কালো গণ্ডার, বিপন্নপ্রায় একটি প্রজাতির নাম! (সাফারি পর্ব – তিন)

রংতুলি এর ছবি
লিখেছেন রংতুলি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০১/১২/২০১২ - ৫:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্তমানে আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশী হুমকীর মুখে প্রাণীটি হলো কালো গণ্ডার। এক সময় বিশাল মহাদেশটির বিস্তৃত বনভূমি ও তৃণভূমিতে সাদা-কালো এই দুই প্রজাতির গণ্ডারের অবাধ বিচরণ থাকলেও বেপরোয়া হত্যা, শিকার এবং ব্যাপক চোরাকারবারির কারণে আজ বিপন্নপ্রায় কালো গণ্ডারের অস্তিত্ব। সাদা গণ্ডারও পৌঁছেচে বিলুপ্তির কাতারে। স্বর্ণের চেয়ে দ্বিগুণ দামী গণ্ডারের শিংকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে আফ্রিকায় নৃশংস ও রক্তাত্ব সব চোরাশিকারী যুদ্ধ!

সাদা ও কালো এই দুটো প্রজাতিই আসলে হালকা থেকে গাঢ় ধূসর বা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে তফাৎ করা হয় মূলত মুখের আকৃতি – বিশেষ করে উপরের ঠোঁটের গঠন প্রণালী থেকে। এই ঠোঁটের ভিন্ন গঠন প্রণালীর দরুণ কালো গন্ডারকে ‘hook-lipped rhino’ আর সাদা গণ্ডারকে ‘square-lipped rhino’ নামে ডাকা হয়। বস্তুত ঠোঁটের ভিন্ন আকৃতি চিহ্নিত করে এই দুটি প্রজাতির ভিন্ন খাদ্যাভাসের –- কালো গণ্ডার যেখানে ছোট ছোট ডালপালা, লতাপাতাসমৃদ্ধ গাছ ও ঝোপঝাড় খুঁজে বেড়ায়, সেখানে সাদা গণ্ডার চরে বেড়ায় বিস্তৃত তৃণভূমিতে। জীবনধারণের জন্য পানি এদের কাছে অত্যাবশ্যকীয়, তাই তারা কখনোই পানির খুব বেশি দুরে যায় না। ভোর ও সন্ধ্যা এই দুইবেলায় এরা নিকটবর্তী জলাশয়ে পানি পান করে।

গণ্ডার লম্বায় আফ্রিকান মোষের কাঁধ বরাবর হলেও ওজনে প্রায় এর দ্বিগুণ হয়ে থাকে। এই ভারি-ভরকম শরীর নিয়েও প্রাণীটি ঘণ্টায় ৫০ কিমি পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। আর দুর্বল দৃষ্টিশক্তির অনেকটাই পুষিয়ে দেয় এর তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি। শুধুমাত্র প্রজননের প্রয়োজন ছাড়া গণ্ডার একা থাকতেই পছন্দ করে। প্রজননের জন্য গণ্ডারের কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে না। পুরুষ গণ্ডার মূত্রের ঘ্রাণ থেকে সঙ্গী চিনে নেয়। অর্থাৎ মূত্রের মাধ্যমেই এরা একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। সাধারণত পুরুষ গণ্ডার আগন্তুকের প্রতি আক্রমণান্তক হয়ে থাকে।

গণ্ডারের মুখের উপরের অংশে দুটো শিং থাকে, কদাচিৎ কোনোটার তিনটে শিংও দেখা যায়। সামনের শিংটি গড়ে ৬০ সেমি হয়, ক্ষেত্রবিশেষে তা ১৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

ইউরোপীয় প্রভুদের দ্বারাই আফ্রিকায় গণ্ডারনিধনের সূত্রপাতঃ

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা তাদের আবাসনের প্রয়োজনে আফ্রিকায় কিছু অবকাঠামোভিত্তিক পরিবর্তনে হাত দেয়, কৃতদাস ও খনিজ ব্যবসার পাশাপাশি আফ্রিকার উর্বরভূমিতে খামার ও পশ্চিমা কায়দায় চাষাবাদ শুরু করে, সাথে কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয়স্বরূপ এখানকার বন্য ঐতিহ্য উজাড়ে প্রাথমিক তৎপরতাও শুরু করে দেয়। ইউরোপীয় সৌখিন শিকারীদের নিছক বিনোদনের তাগিদে সেসময় রোজ গড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি গন্ডার হত্যা করা হয়েছে। এরকম বেহিসেবী প্রাণ দিতে হয়েছে হাতি, সিংহসহ অন্যান্য বন্যপশুকেও। অবশ্য হাতির দাঁতের কারবার ইউরোপীয় বণিকরা শুরু করে দিয়েছিলো তারও বহু আগেই। অর্থাৎ সামন্তপ্রভুদের রেখে যাওয়া বিনাশের এ মাত্রা ছিলো সম্পূর্ন অপূরণীয়।

গণ্ডারের শিঙের চোরাকারবারি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়াঃ

শিকার ও হত্যার পাশাপাশি আফ্রিকান হাতির দাঁতের সাথে গণ্ডারের শিঙেরও চোরাকারবারির রাজত্ব শুরু হয় ষাটের দশকের শেষে ও সত্তুরের দশকের শুরু থেকে। অনুমান করা হয় ইউরোপিয়ানদের দ্বারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পরেও সেসময় মহাদেশটিতে ৭০,০০০ এর মতো জীবিত কালো গণ্ডার ছিলো। প্রাপ্ত তথ্যমতে - সত্তুর দশকের শুরু থেকে এই পোচিং মোটামুটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং আশির দশকের মধ্যেই প্রাণীটির সংখ্যা স্থানভেদে শতকরা ৪০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনে। কেবল মাত্র ১৯৭০ থেকে ১৯৯২ সালের ভেতর পুরো আফ্রিকায় সমগ্র কালো গণ্ডারের ৯৬ ভাগই মেরে সাফ করা হয়।

কলোনি পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ জাতিগত সংঘর্ষ এবং আফ্রিকার নানাদেশে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে বিশাল এ মহাদেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এন্টি-পোচিং কার্যক্রমও তুলনামূলক শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে। এবং বেশীরভাগ স্থানেই সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে নিত্য বাধার মুখে পড়তে হয়। উদাহরণস্বরূপ – এঙ্গোলা, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া, সুদানের মত জাতিগত দাঙ্গা ও গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশগুলোতে বন্যজীবন সংরক্ষণের মত কার্যক্রম পরিচালনা করা রীতিমত দুঃসাধ্য ব্যাপার। ফলে এই পোচিং ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ব অভুতপূর্বভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে কারণে প্রানীটির সংখ্যা কমতে কমতে আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্ত যেমন- পশ্চিম আফ্রিকায় ইতিমধ্যে কালো গণ্ডার সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন ঘোষণা করা হয়েছে।

বর্তমানে আফ্রিকায় জীবিত গণ্ডারের সংখ্যা ও সংরক্ষণঃ

বর্তমানে আফ্রিকায় বিশ হাজারের মত সাদা গণ্ডার এবং মাত্র পাঁচ হাজারেরও কম কালো গণ্ডার অবশিষ্ট আছে। যার মধ্যে ৯৮ ভাগই কেবলমাত্র -- সাউথ আফ্রিকা, নাবিবিয়া, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া এই চারটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেকসময় চোরাকারবারিদের হাত থেকে রক্ষার জন্যে তাদের সরিয়ে নেয়া হয় সংরক্ষিত স্থানগুলোতে। যেখানে ডেভিড শেল্ড্রিকের ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের মত গুটিকয়েক কনজারভেশন সেন্টার, ন্যাশনাল পার্কগুলোতে এই বিপন্নপ্রায় প্রাণীটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ‘দুর্বল প্রয়াস’ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ‘দুর্বল প্রয়াস’ কথাটা বলার কারণ হলো - সংরক্ষিত এরিয়াগুলোতেও গন্ডার ও হাতির মত মূল্যবান প্রাণী দুর্বিৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে বনরক্ষক, কর্মীদের রীতিমত হিমশিম খেতে হয়।

কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টা গান প্রটেকশনে রেখেও তাদের রক্ষা করা দায় হয়ে পড়ে। কখনো সংরক্ষণ কর্মীদের সাথে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত দুর্বিৃত্তদের সংঘর্ষ এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। এছাড়াও রাতে চাঁদের আলোয় চোরাহত্যা, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি নৃশংসতা তো ঘটছে হরহামেশাই।

গণ্ডারের শিঙের এই ব্যবসা এতটাই লাভজনক যে হাতির দাঁতের মত এটা সংগ্রহের জন্যেও সুসংগঠিত চোরাকারবারির আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যাতে প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার মত শক্তিধর দেশগুলো। ফলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হেলিকাপ্টার থেকে শুরু করে, রাতে দেখা যায় এমন বাইনোকুলার, সাইলেন্সড গান, বিষাক্ত বা অচেতন করার ওষুধ এবং অন্যান্য দুষ্প্রাপ্য অস্ত্রপাতি সহজলভ্য করে পৌঁছে দেয়া হয় আঞ্চলিক দুর্বিৃত্তদের হাতে। অর্থাৎ আফ্রিকার বনঐতিহ্য উজাড়ে একটি বড় দায়ভার বর্তায় আমেরিকার মত সুবিধাবাদী রাষ্ট্রের উপরও।

তাই নির্লজ্জ বাস্তবতা হলো – শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কালো গণ্ডারের মত ঐতিহ্যবাহী অসাধারণ এই প্রাণীটির শেষ রক্ষা হয়ত সম্ভব না। সম্প্রতি কয়েক বছরে আফ্রিকার কালো গণ্ডার হত্যার ক্রমবর্ধমান চিত্রটি অন্তত তাই বলে –
২০০৯ সালে হত্যাকৃত গন্ডারের সংখ্যা ছিলো – ১২২ টি
২০১০ সালে হত্যাকৃত গন্ডারের সংখ্যা ছিলো – ৩৩৩ টি
২০১২ সালে এপর্যন্ত গন্ডার হত্যার সংখ্যা – ৩৮৮ টি (যা এরই মধ্যে বিগত কয়েক বছরের গন্ডার হত্যার সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে!)

কেবলমাত্র যে শিঙের জন্য আস্ত একটা প্রজাতিই বিলুপ্ত হতে বসেছে, এবার দেখা যাক সেই সিঙের প্রকৃত গুরুত্ব ও মহত্ত্বঃ

এরকম একটা শিঙের ওজন আট পাউন্ডের মত। এবং যার কালোবাজারি দাম ৩৬০,০০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে! (আতর্জাতিক ইন্ধন তথা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের কারণটা মোটামুটি এখানেই পরিষ্কার। ব্যাপক হারে গণ্ডার নিধন বস্তুত মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের মামলা!)

গণ্ডারের শিঙের সবচেয়ে বড় বাজার দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার প্রধাণত চায়না ও ভিয়েতনাম, যেখানে এই শিং-কে অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধিগুনসমৃদ্ধ একটি মূল্যবান উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বছরের প্রচলিত বিশ্বাসমতে গন্ডারের শিং থেকে প্রাপ্ত পাউডার মাথাব্যথা, জ্বর, হৃদরোগ এবং কান্সারের মত অসুখ সারাতে সক্ষম।

অথচ যেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, গণ্ডারের শিঙ keratin নামের প্রোটিন দিয়ে গঠিত, একই কেরাটিন যা আমাদের নখ ও চুলেও বিদ্যমান। এবং যার মধ্যে কোনো প্রকার রোগ নিরাময়ের ঔষধি গুণাবলীর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না!

অতএব শুধুমাত্র ভ্রান্ত ধারণা আর বিশ্বাসই গণ্ডারের শিঙের মত খুব সাধারণ একটি বস্তুকে মানুষের কাছে করে তুলেছে অমূল্য! এবং যার বলি হতে হয়েছে পুরো সমৃদ্ধ এক প্রজাতিকে। মানষের নির্বুদ্ধিতা, অজ্ঞতা এবং নৃশংসতার মূল্য না জানি এরকম কত প্রজাতিকে ইতোমধ্যে দিতে হয়েছে এবং রোজ কত নতুন প্রজাতি এ কাতারে যোগ হচ্ছে, সে হিসেব নিঃসন্দেহে ভয়াবহ!

যদিও আপাতদৃষ্টিতে চায়নায় আইনের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্যবাহী ঔষধপত্রে গন্ডারের শিং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারপরেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা - পোচিং চলছে দেদারসে, বরং পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়েও আরো জোরেসোরে। এ প্রবণতা এতটাই আশংকাজনক যে, যদি এখনই বন্ধ না হয় তবে পৃথিবী অচিরেই হারাবে আফ্রিকান কালো গণ্ডার, প্রকৃতি হারাবে তার আরেক বিশাল প্রজাতি, এবং একের পর এক এই মনুষ্যসৃষ্ট বিলুপ্তি আমাদের নিজেদের কপালে কি দুর্ভোগ বয়ে আনবে তা হয়ত আমারা এখনো অনুমানও করে উঠতে পারি নাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------

তথ্য ও ছবি সূত্রঃ

ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ গ্লোবাল – , ,
বিবিসি – ,,
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক – , ,
ইউকিপিডিয়া
স্টার আফ্রিকা
ভণ্ডুল

------------------------------------------------------------------------------------------------------

আগের পর্বগুলো –

সাফারি সাফারি...
তুলতুলে গা হাতির ছানা!


মন্তব্য

রিক্তা এর ছবি

প্রথম ছবিগুলোর গন্ডার টা ছবির মত সুন্দর। শেষের ছবিগুলো দেখার সাহস হল না। দ্রুত স্ক্রল করে গেলাম মন খারাপ

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ। প্রথম ছবিগুলো নাইরোবি ন্যাশনাল পার্ক আর এনিম্যাল অরফানেজ থেকে নিজেদের তোলা। পোচিং এর বীভৎস সব ছবিগুলো ন্যাশনাল জিওগ্রাফী, ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ থেকে নেয়া। যা না দিলে হয়ত বিষয়টার ভয়াবহতা বোঝানো যেত না! মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

চোরাকারবারিদেরও খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগের আইনে বিচার করা দরকার।

--সাইফুজ জামান

রংতুলি এর ছবি

মন খারাপ

কীর্তিনাশা এর ছবি

মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রংতুলি এর ছবি

মন খারাপ

বাওয়ানী এর ছবি

পোচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বন্য রক্ষীরা নিজেরাই গন্ডারের শিং কেটে দেয়। যাতে পোচাররা অলাভজনক গন্ডারটিকে হত্যা না করে। তার পরেও রেহাই নাই। ভবিষ্যতে যাতে শিং বিহীন এই গন্ডারের পেছনে ঘুরতে না হয় সেজন্য এগুলিকেও দেখামাত্র মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

এই শিং বিহীন গন্ডারগুলোকে দেখলে আমার কেন জানি খুব খারাপ লাগে মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

গণ্ডার, হাতি এই দুটি প্রাণীকেই জানে বাঁচানোর জন্যে অনেক সময় এদের শিং, দাঁত কেটে ফেলা হয়। এগুলো করা হয় বিশেষ করে যারা একবার চোরাশিকারীদের আক্রমণ হতে কোনো রকমে বেঁচে গেছে, অথবা যাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। প্রাণীগুলোর আসল সৌন্দর্যই তো এদের এই বিশেষ অঙ্গগুলো, এগুলো ছাড়া এদের দেখতে তো অসম্পূর্ণ লাগবেই !

শাফায়েত এর ছবি

পর্ব ১-২ খুজে পাচ্ছিনা।

রংতুলি এর ছবি

ভাইয়া, আগে্র পর্বের লিংকগুলো একদম নিচে দিয়েছি। আরেক বার দেখেন না পেলে জানান প্লিজ... তাহলে আবার দিব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আর আমরাও তো কোন কারন ছাড়াই নির্মূল করে দিয়েছি এ দেশের গন্ডার কূলকে।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

রংতুলি এর ছবি

নির্মূল! ঐ একটা কাজই তো আমারা ভালো পারি! মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

একটা ভিডিও লিঙ্ক ও দিয়েছিলাম, কিন্তু ঠিক মত আসলো না। কেউ যদি অনুগ্রহ করে ব্লগে ভিডিও শেয়ার করার ঠিক পদ্ধতিটা বাতলে দেন তাহলে উপকার হত!

সত্যপীর এর ছবি

আপনি ভিডিওর লিঙ্কটা কপি পেস্ট করে দিসেন মনে হচ্ছে। ভিডিওর ঠিক নিচে Share বাটনে ক্লিক করেন, তারপর Embed ক্লিকান। একটা বক্সে কোড আসবে, ঐটা কপি পেস্ট করে টেক্সট বডিতে দিয়ে দিলে ভিডিও এমবেড হবে।

প্রিভিউ তে এটা দেখা যায় না, ফাঁকা বক্স দেখাবে। কেন জানিনা। পাব্লিশ করে দিলে আবার ঠিকই দেখা যায়।

..................................................................
#Banshibir.

রংতুলি এর ছবি

পীর ভাইয়া, আপনারে কি বলে যে ধন্যবাদ দেই বুঝতে পাচ্ছি না। এর আগেও অন্য লেখায় প্রাসঙ্গিক ভিডিও শেয়ার করতে চাইছিলাম, কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও শুধু লিঙ্ক এড্রেসটাই আসত, যেটা আমার পছন্দ ছিলো না, লেখার মধ্যেই যদি মানুষ রিলেটেড ভিডিওটা না দেখলো তাইলে কি লাভ! যাই হোক অবশেষে আপনার কথামত এটা ঠিক করতে পারলাম। আর এই সহযোগিতামূলক মন্তব্যে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম! হাসি

স্যাম এর ছবি

মন খারাপ

গন্ডার এর শিং নাকি চুল এর মত কিছু একটা দিয়ে তৈরী?

রংতুলি এর ছবি

গণ্ডারের শিং কেরাটিন দিয়ে গঠিত। যা fibrous structural proteins পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, একই গঠনমূলক উপাদান যা দিয়ে আমাদের নখ ও চুল তৈরী।

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ
প্রাণী হিসাবে মানুষ আসলে খুবই বর্বর!!!

রংতুলি এর ছবি

এই এক প্রাণীর বর্বরতার মূল্য দিতে দিতেই বাকী সব সাফ! মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

দ্বিতীয় ছবিটা চমৎকার। শিং বিহীন একটা গণ্ডার এর ছবি আছে মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ তানিম ভাই! মন খারাপ

রুশদী শামস এর ছবি

তোমার এই অন্যরকম লেখাগুলো আমার ভাল লাগে। পরিবেশ নিয়ে ভাবছো। পৃথিবী নিয়ে ভাবছো। এই পৃথিবী যদি আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় যে তাকে যেমনটা আমাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, তার কতটুকু আমরা রাখতে পেরেছি, আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন উপায় নেই। যে কোনো অন্যায় বন্ধে মনে হয় ২ টা জিনিস দরকার- ১) নিরাপত্তা দেয়া, তোমার লেখা থেকে মনে হলো এইটাই শুধুমাত্র জোরে শোরে করা হচ্ছে যদিও অপ্রতুল আর ২) সচেতনতা বৃদ্ধি, যেটা তোমার লেখায় আসেনি দেখে ধরে নিচ্ছি ব্যাপারটা তে জোর কম। যদিও সচেতনতাটাই আমার কাছে বেশি জরুরি পদক্ষেপ। বিদেশে যেই বাচ্চাগুলোকে স্কুলে এত সুন্দর করে পরিবেশ, মানুষ, সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়, সেই শিশুগুলোই বড় হয়ে অন্য দেশে গিয়ে পোচিং করছে, গৃহযুদ্ধে অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ করছে- বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

রংতুলি এর ছবি

অতিথি লেখকের নাম রুশদি শামস দেখে প্রথমে চমকে উঠলাম। খুবই ভালো লাগলো তোমার কাছ থেকে এরকম একটা গঠনমূলক সুন্দর মন্তব্য পেয়ে। গাছের প্রথম ফল যেমন পুরো ফলনের আভাস দেয়, তোমার প্রথম মন্তব্যটাও তেমন অনেক সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে।

ইদানিং লিখতে শুরু করে আমার নিজের জন্যে যেটা ভালো হয়েছে তা হলো, আগে এ বিষয়গুলো জানতাম আর শুধু নিজের ভেতরে ছটফট করতাম, এখন লেখার তাগিদে আরো একটু বেশি জানার চেষ্টা করছি, ফাইনালি লিখে ফেললে একটু হলেও হালকা বোধ করি।

তোমার দুই নাম্বার পয়েন্ট 'সচেতনতা'র কথা আমিও ভাবছিলাম। নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা না হয় কিছুটা হচ্ছে, কিন্তু পোচিং তো আদৌ কমছে না, বরং বেড়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে এই ধরনের বড় বড় ম্যাসাকারের মূলে যে অন্ধবিশ্বাস সেগুলো দুর করা গেলে আমার মনে হয় আরো অনেক আগেই এগুলো বন্ধ করা যেত। রক্ষা পেত এরকম অনেক প্রজাতি। একটু ভেবে দেখো যে পরিমাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দুর্বার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে এইসব ভ্রান্ত ধারণার খোরাক জোগানো হচ্ছে, তার সিকি পরিমাণ প্রচেষ্টা/প্রযুক্তি কি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নেয়া হয়েছে? সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই চাহিদা কমে আসতো, যা হয়ত কোনো শক্তিশালী মহল চায় না, বরং ভ্রান্ত ধারণাকে জিইয়ে রেখে সেটাকে ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক আকারে ব্যবহার করাই হয়ত তাদের উদ্দেশ্য। তা না হলে এই বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে মানুষের আত্নিক উন্নতির বদলে, বরং উল্টাটাই কেন হচ্ছে? কেন গণ্ডার হত্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে?

চার বছর আফ্রিকায় থেকে সভ্য মানুষদের রেখে যাওয়া সভ্যতার নানা নিদর্শন দেখে এর সংজ্ঞাই আমার কাছে বদলে গেছে, আর তা হলো - সুবিধাবাদি না হলে সভ্য হওয়া যায় না! তবে ব্যতিক্রম মানুষও দেখেছি।

যাক এ কাহিনী অনেক লম্বা। ব্লগে যখন আসলাই একটু সময় করে দু'য়েকটা পোস্ট দিবা আশা করছি। আমি জানি তোমার লেখালেখির অভ্যাস আছে।এছাড়াও তোমার তোলা ফটোগুলো দিয়েও নিঃসন্দেহে চমৎকার ফটো ব্লগ হবে!

অতিথি লেখক এর ছবি

বহু আগে পড়া সুনীলের “কাকাবাবু ওচোরা শিকারী” এর কথা মনে পড়লো। ওখান থেকৈই প্রথম গণ্ডারের শিং এবং নাকের বিষয়ে জানতে পারি যা মূলত এদের নিধনের কারণ। লেখা চমৎকার লাগলো।এ পর্যন্ত বহু প্রজাতিকে মানুষের লেঅভের বলি হয়ে বিলীন হতে হয়েছে। তবুও মানুষ থামতে শেখেনি।

স্বয়ম

রংতুলি এর ছবি

নিজেও বিলীন না হওয়া পর্যুন্ত বোধহয় মানুষ থামবে না!

চিলতে রোদ এর ছবি

নিজেকে মানুষপ্রজাতির অংশ ভেবে লজ্জা হয় মাঝে মাঝে মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

খুব দরকারি লেখা।

ইদানীং কয়েকটা জাদুঘরে দেখলাম স্টাফ করা গণ্ডারের শরীরে লেখা আছে- এর শিং নকল! কারণ জাদুঘর থেকে মানুষ শিং চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, কী ভয়ানক, কী মূর্খ। কিছু বলার ভাষা নেই মানসিক ভাবে অসুস্থ মানুষগুলোর জন্য।

রংতুলি এর ছবি

আসলেই কিছু বলার ভাষা নাই! শুধু দম বন্ধ হয়ে আসে মাঝে মাঝে...

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মন খারাপ

অতএব শুধুমাত্র ভ্রান্ত ধারণা আর বিশ্বাসই গণ্ডারের শিঙের মত খুব সাধারণ একটি বস্তুকে মানুষের কাছে করে তুলেছে অমূল্য! এবং যার বলি হতে হয়েছে পুরো সমৃদ্ধ এক প্রজাতিকে। মানষের নির্বুদ্ধিতা, অজ্ঞতা এবং নৃশংসতার মূল্য না জানি এরকম কত প্রজাতিকে ইতোমধ্যে দিতে হয়েছে এবং রোজ কত নতুন প্রজাতি এ কাতারে যোগ হচ্ছে, সে হিসেব নিঃসন্দেহে ভয়াবহ! চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ! মন খারাপ

সবজান্তা এর ছবি

শেষের থেকে পাঁচ নম্বর ছবিটা দেখে খুব খারাপ লাগলো।

কিছুদিন আগে গণ্ডার সংরক্ষণের আহবান নিয়ে আরেকটা লেখা পড়েছিলাম বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক মার্ক নফলারের পার্সোনাল ওয়েবে।

রংতুলি এর ছবি

এই পাশবিকতা দেখে দম বন্ধ হয়ে আসে। মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখা ভাল হয়েছে। আর কিছু বলবোনা মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ।

মৌনকুহর এর ছবি

চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

রংতুলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

জলদস্যু এর ছবি

ইউটিউবে অনেকদিন আগে ন্যাট জিওর একটা ভিডিও দেখেছিলাম। পোচিং এর হাত থেকে বাচানোর জন্য ড্রিল করে গন্ডারের শিং কেটে নেয়া হচ্ছে। প্রক্রিয়াটা আমার কাছে পোচিঙের চেয়ে কম নৃশংস মনে হয়নি।

রংতুলি এর ছবি

গণ্ডার বা হাতিকে পোচিং এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে তাদের শিং বা দাঁত কেটে নেয়াটা আমার কাছেও ভালো লাগেনা। কিন্তু তাদের মতে এতে যদি প্রাণীটি প্রাণে বাঁচে। তবে গণ্ডারের শিং সম্ভবত আবার গজায় দুই থেকে চার বছরের ভেতর।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার লেখাগুলো বেশ মন দিয়ে পড়ছি - দারুণ হচ্ছে

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম! জেনে বেশ ভালো লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।