সঞ্জীব স্মরণে

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/১০/২০০৮ - ১:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্লাস এইটে পড়ার সময় একটা ক্যাসেট কিনেছিলাম। দলছুটের "হৃদয়পুর"। ক্যাসেটটি কিনেছিলাম "বাজি" গানটা শুনে মুগ্ধ হবার কারণে। কিন্তু সবগুলো গান শোনার পর আমি "বাজি" র চেয়ে আরও সুন্দর একটা গান আবিষ্কার করে ফেলালাম। গানটা সঞ্জীব চৌধুরীর "চাঁদ"।

আমাকে, অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ
আমাকে, নিস্ব করে দিয়েছিল চাঁদ

গানটা এতো ভালো লেগেছিল, সারাদিন মাথার মধ্য ঘুরতো। কোন গান ভালো লাগলে আমি সাধারণত শুনতে শুনতে তা পঁচিয়ে দিয়। কিন্তু কি কারণে এই গানটি বেঁচে গেলো। সেদিন থেকেই আমি সঞ্জীবের ভক্ত। আজকে হঠাৎ আরেকটা গান শুনতে (খুব সম্ভবত তার গাওয়া শেষ গান) শুনতে হঠাৎ খুব মন খারাপ হয়ে গেল। আহারে আর কখন মৃদু কন্ঠে কেউ গাবে না......

চলতে চলতে অনেকটা পথ চলে এলাম
বলতে বলতে অনেক কথাই বলে এলাম
আখের রসে আরেকটুকু মিষ্টি দিও, প্রভু
আখের রসে আরেকটুকু মিষ্টি দিও......

ওই শিশুটি দারুন শীতে কাপছে কেমন
রাস্তা জুড়ে ভীড়ের মাঝে জীবন যেমন
ওই শিশুটির ভবিষ্যতে বৃষ্টি দিও......
আখের রসে আরেকটুকু মিষ্টি দিও, প্রভু
আখের রসে আরেকটুকু মিষ্টি দিও......

তাকে আমার সামনা সামনি দেখা হয়েছিল একবার। এখন অবশ্য মনে হয় সেই দেখাটা না হলেই ভালো হতো। আন্ত: ক্যাডেট কলেজ সাহিত্য সন্মেলনে তিনি এসেছিলেন ব্যণ্ড সংগীতের বিচারক হয়ে। আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণীতে। ব্যন্ড প্রতিযোগীতা হয় রাতে। ১০টি ক্যাডেট কলেজ তাদের গান পরিবেশ করার পর সাধারণত বিচারক হিসেবে যিনি আসেন তিনি ৫ থেকে ৬ টি গান করে থাকেন, এরকমই প্রথা। কিন্তু তিনি আসলেন কোন প্রস্তুতি ছাড়াই। স্টেজে উঠে খালি গলায় ১ টি গান গেয়ে আমাদের আনন্দ দানের পরিবর্তে ভালই বিরক্ত করলেন। সেদিন থেকে আর তাকে ভাল লাগতোনা, এমনকি তার গানও না। এভাবেই কাটলো দেড় বছর। ততোদিনে আইইউটি তে আমি। একদিন রুমমেট মহিব একটা গান ছাড়লো।

আমার বয়স হলো সাতাশ
আমার সংগে মিতা বাতাস
তোর দু'হাত চেপে ধরি
আমার বন্ধু ছিল আকাশ
কেন দ্বিধার চোখে তাকাস
আমি মেঘের ছোট ছেলে
বলে আমাকে আজ পেলে
আমার বুক দেখাবো তোকে বুকে রয়েছ বিদ্যুৎ
কিছু করলি মনে ধ্যুৎ, আমি খেয়েছি সপ্নকে জানিস বর্জ সখা আমার, আমার সাধ এখানে থামার
তোর আচঁল পেলে বাতাস, আর দরকার কি নামার?

আবার সঞ্জীবে ফিরে আসলাম। ওর গানের কিছু দারুন বৈশিষ্ট রয়েছে। কথাগুলো আধ্যাত্মিক। একবার শুনে বোঝা কঠিন। কিন্তু হঠাৎ কোনটা বুঝে গেলে দারুন একটা ভাল লাগা সৃষ্টি হয়। আর দরদ মাখা কন্ঠটা শুনলে দুনিয়া উথাল পাথাল হয়ে যায়।

তোমার ভাঁজ খোলো, আনন্দ দেখাও করি প্রেমের তরজমা
যে বাক্য অন্তরে ধরি, যে বাক্য অন্তরে ধরি
নাই দাড়ি তার নাই কমা।

তীর্থে তীর্থে বেড়াই ঘুরি, পন্থে পথে বেড়াই ঘুরি
মনেকে বেকা ত্যাড়া করি, মনেকে ব্যঁকা ত্যাড়া করি
মনের মেঘ তো সরে না।

দাড় টেনেছি দাড়ির সঙ্গে, তীর ভেঙ্গেছি তারি রঙ্গে
কি দি ভংগ নারী রঙ্গে, পুষ্পে মধু ধরেনা...

মরে গেলেও তিনি ভাগ্যবান নিঃসন্দেহে। তার মৃত্যু আমার জীবনে কোন প্রভাব ফেলবে না। পিসির অডিও ড্রাইবে তার গান গুলো ছিল, এখনও আছে। খালি একটাই পার্থক্য নতুন কোন গান সেখানে ঢুকবেনা। নতুন করে হয়তো আর মুগ্ধ হবনা, কিন্তু নিঃসংগ অবসরে তিনি আমার পাশে বসে থেকে গাইবেন......

তবে এইহোক, তীরে জাগুক প্লাবন
দিন হোক লাবণ্য, হৃদয়ে শ্রাবণ
তুমি কান্নার রঙ, তুমি জোছনার ছায়া
তুমি কান্নার রঙ, তুমি জোছনার ছায়া...

আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত
আমি হেটে গেছি বিরান পথে
আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়
ছুয়ে কান্নার রঙ, তুমি জোছনার ছায়া
ছুয়ে কান্নার রঙ, তুমি জোছনার ছায়া...

রায়হান আবীর


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

হায় সঞ্জীব
আমাদের সঞ্জীব দা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রূপক কর্মকার এর ছবি

আপনি শুধু সুররসিকই নন, গানের বাণীরসিকও। লেখাটা খুব ভালো।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

অমিত আহমেদ এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই লেখাটা কবে লেখলেন?
আমারে আদেশ করলেন সঞ্জীবদারে নিয়া লেখতে আর নিজেই লেইখালাইলেন?
ভালো হইছে...
এই ভালো...
আমি লেখতে গেলে সিরিজে কুলাইবো না...

আহারে সঞ্জীবদা...
সকালবেলা চোখটা ভিজে গেলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।