'মো' আহমদ

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০১/২০১২ - ৩:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'উচিটা ফলস' টেক্সাসের একটি ছোট শহর। সেখানকার স্থানীয় পত্রিকায় সম্প্রতি একটি ছোট্ট খবর বের হল - "স্থানীয় 'মো' গ্রোসারীতে দুই তরুন ডাকাতির অভিপ্রায়ে প্রবেশ করে কাউন্টারের ক্লার্ককে গুলি করে মেরে ফেলেছে।" এ ধরনের খবর আমেরিকার মত বিশাল দেশে নতুন কিছু না। বিশেষ করে শাষনতন্ত্রের দ্বিতীয় সংশোধনীর কারনে এখানে সবার অধীকার আছে আগ্নেয় অস্ত্র রাখার। এই অধীকারের অপব্যবহার হয় অনেক। ২১ বছরের নীচের কারো হাতে অস্ত্র থাকার কথা না। কিন্তু অনেক তরুন বিভিন্ন ভাবে যোগাড় করে ফেলে পিস্তল ও বন্দুক। এমনি দু'জন তরুন স্থানীয় এক গ্রোসারীতে (বড় মুদির দোকানের মত) ঢুকে পিস্তল দেখিয়ে ক্যাশের টাকা চেয়েছে এবং গুলি করেছে দোকানের ক্যাশে বসা দোকানীকে। হাসপাতালে নেবার পর অপারেশন রুমেই মারা যান তিনি। ৬৬ বছর বয়েসের এই দোকানীর নাম হচ্ছে মোহাম্মদ আহমদ - যাকে আমি জানি মাহবুব ভাই বলে।

মাহবুব ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় লস এঞ্জেলেসে। আমি তখন আমার কিছু প্রকৌশলী বন্ধু দ্বারা পরিচালিত এক ফ্রানচাইজ রেস্টুরেন্ট চেইনে কাজ করছি। মাহবুব ভাই আমাদের সাথে যোগ দিলেন তখন। এর আগে তার নিজের একাধিক রেস্টুরেন্ট ছিল। অনেক অভিজ্ঞতা তার। তাকে সাথে পেয়ে আমরা খুশী হলাম।

মাহবুব ভাই সিলেটের এমসি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে মাত্র ২৩ বছর বয়েসে আমেরিকা চলে আসেন অন্য অনেকের মত 'আমেরিকান স্বপ্ন' চোখে নিয়ে। নিউ ইয়র্কে কয়েক বছর কাটাবার পর চলে আসেন ক্যালিফোর্নিয়াতে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসাতে নেমে একাধিক রেস্টুরেন্ট-এর মালিক হল। সব ব্যবসাতে উত্থান-পতন আছে। এক সময় তার ব্যবসা বিক্রি করে আমাদের সাথে তাই যোগ দিলেন। পরে টেক্সাসে নতুন কয়েকটি রেস্টুরেন্ট কেনার পর সেখানে বদলি হলেন তিনি। 'উচিটা ফলস'-এ আস্তানা নিলেন তিনি। সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর তিনি সেখানেই এক গ্রোসারী স্টোর খুলে বসলেন। সেখানে যাবার পর তার সাথে আর দেখা হয়নি আমার। ডালাসে যখন আমার মেয়ে পড়াশুনা করছে তখন মাঝে মাঝে গাড়ীতে করে তাকে দেখতে যেয়ে 'উচিটা ফলস'-এর উপর দিয়ে এসেছি। কিন্তু সময়ের সল্পতার কারনে আর তার সাথে দেখা করা হয়ে ওঠেনি। খুব অমায়িক এবং বন্ধু-সুলভ আচরন ছিল তার। এখন আক্ষেপ হচ্ছে কেন যে একটু সময় বের করে দেখা করলাম না তার সাথে। এখন তো তিনি আমাদের ধরা-ছোয়ার বাইরে।

ইন্টারনেটে তার নাম দিয়ে সার্চ করে দেখলাম শুধু আমি একা নই, আরও অনেকে তার মত মানুষ সহজে দেখা যায় না বলে আক্ষেপ করছে। ৩৬০০ পুরান আইওয়া পার্ক রোডের 'মো' গ্রোসারী স্টোরের দরজা আজ বন্ধ। কিন্তু সেই বন্ধ দরজার এ পাশে অনেকে এসে ফুল, মোমবাতি, কার্ড, ইত্যাদি দিয়ে যাচ্ছে। এক কার্ডে লেখা "We love Mo forever" এবং অন্য এক কার্ডে হাতে লেখা "We'll miss you Mo" এ ধরনের আরও অনেক লেখা।

ওখানকার চ্যানেল-৬ টিভিতে দেখলাম দু'জন মহিলার সাক্ষাতকার। সবাই বলছে 'মো'-এর মত মানুষ হয় না। কারও হতো চিনির দরকার, কিন্তু ঐ মুহূর্তে হাতে টাকা নেই - মো তাকে বলেছে চিন্তা করো না চিনি নিয়ে যাও, পরে পয়সা দিও। টিভিতে কথা বলতে বলতে এক মহিলা মনে হল কেঁদে ফেলবে। সে এসেছে কিছু ফুল হাতে এই বদ্ধ দরজার পাশে রাখতে। সে বললো প্রয়োজনে নিজের পকেট থেকে গ্যাসের টাকা দিয়েছে 'মো'।

ঐ শহরে বসবাসকারী ক্যামি হরটন বলেছে - "প্রায় দু'বছর আগে আমি ও আমার স্বামী এই শহরে বাস করতে আসি এবং আমরা প্রায়ই 'মো'-র গ্রোসারীতে আসতাম। 'মো'-র স্মরণ শক্তি ছিল প্রখর। অল্প দিনের মধ্যে সে জেনে গিয়েছিল কে আমার স্বামী এবং আমার সাথে আমার মা এবং আমার ছোট ভাই থাকে। একদিন 'মো' আমাকে বললো - 'গতকাল তোমার ভাই তার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছিল এবং তোমার জন্যে 'ব্লু পাওয়ারেইড' কিনেছে।'

- কি করে বুঝলে যে আমার ভাই? আর আমার জন্যেই যে কিনেছে কি করে জানলে?
- তোমার সাথে তার চেহারার অনেক মিল আছে আর আমার জানা মানুষদের মধ্যে একমাত্র তুমিই রোজ ব্লু পাওয়ারেইড' খাও।

'মো' খুব দয়ালু মানুষ ছিল। সে তার গ্রাহকদের ঠিক মত সময় নিয়ে চিনে নিত। সে সব সময় আমি ও আমার স্বামীর পাশে ছিল।"

'মো'-র আর এক গ্রাহক মেগান চার্চ-ওয়েল বলেছে - "তার মত এত ভাল মানুষ আমি আর দেখিনি। আমি এবং আমার রুম-মেট প্রায়ই সেখানে যেতাম। সব সময় দেখতাম এক মস্ত হাসি তার মুখে। তার সাথে কথা বলেও ভাল লাগতো। আমরা সব সময় সেখান থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসতাম।"

আর এক প্রতিবেশী ক্লেইটন হেইন বলেছে বিগত ৪ বছর সে নিয়মিত গ্রাহক ছিল 'মো'-র দোকানের - কখনো বা কাগজ কিনতে কখনো বা গাড়ীর চাকায় হাওয়া দিতে।

- মো সব সময় কাছে থাকতো বন্ধু সুলভ চেহারা নিয়ে। আমি ধরেই নিতাম সে সব সময় থাকবে এবং আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করবে কেমন যাচ্ছে আমার দিন। তাকে আর দেখবো না, ভাবতেই পারছি না আমি।

- মো ছিল এক জন গ্রেট মানুষ। আমার মনে পড়ে প্রায় সে নিজে এসে আমার কাপে আরও কফি ঢেলে দিত এবং মাঝে মাঝেই দাম নিত না - হেসে বলতো "মনে কর এটা আমার পক্ষ থেকে অথবা একে আগের দিনের কফির রি-ফিলও বলতে পার। ধন্যবাদ এবং আবার এসো।"

এক বাংলাদেশী মানুষের জন্যে এত লোকের এই অনুভুতিগুলি পড়তে পড়তে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো। মনে পড়ে গেল তার সাথে আমার প্রথম দিনের সাক্ষাতের কথা। আমি কি একটা কাজে তার রেস্টুরেন্টে গেছি এমন সময় এক সার্ভার এসে খবর দিল এক গ্রাহক খাবার পর বলছে তার কাছে টাকা নেই এবং ম্যনেজারকে ডেকে পাঠিয়েছে। মাহবুব ভাইয়ের সাথে আমিও গেলাম দেখতে এই অবস্থাতে কি করেন তিনি। সাধারনত এই সব অবস্থাতে দু'টি পথই খোলা থাকে ম্যানেজারের কাছে। একটা নির্দিষ্ট অংকের বেশী বিল উঠলে পুলিসে খবর দেওয়া যায় অথবা বিলটি 'কম্প' দেখাতে হয় তবে তার ফলে কিছু কাগজ-পত্রে কারন উল্লেখ করে স্মাক্ষর দিতে হয়। ম্যানেজাররা সাধারনত এই ধরনের ব্যাপারে দোকানের সম্মানের কথা মনে রেখে পুলিশের দারস্ত হবার চাইতে 'কম্প' (কম্পলিমেন্টারী) করা বেশী পছন্দ করে। তাছাড়া ক্ষতিটা তো মালিকের, মাইনে পাওয়া ম্যানেজারের অতটা গায়ে লাগে না।

যে দু'জন পয়সা ছাড়া খাচ্ছিল তাদেরকে দেখে খুব সুবিধার লাগল না আমার। পুলিশ ডাকলে আবার পরে অসুবিধার স্মৃটি হতে পারে এই সব ভেবে আমি ভাবছিলাম এদের খাবারকে 'কম্প' করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। অপেক্ষা করতে থাকলাম মাহবুব ভাই কি করেন দেখার জন্যে। গ্রাহকপদের সাথে একটু কথা বলে মাহবুব ভাই সার্ভারকে ডেকে তার নিজের ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড বের করে দিয়ে বললেন সেখানে চার্জ করতে। তারপর গ্রাহকদের বললেন সুবিধা মত সময়ে এসে তারা টাকা দিয়ে যেতে পারে। বেশ অবাক হলাম আমি। এ কেমন মানুষ? এ জন্যেই কি তার ব্যবসা গুটাতে হয়েছে?

- নিজের কার্ডে চার্জ করলেন -ওরা যদি টাকা দিতে না আসে? - প্রশ্ন করলাম আমি।
- কেন আসবেনা? - পাল্টা প্রশ্ন তার।
- চেহারা দেখে তো মনে হল না তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়।
- মানুষকে বিশ্বাস না করলে তারা কি করে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করবে।

পরে খোঁজ করে জেনেছি ঐ লোকেরা ঠিকই পরে এসে টাকা দিয়ে গেছে। মাহবুব ভাইয়ের সেই কথাটা আমি সব সময় মনে রেখেছি - "মানুষকে বিশ্বাস না করলে তারা কি করে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করবে।"

এখন ভাবছি, মানুষকে বেশী বিশ্বাস করার ফলেই কি শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনটা দিয়ে দিলেন।

ছবি: 
26/04/2010 - 2:11am
26/04/2010 - 2:11am

মন্তব্য

সাফি এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলেন। মাহবুব ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো

দুর্দান্ত এর ছবি

অনেকদিন পর আবার আপনার লেখা পড়লাম।
ভাবছিলাম একটা কৌতুক করি, বলি, ঠিক দেখবেন মো' যেখানে গেছে সেখানেও দোকান খুলে সবার মুখে হাসি বিলিয়ে চলেছে।
কিন্তু এটা কৌতুকের সময় নয়।
মাহবুব সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা।

চরম উদাস এর ছবি

শ্রদ্ধা

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

শ্রদ্ধা

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সচল জাহিদ এর ছবি

শ্রদ্ধা


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

rabbani এর ছবি

শ্রদ্ধা

সাইফ শহীদ এর ছবি
সাইফ শহীদ এর ছবি

এখানে টিভি নিউজের একটা লিঙ্ক দিলামঃ

http://texomashomepage.com/fulltext?nxd_id=158802

সাইফ শহীদ

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

শ্রদ্ধা

মাসুম এর ছবি

RIP মো আহমদ !

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমেরিকান দুঃস্বপ্ন মন খারাপ


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

shafi.m এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

শাফি।

হিমু এর ছবি

খুবই মন খারাপ হলো পড়ে। নিরীহ সজ্জন মানুষদের এমন পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্বর বন্দুক আইনের সংশোধন প্রয়োজন।

বাপ্পীহা‌য়াত এর ছবি

শ্রদ্ধা
মনটা খুবই খারাপ হলো, রেস্ট ইন পিস মাহবুব ভাই।

টেক্সাসের অবস্থা মনে হয় দিনদিন খারাপ হচ্ছে।
৫/৬ বছর আগে আমার মামারও একই ভাগ্য বরন করে নিতে হয় কাছের ফোর্ট ওয়ার্থ শহরে। একদম একই ঘটনা - চাচার গ্রোসারি শপে ডাকাতি, চলে যাওয়ার আগে গুলিবর্ষন, ফলাফল ১টা অবুঝ শিশু পিতৃ্হীন...

তাসনীম এর ছবি

শুনে খুবই খারাপ লাগলো। উইচিটা ফলস খুবই ছোট শহর। আমি একবার এককাজে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশি এক ভদ্রলোকের ব্যবসা আছে জানতাম, কিন্তু পরিচয় হয় নি।

গ্যাস স্টেশন, কনভেনিয়েন্ট স্টোরে যারা কাজ করে, তারা মোটামুটি জানটাকে হাতে নিয়েই এই কাজ করেন। কয়েকমাস আগে আমার বাসার কাছে এক বাংলাদেশি যুবক গুলিবিদ্ধ হলেন, আমি তাকে খুবই ভালো মতো চিনি। অল্পের জন্য বেঁচে যায় সে। সেই ডাকাতির হোতা ছিল এক ১৫ বছরের ছেলে।

গান কন্ট্রোল না করার ফল নিদারূনভাবে ভোগ করতে হচ্ছে এই দেশকে। ৯/১১ পরপর আমাকে এবং আমার কিছু বন্ধুকে এক এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বন্দুক নিয়ে ভয় দেখিয়েছিল এক লোক - পুলিশ ডাকার পরে জানা গেল সেই লোকটাও পুলিশ!!! পরে জেনেছি, টেক্সাসের বহু শহরের পুলিশের মধ্যে রেসিজম প্রকট ভাবেই উপস্থিত।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাইফ শহীদ এর ছবি

তাসনীম,

গ্যাস স্টেশন, কনভেনিয়েন্ট স্টোরে যারা কাজ করে, তারা মোটামুটি জানটাকে হাতে নিয়েই এই কাজ করেন।

কথাটা ঠিক। তেমনি এক অভিজ্ঞতা আমার একবার হয়েছিল। আমার বোকামীর কথা আজ স্বীকার করি। রেস্টুরেন্টে তখন বেশ ভীড় ছিল তাই আমি নিজে ক্যাশ রেজিস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ক্যাশ নিচ্ছিলাম। এমন সময় এক লোক এসে আমার হাতে একটা কিছু লেখা কাগজ ধরে দিল। আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই শেষের লাইন আগে পড়লাম। সেখানে লেখা ছিল 'call the police.' হাতের কাছে রাখা টেলিফোনে ৯১১ সেট করা ছিল সেটা চেপে দিয়ে লোকটাকে বললাম 'OK, I have called the police'

আমাকে একটা গালি দিয়ে লাফ দিয়ে বের হয়ে গেল লোকটা। এখন কাগজটা পড়ে দেখলাম তাতে লেখা আছে - 'Hand me over all the money you have in the cash register and don't call the police'

সাইফ শহীদ

সাম্য এর ছবি

আর এদিকে, ক্যানাডায় যে বর্তমান গান কন্ট্রোলের ব্যবস্থা আছে, সেটা বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে হার্পার, অতিরিক্ত খরচের দোহাই দিয়ে, কখনো বা আমেরিকার সাথে তুলনা করে। আপনার ও বাকিদের অভিজ্ঞতা শুনে ভয় পেলাম। মাহবুব ভাইয়ের জন্য শ্রদ্ধা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খুবই দু:খজনক। আমেরিকায় এসবের কি বিচার হয় কখনো?

বিশ্বাস নিয়ে একটা ঘটনা আমি শেয়ার করতে চাই।

আমি তখন কানাডার একটা ছিমছাম শহরে। পরিচিত এক ভাইয়ের ঘটনা। ধরা যাক তার নাম আলম। আলম ভাইয়ের গাড়িতে ব্যাকআপ করছিল এমন একটি এসইউভি এসে ধাক্কা মারে। গাড়ির সামনের অংশে ভাল ক্ষতি হয়। এসইউভির প্লেট আমেরিকান। লোকটি বের হয়ে এসে দু:খ প্রকাশ করে এবং অনুরোধ করে পুলিশে না জানাতে, কারণ এতে উনি বর্ডার ক্রস করতে পারবেন না বা ঝামেলা হবে। নাম্বার দিয়ে বলে যা বিল আসে তাকে জানাতে। শোধ করে দিবে। আলম ভাই খুবই বিশ্বাসী মানুষ। ভিনদেশীকেও বিশ্বাস করলেন।

গ্যারাজে রেডিয়েটর এবং আরো জিনিস ঠিক করে বিল আসে প্রায় ষোলশ ডলার। দোকান থেকেই ভিনদেশীকে ফোন দেন আলম ভাই। ভিনদেশী ফোনেই ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধ করে দেয়। এই হল ঘটনা।

আলম ভাইয়ের মত বিশ্বাসী মানুষ আমি কমই দেখেছি।

সাইফ শহীদ এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক,

সুন্দর উদাহরন। অবিশ্বাস সাধারনত আমাদের মধ্যেই বেশী (অবশ্য তার সংগত কারন আছে)।

এখানকার ইলেকশনের সময় ভোট দিতে যেয়ে দেখলাম আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স, অন্য কোন ফটো আইডি বা পাসপোর্ট কিছুই চাইল না। নাম বলার পর কম্পুউটারে নাম খুঁজে পেয়ে ব্যালট পেপার দিয়ে দিল। আমার বাংলাদেশী মন, সব কিছুতেই সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসা করলাম - 'আচ্ছা আর কেউ যদি আমার নাম বলে ভোট দিয়ে যায়?'

অবাক হয়ে আমাকে উল্টা প্রশ্ন করলো ইলেকশন অফিসার - 'আর কেউ তোমার নামে ভোট দেবে কেন?'

কি করে তাকে বোঝাবো? আমার নামে ভোট দিতে আসলে অন্য আর এক বাঙ্গালীই তো আসবে - তাই না?

সাইফ শহীদ

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখাটা মন খারাপ করে দিল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভাল মানুষেরা বোধহয় আসলেই বেশীদিন থাকেন না, সারভাইবাল ফর দ্যা ফিটেস্ট। মন খারাপ করা একতা লেখা। মাহবুব ভাইয়ের জন্যে শ্রদ্ধা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাইফ শহীদ এর ছবি

সাধারনত উত্তর আমেরিকার মানুষদের মধ্যে অধীকাংশ মানুষ যতেষ্ট বিশ্বাসী এবং কথা দিলে কথা রাখে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই কথা বলছি।

স্টোরের রেকর্ড করা ভিডিও থেকে মনে হয় ডাকাতদের কথা মত তখনই তিনি ক্যাশ রেজিস্টার খুলে টাকা দেবার চেষ্টা করার বদলে নীচে থেকে কি একটা যেন বের করতে যাচ্ছেন। এটা বন্দুকও হতে পারে বা ডাকাত এটাকে বন্দুক ভেবে গুলি ছুড়তে পারে। সাধারনত ক্যাশ রেজিস্টারে ১০০/২০০ ডলারের বেশী খুচরা রাখা হয় না। বেশী টাকা জমা পড়লে সেটা দোকানের সেইফে রাখার কথা। অর্থাৎ বলতে গেলে এই সামান্য টাকার জন্যে একটা প্রতিষ্ঠিত গ্রোসারী এবং গ্যাস স্টেশনের মালিকের প্রানটা গেল সেটা বড়ই দুঃখের কথা।

সাইফ শহীদ

পৃথ্বী এর ছবি

বন্দুক রাখার অধিকার নিয়ে মাঝখানে অনলাইনে কিছু বিতর্ক দেখেছিলাম মনে হয়। সাম্প্রতিককালে কি এই আইন সংশোধন করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? যা বুঝলাম, রিপাবলিকানরাই কেবল এই আইনের পক্ষে।

বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের উপদ্রব থাকলেও অন্তত এরকম ডাকাতি খুবই বিরল। ইংল্যান্ডে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় ব্রেক-ইন হয়েছিল, ভাগ্যিস ওরা বাসায় ছিল না, ব্রেক-ইনের ঘটনাগুলোতে সবসময়ই রক্তারক্তি ঘটে। বাংলাদেশে এসব এখন কমই হয়।

মাঝে মাঝে মনে হয় দেশে ভালই আছি। মাহবুব ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকল।

সাইফ শহীদ এর ছবি

পৃথ্বী,

এ কেমন সভ্য দেশ নামে এখানেই আগে একটা লেখা দিয়েছিলাম, তার শেষ লাইনে ছিলঃ

আচ্ছা, আমাদের বাংলাদেশে যদি এমন আইন থাকতো, আর দেশ স্বাধীন হবার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা যদি শেখ মুজিবের কথা মত তাদের অস্ত্র ফেরত না দিত, তাহলে কি এত ঘন ঘন 'সামরিক আইন' জারী করে ক্ষমতা দখলের খেলা চলতে পারতো আমাদের স্বাধীন দেশে??

ব্যাপারটা একেবারে ফেলে দেবার মত না। ব্যক্তিগত ভাবে যদিও আমি নিজে একজন 'প্যাসিফিস্ট'।

সাইফ শহীদ

নাশতারান এর ছবি

দুঃখজনক। যারপরনাই দুঃখজনক।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

শ্রদ্ধা

মাহবুব ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই ।

তাঁর মত ভাল মানুষে আমাদের চারপাশ ভরে যাক এই আশা রাখি ।

সাইফ শহীদ এর ছবি

তাঁর মত ভাল মানুষে আমাদের চারপাশ ভরে যাক এই আশা রাখি।

তাই যেন হয়। অনেক ধন্যবাদ এই ভাবে কামনা করার জন্যে।

সাইফ শহীদ

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ ।
ভালো থাকবেন ।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মাহবুব ভাইয়ের জন্যে শ্রদ্ধা।

অনেকদিন পরে আপনার লেখা দেখতে পেয়ে লগ-ইন করলাম। 'অলখ আমেরিকা' মিস করি, আশা করি মাঝে মাঝে লিখবেন।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাইফ শহীদ এর ছবি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার,

রোজ ১৩০ মাইল গাড়ী চালিয়ে এবং অতিরিক্ত দুই ঘন্টা রাস্তায় ব্যায় করার পর আর লেখার সময় বা শক্তি তাকে না। তবুও চেষ্টা করবো। অনেক ধন্যবাদ রইল।

সাইফ শহীদ

সাফি এর ছবি

সাইফ ভাই এখন কি শহরের বাইরে কাজে যেতে হয়?

তাপস শর্মা এর ছবি
অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন খারাপ শ্রদ্ধা

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দ্যা রিডার এর ছবি

একজন ভাল মানুষের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মাহবুব ভাইয়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিলো আমাদের প্রতিবেশী আমেরিকান বাড়ির এক ছেলের, আমার বন্ধু হীরণের মেঝো ভাই। গ্রোসারী ছিলো। কয়েকজন ডাকাত এসে দোকানের সামনে বসা জলজ্যান্ত মানুষটাকে মেরে রেখে চলে গেলো। দেশে এসে বিয়ে করে ভাবিকে নিয়ে গিয়েছিলো এবংভাবি এই খুনের ঘটনার সময় অন্তস্বত্ত্বা ছিলেন। এগুলো খুবই দুঃখজনক। তথাকথিত সভ্যতার মুখোশে মোড়া এইসব দেশের অভ্যন্তরীন এবং বৈদেশিক বর্বরতা সত্যিই উদ্বেগজনক। এই যে সেদিন শিকাগোতে বন্ধু সঞ্চয় বেতনের এটিএম থেকে টাকা তুলে বেরোনোর পথে আহত হয়ে তিন দিন অচেতন থাকলো, এখন প্রায়ই তার প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রনা হয় এবং তখন তার ও তার স্ত্রীর কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

অনেকদিন পর আপনাকে দেখে ভালো লাগছে সাইফ ভাই। আশাকরি নিয়মিত থাকবেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সাইফ শহীদ এর ছবি

রাতঃস্মরণীয়,

যখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে তখন সব দেশেই চুরি, রাহাজানি, ডাকাতি, খুন বেড়ে যেতে থাকে। আমেরিকাতে অস্ত্রের সহজ লভ্যতা মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের গুলির কারনেও অনেকে মারা যাচ্ছে।

আপনার প্রতিবেশী ও বন্ধুর এ ভাবে অপমৃত্যুর কথা জেনে খারাপ লাগলো। আর প্রার্থনা করবো যেন বন্ধু সঞ্চয় তাড়াতাড়ি সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সাইফ শহীদ

গৌতম এর ছবি

শ্রদ্ধা

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মরুদ্যান এর ছবি

দু:খজনক শ্রদ্ধা

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা। মন খারাপ

সত্যান্বেষী এর ছবি

মাহবুব ভাইয়ের জন্যে গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদন মন খারাপ

সাইফ ভাই, অনেকের প্রতিক্রিয়ার কথা জানালেন কিন্তু মাহবুব ভাইয়ের পরিবার বিষয়ে কিংবা উনার পরিবারের কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না।

সাইফ শহীদ এর ছবি

সত্যান্বেষী,

মাহবুব ভাইয়ের পরিবারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার মত অবস্থা এখনো হয়নি। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে - সবাই বড় হয়ে গেছে। তার আরও অনেক আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব ছড়িয়ে আছে আমেরিকার অনেক খানে।

সাইফ শহীদ

জিজ্ঞাসু এর ছবি

পড়তে পড়তে চোখে জল এসে গেল।
মাহবুব ভাইয়ের জন্য শ্রদ্ধা ও দোয়া।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

বিলাস এর ছবি

শ্রদ্ধা

কৌস্তুভ এর ছবি

আমেরিকার এই ন্যক্কারজনক গান ল বহুদিন আগেই উঠে যাওয়া প্রয়োজন ছিল। ওদের অ্যাসোসিয়েশনের থেকে মোটা টাকা খাওয়া নেতারা (মূলত রিপাবলিকান) এটাকে এখনও জিইয়ে রখেছে। খুবই দুঃখজনক।


বস্টনে এই পোস্টারটা বহুদিন ছিল। আমার খুবই পছন্দের।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।