রসিকতা

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বুধ, ২৪/০৯/২০০৮ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্যাডেট কলেজে কেটেছে জীবনের স্বর্ণযুগের ছয় ছয়টি বছর। নানা মজার কাহিনীতে পরিপূর্ণ সেই সময়টাকে ভুলে যাওয়া যায়না সহজে। ভাবলাম তারই কিছু সচলায়তনের সাথে ভাগাভাগি করি। আপাতত মজার মজার ডায়ালগ গুলো লিখি।

কলেজের অনেক ডায়লগ ভুলে গেছি। যেগুলো মনে আছে তার অনেকগুলোর জন্য অডিও ভিডিও ফাইল আপলোড করা দরকার (নাইলে ব্যপারটা ঠিক আসে না)। তাই ভাবলাম শুধু নিজের কলেজের ডায়ালগ না দিয়ে এরকম আরও যত ডায়লগ জানি সব জড় করে ফেলি। তবে অবশ্যই ক্যাডেটদের।

কুয়াকাটা যাচ্ছি। বাসের ভিতরে স্থান সংকুলানের অভাবে আমরা কয়েকজন বাসের ছাদে অবস্থান নিয়েছি। রাস্তা মোটামুটি থ্রিলিং। তখন আমাদের এক ক্লাস মেট (নাম বলবনা) গার্ল ফ্রেন্ডকে sms করছে…” কুয়াকাটা যাচ্ছি। বাসের ছাদে। রাস্তা প্রচন্ড খারাপ। যে কোন সময় পড়ে মরে যেতে পারি। কিন্তু এখন মরতেও আমার কোন দুঃখ নেই। কারণ আমি পেয়েছি তোমার লভ্‌ (love)।

নাম না বলার ব্যপারটা যখন এসেই পড়লো তখন সত্যজিত স্যারের কথা না বললেই নয়। তার একটা স্বভাব ছিল তিনি এক জায়গার কথা আরেক জায়গায় লাগাতেন। এরকমই একদিন সিনিয়ার এক ভাইয়াকে নিয়ে…”তোমাদের ৩ ব্যাচ সিনিয়র এক ভাই ISSB তে । নাম বলবনা। ভাইভা বোর্ডে ঢোকার পর তাকে বলল, নাইম, U are a cadet like a dirty”।

BMA তে এক সিনিয়ার জুনিয়ারকে শাস্তি স্বরূপ ৫ গোণার মধ্যে ২০টি front roll দিবার হুকুম করলেন। কিন্তু বেয়াদব জুনিয়ারটি তা করতে ব্যর্থ হওয়ায়…”I five, u two; What can i do?”

এবার মুজিব স্যার। শিক্ষকদের উপর জোরপূর্বক ইংরেজিকে মাতৃভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেয়ার কিছুদিন পর অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস রুমে। কোন একটা বাক্য ভুল করে pardon me বলতে যেয়ে বুকে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন…”Pronunciation”…..

সেই মুজিব স্যারই একদিন দ্বাদশ শ্রেণীর ফর্মে এডজুটেন্টের উপর কোন কারণে বিরক্ত হয়ে পার্ট নেয়ার জন্য বললেন- “তোমরা জানো আমি সেনাবাহিনীর লিখিত পরীক্ষায় চান্স পেয়েছিলাম। সেসময় যদি আমি ঢুকতাম তাহলে আজ আমি কি হতাম জানো?”। সাথে সাথে তাওফিক ভাইয়ের নির্বিকার জবাব। জানি স্যার, “হাবিলদার মুজিব”।

এবারে নাজমুল। ক্লাসে ঘুমানোর কারণে ওকে আর আশরাফকে স্যার চোখ ধুয়ে আসতে বললেন। আশরাফ জায়গা থেকে উঠলেও ভাইয়ের উঠার লক্ষণ না দেখে স্যার আবার তাড়া দিলেন। তখন নাজমুল আশরাফের উদ্দেশ্য । “আশরাফ আমার চোখ দুইটা নে তো। ধুইয়া নিয়া আয়।”

দুই ব্যাচ সিনিয়র ইয়াদনান ভাই। পরপর দুই দিন ডাইনিং হলে- “Dont limit the cross”. আহারে, বেচারা খুব নার্ভাস মনে হয়।

আমাদের আরিফের টিজ নাম ছিল problem আরিফ। নামটা তার সাথে কলেজে ঢোকার কয়েকদিন পরই যোগদান করেছিল। বেঁচে আছে এখনো। কিন্তু কেন? ক্লাস সেভেনে প্রথম দিকে হাউস লীডারের ফলইন এ- “ক্লাস সেভেন কারো কোন সমস্যা আছে?” সবাই চুপ। শুধু আরিফ হাত তুলে জানালো তার জানালার স্টপার ঢিলা। তার কিছুদিন পর আবারও রিফাত ভাইয়ের একি প্রশ্নের জবাবে আরিফঃ “ভাইয়া আমার ওয়াশিং পাউডার শেষ হয়ে গিয়েছে।” আহারে বেচারা…

মুস্তাফিজুর রহমানের একটা দারুন স্বভাব ছিল। 3rd প্রেপের শেষের দিকে (এই ধরুন ৯টা ৪৫) হঠাৎ ফর্মে ঢুকে ঘুমন্ত সাইফকে গায়ে ধাক্কা দিয়ে। “সাইফ, ওই সাইফ!” ধড়মড় করে সোজা হয়ে সাইফের উত্তর, “জি স্যার?”।”ঘুমাচ্ছিস বাবা, ঘুমা”

এক ক্যাডেট ফলইন নড়াচড়া করছে। এডজুটেন্ট প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে “Bloody cadet, Why r u moving? bloody razzak, bloody wasim. What is ur name?” “স্যার আলমগির”

আশরাফ ভাই। reunion এ তাকে এক ক্যাডেট এর প্রশ্ন। “আশরাফ ভাই কলেজে থাকতে ডাব পারতেন?” তার উত্তর “না আমি পাড়তাম না। গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকতাম চৌকিদার পেড়ে দিত।”

ঝিনাইদহ্‌ ক্যাডেট কলেজ। ওদের কলেজের থেকে বাইরে পালানোর জন্য হাউস থেকে দড়িতে ঝুলে ঝুলে ওয়াল এর ওপারে যেতে হয়। একবার দুই ক্যাডেট রাতে বাইরে গেছে। কোনভাবে NDM (Night duty master) সন্দেহ করেছিলেন। তিনি বাইরে যেয়ে ওই দড়ির সামনে দাড়ালেন। ততক্ষণে একজন দড়ির নীচে আর একজন ঝুলন্ত অবস্থায়। স্যারের প্রশ্ন "সাফায়াত কি কর?" "স্যার কালকে obstacle তো, তাই practice করছি।"

সকল নাম কাল্পনিক। কারও সাথে মিলে যাওয়া কাকতালীয় ছাড়া আর কিছু নয়......

রায়হান আবীর

গড় রেটিং

(০ ভোট)

Trackback URL for this post:
http://www.sachalayatan.com/trackback/11962

লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০০৮-০১-২৪ ২২:৪১)
উদ্ধৃতি | রায়হান আবীর এর ব্লগ | ৪টি মন্তব্য | পছন্দের পোস্টে যুক্ত | আপত্তি জানান | ১৩৬বার পঠিত

Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, রায়হান আবীর. Sachalayatan.com can not be held responsible.

১ | অয়ন | শনি, ২০০৮-০১-২৬ ০০:২৬

ভালো লাগলো

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | জবাব | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

২ | কিংকর্তব্যবিমূঢ় | সোম, ২০০৮-০১-২৮ ০২:৩১

উদ্ধৃতি
“তোমরা জানো আমি সেনাবাহিনীর লিখিত পরীক্ষায় চান্স পেয়েছিলাম। সেসময় যদি আমি ঢুকতাম তাহলে আজ আমি কি হতাম জানো?”। সাথে সাথে তাওফিক ভাইয়ের নির্বিকার জবাব। জানি স্যার, “হাবিলদার মুজিব”।

লেখাটা গুল্লি হইছে ...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | জবাব | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৩ | অতিথি লেখক [অতিথি] | মঙ্গল, ২০০৮-০১-২৯ ১৪:০৯

ক্যাডেট কলেজের ডায়ালগ গুলো সবচেয়ে ভালো চলে যখন ক্যাডেট কতগুলা একত্রিত হয়। বাইরের মানুষরা তেমন একটা মজা পায় না, কারণ ক্যাডেট কলেজের বিভিন্ন শব্দ এবং পরিবেশের সাথে তারা পরিচিত নয়। আপনার ক্যাডেট কলেজের লেখা ভালো লাগলে এখানে যেতে পারেন। http://cadetcollege.wordpress.com

রায়হান আবীর

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | জবাব | আপত্তি জানান

৪ | দ্রোহী | মঙ্গল, ২০০৮-০১-২৯ ২২:৫২

চমৎকার লেখা।
কি মাঝি? ডরাইলা?

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | জবাব | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।