আলাপচারিতায় আবু হাসান শাহরিয়ার- 'মননচর্চার বৈশ্বিক ক্লাব সচলায়তন; প্রত্যেক সদস্যই বিশ্বনাগরিক'

রূপক কর্মকার এর ছবি
লিখেছেন রূপক কর্মকার [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/১০/২০০৮ - ৮:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.

“মননচর্চার বৈশ্বিক ক্লাব সচলায়তন; এর প্রত্যেক সদস্যই বিশ্বনাগরিক।”

বলেছেন আমার এবং অনেক সচলের প্রিয় কবি আবু হাসান শাহরিয়ার।
সচলদের লেখালেখি নিয়েও মূল্যবান কিছু কথা বলেছেন তিনি। অন্য আরও অনেক বিষয়েও। তাঁকে নিয়ে আমার ব্লগে কিছু করার আইডিয়াটা হিমু ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া। আমি বাস্তবায়ন করেছি মাত্র। আমার আগে তারেক ভাইও এ রকম একটি ব্লগ সাজিয়েছিলেন আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা দিয়ে। আমার ব্লগের বাড়তি আকর্ষণ কবির একটি নাতিদীর্ঘ ইন্টারভিউ এবং পূর্বপ্রকাশিত ছাড়াও একটি অপ্রকাশিত কবিতা। মূল আয়োজনে যাওয়ার আগে অভাজনের সামান্য কথা :

পেশাগত কারণে আমার বর্তমান ঠিকানা কুমিল্লা। এই শহরের প্রাচীন দিঘিগুলো আমার বৈকালিক সঙ্গী। কাছেই কোটবাড়ি। সেখানে প্রাচীনতর বৌদ্ধবিহার। সুযোগ পেলেই ছুটে যাই। সঙ্গে থাকে দুই প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ ও আবু হাসান শাহরিয়ারের বই। শাহরিয়ার ভাইয়ের কৈশোর ও তারুণ্যের সন্ধিক্ষণ কেটেছে কুমিল্লায়। এই শহরে তাঁর অনেক সুহৃদ। তাঁদের দু-একজনের সঙ্গে আমার পেশাগত ঘনিষ্ঠতা আছে। সেই সূত্রে কবির সঙ্গেও মুঠোফোনিক যোগাযোগ। এখনও দেখা হয়নি।

আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলা কবিতার একটি সার্বভৌম অধ্যায়। কবি শামসুর রাহমান তাঁকে 'প্রকৃত কবি, সাহসী গদ্যকার এবং বিরল সম্পাদক' বলে বই উতসর্গ করেছেন। কথাশিল্পী শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে 'কবিতার রাজপুত্র' সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। তাঁর কবিতার অনেক পংক্তিই প্রবাদের মতো মুখে-মুখে ফেরে। অগ্রসর পাঠক সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন আবু হাসান শাহরিয়ারের প্রতিমিডিয়া সিরিজের একটি ননফিকশনের জন্য। ২০০৮এর ২৫শে জুন তিনি ৫০এ পা দিয়েছেন। বইয়ের সংখ্যাও ৫০ ছুঁইছুই। 'অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ' থেকে 'তোমাদের কাঁচের শহরে'-- বার-বার বাঁক নিয়েছেন তিনি বাংলা কবিতায়। কালের বিশাল ক্যানভাস নিয়ে লিখেছেন 'বালিকা আশ্রম' কাব্য। কবিতা বিষয়ক ৫টি প্রবন্ধের বই ছাড়াও আছে ৪টি বহুল আলোচিত ননফিকশন-- 'অর্ধসত্য', 'সমাত্মজীবনী : মিডিয়া ও প্রতিমিডিয়া', 'পায়ে পায়ে' ও 'যাইত্যাছি যাইত্যাছি কই যাইত্যাছি জানি না'। 'প্রামাণ্য শামসুর রাহমান', 'জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র'সহ ১০টির মতো সম্পাদিত গ্রন্থও আছে। লিখেছেন ছোটদের জন্যও। সম্প্রতি শ্রুতি কাব্যান্দোলনের বরপুত্র মৃণাল বসু চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেছেন 'নৈঃশব্দের ডাকঘর' নামের প্রতিউপন্যাস বা পত্রউপন্যাস। একসময় 'খোলা জানালা' সম্পাদনা করে দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তখন তার হাত দিয়ে একটি লেখাপ্রকাশ ছিল তরুণ কবি-লেখকদেও কাছে স্বপ্নের মতো। কবির ইন্টারভিউটি তৈরি করা হয়েছে-- ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ২০০৮-- তিন দিনের মুঠোফোনিক আলাপচারিতার ভিত্তিতে। যদিও পড়ার সময় মনে হতে পারে এক বৈঠকের আলাচারিতা। যেহেতু লেখক নই, পাঠকমাত্র-- এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় আমার জানা ছিল না। ব্লগে দেওয়ার আগে কবিকে দেখিয়ে নিতে হয়েছে। ইমেইলে-ইমেইলে। তিনিও আপত্তি করেননি।

আয়োজনটিকে দুটি পর্বে সাজানো হয়েছে। ১.কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে আলাপচারিতা, ২.কবির পূর্বপ্রকাশিত ও অপ্রকাশিত কবিতা।
--------------------------------------------------------

আবু হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে আলাপচারিতা

রূপক কর্মকার: আপনার কৈশোরের শহর কুমিল্লা থেকে রূপক বলছি।
আবু হাসান শাহরিয়ার : কেমন আছেন আপনি? কেমন আছে ঐ শহরের দিঘিগুলো?

রূপক : ভালো আছি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আরও ভালো লাগছে। 'বালিকা আশ্রম'এর সেই লাইনটা মনে করিয়ে দিলেন: "এখন দিঘিরা নেই; বালিকার চোখে কম দ্যাখে"। তবে কুমিল্লার বালিকারা চোখের ব্যাপারে খুবই সচেতন। দিঘিগুলোও ভালো আছে।
শাহরিয়ার : আপনি কবিতা লিখতে শুরু করেছেন নাকি?

রূপক : কী যে বলেন! দেশে কবির সংখ্যা অনেক। আমি পাঠকই থাকতে চাই।
শাহরিয়ার : কে বলেছে দেশে কবির সংখ্যা অনেক? বাজারি ঈদ সংখ্যাগুলো? নাকি 'কালি ও কলম'এর কবিতা সংখ্যা? বুদ্ধদেব বসু তার ছোটমেয়েকে চিঠিতে লিখেছিলেন-- "ভগবানের ছিঁটেফোঁটা দান কত লোকেরই তো পাতে পড়ে, কিন্তু যে ধরনের যোগাযোগের ফলে পুরো কবি হয়ে ওঠে, তার অধিকারী হন এক শতকে দু-চারজন মাত্র।"

রূপক : এবং আপনার কবিতায় আছে, 'মিডিয়ায় পাখি নেই মশারাই খ্যাতির শিখরে'।
শাহরিয়ার : তাহলে আর 'কবির সংখ্যা অনেক' বলছেন কেন? মিডিয়ার ছাপাছাপিতেই কেউ কবি হয়ে যায় না। কবিতায় সিদ্ধি পেতে হলে জীবনকে মোমের মতো পুড়িয়ে পাঠকমনে সলতে হয়ে জ্বলতে হয়। বর্তমানের ও চিরকালের পাঠকের মনে। পাঠকই কবিতার সিদ্ধি।

রূপক : আমার তো মনে হয়, পাঠকের মনে সলতে জ্বালানোর কাজটি আপনি ভালোই রপ্ত করেছেন। 'প্রথম আলো'র ঈদ উপহার সংখ্যায় সুরসাধক মুস্তফা জামান আব্বাসীর একটা লেখা বেরিয়েছি 'শহর থেকে দূরে' নামে। কিছুদিন আগে নুহাস পল্লীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নিয়েছিলেন দুটি বই-- আপনার 'শ্রেষ্ঠ কবিতা' আর 'কবিতার বীজতলা'। আপনার সম্পর্কে লিখেছেন-- "আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলা কবিতার একটি বাঁকের নাম। এটি বিশ্বাস করি।" পড়েছেন?
শাহরিয়ার : পড়েছি। আপনার আগে রাজবাড়ি মুক্তি পাঠচক্রের আহ্বায়ক সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান আমাকে লেখাটির কথা জানান। কিন্তু পাঠকের মনে সলতে জ্বালানোর ব্যাপারটা এত সহজে নিষ্পত্তি হওয়ার নয়। শুধু সমকালে এর সুরাহা নেই। সমকালের পাঠকের হাত ধরে চিরকালের পাঠকের কাছে না-পৌঁছনো পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না।

রূপক : কোটবাড়ির বৌদ্ধবিহারে যখন যাই, আমিও জীবনানন্দ দাশ আর আপনার বই সঙ্গে নিই।
শাহরিয়ার : শুনে ভালো লাগল।

রূপক : আজ একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাকে ফোন করেছি।
শাহরিয়ার : বলে ফেলুন উদ্দেশ্যটা কী?

রূপক : আপনার কিছু কবিতাপ্রকাশের অনুমতি চাই। পূর্বপ্রকাশিত হলেও ক্ষতি নেই।
শাহরিয়ার : আপনি কি ছোটকাগজ সম্পাদনায় হাত দিয়েছেন? জানেন তো, পারতপক্ষে ছোট-বড় কোনও কাগজেই এখন আর কবিতা দিই না। সরাসরি বই করি।

রূপক : জানি। জেনেও চাইছি।
শাহরিয়ার : ঈদ সংখ্যার জন্য 'প্রথম আলো'র সাজ্জাদ শরিফ কবিতা চেয়েছিল। দৈনিকটির পলিসি যত বাজারিই হোক, সাজ্জাদের বিনয়ের প্রশংসা না-করলেই নয়। প্রতি বছরই ঈদ সংখ্যার আগে লেখা চায়। প্রতি বছরই ওকে ফেরাই। 'কালি ও কলম'এর আবুল হাসনাতও তার কাগজের কবিতা সংখ্যার জন্য কবিতা চেয়েছিলেন। তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছি। যা একটা সংখ্যা বের করেছেন তিনি। ছুঁয়ে দেখারও অযোগ্য। তো, আপনি কী কারণে আশা করছেন যে, আপনাকে আমি কবিতা দেব?

রূপক : কারণ আমি একটি ভালো উদ্দেশ্যে আপনার কবিতা চাইছি। ব্লগে দেব। সচলায়তনের নাম তো শুনেছেন। সেখানে তারেক ভাইয়ের ব্লগে আপনার সর্বশেষ কবিতার বই 'তোমাদের কাঁচের শহরে'এর কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। আমিও সচলায়তনের সদস্য। অতিথি সদস্য। সিগনেচারে আপনার কবিতা ব্যবহার করি। ঐ রকম একটা ব্লগ আমারও আছে। সেখানেই আপনার কবিতাগুলো প্রকাশ করব।
শাহরিয়ার : সচলায়তন? ভালো আয়োজন। বনভোজন-বনভোজন একটা আমেজ পাওয়া যায় সাইটটিতে ঢুকলে। ই-ডাকে পাঠানো এক চিঠিতে ওয়েব লিংক জানিয়ে তারেক রহিম আমাকে সচলায়তনের রাস্তা বাতলে দিয়েছিলেন। কিন্তু 'সিগনেচারে কবিতা' বিষয়টা বুঝলাম না। খুলে বলেন।

রূপক : সিগনেচার মানে সিগনেচার। সদস্যদের মন্তব্যের নিচে যা থাকে। ঝরাপাতা নামের একজন সচল-সদস্যও সিগনেচারে আপনার কবিতার লাইন ব্যবহার করেন। আর তারেক ভাইয়ের মতো আমিও আপনার কিছু কবিতা প্রকাশ করতে চাই। সঙ্গে আপনার একটা ইন্টারভিউ থাকলে আরও ভালো হয়।
শাহরিয়ার : কবিতাপ্রকাশের অনুমতি দেব কিনা, তারই সুরাহা হল না, আবার ইন্টারভিউ?

রূপক : 'আমার কালের অন্ধকার গলিটির নাম প্রথম আলো' লেখার পরও ঐ কাগজে আপনার গুচ্ছকবিতা ছাপা হতে দেখেছি দু-তিন বার। এ প্রসঙ্গে রনজু রাইম সম্পাদিত 'কবিতা সংক্রান্তি'কে দেয়া সাক্ষাতকারে আপনি বলেছেন, সাজ্জাদ শরিফের ভালবাসার ডাক ফেরাতে পারেন না বলেই তাকে মাঝেমধ্যে কবিতা দেন। আমি পাঠক। কবিতার নিবেদিতপ্রাণ পাঠক। আরও কিছু নিবেদিতপ্রাণ পাঠককে আপনার কবিতা পড়াতে চাই। আপনিই তো বললেন, 'পাঠকই কবিতার সিদ্ধি'। তাহলে?
শাহরিয়ার : হাহ্ হাহ্ হা...। যুক্তির প্যাঁচে আটকে দিলেন। যদিও সাজ্জাদকে এখন আর আমি কবিতা দিই না। শেষ যে-বার ওকে গুচ্ছকবিতা দিই, চারটি দিয়েছিলাম। তার একটি ছিল 'গায়েন সঞ্জীব'। সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যুর পর ওর প্রতীকে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক বাংলাদেশকে নিয়ে কবিতাটি লিখেছিলাম। 'গায়েন সঞ্জীব' ছাড়া বাকি তিনটি ছাপা হয়েছিল। অথচ সঞ্জীব একসময় সাজ্জাদেরই সহকর্মী ছিল। 'ভোরের কাগজ' ভেঙে 'প্রথম আলো' হওয়ার সময় যেহেতু সঞ্জীব 'ভোরের কাগজ'এই থেকে গিয়েছিল, শুনেছি, সেইজন্যই ওর মৃত্যুও পর ওকে নিয়ে কিছু না-ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় 'প্রথম আলো'। কী নীচতা! সচলায়তন এর উল্টো। যেহেতু মুহম্মদ জুবায়ের এখানে লেখালেখি করতেন, তাকে নিয়ে ব্লগে-ব্লগে লেখালেখি চলছে এখনও। এটাই তো হওয়া উচিত। আপনাকে সচলায়তনে কবিতাপ্রকাশের অনুমতি দিলাম। নতুন কবিতাও দেব একটা।

রূপক : অসংখ্য ধন্যবাদ। আর ইন্টারভিউ?
শাহরিয়ার : কিছু শর্ত আছে : কোনওরকম বানান-প্রমাদ ঘটানো যাবে না। কোনও কবিতায় স্পেস থাকলে, সেগুলোও ঠিকঠাক মতো রাখবেন। এক বই থেকে ৫টির বেশি কবিতা নেওয়া যাবে না। প্রকাশকদের সঙ্গে আমার আস্থার সম্পর্ক নষ্ট হোক, অমি তা চাই না। আর সাক্ষাতকার প্রকাশ করতে হলে আমাকে একবার সেটা দেখিয়ে নিতে হবে। কম্পোজ হয়ে গেলে ই-ডাকে পাঠিয়ে দেবেন। চোখ বুলিয়েই ফেরত পাঠাব। এই যে আমরা কথা বলছি, এটাকেই সংলাপ হিসেবে ভাবতে থাকুন।

রূপক : আপনি যেভাবে বলেছেন, কবিতাগুলো সেভাবেই প্রকাশিত হবে। কেবল 'খণ্ড-ত' নিয়েই যত ঝামেলা। ঠিকমতো আসে না।
শাহরিয়ার : খণ্ড-তর সাথে সচলায়তনের কোনও শত্রুতা আছে কী?

রূপক : সেটা আমার কাছেও একটা রহস্য। ভয় নেই, সচলায়তনের লেখক-পাঠক সবাই খণ্ড-ত রহস্য ভেদ করতে সক্ষম। 'ত' দিয়েও সমস্যাটার সমাধান করা যায়।
শাহরিয়ার : মানেটা এই দাঁড়াচ্ছে, সচলায়তনে খণ্ড-ত হচ্ছে 'হিডেন কনটেন্ট' এবং এর সদস্যরা মিশেল ফুকোর মতো তা নিংড়ে বের করতে জানেন। হাহ্ হা হা...

রূপক : সচলায়তন সম্পর্কে কিছু মূল্যায়ধর্মী কথা শুনতে চাই আপনার মুখ থেকে।
শাহরিয়ার : মননর্চার বৈশ্বিক ক্লাব সচলায়তন। এর প্রত্যেক সদস্যই বিশ্বনাগরিক। তবে কথা আছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনাবিনিময়ের ক্ষেত্রকে বিশাল করেছে। পরকে আপন করার সুযোগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। আবার তার মধ্য দিয়েই আপন হয়ে যাচ্ছে পর। বিশালতা আর বিপুলতা এক নয়। প্রযুক্তিকে বশ করতে পারলে লাভ। নিজেই প্রযুক্তির বশ হয়ে গেলে লোকসান। কারও-কারও জন্য সচলায়তন সৃষ্টিশীলতার চারণভূমি। যারা স্রেফ মজা করার জন্য সেখানে ঢোকেন, তাদের জন্য সময়ের অপচয় মাত্র।

রূপক : আর কোনও প্রতিক্রিয়া?
শাহরিয়ার : মাসুদা ভাট্টি, লুৎফর রহমান রিটন, সুমন সুপান্থ, মুজিব মেহদী, আরিফ জেবতিক, পলাশ দত্তসহ পূর্বপরিচিত অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছে সচলায়তনে। সদস্য নই বলে কথা হয়নি। কেননা পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকলেও মন্তব্য করার অধিকার নেই। আবার, আগে পরিচয় ছিল না, কিন্তু লেখা পড়ে মন্তব্য করতে ইচ্ছে করেছে, এমনও অনেকে আছেন।

রূপক : কারা তাঁরা, নাম বলবেন কী?
শাহরিয়ার : সবার নাম তো মনে নেই। যে কজনের নাম মনে পড়ছে, তাদের মধ্যে প্রথমেই হাসান মোরশেদ। তীরন্দাজও একজন। আরও আছেন : মাশা, নিঘাত তিথি...।

রূপক : যে মন্তব্যগুলো করতে ইচ্ছে হয়েছিল; পারেননি; সেই মন্তব্যগুলো আমার কাছে করা যায় কি?
শাহরিয়ার : হাসান মোরশেদের অরুন্ধতী থেকে অনুবাদ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ওর অনুবাদের হাত ঝরঝরে। আপনার তো একটাই মাত্র লেখা প্রকাশিত হয়েছে এ পর্যন্ত। লেখাটা ভালো। লেখার বিষয়টা। সেখানে মন্তব্য করতে গিয়ে মোরশেদ আমার কবিতার কিছু পংক্তিও তুলে দিয়েছেন। ওকে আমার কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দেবেন। ওর সম্পাদিত সুনীল সাইফুল্লাহর কাব্যটি তারেক আমাকে ই-ডাকে পাঠিয়েছিল। খুব ভালো একটি কাজ হয়েছে।

রূপক : আর কারও ব্লগে যাননি?
শাহরিয়ার : গিয়েছি। সব তো মনে নেই। তীরন্দাজ নামে একজন লেখালেখি করেন সচলায়তনে। ওর 'জাহাজী জীবনের গল্প' পড়ে চমকে উঠেছি। একটাই এপিসোড বেরিয়েছে তখন। কী ঋদ্ধ ওর জীবন! কী সুন্দর দ্যাখার চোখ! গদ্যের হাতও সাবলীল। ছদ্মনামের আড়ালের মানুষটিকে দেখার খুব ইচ্ছে হয়েছে। তীরন্দাজ নয়, ওর ছদ্মনাম অর্জুন হওয়া উচিত ছিল। ধারণা করি, 'জাহাজী জীবনের গল্প' তীরন্দাজের অতীতজীবনের অভিজ্ঞতা। আবার এ-ও হতে পারে, অন্যের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। বিভূতি যেমন আফ্রিকা না গিয়েই 'চাঁদের পাহাড়' লিখেছিলেন, সেইরকম । আল মাহমুদকে মুক্তিযোদ্ধা কবি বলা যায় কিনা প্রশ্ন তুলে একটি চিন্তাশীল গদ্য লিখেছেন আরিফ জেবতিক। মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। ঐ লেখার মন্তব্যসূত্রে নুরুজ্জামান মানিকের 'কবি ও রাজনীতি' শিরোনামের একটি ব্লগও ঘুরে এসেছি। নিঘাত তিথির ব্লগে প্রকাশিত 'প্রসংগ : হুমায়ুন আহমে' শিরোনামের লেখাটি আমাকে ভাবিয়েছে। মুহম্মদ জুবায়ের সচলায়তনের সদস্য ছিলেন। নবীন লেখকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিতেন। ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে শুধরে দিয়ে চিঠিও লিখতেন। একজন সদস্য জুবায়েরের ঐরকম একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন তার ব্লগে। যে-কোনও নবীন লেখকের জন্যই সে-চিঠি একটি মূল্যবান নির্দেশিকা হতে পারে।

রূপক : চোখে পড়িনি তো চিঠিটা! কার ব্লগে, মনে আছে?
শাহরিয়ার : নামটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। খুঁজলে পেয়ে যাবেন।

রূপক : চিঠির প্রসঙ্গ যখন উঠলই, আপনার ও মৃণাল বসু চৌধুরীর যৌথ প্রকাশনা 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর' সম্পর্কে কিছু শুনতে চাই।
শাহরিয়ার : আমার যা বলার, তা তো বইয়েই বলেছি। এখন পাঠক বলবেন।

রূপক : দারুণ নাম : 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর'। আখ্যান, ননফিকশন, পত্রউপন্যাস, নাকি প্রতিউপন্যাস, কী বলব? সাহিত্যের কোনও চেনা শাখাতেই ফেলা যায় না। আবার সব কিছুর স্বাদই আছে। দু বার পড়েছি। প্রথমবার মুগ্ধতায়, এক নিঃশ্বাসে। দ্বিতীয়বার জানার আগ্রহে, লাইন ধরে-ধরে। সাহিত্য আর আজকের মিডিয়া সম্পর্কে কত কী অজানা তথ্যই না আছে সেখানে!
শাহরিয়ার : ভালো লাগলেই ভালো।

রূপক : মিডিয়া কীভাবে খাঁটি কবি-লেখকদের আড়াল করে রাখে, 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর' না-পড়লে তা জানা বাকি থেকে যেত। বইটি পড়ে শঙ্খ ঘোষকে নতুন করে জেনেছি। চিঠিতে-চিঠিতে অনেক আড়াল-কবিকে চিনিয়েছেন আপনারা। বিশেষত আপনি। বইটি পড়ার পর রহমান হেনরীর 'শ্রেষ্ঠ কবিতা' আর সেলিনা শেলীর 'চিতাচৈতন্যের গান' কিনেছি। ঢাকার আজিজ মার্কেটে হন্যে হয়ে খুঁজেছি পবিত্র মুখোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী, পরেশ মণ্ডল আর সুজিত সরকারের কবিতার বই।
শাহরিয়ার : বোঝা যাচ্ছে বেশ মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়েছেন। অনেক পাঠপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি বইটি বেরুনোর পর। এখনও পাচ্ছি।

রূপক : শামসুর রাহমানের মৃত্যুদিনের ওপর আপনার চিঠিটি খুবই টাচি। সে-চিঠিতে আমাদের কবি-লেখকদের স্খলন নিখুঁতভাবে চিত্রিত হয়েছে। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, আনিসুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়নও যথার্থ। কোন যোগ্যতায় এরা সাহিত্যেও মোড়ল, এই প্রশ্নটি আপনি ভালোভাবেই পাঠকের মনে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। একদিকে মিডিয়ার সার্কাস, অন্যদিকে বাঙলা ও বিশ্বসাহিত্যের কত কী রেফারেন্স! সাহিত্যের মূলধারাকে জানতে হলে 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর' পড়তেই হবে। 'মোড়ক উন্মোচন'এর পরিবর্তে 'পাঠোন্মোচন' কনসেপ্টটি দারুণ। এ সম্পর্কে 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর'এই বলেছেন। বইটি যারা পড়েননি, সচলায়তনের সেই সব পাঠকের জন্যও আরেকবার বলবেন কি?

শাহরিয়ার : বই কি লজেন্স না চুইংগাম যে মোড়কউন্মোচন? মোড়ক খুলে বইয়ের প্রচ্ছদটি টিভির ক্যামেরায় ধরলেই হয়ে গেল? প্রচারপটুদের ফটোসেশন ছাড়া একে অন্য কিছু ভাবতে কষ্ট হয়। বইমেলা এলেই বাংলঅ একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ প্রচারপটুতার জন্য একটা কর্নার থাকে। মিডিয়ার এক ছটাক প্রচারের আশায় প্রচারভিক্ষুকরা সেখানে জড়ো হয়। আমি বলছি-- মোড়কের নয়, পাঠের উন্মোচন হোক। অর্থাৎ বইটা পঠিত হোক। বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে যদি কোনও অনুষ্ঠান করতেই হয়, সে-বই থেকে কিছু অংশ পড়া হোক। কবিতার বই হলে কমপক্ষে একটি কবিতা। গল্প-উপন্যাস বা গদ্যের বই হলে নিদেনপক্ষে একটি প্যারা।

রূপক : আপনার লেখা পড়ে জেনেছি, যতীন সরকার এই 'পাঠোন্মোচন' কনসেপ্টটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। আলম খোরশেদের 'বিশদ বাঙলা'য়ও এখন আর মোড়কউন্মোচন হয় না; হয় পাঠোন্মোচন।
শাহরিয়ার : আরও অনেকেই বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। সচেতন লেখক-প্রকাশকরা নিজেদের শুধরে নিচ্ছেন।

রূপক : তরুণ লেখকদের সম্পর্কে আপনার কোনও পরামর্শ?
শাহরিয়ার : আমার কোনও পরামর্শ নেই। যে হওয়ার, পরামর্শ ছাড়াই হয়।

রূপক : তবে যে মুহম্মদ জুবায়েরের চিঠির প্রশংসা করছিলেন?
শাহরিয়ার : তারও বেশি প্রশংসার দাবি রাখেন সচলায়তনের সেই সদস্য, যিনি চিঠিটার মর্ম বুঝতে পেরেছেন। লিখতে হলে জানতে হবে। প্রথমত প্রকৃতির পাঠশালা থেকে পাঠ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত যাপিত জীবন থেকে। তৃতীয়ত বই থেকে। আড়াই হাজার বছর আগের চাণক্যের শ্লোক থেকেও পাঠ নেওয়া যেতে পারে : "সকৃগদুক্তগৃহীতার্থো লঘুহস্তো জিতাক্ষরঃ/ সর্বশাস্ত্রসমালোকী প্রকৃষ্টো নাম লেখকঃ"। অর্থাৎ একবার বললেই যিনি কথার অর্থ বোঝেন, লেখার সময় যার হাত দ্রুত চলে, শব্দরাশি যার বশীভূত এবং সর্বশাস্ত্র যার অধিগত তিনিই যথার্থরূপে লেখক। কী বুঝলেন? লেখার সময় হাত দ্রুত চললেই শুধু হবে না, বাকি তিনটি শর্তও পূরণ করতে হবে : একবার বললেই কথার অর্থ বুঝতে হবে, রাশি-রাশি শব্দকে বশে রাখতে হবে এবং সব বিষয়েই স্বচ্ছ জ্ঞান থাকতে হবে। নইলে পুরোটাই পণ্ডশ্রম।

রূপক : এ ব্যাপারে আপনার 'উত্তরসাধক' কবিতাটিও ভালো নির্দেশিকা হতে পারে।
শাহরিয়ার : যদি কেউ সেভাবে নেন, নিতে পারেন। আবার কেউ অন্যভাবেও রসাস্বাদন করতে পারেন।

রূপক : প্রশ্নটি করা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না; তবু করি। নিজের কোন কবিতাটি আপনার সবচেয়ে প্রিয়?
শাহরিয়ার : যেটা লিখতে চাই, কিন্তু এখন পর্যন্ত লিখতে পারিনি, সেই কবিতাটা। তবে একটা প্রিয় পংক্তির কথা বলতে পারি : 'স্লেটে লেখা নাম আমি মুছে যেতে আসি'। এতক্ষণ আমরা যা বলাবলি করলাম, তা-ও মুছে যেতে এসেছে। অতএব এখানেই শেষ করা ভালো।

রূপক : শেষ করার আগে সচলদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতেন।
শাহরিয়ার : প্রতি বর্ষায় অন্তত একটি করে গাছ লাগান। পৃথিবী নামের গ্রহটাকে সবুজ থাকতে দিন।

সচলায়তনের জন্য আবু হাসান শাহরিয়ারের নতুন কবিতা
পাখি ও জানালা

পুঁজিবাজারীরা নরমুণ্ডশিকারী নাগাদের চেয়ে হিংস্র। ওরা যখন ঝাঁক-ঝাঁক যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ভিনদেশ তছনছ করে, তখন টু শব্দটিও করা নিষেধ। ওদের দিকে সামান্য গুলতি তাক করলেই ‘সন্ত্রাস’। তাই বলে গাড়িবোমা, শিশুর খণ্ডিত দেহ, রক্তেভেজা জামা?

ছবিটা রিলিফ খুঁজছে। কবিতাটা স্পেস।

জীবিকার দৌড় থামলেই অগ্রন্থিত পথগুলো হাঁটতে শুরু করবে। সদ্যপ্রকাশিত অট্টালিকা ফুঁড়ে জেগে উঠবে মাঠ। ভেজা আকাশকে পাহাড়ের ঢালে মেলে দিয়ে চুল শোকাবে হাজং বিদ্রোহ। বালুর কঙ্কাল মুছে জলের দোতারা বাজাবে হাজামজা নদী।

পাখিটা আকাশ খুঁজছে। জানালাটা ভোর।

আবু হাসান শাহরিয়ারের পূর্বপ্রকাশিত কবিতা

ভয়

প্রথম ভ্রমণে সবই ভালো লাগে; শাদামাটা চায়ের দোকানও
তাই বলি, কোথাও একবারই যাওয়া ভালো
পুনর্বার গেলে রেলকলোনির বাঁকে
দেখতে পাব না সেই কেয়াগাছটাকে

সেই কবে একবারই কোঠাবাড়ি গেছি
মেদিনীপুরেও সেই একবারই; মঞ্জুষের সাথে
একবারই শ্রীগুরুচরণে
শ্রদ্ধা জানাতে গেছি শান্তিনিকেতনে

অথচ তোমার ডাকে আজও সেই প্রথমেই ভয় :
একবার গেলে যদি বার বার যেতে ইচ্ছে হয়?
[তোমাদের কাচের শহরে]

গায়েন সঞ্জীব

ঘাটে বাজে না কানুর বাঁশি
রাধা মজে না বাঁশিতে
দেশে জরুরি তামাশা
কথা কহিতে বারণ
নদী শাসনে মজেছে
দূরে সাগর উত্তাল
গাড়ি চলে না চলে না
প্রেম বাঁচে না...

না চলুক গাড়ি, তবু গায়েন সঞ্জীব ছিল, মনে হত বৃন্দাবনে আছি।
এখন গোলাপ নেই, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নেই, রাধাও ধুতুরা পেলে খুশি।
[তোমাদের কাচের শহরে]

আড়াই অক্ষর ৪৮

ঊর্ধতনের চেয়ে বেশি জানলেও অধস্তনদের তা মুখে আনতে নেই
পদাধিকারবলে একজন খোঁড়াও তোমাকে দৌড়শিক্ষা দিতে পারে

প্যারির রাস্তায় হাঁটতে-হাঁটতে আপলিনের বলেছিলেনÑ
"পায়ের অনুকরণে চাকা; কিন্তু চাকাই পা নয়"

স্যুররিয়ালিজম কথাটি সেখান থেকেই এসেছে

খোঁড়া ঊর্ধতনকে তুমি কখনোই বোলো নাÑ
"পায়ের অনুকরণে ক্র্যাচ; কিন্তু ক্র্যাচই পা নয়"
[আড়াই অক্ষর]

মাটি-বংশধর

আমি লুঙ্গি-বাউলের নাতি, শাড়ি-কিষানির ব্যাটা
আমার বাপের নাম কে না জানে, চাষা-মালকোঁচা
আমি গামছা-কুমোরের প্রতিবেশী, জ্ঞাতিগোষ্ঠী যত নিম্নজনা
ধুতি-গোয়ালারা জ্ঞাতি, আরও জ্ঞাতি খড়ম-তাঁতিরা
আমি লুঙ্গি-বাউলের নাতি, শাড়ি-কিষানির ব্যাটা।

বারোভাজা তেরোভাজা তোমাদের তেলেভাজা বুদ্ধি-বিবেচনা
আমাকে ছোঁবে না-- আমি কাঁচামাছে, পোড়ামাংসে বাঁচি
আমার বউয়ের নাম কাঁচাসোনা; তোমাদের মতো বুকে কাঁচুলি পরে না
স্তনে মুখ ঘষে দিয়ে চলে আসি; ঝাঁপিখোলা-ঝাঁপিবন্ধ নেই।

মাটিভাষাভাষী শস্য, লতাগুল্ম, বৃক্ষ, বনরাজি
আমাকে শেখায় বীজমন্ত্র; আমি শরীরের মাটিভাষা জানি
মাটি মাতৃভাষা আমি সে-ভাষায় সোঁদাগন্ধ পুঁথি পাঠ করি
যা পড়ি শেকড়ে পড়ি; বাকলে লিখি না নাম তর্জমাবশত।

আমি লুঙ্গি-বাউলের নাতি; জন্ম মাটি-বংশধরে
মুখে খিস্তি-খেউড়ের দোচোয়ানি-- ব্যাকরণে ঢেঁকুর তুলি না।
[একলব্যের পুনরুত্থান]

বালিকা আশ্রম ০৪

চাঁদ গিয়েছিল বালিকাবিহারে
মন গিয়েছিল মনে
একখানা রাত ভোর হয়ে গেল
টেলিফোনে-টেলিফোনে

সব জানালার বাতি নিভে গেলে
একটি জানালা বাকি
থেকে যায়; আমি সেই জানালায়
তারাদের ছবি আঁকি

আমার তারারা উজালা বালিকা
ঘন-ঘন প্রেমে পড়ে
একটি কবিতা ডুব দিয়ে ওঠে
রাত্রির সরোবরে

একটি দরোজা তারপর থেকে
সিঁড়িঘরে আড়ি পাতে
কবিতার খাতা সমকাল আঁকে
পুরাণের পৃষ্ঠাতে
[বালিকা আশ্রম]

বালিকা আশ্রম ০৬

বুকের ঊনপঞ্চাশ পৃষ্ঠা খোলো :
এটা একটা বিষাদের নদী; অভিমানের পাহাড়ে তার বাড়ি

চোখের এক শ বত্রিশ পৃষ্ঠায় যাও :
এটা একটা সাইকেলের গল্প; বালকের পঙ্খিরাজ ঘোড়া

থুতনির বিরানব্বই পৃষ্ঠা ওল্টাও :
এটা একটা বর্ষার কবিতা; প্রথম চুম্বনের জলরঙে আঁকা

চুলের এক শ ঊনসত্তর পৃষ্ঠায় থামো :
এটা একটা রাত্রির গীতিকা; এখানেই চন্দ্রাবতী ফোটে

চলো তবে পরিশিষ্টে যাই :
এটা একটা কীটদষ্ট অধ্যায়; তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না
[বালিকা আশ্রম]

বালিকা আশ্রম ৫১
এ চিঠি তখনি লেখা, যখন লেনিন বেঁচে ছিল। অথবা মুজিব ছিল ঘরে-ঘরে চর্যার টোটেম। কে আছে শোনেনি সেই রাখালের বজ্রচেরা বাঁশি? সে যদি তর্জনী তোলে, গোরস্থানও দুর্গ হয়ে ওঠে। আজও তার নাম শুনে শোসকের সিংহাসন কাঁপে। সে এক সময় গেছে, মৃত্যুকেও মনে হত বালকের খেলা। বাল্মীকি আসেনি তাই কোনও মহাকাব্য নেই একাত্তর নিয়ে। অকৃতজ্ঞ এই দেশ; পিতাকে নিজের হাতে রক্তে রাঙিয়েছে। স্বপ্নেও ভাবিনি আমি, মাকে নিয়ে বেশ্যালয়ে যাব। কবিতার মাঠে নাকি একবারই একাত্তর আসে। ফের যদি আসে তুমি চলে এসো হায়েনা-বিনাশে।
[বালিকা আশ্রম]

অথই নীলিমা

কত সাধ অপূর্ণই থেকে গেল
নানা তুচ্ছ অজুহাতে কত পথ হাঁটাই হল না
এত কাছে 'দ্যাখার হাওড়', পথে জাফলঙের টিলা
যাব-যাব করে আজও যাওয়াই হল না
মনিরাকে নিয়ে

কুমিল্লা ছাড়িয়ে
আগরতলার পথ বড়জোর আড়াই ঘণ্টার
কবেই দিলীপ দাস ডেকেছে সেখানে
কাকলি ও কৃত্তিবাসও ডেকে-ডেকে কান্ত অবশেষে
চিঠিও লেখে না ওরা; যথার্থই শিক্ষা দিয়েছে
কেননা আয়ুর মতো অপেক্ষারও থাকা চাই সীমা

কোন ফাঁকে ফ্রক ছেড়ে শাড়িপরা হয়ে গেল অথই নীলিমা!
[তোমাদের কাচের শহরে]

সুসঙ্গ দুর্গাপুর ২০০৮

সুসঙ্গ রাজারা নেই; পড়ে আছে প্রাসাদের খোসা
এখনও টংকর মাঠে অগণন ভাঁটফুল ফোটে
ঝাঁক-ঝাঁক কবি ওড়ে দেশওয়ালী পাড়ার আকাশে

কবিকে তেওয়ারী টানে; সোমেশ্বর পাঠক টানে না

দুর্গাপুরে এবারই প্রথম পথে সোমেশ্বরী পালা
দুর্গাপুরে এবারই প্রথম ওঠে উর্দিপরা ঝড়
দুর্গাপুরে এবারই প্রথম কবি উদ্বাস্তু শিবিরে
দুর্গাপুরে এবারই প্রথম কাঁদে বন্দি বিরিশিরি

করিরা উদ্বাস্তু হলে মাঠ-মাঠ খরা নামে দেশে

হ্যালো মেঘ তুমি কি মৃণাল বসুচৌধুরীকে চেনো?
সৎ ছিল বলে লোকটা সতর্ক ছিল না
অসতর্ক ছিল বলে হিসেবী ছিল না
হিসেবী ছিল না বলে কবি

কবিরা উদারহস্ত; রাজারা ভিখিরি

হ্যালো কালিদাস, হ্যালো রাজাদের সারিবদ্ধ করো
আমি ও মৃণাল বসু দানসত্র খুলে বসে আছি
[অগ্রন্থিত]

উত্তরসাধক

যে আমাকে অস্বীকার করে
প্রথমত অকবি সে; দ্বিতীয়ত পরশ্রীকাতর

হয়তো সে মিডিয়াপালিত কোনও প্রাবন্ধিক; ভুলবাক্যে বুকরিভিউ করে
অথবা সে আসল কালপ্রিট, দ্যাখে বড়কাগজের লঘু সাহিত্য পাতাটি
নতুবা সে ছোট কোনও কাগজের পাতি সম্পাদক
নিজেকে জাহির করে নিজের কাগজে
কাগজে-কাগজে করে সখ্যবিনিময়

ওরা কেউ কবি নয়, ওদের পেছনে ঘুরে বহু প্রতিভাকে আমি নষ্ট হতে দেখি

যে-আমাকে কেবলই স্বীকার করে, বিতর্ক করে না
সে-ও কোনও কবি নয়, জেনো

যে আমাকে গ্রাহ্য করে, পাশাপাশি মধুর তর্কও
তারই মধ্যে আমি কিছু সম্ভাবনা দেখি
সে-ও কবি নয়

কে তাহলে?

অমিতসম্ভাব্য কবি ভালবাসে একার সন্ন্যাস
[তোমাদের কাচের শহরে]

কবিকে কথা বলতে দাও

প্রিয় বাংলাদেশ, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। নদী ও গাছের সঙ্গে কথা বলতে চাই। পশু ও পাখির সঙ্গে কথা বলতে চাই। চর্যার হরিণীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। বেগুনি রিবন-বাঁধা ভাঁটফুলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। মাটি ও মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। পৃথিবীর সব বঞ্চিত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কবিকে কথা বলতে দাও।

কবিকে কথা বলতে না-দিলে শিশুর চয়নিকা থেকে মুছে যাবে বাঙলা বর্ণমালা। একুশের প্রথম প্রহরে আবারও রক্তবৃষ্টি হবে রাজপথে। কবিদের কথা বলতে দাও।

প্রিয় জন্মভূমি, কবিরা স্বার্থপর নয়। অর্বাচীন নয় শব্দের তাঁতিরা। কবি কথা বলবেন, কৃষক বলবেন না-- তা কী করে হয়? কৃষককেও কথা বলতে দাও। কৃষকদের হয়ে নাচোলের ইলামিত্রও কথা বলবেন। তিনি কথা না-বললে সর্ষেমাখা-পায়ে তেভাগার স্বপ্ন কবিতায় উঠে আসবে কী করে? ঘোর অমাবস্যার রাতে আশার লণ্ঠন হাতে কে পৌঁছে দেবে বঞ্চিত মানুষকে তার স্বপ্নের ঠিকানায়?

প্রিয় মাতৃভূমি, কৃষক কথা বলবেন, ছাত্র বলবেন না-- তা কী করে হয়? ছাত্রকেও কথা বলতে দাও। ছাত্রদের হয়ে শিকও কথা বলবেন। তা না-হলে জোহার মিছিল-কাঁধে হেঁটে-যাওয়া ঊনসত্তর মুছে যাবে ইতিহাস থেকে। জেলের তালা ভেঙে শেখ মুজিবও আর ফিরে আসবেন না তার স্বজাতির কাছে। মুক্তির কোনও যুদ্ধই হবে না কোনও শোষিত জনপদে। পরাধীন মানুষ চিরপরাধীনই থেকে যাবে।

প্রিয় স্বদেশ, কবিকে কথা বলতে না-দিলে তোমার বন্দনাময় জাতীয় সঙ্গীত মিথ্যে হয়ে যাবে। ঐ সঙ্গীত কবিরই রচনা। কে পারে কবির চেয়ে বেশি ভালবাসতে তার দেশকে? উত্তরে হিমালয় আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর সাক্ষী, চাঁদসদাগর আর তার হেঁতালের লাঠি সাক্ষী, যখনই তুমি বিপন্ন হয়েছ, চর্যার কবিরা ফিরে-ফিরে এসেছেন এই বাঙলায়। কবিকে কথা বলতে দাও। কবিদের কথা বলতে দাও।

কবিকে কথা বলতে না-দিলে দেশাত্মবোধক গান থেকে সব বাণী মুছে যাবে নিমেষেই; সুর ও ছন্দরা বোবা আর্তনাদ করবে। এবং কলরেডি মাইক থেকে কেবলই কর্কশ স্বরে ধ্বনিত হবে-- হ্যালো ওয়ান টু থ্রি মাইক্রোফোন টেস্টিং... হ্যালো হ্যালো... হ্যালো মাইনাস টেস্টিং... হ্যালো হ্যালো... হ্যালো মাইনাস ওয়ান টু থ্রি... হ্যালো মাইনাস ১৫ কোটি... হ্যালো হ্যালো...
[তোমাদের কাঁচের শহরে]


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

এই পংক্তিটি পড়ে গায়ে কাঁটা দিলো:
"ছবিটা রিলিফ খুঁজছে। কবিতাটা স্পেস।"

কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা কমই পড়েছি, দুর্ভাগ্য আমারই। আমার কাছে তিনি প্রায় নতুন কবি, এমন একটি মহাদেশ আবিষ্কারে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ রূপক ও সচলায়তনকে।

রূপক কর্মকার এর ছবি

ধন্যবাদ মূলত পাঠক ভাই। আমিও নিছক পাঠক। তাই
শিরোনামেই ভুল করেছি। 'মননচর্চার' পরিবর্তে 'মননর্চার' কম্পোজ করেছি। ভুলটা হয়তো ভেতরেও গেছে এক-দুবার। এরকম আরও কিছু প্রমাদ নিশ্চয়ই আছে। ভয়ে আর দেখলাম না। কবি প্রমাদের ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। আমি শিরোনামেই সেটা করে বসে আছি।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

রণদীপম বসু এর ছবি

এক কথায় দুর্দান্ত হয়েছে আলাপচারিতা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো। আর শাহরিয়ার ভাইয়ের কবিতা মানেই তো হরপ্পার সেই চাঁদটাকে আমাদের হাতে অবিকল ফিরিয়ে দেয়া।
এটা তো আর সবাই পারেন না। কেউ কেউ পারেন। শাহরিয়ার ভাই সম্পর্কে আর বেশি বলাটা বোধ করি শোভন হবে না।অনেকেই হয়তো স্তুতি ভেবে নিতে পারেন। তাঁর অনেক বই-ই আমার কব্জায়, যা দিয়ে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবের চৌর্যবৃত্তির স্বভাবটা উস্কে উঠেছে এবং আমাকে সর্বস্বান্তও করেছে।

পাঁচ বছর আগে দৈনিকের সাময়িকীতে তাঁর একটি কবিতার প্রেক্ষিতে তাঁকে উৎসর্গ করে আমার কবিতাটা 'অদৃশ্য বাতিঘর' বইয়ে অন্তর্ভূক্ত আছে। সুযোগে সেটাই উদ্ধৃত করছি।

প্রত্ন-বাউল
(কবি আবু হাসান শাহরিয়ার-কে)

চর্যাপদের কাল ক্ষয়ে গেছে কবে সেই
কাহ্নপা-রা জাদুঘরে শুধুই
স্বপ্নের নাব্যতা বেয়ে কাদের ললনা তুমি
উদ্ভিন্ন কাঁচুলী খুলে উড়িয়ে পয়ার ধ্বজা
অজন্তার আলগুহায় মজে ওঠো অভিসারে আজো ?

এখন বাংকার ব্লাস্টারের কাল
ব্যবিলন বুঝে গেছে ক্লাস্টারের লয়
বসরার গোলাপেরা চিকন বিকিনি পড়ে
হুমড়ি খাবে লাল-নীল ক্যাবারের তালে
এইসব ডলারের জয়কার ছেড়ে কে তুমি প্রত্ন-বাউল
সিকস্তির আঁকিবুকি খুঁজে খুঁজে ক্ষয়িষ্ণু বাঙলার তটে
শুধু শুধু অবসন্ন কেবল ?
(২৩/০৪/২০০৩)

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আরিফ জেবতিক এর ছবি

রনদীপমের মতো আমারও মনে হচ্ছে , আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পর্কে কিছু বলাটা স্তুতির পর্যায়ে চলে যেতে পারে এখানে । ভিন্ন সময়ে বলা যেতে পারে ।

শাহরিয়ার ভাইয়ের স্বাক্ষাতকারটি ভালো লাগল ।
আপনাকে ধন্যবাদ, রূপক ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাক্ষাতকারটি চমৎকার হয়েছে।

কল্পনা

...........................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
মিডিয়ার ছাপাছাপিতেই কেউ কবি হয়ে যায় না।

আর এই কথাটাই কাউকে বোঝাতে পারি না। এখনকার বেশিরভাগ কবিই তার সমালোচকের দিকে ডান্ড উঁচিয়ে রাখে। এমন ভাব যে, ব্যাটা বিরূপ কিছু বলছিস তো মাথা দু'ভাগ করে দেবো।

কর্মকার, ধন্যবাদ দিলে হয়তো আপনাকে ছোট করা হবে। তারচেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশই উত্তম মনে করি। সচলায়তনের পাতায় এটি নি:সন্দেহে আরেকটি বড় কাজ। আশা করি এমনি কিছু কর্মের সঙ্গে ভবিষ্যতেও যুক্ত থাকবেন। চলুক
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সবজান্তা এর ছবি

শিরোনাম নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তায় ছিলাম। এখন বুঝলাম তাহলে ভুল বুঝি নি।

লেখকের নিজের কি বানান ঠিক করার পারমিশন নেই ? যদি না থেকে থাকে তবে সচলায়তনের কোন মডারেটর যেন সত্বর ঠিক করে দেন, নচেৎ কবি দেখলে দুঃখিত হবেন বোধ করি।

লেখাটা চমৎকার হয়েছে, বিশেষত আলাপচারিতার ঢং। খুব শীঘ্রই কবির কবিতার সাথে আরো বিস্তারিত পরিচিত হওয়ার আকাংখা প্রকাশ করছি। লেখার জন্য রূপকদা'কে ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

রূপক কর্মকার এর ছবি

বোন কল্পনা , সবজান্তা দা' ও জুলিয়ান ভাই,
আমার কোনও কৃতিত্বই নেই এখানে। সব কৃতিত্ব কবির। আমি তাঁর কথামালা আর কবিতা তুলে এনে আপনাদের সামনে প্লেস করেছি মাত্র। আর যত কৃতিত্ব, সবই আপনাদের। প্রশংসায় যারা কৃপণ নন।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুর্দান্ত

হিমু এর ছবি

রূপকদাকে ধন্যবাদ জানাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানবীরা এর ছবি

ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা দেবার জন্য।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রানা মেহের এর ছবি

ভালো লাগছে পছন্দের কবিকে
এখানে কথা বলতে দেখে।
সাক্ষাত্কারটাকে শুধু কবির ব্যক্তিগত চিন্তা
আর কবিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে
অন্য বিষয়ে বিস্তৃত করা যেতো না?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍সচলায়তন? ভালো আয়োজন। বনভোজন-বনভোজন একটা আমেজ পাওয়া যায় সাইটটিতে ঢুকলে।

আহা! মুগ্ধতা তাহলে শুধু সচলদেরই নয়!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সুপ্রিয় রূপক কর্মকার-আপনাকে অভিনন্দন এই চমৎকার উদ্যোগের জন্য ।
এই আয়োজন সচলায়তনকে ঋদ্ধ করলো নিশ্চিত ।

আর প্রিয় কবিদের একজন আবু হাসান শাহরিয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞতা- তার সময়টুকু আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য । ব্যক্তিগতভাবে আরো বেশী কৃতজ্ঞতা জানালাম- আমার অনুবাদ প্রচেষ্টা তার চোখে পড়েছে জেনে ।

শাহরিয়ার ভাইয়ের মনে থাকার কথা নয় অবশ্যই কিন্তু আমার জন্য একটা দামী স্মৃতি হয়ে আছে তার আরেকটি সাক্ষাৎকার । আমার সম্পাদনায় সিলেট থেকে প্রকাশিত ছোট গল্পের কাগজ ' সহবাস' এর জন্য এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন আমাদের আরেক গল্পকার বন্ধু পাপড়ি রহমান ।
'৯৮ সালের কথা ।

এবারের বইমেলা চত্বরে ও তাকে দেখেছি, পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি কিন্তু ইচ্ছে করেই যেনো কথা বলিনি । একজন কবির প্রতি মুগ্ধতা বেঁচে থাক তার কবিতা পাঠেই । আমার এই মুগ্ধতাটুকু আবার জানিয়ে গেলাম ।
এই প্রবাসে যে ক'টি বাংলা কবিতার বই আমার সংগ্রহে আছে এর মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা ও বালিকা আশ্রম-এই দুটো আছে ।

রূপক কর্মকার,আপনি আসলেই বেশ কর্মকার দাদা হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রূপক কর্মকার এর ছবি

লীলেন দা যখন 'দুর্দান্ত' বলেছেন, হিমু দার যেহেতু ভালো লেগেছে, মোরশেদ ভাইও যখন প্রশংসা করেছেন, তখন কিছু একটা হয়তো হয়েছে। কিন্তু মডারেটেরের কাছে চিঠি লিখেও 'মননর্চার' পরিবর্তে 'মননচর্চার' করতে পারলাম না। একটা মাত্র 'চ' কি মডারেটর দা দেবেন আমাকে? কবির চোখে পড়ার আগে এই কাজটি হলে ভালো হত। তিনি আমাকে বানানের ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলেছিলেন। শিরোনামেই সেই ভুল করে বসে আছি বলে আমার লজ্জার শেষ নেই। লীলেন দা, হিমু দা, মোরশেদ ভাই কি এ ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করতে পারেন?

রানা দা খুব ভালো বলেছেন। কিন্তু ঐটুকু আলাপচারিতা ধারণ করতে গিয়েই টেলিফোনে তিনবার কথা বলতে হয়েছে কবির সংগে। আর ইন্টারভিউটি পড়ে নিশ্চয়ই বুঝেছেন, সেটা খুব সহজ ছিল না।

ধন্যবাদ, তানবীরা এবং সংসারে এক সন্ন্যাসীকেও। আরও যদি কেউ মন্তব্য করেন, তাদেরও অগ্রিম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

কনফুসিয়াস এর ছবি

সাক্ষাৎকার এবং কবিতাগুলো পেয়ে খুব ভাল লাগলো। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গিয়ে মনে হচ্ছিলো কবি বোধহয় অনুমতিই দেবেন না, শেষমেষ রূপকের কথা ও যুক্তি পড়ে আমিও মজা পেয়েছি। কবি এবং রূপক দুজনকেই ধন্যবাদ।
*
কুমিল্লার কোন একটা দিঘীর পাড়েই আমার শৈশব-কৈশোর। আর যে শালবন বিহারের কথা বললেন, তার পাশেই আমার বেড়ে ওঠা। এই লেখাটা আগা-গোড়া পড়ে যেতে তাই ভীষণই ভাল লেগেছে।

----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

রূপক কর্মকার এর ছবি

ধন্যবাদ মডারেটর ভাইকে। পেছনে কোনও সহৃদয় সচলের হেল্পিং হ্যান্ড থাকলে, তাকেও। কবির এই ছবিটা যে কীভাবে পোস্টে এল, সেটা আমার কাছে একটা বিস্ময়! তবে ভালো হয়েছে। আমি একটা ছবি পাঠিয়েছিলাম, যেটা তার একটি বই থেকে স্ক্যান করে রেখেছিলাম । আগের ছবি। দেখি, সেটা আমার ইমেজ পোস্ট হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বেচারা আনাড়ি আমি! এই ছবিটা বোধহয় সাম্প্রতিক। সচলায়তনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ল। শিরোনামের প্রমাদ দূর হয়েছে। এবার কবিকে আমার ব্লগপরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটা 'হ্যালো' করতে পারি। ভেতরেও কিছু অনিচ্ছাকৃত প্রমাদ আছে। খুব বেশি নয়। আশাকরি, সেগুলোর জন্য কবি ও পাঠক, সবার কাছেই মার্জনা পাব। ____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

শেখ জলিল এর ছবি

আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলা কবিতায় এক নতুন দিগন্তের নাম।
তাঁকে নিয়ে লেখা ভালো না লেগে উপায় কী?
ধন্যবাদ রূপক কর্মকার।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অমিত আহমেদ এর ছবি

দুর্দান্ত! এমন কাজ আরও হোক সচলায়তনের পাতায়। কবি সচলদের লেখা পড়েন জেনে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রূপক... ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটা সুন্দর কাজের জন্য। বেশ শ্রমসাধ্য কাজ। আমরা বেশিরভাগ সচলই সাধারণত যা খুশি তাই লিখি। সেখানে এরকম কষ্ট করে তৈরি করা একটা ব্লগকে শ্রদ্ধা জানানোই উচিত।

সাক্ষাত্কারটা ভালো হয়েছে... (এই পরিসরে এরচে বেশি আমি আশা করি না)। কবিতা নির্বাচনে আরেক্টু যত্ন নিলে আরো কিছু ভালো ভালো কবিতা এখানে আসতো পারতো মনে হয়েছে। যা এই গোটা ব্যাপারটাকে আরো সমৃদ্ধ করতো।

শাহরিয়ার ভাই আমার প্রিয় কবি, সম্পাদক। তিনি যখন খোলা জানালা সম্পাদনা করেন আমি তখন একই অফিসের নিচতলায় চাকরি করি। শৈলী আর আনন্দভুবন ছিলো মুক্তকণ্ঠের নিচে, আমি ছিলাম আনন্দভুবন-এ। আদিত্য কবীর মারফত কয়েকবার পরিচয় হয়েছে, কিন্তু সেটা তাঁর মনে থাকার কোনো কারন নেই।

তাকেঁ অসংখ্য ধন্যবাদ সম্পূর্ণ নতুন একটি কবিতা সচলায়তনকে দেওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে যদি তিনি সময় করে এখানে লেখেন, তবে হয়তো তাঁর কোনো উপকার হবে না, কিন্তু আমাদের অনেকের অনেক উপকার হতে পারে।

আর আবারো ধন্যবাদ রূপক-কে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

এবার পোস্টটা আরো চমৎকার হয়ে সেজে উঠেছে ! ধন্যবাদ সচল কর্তৃপক্ষকে তাঁদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল একটি ভূমিকা দিয়ে তা সাজিয়ে দেয়ার জন্য।

আর রূপক কর্মকার'কে তো অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।

শাহরিয়ার ভাই'র আলাপচারিতার এক জায়গায় সচলে তাঁর মন্তব্য করতে না পারার বিষয়টি এসেছে। অতিথি হিসেবে কি এখানে মন্তব্য করা যায় না ?
সচল কর্তৃপক্ষের কেউ কি মন্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টা স্পষ্ট করে দিতে পারেন ?

অবশ্য আমার এবং আমার ধারণা আমাদের সবারই কামনা থাকবে শাহরিয়ার ভাই সচলায়তনকে তাঁর লেখা থেকে বঞ্চিত রাখবেন না। কমিউনিটি ব্লগিং এর ক্ষেত্রে সচলায়তন যে তাঁর জন্য অপছন্দের হবে না সেটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পছন্দ করি ।
ধন্যবাদ কবি আবু হাসান শাহরিয়ার ও রূপক কর্মকারকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রূপক কর্মকার এর ছবি

শিরোনামের ভুলটা সংশোধিত হওয়ার পর-পরই কবিকে এসএমএস করে ব্লগপরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। মিনিট পনেরো আগে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে জানালেন, ব্লগে ঢুকেছিলেন তিনি। কণ্ঠস্বর শুনে বুঝলাম, আয়োজনটি ভালো লেগেছে তার। মন্তব্যগুলো খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পড়েছেন, সেকথা জানাতেও ভোলেননি। কাল বা পরশু আরও একবার ব্লগটিতে ঢুকে কবি তাঁর অনুভূতির কথা বিস্তারিত জানাবেন আমাকে। চিঠিতে। ভালোই হল। চিঠিটা পেলে বিনা পরিশ্রমে আরও একটা ব্লগ সাজিয়ে ফেলতে পারব। এবারের আয়োজনটার মতো সেটা কষ্টসাধ্য হবে না।

নতুন যারা ব্লগপরিদর্শন করেছেন, তাদের ধন্যবাদ। বেশিরভাগ মন্তব্যই আসছে কবির ইন্টারভিউ সংক্রান্ত। নজরুল ভাইসহ যারা কবিতা প্রসঙ্গেও কিছু বলেছেন, তাদের বিশেষ ধন্যবাদ। ব্লগটি পুনর্পরিদর্শনের জন্য রণদাকে এক্সট্রা থ্যাংকস।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

আবু রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ রূপক কর্মকারকে এমন উদ্যোগের জন্য। সাক্ষাত্কারটি ভালো লাগলো। ধন্যবাদ জানাই কবিকেও।

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বাংলায় কবিদের সংখ্যা নিয়ে একসময় ঠাট্টা প্রচলিত ছিলো।অথচ এখন দ্রুত পাল্টে গেছে পরিস্থিতি, দ্রুত কমে যাচ্ছে কবিদের সংখ্যা। নতুন প্রজন্ম হয়তো কাকের সাথে কবিদের তুলনা নিয়ে ঠা্ট্টার বিষয় থেকে বাঙালি কবিদের উদ্ধার করেই ফেলবে।

যদিও প্রকৃত কবির সংখ্যা হাতে গোণা থাকে, তবুও সব বাঙালিই নাকি জীবনে অন্তত: একবার কবিতা লেখার জন্য চেষ্টা-তদবির করেন। তারপরও প্রবীণদের বাদ দিলে আমাদের নতুন কবি কই?

টিভির কল্যাণে আমরা নানা কিসিমের নাট্যকার পেয়েছি। কিশোর-কিশোরীরা দেদারসে কিনছে বলে বিচিত্র ঢংয়ের গানের গীতকারও আসছেন বাজারে। কিন্তু কবি?

দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা পাঠের আয়োজনে শ্রোতা কমে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কবিযশপ্রার্থীরা কি পিছুটান দিয়েছেন?

রূপক কর্মকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ এভাবে আবু হাসান শাহরিয়ারকে বিশিষ্ট করে সচলায়তনে তুলে ধরার জন্য। ধন্যবাদ আবু হাসান শাহরিয়ারকেও।

কবিরা সমাজ, দেশ ও জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে কাজ করেন, পথ বাতলান। তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া একটা ভয়ানক দু:সংবাদ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মুজিব মেহদী এর ছবি

শাহরিয়ার ভাই নিজেও তো এখানে ব্লগিং শুরু করলে পারেন।
যত দিন যাচ্ছে, সচলায়তনে তাঁর ভক্তের সংখ্যা তো দেখছি বাড়ছেই। পাঠালোচনা জমবে ভালো।

................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

রূপক কর্মকার এর ছবি

মুজিব মেহদী ভাই একটা ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। কথাটা আমারও। কিন্তু আমি সাহস করে বলতে পারিনি কবিকে।

কুমিল্লায় কনফুসিয়াস দা'রও শৈশব কেটেছে জেনে ভালো লাগল। কান্দির পাড়, বাঁগিচা গাঁও, বাদুরতলা, ঝাউতলা, অশোকতলা নামের জায়গাগুলোর সঙ্গে কবির মতো তাঁরও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই। কখনো সেগুলো নিয়ে পোস্ট লিখলে আমার অরো ভাল লাগবে।

এই শহরের কবি ফখরুল হুদা হেলালের কাছে আবু হাসান শাহরিয়ারের প্রথম তারুণ্যের অনেক গল্প আছে। ছড়াকার জাকির আজাদের কাছেও। আর কিছু গল্প আছে তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু-বান্ধবের কাছে, যাদের কেউ-কেউ এখন বড় ডাক্তার। প্রত্যেকেই তাঁরা কবিকে কুমিল্লারই সন্তান মনে করেন। কবিকে নিয়ে কথা বলতে গর্ব বোধ করেন। যদিও আবু হাসান শাহরিয়ারের বাড়ি কুমিল্লা নয়; সিরাজগঞ্জ।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

স্নিগ্ধা এর ছবি

দারুণ একটা কাজ করলেন রূপক কর্মকার! অনেক ধন্যবাদ!

রূপক কর্মকার এর ছবি

কবির কথা চুরি করে বোন স্নিগ্ধাসহ কবিতাপ্রাণ সচলদের বলি : স্লেটে লেখা কাজ ইন্টারভিউটা, মুছে যেতে এসেছে। থাকতে এসেছে কবিতাগুলো। সেগুলো যদি মন দিয়ে পড়েন , তাহলেই আমার কম্পোজের পরিশ্রম সার্থক। ____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

অতিথি লেখক এর ছবি

'সু'সমাচার

পুতুল এর ছবি

কুমিল্লা, এত ভাল লাগে শহরটা! দিঘীর পারে বসে কবিরা কবিতা বাধেন। শহরটার সাথে কবিতার সম্পর্ক আছে। রুপকদা খুব যত্নের সাথে সেটা আমাদের দেখালেন। কবির কবিতার সাথে আগে তেমন পরিচয় ছিল না। এখন আরেকটা কবিতার মহাদেশ আবিষ্কার করলাম। কৃতজ্ঞতা রুপকদার কাছে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল একটি কাজ করেছেন রূপক কর্মকার। । কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ আমার কাছে আছে- একলব্যের পুনরুত্থান, এবছর পাখিবন্যা হবে, শ্রেষ্ঠ কবিতা, বালিকা আশ্রম ও তোমাদের কাঁচের শহরে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত তাঁর ও মৃণাল বসু চৌধুরীর যৌথবই নৈঃশব্দে‍র ডাকঘরও কিনেছি ও পড়েছি। দারুণ বই। রাজবাড়িতে সে-বইয়ের প্রথম পাঠ-উন্মোচন হয়। আলাপচারিতায় কবি রাজবাড়ির সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানের নাম নিয়েছেন দেখে ভাল লাগল। আমি ঐ শহরেরই মেয়ে। থাকি চাঁটগা।
-সুপ্তি

রূপক কর্মকার এর ছবি

স্নিগ্ধা, নামহীন অতিথি লেখক, পুতল ও সুপ্তিকে শুভেচ্ছা। পোস্টটি পড়ার জন্য।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

সুমন চৌধুরী এর ছবি

রূপক কর্মকার আর কবি আবু হাসান শাহরিয়ার দুজনকেই প্রচন্ড সাংঘাতিক মারাত্মক, ভয়ানক ধন্যবাদ।



অজ্ঞাতবাস

রূপক কর্মকার এর ছবি

সুমন দার মন্তব্যে আনন্দিত না আতঙ্কিত হব, সেই দুশ্চিন্তায় আছি!____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

তীরন্দাজ এর ছবি

সচলায়তনের সবার জন্যে এটা একটি মুল্যবান সাক্ষাতকার, একটি মূল্যবান আলোচনা। সেজন্যে রূপক কর্মকারেকে অযুত ধন্যবাদ এ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকেও অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ।

আমার জাহাজী জীবনের গল্পগুলো একেবারে এবং পুরোটাই নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই লেখা। এখন সে জীবনের একেবারে বাইরে হলেও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে প্রতিটি সময়, প্রতিটি দিন।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রূপক কর্মকার এর ছবি

তীরন্দাজ দা, আপনার "সচলায়তনের সবার জন্যে এটা একটি মুল্যবান সাক্ষাত্কার, একটি মূল্যবান আলোচনা" কথাটি আমার পোস্টটির জন্য একটা মহামূল্যবান স্বীকৃতি। আপনার কাছেও অযুত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

____________________________
বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুক্তি মেনে নিলে
[আবু হাসান শাহরিয়ার]

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারন এই পোস্ট কয়েকদিনের চেষ্টায় সময় নিয়ে ভালো করে পড়লাম। কয়েকটা অবজার্ভেশন শেয়ার করি আগে।

১। "আমার ধারনা" ইন্টারভিউ গ্রহীতা মুঠোফোনে কথা বলেছেন, সেই সাথে নোট টুকেছেন। তারপর সেটার ট্রান্সক্রীপ্ট করে কবিকে পাঠিয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক হলে পরে প্রকাশ করেছেন। এতে করে ইন্টারভিউটা সুস্বাদু, প্রকাশ উপযোগী একটা ভার্সন হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে একটু বেশীই সাজানো গোছানো মনে হয়েছে।

২। লেখাটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েক পর্বে দিলে হজম করতে সুবিধা হত। এখনও হজমে অসুবিধা হয়নি। তবে সময় লেগে গেছে।

এবার কবির কবিতা নিয়ে কথা। প্রথমেই নিজেকে কবিতা বিচার করার অযোগ্য ঘোষনা করে নেই। কবিতা নামের দুচারটা ছাইপাশ লিখলেও নিজেকে কবি দাবী করিনা। বরং নিজেকে মধ্যম মানের পাঠক দাবী করতে পারি। কবির উদ্ধৃতিতেই বলি:

আবু হাসান শাহরিয়ার লিখেছেন:
যে আমাকে গ্রাহ্য করে, পাশাপাশি মধুর তর্কও
তারই মধ্যে আমি কিছু সম্ভাবনা দেখি
সে-ও কবি নয়

প্রথমেই যে বিষয়টা নজর কেড়েছে সেটা হল কবিতাগুলোর পাঠযোগ্যতা। কবিতা মানেই কতগুলো কঠিন শব্দের তরবারী ঠোকাঠুকি, এই ধারনাটা আমি মানতেই পারিনা। অনেক কবির কবিতাই এই দুর্বোধ্যতায় আক্রান্ত। আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা সে দিক দিয়ে অনেক সাবলীল এবং পাঠযোগ্য।

প্রতিটা কবিতায় একটা পরিষ্কার মেসেজ দিচ্ছেন কবি। এই বিষয়টা অনেক কবি করতে পারেন না। আবার মেসেজ বহ কবিতাও অনেক সময় খবরবাহী-কবিতা হয়ে যেতে পারে। আমার কাছে মনে হয়ে হয়েছে কোন কোন কবিতার মেসেজ খুব বেশী প্রচ্ছন্ন হয়ে গেলেও (যেমন: পাখি ও জানালা, উত্তরসাধক), বাকিগুলি ঠিকাছে। কবিতা সরাসরি মেসেজ দেয়ার মাধ্যম না। কিন্তু অতি ধোঁয়াশাও পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগাতে পারে, কেম্নে কি?

তবে উত্তরসাধক কবিতাটি পড়ে একটু থমকে গেছি। কবিতার রাজনীতি কি এটাকেই বলে? কবিকে অস্বীকার করা যাবে না, ভুল ধরা যাবে না? কেবল স্তুতিবাক্যই শোনাতে হবে? শেষ লাইনটাকে ("অমিতসম্ভাব্য কবি ভালবাসে একার সন্ন্যাস") মনে হয়েছে কবিতাটাকে সুশীল করার একটা প্রানান্ত চেষ্টা।

তবে রূপকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কবিতা এবং আলোচনা প্রকাশ করতে দেবার অনুমতি দেয়ায় কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকে জানাই কৃতজ্ঞতা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্লগে অনিয়মিত দেখে এই লেখাটা চোখে পড়েনি আগে। নীড়পাতায় একটু ঢিশুম-ঢাশুম লেখাটা দেখে এটায় এলাম। বেশ ভাল লেগেছে। বেশ, বেশ ভাল। আমি কবিতা বুঝি না, তবে কবির লেখার সাথে কিছুটা পরিচিত 'আমাদের সময়'-এ তাঁর লেখা পড়ে।

কবিকে ধন্যবাদ সচলায়তনের বন্ধু হবার জন্য। তাঁকে সচল হবার ব্যক্তিগত অনুরোধটা পৌঁছে দেবেন। তাঁর রাজনৈতিক কলামগুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি। ঝগড়া করার ইচ্ছা অনেক দিনের! খাইছে

নিঝুম এর ছবি

চমত্‌কার ।
--------------------------------------------------------
কারা যেন চলে গেছে দূরে...বহুদূরে..আর ফিরবে না জানি । কোন কারন ছাড়াই , কোন যুক্তি ছাড়াই চুপচাপ হয়ে গেছে সারিবদ্ধ প্রাণ গুলো । জানি , আমাকেও আসতে হবে এই বিষন্ন নগরীতে..একদিন.. কোনদিন --মলাগোফরুমা

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।