পণ্ডিতের পিছে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৯/০৭/২০১২ - ৮:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যে সময়ের কথা বলছি তখন পণ্ডিত মশাইদের সে-কী হাঁক-ডাক! তাই বলে আমি ব্রিটিশ আমলের গল্প শোনাচ্ছি না। এই তো মাত্র দশক দুইয়ের আগের ঘঠনা। পণ্ডিত মশাইদের দাপট অনেক কমে এলেও তাদের হাঁক-ডাক এখনো থেমে যায়নি। অবিরাম ছুটে চলা নগর জীবনের ক্লান্তি ঘোচাতে দু’দণ্ড জিরোবার জন্য বছরে অন্তত একবার গ্রামের মায়াডাকে যারা সাড়া দেন তারা অল্পবিস্তার হলেও পণ্ডিত মশাইদের হুক্কাহুয়া ডাক আজও শুনতে পান। হ্যাঁ আমি শিয়াল পণ্ডিতদের কথাই বলছি। এর আগে সচলদের কুকুর চুরির গল্প শুনিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের লালকুকুরের বীরত্বের কাহিনিও খানিকটা উঠে এসেছিল। কিন্তু ঠিক অতটুকুতে চিড়ে ভিজেছে বলে আমার মনে হয়নি। ওখানে কুকুরের প্রবল পরাক্রমশালী অপজিশনদের প্রতি খানিকটা অবিচার করা হয়। রীতিমতো তাঁদের বুদ্ধিমত্তার অপমান বলে মনে হয়েছে। তাই তাঁদের মগজের সম্মানার্থে আবার আমার এই স্মৃতির অতলে ডুব দেয়া।
পণ্ডিতদের মতো ধুরন্দর জাতি প্রাণিজগতে দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না। আর পটলা বলত, মিচমিচে ইবলিশ একেকটা। পটলা মানে আমাদের রাখাল। সে সময় গোয়াল ভরা গরু ছিল আমাদের। সেগুলো চরানো আর দেখভালের জন্য আরো দু’জন বয়স্ক মায়েন্দারের সাথে রাখা হয়েছিল পটলাকেও। পটলা বয়সে আমার দু-তিন বছরের বড়ই হবে। তবু নাম ধরে ডাকা আর তুই-সম্মোধন; কাল আর প্রেক্ষাপট বিচারে খুবই সাধারণ ব্যাপার। বয়সের ব্যবধান যাইহোক আকৃতিতে, গায়ের জোরে পটলা আমাদের দ্বিগুন। হবেই বা না কেন- সকালে উঠে গরমভাত কখন হবে তার তোয়ক্কা না করে বড় একগামলা পান্তাভাত রাতের বাঁসি তরকারি দিয়েই সাবাড় করে ফেলত নিমিষে। এরপরও আরো এক গামলা সাধলে ‘না’ ছিল না পটলার। তো সেই পটলার পণ্ডিত মশাইদের প্রতি এত উচ্চ ধারণা থাকবার কথা নয়। কিন্তু বেশ ক’বার তাঁদের কাছে আমাদের নৈতিক পরাজয় তার ধারণাগুলো বদ্ধমূল করেছে।
বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বর্ষাকালেই শিয়াল বাবাজিদের দৌরাত্ম বাড়ে। বর্ষা মৌশুমে শিয়ালদের মাঠের খাবারে ঘাটতি পড়ে, তাছাড়া বংশ-পরম্পরায় রক্তের ভেতরে বয়ে বেড়ানো ধূর্তামীটা হয়তো বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের তালে তালে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই মানুষ্যজাতির পোষা মুরগিটা-ছাগলটা সাবাড় করার জন্য মনটা ছো ছো করে ওঠে তেনাদের। তা বাবা একটু আধটু চুরি করবি কর- তাই বলে ডাকাতি! হয়েছে কী- একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পটলার পাত্তা নেই। অথচ কথা ছিল সকাল বেলা উঠেই হানা দেব আমাদের কাঁঠল বাগানে। ইয়াবড় একটা কাঁঠাল নাকি ডাসতে শুরু করেছে। মিজান ভাইয়েরা মানে আমার বড় বড় চাচাতো ভাইয়েরা টের পাওয়ার আগেই ওটার একটা সদগতি করতে হবে। কিন্তু পটলা না থাকলে আমাদের উৎসাহ ঠিক জমে না। ওকে না পেয়ে আমরা ক’ভাই ওর আক্কেলের শ্রাদ্ধ করছি তখনি ও ভোজবাজির মতো কোথা থেকে এসে হাজির! হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, ‘তেঁদড়ামির তো একটা সীমা থাকা চাই- নাকি!’
‘কেন রে, সাত সকালে তোর সাথে কে আবার তেঁদড়ামি করল?’ ভ্রু জোড়া বাঁকা করে বলল ঝন্টু।
‘কে আবার, ওই পেটুক শিয়ালের দল চ্যায়ারম্যানের হাতির মতো ধাড়ি ছাগলটা সাবাড় করে ফেলেছে!’
‘ভালো হয়েছে!’ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম আমি। ‘ও ধাড়িটাও কম ত্যাঁদড় ছিল না। আমাদের গাছপালা রাখতো একটাও? একদিন ধরে খোয়াড়ে ভরতে গেলাম- ওমা খোয়াড়ওয়ালা বলে কি- ‘চেয়ারম্যানের ছাগল ভরলে কি আমার খোয়াড় থাকবে খোকা?’ আহা কী আদিখ্যেতা! চেয়ারম্যান বলে তাঁর ছাগল খোয়াড়ে ভরা যাবে না!’
‘আরে আগে শুনে তারপর বল।’ আমাকে থামিয়ে বলল পটলা। ‘শুধু একজন এসে ও ধাড়িকে কব্জা করার সাহস কোনো শিয়ালের হতো না। নিশ্চয় দলবল গুছিয়ে এসেছিল। তা না হয় এলি- তাই বলে যেখানকার মাল সেখানেই সাবাড়!’
‘মানে?’ চোখ কপালে উঠে গেছে আমাদের।
‘তবে আর বলছি কী?’ আমাদের তার গল্পের দিকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে সন্তুষ্টচিত্তে বলল পটলা। ‘জানিস তো, চেয়ারমানের ভেতর বাড়িটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ভেতরবাড়ির গোয়াল ঘরটা খোলা থাকে। কাল হয়েছে কি গেটের পাল্লা লাগাতে মনে ছিল না কারো। সবাই ঘুমিয়ে গেলে ত্যাঁদড়ের দল বাড়িতে ঢুকেছিল কিছু পাওয়ার লোভে। খোলা গোয়াল দেখে নিশ্চয় লোভে লাল পড়তে শুরু করে। তার ওপর অমন হোঁৎকা ধাড়িটাকে পেলে তো কথায় নেই। আহা, বেচারা ধাড়িটা কী সুখেই ঘুমটা দিয়েছিল। আগে কি আর জানত...’
‘আরে এতে প্যাঁচাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে সেটাই খুলে বলল না আগে?’ ফিন্টু ধমক দিয়ে বলল।
‘এতবড় একটা ধাড়ি, তারওপর শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা- গুরুজিরা ছিঁড়তে পারবেন কেন? অগত্য গোয়ালে বসেই ভোজ সেরেছে ব্যাটারা।’
‘বলিস কী!’ চোখ কপালে রেখেই বললাম আমি। ‘গোয়ালে বসেই খেয়েছে ধাড়িটাকে?’
‘তবে আর বলছি কী। টুঁ শব্দটিও হয়নি। সকালবেলা ঠিকা ঝি-টা গোয়াল ঝাট দিতে গিয়ে দেখে খুটির পাশে হাড়-গোড় পড়ে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোয়ালের মেঝেটা। ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে।’
‘কিন্ত এতবড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, কেউ টের পেল না? কেমন যেন ঠেকছে ব্যাপারটা।’ বিড়বিড় করে বললাম আমি।
‘বুঝতে পারছিস না?’ বলল ফিন্টু। ‘চুরি-ডাকাতিই যখন পেশা ও নেশা তখন কোন জায়গায় খাবল দিলে শিকার শব্দ করতে পারবে না সে বিষয়টা আমাদের চেয়ে তেনারাই ভালো জানেন। যদি একাধিক জনের কাজ হয় তবে তো কথাই নেই। তাছাড়া রাতের বৃষ্টির তেজও তো কম ছিল না।’
‘গলা কামড়ে ধরেছিল বলিস?’
‘হ্যাঁ।’ ফিন্টুর জবাব। ‘ তাছাড়া রাতে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল- শব্দ হলেও তা কানে যেত না বাড়ির লোকেদের।’

এতো শোরগোল করে কাঁঠাল বাগানে এসে কোনো লাভ হলো না। ডাসা কাঁঠালটা বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। বড়রা হস্তগত করে নিশ্চয় ওটার সদগতি করে ফেলেছেন। আমরা রণে ভঙ্গ দেয়ার কথা ভাবছি। কিন্তু পটলা সহজে হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। কাঁঠাল যেহেতু এখনো পাকেনি তাই ওতে কারো পেট জুড়িয়েছে বলে সে মনে করে না।
‘কাঁঠাল এই বাগানেই আছে,’ বলল পটলা। ‘ঠিক আমরা যা করতে চেয়েছিলাম বড়রাও তাই করেছে।’
‘মানে বলতে চাস মাটিতে পোঁতা হয়েছে ওটা?’ প্রশ্ন ছুঁড়লাম।
‘হ্যাঁ, আর সেটা এই বাগানেই কোথাও?’ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল পটলা। ‘চল খুঁজে বের করি।’
‘কিন্তু কোথায় পুঁতেছে কী করে বুঝবি? রাতে কী বৃষ্টিটাই না হলো, মাটিতে দাগ টাগ থাকার কথা নয়।’ বলল ফিন্টু।
‘ওটা আমার ওপর ছেড়ে দে, ঠিক বের করে ফেলব।’
অসাধারণ ওর পর্যবেক্ষণ শক্তি। দশ মিনিটের মাথায় জায়গটাকে চিহ্নিত করতে পারল পটলা। বৃষ্টিধোয়া ঘন এক ভাটঝোপের ভেতরে বেশ খানিকটা জায়গা পরিষ্কার। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাজা ঘাস-ঝোপগুলোই প্রমাণ করছে এখানে কেউ যখের ধন পুতেছে। পটলা নিড়িং চালিয়ে তিন মিনিটের মধ্যে আস্ত একটা আধাপাকা কাঁঠাল বের করে আনল মাটির তলা থেকে।
এখানে একটা কথা বলে নিই। কাঁচা কাঠাল বা অন্য ফল মাটির নিচে পোঁতার একটা বড় সুবিধা হলো- কার্বাইড ছাড়াই দ্রুত পাকে কিন্তু মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে অন্যের কাছে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় না- দু’দিকেই নিরাপদ।
‘এবার চল।’ আমাদের মনযোগ আকর্ষণ করে বলল পটলা। ‘এখানে চোরের ওপর বাটপারি হতে পারে, তারচেয়ে বাঁশবাগানে পুঁতলে কেউ আন্দজ করতে পারবে না।’
এর ঠিক একদিন পরেই কাকভোরে আমরা বাশগানে গেলাম কাঁঠাল পেকেছে কিনা খোঁজ নিতে। কিন্তু বিধিবাম, এখানেও বাটপারি! এক পণ্ডিত মশাই সপরিবারে সেটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারছেন। আমারা আড় থেকে ভেরেণ্ডার ডাল ভেঙে, কেউ একটা বাঁশের কঞ্চি বা আগালে কুড়িয়ে রে রে করে তেড়ে গেলাম। কিন্তু উনাদের বিশেষ তাড়া আছে বলে মনে হলো না। পাশেই একটা পাটক্ষেত। ভাবখানা এমন, যতই হাঁকডাক করো না কেন আমাদের নাগাল পাবে না। সত্যিই বোল্টের গতিতে দৌড়েও শিয়াল ব্যাটাদের ধরতে পারলাম না। বরং পাটক্ষেতের ভেতর সেধোবার আগে মাঝারি সাইজের বাচ্চা দুটো আমাদের দিকে ফিরে খ্যাক খ্যাক করে একটা ভিলেনমার্কা হাসি দিয়ে গেল।
‘দেখলি ব্যাটাদের কাণ্ড দেখলি! তক্কে তক্কে ছিল। আমি নিশ্চিত, পাট ক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে ব্যাটারা সেদিন আমাদের কাঁঠালপোতা দেখেছিল।’ পটলা হতাশায় চোখমুখ লাল করে বলল।

কাঠালপোঁতার ঘটনায় পটলা শিয়াল জাতির ওপর ক্ষেপে আগুন। সেই আগুনেই ঘি ঢালতে কিনা ছোটচাচা প্রায় আমাদের খোঁচা মেরে বলেন, ‘এ তো রীতিমতো মনুষ্যজাতির ওপর অপমান। হাতগুটিয়ে বসে আছিস কেন? কিছু একটা কর! সারা পাড়ায় ঢি ঢি পড়ে গেছে। তোদের জন্য পাড়ার ছেলে ছোকরার সামনে মুখ দেখানো দায় হয়ে গেছে যে!’
সত্যি বলতে কী, শিয়াল বাবাজিদের শায়েস্তা করতে পারলে আমাদের চেয়ে ছোটকাকুরই নৈতিক লাভ বেশি। আগে খানেক সপ্তাহ তাঁর সখের রামছাগলটা শিয়ালের পেটে গেছে কিনা! যাইহোক, কাকুর কথায় গুরুত্ব¡ না দিলেও দু’দিন বাদেই শিয়ালমারা অভিযানে নামতে হলো আমাদের। কারণ মায়ের একঘর পাতিহাঁস সাবাড় করেছে ব্যাটারা। টানা বর্ষণে ঘাঠের মাছ ডিম ছাড়ার জন্য স্রোতের উল্টোরথে যাত্রা করে মাঠের দিকে পাড়ি জমায়। সেই মাছের মিছিলের অধিকাংশেরই শেষ গন্তব্য স্থল পৃথিবীর সবচেয়ে পেটুক প্রাণী দোপেয়ের উদরে। আমাদের মিজান ভাইয়েরা সেই মিছিলের কল্লোল টের পেয়েই লাল কুকুরটাকে সাথে নিয়ে ঘোর বাদল রাতের জাল- দেউড়ি নিয়ে ওঁৎপেতে বসে থাকে খালের ধারে। চাচা-চাচিরা বকঝকা করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি মাছের ঝাঁক সেই বকুনির ঝাঁঝ মিইয়ে দিতে পারে অশ্চর্যজনকভাবে। তো পণ্ডিত মশাইরাও সে সুযোগ ছাড়বেন কেন? একদিন-দু’দিন তবু ধৈয ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তৃতীয় রাত আর সে ধার ধারলেন না। সারারাত বর্ষণের রিমঝিম শব্দের আড়ালে আমাদের মাটির হাঁসের ঘরে সিঁধ কাটতে মোটেও অসুবিধা হয়নি। সকালে মা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলেন হাঁসের ঘর একেবারে গড়ের মাঠ। প্রথমে স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নার বাঁধ ধরে রাখতে পারলেন না। পরে সে কান্না পরিণত হলো ক্রোধে। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল লাল কুকুরটার ওপরে। রাতজাগা ঘুমন্ত কুকুরটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাংলা পাচনের দুম দাম ঘা পড়ল ওর পিঠে। পরিস্থিতি অনুধাবন করতেই বিদ্যুৎবেগে পালিয়ে বাঁচল বেচারা। মায়ের ক্রোধ কিছুটা মিজান ভাইদের ওপর ছিল কিনা জানি না; এক সপ্তাহ তারা মায়ের ত্রিসীমানা ঘেঁষেনি।
অগত্যা লালকুকুরটাকে নিয়ে আমাদের শিয়ালের আড্ডায় হানা দিতে হলো। কিন্তু প্রথম দিনের সফলতা বলতে একটা গেছো ইঁদুর আর একটা বাচ্চা গুইসাপ মারা পড়ল আমাদের হাতে। পটলা বলল, ‘এভাবে হবে না। ওরা আমাদের চেয়ে ঢের বুদ্ধি রাখে। পাড়ার ছোকরাদের কাজে লাগাতে হবে। শুধু লালকুকুরে হবে না বাঘা নেড়ি কুকুরটাটাকেও টানতে হবে দলে।’
পরদিন পটলার প্লানমতো কাজে লেগে গেলাম। এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চারে লোকেবলের অভাব হয় না- কিছু না হলেও অন্তত প্রাণ বা অঙ্গহানির রিস্ক যখন নেই তখন পাড়ার ছোকারাদের মহাউৎসাহে আমাদের দলে ভিড়তে বাধা কোথায়! বরং অভিযানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অতি বেশি হলে আমাদের প্রতিপক্ষ ভড়কে এলাকা ছাড়া হতে পারে ভেবে অনেক বন্ধুদের নিরাশ করতে হলো। তবে নেড়িটাকে দলে টানতে আমাদের দুটো টাকা বখরা দিতে হলো। মোড়ের দোকান থেকে একটা পাউরুটি কিনে তার জিভে জল আনার ববস্থা না করলে তার আশা আমাদের ছাড়তে হতো।
মহা শোরগোলে আবার শুরু হলো আমাদের অভিযান। প্রথমে একটা পাটক্ষেত ঘিরে ফেলল আমাদের বাহিনী। নেড়িটাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল পটলা। নেড়ি আর পটলার দাবড়ানিতে বেরিয়ে এলো এক পণ্ডিত। আর যাবে কোথায়- লালকুকুর ওঁৎপেতে ছিল, আচমকা লাফিয়ে পড়ে ধরে ফেলল শিয়ালটার ঘাড়। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল আমাদের বাহাদুরি। লাঠি, আগালে, ভেরেণ্ডার ডাল- যার হাতে যা ছিল- তা-ই আছড়ে পড়ল হতভাগা শিয়ালটার পিঠে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ধরাধাম ত্যাগ করতে হলো বেচারাকে।
এভাবে কয়েক দিনে কয়েকটা শিয়াল মারার পর পটালার খেয়াল হলো এবার শিয়ালের আসল আস্তানা অর্থাৎ গোরস্থানে হানা দেয়া দরকার। পরদিন আমরা দলবল নিয়ে চললাম গোরস্থান অভিযানে। বর্ষাকালে গোরস্থান ভাট, কালকসুন্দা, মটমটি, আশ্বড়, বৈচিঝোপ জটলা বেঁধে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে। শিয়ালের আত্মগোপনের উত্তম জায়গা। কিন্তু আমাদের এই ক’দিনের অভিযানে শিয়ালেরা সতর্ক হয়ে গেছে। আমাদের সাড়াশব্দ পাওয়া মাত্র গর্তের ভেতর আশ্রয় নিচ্ছে। ব্যপারটা বুঝে আমরাও খুন্তা, কোদাল, শাবল সাথে নিয়ে গেছি। যেখানেই শিয়ালের গর্তের মুখ দেখছি খুঁড়ে গভীর গর্ত করে ফেলছি। কিন্তু তাঁরা তো এমনি এমনি পণ্ডিত খেতাব জোটাননি। তাদের গর্তের নাকি হাজারটা মুখ থাকে। একটা মুখ পূর্ব মাঠে হলে অন্যটা পশ্চিম মাঠে। তাই আমাদের গর্ত খোঁড়া বৃথা গেল। তবে সাফল্য এলো অন্যভাবে। নেড়িকুকুরটা হয়তো একটু বেশিই সাহসী হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ একটা কবরের ভেতরে একটা বড়সড় গর্তের মুখ দেখতে পেয়ে মাটি শুঁকতে শুঁকতে ছুটে গেল সেদিকে। তারপর চিকন মাথাটা ভেতরে সেধিয়ে দিয়ে চেষ্টা করল শরীরটা আরেকটু গলানো যায় কিনা। সফল হলো তার সেই প্রচেষ্টা। আমরা তো উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছি। যদি সত্যিই ভেতরে শিয়াল থাকে নেড়িটার কপালে খারাবি আছে। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে মাথাটা ধীরে ধীরে বের করে আনল। ওর দাঁতগুলো শক্ত করে ধরে আছে একটা পণ্ডিতের বাচ্চার গলার চামড়া। ঠিক বাচ্চা নয় মাঝবয়সী শিয়াল। নেড়ি ওটাকে ছেড়ে দিল আমাদের লালকুকরের সামনে। আমাদের কিছু করতে হলো না। কেন জানি আমার মনে হলো এটাই কাঁঠাল খেয়ে আমাদের দেখে খ্যাক খ্যাক করে হেসেছিল।
এরপর মাস দুয়েক কেটে গেছে। আমাদের পাড়ায় পণ্ডিতদের পায়ের ধুলো আর পড়ে না বললেই চলে। তখন পটলার মাথায় নতুন বুদ্ধি বেরোল। দাদি-নানিদের মুখে শুনেছি শিয়াল যখন ডাকে তখন তাদের ডাক নকল করে ভাঙালে নাকি রাতে ঘুমিয়ে পড়লে শিয়াল এসে মুখে হেগে (টয়লেট করে) দিয়ে যায়। কথাটা আমার বিশ্বাস হয় না। আমার ধারণা, ছোটদের চিৎকারে তাঁরা বিরক্ত হয়েই এ কথা বলেন। কিন্তু পটলা এ কথা মানতে নারাজ। ও বলল, ‘অনেক দিন তো শিয়াল এদিকে আসে না, দেখা যাক ওদের ডাক ভাঙ্গিয়ে আনা যায় কিনা-’
সেই শারদীয় জোসনা রাতে মাঠের এদিক ওদিক থেকে যখন শিয়ালের সম্মিলিত হাঁক ভেসে এলো তখন পটলাও পাড়াটা মুখর করে করে তুলল ‘হুক্কাহুয়া’ ডেকে। সাধারণত পণ্ডিতেরহাঁকডাকে কেউ বিরক্ত হয় না। কিন্তু কানের কাছে মানুষের গলায় ‘হুক্কাহুয়া’ ডাক শুনলে বড়রা ক্ষেপে ওঠেন। পটলাকে থামাতে তাই তেড়ে এলেন ছোটচাচা। কিন্তু পটলার তখন রোখ চেপে গেছে। হাঁক ভাঙ্গিয়ে যে করেই হোক একজন পণ্ডিতকে ডেকে আনবেই। ছোটচাচার তাড়া খেয়ে সেই জোসনারাতে সে ছুটে গেল নদীর ধারে। তার রাত দশটা পর্যন্ত একটানা ডেকে চলল পণ্ডিত মশাইদের সাথে তাল মিলিয়ে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি বাড়িতে একটা শোরোগোল পড়ে গেছে। কী ব্যাপার? পটলার দাবী এক পণ্ডিত মশাই রাতে সত্যি সত্যি ওর মুখে হাগতে এসেছিল। কিন্তু সেও কম ধড়িবাজ নয়- শেয়াল বাবাজীকে তো সেই কায়দা করে ডেকে এনেছে। সেকারণেই পণ্ডিতেরসিদ্ধি লাভ হয়নি সে কথা ফলাও করে বর্ণণা করছে পটলা- ‘যেই না আমার মাথার দুই পাশে দুই পা দিয়ে হাগতে যাবে অমনি আমি শেয়ালের লেজ চেপে ধরেছি। তারপর সেকি ধস্তাধস্তি! আমার সাথে জোরে পারবে কেন? কিন্তু ব্যাটার তো দাঁত আছে, কামড়াতে উস্তাদ- বেশ বুঝতে পারছিলাম বেটা সেই তালেই আছে। অমনি লেজটা ধরে ব্যটাকে ওপর তুলে বনবন করে ঘুরিয়ে মারলাম এক আছাড়। কোনোমতে তাল সামলে উঠে পড়িমরি করে করে পালিয়ে বাঁচল শয়তানটা। ভেবেছিলাম মরে যাবে কিন্তু ব্যাটাদের কৈ মাছের প্রাণ!’
পটলার কথা হয়তো কেউ বিশ্বাস করত না- সেই জোসনা রাতেও হঠাৎ করে শরতের মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়েগিয়েছিল আমাদের কাঁচা উঠোনকে- ভিজে মাটিতে শিয়ালের লুটোপুটির স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তাছাড়া শিয়ালের লেজ থেকে একগাছা চুল ছড়ে এসেছিল পটলার হাতে। সেটাও সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে।
এমন জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ কি আর মিছে হতে পারে, আমরাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম- সত্যিই শিয়ালের ডাক ভাঙ্গালে তারা রাতে এসে মুখে হেগে দিয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস আর জ্বলজ্যান্ত প্রামাণ সহকারে যখন পটলা নিজের বিজয় কেতন জাহির করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই দাদি এসে জলে পানি ঢাললেন, ‘আরে পটলা, শিয়াল তোর গালে হাগতে আসেনি, এসেছিল আমার পাতিহাঁসের বাচ্চাগুলো সাবাড় করতে। হাঁসের ঘরে এতো হাঁসের জায়গা হচ্ছে না বলে তিন দিন ওগুলো সিঁড়ি-ঘরে রাখছি- পাজি শিয়ালগুলো ঠিক তার গন্ধ পেয়ে গেছে। কিন্ত তুই ছিলি সিঁড়ির ঘরের দোরে শুয়ে। তোকে ডিঙোনো ছাড়া তো আর পথ ছিল না।’
আমাদেরও খেয়াল হলো, আরে দাদি ঠিকই তো বলেছে! হাঁস মুরগির ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো তো সিঁড়ি-ঘরেই রাখা হয়! তখন পটলার মুখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছিল না- এতোবড় একটা বীরত্বে এভাবে নস্যাৎ হয়ে যাবে ও কল্পনাও করেনি। দাদি বুঝলেন ওর মনের কথা, ‘আরে তোর মুখ দেখি প্যাঁচার মতো হয়ে গেছে! শিয়াল না হয় তোর গালে হাগতে আসেনি, তুই তো ঠিক পাজির বাচ্চাকে মাথায় তুলে আছাড় মেরেছিস- এই সাহসটুকু তোর ছাড়া আর কার আছে বল?’

আমাদের গ্রামে পণ্ডিতরা এখোনো আছেন বহাল তবিয়তে। এখোনো জোসনা রাতে চারদিক থেকে তাঁরা হেঁকে ওঠেন। কিন্তু আমি জানি আজকের ছেলেমেয়েরা শিয়ালের পেছনে ছোটে না। এখন হাঁস মুরগির জন্য আর কেউ মাটির ঘরও করে না, তাই রাতবিরাতে শিয়ালের দল লোকালয়ে ঘুরঘুর করলেও খুব বেশি সুবিধা তারা করতে পারেন না। শিয়ালের পেছনে ছোটাও তাই অনর্থক। তাছাড়া এখন গ্রামগঞ্জেও বিনোদনের ধারা বদলে গেছে। হারিয়ে গেছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো। গাদা গাদা বইয়ের ভার সইতেই ছেলেমেয়দের পিঠ বেঁকে যায়। ক্লাস, কোচিং, প্রইভেট টিউটর- এতো হ্যাপা সহ্য করে প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখা কী করে সম্ভব? এর মাঝেও যদিও বা একটু ফুসরৎ মেলে- তখন তারা মেতে ওঠে কম্পিটার গেমস, টেলিভিশনে কার্টুন নেটওয়ার্ক খুব বেশি হলে স্কুল মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলা। এর বাইরে পণ্ডিতের পিছে পণ্ডশ্রমের কথা মাথায়ই আসে না তাদের


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখা মজার হয়েছে।

একটা সময় পর্যন্ত এইগুলো দুটো শ্রেণীর প্রাণীর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে ফেয়ার লড়াই ছিল। এখন আর সে দিন নাই, এইধরনের বেশিরভাগ প্রাণীই যারা এককালে অগুন্তি ছিল আজ কোণঠাসা/বিলুপ্ত।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

হ্যাঁ, এই কিছুদিন আগেও গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে প্রচুর বনবিড়ল, গুইসাপ, বেজি, খরগোশ দেখা যেত, আজ এদের দেখা মেলে কেবল চিড়িয়াখানাতে। সংখ্যায় কমলেও শিয়াল আজও টিকে আছে স্রেফ বুদ্ধির জোরে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নিলয় নন্দী এর ছবি

হাসি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সুমাদ্রী এর ছবি

লেখাটা বেশ ভাল লেগেছে। ছোটবেলায় যখন গ্রামে ছিলাম, এই শেয়াল-কুকুরের ধাওয়া পালটা ধাওয়াটা প্রায়ই দেখতাম। অনেক হাস্যকর গল্পও ছিল শেয়ালকে নিয়ে। যেমন, কুকুরের দল যখন শেয়ালকে প্রায় ধরেই ফেলেছে এমন অবস্থা, তখন শেয়াল বাবাজি উপায়ন্তর না দেখে তার মোক্ষম অস্ত্রটি নাকি প্রয়োগ করত। তার পুটু নির্গত সেই বায়ুর উৎকট গন্ধ সইতে না পেরে কুকুরেরা নাকি দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালাত। আমাদের এক পোষা কুকুরের বাচ্চাকে একদিন সকাল থেকে কোথাও দেখতে না পেয়ে তার খোঁজ খোঁজ রব পড়ে যায় চারিদিকে। তারপর ধানক্ষেতে একটা প্রাণীর নাড়ি-ভূড়ি পড়ে থাকতে দেখে আমরা বুঝেছিলাম শেয়ালের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গেছে আমাদের কুকুর। কুকুর আর শেয়াল আসলে একই ঘর থেকে বেরিয়ে আসা দুই ভাই কিনা, তাই কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা। যাই হোক লেখার জন্য উত্তম জাঝা!

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
মোক্ষম সময়ে শিয়ালের বিষবাষ্প নির্গতকরণের গল্প আমি শুনেছি কৈশরে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

ক্রেসিডা এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ ক্রেসিডা

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

বন্দনা এর ছবি

আচ্ছা আপনার ভান্ডারে কি খাটাসের গল্প আছে যেটা রাতের বেলা খুব বিশ্রি করে হাসে , শুনলেই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়।আপনার লেখা মনে করিয়ে দিল সেই ছেলেবেলার ডিসেম্বার মাসের কথা। পরীক্ষা শেষ করেই নানাবড়ি যেতাম মাসখানিক মত থেকে রাজ্যের বাদরামী করে জানুয়ারীতে ঢাকায় ফেরত আসতাম।লেখা ভালো হয়েছে রনি।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ বন্দনা
আমাদের গ্রামে খাটাশকে আলদা করে চেনে না লোকে। খাটাশকেও তাই বনবিড়াল বলে। তবে বনবিড়াল-খটাশদের নিয়েও অম্লমধুর স্মৃতি আছে আমার। সে গল্পও সচলদের শোনাবার ইচ্ছা আছে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

পথিক পরাণ এর ছবি

শেয়াল পন্ডিত মারতে পারি নাই। তবে নেউল(বেজি) মেরেছি গর্ত খুড়ে। এই বিষয়ে কুকুররা খুব ওস্তাদ।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমার কিন্তু গুইসাপ মারার অভিজ্ঞাতও- সাইজ কী একেকটার- সাক্ষাত কমাডো ড্রাগন!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক
শেয়াল-কুকুরের চিরন্তন লড়াই । গ্রামে এখনও হয় তবে তা আগের মত নয় অবশ্যই । বিশেষ করে শেয়াল এখন অনেক কোনঠাসা । বনবিড়াল, বাগডাস, মেছোবাঘও তো নিভৃত পল্লী ছাড়া দেখা মেলা ভার, এদের অবস্থা বোধকরি আরও সঙ্গীন । আগে চলতি পথে যেখানে হটাৎই ওদের সাথে দেখা হয়ে যেত । মানুষ চলত রাস্তা বা আইল ধরে আর ওরা রাস্তা পাড় হয়ে নেমে যেত মাঠে-প্রান্তরে । এখন বিশারদগণকে রীতিমত সার্ভে করতে হয় ওদের সংখ্যা আর অবস্থান শনাক্ত করতে ।

যাইহোক- আরও প্রকৃতির গল্প আসুক । এভাবে যদি টিকিয়ে রাখা যায়, অন্যকোন ভাবে হয়তো আসলেই ওরা টিকে যাবে...

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আমি নস্টালজিক মানুষ, প্রকৃতির প্রতি ঝোঁক এক্তটু বেশিই। আপনাদের সমর্থন তির গল্প আরো আসবে

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যে ফলের নামগুলো, ফুলের নামগুলো আমরা হারিয়ে ফেলেছি সযত্নে...
যে শব্দগুলো এখন আর আমাদের চোখে পড়ে না... সেই নামগুলো শব্দগুলো উঠে আসে আপনার লেখায়।
সেউ উঠে আসাটাও মোটেই কসরতসাধ্য না... খুব স্বাভাবিক স্বর নিয়ে চুপ করে বসে থাকে...
ভালো লাগে...
নিয়মিত লিখবেন আশাকরি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমি মনে প্রাণে গাঁইয়ের মানুষ, গ্রমীণ শব্দগুলো আজো বুকে ধারণ করে আছি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লাগলো।
গালে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনার মতো অভিজ্ঞতা। চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুল মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

তারেক অণু এর ছবি
আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

মজা পাইলাম হাসি
গ্রামে ছিলাম অনেকদিন।এখনো মাঝে মাঝেই যাই।ছোট্টবেলার সেই উদ্দীপনা,দুরন্তপনা এখনকার শহরের ছোট্ট ছেলেমেয়েদের কই???
খুব ভালো বলেছেন হাসি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

যান্ত্রিক হতে চলেছে আমাদের আগামী প্রজন্ম

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।