স্রবন্তী স্মৃতিপট - দিলীপ বড়ুয়া

সাইফ শহীদ এর ছবি
লিখেছেন সাইফ শহীদ (তারিখ: রবি, ০৬/০৫/২০১২ - ৫:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৬০-দশকের শেষের দিক তখন। অনেকটা রুটিন মতই যথারীতি দেরীতে গতরাতে হলে ফিরেছি। ফলে অন্যদের সকাল হয়ে গেলেও তখনো আমি বিছানায়। এছাড়া দিনটি ছিল রবিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ বন্ধ। হঠাৎ শুনি কে যেন আমাকে ডাকছে আমার ডাক নাম ধরে। এখানে সাধারণত কেউ আমাকে ডাক নামে ডাকে না। চোখ খুলে দেখি পন্ডিত স্যার আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকছেন - স্বপন, ওঠো।
- স্যার আপনি? - ধড়মড় করে ওঠে বসে প্রশ্ন করলাম।
- আমার একটা কাজ করে দিতে হবে - বল্লেন আমার স্কুলের শিক্ষক।

আমি যখন ক্লাশ ৫ থেকে ৯ পর্যন্ত পড়ছি যশোর জেলা স্কুলে তখন পন্ডিত স্যার আমাদেরকে বাংলা শিখাতেন। তখন খুব ভয় করতাম তাকে। ব্যকরণ শিখাতেন তিনি। ঠিক মত সমাস বলতে না পারার জন্যে অন্যদের মতই মার খেয়েছি পন্ডিত স্যারের হাতে। তিনি শিখিয়েছিলেন, সমাস হয় ছয় প্রকারের - দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব। সব সময় ঠিক ভাবে এগুলি মনে রাখতে পারতাম না। ভুল করলে স্যারের সামনে যেয়ে হাত পাততে হত আর তার হাতের রুলারের একটি বা দু'টি বাড়ি খেতে হত সেই খোলা হাতে। এই মার খাওয়া সত্বেও আমাকে যে তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন তা বুঝতাম আমি। আমার বাবার কারনেও হতে পারে এটা। আমার বাবা অনেক দিন শিক্ষা বিভাগে ছিলেন এবং পরে জেলার কয়েকটি স্কুলে হেড-মাস্টার হিসাবে কাজ করেছিলেন, তাই অধিকাংশ স্থানীয় শিক্ষকেরা তাকে বিশেষ সম্মান করতেন। এতদিন পরে হঠাৎ পন্ডিত স্যারকে আমার হলের রুমে এভাবে আসতে দেখে বেশ অবাক হলাম।

- কি করতে হবে স্যার? - জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
- এই যে আমার ছেলে, এবার ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ঠিক মত হলের সীট পাচ্ছে না। - এই বলে পাশে দাঁড়ান ছেলের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করালেন।
- তা আমার কি করতে হবে স্যার?
- ওকে হিন্দু হোস্টেলে সীট পাবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তুমি তো জানো আমরা কুলীন ব্রাহ্মন, বাধ-বিচার করে খাই। ফলে জগন্নাথ হল ছাড়া অন্য কোথাও ওকে রাখা যাবে না।

ভারত ভাগ হয়েছে ২০ বছরের বেশী, অনেক হিন্দু পরিবার ভারতে চলে গেছে এবং ভারতের বিহার এবং অন্যান্য প্রদেশ থেকে অনেক মুসলমান পরিবার চলে এসে আশ্রয় নিয়েছে পূর্ব-পাকিস্তানে। দু'দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা কেমন যেন অস্থিরতা রয়ে গেছে। যেখানে ভারতে জাত-পাতের বিভেদ ক্রমে ক'মছে, সেখানে পূর্ব-পাকিস্তানের কিছু কিছু অংশে যেন এটা শক্ত ঘাটি হয়ে রয়ে যাচ্ছে।

ছোটবেলার একটা ঘটনা আমার এখনো পরিস্কার মনে আছে। আমাদের বাড়ীতে তখনো আলাদা টিউব-ওয়েল নেই। এর বদলে ছিল একটা বড় ইন্দারা (কূপ)। একটা ছোট বালতীতে দড়ি বেঁধে সেটা ইন্দারাতে নামিয়ে পানি টেনে তোলা হত। ঐ পানিতে সংসারের বাকী সব কাজ করা হলেও খাবার পানির জন্যে আমরা স্থানীয় মিউনিসিপালিটি সরবরাহকৃত পাইপের পানির উপর নির্ভর করতাম। পাইপের ট্যাপটা রাস্তার পাশে ছিল, কিন্তু আমাদের বাড়ীর দিকে থাকার বদলে রাস্তার ওপর পারে ছিল। পালা করে আমার তিন বোন সেই ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করতেন (পরবর্তী জীবনে তারা শিশু একাডেমীর পরিচালিকা, সমাজ কল্যান বিভাগের উচ্চ-পদস্ত অফিসার এবং খিলগাঁও গার্লস কলেজের প্রিন্সিপাল হয়েছিলেন)। রাস্তার পাশে যেখানে ট্যাপ বসানো ছিল তার পাশেই ছিল এক একান্নবর্তী হিন্দু পরিবারের বাড়ী। তারা সবাই ভাল লোক ছিল এবং আমাদের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল তাদের। আমাদের তুলনায় গরিব ছিল তারা। আমাদের ছিল দো'তলা দালান বাড়ী আর তারা থাকতো কুড়ে ঘরে। তাদের ছেলে মেয়েরা আমাদের সাথে খেলা করতো।

প্রায় ৬০ বছর আগের যে ঘটনা আমার এখনো মনে আছে তা হচ্ছে একদিনের ছোট একটি ঘটনা। পাশের বাড়ীর পিসিমা তার কাসার কলসী ট্যাপের তলায় পানি ভরতে দিয়ে কি একটা কাজে যেন সেই স্থান ত্যাগ করে গেছেন। আমার এক বোন তখন পানি নিতে এসে দেখে কলসি ভরে পানি উপচে পরছে। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন পিসিমার কোন দেখা নেই, তখন সে কলসিটা এক পাশে সড়িয়ে রেখে নিজের জগ সেখানে পানি ভর্তি করার জন্যে ট্যাপের নীচে রেখেছে। পিসিমা ফিরে এসে যখন দেখেন যে তার কলসিতে আমার বোনের হাতের ছোয়া লেগেছে, তখনি কলসির সব পানি মাটিতে ফেলে দিয়ে, কলসিটা আবার ধুয়ে আমার বোনের স্থান ত্যাগের পরই আবার পানি ভরতে দিয়েছেন। পিসিমা কোন রাগ দেখাননি, কিন্তু আমার বোনকে বলেছেন - "বাবা, তোমরা হচ্ছ ম্লেচ্ছ। তোমাদের ছোয়া জল তো আমরা খেতে পারিনা।"

পিসিমা মানুষ হিসাবে খারাপ ছিলেন না, কিন্তু এটা ছিল তার বহু বছরের সংস্কার। তেমনি শিক্ষিত হয়েও পন্ডিত মশায় তার বিশ্বাস ও সংস্কারের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি।

পন্ডিত স্যার ও তার ছেলেকে সাথে নিয়ে গেলাম জগন্নাথ হলে দিলীপ বড়ুয়ার কাছে। ওই মুহূর্তে দিলীপ বড়ুয়া ছাড়া আর কারো কথা মনে এল না। দিলীপ আমার সম-বয়েসী বা হয়তো একটু ছোট হবে, তবে সম্মান করে তাকে আমি দিলীপদা বলে সম্মোধন করতাম। দু'জনেই তখন ছাত্র ইউনিয়ন করি এবং এভাবেই আমাদের পরিচয়। আমরা যখন তার কাছে পৌঁছালাম, তখন তিনিও ঘুমাচ্ছিলেন। ডেকে তুললাম।

- দিলীপদা, ইনি হচ্ছেন আমার পন্ডিত স্যার। ওনার ছেলেকে এই হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

একটুও চিন্তা না করে ঘুম ঘুম কন্ঠে তিনি বলে ঊঠলেন - "ঠিক আছে।"

বিছানাতে উঠে বসলেন তিনি।

পন্ডিত স্যার এবার জিজ্ঞাসা করলেন - কতদিন লাগবে সীট পেতে?

- এক / দুই মাস হয়তো লাগবে।
- এখন কোথায় থাকবে তা'হলে?
- আমার সাথে থাকবে। - বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে তখনো ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উত্তর দিলেন দিলীপদা।
- বাবা, তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম আমার ছেলের ভার।

এই বলে পন্ডিত স্যার ত্যাগ করলেন সেই জায়গা। দিলীপদার কথায় আমিও অবাক। ডবলিং করে শোবার জন্যে তখনকার দিনে হলের বিছানাগুলি মোটেই প্রসস্ত ছিল না। সম্পূর্ণ অচেনা একটা ছেলেকে শুধু আমার মুখের কথায় তার সাথে রাখলেন তিনি - আমি নিজেও এতে খুব অবাক হয়ে গেলাম।

এই ছিল ৪৫ বছর আগের আমার পরিচিত দিলীপ বড়ুয়া। সাম্যবাদের বানী তিনি যে শুধু মুখে বলতেন তা নয়, কাজেও দেখিয়েছিলেন সেদিন। সেই দিন থেকে আমার মনে এক বিশেষ সম্মানের স্থান দখল করে আছেন তিনি।

এখন মন্ত্রীত্ব করতে যেয়ে খুব বেশী কি বদলাতে হয়েছে তাকে?


মন্তব্য

আবুল হায়াত শিবলু এর ছবি

তাহলে এই আমাদের দিলীপ বড়ুয়া ! ভাল লাগল হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার যদি জানা থাকে তাহলে দয়া করে আমাদের জানাবেন কি ১৯৭১ সালে দিলীপ বড়ুয়ার ভূমিকা কী ছিল? উনার পার্টির ভূমিকাই বা তখন কী ছিল?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কমপক্ষে ১০টা জায়গায় দিলীপ বড়ুয়ার জীবনী পড়লাম। সেখানে ৭০ সাল পর্যন্ত তার কর্মকাণ্ডের বর্ণনা আছে তারপর আবার শুরু হয়েছে ১৯৭২ থেকে। তার ৭১ সালের কোনও কর্মকাণ্ডের উল্লেখ কোথাও দেখতে পাইনি। সাইফ ভাই হয়তো জানা থাকলে আলোকপাত করতে পারবেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বাগানে বইসা পেয়ারা খাইতেছিল নাকি? ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ছবি মেহেরজানে পেয়ারাবাগানের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেইখানে মুক্তিযোদ্ধারা পেয়ারা খাইতে খাইতে পেয়ারি পেয়ারি খৎ লেকে আয়া ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কি জানি, হৈতে পারে! কিন্তু আন্দাজে কিছু কওয়া যাবে না।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কুলদা রায় এর ছবি

অনিন্দ্য, এই পেয়ারাবাগানের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা লেখা করার ইচ্ছে আছে মাথায়, সময় করে উঠতে পারছি না রবি ঠাকুরের জন্য। আশা করছি এ মাসেই রবি ঠাকুর চলে যাবেন। তারপর পেয়ারা বাগানের বিষয়টি লিখব।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

বাংলামায়েরছেলে এর ছবি

বেশ লেগেছে।

______________________________
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়; কারণে-অকারণে বদলায়।

বিপ্লব কর্মকার এর ছবি

ষষ্ঠপান্ডবদা,
৭১ এ দিলীপ বড়ুয়ার ভুমিকার কথা জানি না।
তবে তার জম্মস্থান বা বড়ুয়াদের আবাসস্থল চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের কথা জানি।
চীন পাকিস্থানের পক্ষে ছিল বলে তখনকার পাকিস্তানীরা বড়ুয়াদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল।আর সেই কারনে অন্যান্যদের মত তাদের নির্যাতিত হতে হয়নি বা পালিয়ে বেড়াতে হয়নি।যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে তারা সুখী মানুষের জীবনযাপন করেছে। তাদের কেউ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে বলেও শুনিনি।পাকিস্তানী সৈন্য ও বড়ূয়াপাড়ার লোকজন উভয় উভয়কে সন্তুষ্ট রেখে চলেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দাদা, চট্টগ্রাম তো বেশ বড় জায়গা আর সেখানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রায় সর্বত্রই থাকেন। তাদের সবাই চীনপন্থী তথা পাকিস্তানপন্থী ছিলেন এমনটা কি হতে পারে? কথাটা দিলীপ বড়ুয়া আর তার দলের লোকদের জন্য হয়তো সত্য হতে পারে, কিন্তু গোটা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্যও সত্য?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বিপ্লব কর্মকার এর ছবি

গোটা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্যও সত্য?

--হ্যাঁ সত্য।
আমার জানা মতে পাকিস্তানী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর-বীরপ্রতীক বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।
তাই বলে পাকিস্তানীদের বাংলাদেশের প্রতি সহানুভুতিশীল বলা যাবে না। তেমনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্ন দুয়েকজন বাংলাদেশের পক্ষে হয়ত যুদ্ধ করে থাকতে পারে।তবে সংখ্যায় বেশি হবে না।আমি এখন পর্যন্ত একজনেরও নাম জানতে পারিনি । হয়ত আমার ব্যর্থতা বা জানার সীমাবদ্ধতা। তাদের উপর পাকিস্তানীদের কোন জ্বালাও পোড়াও
নৃশংসতার কথাও কোথাও দেখিনি।তাদের দেশান্তরিত হতে হয়নি,যুদ্ধের পুরো ৯ মাস তারা এ দেশেই ছিল। আমি বলছি না যে, তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন হলে খুশি হতাম।
পাকিস্তানীদের বৌদ্ধপ্রীতির কারনটা ঐ যে, চীনের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন।
আমার এই কমেন্টের উদ্দেশ্য তাদের প্রতি বিষেদাগার নয়,তবে এটাই সত্যি।আজ তাদের সবচেয়ে বড় উতসব বৌদ্ধ পুর্নিমা।
আমার স্কুল ও কলেজের বৌদ্ধ বন্ধুদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল।
লেখকের লেখার হাত চমৎকার। উনার অলখ আমেরিকা সিরিজ খুব ভাল লেগেছিল।

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আমার জানা মতে পাকিস্তানী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর-বীরপ্রতীক বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।
তাই বলে পাকিস্তানীদের বাংলাদেশের প্রতি সহানুভুতিশীল বলা যাবে না।

গাজী গোলাম দস্তগীর পাকিস্তানি বীর মুক্তিযোদ্ধা!! কস্কি মমিন!

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

তানভীর এর ছবি

আজকাল দেখি মুক্তিযোদ্ধারা সব পাকিস্তানি আর পাকিস্তানি/রাজাকাররা সব মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছে (সেদিন বিডিনিউজে দেখলাম মোশাররফ হোসেন শাজাহান বীর মুক্তিযোদ্ধা!) ম্যাঁও

কুমার এর ছবি

চলুক

বিপ্লব কর্মকার এর ছবি

এই লাইনটা দিয়ে আমি মনে হয় আমার বক্তব্য বুঝাতে পারিনি।
গাজী গোলাম দস্তগীরের পুরো পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংগালিদের
প্রতি অন্যায় অত্যাচার দেখে বাংগালিদের পক্ষে অস্র ধরেছিলেন।
আশা করি আপনার বিভ্রান্তি দূর হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গাজী গোলাম দস্তগীর, বীর প্রতীকের পুরো পরিবার ভারত হতে আগত। পাকিস্তান হতে নয়। উনার পরিবারের মতো আরো লাখ লাখ পরিবার ভারত হতে ১৯৪৭ হতে ১৯৭০ সালের মধ্যে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে মাইগ্রেট করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তাঁদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তাঁরা বাঙালী, মুক্তিযোদ্ধা - এখন বাংলাদেশের নাগরিক। কোনভাবেই তাঁরা "পাকিস্তানী মুক্তিযোদ্ধা" নন্‌।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কুমার এর ছবি

মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর-বীরপ্রতীক কি বর্তমান এম্পি এবং গাজী ট্যাংকের কর্ণধার?

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

হ্যাঁ।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অরফিয়াস এর ছবি

দুঃখিত আপনার এই অযৌক্তিক ও ভুল কথাটির সাথে সমর্থন জানাতে পারলামনা, আশা করি আপনি পরবর্তিতে একটু ইতিহাস জেনে মন্তব্য করবেন।

চট্টগ্রামের কিংবা পাহাড়ী অঞ্চলগুলোর অধিবাসীদের ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলো অধিকাংশ গোত্রভিত্তিক রাজাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো, এই উচ্চ বংশীয় রাজাদের সাথে সাধারণ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ কিংবা মত বিনিময় কখনই সেভাবে হতোনা। কিন্তু কিছু কিছু রাজা সেসময় পাকিস্তানিদের সহায়তা করার সিদ্বান্ত নেয়, যা কখনই সমগ্র জনগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তের প্রতিফলন নয়। এতে সেই উচ্চ বংশীয় কিছু পরিবার নিজেদের পিঠ বাঁচাতে পারলেও সাধারণ মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং বৌদ্ধরা। পরবর্তিতে একটি প্রোপাগান্ডা এভাবে ছড়ানো হয়যে, এখানকার সবাই পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছিলো, যা কিনা পারতপক্ষে এই অঞ্চলের আদি-অধিবাসীদের নির্যাতন করার একটি পথের শুরু।

মুক্তমনা ব্লগে এই বিষয়ে বিস্তারিত বেশ কয়েকটি তথ্যবহুল লেখা রয়েছে, এছাড়া একটু খোঁজ নিলেই যুদ্ধে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অর্ক  এর ছবি

না জেনে এরকম বেমক্কা জেনেরালাইজড কমেন্ট না করলে কী হত না ? বেশি কিছু বলব না, "বড়ুয়া মুক্তিযোদ্ধা " লিখে গুগল করুন , তাতেই আশা করি আপনার জ্ঞানের ঘাটতি একটু হলেও কমবে । আর পার্বত্য আদিবাসীদের অবদান জানতে আজই সাবেক রাস্ট্রদূত এস এস চাকমার মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম বইটি কিনে পড়ে ফেলুন... তাতে যদি মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কান্তি বড়ুয়া , মং চিনু মারমা, চিত্তরঞ্জন চাকমাদেরদের সম্পর্কে আপনার অজ্ঞতা একটু কমে

কুলদা রায় এর ছবি

লেখকের লেখাট উদ্দেশ্যপূর্ণ লেখা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি অন্যরা বলেছেন। সেটি বাদ দিয়ে অন্যক্ষেত্রগুলো বলছি--
১। তিনি হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক ব্যবহারের বর্ণনা দিয়েছেন দুজায়গায়। এক। পণ্ডিত স্যার এবং পাশের বাসার মাসিমার ঘটনা উল্লেখ করে। কিন্তু সম্প্রীতির কোনো নজির উপস্থাপন করেন নি। তিনি কি তাঁর জীবনে সাম্প্রদায়িক নজির দেখতে পাননি? তাঁর জীবনে কি অসাম্প্রদায়িক মানুষ দেখতে পাননি?
২। পণ্ডিত স্যার তাঁকে পছন্দ করতেন--এটার কারণ হিসেবে লেখকের পিতার সঙ্গে স্যারের চাকরীর সম্পর্কের প্রতি ঈঙ্গিত করেছেন। অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাননি।
৩। দেশত্যাগের কারণটি তিনি ব্যাখা করেননি। এটাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নিয়েছেন।

দিলীপ বড়ুয়া সাম্যবাদি ছিলেন। তাঁর প্রশংসা করছেন লেখক। তাঁর সঙ্গে তাঁর খাই-খাতিরের বর্ণনা পড়ে মনে হল--লেখক সম্ভবত দিলীপ বড়ুয়ার চিনাপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চিনাপন্থীরা পাকিস্তানপন্থীই। লেখককে জিজ্ঞাসা--
১) বাংলাদেশের চিনাপন্থী রাজনীতিকরা কেন সাম্প্রদায়িকতার ব্যাধিতে আক্রান্ত?
২) কেন তারা জীবনের একটি পর্যায়ে প্রতিক্রয়াশীল রাজনীতিতে আস্থা রাখেন?
৩) কেন তারা পাকিস্তানপন্থায় গমন করেন?

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

sajjad এর ছবি

সম্প্রীতির কোনো নজির উপস্থাপন করেন নি। তিনি কি তাঁর জীবনে সাম্প্রদায়িক নজির দেখতে পাননি? তাঁর জীবনে কি অসাম্প্রদায়িক মানুষ দেখতে পাননি?

লেখক যদি তার ব্যক্তিগত জীবনে না দেখে থাকেন সে দায় কী তার? কষ্টগুলো মানুষের মনে থাকে বেশি। আমাদের বুঝতে হবে এটা উপন্যাস না যে সেখানে নায়ক/ভিলেন ইত্যাদি থাকিতে হইবে। টেক ইট সিম্পল, ইট্স এ ডায়েরি।

আর যে ঘট্নার কথা বল্তেচেন, সেটাতো পুরো মানব জাতির জন্য লজ্জাস্কর, এক্জন মানুষ আরেক্টা মানুষ্কে এরকম অস্পররসেয় মনে করে। এরকম ব্যপার মনে না থেকে পারে?

সাইফ শহীদ এর ছবি

স্রবন্তী স্মৃতিপট আমার জীবনে দেখা কিছু মানুষের সাথে সাক্ষাতের নিছক ব্যক্তিগত 'স্ন্যাপ-সট'। 'ভয়েস অব আমেরিকা'-র এক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে দিলীপ বড়ুয়াকে দেখে হঠাৎ মনে পড়ে গেল পুরানো দিনের এই স্মৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর তার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই।

বিভিন্ন মতামত প্রকাশের জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ।

সাইফ শহীদ

কুলদা রায় এর ছবি

কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। সেগুলোর জবাব পেলে ভালো লাগত।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নতুন সম‌‌‌‍‌র্থ‌‌‍‌‌‌‌‌‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌ক সংগ্রহের জন্য জুনিয়রদের সাথে ডাবলিং করত এবং এখনও করে। এর সংগে উদারতা বা ব্যক্তিত্ব ‌‌্যাচাই এর প্রসংগ আসলে, সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।

বাম রাজনীতিবিদরা, বিশেষভাবে আমাদের দেশে, সুবিধাবাদী ধরনের। একটু হইচই বা আন্দলনের পর কোনো রহস্যজনক কারনে তারা ম্যানেজ হয়ে ‌‌্যায়। এজন্য তাদের নিরবিচ্ছিন্ন ইতিহাস হয় না। এই আছে, এই নেই। আজকে তাদের কর্মকান্ড তাই তেমন গুরুত্ব পায় না, এমনকি সাধারন মানুষের কাছেও।এজন্য বৌদ্ধ ধর্মকে দোষ দেয়ার কিছু নেই।

Zoom_Russel

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন মন্ত্রীত্ব করতে যেয়ে খুব বেশী কি বদলাতে হয়েছে তাকে?

সেই দিন আর এখন নাই। দিন পাল্টেছে দেশ পাল্টেছে। মন্ত্রী হয়ে উনি এখন নিজেকে নোবেল প্রাইজ হোল্ডারের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেই নিজের অবস্থান কে অনেক ছোট করেছেন।
অতীত জানিনা কিন্তু দিলীপ বড়ুয়ার বর্তমান নিয়ে গর্ব করে স্মৃতিচারণ লেখার মত তেমন কিছু নাই।
যাই হোক আপনার লেখার ধরন পড়ে ভাল লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।