ভালবাসার বাজার ব্যবস্থা

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৬/২০০৭ - ৬:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoকৈশোরে যখন মাত্র ডানা গজাতে শুরু করেছে, নিজেদের পাড়া ছেড়ে সুন্দরী মেয়ের খোঁজে পাশের পাড়ায় বৈকালিক হাঁটহাঁটি শুরু করেছি তখন বয়স্করা নিজেদের চোখ আরো লাল করে তুললেন। তাদের বক্তব্য সোজাসাপটা। প্রেমের শেকড়ে কুড়াল মারা দর্শন তাদের; ‘প্রেম ভালবাসা হচ্ছে নাটক-নভেলের কল্পনা। লেখকরা ওদের গল্প চালানোর জন্য এসব বানানো কাহিনী বাজারে ছাড়ে’।

লেখকদের মহান উদ্দেশ্যকে অপমান করে সন্তানকে পথে আনার জন্যই কি অভিভাবকদের এ মহান মিথ্যা? নাকি সত্যি সত্যি কিছু কিছু লোক সমাজে প্রেম-ভালবাসার জীবাণু ছড়ায়, নিজের পকেট মোটা করতে?

পুরুষে নারীতে ভালবাসা-প্রেম ছড়িয়ে দিয়ে কারা মুনাফার ফসল নিজের গোলায় তোলে? আদৌ কি কেউ তোলে? জটিল প্রশ্ন।

ভালবাসা ঠেকাতে, পৃথিবীতে লাইলি মজনুর সংখ্যা কমাতে মধ্যবিত্ত বাঙালি ও রক্ষণশীল পরিবারগুলো কত না কষ্ট করে। কত পাহারা, কত মার-ধোর, ত্যাজ্য করে দেয়ার হুমকি, মানসিক নির্যাতন। তবু ফি বছর স্কুল না পেরোতেই ছেলে-মেয়েরা জোড়ায় জোড়ায় শিরি-ফরহাদ হয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে কে তাদের উসকে দেয়? অথবা, এরকম উস্কিত মজনুন-লাইলির সংখ্যা যদি কমে যায়, তবে কাদেরকে ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে বসতে হবে?

অভিভাবকদের হুমকিগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। রেবেকা মিড তার ‘লাভ ফর সেল’ বইতে লিখছেন, “প্রেমকাতর, আশায় বুক বাঁধা বা নিরাশায় বুক ভেঙে যাওয়া রোমান্টিকদের ছাড়া কিভাবে চলতো রেস্টুরেন্ট, বার, ক্লাবের ব্যবসা; ফিল্ম, বই, মিউজিক ও ম্যাগাজিন ইত্যাদি বিক্রিরতো কথাই ওঠে না”।

সুতরাং ভালবাসা ছাড়া - অথবা, অন্ততঃ এই ধারণাটি যদি মানুষের মনে টিকে না থাকে - তবে আমাদের সাংস্কৃতিক অর্থনীতি ধ্বসে পড়বে।

তারপরও প্রেম-ভালবাসার বাজার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হই না। অন্ততঃ এ্যকাডেমিক আলোচনায় উঠে আসে না। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-তে বিক্রেতারা নানা কিসিমের পণ্য বেচে প্রেমিক-প্রেমিকা, হবু, বা প্রেমের লাইনে থাকা মজনু-লাইলির কি পরিমাণ অর্থ খসাচ্ছে সে প্রশ্ন কেউ তোলে না।

শুধু কি কবিতা পড়ে উদাস হওয়া? গল্প পড়ে দুঃসাহসী হয়ে উঠা? পানির দরে টাকা ঢেলে রেস্টুরেন্টের নিভৃত কোণ বরাদ্দ করা? আরও কতকিছু? প্রেম-ভালবাসা চালু রাখতে, বজায় রাখতে বেজায় অর্থের চালান দরকার। ড্রেসিডেলের কামিজ আর রং-এর ফতোয়া। শুধু নিজের জন্যই কিনলে হয় না। তের পার্বনে প্রেমাস্পদকেও উপহার দিতে হয়। ফরাসী সৌরভের সাথে তখনই তো পরিচয় হয়। শেভিং লোশনটার গন্ধ কিরকম হলে যেন পুরুষালী হয়? লেটেস্ট মোটরসাইকেল নিয়ে একবার বাসার সামনে চক্কর দিতে না পারলে হিরোর ক্যারেক্টারটাই ফুটবে না। সুতরাং? প্রেমিকের থাকে টাকা জোগাড়ের নানা ধান্দা। গ্রিটিংস কার্ডের ব্যবসা-তো দাঁড়িয়ে আছেই এসব প্রেমে গদগদদের মানিব্যাগের ভরসায়। হলুদ ক্যাবে করে ঘন্টা চুক্তিতে আশুলিয়া? রেস্ট হাউস বা পাঁচতারা হোটেলের রুম ভাড়াও এই ভালবাসার বাজারের আওতায়। অনলাইন চ্যাটিং, ডেটিং, ম্যাচমেকিং, বাঁধন বা ঘটক পাখিভাই এও প্রেম-পরিণয়ের বিপননের অংশ।

তবে মালাবদল হলেই ভালবাসার অর্থনীতি মন্থর হয়ে যায় না। বরং তখনই পালে লাগে হাওয়া। ভালবাসার রোমান্টিকতার সাথে তখন যুক্ত হয় দায়িত্ব। শাড়ি, চুড়ি, ঘড়ি, গাড়ি থেকে শুরু করে বাড়ি পর্যন্ত তখন বাজারের ফর্দে। ভালবাসা যত বেশি ফর্দটাও তত লম্বা।

বাজারটা অবশ্য শুধু যারা জোড়া খুঁজে পেল তাদের নিয়েই না, যারা জোড়া খুঁজে ব্যর্থ হলো তাদেরকে নিয়েও। ব্যর্থরাই বরং টাকা উড়াতে আরো হৃদয়বান হয়। তাদের বাজির দান থাকে বড়। ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। কারণ এক্ষেত্রে খদ্দেরের মূল আকর্ষণ অপব্যয় আর অপব্যবহার। মদ আর মাদকের অপব্যবহার তো আছেই, জ্যোতিষী, ডাক্তার, মাস্তান-বন্ধু এসব খাতে অপব্যয়ও আছে প্রচুর। দেবদাস, চন্দ্রমুখীদের কাছ থেকেই ব্যবসায়ীরা বরং বেশি কড়ি নিজের কোঁচড়ে টানতে পারে।

শুরুতে ভেবেছিলাম, ভালবাসার বাজারে ব্যবসা করছে হয়তো গুটিকয় পেশাজীবি। এখন দেখছি প্রশ্নটা বিপরীত দিক থেকে করতে হবে। পুরুষ ও নারীর ভালবাসা থেকে পয়সা বানায় না এমন ব্যবসায়ী কে কে আছে?


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ছবির এই দশা কেন? কর্তৃপক্ষভাই রক্ষা করেন।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ছবি ঠিক করে দিলাম। এটার একটা চীর ব্যবস্থা করা দরকার

====
মানুষ চেনা দায়!

দ্রোহী এর ছবি

পোষ্টের বিষয়বস্তুর সাথে পুরোপুরি সহমত। এবং লেখার ইতি টানতে শমচৌদা যে প্রশ্নটি করেছেন [এখন দেখছি প্রশ্নটা বিপরীত দিক থেকে করতে হবে। পুরুষ ও নারীর ভালবাসা থেকে পয়সা বানায় না এমন ব্যবসায়ী কে কে আছে?
]সেটা আসলেই ভাবায়।

অরূপ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! চলুক
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

নজমুল আলবাব এর ছবি

মজনুন-লাইলির

এইটা দেইখাই আমার টাশকি খাওয়া অবস্থা। বড় মিয়া আমার নাম জানে ঠিক আছে তুলির নাম কেমনে জানলো! চশমা পরলাম... হাসি

তবে মালাবদল হলেই ভালবাসার অর্থনীতি মন্থর হয়ে যায় না। বরং তখনই পালে লাগে হাওয়া। ভালবাসার রোমান্টিকতার সাথে তখন যুক্ত হয় দায়িত্ব। শাড়ি, চুড়ি, ঘড়ি, গাড়ি থেকে শুরু করে বাড়ি পর্যন্ত তখন বাজারের ফর্দে। ভালবাসা যত বেশি ফর্দটাও তত লম্বা।

এইটা ডেঞ্জার হইছে। মন খারাপ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হাসি
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

উৎস এর ছবি

ডিমান্ড-সাপ্লাই লজিক খাটানো যায়? মাঝে মাঝে যেমন পত্রিকায় খাবারের ছবি দেখে আমার লোভ লাগে, ক্ষুধার্ত থাকলে, প্রায় নারীর জন্য ভালোবাসার সমানই।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার আগের লম্বা কমেন্টটা গেল কই?
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

চাল্লু
....................

তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হা হা হা। সবার মন্তব্যে‌ হাসলাম। আর এসএম৩ কে ধন্যবাদ।
আরিফের মন্তব্য কোথায় খোয়া গেল, তা তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।