আইউটির তিন মাসের ছুটিটা কেমন জানি খুব অদ্ভুত। ভালো মন্দ মেশানো। ভালো এই জন্য যে; কোন পড়ালেখা থাকেনা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায় এবং সবচেয়ে বড় কথা দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমানো যায়। আর মন্দ একটাই কারণে। আর তা হলো এভাবে আর কতো। বোরিং। এবারের ছুটিটা আমার বেশ বোরিং কেটেছে। তেমন কোথাও ঘুরতে যাই নাই। সারাদিন হলে ছিলাম। খালি ২ বেলা খাবার জন্য বাইরে যাওয়া। ছুটির শেষের দিকে এসে নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। ভাবলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কেওক্রাডাং দেখার বাকি, ওখানেই যাবার জন্য মনস্থির করে ফেললাম।
একদিন সাত জন মিলে রওনাও দিয়ে দিলাম। ঢাকা থেকে চিটাগাং। চিটাগাং থেকে বান্দরবন। সেখান থেকে চান্দের গাড়ি তে রুমা ঘাট। রুমা ঘাট থেকে নৌকায় করে রুমা বাজার যেতে হয়। নদীর নাম শংখ নদী। জাফর ইকবালের একটা বইয়ে পড়েছিলাম। তারা এই নদীটা দেখতে গিয়েছিলেন কয়েক বন্ধু মিলে। যাবার পরামর্শ তারই দেয়া। কারণ ছোট বেলায় তিনি ওখানে থাকতেন। তার মনে ছিল সেই অদ্ভুত সুন্দর নদীটার কথা। প্রথমে কিছুক্ষণ নৌকায় যাবার পর তিনি খুব হতাশ হলেন। আগের সেই তেজস্বিনী এখন আর নেই। কিন্তু হঠাৎ করে বাঁক ঘুরার পর......... দুই পাশে বিশাল বিশাল পাহাড়। যার সৌন্দর্যের কোন তুলোনা নেই। কথাগুলো আমার মনে ছিল। নৌকায় উঠলাম। আমার মনে এর সৌন্দর্যের একটা ছবি আঁকা ছিল। কিন্তু কিছুদুর যাবার আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। কল্পনাকে ছাড়িয়ে যাবার অতিপ্রাকৃত আনন্দ টের পেলাম। দুই পাশে পাহাড় তো আছেই। নদীর পানি একেবারে স্বচ্ছ। একদম তলা পর্যন্ত দেখা যায়। তীরের দিকে হঠাৎ হঠাৎ মানুষের দেখা মিলে। তাদের দেখে মনে হয় প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া স্বত্তা। একঘন্টা ভ্রমনের পর পৌছালাম রুমাতে। সেখানে রাতে থাকতে হবে।
পরদিন খুব ভোরে রওনা দিলাম বগা লেকের উদ্দেশ্যে। ৫ ঘন্টার হাঁটা রাস্তা। রাস্তাটির নাম ঝিরিপথ। ঝিরিপথ এই জন্য যে যাবার সময় পার হতে হতে হয় অসংখ্য ঝিরি। এই ঝিরি পথেই দেখতে পেলাম এক অপরূপা ঝর্ণা। আগে কখনও সামনে থেকে ঝর্ণা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আবার মুগ্ধ হলাম। আমাদের সাথে ক্যামেরা ছিলনা। ক্যামেরা না থাকার সুবিধা প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলাম। আগে ক্যামেরা থাকলে খালি ছবি তুলে নিতাম। মনে হতো বাড়ি ফিরে ভালো ভাবে দেখে নিতে হবে। সেই দেখা আর হতো না। এবার আর সেই উপায় নেই। আশে পাশে যা দেখছি তাই গিলে নিচ্ছি। গিলতে গিলতে মাঝে মাঝে উষ্টাও খাচ্ছি। রাস্তাটার এতো বৈচিত্র যে দীর্ঘ সময় হাটতে একেবারেই কষ্ট লাগেনা। একসময় পৌছে গেলাম বগা লেক। বগা লেক এর আছে বিরাট ইতিহাস। মাটি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উপর জায়গাটা। উপরে এরকম জায়গায় মালভূমি হয় শুনেছি কিন্তু এখানে বিশাল এক হ্রদ। হ্রদটা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি, তেমনি ভাবে জানা যায়নি এর গভীরতাও। তবে ধারণা করা হয় উল্কাপাত, কিংবা শক্তিশালী ভূমিকম্পই হবে এর কারণ। আদিবাসীদের মধ্যে অবশ্য প্রচলিত একটি কাহীনি আছে। আর তা হলো বগা লেকের জায়গাটায় আগে মানুষের বসতি ছিল। তারা বিভিন্ন কু-কর্মে জড়িত থাকার কারণে এক দৈব শক্তি পুরো জায়গাটাকে নীচে ডাবিয়ে দেয়। অবশ্য সেই দৈব শক্তি খুব একটা নিষ্ঠুর ছিলেন না। এক বুড়িকে কয়েকদিন আগে সপ্নে দেখা দিয়ে তিনি এ জায়গা ছেড়ে দেবার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও বুড়ির কথা কেউ কানে তোলেনি। আদিবাসীরা এই লেকটিকে পূজা করে থাকে।
বগা লেকের পর আমাদের যাত্রা শুরু হলো কেওক্রাডাং এর উদ্দেশ্যে। এ জায়গায় তেমন কোন মাহাত্ম্য নেই। খুবি বিরক্তিকর রাস্তা। প্রায় ৬ ঘন্টা লাগলো ওখান থেকে ঘুরে আবার বগা লেকে ফেরর আসতে।
প্রচন্ড ক্লান্ত। তাই এসেই ঘুম দিলাম। ঘুম ভাংলো রাত ৯টার দিকে কল কল কথার শব্দে। বাইরে গেলাম। বিস্ময়ের আরেকটি ধাক্কা খেলাম। এতো সুন্দর। দূরে ঢাকা ভার্সিটি থেকে আগত কয়েকজন ভাইয়া, আপু গোল হয়ে আগুন পোহাচ্ছে। আমিও তাদের সাথে বসলাম। উপরে লক্ষ তারা, পাশে অপরূপা বগা। মাঝখানে বসে আমি ভ্যবাচ্যাকা..............................
রায়হান আবীর
গড় রেটিং
(০ ভোট)
Trackback URL for this post:
http://www.sachalayatan.com/trackback/11887
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: সোম, ২০০৮-০১-২১ ১৪:৫৮)
উদ্ধৃতি | রায়হান আবীর এর ব্লগ | ৭টি মন্তব্য | পছন্দের পোস্টে যুক্ত | আপত্তি জানান | ২০৯বার পঠিত
Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, রায়হান আবীর. Sachalayatan.com can not be held responsible.
১
১ | বিপ্লব রহমান | মঙ্গল, ২০০৮-০১-২২ ১৭:২৩
বাহ্, দারুন লিখেছেন তো! কেওক্রাডং নিয়ে আমারো একটা লেখা ছিলএইখানে। অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ
২
২ | মুহাম্মদ২০১৭ (যাচাই করা হয়নি) | মঙ্গল, ২০০৮-০১-২২ ২০:০২
তিন মাসের ছুটিটা খুব অদ্ভুত, আর শেষ লাইনে ভ্যাবাচ্যাকা; সব মিলিয়ে লেখাটার মধ্যে যে সুন্দর ঐকতান ছিল তাকে ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছে বলে মনে হল। পড়ে ভাল লেগেছে। আমরা অনেক জায়গায়ই হয়ত যাই, কিন্তু গিয়ে কেমন লাগল তা গুছিয়ে বলাটা বেশ কষ্টকর। এই লেখাটা নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাই সফল।
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান
৩
৩ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শনি, ২০০৮-০১-২৬ ০১:৪৫
ভালেই লিখেছেন
আমি গেছিলাম মিড এর পরে
-------------------------
কবি
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান
৪
৪ | কিংকর্তব্যবিমূঢ় | সোম, ২০০৮-০১-২৮ ০২:৪০
আইইউটি থেকে কেউকারাডং যাওয়াটা ব্যাপকভাবে শুরু হয় মনে হয় আমরা যাওয়ার পর থেকে ... আমরা গেছিলাম ০৬ এর ফেব্রুয়ারি ... ১৩ জন ... দারুণ একটা ট্যুর ছিল সেইটা ...
আমাদের সাথে একটা ডিজিক্যাম ছিল ... যদিও ব্যাটারি বাঁচানোর জন্য খুবই কিপ্টার মত ছবি তুলতে হইছিল ... বাট এখনো যখন সেই ছবিগুলি দেখি তখন যেন আবার সেই সময়টায় ফিরে যাই ...
লেখাটা ভাল হইছে ... নস্টালজিক করে দিলা ...
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ
৫
৫ | অতিথি লেখক [অতিথি] | মঙ্গল, ২০০৮-০১-২৯ ১৪:০৪
আসলেই আমাদের ছুটিটা দারুন। সারা বাংলাদেশ দেখে ফেললাম। আইউটিতে না আসলে আদৌ তা হতো কিনা সন্দেহ। তাছাড়া আরও একটা মজার জিনিস হলো আমি আগে যা প্ল্যান করতান তা ১০০% বাস্তবায়িত হতোনা। কিন্তু এখানে আসার পর এমন কখনো হয়নি।
রায়হান আবীর
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান
৬
৬ | দ্রোহী | শুক্র, ২০০৮-০২-২২ ০২:২২
চমৎকার লেখা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ
৭
৭ | রায়হান আবীর | শুক্র, ২০০৮-০২-২২ ০২:২৭
থানকু এগেইন...
উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন