অসমাপ্ত আত্মজীবনী

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: সোম, ২০/০৪/২০১৫ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিনি রাজনীতির মানুষ, লেখক নন। শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে, ভাষা আর অলংকারে, উপমা আর রূপকের কারুকার্যে মন ভোলানো লেখনি তাঁর ছিল না। কিন্তু তারপরেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। সহজ মানুষের সহজ বাক্য, সহজ শব্দ, সহজ ভাষা, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা, ঠিক তাঁর ভাষণগুলোর মতোই। বন্ধুবান্ধব আর স্ত্রীর অনুরোধে জেলখানার বসে তিনি লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁর অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত গল্প। বইয়ের একেবারে শুরুতেই সরল স্বীকারোক্তি, ‌‌"লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।"

‘শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।’ বইটিকে ফ্ল্যাপে এভাবেই পরিচিত করে দেয়া হয়েছে। লেখক যখন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তখন এর চেয়ে অধিক ভূমিকার আর কী প্রয়োজন থাকতে পারে!

বইটা শেষ করতে হলো বেশ ভালো রকমের অতৃপ্তি নিয়ে। অতৃপ্তির কারণ আসলে নামেই বোঝা যায় - অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, কোনো উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারেই হুট করে শেষ হয়ে গেল বইটা। এই অঞ্চলের রাজনীতি যখন ধীরে ধীরে নানা কুশীলবের অংশগ্রহণে জটিল হয়ে উঠছে, পশ্চিম পাকিস্তানি আর তার ধামাধরা স্বার্থান্বেষী বাঙ্গালিরা যখন সদ্য স্বাধীন দেশে ইংরেজ আমলের ঔপনিবেশিক পন্থা টিকিয়ে রেখে নতুন ভাবে শোষণের জাল বিস্তার করছে, গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন একটু একটু করে গোটা বাংলাদেশের শেখ মুজিব হয়ে উঠছেন ঠিক তখনই শেষ হয়ে গেল বইটা।

বইটির রচনাকাল ১৯৬৭ সাল হলেও এই বইয়ে মূলত উঠে আসার সুযোগ পেয়েছে লেখকের রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে রাজনৈতিক যৌবনের শুরুর দিককার অংশ। পাকিস্তানের আন্দোলনের সময়কার রাজনীতি সচেতন এক কিশোর মুজিব থেকে ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের কড়চা পর্যন্ত মূলত এই বইয়ের কলেবর। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের খুব সামান্য অংশের সাথেই, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একেবারে শুরু দিকের অংশের সাথেই কেবল পরিচিত করায় এই বইটি। এখানে গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী সমাজ সচেতন কিশোর শেখ মুজিবের পরিণত বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার কিছুটা আভাস পাই। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় কিছুই আমরা পাই না। কিন্তু এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটার সাথে, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন আর উপলব্ধির সাথে, তাঁর চেতনা আর স্বপ্নের সাথে, তাঁর বোধ আর বোধের বিবর্তনরেখার সাথে পরিচিত হয়ে উঠি। কোনো রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট বা বিশাল প্রভাবশালি ধনাঢ্য কোনো পরিবারে জন্ম নেন নি তিনি। গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারে জন্ম নেয়া একজন কীভাবে হয়ে উঠলেন বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক? যেসব নেতাদের কাছে রাজনীতির পাঠ নিয়ে কিশোর মুজিব উঠে এসেছেন ধীরে ধীরে, মঞ্চের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে কীভাবে তিনি তাঁদের ছাপিয়ে আরও অনেক উপরে উঠে গেলেন? কীভাবে হয়ে উঠলেন নেতাদের নেতা? সাম্প্রদায়িকতাকে উপজীব্য করে শুরু হয়েছিল যে আন্দোলন, সেই পাকিস্তান আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে যাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা তিনি কীভাবে আর কেন হয়ে উঠলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলার গণমানুষের নেতা?

শেখ মুজিব রাজনীতি করেছেন মূলত মানুষের জন্য, আর কিছু না বোঝা গেলেও এইটুকু অন্তত বুঝতে পারা যায় এই তিনশ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বই থেকে। আর এই জন্যই তাঁর কোনো পিছুটান ছিল না, স্বার্থের জন্য আপোষের মনোভাব ছিল না, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার দায় ছিল না। যা করেছেন নিজে বিশ্বাস করে করেছেন। এজন্যে বারবার তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি গোপন রাজনীতি বা পালিয়ে থেকে বিবৃতি দেয়ার রাজনীতি পছন্দ করতেন না। বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি শোষক শ্রেণির দ্বারা। পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেই আন্দোলনের ফসল পাকিস্তানে একেবারে শুরু থেকেই তিনি জেলের ভেতর কাটিয়েছেন অধিকাংশ সময়। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তা তিনি পাননি, বরং সাদা চামড়ার বদলে কালো চামড়ার শোষণ পেয়েছে জনগণ। দেখলেন, শাসকের নাম বদলেছে রঙ বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায় নি। যাদের সাথে নিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকের বিপক্ষেই তাই তাঁর আর তাঁর সমমনাদের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো।

দুইশ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এই অঞ্চলের মুসলমান আর হিন্দুর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরাজমান যে অসন্তোষ তা কেবল বৃদ্ধিই করেছিল। তার চূড়ান্ত রূপ পায় সম্ভবত যখন ধর্মের নামে দেশভাগের আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ল ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এই অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য উন্নতির আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল কিনা, সেই বিতর্ককে এই লেখায় সাবধানে পাশ কাটিয়েই বলা যায়, কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন সাধারণত কোনো ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। দেশভাগ আর তার আগে পরের সময়ের কথা বার বার উঠে এসেছে। উঠে এসেছে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার কথা, কখনও ঢাকায়, কখনও কোলকাতায়, কখনও এপারে, কখনও ওপারে। কখনও রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু-মুসলিম অসন্তোষ উস্কে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। এখনকার মতোই ইমাম, হুজুর আর পীরসাহেবেরা অংশ নিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুঘটক হিসেবে। জনগণকে ধর্মের নামে আলাদা করতে চেয়েছেন বারবার, সাম্প্রদায়িক নেতা আর অনেক ধর্মগুরু। এইসব ঘটনাই সম্ভবত ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী শেখ মুজিবকে বুঝতে শিখিয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ না গড়তে পারলে আসলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

পাকিস্তান আমল থেকেই শুরু হয় যে কোনো ইস্যুতে ভারত আর ইসলাম ধ্বংসের জুজু দেখানো শুরু হয়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সেই রাজনীতি করে যাচ্ছে এখনও সেই পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভূত। ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে গুলি চালানোর পরে সরকার থেকে বলা হয়, ‌‌"হিন্দু ছাত্ররা কলকাতা থেকে এসে পায়জামা পরে আন্দোলন করেছে।" ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করেছেন পাকিস্তান আসলে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। দুঃখ করেই তিনি লিখেছেন, ‌‌"দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান আন্দোলনের যারা বিরোধিতা করেছিল, এখন পাকিস্তানকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ধুয়া তুলে রাজনীতিকে তারাই বিষাক্ত করে তুলেছে। মুসলিল লীগ নেতারাও কোনো রকম অর্থনৈতিক ও সমাজনৈতিক প্রোগ্রাম না দিয়ে একসঙ্গে যে স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত রইল, তা হল 'ইসলাম'।" অবাক লাগে, ধর্ম বেঁচে যারা মূলত জীবন ধারণ করে, তাদের চারিত্রিক গুণাবলি এত বছর পরেও খুব একটা বদলায় নি। যুক্তফ্রন্টের আর মুসলিম লীগের নির্বাচনের সময় মুজিবের সাথে জনপ্রিয়তায় টেক্কা দিতে না পেরে ঠিক এখনকার মতোই ধর্মের ট্রাম্পকার্ড খেলার চেষ্টা করে মুসলিম লীগ। লেখকের ভাষায়, ‌‌"... মুসলিম লীগ যখন দেখতে পেলেন তাদের অবস্থা ভালো না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মাওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। ... ... এক ধর্মসভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, 'আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে'। সাথে শর্ষিনার পীর সাহেব, বরগুনার পির সাহেব ... ... সবাই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না।" কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য রাজনীতি করতে করতে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বাঙালিকে এইভাবে ধোকা দেওয়া যাবে না।

আমি বইটি থেকে মূলত সেই সময়ের শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে চেষ্টা করেছি। পাতার পর পাতা থিসিস লিখে আর গবেষণা করে মাঠের রাজনীতিতে যারা কিছুই করতে পারেন নি তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন নি তিনি। তিনি কাজ করতে করতে শিখেছেন, ভুল হলে স্বীকার করেছেন, সংশোধনের চেষ্টা করছেন। বলেছেন এভাবে, ‌‌"আমার যদি কোনো ভুল হয় বা অন্যায় করে ফেলি, তা স্বীকার করতে আমার কোনোদিন কষ্ট হয় নাই। ভুল হলে সংশোধন করে নেব, ভুল তো মানুষেরই হয়ে থাকে। ... ... আমি অনেকের মধ্যে দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। ... ... আমি চিন্তা ভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয় সংশোধন করে নেই। কারণ যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।"

আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে সেই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতার সাথে বিভিন্ন তাঁর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব নেতাদের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা, যাঁর হাত ধরে তিনি রাজনীতি শিখেছেন। লেখক একেবারে শুরুর দিকেই বলছেন, ‌‌"ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।" বার বার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। কিন্ত অবাক লাগে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একেবারে শুরুর দিকে যখন শেখ মুজিব একাবেরাই বিশিষ্ট কেউ হয়ে ওঠেন নি, তখনও তাঁর নিজের মত আর বিশ্বাসের প্রতি ছিল ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাস। এক সভার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলছেন, ‌‌"তিনি আনোয়ার সাহেবকে একটা পদ দিতে বললেন। আমি বললাম কখনোই হতে পারে না। সে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোটারি করেছে, ভালো কর্মীদের জায়গা দেয় না। কোনো হিসাব নিকাশ কোনোদিনও দাখিল করে না। শহীদ সাহেব আমাকে বললের Who are you? You are nobody. আমি বললাম, If I am nobody, then why you have invited me? You have no right to insult me. I will prove that, I am somebody. Thank you, sir. I will never come to you again." অবাক হয়ে ভাবতে হয়, কতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকলে একটা ছোট্ট মহকুমার সামান্য একজন কিশোর রাজনীতিবিদ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতার সামনে এভাবে নিজের মতামত দিতে পারে!

পশ্চিম পাকিস্তানি তথা অবাঙ্গালি নেতাদের মধ্যে একমাত্র জিন্নাহর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল বলে মনে হয়েছে। বাকি অধিকাংশ অবাঙ্গালি নেতা মূলত স্বার্থান্বেষী আর ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবই ফুটে উঠেছে লেখার বিভিন্ন অংশে। ধীরে ধীরে সম্ভবত তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধামাধরা, মূলত ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁরাই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নেজামে ইসলামের নেতাদের ক্ষমতালিপ্সু আদর্শহীন মনোভাব তাঁকে পীড়িত করে। কিন্তু এইসব শিক্ষাই তাকে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির গুরুত্ব আরও ভালোভাবে উপলব্দি করতে উদ্বুদ্ধ করে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি মূল্যায়ন করছেন এভাবে, ‌‌"এই নির্বাচনে একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে, জনগণকে ‘ইসলাম ও মুসলমানের নামে’ স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানরা তাঁদের ধর্মকে ভালোবাসে; কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না এ ধারণা অনেকেরই হয়েছিল।"

সেই সময়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা ভাসানী, যাঁকে বইয়ে বিভিন্ন জায়গায় লেখক মূলত মাওলানা সাহেব হিসেবে সম্মোধন করেছেন, তাঁর প্রতি বিভিন্ন জায়গায় ভরসা আর শ্রদ্ধার প্রকাশ থাকলেও তাঁর কিছু কর্মকাণ্ডে লেখকের বিরক্তিও চাপা থাকেনি। ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তাঁর নিকটবর্তী সময়কাল ছাড়া মাওলানা ভাসানীর ব্যাপারে খুব বেশি জানাশোনা আমার নেই। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তার নিকট অতীতে, গুরুত্বপূর্ণ সময় আর সিদ্ধান্তের সময় উধাও হয়ে যাওয়ার বা দায়িত্ব না নেয়ার কথা পড়েছি। মাওলানা ভাসানীর এই রকম কিছু কর্মকাণ্ডে নিজের বিরক্তি বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ করেছেন,‌‌"মাওলানা ভাসানীর এই দরকারের সময় আত্মগোপনের মনোভাব কোনোদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যত অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।" এখানেই সম্ভবত পার্থক্য গড়ে উঠেছে। একজন যিনি গণমানুষের নেতা হয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে গেছেন, রাজনৈতিক কেবলা বা অন্য কোনো কারণে নিজের হাতে দায়িত্বের কালিমা লাগাতে চান নি, আর অন্যজন সামান্য এক মহকুমার সচেতন কিশোর রাজনীতিবিদ থেকে হাতে কলমে কাজ করে, ভুল করতে করতে হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা, বাঙ্গালির আশা আকাঙ্খার প্রতীক।

মূলত সাম্যে বিশ্বাস বিশ্বাস করতেন তিনি, বিশ্বাস করতেন গণমানুষের অধিকারে। সরাসরি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি তিনি করেন নি। বিভিন্ন সময় তাঁর লেখায় মনে হয়েছে তিনি অতি বিপ্লবীদের পছন্দ করতেন না তিনি। কারণ এই অঞ্চলের অতি বিপ্লবীদের অনেকেই ছিল মূলত খাতা কলমের রাজনীতিবিদ আর জনবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে তিনি চেয়েছেন জণগণকে নিয়ে প্রকাশ্য নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে। নিজে সরাসরি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন না করলেও তিনি মূলত সমাজতন্ত্রের মূলনীতি অর্থাৎ সাম্যে বিশ্বাস করতেন। প্রায় একই সময় স্বাধীন হওয়া কম্যুনিস্ট নতুন চীন সফরে গিয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন আর উপলব্ধি করেছেন নেতাদের স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপে কীভাবে জণগনের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে। চীন সফরের কথা লিখতে গিয়ে সমাজতন্ত্রের প্রতি তার মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে বলছেন, ‌‌"আমি নিজে কম্যুনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। এঁকে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ায় মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।" আরও বলছেন এভাবে, ‌‌"আওয়ামী লীগ ও তার কর্মীরা যে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক নেতা ও কর্মী আছে যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে; এবং তারা জানে সমাজতন্ত্রের পথই একমাত্র জনগণের মুক্তির পথ। ধনতন্ত্রবাদের মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করা চলে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনোদিন সাম্প্রদায়িকিতায় বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের কাছে মুসলমান, হিন্দু, বাঙালি, অবাঙালি সকলেই সমান।" সমাজতন্ত্রের প্রতি এই দূর্বলতাই হয়ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে দেশে তাঁকে বাকশাল গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

‌‌"মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না"- চোখের পানিতে এই প্রতিজ্ঞা যিনি করেছিলেন, বাংলার মানুষের জন্য যিনি জেল খানায় পার করেছেন অর্ধেক সময়, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই সমাপ্ত হল তাঁর - অসমাপ্ত আত্মজীবনী। আর তাঁর আত্মজীবনীর মতো জীবনটাকেও অসমাপ্ত করে দিল এই বাংলারই কিছু মানুষ।


মন্তব্য

^_^  এর ছবি

বই পড়া হইনি, লেখকের নিজস্ব মতামত আর বিশ্লেষণের জায়গাগুলো ভালো লাগলো। এই বইয়ের আরেকটা রিভিউ মত আছে দেখলাম - মোনায়েম সরকারের লেখা, কোন ধরনের বিশ্লেষণ নেই বললেই চলে। অবশ্যই আরও বিস্তৃত বিশ্লেষণের সুযোগ আছে। হাসি
শর্ষিনার পীর তখনও ফতোয়া দিতো আর এখনো ফতোয়া দেয়, এরাই টিকেছিল, টিকে যায়। মন খারাপ :(
কিছু টাইপো- জেলখানায়, প্রভাবশালী, শুরু হয়, "সব নেতার সাথে বিভিন্ন তাঁর মিথস্ক্রিয়ার" , সাম্যে বিশ্বাস বিশ্বাস, বাংলাদেশে দেশে, সাম্প্রদায়িকতায়, "তিনি অতি বিপ্লবীদের ………… তিনি" । এগুলোই চোখে পড়ল, আরেকবার যদি একটু দেখে নিতেন। ধন্যবাদ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বিস্তৃত বিশ্লেষণের সুযোগ তো আছেই। এই নিয়ে সম্ভবত বইও লেখা হয়েছে। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ' নামে একটা বই দেখলাম এবারে মেলায়। লিখতে গেলে নিজের চিন্তা ভাবনা আর বর্তমান কালের পর্যবেক্ষণ চলে আসে, আসাটাও খুব স্বাভাবিক। কখনও হয়ত আরও লিখব। এটা আসলে গুডরিডসএ দিয়েছিলাম বুক রিভিউ হিসেবে। তারপর পাণ্ডবদার কথায় মনে হলো একটু পরিমার্জন করে ব্লগে তুলে রাখা যায়।

টাইপো ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করছি ঠিক করে দিতে। ভালো থাকবেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

খুব ভালো রিভিউ । ধন্যবাদ!

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

থেঙ্কু রাজিব ভাই হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

বইটা দারুণ! এই বই না পড়লে মাওলানা ভাসানীর খামখেয়ালি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির অবদান, সুবিধাবাদী বাঙালি নেতাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতাম না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যাঁ। এই বইটা পড়ে যেটা বুঝলাম এত বছরেও বাঙালির আচরণ খুব বেশি বদলায় নাই, সেই সুবিধাবাদি, সেই মুস্লিম লীগ এখনো টিকে আছে নানা কায়দায়, নানা ফর্মে। কিন্তু আমাদের বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা নাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মুসলিম লীগ একটা ইটারনাল ধারণা। এর সাময়িক ক্ষয় আছে, কিন্তু লয় নাই। সে ভোল পালটায়, ভেক পালটায়, নেতা পালটায়, কিন্তু বিলুপ্ত হয় না। সময়ের সাথে সাথে অভিযোজিত হয়ে নিজেকে অদ্ভূত কায়দায় টিকিয়ে রাখে। এটা জুতাচাটা পার্টি। জুতাচাটার মতো প্রভু সবসময়ে এরা খুঁজে নিতে জানে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

মন ছোঁয়া রিভিউ, ভালো লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

পৃথ্বী এর ছবি

মুসলিল লীগ নেতারাও কোনো রকম অর্থনৈতিক ও সমাজনৈতিক প্রোগ্রাম না দিয়ে একসঙ্গে যে স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত রইল, তা হল 'ইসলাম'

মুসলিম লীগের স্বজাতি জামায়াত ইসলামের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিতেও এই বৈশিষ্ট্যটা দেখা যায় - এদের দলীয় প্রকাশনায় কখনও পলিসি প্রস্তাবনা দেখা যায় না। ধর্মের রীতি-নীতি আর "আল্লাহর শাসন" এর মত বিমূর্ত দাবি করেই তারা ক্ষান্ত দেয়, এই "আল্লাহর শাসন" আর "কোরান-হাদিসের আলোকের শাসন" এর মূর্ত রুপটা কী সেটা কখনও দেখা যাবে না। এরা বলবে কোরান একটা পরিপূর্ণ সংবিধান, অথচ এই তথাকথিত "পরিপূর্ণ সংবিধান" ভিত্তি করে একটা আনুষ্ঠানিক লিগ্যাল ডকু তৈরী করতে বললে জামায়াতের আইনজীবী ব্রিগেডও ফেল মারবে।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এইসব দাবী আসলে মূর্ত করার কোনো উপায় নাই, কারণ ব্যাপারগুলাই বিমূর্ত দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রকাশের সাথে সাথেই বইটা পড়ি। পড়ে মনে হয়েছে, একজন সহজ মানুষ, যাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিটা মানায়। তার ভুল আছে, থাকতেই পারে, আর আছে বলেই তিনি আরো সহজ, আরো কাছের।

তার লেখার ভঙ্গি আমার কাছে শক্তিশালীই মনে হয়েছে। আত্মজীবনী সমাপ্ত না হওয়ায় একটা ক্ষোভও রয়ে গেছে।

রিভিউটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

স্বয়ম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যাঁ সমাপ্ত না হওয়াটা খুব দুঃখজনক। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কেবল শুরু হচ্ছিল। কিন্তু সেই অংশটাই জানা গেল না, কোনোদিন যাবেও না আর।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল এই বই পড়ে। আমি মনে করি যারা রাজনীতি করেন তাদের যতটা এই বইটা পড়ার প্রয়োজন, তার থেকে বেশি প্রয়োজন যারা রাজনীতিতে আগ্রহী তাদের জন্য। তাদের বোঝা উচিৎ মুজিব ভাই কিভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন। অসম্ভব প্রিয় এই বই, মহাপুরুষ টাইপ একটা ব্যাপার উনার বিষয়ে কাজ করত, কিন্তু এই বই পড়ে বুঝেছি ইনি আলাদা কেউ নন, আমাদেরই একজন!

রাসিক রেজা নাহিয়েন

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বইটা নিয়ে আমারো একটু আক্ষেপ কাজ করে। যেখানে শেষ হয়েছে তার আরো কয়েক বছর পরের ঘটনা নিয়েও যদি কিছু লিখতে পারতেন বঙ্গবন্ধু! এই অসমাপ্তের আক্ষেপটা কখনোই কাটবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সত্যি, এই আক্ষেপ কাটবে না। যেমন কোনোদিন কাটবে না পঁচাত্তরের আক্ষেপ।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রানা মেহের এর ছবি

বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা জীবনী, শুনতেই কী রোমাঞ্চ লাগে।
আচ্ছা, শেখ হাসিনা কীকরে বইটি হাতে পেয়েছিলেন, জান?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

এক লহমা এর ছবি

"শেখ হাসিনা কী করে বইটি হাতে পেয়েছিলেন" - আমারও এটা জানতে ইচ্ছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুনেছিলাম ডায়েরিগুলো নাকি শেখ ফজলুল হক মণি'র কাছে ছিল। শেখ মণি সেগুলো 'বাংলার বাণী'র অফিসে তাঁর রুমের একটা লকারে রেখেছিলেন। বহু বছর পরে শেখ ফজলে নূর তাপস ওই রুম পরিষ্কার করার সময় ডায়েরিগুলো খুঁজে পান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মাননীর প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা (কারাবন্দী অবস্থায় ২০০৭ সালে লেখা) থেকে লিখছি সংক্ষেপেঃ

২৫ শে মার্চে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পরে পাকিস্তানিরা বাড়িঘর তছনছ করে আর বাড়িটা পাকিস্তানিদের দখলে থাকে। শোবার ঘরের আলমারির ওপরের এক কোণে খাতাগুলো রাখা ছিল যার মধ্যে আত্মজীবনী ছাড়াও স্মৃতিকথা, ডায়রি, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি ছিল। সেই সব সম্ভবত অমূল্যবান ভেবে পাকিরা নষ্ট করে নাই আর সেটা পরে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।

৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কর্তৃক বাড়িটা বন্ধ করা ছিল। ১৯৮১ সালের ১২ জুন সাত্তার সরকার বাড়িটা বর্তমান মাননীয় শেখ হাসিনাকে বাড়িটা হস্তান্তর করে। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর লেখা স্মৃতিকথা, ডায়রি ও চীন ভ্রমণের খাতাগুলো পান, কিন্তু আত্মজীবনীর খাতাগুলো পান নি। কিছু পোকায় খাওয়া টাইপ করা কাগজও পান তিনি। কাগজগুলো পড়ে বোঝা যাচ্ছিল সেটা টাইপ করা আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপি কিন্তু অর্ধেকটা পোকায় খাওয়া সুতরাং সেটা কোনো কাজে আসে না। এর পর অনেক খোঁজ করা হলেও খাতাগুলো আর পান নি অনেকদিন।

এর মধ্যে ২০০০ সালে স্মৃতিকথা আর ডায়রি প্রকাশের উদ্যোগ নেন (এইগুলো কি প্রকাশ হয়েছে? কোন প্রকাশনি?)। এই কাজের শেষ পর্যায়ে এই খাতাগুলো শেখ হাসিনার হাতে আসে তাঁর এক ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে। সেই খাতাগুলো তিনি (ফুফাতো ভাই) পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাই বাংলার বাণী সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণির অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে। সম্ভবত বঙ্গবন্ধু শেখ মণিকে টাইপ করতে দিয়েছিলেন, আত্মজীবনী ছাপাবেন এই চিন্তা করে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।