছুর' ব্যপারে কোন প্রশ্ন করে না। অনেকটা গণিতের 'অক্সিওম' এর মত।
যেমন,
১। প্রোটন ইলেকট্রনের চেয়ে ভারি।

এই কথাটাকেই হয়তো আমরা আমাদের গাণিতিক অক্সিওম চেঞ্জ করে উলটা ভাবেও বলতে পারি। এই বাক্য কে সত্য বলছি এই কারণে যে এর একটা আমাদের এত দিনের পরিচিত গণিতে ধরে নেওয়া অক্সিওম গুলোর সাথে সঙ্ঘাতে যায় না। কিন্তু আমরা প্রথমে যদি অন্য কিছু ভেবে নিতাম অক্সিওম হিসেবে, তাইলে?

আসলে সমস্যা টা শুরু হয় তখনই যখন আমরা জিরো থেকে সব কিছু শুরু করতে যাই। নৈতিকতার ব্যপার টাও তাই হয়ে যায় সেই জিরো তে থাকার সময় আমাদের ধরে নেওয়া 'অক্সিওম' গুলোর সাপেক্ষীক। আর তাই প্রশ্নের ঝড় চলতেই থাকে। যতক্ষন না আমরা 'একটা কিছু' তে পোউছানর পর অথবা আগেই নিজেকে ক্লান্ত মনে করি। আর এই প্রশ্ন কে এড়িয়ে যেতে শুরু করি।

আর এই 'একটা কিছু'ও আসলে তাই সঠিক উত্তর হয়না। কারণ 'সঠিক' 'বেঠিক' ব্যপার গুলোই তো আপেক্ষিক!!

====
স্পর্শ

পুরুজিত এর ছবি

(ভাষার জন্য দুঃখিত, কিন্তু উদাহরণের জন্য জরুরী।)
আমাদের ক্লাসের একটা ছেলেও এই লাইনেই এগুচ্ছিল। তো প্রফেসর (ব্যাটা টেক্সান, জটিল ভাব) বলে বসল, "do you think sexaully abusing a 5 year old human being is a subjective wrong?" সেই ছেলে তো থতমত খেয়ে ঠান্ডা মেরে গেল।
বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, এখনো জিনিসটাকে আপেক্ষিক মনে করেন কিনা?
তবে এক্সায়ম নিয়ে ব্যপারটা সত্য। ভারি হাল্কা সংগায়িত করা ভাষার ব্যপার হলেও গণিত ব্যপারটাই দাঁড়িয়ে আছে কিছু ধরে নেয়া জিনিসের ওপরে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুকে হাত দিয়ে বলতে গেলে এখত্রে আসলেই আপেক্ষিক মনে করিনা। কিন্তু তাহলে এমন কিছু সেট অফ অক্সিওম এক্সপ্লিসিটলি দেওয়া হউক যেটা কে বেসিস ধরে এগোনো যাবে।

আর যে লোক এই আবিউস এর কাজ টা করে তার নিজের যুক্তি তাকে করতে বলে বলেই করে। হয়তো এক্সপ্লিসিটলি না। কিন্তু ইম্পলিসিটলি তার ব্রেন কিছু যুক্তি নিশ্চই দাড় করিয়ে দেয়। নাইলে ডিসিশন টা মেক হবে কখন? নিশ্চই আপনি বলবেন না যে 'শয়তান' প্রোরচনা দেয়?

আর যখনই আপনি কাউকে বুকে হাত দিয়ে বলতে বলবেন তখনই কিন্তু 'সেই' পারসন এর দৃষ্টিকোন থেকে ব্যপার টা দেখা হয়ে যাবে। হয়ত পৃথিবীর ১০০% লোক ই বুকে হাত দিয়ে একই উত্তর দিবে। তার পরও এটা হবে সেই ১০০% এর প্রত্যেক্টা লোকের ব্যক্তিগত মতামত।

অবশ্য 'অ্যাবসলুট' নৈতিকতার সজ্ঞা যদি এমন হয় যে । সবাই বুকে হাত দিয়ে যেটা বলবে সেটাই নৈতিক তাহলে আর কথা থাকে না। কিন্তু সংজ্ঞা টা কি আসলেই তাই?

==
স্পর্শ

পুরুজিত এর ছবি

আমি চাচ্ছিলাম দেখাতে যে নৈতিকতাকে আপেক্ষিক মনে করা আমাদের বিশ্বাসের সাথে ইনকন্সিসটেন্ট। যেমন আপনি মনে করেন, শিশু নির্যাতন যেকোন পরিস্থিতিতেই অনৈতিক আবার মনে করেন যে নৈতিকতা আপেক্ষিক। এই ধরনের স্ববিরোধ আমাদের চেতনায় লুকিয়ে থাকে বলেই এ সমস্যাটা এত কঠিন।
আপেক্ষিকতার আরেকটা সমস্যা হল নৈতিক শিক্ষায়। নৈতিকতাকে আপেক্ষিক বলে মেনে নিলে কাউকে নৈতিক হতে বলাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত।

কিন্তু তাহলে নৈতিক দর্শন পাঠের এবং চর্চার উদ্দেশ্য কি?

---
স্পর্শ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মাইচ্চে রে মাইচ্চে
আমার ধারণা ছিল আমার সাবজেক্টের কোনো মাস্টার কিংবা কোনো ছাত্রের মুখোমুখি সারা জীবনেও আমার হতে হবে না

কিন্তু এখন তো দেখি স্বয়ং এক মাস্টার এসে হাজির
নৈতিক দর্শন...

জীবনে সবচেয়ে বেশি নকল করে এবং সবচেয়ে কম নম্বর পেয়ে যে বিষয়টা আমি পাশ করি তার নাম নৈতিক দর্শন....

নৈতিক দর্শনের সংজ্ঞা
যে দর্শন জীবনে কোনো কামে লাগে না কিন্তু বক্তিমা দিতে ব্যবহার করতে হয় সবচে বেশি তাহাকে নৈতিক দর্শন বলে...

কত পাইলাম স্যার? দশে দশ না?

পুরুজিত এর ছবি

১০ এ ১২, আমার ভুল ধরেন নাই, সেই জন্য ২ বোনাস।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তিন পর্যন্ত আসতে আসতে এক-দুই ভুলে গেলাম! নাহ, একটু ঘুমিয়ে উঠে আবার পড়তে হবে... খাইছে

পুরুজিত এর ছবি

তুমি যখন বলতে তুমি কান্টের ভক্ত আমি তো ভেবেছি দর্শনের কথাই বলছ। এখন তো দেখি এতে তোমার আগ্রহ নেই। তবে কি অন্য কিছুর কথা বলতে???!!!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- রউফ স্যার কান্ট না বরং কারেন্টের ভক্ত। লোডশেডিং হলে ঘুম দিবে সেই ধান্দায় আছে। যাই দেখি রউফ স্যার স্বপ্নে কী দেখে, সেইটা সমনে অবলোকন কইরা আসি। ততোক্ষণে আলোচনা আরেকটু গড়াক! হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অমিত এর ছবি

তলে তলে তাহলে এই !!

সবজান্তা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য (বিপ্লব)


অলমিতি বিস্তারেণ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ইয়ে, মানে... আমি সব রকম ইয়েরই ভক্ত! এক্কেবারে হাটে হাঁড়ি ভাঙলা! খাইছে

স্নিগ্ধা এর ছবি

পুরুজিৎ - আপনি (বা দার্শনিকরা) প্রশ্ন তোলেন নৈতিকতা বাস্তব না অবাস্তব আর আমরা (wannabe sociologists হাসি ) প্রশ্ন শুধু করি না বিশ্বাসও করি যে 'বাস্তবতা'ই আপেক্ষিক এবং নির্মিত।

এবং এভাবে ভাংতে ভাংতে শেষমেষ ধ্রুব বলে কিছু আদৌ থাকে কিনা আমার নিজেরই সেটা দেখার ইচ্ছা!

পুরুজিত এর ছবি

আমরা সমাজ হিসেবে এই আপেক্ষিকতা মেনে নিতে পারব কি? মানুষ এখনো ধর্ম মানে তার একটা বড় কারণ কিন্তু মানুষ আপেক্ষিকতা মেনে নিতে পারেনা আর ঈশ্বর ব্যাটাকে ভেবে নিলে আর কোন সমস্যা থাকে না (আপেক্ষিকতার সমস্যা থাকে না, তবে আরো হাজারটা চলে আসে)।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনি দর্শনের কিনা জানি না, এবং আমি নিজে দর্শন ভালো জানিও না কিন্তু কি একটা যেন তত্ত্ব আছে না ওই চেয়ারটা যে একটা চেয়ার তার কারণ যে দেখছে সে ওটাকে সংজ্ঞায়িত করছে চেয়ার হিসেবে এবং মেনে নিচ্ছে, শুধু তাইই ওটা তার কাছে চেয়ার। অর্থাৎ আমরা কিন্তু আসলে সবসময়ই আপেক্ষিকতা মেনে নেই, খালি 'কোথায়' মানবো আর কোথায় মানবো না সেটা নির্ভর করে আমাদের সুবিধের বা স্বার্থের ওপর। আর বাস্তবতা আর নৈতিকতা যেহেতু একে অপরের পরিপূরক, আপনি যে কোন একটার ক্ষেত্রে মানলেই হবে, অন্যটা আপনিই এসে পড়বে হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপেক্ষিকতার সাধারণ অর্থ কিন্তু সুবিধাবাদ
মানুষের সমস্ত নৈতিকতা হলো তাই যা তাকে সুবিধা দেয়
(নিজের সুবিধা যা দেয় তা কিন্তু একই সাথে প্রতিপক্ষের অসু্বিধার তৈরি করে)

নৈতিকতা জিনিসটা মোটেও প্রাকৃতিক কোনোকিছু না
এটা সভ্য মানুষের আবিষ্কৃত লোক আইন
(প্রতিটি আইনই নিজেকে রক্ষা ও প্রতিপক্ষকে ধ্বংসের জন্য তৈরি)

ফলে নৈতিকতা আমার কাছে যেকোনো একটা আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে আলাদা কিছু মনে হয় না; আমাকে আত্মরক্ষার সুবিধা দিলেও প্রতিপক্ষের জন্য অসুবিধা তৈরি করে

০২
নৈতিকতায় ধর্মকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় অনেক বেশি
কিন্তু প্রতিটি ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো অন্যকে পাপী ঘোষণা করা
এবং পাপীদের জন্য নরকের বন্দোস্ত ঠিক রেখে তারপর তার সাথে কথা বলা

এবং একারণেই নৈতিকতাকে এই যুগে কোনো পাঠ্য বিষয় হিসেবে মেনে নিতে আমার আপত্তি আছে
ওটা যাদুঘরে থাকলেই বরং ভালো

পুরুজিত এর ছবি

মাহবুব লীলেন লিখেছেন:

নৈতিকতা জিনিসটা মোটেও প্রাকৃতিক কোনোকিছু না
এটা সভ্য মানুষের আবিষ্কৃত লোক আইন।


প্রাগৈতিহাসিক সমাজগুলোতেও নৈতিকতা ছিল বলে আমার ধারণা। কারণ প্রাইমেটদের মাঝে পারস্পরিক বিনিময়ের মত প্রাথমিক নৈতিক বোধের উন্মেষ দেখা গেছে। যেমন, একটা পরীক্ষায়, দুইটা বানর মিলে একটা ভারি কলার ক্রেট তোলে। সেটআপটা এমন ভাবে করা হয়েছিল যে, একটা বানরই কেবল ক্রেটটা থেকে কলা নিতে পারবে। দেখে গেল যে বানর দুটো কলা ভাগ করে নিচ্ছে নিজেদের মাঝে, যদিও চাইলে একটা বানর সব কলা নিজের জন্যই রাখতে পারত।

মাহবুব লীলেন লিখেছেন:

নৈতিকতায় ধর্মকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় অনেক বেশি
কিন্তু প্রতিটি ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো অন্যকে পাপী ঘোষণা করা
এবং পাপীদের জন্য নরকের বন্দোস্ত ঠিক রেখে তারপর তার সাথে কথা বলা

যদি প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই নৈতিকতা থেকে থাকে তাহলে হয়ত নৈতিকতা ধর্ম থেকে পুরনো। জুডাইজম বা পার্সীদের আগে কোন ধর্মেই নৈতিকতার আইনগুলো ছিল না। গ্রীক দেবতারা তো হরহামেশাই চরম জঘন্য সব কাজ করে বেরাতো।
মাহবুব লীলেন লিখেছেন:

এবং একারণেই নৈতিকতাকে এই যুগে কোনো পাঠ্য বিষয় হিসেবে মেনে নিতে আমার আপত্তি আছে
ওটা যাদুঘরে থাকলেই বরং ভালো

নৈতিকতা পাঠ করা আমার প্রয়োজনীয় মনে হয় এই জন্য যে, গর্ভপাত বা রাষ্ট্রীয় সেবার মত বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সাধারণ ফ্যালাসিগুলো চেনা উচিত। ছোট খাট ব্যাপার যেমন চুরি না করা বা মিথ্যা না বলা এগুলো কলেজ লেভেলে ক্লাসরুমে শেখার কিছু নেই।
লীলেন ভাই, আপনি কি সব নৈতিকতাই প্রত্যাখ্যান করছেন নাকি প্রচলিত নৈতিকতা প্রত্যাখ্যান করছেন? অর্থাৎ আপনি কি মনে করেন না যে কোন কাজ নৈতিক বা অনৈতিক হতে পারে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নৈতিকতা শব্দটার সাথেই এক ধরনের ঝাঁপসা বিষয় জড়িত আছে
এবং যেহেতু এটা আপেক্ষিক এবং সময়ে সময়ে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে এটা বদলে যায়
সেহেতু এটাকে নৈতিকতা নামে না ডাকাই ভালো
কারণ নৈতিকতা শব্দের সাথেই চিরন্তনতা একটা দাবি উঠে সব সময়

তার চেয়ে যে বিষয়গুলো পরষ্পর সহাবস্থানের জন্য আমাদরেকে মেনে চলতে হয় সেগুলোকে সামাজিক আইন বললেই বেশি শোভন হয়
এবং আইন শব্দটির সাথেই এর পরিবর্তনশীলতার শর্ত যেহেতু জড়িত সেহেতু চিরন্তনতা ধুয়া আর কেউ তোলার সুযোগ পাবে না

পুরুজিত এর ছবি

সামাজিক আইন একটা ভাল ব্যাখ্যা হতে পারে। আপেক্ষিকতা নিয়ে আমার কেবল একটাই সমস্যা। সমস্যাটা প্রায়োগিক না - তাত্ত্বিক। আমি এমন কোন পরিস্থিতি চিন্তা করতে পারি না যখন ধর্ষণ বা শিশু নির্যাতনের মত কাজগুলো নৈতিক হবে। এধরনের কাজগুলো কি "চিরন্তন ভাবেই" অনৈতিক নয়? নাকি এগুলোকেও "কেবল" সামাজিক আইন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যাবে?

অনিন্দিতা এর ছবি

আমরা প্রত্যেকেই কি নৈতিকতার বেসিক কিছু বিষয় মেনে চলি না?
না হলে মাঝে মাঝে কেনো অপরাধবোধে আক্রান্ত হই?যেমন- কারো সাথে দুর্ব্যবহার করা, কষ্ট দেয়া , এগুলো কোন না কোন ভাবে কখনো বা কখনো আমাদেরকে অপরাধবোধে আক্রান্ত করে। এখানে কি ন্যায় -অন্যায়/ নৈতিকতা অবচেতনেও কাজ করে না?
এছাড়া ও এ মুহুর্তে খুব মোটা দাগের একটা বিষয় মনে হচ্ছে-একজন পুরুষ ও নারী পরস্পরের প্রতি যে জৈবিক আকর্ষণ বোধ করে এবং এর প্রেক্ষিতে সমাজিক , ধর্মীয় বা যে কোন কারণে বৈবাহিত সম্পর্কের দিকে যায় সেটা তো আপন ভাই- বোন, মা -ছেলে , বাবা -মেয়ে বা নিকট রক্তের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটেনা। এর কারণ কি চিকিৎসা বিজ্ঞানের হস্তক্ষেপ, দীর্ঘদিনের সংস্কার, ধর্ম না শুধুই নৈতিকতা?

পুরুজিত এর ছবি


একজন পুরুষ ও নারী পরস্পরের প্রতি যে জৈবিক আকর্ষণ বোধ করে এবং এর প্রেক্ষিতে সমাজিক , ধর্মীয় বা যে কোন কারণে বৈবাহিত সম্পর্কের দিকে যায় সেটা তো আপন ভাই- বোন, মা -ছেলে , বাবা -মেয়ে বা নিকট রক্তের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটেনা।

একদম ঘটে না বললে ভুল হবে। আমার মতে কারণটা জৈবিক, কারণ বেশির ভাগ প্রজাতিতেই একই ধরনের ব্যবহার দেখা যায়।

অনিন্দিতা এর ছবি

আমার পুরো প্রশ্নের উত্তর পেলাম না।
ব্যতিক্রম কে তো উদাহরণ হিসেবে টানা যায় না। স্বাভাবিক ভাবে এসব ক্ষেত্রে কি নৈতিকতা কাজ করে না?আমার মতে, আমরা নৈতিকতাকে আপেক্ষিক বা যাই বলি না কেন অবচেতনে প্রত্যেকেই নৈতিকতার বেসিক বিষয় গুলো মেনে চলি।সব ক্ষেত্রে না মানতে চাইলেও.....

পুরুজিত এর ছবি

জৈবিক আকর্ষণ ঘটে না এটা ঢালাও ভাবে বলা যায় না। কারণ যারা নিকট আত্মীয়দের প্রতি এই ধরনের আকর্ষণ বোধ করে তারা মনে হয় বাইরে বলে বেড়ায় না। তবে মোটামুটি সাধারণভাবে সবাই এই ধরনের আকর্ষণ অনৈতিক বলে মনে করে। কেন অনৈতিক মনে করে? কারণটা জৈবিক হতে পারে – নিকটাত্মীয়দের মাঝে প্রজনন নিয়ে অনেক রকম জটিলতা থাকে। নৈতিকতা হতে পারে না – কারণ এই ধরনের ব্যবহার অন্য প্রাণীদের মাঝেও দেখা যায়। ধর্ম হতে পারে না, এটা তো সেদিনের আবিষ্কার।
আমরা সবাই অবচেতনে নৈতিকতার বেসিক বিষয় মেনে চললেও সবার বেসিক একরকম নয়। এর দুইটা ব্যাখ্যা থাকতে পারে –
১। সবার নৈতিক জ্ঞান নেই কিন্তু যদি থাকত তাহলে সবাই একই রকম নৈতিকতায় বিশ্বাস করত। এটা চিরন্তন নৈতিকতার একমাত্র সম্ভাব্য অবস্থান।
২। নৈতিকতা আপেক্ষিক আর সেজন্যই দুজনের নৈতিকতার বোধ আলাদা হয়েও দুজনেরটাই সঠিক হতে পারে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।