ফেব্রুয়ারি ছয়

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০২/২০১২ - ১০:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুমায়ুন আহমেদের প্রকাশনী যেমন 'অন্যপ্রকাশ' তেমনি হুমায়ুন আজাদের 'আগামী'। দুই লেখকের অবস্থান অনুযায়ী মেলায় গত দুই প্রকাশনীর অবস্থানগত দূরত্বেরও সামঞ্জস্যতা ছিলো। কিন্তু এবার অন্যপ্রকাশ যে গলির শেষ মাথায় সে গলির মধ্যভাগে আগামী। গতকাল আগামী প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ছোটভাইয়ের জন্য হুমায়ুন আজাদের 'কিশোর উপন্যাস সমগ্র' কিনবো বলে। একটু দূরে অন্যপ্রকাশে উপচে পড়া ভিড়, আগামী ফাঁকা ফাঁকা। আরাম করে আরও কিছু বই উলটে পালটে দেখছি। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ালো এক খোঁজ দ্য সার্চ প্রেমিকা, একটু দূরে তার প্রেমিক জলিল। সামনে মেলে ধরে রাখা বইয়ের তাকের দিকে তাকিয়ে, একটু নেড়েচেড়ে হতভম্ব হয়ে, আবেগে ইমোশোনালিত হয়ে প্রেমিকা জলিলকে ডাক দিলো। এই জলিল, দেখো কতোগুলা হুমায়ুন আহমেদের বই। জলিল এগিয়ে আসার আগেই, বিক্রয় বালিকা প্রেমিকাকে শুধরে দেয়, আপু, হুমায়ুন আহমেদ না, হুমায়ুন আজাদ।

প্রেমিকা অবাক হয়ে বইগুলোর দিকে আবার তাকায়। তাই তো! বিরস বদনে সে চ্রম ভিড়ে ভিড়াক্রান্ত অন্যপ্রকাশের দিকে হাঁটা দেয় আবার। হুমায়ুন আহমেদকে পেতে হলে ভিড় সহ্য করতে হবে, পেইন নিতে হবে। হুমায়ুন আহমেদ কেষ্ট। তাকে পাবার জন্য কষ্ট করা ফরজ।

আগামী এবার আলোচিত অন্য কারণে। আঠারো বছর পর এবার বাংলাদেশে (তসলিমার ভাষায় 'মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ' বাংলাদেশ) প্রকাশিত হয়েছে তার গ্রন্থ 'নির্বাসন'। ২০০৭ এ প্রকাশিত 'দ্বিখণ্ডিত' বইটির জন্য মৌলবাদীদের হুমকিতে নভেম্বরের জোরপূর্বক ভারত থেকে নির্বাসনের কাহিনি নিয়েই লেখা বইটি।

আগ্রহ পেলাম না। আমিও হাসিব ভাইয়ের দলেই। দিন শেষে তসলিমা নাসরিনকে চ্রম মাত্রার এটেনশন সিকারই মনে হয়। তার লেখায় তেমন কিছু পাইনা।

বহুকাল আগে একবার ছুটিতে বইমেলা আসলাম বন্ধুরা মিলে। সবার কাঁধে ব্যাগ। শুদ্ধস্বরের মতো, সেবার আমাদের প্রিয় প্রকাশনী ছিলো 'কাকলী'। কাকলী তখন হুম্যানের প্রকাশক। আর কাকলীর প্রকাশক আমাদের আরাফাতের আব্বা। আমরা কাকলীর সামনে দাঁড়াইলাম, আরাফাতরে পাশে রাইখা সবাই একটা কইরা হুম্যানের বই চুরি করলাম।বরিশাল থাককালীন সময়ে এই একটা বইমেলার স্মৃতিই মাথায় আছে। বাকিগুলার সময় বোধকরি ছুটি ছিলোনা।বছর ঘুরে মেলা আসলেই এই স্মৃতি চাগা দেয়। বইমেলায় ঢুকে কাকলী প্রকাশনী আর আংকেলের চেহারা দেখলে এখনও বুকটা ধুক কইরা উঠে মন খারাপ

নিজের বইয়ের ছবি তুলতে ভালো লাগলে আমার কী করার আছে? অবিশ্বাসের দর্শনঃ আমার বই, আমাদের বই দেঁতো হাসি

আমরা সবাই রাজা আমাদেরই বইয়ের রাজত্বে।

মেলায় হাঁটতে হাঁটতে মজারতম ব্যাপার চোখে পড়লো। ডিটেকটিভ উপন্যাস নিয়ে এসেছে 'ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ'।

বিড়ি ব্রেকে গিয়া দেখি আমাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনি। উনারা রেস্ট নেওয়ার জন্য বসে আছেন সেটা ভেবে নিয়ে লাইক এ বসের মতো বিড়ি ধরায়ে ফেললাম সবাই মিলে। দুঃখের সাথে একজন বলে উঠলেনঃ মামারা একেবারেই সমানেই ধরাইবেন। একটু দূরে যান। দূরে গিয়া উনাদের ছবি তুললাম।

ক্যামেরা হাতে আসলে ভাবছিলাম সুন্দরীদের ছবি তুইলা ফাডায়ালু সবকিছু। কিন্তু বাস্তবে, "ডর লাগে"।

অন্যপ্রকাশের গলি। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, রানা কোথায়? where art rana?

অনেকদিন পর দেখা পাইলাম প্রিয় বেক্কল ছড়াকারের।

জনগণ মেয়ে দেখে। আমি ক্যামেরা চোখে জনগণ দেখি।

ব্যানার বদলাতে আর কয় বছর বাকি তার হিসেব কষি।

কপিরাইট অফিস নামটা শুনলেই আমার ক্যানো জানি কাগু রাইট অফিস মনে হয়। খুব খ্রাপ মন খারাপ মনে হওয়াটা একেবারেই উচিত না।

লিটল ম্যাগ চত্ত্বর।

এই লোকগুলার কাছ থেকে প্রাপ্ত বখরা ভাগাভাগি নিয়ে সেদিন নিজেরা নিজেরা লাঠি ফাইটিং খেলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

বের হয়ে যামু যামু করতেছি, এমন সময় উদয় হইলো সুহান, অম্লান। তারা ফেব্রুয়ারি ছয়ে ঢুকতে চায় বইলা শরীর পাইতা দিলো। আমি ক্যাডেট কলেজে পড়ছি। আশরাফ ভাই, অম্লান, সুহানঃ দিলাম 'ঢুকায়া' দেঁতো হাসি

*পুরা অ্যালবাম


মন্তব্য

চরম উদাস এর ছবি

জলিল ভাইয়ের কাহিনী শুনে বড় মজা পাইলাম দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

জলিল ভাই তার প্রেমিকারে এইটা কিনে দিতে পারে

চরম উদাস এর ছবি

খাইছে

ডাইনোসর এর ছবি

এবার মেলায় যেতে পারবো কিনা তাই সন্দেহ। গুলেই স্বাধ মিটালাম।
ধন্যবাদ আবির ভাই।

রায়হান আবীর এর ছবি

ইশ! ছোট বেলায় বাসার এক দাদুকে দেখে ভাবতাম বড় হয়ে গুল খাবো। আজকে বহু বছর বাদে বড় হয়ে গুলের কথা মনে গেলো দেঁতো হাসি

চরম উদাস এর ছবি

অফটপিক ১ - আপনার বইটা অনলাইনে পাওয়া যাবে? লিঙ্ক দেন (নগদ পয়সায় কিনব চাল্লু )
অফটপিক ২ - পরিবর্তনশীল কই?

রায়হান আবীর এর ছবি

কিনতে পাওয়া যায় না চাল্লু মুক্তমনার পাতায় বেশিকিছু অধ্যায়ের পিডিএফ সংযোজিত আছে।

রায়হান আবীর এর ছবি

আর পরিবর্তনশীল তার ফেসবুক পেইজে লিখা রাখছে, সবকিছু থেকে অবসরপ্রাপ্ত। তবে সে শুনছি আমার এই সিরিজটা পড়তে আসে। হয়তো আপনার মন্তব্য তারও চোখে পড়বে।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

এই সুযোগে নিজেদের বিজ্ঞাপন করে নেই। এই লিঙ্কটা দেখেন তো আবীর ভাই। http://boi-mela.com/BookDet.asp?BookID=13024
আর গতকাল বিকালে মেলায় কি আপ্নারেই এই পুলিশের দোকানের ছবি তুলতে দেখলাম তাইলে? ঃ্ড

তিথীডোর এর ছবি

অফটপিক ২ - পরিবর্তনশীল কই?

ভাইরে, এই পুলারে লেখালেখিতে ফেরার জন্য যে পরিমাণ তেল মারা হয়, সৌদি মোল্লারা শুনলে ভিরমি খাবে!
তবু কে কার কথা শোনে! রেগে টং

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

পৃথ্বী এর ছবি

ঠোলাদের স্টলের ডিটেকটিভ উপন্যাসগুলার ডিটেকটিভরা কি শেষ পর্যন্ত্য রহস্য সমাধান করতে পারে?

রায়হান আবীর এর ছবি

পইড়া রিপোর্ট করো দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

বিজোড় দিনগুলি নিয়ে কেউ লিখবে না?

আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ তো নানা ক্রাইম সলভ করে। সেগুলোর বিবরণ কি কোথাও পাওয়া যাবে? আমার খুব পড়ে দেখার কৌতূহল।

শিশিরকণা এর ছবি

হ! ফুলিশ ভাইরা অতটা ফুলিশ নন। চাইলে এরা মেলা কেরদানিই দেখাইতে পারে। আমিও পড়তে চাই।
অট্ঃ ঠোলাদের স্টলের আপা কিন্তু দেখতে ভালোই আচেন। চোখ টিপি

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

কালো কাক এর ছবি

ঠিক। একটা আপা কানেনাকে ছোট গয়নাগাটি পড়া, চোখে হাল্কা কাজল। ঐ আপাকে খুব পছন্দ হইসে। তবে একটাও হ্যান্ডসাম ছেলে ঠোলা নাই। একজন বুড়া আংকেল আছে (ছবিতে যিনি) আর বাকিরা রাস্তায় যে মামুদের সমসময় দেখা যায় এমনি। মন খারাপ
ডিটেক্টিভ উপন্যাস এসেছে নাকি? ডিটেক্টিভ উপন্যাস মনে করে হাতে নিয়ে দেখি বিশেষ দিবসের সংখ্যা নানান পদের জ্ঞানীপ্রবন্ধওয়ালা। আবার দেখতে হবে।

মাসরুফ হোসেন এর ছবি

''ডিটেকটিভ'' হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশিত পত্রিকা যেখানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মূলতঃ নিজেদের পেশার বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত বিষয়ে লেখালেখি করে থাকেন।

আশালতা এর ছবি

গুল্লি পোস্ট। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রানা মেহের এর ছবি

'রানা' র ছবি দেখে বাইরে যাবার ঠিক আগে লাফিয়ে লাফিয়ে লগিন করলাম দেঁতো হাসি

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনার জন্য বইমেলায় হাহাকার পড়ে গেছে রানাপু দেঁতো হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাসনীম এর ছবি

চলুক।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

পুলিশের স্টল?!

মাসরুফ হোসেন এর ছবি

ইয়ে মানে,আইডিয়াটা আমার ভালো লেগেছে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লাইকপাপী অম্লান পোলাটা থাকলেই ছবির মান খারাপ হয়া যায়। ধুর, ঢূঁকায়াই দিলো মন খারাপ

উচ্ছলা এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ কেষ্ট। তাকে পাবার জন্য কষ্ট করা ফরজ।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

চরম। দৌড়াইতেছে। দেঁতো হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

এইসব পোস্ট দেখলে মনে হয় মইরা যাই, তারপর বাংলা একাডেমির মাঠে কোন একটা গাছে শাখচুন্নী হয়ে জীবন কাটায় দেই।

ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ( গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার ইমো)

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

তারেক অণু এর ছবি

পুলিসের বই পাই কই !
দারুণ হচ্ছে---

চরম উদাস এর ছবি

কল্যাণদার কাছে পাবেন
BTW, এইডা কল্যাণদা না (বাম থেকে প্রথমজন)?? চিন্তিত

তানিম এহসান এর ছবি

সিরামইতো লাগে; সিরামইতো লাগে .. গড়াগড়ি খায়া হাসতেছি ..

যুধিষ্ঠির এর ছবি

পড়ছি। চলুক।

অন্যকেউ এর ছবি

১। সাহসী জনগণ সামনে গিয়ে বুক ফুলিয়ে মেয়ে দ্যাখে, আর ডরপোক ভীতু মানুষজন পিছন থেকে ছবি তোলে। ছিহহ!

২। এক বইয়ের লাজুক(স্বঘোষিত) লেখক রায়হানাবীর, অভিজিৎ'দা না থাকার সুযোগ নিয়ে দাঁত কেলিয়ে একের পর এক অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছিলো। এই ছবি পুস্টে নাই ক্যান, জাফর ইকবাল স্যার এই প্রশ্নের উত্তর দ্যান।

৩। রানার ছবির উপরের ছবিটা কোন স্টল ড়্যা? (আমাকে লুল ভাবিসনে যেন.. মিশেল ফুকোর বই দেখে জানতে চাইলুম দেঁতো হাসি )

৪। লিটল ম্যাগ চত্ত্বরের ছবিটা সুন্দর খিঁচেছিস। দেঁতো হাসি

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

মুহিত হাসান এর ছবি

ওইটা সংবেদের স্টল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

অনেকদিন পর আকতারকে দেখলাম

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অদ্রোহ এর ছবি

অ্যাম্নে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললেন? আপনি লোকটা বড্ড খতরনাক তো দেঁতো হাসি

পুলিশের স্টলের সামনে ইউনিফর্ম পরিহিতা বিক্রয়ললনাদের সামনে বেশ একটা ভীড়ভাট্টা চোখে পড়েছিল। এত ভীড়ের ফাঁকে ছবিটা অবশ্য মোক্ষম তুলেছেন। বলিহারি চোখ আপনার হাততালি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মতিয়াজ এর ছবি

এদ্দিনে বুজ্লাম আমার বিরহে না আমি না থাকার সুখেই তুই একের পর এক ব্লগ পয়্দা করে চলছিস।
ল্যাবে খালি বকর বকর কর্তাম বইলা কোন ল্যাখা তোর মাথায় আইতো না

পরিবর্তনশীল এর ছবি

কীরে ব্যাটা- ফেব্রুয়ারি ছয়ে থাইমা গেলি নাকি? হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।