হয়রানের চীন দর্শন- তিয়ানজিন

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/০৫/২০১২ - ২:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চীনদেশে ভাষাগত সমস্যার কথা বারবার মনে করিয়ে দিয়ে আব্বাজান বলেছিলেন, যতো ধরণের সাহায্য লাগবে সেটা পাবো হোটেলের অভ্যর্থনাকারীদের কাছ থেকে। এরা সবাই বেশ ভালো ইংরেজি জানে, তাই কোনো সমস্যা হবেনা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারের জন্য ঢাকা থেকেই মান্দারিন ভাষায়, 'দয়া করে আমাকে এই ঠিকানায় নিয়ে যাও' লেখা সম্বলিত একটা কাগজ প্রিন্ট নিয়ে এসেছিলাম। সেটার বদৌলতে সোজা হোটেলে চলে এসে চেকইন করলাম। এবং চেকইন শেষে প্রধান মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অভ্যর্থনাকারীদের একজনকে প্রশ্ন করলাম, রুমে ইন্টারনেট আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে লগিনের জন্য কোনো পাসওয়ার্ড লাগবে কিনা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের সামনে প্রায় দশবার 'ইন্টারনেট' শব্দটা উচ্চারণ করার পর এগারতম বারে একজন লাফিয়ে উঠে বললো, যে বুঝতে পেরেছে। এতক্ষণ না বোঝার জন্য সে আন্তরিকভাবে দুঃখিত সেটাও জানালো। অতঃপর আমার প্রশ্নের জবাবে বললো- 'ইন্টারকম' আছে এবং রুম সার্ভিসের জন্য ইন্টারকমে '0' ডায়াল করতে হবে। হয়রান ফিচারিং মৌসুমী ভৌমিকের গান গুনগুন করে লিফটের দিকে হাঁটা দিলাম: আমি যা দেখি তুমি তা দেখো কি, আমি যা শুনি তুমি তা শুনো কি, আমি যা বলি তুমি তা বুঝোনি ...

এরপরে বাকি সাতদিন কাটিয়ে দিয়েছি হাত-পা-আঙ্গুল নেড়ে চেড়ে। কনফারেন্সের প্রথমদিন শেষে রাতে ডিনারে টেবিলমেট হিসেবে ছিলো কোরিয়ার কিইউংহি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একটা গ্রুপ, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক জাপানি গবেষক এবং যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই চীনা পিএইচডি শিক্ষার্থী। নানা কথার ফাঁকে ফাঁকে জাপানি গবেষক চীনা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন- তিনি এখানে আসার আগে জানতেন, চীনারা বেশ ভালো ইংরেজি জানে- কিন্তু এসে দেখেছেন অবস্থা একেবারেই উলটো। এবং জানতে চাইলেন, কেনো ইংরেজির একেবারেই চল নেই এখানে?

এ প্রশ্নে মেয়েটা দেখলাম বেশ ক্ষুব্ধ হলো। উত্তরে জানালো, আমি যখন যুক্তরাজ্য গিয়েছি তখন যুক্তরাজ্য কি আমার জন্য আমার ভাষা শিখে বসে ছিলো? ওরা আশা করে, সেখানে আমি ওদের ভাষায় কথা বলবো- চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। চীনারাও আশা করে, এখানে সবাই তাদের ভাষাতেই কথা বলবে (নতুবা মুড়ি খাবে)। ওর কথা শুনে ভালোই লাগলো এবং মনে হলো, আমরা বাঙালিরা বাংলা জানার থেকে ইংরেজি জানাকেই আমাদের দেশে বেশি প্রাধান্য দেই। উর্দু ভাষার আগ্রাসন থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি বটে, আমাদের সেই দিনকে স্মরণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন হয় বটে, কিন্তু উর্দুর শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করে আমরা আমাদের হাত-পা সব এগিয়ে দিয়েছি ইংরেজির কাছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ব্রাত্য, বাংলা মাধ্যমের চেয়ে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে সন্তান ভর্তি করতে আমাদের বেশি আগ্রহ, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলায় টেক্সটবুক সীমিত, বিশেষ করে বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল শাখায় অতি নগণ্য। আমাদের বাংলা চর্চা কেন্দ্রের নামটাও বাংলায় না- এর নাম বাংলা একাডেমী, নিজদের নিয়ম অনুসারে যেখানে আবার দুটো ভুল। বাংলা নিয়ে এতো বড় বড় কথা বললেও, আমার এই ব্লগেই অনেক বানান ভুল পাওয়া যাবে- বাংলা ভাষাকে আসলেই কি আমরা ভালোবাসতে পেরেছি?

যাই হোক, মৌসুমী ভৌমিকের গান গুন গুন করতে রুমে ঢুকে দেখলাম একটা ল্যানের তার বেরিয়ে আছে টেবিলের পাশে। ল্যাপটপ লাগানোর পর ধূমধাম কানেক্ট হয়ে গেলো। এবার সবাইকে জানানোর পালা যে সহি সালামতে পৌঁছে গিয়েছি- ছেলেধরারা ধরে নিয়ে যায়নি। জিমেইল খুলে আব্বুকে মেইল দেবো, দেখি যে এড্রেসবুকে কেবল আব্বুর অফিসের মেইল ঠিকানাটা আছে, হটমেইলেরটা নেই। আব্বাজান অবসর নিয়ে ফেলায় অফিসের সেই ঠিকানা এখন অকেজো। সেক্ষেত্রে মেঝো ভাইকে জানানো যায় কিন্তু ওর ইমেইলও নাই- ফেসবুক থেকে ইমেইলটা নেওয়ার জন্য নতুন ট্যাব খুলে লিখে ফেললাম www.facebook.com এবং লেখার সাথে সাথে আপন বলে উঠলাম- 'থুক্কু'। চায়নাতে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক ব্লক। কি মনে করে ইয়ুটিউব খুললাম, আশা যে আগামী সাতদিন ফেসবুক না থাকলেও ইউটিউব নিশ্চয়ই পাশে থাকবে। ওমা ইয়ুটিউবও বন্ধ। আর কি কি বন্ধ জানার জন্য গুগল করলাম- যেখানে প্রথম যে পাতার ঠিকানা আসলো সেটা হয়েছে ইংরেজি উইকিপিডিয়ার চীনা সরকার কর্তৃক বন্ধ করা সাইটের তালিকা। সেখানে ক্লিক করেই সবচেয়ে বেশি তাজ্জব হলাম- ইংরেজি উইকিপিডিয়াও ব্লক! কোনো এক কালে ছুরি দিয়ে এক লোক তার স্ত্রীকে খুন করার পর সারাদেশে ছুরি ব্যানের মতোই ঘটনা।

খাওয়া দাওয়া

ছোটবেলার যে জন্মদিনটার কথা মনে পড়ে সেই জন্মদিনে উপলক্ষে আমরা পুরো পরিবার খেতে গিয়েছিলাম চাংপাই নামক এক চাইনিজ রেস্তোরায়। সেটাই আমার প্রথম চাইনিজ খাওয়া কিংবা সাফি ভাইয়ের ভাষায় 'চাইনিজ খাওয়া'। এরপর বহুবার কারণে অকারণে চাইনিজ খাওয়া হয়েছে। কিন্তু বলাই বাহুল্য এই চাইনিজ খাবার আর চীনদেশি খাবার এক জিনিস নয়। পান্ডবদার ভাষ্যমতে, কেউ যদি সত্যিকারের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট খুলে বসে ঢাকায় তাহলে একদিন পরেই সেই রেস্টুরেন্টে লাগবে তালা, জ্বলবে আগুন। চীনে আমাদের মতো আম পাবলিকদের ভরসা তাই কেএফসি, পিজ্জা হাটই। হোটেলে ফিরে দুই ঘণ্টা ইন্টারনেটে এদিক ওদিক করতেই ক্ষুধা লেগে গেলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। বের হলাম চারপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করে তারপর ডিনার করার জন্য। রাস্তার দুই ধার ধরে ত্রিকোণ ছাদ বিশিষ্ট লাল রঙের সারি সারি বাড়ি। সিনেমা দেখা জ্ঞান অনুসারে অনেকটা ইউরোপিয়ান স্টাইল। তিয়ানজিনে আমার প্রথম সন্ধ্যা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে হোটেলের দিক মাথায় রেখে হেঁটে চললাম। রাস্তাঘাট ততক্ষণে ফাঁকা। রাস্তার দু'ধার জুড়ে অসংখ্য খাবারের দোকান। মানুষজন টেবিলে বসে খাচ্ছে আর আড্ডাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে ঢাকার কথা মনে পড়লো, মনে পড়লো আমাদের সন্ধ্যার কথা। ভয়াবহ জ্যাম পেরিয়ে, ধুলো মাখা ঘাম চিটচিটে শরীর নিয়ে ঘরে ফেরার কথা। তারপর ঘরে ফিরে পানি না পাওয়া, বিদ্যুৎ না পাওয়ার কথা। তিয়ানজিনের উপভোগ্য সন্ধ্যা দেখে ভাবলাম, এমন সন্ধ্যার অপেক্ষায় সারাদিন পরিশ্রম করা যায়। আমাদের দেশে এমন সন্ধ্যা নেই, আনন্দ নেই, যেটা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের দিনের বেলার কর্মদক্ষতার উপর।

প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করেও হালাল খাবারের দোকান কেএফসি, পিজ্জা হাটের সন্ধান পেলাম না। চারপাশের শিক কাবাবের মৌ মৌ গন্ধে ক্ষুধায় মাথা নষ্ট হয়ে যাবার জোগাড়। স্ট্রিট ফুডের প্রতিটা দোকানেই সারি সারি বিভিন্ন ধরণের মাংস, মাছ- কাঠিতে গাঁথা। মানুষজন সেখান থেকে বাছাই করে তারপর পুড়িয়ে কাবাব বানাতে দিচ্ছে। আমি কিছুই চিনতে পারছিনা, খেতে কেমন সেটাও বোঝার উপায় নেই, উপায় নেই মুরগি জাতীয় হালাল ইছলামিক খাদ্য কিছু আছে কিনা সেটা দোকানিকে জিজ্ঞেস করারও। পরিবর্তীর প্ল্যান ঠিক করে ঢুকলাম এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। ইচ্ছা এলকোহল আর চিপস দিয়ে রাত পার করে দেবো। থরে থরে সাজানো হারাম মদের বোতল এবং কারও গায়েই সেটা কী ধরণের হারাম পানীয় সেটা লেখা না পেয়ে সুন্দর দেখে সাদা রঙের এক পানীয় কিনে ফেললাম।

আজাইরা ডিনার হাতে নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরার পথে মনে হলো, আগে সিনেমায় এমন চমৎকার রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কতো ভেবেছি, নিজে যখন এমন রাস্তা ধরে হেঁটে যাবো তখন ক্যামন অনুভূতি হবে। প্রথমবারের মতো এই সুযোগ পেয়ে আমি কেবল খাবার অন্বেষণের চেষ্টাই করলাম। আবারও প্রমাণিত হলো, এই রঙ্গমঞ্চের সবকিছুই আসলে খাওয়া আর রিপ্রোডাকশন। ক্ষুধা না থাকলে দুনিয়াটা আসলে দুনিয়াই হতোনা...

হোটেলের কাছাকাছি ফিরে নিজেকে আর সামলানো গেলোনা। এক দোকানে দাঁড়ায়ে মামারে বললাম চিকেন আছে কিনা। মামা একটা শিক বের করে দিলো। আব্বা এক ঘটনা বলেছিলো। এক হোটেলে ভাত চাওয়ার পর এরা ব্যাঙের স্যুপ এনে দিয়েছিলো। মামার ধরা শিক দেখে বুঝে নিলাম, আর যাই হোক ব্যাঙ হবেনা। পোড়ানোর অর্ডার দিয়ে বিয়ার নিয়ে বসে পড়লাম। এরপর যা আসলো সেটা খেতে একেবারেই অসাধারণ। গরু না, মুরগীও না। সুতরাং বাকি থাকে পর্ক। পর্ক আগে কখনও খাইনি, তাই নিশ্চিত হওয়ারও উপায় নাই। পক পক করে সাত/আট কাঠি পর্ক পেটে চালান করে দিতেই ইছলামিক পেট মোচড় দিয়ে উঠলো, বুঝলাম বেচারাকে ডোজ বেশি দিয়ে ফেলেছি। ক্ষ্যাত সুলভ আপত্তিকর কিছু ঘটার আগেই নিজেকে সংবরণ করে নিতে হলো।


ডিনার মামা ও তার ছেলে

এরই মাধ্যমেই শুরু হয়ে গেলো আমার চাইনিজ খাওয়া। পরের দিন কনফারেন্স আয়োজকরা ডিনার করালো ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ ফুড দিয়ে। এলাহি আয়োজন। সেখানে টেবিলে বসে থাকা কিইউং হির প্রফেসর পর্কের একটা আইটেম মুখে পুরে ছোট চোখ আরও ছোট করে আমাকে আর ক্যামেরুনের ইউসুফাকে দেখিয়ে বললেন- আহারে এই মজার খাবারটা তোমরা খাবানা? ভাবতেই খারাপ লাগতেছে। কি আর করা, পক পকায়া কিছু চালান করে দিলাম পেটে। খেতে আসলেই দুর্দান্ত, এবং স্বাদ পেয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলাম আমার গতরাতের খাবারও এই জিনিসই ছিলো। সাতদিনের পর্যবেক্ষণ: হারাম-হালালের বাছ-বিচার না থাকলে ভোজন রসিকদের জন্য চীনদেশ স্বর্গ সমতুল্য- যদিও আমার হাতে বাদবাকি দেশগুলো খাবার সম্পর্কে খুব একটা ডাটা নেই।

কুনমিং বিমানবন্দর থেকে ঢাকা ফেরার বিমানে আমার পাশে বসে ছিলেন এক পরহেজগার হুজুর। কুনমিং এ বিমানবন্দরের কাছে বাঙালিরা ভাত-ডালের হোটেল তৈরি করেছেন। সেখান থেকে ভরপেট খেয়েই তিনি উঠেছেন বিমানে। আমার সাথে এক কথা দু কথা পর জানতে চাইলেন, যেখানে ছিলাম সেখানে হালাল খাবারের দোকান খুঁজে পেয়েছিলাম কিভাবে। ভ্যাজালের গন্ধ পেয়ে পাশ কাটানোর জন্য বললাম, না- ওখানে এরকম কিছু ছিলোনা। খাওয়ার জন্য কেএফসিই ভরসা (ভরসা বলাতে আর মিছা কথা বলা লাগলোনা)। উনি আঁতকে উঠে বললেন- কেএফসি কিভাবে মুরগি কাটে আপনি জানেন। ওখানে চিকেন খেলেই সেটা হালাল খাবার হবে? আপনিই বলেন। আমি আর মুখে কিছু না বলে মনে মনে বললাম- আমি এতদিন কী খেয়েছি সেকথা আপনি যদি জানতেন!! দেঁতো হাসি

সাদা রঙের সেই এলকোহলের গল্পটা না বললেই না। প্রথমদিনের ডিনার শেষে হোটেলে ফেরার পর ক্লান্ত শরীরে আর কিছু ঢোকানোর উপায় ছিলোনা। কিন্তু বাঙাল আমি, খ্রাপ জিনিসটা খেতে কেমন বা জিনিসটা আসলে কি সেটা বোঝার জন্য বোতলের ছিপিতে করে একটু খানি মুখে পুরে দিলাম এবং সাথে সাথে মাথাটা দশ চক্কর দিয়ে উঠলো- স্বাদটা অপরিচিত নয়, মস্তিষ্ক হাতড়াতে মনে পড়ে গেলো বান্দরবনের সেই ভয়াল দিনের কাহিনি। দুই বছর আগে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য আমরা কয়েকজন (ছড়াকার স্বপ্নাহত, শিক্ষানবিস) গিয়েছিলাম বান্দরবন। সেখান থেকে তৈমু নামের এক এনজিও কম্বল সমেত আমাদের নিয়ে গেলো থানচি থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত পাড়ায়। পাড়ায় পৌঁছাবার পর শুরু হলো মারাত্মক খাতির যত্ন। এক বাড়িতে গিয়ে আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম, আমাদের সাথে সে পাড়া এবং অন্যান্য পাড়া থেকে আসা বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। গোল হয়ে বসার পর শুরু হলো প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন পাড়া থেকে বোতল ভর্তি খ্রাপ জিনিস নিয়ে আসা হয়েছে। একজন করে প্রতিনিধি এসে বোতল থেকে খ্রাপ জিনিস মেঝেতে ঢেলে সেখানে আগুন ধরিয়ে কারটা কতো শক্তিশালি সেটা আগুন-কলমে দেখানো শুরু করলেন। আগুন-কলম পরীক্ষায় প্রথম স্থান করা খ্রাপ জিনিস দিয়ে এরপর আমাদের আপ্যায়ন করানো হলো। এরপর কিভাবে কম্বল দিয়েছি, কিভাবে আবার বান্দরবনে ফেরত গিয়েছি তার স্মৃতি একেবারেই ধোঁয়াশা। চাইনিজ সাদা রঙের জিনিসটাও একই জিনিস, তবে এটার বিশেষত্ব হচ্ছে আগুন জ্বালাবার জন্য ম্যাচের কাঠি বা লাইটারের প্রয়োজন নেই, গলায় একটু ঢাললেই মাশআল্লাহ শরীর জুড়ে দাবানল লেগে যায়। চীনে থাকার সময়টায় সেই বোতল থেকে সর্বসাকুল্যে সাত চুমুকও খেতে পারিনি। একবার ভেবেছিলাম, সারা বছরের রসদ হিসবে দুই বোতল নিয়ে যাবো কিনা, পরে আর আনা হয়নি।


১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের সবচেয়ে পুরাতন উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ


তিয়ানজিনের অন্যতম আকর্ষণ এনসিয়েন্ট কালচারাল স্ট্রিট

মহা প্রাচীর

আল্লাহর আরশ থেকে পৃথিবীর দুইটা জিনিস সরাসরি দেখা যায় (আল্লাহর জন্য না, উনি তো সবকিছুই দ্যাখেন। ধরেন আপনি যদি গিয়া দাঁড়ান তাহলে আপনার জন্য আর কি)। একটা পবিত্র কাবা শরীফ, অন্যটা চীনের মহা প্রাচীর। এই মহা প্রাচীর সবসময় আরশের নূরানী আলোয় আলোকিত থাকে বলে জ্ঞানের আলোয় যারা আলোকিত হতে ইচ্ছুক তাদের বারবার চীনে যাবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কনফারেন্সের মিছা জ্ঞানার্জন শেষ করে ভাবলাম মহা প্রাচীরের এতো কাছ থেকে এসে জ্ঞানের সুধা না খেয়ে ফিরে যাওয়াটা একেবারেই ভালো দেখায় না। কনফারেন্স শেষ করে রাতে এসে বসলাম ইন্টারনেটে ক্যাম্নে কি জানার জন্য। যেহেতু চীন দেশে আমার কোনো সাহায্যকারী নেই, তাই প্রথমে ওয়েবসাইট ঘেঁটে ঠিকানা বের করলাম। মহা প্রাচীদের এই মিনিয়েচার অংশ তিয়ানজিনের ভেতরে হলেও আমার অবস্থান থেকে প্রায় একশ সত্তর কিলোমিটার দূরে। যেতে হলে প্রথমে হোটেল থেকে লং ডিস্টেন্স বাস স্টপে যেতে হবে, সেখান থেকে বাসে চড়ে যিশিয়ান নামক জায়গায়। বাস থেকে নেমে আবার যেতে হবে শুয়াঙিয়াশান নামক জায়গায়। সেখানে ট্যাম্পু স্টাইলে মাইক্রোবাস চলে। সেটাতে করে আরও ত্রিশ কিলোমিটার দূরে গেলে তারপরই পড়বে মহা প্রাচীর।

ইংরেজি ভাষায় এই জ্ঞান লাভ শেষে কাগজ কলম নিয়ে বসলাম বিভিন্ন জায়গার মান্দারিন নাম লিখতে। তিয়ানজিনে থাকতে বেশ কয়েকবারই এই কাজ করতে হয়েছে। গুগল ট্রান্সলেটর এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে মান্দারিন ভাষায় ইন্সট্রাকশন রেডি করে ফেললাম। সকালে অভ্যর্থনা ডেস্কে গিয়ে আমার মান্দারিন লেখা দেখালাম, পাশে ইংরেজি। ওরা ভিতর থেকে কাকে দেখিয়ে এনে বললো- ঠিকাছে। বোবা আমি একখানা কাগজ সম্বল করে রওনা দিয়ে দিলাম- মহা প্রাচীর উদ্দেশ্যে। যাবার আগে সামিয়া হোসেনকে মেইল লিখে গেলাম, যাত্রা পথে হারায়ে যাবার প্রবল সম্ভাবনা। যদি হারায়ে যাই তাহলে যেনো অন্য কাউকে বিবাহ না করে।

হারায়ে যাই নাই। ইন্সট্রাকশন দেখে দেখে সর্বশেষ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে আসলাম। পরবর্তী ত্রিশ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া চাইলো দুইশ আরএমবি। ঢাকায় দামাদামি না করতে পারলেও চীনে আমি ছিলাম পুরা আমার আম্মাজানের মতো। দুইশ টাকার বদলে পক করে বলে ফেললাম ত্রিশ। সাথে সাথে রাজি হয়ে যাওয়ায় মনটাই খ্রাপ হয়ে গেলো। দশ টাকা বললেই পারতাম! প্রাচীর ভ্রমন শেষে নিচে নেমে একটা সুভ্যেনিয়র কিনবো। দোকানি দাম চাইলো ছয়শ আরএমবি। এই দফা আর ভুল করিনাই, ঐ সুভ্যেনিয়র কিনে ফেললাম পঁচিশ আরএমবি দিয়ে।

গ্রেট ওয়াল দেখে ক্যামন লাগলো? নাহ! প্রথম সমুদ্র দর্শনের অনুভূতি এর থেকে অনেক তীব্র ছিলো। তবে ভুলে গেলে চলবেনা, আমি সেখানে গিয়েছি আরশের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার জন্য, সেটা হয়েছে, তাতেই আমি খুশি।

ঢাকা ফিরে এলাম ঊনত্রিশ তারিখ। আমার সামনের ব্যাগটায় ক্যামেরা ছিলো। ঐ ব্যাগে ক্যামেরা আছে বলে চিক্কুর পারার ফাঁকে মালিক তার ব্যাগ নিয়ে ফুটুস। আমার ব্যাগটা তার পরের। নিরাপত্তাকর্মী আনন্দের সাথে আমারটাকেই সেই ক্যামেরাওয়ালা ব্যাগ বানিয়ে চক দিয়ে ক্রস চিহ্ন এঁকে কাস্টমসের হাইকোর্ট দেখায়ে দিলো। বারো ঘণ্টার যাত্রার পর বাইরে বের হওয়ার সময় এই ঝামেলার কোনো মানে হয়না। কিন্তু মানেহীন ঝামেলাই সময়ে অসময়ে উদয় হয়ে ছাপ রেখে যায়। হাঁটা দিলাম কাস্টমস চেকিং এর দিকে। নানা জনের ব্যাগ চেক হচ্ছে। লিড দিচ্ছেন গলায় সোনার চেইন ঝুলানো এক ব্যক্তি। আমার সামনের এক চীনার হ্যান্ডব্যাগে থাকা ব্যক্তিগত ক্যামেরাকেও অবৈধ ঘোষণা করা হলো। ব্যাটার প্রবল আপত্তিতে সেটা সোনার চেইন ঝুলানো ব্যক্তি আবার ব্যাগে রেখে দিলেন। একসাথে অনেকের ব্যাগ খুলে এক অস্থির পরিবেশ। এর মাঝে চীনার আবার মনে পড়লো তার ক্যামেরা কথা। দুইটা ব্যাগে একটু হাতাহাতি করে না পেয়ে ব্যাটা সোনালী ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন- ক্যামেরাটা কই। কাস্টমসের সেই লোক চীনার ব্যাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্যামেরা বের করেই ঝারি- ইয়ু টেল মি লায়ার, আই নো লায়ার, ইয়ু লায়ার। ইয়ু টেল মি থিফ, ইয়ু থিফ, গ্রেটেস্ট থিফ। ততক্ষণে চীনার অন্য একটা ব্যাগ থেকে সব জিনিসপত্র টেবিলে ঢালা হয়ে গেলো। খানকির পোলা দাঁড়া তোরে মজা দ্যাখাইতেছি- এই কথা শুদ্ধ বাংলায়।

সমসাময়িক ধারা বজায় রেখে লাইনে দাঁড়ায়ে মনে মনে কইলাম, ওয়েলকাম হোম!


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়)
বেশ লাগল, ঘটনা কি শেষ ! ভালই এগোচ্ছিল, আহা পর্কের চপ, পর্কের চর্বি দিয়ে ভাজা, উম্মম!

রায়হান আবীর এর ছবি

ভাবতেই মাঝরাতে ক্ষিদা পায়া গেলো মন খারাপ

শ্যাষ

food এর ছবি

এমনি শেয়ার করছি।পর্কের distinct smell আছে- not quitable suitable to Bangladeshi palate (assumption originated from personal experience and that of quite a few Bangladeshis around)।জাপানে থাকার সময় বিভিননো পারটিতে, যেখানে জিগ্যাসা করার জন্য আশে পাশে কেউ ছিলোনা, কিন্তু খিদে শামলানো tough হয়েছিলো, মাঝে মাঝে ভুলে মুখে দিলেই টের পেতাম।Pork is usually cheaper than beef (and that's why they use it in many dishes in the restaurants), and my Jap friends usually used to prefer beef to pork. কিন্তু কারো কারো ভালো লাগতেই পারে!

সাফি এর ছবি

'চাইনিজ খাওয়ার' সঠিক বিবরণটা সুকৌশলে চাইপা গেলেন।

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনি ভালো লুক না সেইটা সুকৌশলে আবার প্রমান করলেন দেঁতো হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

হো হো হো

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড  এর ছবি

চপ স্টিকের কাহিনী কিছুই বললেন না তো, উহারা নাকি চপ স্টিক দিয়া সুপ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে? আমি মনে করেছিলাম আপনি হারায় গিয়েছেন চীন গিয়ে। সেই যাবার আগে এক ফেশবুক স্ট্যাটাস তারপর আর খবর নাই।
যাই হোক ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে এটাই শেষ সুখবর। আচ্ছা শাদা হারাম পানীয়টা কি ভদকা ছিল? নাকি ওদের ট্রাডিশনাল কিছু?
( হামীম,বকক)

রায়হান আবীর এর ছবি

চপস্টিক দিয়া স্যুপ খায়া ফেলে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ভদকা ছিলোনা সিউর। স্থানীয় নাম কি জানিনা।

সাফি এর ছবি

ভাবগতিতে মনে হইতেছে দোচোয়ানির চাইনিজ ভায়রা ভাই, আম্রিকায় যার নাম হইলো মুনশাইন

ফাহিম হাসান এর ছবি
মরুদ্যান এর ছবি

ইয়ু টেল মি লায়ার, আই নো লায়ার, ইয়ু লায়ার। ইয়ু টেল মি থিফ, ইয়ু থিফ, গ্রেটেস্ট থিফ

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

রায়হান আবীর এর ছবি

হাইসেন না। আতংকে হাত-পা ....

রায়হান আবীর এর ছবি

(ঘ্যাঁচাং)

মাহমুদ.জেনেভা এর ছবি

পুরানো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন তো। আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা দক্ষিণ কোরিয়াতে। বিমান বন্দর থেকে নেমে কুন্সান ইউনিভার্সিটি যাবার জন্য ট্যাক্সি অলাকে বল্ললাম সে রাজি হয়ে আমাকে গুন সান ইউনিভার্সিটি নিয়ে গেল। এদের বর্ণমালাতে ইংরাজি K নাই। রাত ১ টার সময় আমি আবিষ্কার করলাম আমি এক শহর ছারিয়ে অন্য শহরে চলে এসেছি!!
কোরিয়াতে আমার ক্লাস শুরু হতো সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে সব কিছু করিয়ান ভাষায়। প্রতি ক্লাশে ১০ কি ১৫ মিনিট পর থেকে আমার কি যে ঘুম আসতো। এক দিন চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে বিতি কিচ্ছিরি অবস্থা। তারপর প্রফেসর তার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলে “ ইউ ইংলিশি গুল আই ইংলিশি নো গুড ইউ নো ওয়ারী ইউ পাশ ইউ পাওয়ার পয়েন্ট” প্রথমে এইটা ভালো করে বুঝিনি পরে বুঝতে পারলাম আমাকে একটা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করতে হবে তাইলেই পাশ।।
ল্যাবে কিছুই ভালো লাগতনা Kunsan শহরে একজন বাংলাদেশি ও নাই তাই মন খারাপ করে বসে থাকতাম। ল্যাব মেট রা খুব ভাল ছিল তবে ইংরেজি একদম শুন্যের কোঠায়। মাঝে মাঝে ধরে বারে নিয়ে যেত না যেতে চাইলে বলত “ ইউ গো বার ইউ গুড ইউ নো গো বার ইউ নো গুড” তাও আমার করিয়ান ভাষার গুগল ত্রান্সলেশন!!
আর ও কত যে কাহিনী। একটা ব্লগ পোস্ট দেয়া যাবে। তবে সবচেয়ে ভাল লাগতো ‘কিমচি’ নামে এক ধরনের খাবার পর্ক ভাজা আর সবুজ বোতলে হারাম পানিয় নাম ‘সুজু’ খেতে দেঁতো হাসি
সব কিছু বিসর্জন দিয়ে এক সেমিস্টার শেষ করে ইউরোপে চলে এসেছি তবে ওদের ইংলিশ এখনো ভুলি নাই।
বি দ্রঃ চিন থেকে জমজমের পানি আনেন নাই? আমি প্রতিবার নতুন নতুন কায়দায় আনি অনেক কায়দা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ফেলেছি তাই পুরান হয়ে গেছে, আগামি বছর কেম্নে আনব এইটা নিয়া ব্যাপক চিন্তায় আছি দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

নাহ! জমজমের পানি আনার প্ল্যান ছিলো। শেষ সময়ে এসে প্ল্যান বাতিল করেছি। নেক্সট টাইম অবশ্যই একটা হাদীসের বই সঙ্গে নিয়ে যাবো ব্যাগের উপরে রাখার জন্য দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পোড়ানোর অর্ডার দিয়ে বিয়ার নিয়ে বসে পড়লাম।

খালি বদনাম হয় নন্দঘোষের।

রায়হান আবীর এর ছবি

নন্দঘোষের বদনাম করলাম কই? দেঁতো হাসি

সুমাদ্রী এর ছবি

অনেকদিন পর একটা সুখাদ্য চাইনিজ খাবার খেলাম হাসি ইয়াল্লা, আপনি পর্ক খাইসেন!! মাই আংকেল টোল্ড মি, পর্ক মিন্স শূয়র, শূয়র ইজ হারাম!!

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

রায়হান আবীর এর ছবি

ইয়েজ পর্ক ইজ শুয়োর, এন্ড ইট ইজ সো ভেরি মাচ হ্রাম দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

োনেক ভালো লাগলো । চীন সম্মন্ধে একটা ধারণা পাওয়া গেলো। চলুক

রায়হান আবীর এর ছবি

নাহ কোনো ধারণাই না এটা। ঘুরে আসুন দেখে আসুন দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চপস্টিক সম্পর্কে কিছু বাহাস করলে মন্দ হত না। ইশ, আমার টাকা থাকলে সারা জীবন ঘুরে বেড়াতাম।

Jawad

রায়হান আবীর এর ছবি

চপস্টিকের বাহাসের কথা মনে নাই। প্রথম কয়েকদিন চামচ ব্যবহার করলেও পরে প্রচুর প্র্যাকটিসের মাধ্যমে প্রায় আয়ত্ব করে এনেছিলাম দেঁতো হাসি

স্পর্শ এর ছবি

তিয়ানজিনের উপভোগ্য সন্ধ্যা দেখে ভাবলাম, এমন সন্ধ্যার অপেক্ষায় সারাদিন পরিশ্রম করা যায়। আমাদের দেশে এমন সন্ধ্যা নেই, আনন্দ নেই, যেটা সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের দিনের বেলার কর্মদক্ষতার উপর।

মন খারাপ

ভালোই অ্যাডভেঞ্চার হলো তাইলে! খাওয়াদাওয়ার বর্ণনা দারুণ হইসে..


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

হ! এডভেঞ্চার ভালৈ হইছে।

শান্ত এর ছবি

পরের পর্ব কি আসবে, না এখানেই শ্যাষ?

ভালো লেগেছে।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

রায়হান আবীর এর ছবি

ঢাকা আয়া পড়লাম না, আর পর্ব কই পামু দেঁতো হাসি

সবজান্তা এর ছবি

ছবিগুলি এতো ছোট সাইজের কেন ? একটু বড় রেজ্যুলেশনের ছবি দাও।

তোমার চীন সফরের বর্ণনা শুইনা মজা লাগতেছে। কমবেশি সবারই মনে হয় প্রথমবার একই অভিজ্ঞতা হয়। আর চীনে যায়া শক্ত প্রকৃতির মদ পাইসো শুইনা একটু অবাকই হইলাম। আমি তো চায়নার সব দোকানেই শুধু ১০-১২% এর ওয়াইন। এরচে ওদের Tsingtao নামের বীয়ারটা খুব ভালো। অবশ্য অ্যাজ ইজ্যুয়াল, আমারও চীন বিষয়ক উইকিপিডিয়া ছিলেন পাণ্ডবদা। উনি না থাকলে পিপাসায় মারা যেতাম দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি আমার জানা সব কিছু সরল মনে বলে দেই, যেন মুমিন বান্দারা হারাম-হালাল বাছ-বিচার করে ঈমান-আক্বিদা নিয়ে চলতে পারেন। এখন দেখি এরা রাজ্যের হারাম জিনিস খেয়ে উপদেষ্টা হিসেবে আমার নাম চালিয়ে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ্‌!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রায়হান আবীর এর ছবি

আল্লাহ আপনারে যে কি কর্বো দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

Tsingtao আর পানির দাম প্রায় কাছাকাছি। আমি চায়নাতে নিজের পয়সা দিয়া পানি কিনি নাই কখনও। আশে পাশে ফ্রি পানি না থাকলে Tsingtao মেরে দিতাম দেঁতো হাসি

ফেসবুকে দিবো দেখি ছবিগুলা হাসি

সবজান্তা এর ছবি

আরে, কী 'কাকপানীয়' মিল !

আমি বলতে যায়াও বললাম না, যদি কেউ ভাবে চাপা মারতেছি। আমি যখন গেছিলাম তখন পানির চেও এক আর এম বি কম ছিলো কিংবা সমান ছিলো সিংটাও -এর দাম। সিরাম জিনিস। ওইটার আবার দুই ভার্সন আছে। একটা হোটেলের পাশের দোকানে পাইতাম নর্মাল ক্যানে- আরেকটা খাইছিলাম "উইন্ডো অভ দ্য ওয়ার্ল্ড" দেখতে যায়া, কাচের বোতলে, অনেকটা মাউন্টেন ডিউ সাইজের। ওইটা বেশি টেস্টি।

মজার ব্যাপার হইলো আমার কয়েক রাত এমনও গেছে আসলেই পিপাসায় পানির বদলে বিয়ার খাইছি, যদিও পরে দেখছি শরীর কিছুটা ডিহাইড্রেটেড হয়া যায়। আরেকটা মজার ঘটনা মনে আছে, এক রাতে আচমকা ঘুম ভাইঙ্গা গেছে। মনে পড়লো হোটেলের ফ্রীজ ভর্তি কইরা সিংটাও রাখছিলাম। রাত চারটার সময় দুইটা বীয়ার খায়া আবার ঘুম দিলাম।

শালার জীবন, ঢাকাতে এই স্বাধীনতাটাই মিস করি মন খারাপ

রায়হান আবীর এর ছবি

নাহ! আসলেই আপনার সাথে আমার অনেক মিল। সন্ন্যাসীর ভদাকা খাওয়ার নিয়মাবলী পোস্টটা পড়ছেন? ঐখানে প্রথম পড়ছিলাম, খ্রাপ জিনিস খায়া ঘুমাইলে একটা সময় পর প্রচন্ড পানি পিপাসায় ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন ঠান্ডা বিয়ার মেরে দেওয়া উচিত। ঢাকায় তো আর এই কাম করার সামর্থ্য নাই। তয় চীন দেশে একরাতে একটু বেশি খ্রাপ জিনিস পানের পর ভোরে পিপাসায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ফ্রিজ থেকে দুই বোতল সিংটা মেরে দিয়ে ঘুমায়ে পড়লাম দেঁতো হাসি

ডিউয়ের বোতলের মতোটা খাইতাম ডিনারের সময়, আরেকটা ব্রান্ড ছিলো Snow. হোটেলে সিংটাই চালাইতাম অলটাইম হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যাপক ফাঁকিবাজি পোস্ট। আরো পাঁচ পর্ব লেখার মতো বিষয়কে এক পর্বে ঠেসে দেয়া হয়েছে।

ভাষাঃ পেটের দায় বড় দায়। পেটের দায়ে বহু সাহেব এখন চীনা ভাষা শিখছে। আমরাও শীঘ্রই শেখা শুরু করে দেবো। দুনিয়া জুড়ে চীনাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো বাড়লে চীনা ভাষার দাপটও আরো বাড়বে।

খাদ্যঃ হজম করতে পারলে স্থানীয় খাবার হচ্ছে সেরা খাবার - কি দামে, কি মানে, কি স্বাদে। তিয়ানজিন হচ্ছে উত্তর-পূর্ব চীন। এখানকার খাবারের সাথে দেশের অন্য অংশগুলোর খাবারের সাথে মিলবে না। তবে চীন সাগরের তীরবর্তী যে সব শহরে যাবার সুযোগ হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটার খাবার চমৎকার লেগেছে।

কনফারেন্সঃ এই ব্যাপারে তো কিছুই শুনতে পেলাম না।

মহাপ্রাচীরঃ এটা নিয়েও বিস্তারিত লেখা চাই।

অটঃ যিজিয়ান = যিশিয়ান, সিগুয়ান = শুয়াঙিয়াশান


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রায়হান আবীর এর ছবি

আহ! এইটুকু এক সন্ধ্যা বিসর্জন দিয়ে চীনেই লিখে এনেছিলাম। ঢাকায় এসে আর সুখ স্মৃতি মনে করে হাজারও পেইনের জীবনে আর পেইন বাড়াইতে চাই না দেঁতো হাসি

কনফারেন্সের ঘটনা জানায়ে স্যারকে প্রতিরাতে বিস্তারিত মেইল লিখতাম। আমাদের ল্যাবে বেশ মজা- বাংলায় সবাই মেইল চালাচালি করে হাসি

আপনার কারেকশনের অপেক্ষায় ছিলাম। ঠিক করে দিচ্ছি হাসি

নিটোল এর ছবি

লেখা ভালো হইছে। দেইখেন, একদিন আমিও ....... হাসি

_________________
[খোমাখাতা]

রায়হান আবীর এর ছবি

অবশ্যই যাবা।

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে।

রায়হান আবীর এর ছবি

জেনে ভালো লাগলো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হারাম খাইছেন ।।। ভাল করেন নাই।
আর কেউ খাইতে অনুপ্রাণিত হইবেন না প্লিজ। চোখ টিপি

বনের রাজা টারজান,

রায়হান আবীর এর ছবি

যো হুকুম বনের রাজা টারজান!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শিক কাবাবের গন্ধটা আমিও পেলাম যেন চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রায়হান আবীর এর ছবি

ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী!

ক্রেসিডা এর ছবি

দারুন সাবলীল লেখা। অনেক আনন্দ নিয়েই পড়লাম।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

রায়হান আবীর এর ছবি

আনন্দিত হলাম হাসি

তানজিম এর ছবি

চীনা বালিকার হাতে জাপানী ভদ্রলোকের চোখ টিপি মারা খাওয়ার ঘটনা শুনে বিমলানন্দ পেলুম গুল্লি

রায়হান আবীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

দারুন লাগল। হাসি

তবে মিয়া ব্যাঙ না খাইয়া ভুল করছেন। একবার খাইলে মজাডা টের পাইতেন। আর সাপ খাইলেন না যে, ধুর! সাপের মাংস এত টেস্ট ওফ, তাও শুনছি চাইনিজরা যা বানায় না......

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনে খাওয়ান দেঁতো হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

এদিকে আইয়েন একবার। আওয়াজ দিয়েন আসার আগে। সাপ খাওয়াতে না পারলেও ব্যাঙ নিজ হাতে রান্না কইরা খায়ামু, প্রমিস। দেঁতো হাসি

তারানা_শব্দ এর ছবি

হয়রান ফিচারিং মৌসুমী ভৌমিকের গান গুনগুন করে লিফটের দিকে হাঁটা দিলাম: আমি যা দেখি তুমি তা দেখো কি, আমি যা শুনি তুমি তা শুনো কি, আমি যা বলি তুমি তা বুঝোনি ...

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আমার ক্লাসের চৈনিক বন্ধুদের এক দিন জিজ্ঞেস করলাম তোমরা কেউ ফেইসবুকে আসোনা কেন? সারা দিন পড়াশোনা করো? তখন তারা দন্ত বিকশিত করে কহিল ' উহা চীন্দেশে হারাম', তারা নাকি চাইনিজ ফেইজবুক ইউজ করে, তাই ইংলিশ ফেইসবুকে তেমন অ্যাক্টিভিটি নাই।

লেখা ভালৈছে!

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

সবজান্তা এর ছবি

চাইনিজ ফেসবুক জিনিসটার নাম সম্ভবত qq.com; চীন বিষয়ক আমার সামান্য অভিজ্ঞতা দেখছি qq ওদের দেশের ইন্টারনেটের মহামারি।

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জিং থেকে শুরু করে ভিওআইপি, ফাইল শেয়ারিং প্রটোকল- কী নাই ওদের !!

রায়হান আবীর এর ছবি

qq এর কাহিনি পরিষ্কার হৈলো আমার কাছে। একটা ট্যাবলেট আনছিলাম, সেটায় প্রি ইন্সটল করা qq নামক এক এন্ড্রোয়েড আপ। সব চাইনিজে লেখা তাই জিনিসটা কি বুঝিনাই, তবে ফোন, চ্যাটিং এর কিছু সেটা বোঝা যাচ্ছিলো দেঁতো হাসি

নুভান এর ছবি

ফেইসবুকের চায়নিজ ভার্সন QQ না। QQ হল মেসেঞ্জার আর ফেইসবুকের মতন সামাজিক যোগাযোগের সাইট হিসেবে ওরা ব্যাবহার করে renren যার পূর্ব নাম ছিলো শিয়াও নেই (xiao nei)।

সবজান্তা এর ছবি

আচ্ছা, আমার ধারণা ছিলো qq.com ই ওদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট; আসলে চাইনিজ সবকিছুতেই এতোবেশি এই সাইটটার নাম দেখি। ওদের ফাইল শেয়ারিং প্রটোকলটাও মনে হয় বেশ চলে চায়নাতে।

তবে চাইনিজ একটা সাইটের বেশ ফ্যান আমি, baidu.com- এইটা চাইনিজ গুগল বলা যেতে পারে; তবে ভাষার বাঁধার কারণে নড়াচড়া করা একটু কঠিন। কিন্তু অনেক দুষ্প্রাপ্য টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট ওখানে সার্চ করে পেয়েছি। আরেকটা সাইট ছিলো, চাইনিজ scribd বলা যেতে পারে, নামটা মনে পড়ছে না !

রায়হান আবীর এর ছবি

*না- গানটা খুব প্রিয়, তাই ফিচার করছি দেঁতো হাসি

মন মাঝি এর ছবি

আচ্ছা, চিনারা - তেলাপোকার চাটনি, কেঁচোভর্তা, উঁইয়ের সুরুয়া, ইঁদুর সেদ্ধ, মাকড়সা ফ্রাই আর তার ডিমভাজা - এইসব জিভে জল আনা খাবারগুলা খায় না?

****************************************

ওডিন এর ছবি

পান্ডবদার লগে একমত। বেশি ছুট হয়া গেলো লেখা। 'হয়রানের চীন দর্শন' সিজন টু চাই উইথ এক্সট্রা ফিচারস হাসি

আমি গেলোবার ভুটান গিয়া একগোছা চপস্টিক কিন্যা আনছি। নুডলস পাস্তা কাচ্চিবিরিয়ানি ইত্যাদি খাওয়া পিরাকটিশ করতেছি মাঝে মাঝে। জিনিসটা ভালই মনে হইলো। হাইজিনিক আছে। তবে মাখা মাখা আঠালো খাবার দাবার ছাড়া ডাল-ভাত-মাছের ঝোল ইত্যাদি খাওয়া যায় না। এইটা একটা ঝামেলা। হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

আম্মো একমত দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।