বাড়ি ফেরা

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০১/২০১১ - ১১:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এসএসসি পাস করার আগে থেকেই আমি জানি আমাকে ঢাকায় পড়তে যেতে হবে। এমন না যে, আমি ঢাকা সম্পর্কে অনেক জানি, বা একবার বেড়াতে গিয়ে ঢাকার প্রেমে পড়ে গেছি। মূল ব্যাপার হল আমার ভাইয়েরা, কাজিনেরা ঢাকায় পড়াশোনা করে, এখন আমি যদি না যাই, সেটা প্রেস্টিজ ইস্যু। আমার নিজের সম্পর্কে যতই উচু ধারণা থাকুক, আমার বাড়িতে সবাই ভয় পাচ্ছিল, যদি নটরডেম বা ঢাকা কলেজে চান্স না পাই, তাহলে তো স্থানীয় কলেজের ফর্ম কিনে রাখা দরকার। তো মান-সম্মান রক্ষার তাগিদেই হোক আর যে কারণেই হোক চান্স পেয়ে গেলাম নটরডেমে। তারপর নয়ন আর মৃদুল সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে গিয়ে আমাকে বিদায় দিয়ে আসল।

জনসমুদ্র ঢাকায় সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ আমার নিরাপত্তা একটি জরুরী বিষয়, তাই রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে আমাকে পুরে দিয়ে চাবি তুলে দেয়া হয় অমল মহারাজের হাতে। অমল মহারাজ মার্শাল ল চালু করে আর যাবতীয় অধিকার কেড়ে নিয়ে সবার জন্য নিরানন্দ এক পরিবেশ তৈরী করে তার সর্বময় কর্তা সেজে স্বর্গের দিকে একধাপ করে এগিয়ে যান। আর আমি হোস্টেলের গ্রিল দেয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে দিনরাত জপতে থাকি, “ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না”। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য সারাদিন অস্থির অস্থির লাগে, কিন্তু এত উৎসাহ নিয়ে ঢাকায় পড়তে এসেছি, তাই লজ্জায় আর বাসায় বলতে পারিনা যে আমার ঢাকায় আসার সাধ পুরাইছে এবং ফুরাইছে।

হোস্টেলের সামনের মাঠে খেলার জায়গা ছিল একসময়, কিন্তু কনক্রিট আর বালির স্তুপ ওই জায়গাটাকেও হোস্টেলের নিরানন্দ পরিবেশের সাথে বেশ একতারে বেঁধে রেখেছে। যখন স্কুলে পড়তাম, বিকাল চারটায় স্কুল থেকে ফিরে কোনরকমে কিছু একটা গিলেই দৌড়াতাম খ্রিস্টান পাড়ার ছোট মাঠে, তারপর খুদে ওয়ার্ন, জন্টি আর শচীনদের সাথে মিলে আলোকস্বল্পতা নেমে আসার আগ পর্যন্ত তুমুল ক্রিকেট। এই বন্দীশালায় সকাল-বিকাল দুইবেলায় প্রেয়ার, কলেজের স্যাশনাল আর ক্যুইজের ধাক্কা সামলে একেক বেলা বেশ কান্না পেয়ে যেত। খেলার মাঠের সাথীদের, আমার দাদাগিরি ফলানোর চার বছরের ছোটবোন আর দাদাগিরি ফলানো দুই দাদা, বাবা-মা সবাইকে ভীষণ ভাবে মিস করতে থাকি।

প্রথম বাড়ি যাওয়ার সুযোগ আসে সংসদ নির্বাচনের সময়, ওই বছরের নির্বাচন নিয়ে আমার চেয়ে বেশি উত্তেজিত মনে হয় হাসিনা-খালেদা ও ছিলনা। গোপীবাগ থেকে রিকশায় কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কিনে এনে যা আনন্দ পেয়েছিলাম, তেমনটা আর কোন কিছু কিনেই পাইনি অনেকদিন। বাড়ি যাওয়া হয়, সবার চোখে মনে হতে থাকে আমি শুকিয়ে গেছি, তাই চলে কয়দিন পেট পুরে খাওয়া। তারপর মন খারাপ করে আবার ফিরে আসা ঢাকায়, ব্যস্ত হয়ে যাওয়া প্রাইভেট, সেশনাল, ক্যুইজ আর খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা বন্দীশালায়।

পূজার ছুটিতে বাড়ি যেতে চেয়ে দেখা গেলো মিশনে পূজার প্রথম তিন দিন কাটিয়ে তারপরই বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মিলবে, সেটাও একজন গার্ডিয়ানের উপস্থিতিতে। মিশনে অনেক বড় পূজা হয়, সুতরাং এটা সামলানোর জন্য বিসর্জন দিতে হবে সবার বাড়িতে সময় কাটানোর সাধ। প্রথমবার, অনেক কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়। দ্বিতীয়বার আর এটা মেনে নেয়া গেলো না, তাই শরণ নেই ‘নোয়াখাইল্যা’ জনির, আমার হোস্টেল মেটের। তখন হোস্টেলের অনেকেরই জন্ডিস হচ্ছিল, কিন্তু আমার শরীর খাপছাড়ার মত গণ জোয়ারে গা ভাসাতে আপত্তি জানিয়ে বসল। সুতরাং চলল জন্ডিসের ভান করা। কয়েকদিন পর পর ডাইনিং এ গিয়ে অর্ধেক খেয়ে বা না খেয়ে চলে আসলাম। তারপর জনির বানানো ভুয়া ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে সাহসে বুক বেঁধে হাজির হলাম অমল মহারাজের অফিসে। তারপর দুর্দান্ত অভিনয় করে, বাড়ি যাওয়ার অনুমতি জোগার করে নিলাম। সেবার পুজা শুরু হওয়ার আগেই বাড়ি যেতে পেরেছিলাম।

ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার পর বেশ বড় ছুটি থাকে। শেষ পরীক্ষা ছিল ম্যাথ, এমনিতে কনফিডেন্স ছিল ভালো, তার উপর বাড়ি যাওয়ার উত্তেজনা। ফলস্বরূপ পাঁচদিন বন্ধ পেয়েও কিছু পড়া হলোনা। মাঝখানে একদিন গিয়ে ট্রেনের টিকেট কিনে আনলাম, তারপর পরীক্ষার দিন ব্যাগ গুছিয়ে কলেজে হাজির। ত্রিকোণমিতি আসার আগ পর্যন্ত দাপটে আনসার করে গেলাম সব, তারপর ত্রিকোণমিতি অংশে গিয়ে দেখি এক বাও মিলেনা, দুই বাও মিলেনা। অগত্যা কী আর করা, কোন রকমে দুই কোণ যোগ করে তার উপর কষে কোসাইন চালিয়ে খাতার শেষ কয়েকটা পৃষ্ঠা ভরিয়ে প্রথমবারের মত মার্কস ছাড়ার মত বড় আত্মার পরিচয় দিয়ে রওয়ানা দেই কমলাপুরের দিকে।

টেস্টের আগে আগে একটু ঝামেলা হয়ে গেলো। হোস্টেলে শ্বাস নেয়া ছাড়া মোটামুটি দুনিয়ার যাবতীয় ব্যাপার নিষিদ্ধ ছিল, আর আমি আমার রুমমেটদের সাথে মিলে সদ্য শেখা থ্রি-কার্ডস খেলতে গিয়ে সর্বজ্ঞ অমল মহারাজের হাতে ধরা খেলাম। তারপর গার্ডিয়ানদের তলব, আমি আবার গার্ডিয়ান সমেত ঝাড়ি খাওয়ার পথে না গিয়ে দিলাম একেবারে হোস্টেল ছেড়ে। বাবা ভালোই সাপোর্ট দিল, কিন্তু আমার খুবই লজ্জা লাগছিল ‘তাস খেলতে গিয়ে ধরা’ খেয়েছি বলে। তাই ইন্টার শেষ হওয়ার আগে পাক্কা ছয়মাস বাড়িতে যাইনি, কিযে সময় গেছে ওইটা।

ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া ছিল মোটামুটি পুলসিরাত পার হওয়ার মত ব্যাপার, বিশেষত যেবার ট্রেনের টিকেট পেতাম না। বাসের অ্যাডভান্স টিকেট কখনো বিক্রি করতো না, কাউন্টারে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে একটা টিকেট হয়তো জুটল, তারপর বের হতে হয় সায়েদাবাদ থেকে, পার হতে হয় কাঁচপুর ব্রিজ। কিন্তু এখানেই শেষ নয় কিন্তু, বরং শুরু। ভৈরবে এসে মেঘনা পার হতে হবেনা? যে সময়টার কথা বলছি, তখনো নদী পাড় হতে হতো ফেরিতে, এবং সেখানে তিন থেকে আট ঘন্টার লাইন খুবই সাধারণ ঘটনা। তবুও শান্তি মোটামুটি বারো থেকে পনেরো ঘন্টায় বাড়ি পৌছে যেতাম।

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর নিজের ইচ্ছের রাজা নিজেই হয়ে গেলাম, শুধু সেশনালগুলার যন্ত্রণায় চাইলেই সবসময় বাড়ি যাওয়া যেতো না। ওইদিকে সময় গড়িয়ে চলে, ঢাকায়ও নিজের একটা জীবন গড়ে উঠে। আগের মত হয়ত সবসময় বাড়ি যাওয়ার তাগিদ মনের মাঝে কাজ করেনা, তবু কখনো কখনো মন খারাপের মূহুর্তগুলোতে, হঠাৎ জেকে বসা অসহায়ত্বের মূহুর্তে আমার একমাত্র রিসোর্ট ছিল বাড়িতে যাওয়া। বাড়ি বলতে নির্দিষ্ট কোন জায়গা নয়, কারণ বড় হওয়ার পর থেকেই আমি দেখে আসছি আমরা ভাড়াটে। কখনো কয়েক বছর, কখনো বা মাসখানেকের ব্যবধানে বদলে যেত আমাদের প্রতিবেশ আর প্রতিবেশী, তবু বাড়ি আমার কাছে কখনো বদলায়নি।

বাড়িতে গিয়ে হয়ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই দিনের বড় একটা অংশ, অন্তত সন্ধ্যার পরের সময়টা কাটিয়ে দিতাম। প্রায়ই গিয়ে বন্ধুদের কাউকে পেতাম না, তখন বাসায় বসে পেপার পড়ে, টিভি দেখে, একটু পরপর মাকে রান্না হলো কিনা সেই ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে, মায়ের ক্ষুদ্র পরিসরে পূজার জায়গার সামনে গিয়ে নানারকম ধর্মদ্রোহী ঠাট্টায় ক্ষেপিয়ে আর বাবার সাথে নানা বিষয়ে গল্প করে আমার সময় ভালোই কেটে যেত। আর আমরা তিন ভাই আর এক বোনের বিশাল বাহিনী যদি একসাথে ছুটি পেতাম, সে সময়টা শুধু চুপচাপ বসে থেকেও যে শান্তি পেতাম, তা অবর্ণনীয়।

ঢাকায় ফিরে আসার সময়টা ছিল খুবই খুবই খারাপ। প্রায়ই সকালের দিকে ফিরতাম, মা বেচারী অনেক ভোরে উঠে আমার জন্য কিছু বানাত। আমার মন এবং তার প্রতিক্রিয়ায় মেজাজ থাকতো খুবই খারাপ। এবং তার অবধারিত ফল ছিল, আসার আগে দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে মাকে ঝাড়ি দেয়া, বিশেষত কেন এত সকালে নাস্তা বানালো সেটা নিয়ে। হাতে গোণা অল্প কয়েকবার বাদ দিলে ব্যতিক্রমহীনভাবে বাড়ি থেকে ফেরার সময় আমি প্রচন্ড মন খারাপ করে ফিরেছি, সেই ২০০১ থেকে শুরু করে ২০১০ অবধি।

দেশ ছাড়ার আগে আগে দুই/তিন সপ্তাহ পরপরই বাড়ি যেতাম, বাড়িতে যাওয়ার, থাকার এবং ফিরে আসার প্রতিমুহূর্ত দুই চোখ দিয়ে প্রোগ্রাসে গিলতাম। আগের দশ বছরের অভিজ্ঞতায় জানি সবকিছু বদলে যায় একটু একটু করে কিন্তু নিশ্চিত গতিতে, এমনকি আমার ছোট্ট মফস্বল ও পারেনা পরিবর্তনকে ঠেকিয়ে রাখতে। শেষের দিকে একদিন আমার স্কুলের এক প্রিয় স্যারকে চারতলার বারান্দায় দেখে হাত নেড়েছিলাম, কিন্তু তার সাথে সামনাসামনি কথা হয়নি, আর কোনদিন হবেও না। জানি বাড়ি ফিরে যাওয়া হবে কয়েক মাস না হোক অন্তত একবছরের মাথায়, কিন্তু আমার চেনা জায়গা, চেনা মানুষগুলো তাদের নিজস্ব জগত সহ অল্প অল্প করে বদলে যেতে যেতে আমার সে যাওয়া হবে হয়ত একজন পর্যটকের মত।

মেঘনা পার হতে বিরক্ত হওয়ার সময় যদি জানতাম একদিন আটলান্টিক পার হওয়ার সমস্যা এসে যাবে!

[একটা গান প্রায়ই শুনি, কেউ বাড়ি যাচ্ছে বা গিয়েছে শুনলেই তার ওয়ালে গিয়ে পোস্ট করে আসি। এখানেও শেয়ার করা যেতে পারে]


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

বাকিগুলোর কথা জানি না, নটরডেমের ফিজিক্স প্র্যাকটিক্যাল আর কুইজের ধাক্কার জন্য সমবেদনা জানিয়ে গেলাম। শুধুমাত্র নটরডেমিয়ানরাই জানেন "How nice it is!"

সজল এর ছবি

ফিজিক্সের প্রিজম টেস্ট যেদিন ছিল, আমরা পনেরো জন ঢুকেছিলাম, তিনজন বের হয়েছিলাম মেক আপ না খেয়ে। আর আমার কান পুরা লাল হয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড স্ট্রেসে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ফাহিম হাসান এর ছবি

উফফফফ, প্রিজম টেস্টের কথা আর বলেন না! সুশান্ত স্যারকে একবার সবাই মিলে বললাম সমস্যার কথা। উনি মাথা চুল্কায় বললেন," সবার একই সমস্যা? ব্যাপারটা কি, কও তো দেখি !!" দেঁতো হাসি

সজল এর ছবি

নটরডেমের ল্যাবের বেশিরভাগ জিনিস ছিল পুরান। আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, ওই প্রিজমগুলো নিয়েও, খুব সম্ভবত অনেকদিন ব্যবহার করায় এদের সারফেস গুলো মসৃণতা আর স্বচ্ছতা দুইই হারিয়ে ফেলেছিল। আর যত ভোগান্তি যেত আমাদের।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

প্রিজম পর্যন্ত যেতে যেতে 'বৈজ্ঞানিক চোরা পদ্ধতি' বিকাশে ব্যাপক দীক্ষা লাভ করে ফেলেছিলাম। ফল স্বরূপ, আলো'র একটা প্র্যাকটিক্যালেও মেকাপ খাই নাই। চোখ টিপি

কিন্তু এই আমিই মিটার স্কেলের ব্যবহারে পরপর পাঁচবার মেকাপ খাইছিলাম। তারপর ক্ষ্যান্ত দিছি।

সজল এর ছবি

মিটার স্কেলে কানের উপর দিয়ে গুলি গেছে, কিন্তু মেক আপ খাই নাই, এরপর আর মেকআপই খাওয়া হইলনা, আফসুস দেঁতো হাসি । আলোর ল্যাব গুলাতে আমি বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলাম, বিশেষত অন্ধকারের যেগুলো হত, কয়েকটা রিডিং নিতাম, আর বাকিগুলা ক্যালকুলেটরজাত।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

একবারে পয়লা ফিজিক্সের ল্যাবে (সম্ভবত মিটার স্কেলের ব্যবহার) আমাদের ব্যাচের(০৪-০৬) গ্রুপ সেভেনে, মেক আপ না খাওয়া কেবলমাত্র দুইজনের একজন ছিলাম আমি চাল্লু
কিন্তু ১০০% মেক আপ না খাওয়ার রেকর্ড ধরে রাখতে পারিনি। প্রিজমের ল্যাবে চাঁদা না নিয়ে ঢুকাতে যেইপথে আগমন, সরাসরি সেই পথেই নিষ্ক্রান্ত হবার রাস্তা ধরিয়ে দেন ল্যাব ব্রাদাররা মন খারাপ

লবণ মিলানোও ছিল ইন্টারেস্টিং কখনও পেইনের ব্যাপার(আমার প্রথমটা মিলাইতে চার সাপ্তা লাগসিল মন খারাপ )। তবে আমার এক বন্ধু এতে এত চালু হয়ে গিয়েছিল যে, সে সাদা লবণগুলা একবার জিহ্বায় লাগিয়ে স্বাদ নিয়েই বলে দিতে পারত, লবণটা কি। শেষের দিকে লবণ নমুনা পাওয়ার সাথে সাথে আগে সামান্য পরিমান ওর মুখে দিয়ে বিসমিল্লা করিয়ে নিতাম দেঁতো হাসি

ধৈবত

সজল এর ছবি

হে হে, আমি ফিজিক্সে কখনো মেকআপ পাইনি। (চশমার ইমো দিব কিনা ভাবছি খাইছে)
কেমিস্ট্রিতে আমার খালি সাদা লবণ পড়তো, শেষে আমিও এমন এক্সপার্ট হয়ে গেলাম, অন্যদের লবণ মুখে নিয়ে বলে দিতাম এটা কোন লবণ। অবশ্য অ্যামোনিয়াম গ্রুপের একটা লবণ জিভে দিয়ে সাথে সাথে টেপের নিচে দৌড়াতে হয়েছিল।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অর্জুনের রথচালক এর ছবি

নটরডেমের কথা মনে করিয়ে দিলেন দাদা। সব এনডিসিয়ানই দেখি কুইজ সেশনালের গুষ্টি উদ্ধার করে কলেজ লাইফ শেষে আবার তারই জন্যে হা হুতাশ করে। আমার অনুভূতি অবশ্য একটু আলাদা। অনেক চমৎকার বন্ধু আর স্যারের সাহচর্য পেলেও কেন জানি মনে হয় ঐ দিনগুলোতে মধুর চাইতে অম্লের ভাগই ছিল আমার কপালে বেশি। ফের এন্ডিসি মিলেঙ্গা? কাভি নেহি।

সাত্যকি

সজল এর ছবি

এনডিসির সময় খুব একটা উপভোগ করিনি, কিন্তু একাডেমিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে সবচেয়ে বেশি শিখেছি এখান থেকেই। অর্জুনের ড্রাইভারি নিয়ে নিলা দেখি চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অপছন্দনীয় এর ছবি

আমার পুরো শিক্ষাজীবনে ওই দুই বছরই মনে হয় সবচেয়ে উপভোগ্য। অন্ততঃ গ্রুপসুদ্ধ আমরা "বাঁদর গ্রুপ" যা করতাম সেগুলোর দায় পড়তো "ভিকটিম গ্রুপ" এর ঘাড়ে - এটা দেখার মত উপভোগ্য জিনিস খুব কম আছে। দেঁতো হাসি

অর্জুনের ড্রাইভারের নাম মনে হয় সাত্যকি-ই ছিলো, ঠিক মনে পড়ছে না।

সজল এর ছবি

খুবই অন্যায় চোখ টিপি । ক্লাসে বসে মাঝে মাঝে কলম খেলতাম, আর একদিন ধরাও খেয়েছিলাম। বকুলাপ্পুর কাছে যাওয়ার আগেই কিভাবে জানি সবকিছু থেমে গিয়েছিল, নাইলে খবর ছিল।

ড্রাইভারের নাম আমারো মনে পড়ছে না, কৃষ্ণের অন্য নাম সাত্যকি ছিল কি! অবশ্য কৃষ্ণতো ছিল পার্ট টাইম ড্রাইভার।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অপছন্দনীয় এর ছবি

আহা! বকুলাপ্পু তো অমায়িক মানুষ, আমরা টেরেন্স পিনেরোর ঝাড়ি খেয়ে অভ্যস্ত। ওনাকে কলেজ লাইফে ডগ বলতো অনেকে, (ডিরেক্টর অফ গাইডেন্স -> ডি ও জি -> ডগ) কিন্তু ওনার মৃত্যুর খবর শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম সবচেয়ে বেশী।

দশ বছর পরেও সুশান্ত সরকারের "কও তো দেখি", বিদ্যাসাগর মল্লিকের "কথা বুঝসি?" আর "এক্সাইটেড অবস্থায় মিলেঝিলে" (ইলেক্ট্রনের ক্ষেত্রে - অন্য কোন অর্থে না দেঁতো হাসি), এ এন রাশেদার "আহাম্মক ছাগল" ডি কে রায়ের "রোল নাম্বার দশ" আর বকুলাপ্পুর "না" কানে লেগে আছে।

avishek roy এর ছবি

লেখাটা পড়ে চোখে জল চলে এল। তোর দুঃখ দেখে না; বরং এই ভেবে আনন্দে যে আমি একজন ভবিষ্যৎ ড. জাফর ইকবাল স্যারের বন্ধু !!! দেঁতো হাসি

সজল এর ছবি

সজল ডরাইছে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেক কষ্ট করেছেন কলেজ জীবনে। আমরা যারা ঢাকায় বাপের হোটেলে ছিলাম তারা এই কষ্ট চিন্তাই করতে পারতাম না। যাওয়া আসা একটু সমস্যা ছিল। তবে তখন (২০০২-০৩) মিরপুর থেকে কলেজে যেতে ৪০-৪৫ মিনিট লাগতো। এখন শুনি দুই ঘন্টা লাগে! কী অবস্থা!

সজল এর ছবি

কষ্ট করলেও বাড়ি যাওয়ার আনন্দ কী জিনিস সেটা কিন্তু আমরা জানতাম। রোজ বাড়ি গেলে কি আর সেটা জানা যায় চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

রাফি এর ছবি

যা বলার তো ফেসবুকেই বলছি; এইবেলা ভোট দিয়ে যাই...হাসি

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

সজল এর ছবি

ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করলাম না চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

কৌস্তুভ এর ছবি

রামকৃষ্ণ মিশন যে কী জায়গা সেটা আমার বন্ধুদের মুখে অনেক শুনেছি। আপনার জন্য তাই সমবেদনা রইল। পাদ্রীদের নামে যেমন শোনা যায় তেমনও নাকি কিছু কিছু মহারাজের সম্বন্ধে রটে থাকে। আমি ছোটবেলায় একবার চান্স পেয়েও যাইনি, ওই আবদ্ধ পরিবেশে থাকতে চাই না বলে। কী ভালো সিদ্ধান্ত যে নিয়েছিলাম, এখন বুঝি।

অপছন্দনীয় এর ছবি

গেলে একটা অসাধারণ গুণ আয়ত্ত্ব করতে পারতেন। আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে যারা রামকৃষ্ণ মিশনে থাকতো তারা সবাই যে কোন পরিবেশে যে কোন ভঙ্গিমায় ঘুমাতে পারতো, ক্লাসে, প্র্যাকটিক্যাল-এ, বায়োলজি ল্যাবে ডিসেকশান এর সময়ে, এমনকি ভাইভা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে। পরে শুনেছিলাম সকালে প্রার্থনা করার সময় ঘুমাতে ঘুমাতে নাকি ওই অভ্যাস হয়েছে।

সজল এর ছবি

সকালের প্রেয়ারে ঘুমানোর কথা মনে পড়ায় ব্যাপক আনন্দ পেলাম দেঁতো হাসি । তবে এর বাড়তি সুবিধা বাইরে কোথাও পেয়েছিলাম কিনা মনে পড়ছেনা।

@কৌস্তুভঃ আমাদের হোস্টেলে এরকম কিছু শুনিনি, বিশেষত বাসিন্দারা সবাই কলেজ পড়ুয়ায় হওয়াতে হয়ত এই ব্যাপার ঘটেনি। কী কী জিনিস নিষিদ্ধ ছিল তার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা দেই, তাইলে বুঝবেন।
--পড়ার আর ধর্মীয় বইয়ের বাইরে অন্য যেকোন বই
--শর্টস পড়া
--যেকোন খেলার সামগ্রী
--মোবাইল ফোন
--একটার বেশি বালিশ ( খাইছে )
--দরকার ছাড়া অন্যের রূমে যাওয়া
--গান শোনার যন্ত্র
--অনুমতি ছাড়া গেটের বাইরে যাওয়া
আরো তালিকা দেয়া যাবে চাইলে। তবে একটা ব্যাপার ভালো হয়েছে এখানে থেকে, যুক্তিহীন বিশ্বাসের সাথে শেষ সংযোগ ছিন্ন হয় এখানে থাকতেই।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

দ্রোহী এর ছবি

সবাই ঘরে ফেরে। কেবল ফেরা হয় না আমার। মন খারাপ

সজল এর ছবি

ফিরেন এবার হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নিবিড় এর ছবি

স্কুলের মাঝামাঝিতে যখন হোস্টেলে থাকা শুরু হল তখন প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত, স্কুলের শেষের দিকে সেটা অভ্যাস হয়ে গেল আর কলেজের শেষের দিকেতো হোস্টেল কেই বাড়ি বাড়ি লাগত হাসি

সজল এর ছবি

আমারো শেষদিকে হলের রূমেই বেশি আরাম লাগতো, তারপরও বাড়ির জায়গা হল নিতে পারেনি।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।