ভ্যারাইটিজ শো এবং আমরা কয়েকজন

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বুধ, ২৪/০৯/২০০৮ - ৬:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইলেভেনে উঠে আমি প্রথম কলেজের বাইরে যাই। হাতে খড়ি হয় নাজমুল ভাইয়ের (ভাই কারণ টাংগাইলের বেবিস্ট্যান্ড নামক এক বিখ্যাত জায়গায় তিনি যাওয়া মাত্রই নাজমুল ভাই আসছে, নাজমুল ভাই আসছে এই রব উঠে) মাধ্যমে।

তখন নব্য প্রেম চলছে আমার। নতুন প্রেমে পড়লে যা হয়, তাহার মুখের বাণী শোনার জন্য পরানটা সর্বদা আনচান করতো। কলেজ থেকে বের হয়ে কিছু দূর হাঁটলেই ফোনের দোকান ছিল। এভাবেই সূচনা। প্রায় প্রতি বৃহঃস্পতি বার বাদ ডিনার এই অভিযান চলতো। ততদিনে ভাইয়ের কল্যাণে অনেকেই অভিযান সম্পর্কে জেনে গেছেন। এবং অনেকেই কলেজ পালানোর স্বাদ গ্রহন করে ফেলেছেন।

আমাদের মাথায় তখন ভূত চাপলো বরিশালে যেয়ে বাংলা সিনেমা দেখার। কলেজ থেকে বরিশাল প্রায় ১২ কি.মি। যাতায়াত ব্যবস্থা খুব খারাপ থাকার কারণে যাওয়াটা একটু ঝামেলা ছিল। যাই হোক বাংলা ছিনামার কাছে সেটা নিশ্চই কোন ব্যপার না। আমাদের দলে ছিলাম আমি, নাজমুল, ফিরোজ, মেহেদি (গাজা গুরু), জহির (মুক্তিযোদ্ধা এবং under ground hero, কারণ দিনের বেলায় সে ছিল আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে গোবেচারা। কিন্তু রাত হলেই……) তৎকলীন 1st call JP* মাসুদ (যিনি সারাজীবন আমাদের মতো বান্দরদের সাথে থাকলেও কোনদিন prep* এ তার টাইয়ের নট ঢিলা হতে দেখা যায়নি)। আরও মনে হয় কয়েকজন ছিল।

যথারীতি ডিনারের পর আমরা হাউসের পিছনের দেয়াল টপকে দেখি হায় আল্লাহ আরো কিছু মুখ। মনে হচ্ছিল পুরা কলেজই সেইরাতে বাইরে যাইতেছে। সবাই মিলে রওনা দিলাম। শহরে যাবার জন্য একটা টেম্পো পাওয়া গেলো। টেম্পোতে উঠলাম আমরা মোট ১৪ জন। ১২ জন আমাদের ক্লাস আর ইমিডিয়েট ২টা। সিয়াম ভাই আর রছি ভাই। বরিশাল যেয়ে আমারা টিকেট কেটে সরাসরি ঢুকে পড়লাম হলে। সিনেমার নামটা এখনো মনে আছে। 'আব্বাস দারোয়ান'। ছিনামা শুরু হলো। ১০ মি. ২০মি. ৩০মি. পার হয়ে গেলো কিন্তু যেই জন্য আসা সেই সব জিনিসের কোন খোজ নাই। পেপার গুলারে পিটাইতে ইচ্ছা করতেছিল। অশ্লীলতার কোন খোঁজ নাই, নাই ধুম ধারাক্কা গান। উফফফ!

তখন কে জানি বলল কাউনিয়াতে একটা মেলা হচ্ছে সেখানে যাত্রা আর ভ্যারাইটিজ শো হয়। ভ্যারাইটিজ শো জিনিসটা কি তখন জানতাম না। কে জানি বুঝাইয়া দিল strip dance টাইপ। সাথে সাথে কইলজাটা লাফায়া উঠলো এইটাই তো চাই। কাউনিয়া বরিশাল থেকে অনেক দূরে কিন্তু কিচ্ছু করার নাই। যেই ভাবা সেই কাজ। রওনা দিয়ে দিলাম। কাউনিয়াতে মেলায় ঢুকে টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো কারণ তখন একটা শো চলতেছিল। ৩০ মি. পর শো শেষ। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি পুরা মুখ কেলায়া ওখান থেকে বের হচ্ছে সিয়াম ভাই ও রছি ভাই। এবং আবার টিকেট কেটে তারা আমাদের সাথে যোগ দিলেন। আমার তো তখন অবস্থা খারাপ। যাই হোক শো শুরু হলো। শো এর কাহিনী নাই বলি। সারা জীবন মনে থাকবে। (এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেওনা, বৃষ্টিরও ছন্দে নুপুরেও গন্ধে আমায় তুমি ভুলে যেও না…)।

শো শেষ হলো ৩টার দিকে। বের হয়ে দেখি হায় হায়। বরিশাল যাওয়ার জন্য কিচ্ছু নাই। শুরু করলাম হাটা…দৌড়…বরিশাল যখন পৌছাইছি তখন বাঁজে প্রায় ৪টা। এবার কলেজ আরও ১২ কিমি। সকল উত্তেজনার পর তখন খালি কলেজ আউট হয়ে বাসায় যাবার কথা মনে পড়ছে। ব্যাগ হাতে কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আল্লাহর মেহেরবানীতে রিক্সা পেয়ে গেলাম। শুরু হলো রিক্সা দিয়ে formula one। কলেজে নিরাপদেই ভোর হবার আগে অবতরন করতে পারছিলাম। এবং বুঝতেই পারছেন দুনিয়ায় এমন কেউ নাই যাহাকে আমি এই ঘটনা শুনাই নাই।

*১। জুনিয়র প্রিফেক্ট। কলেজে সিনিয়ার প্রিফেক্টশীপ দেবার আগে সম্ভাবনাময় ছেলেদের এই দায়িত্ব দিয়ে যাচাই করা হয়।
*২।। রাতে একাডেমি ব্লকে পড়ালেখার সময়

ঘটনা সত্য হইলেও নামগুলা পাল্টাইতে বাধ্য হইলাম। কারণ উল্লেখ্য ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বর্তমানে হাঁটুবাহিনীতে কর্মরত।

গড় রেটিং

(০ ভোট)

Trackback URL for this post:
http://www.sachalayatan.com/trackback/12178

লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: রবি, ২০০৮-০২-০৩ ২০:৩৮)
উদ্ধৃতি | রায়হান আবীর এর ব্লগ | ৫টি মন্তব্য | পছন্দের পোস্টে যুক্ত | আপত্তি জানান | ১৮০বার পঠিত

Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, রায়হান আবীর. Sachalayatan.com can not be held responsible.

১ | লুৎফুল আরেফীন | সোম, ২০০৮-০২-০৪ ০০:০৯

কঠিন লেখেন তো আপনি!
তবে ভ্যারাইটিজ শো এর বর্ণনা না দেখে মনটা খারাপ হইলো

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৩ | অতিথি লেখক [অতিথি] | সোম, ২০০৮-০২-০৪ ০০:১৭

ওহ, ধন্যবাদ

রায়হান আবীর

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

৪ | আরিফ জেবতিক | সোম, ২০০৮-০২-০৪ ১৫:৩৭

ভালো লেগেছে ।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৫ | ইফতেখার নূর (যাচাই করা হয়নি) | সোম, ২০০৮-০২-০৪ ২০:১৬

শীতকাল এলেই কান পেতে থাকতুম, দূর থেকে কখন ভেসে আসবে মাইকের শব্দ ''হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ ব্যাপার...যাত্রা, যাত্রা, যাত্রা..." তারপর সন্ধ্যা হবার অপেক্ষা, সবাইকে একত্র করা এবং সারারাত ভ্যারাইটিজ শো। তখন বয়স বা প্রকাশ্য রুচির সাথে না মানালেও গোপনে গোপনে কেমন যেন একটা আকর্ষন, দুর্নিবার, আর এখন ফেলে আসা স্মৃতি।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

৬ | কনফুসিয়াস | বিষ্যুদ, ২০০৮-০২-০৭ ১১:৩১

রায়হান আবীর-
আপনি এখন থেকে নিজ নামে লগ ইন করতে পারবেন।
হ্যাপি ব্লগিং।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।