স্রবন্তী স্মৃতিপট - সমর সেন

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: শনি, ১৯/০৫/২০১২ - ১০:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- আপনি কি হাই-কমিশনার সাহেবের পিএ বলছেন? - টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
- হ্যাঁ, বলেন।
- আমার নাম সাইফ শহীদ। আমার বাবা, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, হাই-কমিশনার সাহেবের শিক্ষক ছিলেন। উনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

আমাকে লাইনে থাকতে বলল পিএ।

একটু পরে বেশ ভারী গলার আওয়াজে টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রশ্ন এল - "স্যার কেমন আছেন?

বুঝলাম এটা হচ্ছে হাই-কমিশনার সমর সেনের গলা।

- বয়েসের তুলনায় ভালই আছেন বলতে হবে। কাগজে আপনার নাম দেখে বললেন আপনি নাকি তার ছাত্র ছিলেন। আপনাকে দেখতে চেয়েছেন তিনি।
- নিয়ে আসেন এখানে। আসতে পারবেন?
- কখন?
- কালই আসেন, এই সময়ে - সকাল দশটায়।
- ঠিক আছে, তাই হবে।

শুভেচ্ছা বিনিময় করে রেখে দিলাম ফোন।

স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের প্রথম হাই-কমিশনার ছিলেন সুবিমল দত্ত। তারপরে সমর সেন তখন সবে বদলি হয়ে এসেছেন ঢাকাতে। কাগজে এই খবরটা চোখে পরার পর আব্বা আমাকে ডেকে বললেন তার এক জন প্রিয় ছাত্র ছিল সমর সেন। আব্বা ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত কলকাতার নামী হেয়ার স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার সময়ে অন্য যারা তখন সেখানে শিক্ষকতা করতেন তাদের মধ্যে বংকিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়, রায় সাহেব আদ্যনাথ রায়, কবি গোলাম মোস্তফা, ইত্যাদি ছিলেন। আব্বার কাছ থেকে ঐ সময়ের ছাত্ররা শিক্ষকদের কতটা সম্মান করত তার অনেক গল্প শুনেছি। আব্বার আত্মজীবনী গ্রন্থ - 'শ্রান্ত পান্থ'-তে তিনি উল্লেখ করেছেন এমনি একটি ঘটনা। একদিন তিনি কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন তখন তার সামনে চার-ঘোড়ার এক জুড়ি গাড়ী হঠাৎ থেমে গেল। গাড়ী থেকে নেমে এসে এক ছাত্র তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। ছাত্রটি ছিল হেয়ার স্কুলের এবং ঠাকুর পরিবারের।

বিকেলে বাসায় ফিরে যখন আব্বাকে জানালাম সমর সেনের সাথে আমার কথার খবরটা তখন দেখলাম আব্বার মনটা যেন একটু দমে গেল। তার ধারণা ছিল তার নাম শুনে নিজেই দেখা করার জন্যে সমর সেন আমাদের বাসার এসে হাজির হবেন। আমি তাকে বলার চেষ্টা করলাম হাজার হলেও সমর সেন এখন একজন রাষ্ট্রদূত, এখনতো আর শুধু আব্বার ছাত্র নন। পরে মা এসে আমাকে বোঝালেন ব্যাপারটা তা নয়। কিছুদিন আগে আব্বার শরীর বেশ খারাপ হয়েছিল। এখনো ঠিক মত নিজে থেকে উঠে হাটতে পারেন না। কাঁপতে থাকেন। তার পক্ষে রিক্সায় ওঠা এবং নামা বেশ কষ্টকর। আমার নিজের তখন কোন গাড়ী নেই। ফলে আব্বাকে হাই-কমিশন পর্যন্ত নেওয়া কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ হবে।

পরের দিন আমি একাই দশটার সময় হাজির হলাম সমর সেনের অফিসে। আমি তখন বেক্সিমকোর ধানমন্ডী ২ নম্বর রোডের অফিসে বসি। কাছেই ৩ নম্বর রোডে ভারতীয় হাই-কমিশনের অফিস তখন।

- স্যার আসলেন না? - ঘরে ঢুকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর হাই-কমিশনার সমর সেন জিজ্ঞাসা করলেন আমাকে।
- ঊনার শরীরটা বেশী ভাল না। আসা-যাওয়ায় কষ্ট হবে তাই আর আসতে চাইলেন না। বললেন আপনাকে বলতে যে পারলে যেন আপনার সময়মত কোন একদিন আপনি এসে তাকে দেখে যান।
- আমি আসতে পারি, কিন্তু তারপর আবার খালি খালি ইন্টেলিজেন্সের লোকেরা ওখানে ঘোরাঘুরি করবে।
- আমার কোন অসুবিধা নেই তাতে - বললাম আমি। মনে মনে ভাবলাম আমার বন্ধুরাই তো সব এখন ইন্টেলিজেন্সের বড় অফিসার।
- ঠিক আছে, সামনের সোমবার সকালে অফিসে আসার পথে আমি এসে স্যারকে দেখে যাবো। আপনার ঠিকানাটা দিয়ে যান, আমি ড্রাইভারকে বাড়ীটা চিনে আসতে বলবো।

ঠিকানা দিয়ে চলে এলাম আমি।

আমরা তখন কাছেই সেন্ট্রাল রোডে থাকি। আমাদের উপরের তলাতে থাকতেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার। আমার বাসায় তখন আমি, আমার স্ত্রী মমতাজ এবং আব্বা ও মা থাকেন। আমাদের তখনকার দিনের ভদ্রতায় নতুন কোন মেহমান বাসায় এলে তাকে কিছু একটা দিয়ে আপ্যায়ন করার রেওয়াজ ছিল। সমর সেন নিশ্চয় বাড়ী থেকে নাস্তা খেয়েই অফিসের পথে আসবেন - তা হলে কি আপ্যায়ন করতে পারি আমরা। মমতাজ বুদ্ধি দিল কফি পরিবেশন করার। সকালে এক কাপ কফি বাড়ী থেকে খেয়ে এলেও আর এক কাপ নিশ্চয় খেতে পারবে। পছন্দ হল বুদ্ধিটা। কিন্তু বাড়ীতে যে কফি নেই। কফি কিনে আনলাম দোকান থেকে। বিদেশী কফি তখনকার বাংলাদেশে সহজে পাওয়া যেত না। তখনকার টাকায় বেশ খরচ হল এই কফি কিনতে। দেখা গেল আমাদের তখনকার বাবুর্চী ও বুয়া কেউ আগে কখনো কফি বানায়নি। ফলে এই ভারটা মমতাজকে নিতে হল। আমাদের তখন কোন কফি মেশিন ছিল না, এমনকি এটা 'ইন্সট্যান্ট কফি'ও ছিল না। হাড়িতে পানি আর কফি এক সাথে বেশ খানিকক্ষণ জ্বাল দিয়ে নামানো হল।

নির্দিষ্ট দিনে সকাল ঠিক ৮-টার সময় ভারতীয় ফ্লাগ লাগানো গাড়ীতে করে সমর সেন আসলেন আব্বার সাথে দেখা করতে। প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময়ের পর আব্বার সাথে কিছু কথা বলার পর যখন উঠতে যাবেন তখন বললামঃ

- "আপনাকে একটু কফি দিই?"
- না, না এসব কষ্টের কোন দরকার নেই।
- কষ্টের কিছু না, রেডি করা আছে।
- যদি বানিয়ে থাকে, তবে দেন। - স্পষ্ট বুঝলাম শুধু আমাদেরকে খুশী করার জন্যে রাজী হলেন।

মমতাজ এক কাপ বেশ ঘন এবং দুধ চিনি ছাড়া 'ব্লাক কফি' এনে উপস্থিত করল। এক চুমুক খেয়েই তিনি বুঝে গেলেন এই কফি খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও ভদ্রতা করে আরও একবার কাপে চুমুক দিলেন। পরে জেনেছি সবার সাথে এরূপ ভাল ব্যবহার করে এসেছেন তিনি তার জীবনে। ভারতীয় ডিপ্লোম্যাটদের মধ্যে এক বিশেষ স্থান অধীকার করেছিলেন এই বাঙ্গালী রাষ্টদূত তার এই 'পারফেক্ট জেন্টেলম্যান' সূলভ ব্যবহারের জন্যে। তিনি ছিলেন অজাতশত্রু । সবার সাথেই তিনি সমান ভাবে ভাল ব্যবহার করতেন। নিজের জন্যে টাকা-পয়াসা জমানোতে বেশী আগ্রহী ছিলেন না। যার ফলে দিল্লীতে একটা ছোট ফ্লাটের মালিকও হতে পারেননি। দিল্লীতে গেলে জিমখানা ক্লাবে আশ্রয় নিতেন অথবা ভাড়া করতেন 'বারসাতি'।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে সমর সেন বিশেষ ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীসহ ১২ জন প্রতিনিধি জাতি সংঘের ২৬ তম সাধারণ সভায় যোগ দিতে সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কে আসেন। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ তখন জাতি সঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট নয় তাই অফিসিয়াল কর্মকান্ডে তারা যোগ দিতে সক্ষম হন না। ৩রা ডিসেম্বর, যে দিন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয় সেদিন বিচারপতি চৌধুরী লিখিত আবেদন করেন যাতে বাংলাদেশের অবস্থা সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। পাকিস্তান ও তার তখনকার দোসর আমেরিকা, চীন ও পাশ্চাত্য দেশসমূহের আপত্তির চাপে বিচারপতি চৌধুরীকে কিছু বলতে দেওয়া হয় না। সমর সেন তখন বলেন, "বাংলাদেশকে কিছু বলতে না দেওয়ার মানে হচ্ছে ডেনমার্কের রাজকুমার ছাড়া হ্যামলেট নাটক দেখার মত।"

যখন জাতিসঙ্ঘে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যে রাশিয়া ও পোলান্ড বাদে অন্য অধিকাংশ দেশ যেমন আমেরিকা, চীন, সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশ ও পশ্চিমা দুনিয়া প্রায় এক সুরে কথা বলছে তখন সিকিউরিটি কাউন্সেলে সমর সেন দৃঢ় কন্ঠে বললেন:

"None can remove us from our path by mere resolutions and mere exhorttations. The question of a cease-fire, as I have already mentioned, is one not between India and Pakistan, but between the Pakistan Army and the Bangladeshi people. Therefore, let us hear them before we go further into this debate."

জাতিসঙ্ঘে ৪ এবং ৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ১৭টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় বাংলাদেশের ব্যাপারে। এর মধ্যে সাধারণ সভাতে ৪টি এবং সিকিউরিটি কাউন্সিলে মোট ১৩টি। ১২ এবং ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১৩টি প্রস্তাব সিকিউরিটি কাউন্সিলে উত্থাপন করা হয়। আমেরিকা, চীন, মধ্য প্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশের এই প্রচন্ড চাপ মূলত ভারত, পোলান্ড ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কারনে প্রতিহত করা সম্ভব হয়। এই সব প্রস্তাবের কোনটিতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের প্রতি আলোকপাত করা হয়নি। যুদ্ধ জয়ের আগেই যদি তখন যুদ্ধ বিরতী মেনে নিতে হত তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঐ সময়ে হয়ে পারতো কিনা বলা মুশকিল। সমর সেনের প্রতি তাই বাংলাদেশের বিশেষ কৃতজ্ঞতা।

১৯৩৭ সালে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে আইসিএস অফিসার হিসাবে বেঙ্গল ক্যাডারে সমর সেন যোগ দেন। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন সরকারী কর্মকর্তা রূপে। এরপর ভারতীয় পলিটিক্যাল ক্যাডারে সংযুক্ত হন এবং জাতিসঙ্ঘে ভারতীয় মিশনে স্থান লাভ করেন।

তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও মরক্কো, আলজেরিয়া, লেবানন, কুয়েত, জর্দান, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিয়াল্যান্ড ও সুইডেনে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করেছেন। তাকে যখন ফরেন সেক্রেটারি করার প্রস্তাব করা হয় তখন তিনি তার অপরাগতা প্রকাশ করেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রালয়ের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।

সম্প্রতি 'দি স্টেটসম্যান' কাগজে ১৯৭৫ পরবর্তী এক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে সমর সেনের নাম উল্লেখ করে। এত দিন পরে প্রকাশিত এই সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে আমার তেমন কিছু জানা নেই। [তথ্যের লিঙ্কটা এখানে দিলামঃ দি স্টেটসম্যান' - ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১] এখানে বলা হয়েছে কি ভাবে সমর সেন খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বলে এসেছিলেন বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন না করতে। ঘটনাটি সংক্ষেপে এই রূপঃ

"১৫ই আগষ্ট সমর সেন দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। মুজিব হত্যার খবর পেয়ে তখনি ছুটে আসেন ঢাকাতে। প্লেন চলাচল বন্ধ ছিল তাই কোলকাতা থেকে গাড়ীতে ঢাকা ফেরেন ১৬ই আগষ্ট। বিভিন্ন সূত্র থেকে ঘটনার ভিতরের ঘটনা বের করে তখনি দিল্লিকে অবহিত করেন।

পানি সম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মুশতাক ছিলেন শেখ মুজিবের ডান হাত। পাকিস্তানের মিনওয়ালী জেল থেকে ৮ই জানুয়ারী ১৯৭২ তারিখে যখন ভুট্টো মুজিবকে মুক্তি দেয় তখন শেষ অনুরোধ জানিয়েছিল এই বলে যেন মুজিব পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন না করেন। একটা কনফেডারেশনে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ভুট্টো (মুজিবের ৬ দফা দাবী ছিল একটা ফেডারেশনের)।

মুজিব হত্যার পর মুশতাক ও তার দল পরিকল্পনা করছিল বাংলাদেশের নাম 'গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ'-এর বদলে 'ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' করা হবে।

১৮ই আগষ্ট সমর সেন সোজা বঙ্গভবনে যেয়ে খন্দকার মুশতাকের সাথে দেখা করে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া এক সতর্কবানী জানিয়ে দেন। তাতে বলা হয়েছিল যদি বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করা হয়, বা বাংলাদেশ অন্য কোন দেশের সাথে কনফেডারেশন করে তবে ভারতের সাথে করা বাংলাদেশের চুক্তি অনুসারে ভারতীয় আর্মী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এই কথা শোনার পর ফ্যাকাশে মুখে মুশতাক তার চেয়ারে বসে পড়েন। এই নোটে আরও ছিল যে যদি নাম পরিবর্তন বা কনফেডারেশন জাতীয় কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে ১৫ আগষ্ট পরবর্তী ঘটনাকে ভারত বাংলাদেশের আভ্যান্তরিন ঘটনা বলে মনে করবে। মুশতাক তার সঙ্গীদের সাথে জরুরী মিটিং করে যখন বুঝতে পারেন যে ভারতের এই সতর্কবানী খামোখা না, তখন আগের চিন্তা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।"

ঐ বছর ২৫শে নভেম্বর এক আততায়ী ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে সমর সেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ে। ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন সমর সেন। প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সমর সেনকে ভারতে নেবার জন্যে ভারতীয় এয়ার ফোর্সের বিশেষ বিমান পাঠাতে চান, কিন্তু সমর সেন সেটা প্রত্যাখান করেন এই বলে যে বাংলাদেশী ডাক্তারদের উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে। এর পর কয়েক মাস হাসপাতাল ও বাড়ীতে বসে দূতাবাসের কাজ চালান সমর সেন।

তার সাথে বিগত ৪০ বছরে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই। তাই যখন জানলাম যে, ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সমর সেন লন্ডনের এক হাসপাতালে তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তখন একটু দুঃখ পেলাম এই ভেবে যে কেন এই 'বিদেশী বাঙ্গালীর' সাথে চেষ্টা করে আবার কোথাও দেখা করিনি আমি।

[ সমর সেনের পৌত্র হোপি সেনের মাধ্যমে ১৯৪৫ সালের একটি ব্রিটিশ সরকারের ডকুমেন্টারী ফিল্মের খোঁজ পেলাম। 'ডিস্ট্রিট অফিসার' নামের এই সাদা-কাল এবং ডায়ালগ ছাড়া ছবিটিতে সমর সেন মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এখানে তরুন ব্রিটিশ-ভারতীয় অফিসার সমর সেন এবং সেই সময়ের বাংলার একটা রূপ বেশ ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে]


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

চলুক
এই সমর সেন কি কবি ছিলেন, নাকি দুই জন ভিন্ন ব্যক্তি?

****************************************

সাইফ শহীদ এর ছবি

মন মাঝি,

ধন্যবাদ।

কবি সমর সেন ভিন্ন ব্যক্তি।

সাইফ শহীদ

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

ভালো লাগল লেখাটি -- সমর সেনের জন্য অনেক শ্রদ্ধা!

ঐ বছর ২৫শে নভেম্বর এক আততায়ী ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে সমর সেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ে। ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন সমর সেন। প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সমর সেনকে ভারতে নেবার জন্যে ভারতীয় এয়ার ফোর্সের বিশেষ বিমান পাঠাতে চান, কিন্তু সমর সেন সেটা প্রত্যাখান করেন এই বলে যে বাংলাদেশী ডাক্তারদের উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে। এর পর কয়েক মাস হাসপাতাল ও বাড়ীতে বসে দূতাবাসের কাজ চালান সমর সেন।

এই হামলার সাথে কি হাসানুল হক ইনু আর কর্ণেল তাহেরের ভাইয়েরা জড়িত?

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সাইফ শহীদ এর ছবি

রাজিব,

ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্যে।

আমিও ঐ রকম শুনেছি, তবে সঠিক ভাবে জানি না।

সাইফ শহীদ

তানজিম এর ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসে সমর সেনের অবদানের কথা জেনে ভালো লাগল। ভারতীয় হাই কমিশনের উপর হামলা সম্পর্কে কিছুটা জানতে চাই। ধন্যবাদ লিখার জন্য।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

১৯৯৫ সালে আলতাফ পারভেজ রচিত ও সম্পাদিত "অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ, কর্ণেল তাহের ও জাসদ রাজনীতি" বইয়ের ১৫১-১৫৩ পৃষ্ঠাসমূহে এবং ২০১২ সালে ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন রচিত "মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহের" বইয়ের ১০৩-১০৯ পৃষ্ঠাসমূহে ১৯৭৫ সালে ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়ে সমর সেনকে জিম্মি করার চেষ্টা ও তখন যা ঘটেছিল তার বিবরণ আছে। যারা ঢাকায় আছেন তারা এই বইগুলি সংগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারেন। এছাড়া ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত নির্মলেন্দু গুণের "রক্তঝরা নভেম্বর" বইয়ের ৬৯ পৃষ্ঠাতেও এই ঘটনা সম্পর্কিত বর্ণনা আছে।

তানজিম এর ছবি

ধন্যবাদ।

মরুদ্যান এর ছবি

ভাল লাগল।

পুতুল এর ছবি

২৪ নভেম্বর তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাহের গ্রেপ্তারের দুদিন পর ২৬ নভেম্বর জাসদের চারজন সমর্থক যার মধ্যে দুজন তাহের ছোটভাই-ভারতীয় হাই কমিশন সমর সেনকে জিম্মি করবার প্রচেষ্টা চালায়। হাই-কমিশনে ঢোকার মুখে সমর সেনকে জড়িয়ে ধরা হয়। সামনে দাঁড়ানো হাই-কমিশনারের দেহরক্ষীদের প্রতি অপহরণকারীরা চিৎকার করে বলে-"গুলি করো না,‌ ইনি আমাদের জিম্মি।" কিন্তু দেহরক্ষীরা হালকা মেশিনগানের গুলি ছুঁড়ে হাইকমিশনারকে আহত করে, আর দুজন অপহরণকারীকে সাথে সাথে হত্যা করে। এদের মধ্যে (নিহতদের মধ্যে) একজন ছিলেন তাহেরের ছোট ভাই। অপহরণকারীরা একটিও গুলি ছোঁড়েনি।

(অসমাপ্ত বিপ্লব তাহেরের শেষ কথা। পৃষ্ঠা ৭৯ লেখক; লরেন্স লিফশুলৎস)

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।