বিজ্ঞানে লিঙ্গবৈষম্য: Only males can apply

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: বুধ, ১৯/১০/২০১৬ - ১১:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছবিসূত্র: Hulton Archive/Getty Images

গত ১১ই অক্টোবর ছিল বিশ্ব কন্যাশিশু এবং অ্যাডা লাভলেইস দিবস।

১৯৯০ এর খুড়োর কলের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (steampunk) দ্য ডিফারেন্স ইঞ্জিন বইয়ে উইলিয়াম গিবসন এবং রবার্ট স্টার্লিং এর তৈরি করা সমান্তরাল মহাবিশ্বে (parallel universe) অ্যাডা লাভলেইসকে একজন গণিত বিশেষজ্ঞের জায়গায় দেখানো হয়েছিল স্বপ্নাবেশী, বাঁধছাড়া জুয়ায় আসক্ত একজন নারী হিসেবে। তাঁকে নিয়ে অন্য লেখাগুলোয় যদিও নারীবাদী আইকন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের জননী থেকে শুরু করে একজন বিশ্বস্ত সহচরী হিসেবে চিত্রায়িত হয়েছে যেখানে তিনি শুধুমাত্র চার্লস ব্যাবেজের বিষ্ময় প্রতিভাকর্ম টুকে রাখতেন এবং একজন অনুগামী ছিলেন। কিন্তু সত্যিকারের লাভলেইস ছিলেন দুর্দান্ত বুদ্ধিমতী এবং প্রাথমিক কম্পিউটিং এর দর্শনে অবদান রাখেন, যার প্রায়োগিক সম্ভাবনা ব্যাবেজের ধারণার চেয়েও বেশি ছিল।

যখন আমি লাভলেইসের কথা ভাবি তখন আমার অন্তর্গত অনুভূতিটা হয় এক দারুণ অনুশোচনার। এক সমান্তরাল মহাবিশ্ব, যেখানে ছেলেদের সমানভাবেই মেয়েদেরও উৎসাহিত করা হয় এবং মেয়েরাও বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং অংকবিদ হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারত, তার বিপরীতে এই মহাবিশ্বে লাভলেইস কী অর্জন করেছেন? এবং শুধু তিনিই নন, তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য নারীগণর অর্জন কী? এবং ফলে আমাদের সভ্যতা কী খুইয়েছে?

যদিও এই রঙ্গমঞ্চ ভিক্টোরিয় আমলের চেয়ে বেশ উন্নত হয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের সমান্তরাল মহাবিশ্বের অস্তিত্বের চেয়ে এখনও অনেকখানি দূরে আছি। জীববিজ্ঞান, অর্থাৎ আমার ক্ষেত্রে (তর্কসাপেক্ষে যাকে সবচেয়ে নারীবান্ধব ক্ষেত্র ধরা হয়), নারীরা পুরুষের সমপরিমান পিএইচডি ডিগ্রীধারী হলেও পরবর্তিতে একাডেমিক ক্যারিয়ারের গঠন থেকে ঝরে পরে। ২০ শতাংশেরও কম পরিমান পেশাদারী পর্যায়ে টিকে থাকেন। চিত্রটা অন্যান্য ক্ষেত্র, যেমন রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, অংক এবং প্রকৌশলী ক্ষেত্রগুলিতে গিয়ে আরও অনেক করুণ।

এই বৈষম্য কোন পুরাযুগের পিছনে টেনে ধরা শেকড় যা বহুযুগ ধরে আমাদের সমাজব্যবস্থাকে স্থীতিশীল করে রেখেছে তার ফল কিন্তু নয়: কোন শুরুর নারীপুরুষ অনুপাতটা সমান থাকে, কিন্তু নারীরা পরবর্তীতে পিছিয়ে পরে পরিষ্কার সুবিধাবঞ্চনার কারনে। কারনগুলি বেশ জটিল এবং সম্ভবতঃ এরমধ্যে আছে আত্মবিশ্বাসের অভাব, অনিরপেক্ষতা এবং পারিবারিক-বৈরিতাসুলভ বাস্তবতা - দীর্ঘ কর্মঘন্টা, কাজে কতটুকু ভ্রমণ জড়িত, স্থায়ীভাবে চাকুরির নিরাপত্তা এবং সবার উপরে আছে একজন রোলমডেলের অভাবে নিজের তৈরি প্রতি তৈরি হওয়া এক অবিশ্বাসের ঋণাত্মক চক্র।

বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলি একাডেমিয়ায় তৈরি লিঙ্গবৈষম্যের এই অকেজো পাহাড়কে ঠেলে সরানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। যেমন, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় ফান্ডিং পাওয়ার জন্য দেখাতে হয় যে কর্মক্ষেত্রের নিযুক্তি এবং পরিবেশে নারী এবং পুরুষের প্রতি সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে Athena SWAN নিয়ে পড়ে দেখতে পারেন। কানাডা-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শুধুমাত্র নারীদের জন্য কিছু স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। এইসকল ব্যবস্থা নেয়ার ফলে হয়তো ভবিষ্যতে বিজ্ঞানে বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর হবে এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই একটা আরও ফলনক্ষম বিজ্ঞানক্ষেত্রে এসে উপনিত হব। ভবিষ্যতের এই ভাবনা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের অবস্থাটা একটু দেখে নেই।

প্রথমেই বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞান চাকুরির বিজ্ঞাপন দেখে নিন এই লিংক থেকে। বিজ্ঞাপনের মাঝামাঝি এসে দেখবেন Additional Job Requirements এর জায়গায় লেখা আছে Only males are allowed to apply। নিচের ছবিতে লাল বাক্স করা অংশ দেখুন। শুধু এই চাকুরির ব্যাপারেই না, বেশ কিছু অনুজীববিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন বা উদ্ভিদবিদের চাকুরির বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একইরকম 'প্রয়োজনীয় যোগ্যতা' তুলে দেয়া হয় বাংলাদেশী পত্রিকাগুলোতে। বাংলাদেশের কোন আইন-পরিপন্থি কি এই বিজ্ঞাপন? আমার জানা নাই। কিন্তু এমন বৈষম্য যতদিন দূর করা না যাবে ততদিন কি নারীরা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করতে খুব বেশি আগ্রহী হবেন?

only males can apply 2

আমি আসলে আশা করতে পারিনা যে বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলিতেই যেখানে নারীদের অবস্থান বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এখনও, সেখানে আমার দেশেও অবস্থার সহসাই সমুহ উন্নতি ঘটবে। তবে আশা রাখা উচিত এবং সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ক’দিন আগে জাতিসংঘের একটা পোস্টার দেখলাম যেখনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় প্রধান এবং স্পিকার নারী। খুব ভাল বার্তা আমাদের জন্য। কিন্তু আসল সামাজিক অবস্থাটা কী সেটা উপরের বিজ্ঞাপনটা থেকেই বোঝা যায়। দেশের সাধারন মানুষের কাছে এসে অবস্থাটার কোন প্রতিচ্ছায়াই পরেনা। এখানে নারীরা দারুণভাবে পিছিয়ে। যেন, একটা সমাজ নামক বাইসাইকেলের সামনের চাকাটা ভাঙা, তাই সমাজ হেঁচড়ে চলছে!

আরেকটা বিষয় আমি খুব খেয়াল করি। এখন বাংলায় অনেকগুলি বিজ্ঞান সাময়িকী / ওয়েব পোর্টাল / অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশ হয়। আপনি গুনে দেখতে পারবেন সেখানে নারী লেখকের সংখ্যা কত। আমি হলফ করে বলতে পারি ১০ জনের বেশি হবেন না। যেখানে পুরুষ লেখকের সংখ্যা প্রচুর। ফেইসবুকে বিজ্ঞান নিয়ে পোস্ট দেয়া কতজন নারী পাবেন? সচলে কতজন নারী বিজ্ঞান লেখিকা? এই অবস্থাটা কেন? দোষটা সম্ভবত আমাদের সবার, আমরাই হয়তো নারীদেরকে বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করতে বাঁধা দেই। তাদের উৎসাহিত করিনা। সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকা বিজ্ঞান সাময়িকী বের করে বিক্রি শুরু করেছে। সূচীপত্রের ছবিটা দেখুন নিচে। একজন নারী পেয়েছেন? বাংলাদেশের এতো ধনী পত্রিকাটি কোন নারী বিজ্ঞান লেখক খুঁজে পেলোনা? নারীকে উৎসাহ না দেয়ার এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে নারীদের বিজ্ঞানে উৎসাহী হওয়াটা কল্পনাই থেকে যাবে।

বলে রাখা উচিত বিজ্ঞানে লিঙ্গবৈষম্য বেশ প্রকটভাবে দেখা গেলেও সামাজিক অন্যান্য জায়গায় এসে বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলি বেশ কার্যকরভাবেই বৈষম্যকে দূরীকরণে উন্নতি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থাটা তেমন নয়। সামাজিকভাবেই নারী এতোটা পিছিয়ে যে বিজ্ঞানের জন্য আলাদাভাবে বলতে গেলে হয়ত ব্যাপারটা হাস্যকর শোনায়। প্রায়ই দেখা যায় আমরা আমাদের মেয়েদের মেডিকেল পাশ করিয়ে ডাক্তারী করতে দেইনা। বিজ্ঞান পাশ করিয়ে বিজ্ঞানী হতে দেয়াটা তো কষ্টকল্পনা।

তবে পরিবর্তনগুলি সবক্ষেত্রেই আনতে হবে বলে মনে করি। বিজ্ঞান পড়ায় নারীদের যেমন উৎসাহ দিতে হবে তেমন চাকুরির বৈষম্যও দূর করতে হবে। বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলিও কিন্তু ধীরে ধীরে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছে গবেষণাক্ষেত্রে। একদিনে তাদের নারী নোবেলধারী তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। মেয়েদের জন্য বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশেষ সুবিধা রাখা প্রয়োজন। স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা, চাকুরিতে সুবিধি দেয়া - এসব পরিবর্তন খুব কঠিন কিছু নয়। অনেক নারী বিজ্ঞান পড়া এবং এতে গবেষণার সুযোগ পেলে এভাবে বিশ্বখ্যাত নারীবিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠবেন কেউ কেউ, যাদেরকে রোলমডেল হিসেবে পরবর্তী প্রজন্ম অনুসরণ করতে পারবে।

বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন যেমন একজন ছেলে দেখে, তেমনিভাবে একজন মেয়েও দেখতে পারতে হবে। আর সেটা শুধু স্বপ্নই নিশ্চয়ই থাকবেনা যদি আমরা চেষ্ট করে তাদের জন্য বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করতে পারি। সমান্তরাল মহাবিশ্বের অন্য মেয়েটি যেখানে একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, সেখানে এই মহাবিশ্বের মেয়েটিকে আমরা আটকে রাখব কেন? বিজ্ঞানী শব্দটি উভয়লিঙ্গ।

[লেখাটির কিছু অংশ গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত Promoting equality in science: what works, and what doesn't? (জেনিফার রন রচিত) লেখাটি থেকে ভাবান্তর করা হয়েছে।]


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বুড়া প্রফেসরদের কাছে শোনা কথা, কাজেই সূত্র আপাতত এটাই।

‌‌ 'সেমিকন্ডাকটর এর প্রথমদিকে একটার পর একটা মাস্ক (অনেকটা ছাপার ডাইয়ের মত) ধরে ধরে আলো মারতে হতো (UV expose) ট্রাঞ্জিস্টর বানানোর জন্য -অনেকটা চার রঙে একটার পর একটা ছাপার মত। এখানে একটা ধাপের সাথে পরের ধাপের জিনিস ঠিকঠাক লাইনে রাখতে হত (alignment)। সেটা করা হত হাতে স্ক্রু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। একটা সময় দেখা গেল ছেলেদের জিনিসগুলো যাচ্ছেতাই হচ্ছে, এরা alignment করতে একদমই কাঁচা। এই কাজটায় মেয়েরা খুব দক্ষ হত, ছেলেরা মেয়েদের সাথে পারত না।"

‌ ‌ উপরের কথাগুলোর মানে এই না যে মেয়েরা কেবল সূক্ষ্ম কাজে বা প্রোডাকশন লাইনে ভালো। বিজ্ঞান নিয়ে মৌলিক গবেষণাতে নারীরা সমানতালে (অনেকসময় অনেক সমানে!) কাজ করে চলেছেন। ইউএসএর আমাদের এদিকটার ছোট বাংলাদেশি কম্যুনিটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া) মানুষটা একজন নারী। তিনি এমডি শেষ করে ক্যান্সার রিসার্চে জড়িত একটা ইন্সটিটিউটের বড় একটা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

‌ ‌ তবে, আক্ষেপের বিষয় হল আমাদের দেশের মেয়েরা নিজেরাও অনেকসময় বুঝতে পারে না তাদের ক্ষমতা কতটা। পারিপার্শ্বিকতার কারণে, তাদের মাথা ভেতরও ঢুকে যায়: "এটা মেয়েদের কাজ না। এত ঝামেলা সামলানোর কাজগুলো ছেলেদের জন্য।‌ "‌

‌ একটা সময় বাংলাদেশে স্কুলের শিক্ষক আর বাংকের চাকরি -এ দু'টোকেই নারী কর্মজীবীর জন্য কাজ হিসেবে ধরা হত। যাই হোক, আমরা সামনে এগিয়েছি বেশ খানিকটা। সামনে আরও আলোকজ্জ্বল দিন আসুক।

বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হোক নারী-পুরুষ উভয়ের অবদানে আর স্বীকৃতিতে।

শুভেচ্ছা হাসি

সজীব ওসমান এর ছবি

প্রভাতী'র কথা বলছেন? তিনি তো নমস্য মানুষ!
আপনার কামনা সফল হোক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এক সাবেক সহপাঠিনী বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হবার পর আমেরিকাতে দুইটা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন। তার স্বামী, তারই সাবেক সহপাঠী। তারা থাকেনও আমেরিকাতেই। এই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রমহিলা জীবনে কোনদিন কোন চাকুরি বা ব্যবসা করেননি। তার স্বামী তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন যে চাকুরি বা ব্যবসার ব্যাপারে তিনি কোন সাহায্য করবেন না এবং সংসার ও বাচ্চাকাচ্চা প্রতিপালনের ব্যাপারে কোন অবহেলা সহ্য করবেন না। এখানে স্বামীপ্রবরের আচরণে অবাক হবার কিছু নেই, ভদ্রমহিলার পরিণতিতেও না।

আমার সাবেক সহপাঠিনী/বান্ধবীদের মধ্যে এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। অথচ তারা কেউই মেধায় পিছিয়ে নন্‌। কারো কারো অ্যাকাডেমিক ফলাফল তো চোখ কপালে ওঠার মতো। বিজ্ঞান বিষয়েই তারা পড়াশোনা করেছেন, অন্তত স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত, কিন্তু তাদের পরিণতি হতাশাজনক।

তাদের এই অবস্থা আমাকে যতোটা না হতাশ করে তারচেয়ে বেশি ক্রুদ্ধ করে। কারণ, তারা কেউই অসহায় নন্‌, এবং সমাজের স্ট্রাগলিং শ্রেণীর নন্‌। তাদের বড় অংশ উত্তর আমেরিকাতে স্থায়ী হয়েছেন এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত মাস্টার্স করা। তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো, মেরুদণ্ড সোজা করে লড়াই করা, বিদ্রোহ করা - সবই সম্ভব ছিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের বেশিরভাগ জন আগেই মরে ছিলেন, এবং বাকিরা এমনটাই হতে চেয়েছেন।

নারীর মনোজগতে এই স্থায়ী দাসমনোবৃত্তি তৈরি করার দায়ভার পুরোটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের। তবে এই মনোবৃত্তিকে ঝেড়ে ফেলার বিদ্রোহটা নারীকেই করতে হবে।

নিঃসন্দেহে সারা দুনিয়া জোড়া নারীরা উপরের অনুচ্ছেদে বলা নারীদের মতো না। তাদের খুব অল্প জন সুযোগ পান, বাকি সবাই কোন সুযোগ তো পান না-ই, বরং সব রকমের বাধার সম্মুখীন হন। নিজেদেরকে সভ্য, শিক্ষিত, মানবিক, প্রাজ্ঞ বলে দাবীদার এখনকার মানব সমাজ এখনো পর্যন্ত কী করে নিজের শরীরের অর্ধেকটাকে প্যারালাইজ করে রাখে সেটা আমার বোধে আসে না। কী সীমাহীন এই অপচয়!

শিশিরকণা এর ছবি

একজন নারীর সাফল্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয় সে একটি সুখী সংসার গড়তে এবং ধরে রাখতে পারলো কি না তা দিয়ে। পেশাগত বা বিজ্ঞান বা গবেষনায় সাফল্য এর উপরে উপরি ধরে নেওয়া হয়। পেশাগত জীবনে ব্যার্থতার জন্য নারীকে যত না সমালচনা শুনতে হয়, সংসারে ফার্নিচারের উপর দুদিনের ধুলো জমা দেখলে তার থেকে অনেক বেশি কটু কথা শুনতে হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মানুষ ভয় বা নেগেটিভ স্টিমুলাস দ্বারা তাড়িত হয় বেশি। কাজেই নারী যদি তিক্ততা এড়াতে নতুন জীবন রক্ষাকারী ঔষধের ফর্মুলার আবিষ্কারের বদলে স্বামী প্রবরের পেট পূজার জন্য নতুন রেসিপি আবিষ্কারে বেশি মনোযোগী হয়, তাহলে আসলে কার দোষ?
আর নারীকে এই সমালোচনা শুনতে হয় শুধু পুরুষের থেকে নয়, অন্য নারীর থেকেও, যারা সংসার টুকিটাকি কাজেই নিজের সামর্থ্যের সীমা টেনে বসে আছেন, তার বাইরের জগত সমন্ধে জানেন না বা কেয়ার করেন না। নিজ গন্ডিতেও যদি কারও অবদান সমাদৃত হবার বদলে ধিক্কার পায়, তবে উৎসাহ কোথা থেকে আসবে?
খুব সৌভাগবান কিছু নারী যারা বিজ্ঞানে অবদান রাখতে পেরেছেন, তারা অন্তত একটু ছোট্ট কোকুন পেয়েছেন, যেখানে কিছু আম্নুষ তাদের বাইরের ঝড় ঝাপটা থেকে আড়াল দিয়ে তাকে এগোতে দিয়েছেন। নতুবা এত বিরুদ্ধ স্রোত ঠেলে এগুতে যে অপরিসীম মনোবল, ধৈর্য্য আর এনার্জি ব্যয় করেন, সে পরিমাণ এফোর্ট কোন পুরুষ দিলে নোবেল প্রাইজের আগে থামতেন না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সজীব ওসমান এর ছবি

মন খারাপ

সজীব ওসমান এর ছবি

মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

সমান ভাবে শুরু করার পরও, নারীর পিছিয়ে পড়ার কারগুলো আমি এখন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি,আমার বয়স এখন ২৯, আমি পশ্চিমা একটি দেশে পিএচডি করছি, আমি এখন সন্তান ধারণ করিনি, এখন পিএইচডির পরপরই আমার সে ইচ্চা আছে, আমার পরিবার প্রচন্ড রকম হেল্পফুল, আমার চেয়েও বেশি, কিন্তু এটা আমি বুঝি এই প্রচন্ড প্রতিযোগিতার সময়ে, আমার সবচেয়ে বেশি কাজ করার সময়েই আমি প্রফেশনাল জগৎ থেকে দূরে যাব, নিজের ইচ্ছা তেই যাব, আমি মনে করি এই জায়গাটা আমাকে পিছিয়ে দিবে,কেউ কেউ তারপরো সমান তালে এগিয়ে যান, কিন্তু সেটি সবার জন্য এমনকি গড় হিসেবেও সত্য নয়, বা সম্ভব নয়, এই জায়গা গুলোতে চিন্তা বা গবেষণার দরকার আছে বলে মনে করি।

অতিথি

সজীব ওসমান এর ছবি

বাস্তব কিছু সমস্যা তো আছেই। বিদেশী কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনি নারীরা সন্তান পালনের জন্য ৫-৭ বছর গ্যাপ দিয়ে তারপর আবার পড়াশোনা করে পরে প্রফেসর হয়েছেন। আমাদের জন্য তো এমনটা হতে পারা প্রায় কল্পনার মত!

সোহেল ইমাম এর ছবি

সাহিত্য শিল্পের ক্ষেত্রেও একেবারে প্রথম সারির নাম গুলোর মধ্যেও নারী নেই। ঠিক যাদের কিংবদন্তী হিসেবে ভাবা হয় সেই সারিতেও নারী কয়জন? আমার মনে হয় এই দিকটা নিয়ে একটা বড় সড় গবেষনার দরকার আছে। মানব সভ্যতার অর্ধেক অংশটা কিন্তু আমাদের হাতেই পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে আছে সেটা নিয়েও গভীরভাবে ভাবার দরকার আছে। এ নিয়ে কি কেউ গবেষনাধর্মী কিছু লিখেছেন?

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সজীব ওসমান এর ছবি

সেটাতো বটেই। কেউ লিখুন। লিখতে থাকুন। আর এমন কোন গবেষণাধর্মী লেখা পেলে জানাবেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সকল ভালোবাসাহীনা'র জন্য ভালবাসা! চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।