এবং শূন্য

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০৬/২০১০ - ৩:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এবার সঠিক উচ্চারণে জায়গার নামটা বলতে পারে রেহান। সাথে যেহেতু প্রমাণ সাইজের দুটো সুটকেস আছে তাই এটাও শুনে নেয় সরাসরি ঐ শহরেই যাবে কোনটা এবং কখন। বেশ কিছুটা সময় হাতে পেয়ে যায়; সিগারেটের নেশাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ওর।

ঘটনাগুলো ঘটেছিল ঠিক একবছর আগে। রেহান ভাবছিল তাই। তারও প্রায় ৪/৫ মাস আগে এখানে ও এসেছিল প্রথমবার, ইন্টারভিউ দিতে। দিন তিনেকের জন্য। সেবার ট্রেনের টিকিট কাটতে যেয়ে ও শহরটার নামের ভুল উচ্চারণ করেছিল। আর ইন্টারভিউ শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার সময় জানতে পেরেছিল একেবারে পূবের এই শহরটাতে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ট্রেনও আছে। তাই পরেরবার আর কোন ভুল হয়নি।

রেহান চিন্তা করে গত এক বছরের পরিবর্তনগুলোর কথা। চেহারায় তেমন কোন পরিবর্তন নেই। তবে পেটের দিকটা আগের চেয়ে একটু বেশি স্ফীত। আসার পরপর বেশ কয়েকদিন রুটিন মাফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সেন্টারে যেয়ে হালকা ব্যায়াম করলেও ক্রমান্বয়ে ঐদিকে যাতায়াত কমেছে। আর তারই ফলস্বরূপ প্রায় গোলাকার, উত্তর-দক্ষিণে ঈষৎ চাঁপা এই ছোট্ট ভৌত পরিবর্তন।

রাসায়নিক পরিবর্তনের কথা চিন্তা করতেই একটু নড়েচড়ে বসে ও। রসায়নে অন্য বিষয়গুলোর তুলনায় বরাবরই একটু দুর্বল ও। আর মনের রসায়নে মনে হয় একটু বেশিই সরেস। হয়ত রেহান নিজে তা সজ্ঞানে মানতে চাইবে না। তবে একথাও ঠিক রেহান আবার অল্পতেই খুব নাজুক হয়ে যায়।

ঠিক এক বছর আগে ও যখন এই দেশটাতে পা রাখে, পেছনে ফেলে রেখে এসেছিল কিছু পুরোনো সুখস্মৃতি আর বয়ে নিয়ে এসেছিল বেশ গভীর এক ক্ষত। সময়ের প্রলেপে সেই ঘা শুকোতে থাকে। রেহান আগের চেয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নতুন অনেক বন্ধু হয় দেশে। আন্তর্জাল ওকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না ওর বন্ধুদের কাছ থেকে। ও একটু বাঁচে।

ভাগ্যদেবী হয়ত তখন মুচকি হেসেছিলেন। কোনো একটা সম্পর্ক বন্ধুত্বের সীমানাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চায়। অস্থির ওরা, স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। সম্পর্কটার পরিণতি অবশ্য বেশ অনুমেয় ছিল শুরু থেকেই। কেন, জানতে চাইছেন? বাঁদরের তেলমাখা বাঁশে ওঠার গল্পতো শুনেছেন নিশ্চয়ই। রেহানের পুরোনো ক্ষতটা ওকে মুক্তি দিলেও, ক্ষতটার জন্য ওর পারিপার্শ্বিকতা ওকে রেহাই দিতে চাইছিল না কখনই। রেহান আর মেয়েটি ভেবেছিল ওরা হয়ত পারবে। পারবে একত্রে থাকতে।

রেহানের সময় বন্দী হয়ে যায় টেলিফোনের ওপাশের একজনের কাছে। হৈচৈ আর আন্তর্জালিক ব্যস্ততা কিছুটা কমে যায় রেহানের। রাতগুলো শেষ হয় ভোরের প্রতীক্ষায়। খুব দ্রুত কিছুটা সময় চলে যায়। তারপর মেয়েটির পরিবার জানলে পরেই শুরু হয় টানাপোড়েন। সময়গুলো দীর্ঘ হতে থাকে ঠিক অপরাহ্ণের ছায়ার মত। ওরা তবুও হাল ছাড়ে না।

ভাবনার ভিড়ে রেহান হারিয়ে যায় আর কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করে সামনে রাখা কাগজটায়। বৃষ্টির শব্দে ঘোর ভাঙে রেহানের। ঝমঝমে বৃষ্টি। ঠিক এক বছর আগের দিনটাও ছিল এমনি বৃষ্টিমাখা।

রেহান উঠে যায় কফি আনতে। আর কাগজটা উড়ে চলে যায় খোলা জানালা দিয়ে। কাগজের বুকে আঁকা থাকে শুধুই একটা শূন্য।


মন্তব্য

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

হুমমম , এবং শুন্য কেবল তাই আর তাই আর তাই ............

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হুমমম... ঠিকাচে!

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

তিথীডোর এর ছবি

মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ভণ্ড_মানব [অতিথি] এর ছবি

একবার না পারিলে দেখ শতবার।
রেহান সাহেবের চেষ্টা জারি থাকুক। হাসি

বইখাতা এর ছবি

ঠিক গল্প না, কারো জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার বিবরণ শুনলাম যেন। যেটাই হোক, রেহানের জীবন শূণ্য নয় পূর্ণ হয়ে উঠুক....

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক!

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

শূন্য থেকেই শুরু...
পূর্ণ হতে হাঁটতে হবে
খানিকটা পথ শুধু...

ভালো থেকো ভাইয়াটা... হাসি

------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ লাগল পড়তে... শুভকামনা...
___________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।