"চারুলতা অ্যানাটমি" (দ্বিতীয় পর্ব)

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/১০/২০০৮ - ১:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্বেই বলা হয়েছিল, রবি ঠাকুর উপন্যাসের শুরুতেই অমলের কথা বলেছেন। অর্থাৎ অমল অনেকদিন আগে থেকেই ভূপতির বাড়িতে ছিল। কিন্তু সিনেমার কারণে তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়েছে। সিনেমার মধ্যে তাকে নিয়ে আসার আগে সত্যজিতের প্রমাণ করা দরকার ছিল বেশ কিছু জিনিস। যেমন অমল ভূপতির আপন ভাই না হওয়া স্বত্তেও সে ভূপতির স্নেহের পাত্র, চারুর সাথে অমলের মনের মিল বা পূর্ব সখ্যতা। নিঃসন্দেহে এ ক্ষেত্রে তিনি দারুন খেল দেখিয়েছেন। অমলের সাথে ভূপতির প্রথম সাক্ষাৎ,

"পিসিমা কেমন?
আর বলনা মায়ের জন্যি তো দেরি। কিছুতেই আসতে দেবেননা।"

অমল চারুর মনের মিল বা পূর্ব সখ্যতা খুব অল্প কথায় দারুনভাবে ব্যক্ত হয়েছে। অমল ঝড়ের মধ্যে এসে হাতের ছাতাটি বগলে পুরে বৌদিকে প্রণাম করে। তা প্রথম কথা- "বৌঠান, আনন্দমঠ পড়েছ, আনন্দমঠ?" চারুর বঙ্কিম- প্রীতির কথা আগেই আছে। সুতরাং অমলের এই উক্তিতে পরস্পরের মনের মিলের ইঙ্গিত আছে।

সিনেমাটিতে একই ঘরের দৃশ্য মোট তিনবার দেখানো হয়েছে। প্রথমবার একাকি চারু। দ্বিতীয়বার মন্দাকিনী ও চারু। এই সময় দেখা যায় যে ভূপতির চারুর একাকিত্ব দূর করার প্ল্যান যে কাজ করেনি তা বোঝা যায়। তৃতীয় দৃশ্যে অমল চারু ও মন্দাকিনী। শ্রীরুদ্র নামের চলচ্চিত্র সমালোচক মন্তব্য করেছিলেন,

আগাগোড়াই চারু অমলের দিকে দীপ্ত চক্ষে তাকিয়ে যায়।

কিন্তু অমলের ঘরে চারু ও অমলের মধ্যে এমন কোন কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। চারু অমলের হাত থেকে ছেড়াঁ সার্ট রিপু করার জন্য নিয়ে যায়। এর মাধ্যমে চারুর অভিভাবকী মনোভাব ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পায় না।

মূল গল্পে এমন অনেক কিছুরই বর্ণনা আছে যা, 'প্রতিদিন' ঘটে বা 'মাঝে মাঝে' 'সময় সময়' বা 'এক এক দিন' ঘটে। যেমন- "তাহা লইয়া চারুলতা মাঝে মাঝে কৃত্রিম কোপ এবং বিদ্রোহ করিত", (অমল) প্রতিদিন স্মরণ করাইয়া দেয় ও আবদার করে", "অমল মাঝে মাঝে সাহিত্য সভায় প্রবন্ধ পাঠ করে"। এমন অনেক ঘটনা মূল গল্পে আছে যার বিবিরণ সংক্ষিপ্ত হলেও তাতে একটা বিস্তৃত সময়কালের বর্ণনা থাকে। মূল চলচ্চিত্রে এই ধরিয়ে ঘটনা ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। তাই পরিচালককে নিজের মতো করে এই মূলভাবগুলো ফুটিয়ে তুলতে হয়।
(চলবে......)

রায়হান আবীর


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।