চিলড্রেন অফ হেভেন...

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: সোম, ২৭/১০/২০০৮ - ১১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার একটা ছোট বোন ছিল... আমার শৈশবের অনেকটাই তাকে জুড়ে...সব শিশুর হাসিই সুন্দর...তার সাথে ছিল ওর গালে পড়া টোল...আজ থেকে মাত্র দশ বছর আগের কথা...ওর সেই সুন্দর হাসিটার কথা আমার মনে থাকার কথা ছিল...কিন্তু নেই...মানুষ অতীত ভুলে যায়...যেতেই পারে...তা না হলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে কিভাবে...আমিও অনেক কিছুই ভুলে গেছি...কিন্তু তিথি আপুটার কথা আমার ভোলা ঠিক হয়নি...একদম ঠিক হয়নি...

জাহ্‌রা

অবশ্য ব্রেন টিউমার ওকে বেশিদিন আমাদের সাথে রাখেনি...মাত্র পাঁচটা বছর...মনে পড়ে ও যখন সিএমএইচ এ ভর্তি ছিল তখন আমি প্রায় প্রতিদিন ওর ওখানে যেতাম...ওর মাথার কাছে বসে কোরআন শরীফ পড়তাম...আমার বোনটা তখন কিছু খেতে পারতোনা...এইটুকু একটা মেয়ে, তাকে নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাবার দেয়া হতো...তখন আমিও অনেক ছোট ছিলাম...কষ্ট কি জিনিস খুব ভাল করে বুঝতাম না...খালি একটা জিনিস বুঝতাম তিথি আপু আর আমাদের কাছে আসবেনা...ও নীচে দাঁড়িয়ে বলবেনা, লিংকন ভাইয়া জাম পেড়ে দাও... আমরা কাজিনরা মিলে তখন জাম গাছের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতাম...সবচেয়ে বড় জামটা তিথিকে এনে দিতাম...জাম খেয়ে ওর জিহবাটা বেগুনী হয়ে যেত...আমি জানতাম ওর সেই সুন্দর ঠোঁটটা আর কখনো বেগুনী হবেনা...
ও যেদিন মারা গেল সেদিন আমি দৌড়ে মসজিদের হুজুরের কাছে গেলাম...তাকে বললাম, হুজুর আমার তিথি আপু মারা গিয়েছে...আজকে বিকালে তার জন্য মিলাদ পড়াবেন? উনি আমাকে চিনতেন...চিন্তেন তিথিমণিকেও...দুঃখ ভারাক্রান্ত নয়নে আমাদের স্বাত্তনা দেবার জন্য বলেছিলেন, বাবা মিলাদ পড়াতে তো মিষ্টি লাগে...তুমি মিষ্টি কোথায় পাবা? আসলেই, আমি মিস্টি কোথায় পাব...আমরা কাজিনরা মিলে তখন বাসা থেকে অনেক কিসমিস নিয়ে গেলাম হুজুরের কাছে...মিলাদ পড়াবার জন্যে...আমি জানিনা হুজুর সেদিন মিলাদ পড়িয়েছিলেন কিনা...শুধু এইটুকু জানি আমাদের ছোটবোনের প্রতি ভালোবাসা দেখে ওনার চোখে জল এসে গিয়েছিল...উনি নিশ্চই তিথির জন্য অনেক দোয়া করেছিলেন...
ওকে আজিপুরে দাফন করা হয়েছিল...আমি তখন ফোরে পড়ি...মাঝে মাঝে ওর কবরে যেতাম...আমি বেড়ার খাঁচা ধরে বসে থাকতাম...চোখের পানি ফেলতাম...আমদের বুগি সোনাটার কথা মনে করতাম...আমার বাবা আমাকে তুলে আবার বাসায় নিয়ে আসত...
সেই তিথির কবরে আমি কতদিন যাইনা...যাব কিভাবে এখন আমি অনেক ব্যস্ত...এই জীবনে বোনটার জন্য কোন সময় তো আমার নেই...তিথি আপুর কবরটা নিশ্চই এখন আর খুঁজে পাবনা...
সিনেমাটি নিশ্চই সবাই দেখেছেন...সবার কাছে সিনেমাটি ভাল লাগবে স্বাভাবিক...কিন্তু আমার কাছে ভাল লাগেনি...একদম ভাল লাগেনি...তিথিমণিটা এতোদিনে নিশ্চই অনেক বড় হয়ে যেত...আমার কাছে অনেক কিছু চাইতে পারত...

গড় রেটিং

(৩ ভোট)

Trackback URL for this post:
http://www.sachalayatan.com/trackback/13025

লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০০৮-০৩-০৬ ২৩:৪৮)
উদ্ধৃতি | রায়হান আবীর এর ব্লগ | ১৯টি মন্তব্য | পছন্দের পোস্টে যুক্ত | আপত্তি জানান | ২৩৮বার পঠিত

Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, রায়হান আবীর. Sachalayatan.com can not be held responsible.

১ | শেখ জলিল | বিষ্যুদ, ২০০৮-০৩-০৬ ২৩:৫৮

তিথির জন্য মন খারাপ হয়ে গেলো...ওর জন্য দোয়া রইলো।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১.১ | রায়হান আবীর | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৪:১০

ধন্যবাদ...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

৩ | শিক্ষানবিস | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০০:৩৫

এরকম কোন দুঃসহ স্মৃতি থাকলে মুভিটা দেখার পর আমারও আর ভালো লাগতো না। জমে থাকা কষ্টটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো।
তিথি এখন নিশ্চয়ই খুব সুখে আছে। তাই দোয়া আর কি করবো।

---------------------------------
মুহাম্মদ

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৪ | উদাস (যাচাই করা হয়নি) | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০০:৪৯

আপনার লেখাটা পড়ে কান্না চলে আসলো। আজানা, অচেনা এক ছোট্ট তিথি কে আমারো বোন মনে হচ্ছে। যেখানেই থকুক আমার বোনটা যেন আনেক ভালো থাকে আর অনেক অনেক জাম খেতে পায়।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

৪.১ | রায়হান আবীর | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৬:২১

অনুভূতিটা সবার মধ্যে যে ছড়াতে পেরেছি...তা আপানার মন্তব্যে নিশ্চিত হলাম...ধন্যবাদ অনেক...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

৫ | নজমুল আলবাব | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০১:০২

খুব কষ্ট

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৬ | স্বপ্নাহত | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০১:১২

সব "তিথি" নামের সাথেই কি দুঃখ জড়ানো থাকে?

অনেক মর্মস্পর্শী লেখা।ভাল লাগলো।কষ্ট লাগলো...

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

৭ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০২:৪৪

চোখ ভিজে উঠেছে লেখাটি পড়ে। একটি শিশুর মৃত্যুর চেয়ে কষ্টকর আর কী হতে পারে?
- শামীম হক

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

৮ | জাহিদ হোসেন | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০৪:৩৭

আশ্চর্য্য-আমিও তিথি নামে একজনকে চিনতাম যেও খুব অল্প বয়সে ক্যানসারে মারা গিয়েছে। তারটি অবশ্য বোন ক্যানসার ছিল।

সব মৃত্যুই খারাপ লাগে। শিশুদের অকালমৃত্যু সহ্য করা সত্যিই কঠিন। তার উপর সেই শিশুটি যদি নিজের বোন হয়।

তিথি ভাল থাকুক। আনন্দে থাকুক।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১০

৯ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ০৬:২৩

নিজেকে আমি দুর্ভাগা ভাবি আমার কোন বোন নেই দেখে তোমাকে আমার থেকেও বেশি মনে হচ্ছে। পেয়েও হারালা। কাঁদালা ভাইয়া।
-উলুম্বুশ

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১১

১০ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১১:১৫

একবার ঘুরে গিয়েছিলাম, ছবিটা দেখে বুকটা ভেঙ্গে গিয়েছিল, ভেবেছিলাম পড়ব না, পড়ে একটা কথাই মনে হল আপনার না জানি কতটা কষ্ট হয়েছিল লিখতে গিয়ে

- খেকশিয়াল

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১২

১১ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৩:১৮

আমি এক তিথীকে জানি যে পৃথিবীর আলোটুকুও দেখতে পায়নি। এক কুমারী মা তার গর্ভের ভ্রুনটিকে ধরে নিয়েছিল একটি মেয়ে এবং পরম আদরে তার নাম রেখেছিল "তিথী" । কিন্তু তার এই ভালোবাসায় নিয়তি আড়ালে হেসেছিল পরবর্তীতে তার পরিবারে পচন্ড চাপে তাকে সেই অনাগত তিথীকে বিদায় জানাতে হয়েছিল

তিথীদের সাথে এমন হয় কেন!

কল্পনা আক্তার

...........................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১৩

১১.১ | রায়হান আবীর | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৬:১৬

নিদারুণ...

---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

১৪

১২ | লুৎফুল আরেফীন | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৪:১১

অনেক কষ্টের লেখা।
তিথি যেখানেই আছে সুখেই আছে - এই কামনা করি।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১৫

১৩ | নজরুল ইসলাম | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৭:৫৩

এই ছবিটা আমার খুব পছন্দের একটা ছবি। কয়েকবার দেখা। এই লেখাটা পড়ার পরে মনে হলো এই ছবিটা আমি আর বোধহয় দেখতে পারবো না... কষ্ট হবে খুব। তিথির কথা মনে পরবে খুব।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১৬

১৪ | পরিবর্তনশীল | শুক্র, ২০০৮-০৩-০৭ ১৮:৪৩

সম্পূর্ণ অকৃত্রিম ভালোবাসা নাকি দুই ক্ষেত্রে হতে পারে। মা- ছেলে এবং ভাই-বোন। কথাটার সত্যতা সম্পর্কে অন্তত আমার কোন সন্দেহ নেই।
তোর লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।
তিথিকে আদর দিলাম।
তোর তিথি আপু যেখানেই থাক- তার কপালে আমার একটা আদর আঁকা হয়ে গেল। একটা মানুষ কাছে না থাকলেও - সত্যিকারের ভালোবাসা তার কাছে পৌঁছে যায়। প্রকৃতি সে ভালোবাসা পৌঁছে দেয়।
স্বর্গের সিঁড়িতে বসে তিথি নিশ্চয়ই তোর এই লেখাটা পড়ছে।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি- পিচ্চিটা বারবার লেখাটা পড়ছে আর চোখের জল মুছছে। তার চোখের জল কষ্টের না- ভালোবাসার।
তার চোখে ভাইয়ের ভালোবাসার সমুদ্রে সিক্ত হওয়ার কান্না।
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১৭

১৫ | অতিথি লেখক [অতিথি] | মঙ্গল, ২০০৮-০৩-১১ ০২:২৩

আর একটি কলি ঝড়ে গেল।অনেক কষ্টের অভিজ্ঞতা।

-নিরিবিলি

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১৮

১৫.১ | রায়হান আবীর | মঙ্গল, ২০০৮-০৩-১১ ১১:১৬

হুম.....
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

১৯
১৬ | তারেক | বিষ্যুদ, ২০০৮-০৩-২৭ ০০:০২

বছর দুয়েক আগে রক্ত দিতে গিয়েছিলাম মিটফোর্ডে। আট বছর বয়েসী বাচ্চা একটা মেয়ে লিউকেমিয়ায় ভুগছে... ওর নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। কেমন আছে এখন জানাও হল না আর... এইসব ঘটনাগুলো ভিজে ভারী হয়ে চেপে বসে যায় বুকে।

তিথির জন্য ভালবাসা।

(পোস্টটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। আপনার বোনের কথা ভেবে আবার মন খারাপ হবে নিশ্চয়। ক্ষমাপ্রার্থী। )

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ


মন্তব্য

রাফি এর ছবি

কাহিনী কী??? সব লেখা মুছে দিছিলা নাকি??
আগে পড়া হয় নাই। পড়লাম.

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মন খারাপ


হারিয়ে গিয়েছি, এই তো জরুরি খবর...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।