মজার খেলা অংক

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/১১/২০০৭ - ৬:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন কলকাতা থেকে ৩৫কিলোমিটার দূরে গঙ্গাতীরবর্তী ছোট্ট শহর চুঁচুড়ায়। শ্বশুরমশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরে। একমাত্র ছেলে স্কুলজীবনের পরে স্থায়ীভাবে আর মা বাবার সাথে থাকেনি। প্রথমে পড়াশুনো পরে কর্মসুত্র আর বোহেমিয়ান স্বভাবে ঘুরে বেড়ায় হেথায় হোথায়। কর্তা-গিন্নি দুজনের টোনা-টুনির সংসার। বই পড়ে, টিভি দেখে খানিকটা সংসার সংসার খেলা করে সময় কাটান। কিছুটা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আর খানিকটা ব্যক্তিগত অসুবিধের কারণে সেখানে গিয়ে আমার খুব একটা থাকা হয় না। মাসে একবার-দু'বার যাই কখনো বা দু'মাসে একবার। দু-এক দিন থাকি কখনো বা এ'বেলা গিয়ে ও'বেলা ফিরে আসি।

চুঁচুড়ায় গেলে বেশিরভাগ গল্প আমার শ্বশুরমশায়ের সাথেই হয়। শাশুড়িমা ব্যস্ত থাকেন রান্নাঘরে। আমি মাঝে মাঝে একটু এটা সেটা এগিয়ে টেগিয়ে দিই কিন্তু শ্বশুরমশায় সেখানেও গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বলে শাশুড়িমা বলেন, যাও যাও, তোমার বাবার সাথে বসে গল্প করোগে, এখানে সবাই মিলে ভিড় কোর না! তো আমি বসে বসে গল্পই করি। বয়েসের কারণে বাবা অনেক কিছুই ভুলে যান বা একই কথা বারবার বলেন। প্রতিবারই আমার সখের কথা জিজ্ঞেস করেন, কী ভালবাসি, কী করে সময় কাটাই ইত্যাদি ইত্যাদি... সেদিন হঠাত্ বললেন, আমার সখ কী জানো? বিশাল বিশাল বইয়ের আলমারী আর সেই আলমারী ভর্তি সব বইয়ের দিকে নিজের অজান্তেই চোখ চলে যায়। আমি বাবাকে কোন জবাব না দিয়ে ঘরের এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে আবার বাবার মুখের দিকেই তাকাই।

বাবা বলেন, শোনো! তুমি বইয়ের আলমারীর দিকে তাকালে বটে, তবে বই আমার সখ নয়, বই আমি ভালবাসি! আমার সখ হলো অংক। তোমরা কম্পিউটারে বসে নানান কিছু করো, লেখালেখি করো, বাবুল (সুমেরু) ছবি আঁকে, আর আমি অংক করি। তোমরা যেমন ম্যাগাজিন পড়ো আমি তেমনি অংকের ম্যাগাজিন রাখি, পড়ি,অংক করি। দেশ-বিদেশের নানা রকমের ম্যাগাজিন। বলে উঠে গিয়ে আলমারী খুলে একটা বই আর একটা ম্যাগাজিন বের করে আনলেন। বইটি বহু পাঠে জীর্ণ কিন্তু ম্যগাজিনটি নতুন। সাথেই টেবিলের উপর থেকে তুলে আনলেন কিছু নোটখাতা। বইটি আমার হাটে দিয়ে বললেন, দ্যাখো! আমি ঐ বিদেশী অংকের বই নিয়ে বেশ খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই বইয়ের পাতা ওল্টালাম। বাবা ততক্ষণে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে বের করেছেন কয়েকটা তখনো সলভ না করা অংক। একগাল হাসি মুখে নিয়ে বললেন, এগুলো এখনো আমার করা হয়নি!

নোটখাতা খুলে একটা অংক দেখালেন, যেটি করতে তাঁর লেগেছে ছাব্বিশ পাতা। পাতার পর পাতা উল্টে দেখালেন, কোথায় কোথায় তাঁর আটকাচ্ছিল, কোথায় ভুল হচ্ছিল, তবে শেষ অব্দি সলভ হয়ে গিয়েছে হাসি আমি তাড়াতাড়ি বইটা টেবিলে রেখে খাতা হাতে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, কী অংক আর কিভাবে সলভ হলো। বাবা আবার বইটা হাতে নিয়ে প্রব্লেমটা বের করেছেন বইয়ের মাঝামাঝি অংশ থেকে আর আমাকে বললেন, পড়ো! আমি পড়লাম, প্রব্লেমটা ছিল-

পাঁচজন বন্ধু সাথে একটা বানর নিয়ে দেশভ্রমণে বেরিয়েছে। সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে তারা সন্ধেবেলায় যেখানে এসে থামল সেখানে কোন লোকালয় নেই। একটা খোলা মাঠমত জায়গা, কিছু গাছ আছে এখানে ওখানে। বানরটাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে তারা রাতের খাওয়া সেরে বিশ্রাম নেবে ভাবলো। তাদের কাছে খাবার বলতে আছে কিছু বাদাম। গাছতলায় শোওয়া মাত্রই প্রত্যেকেই ঘুমিয়ে পড়লো, সারাদিনের অবিশ্রাম চলার ক্লান্তিতে। খানিক বাদে একজনের ঘুম ভাঙলে সে উঠে বাদামের থলি থেকে বাদামগুলোকে বের করে ৬ভাগে ভাগ করলো। সাথীদের কাওকে ডাকলো না, তারা ক্লান্ত আছে, ঘুমোক, যখন উঠবে খেয়ে নেবে এই ভেবে। নিজের ভাগের বাদামগুলো খেয়ে নিয়ে সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। খানিক বাদে আরেকজন উঠলো, আর সেও একইভাবে বাদামগুলোকে ৬ ভাগে ভাগ করে একভাগ খেয়ে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো অন্যেরা যে যখন জাগবে খেয়ে নেবে এই ভেবে। এভাবে প্রত্যেকেই উঠলো আর বাদাম খেয়ে শুয়ে পড়লো।

সকাল হতে সবাই যখন একসাথে ঘুম থেকে উঠলো, কেউই নিজের বাদাম খাওয়ার কথা বললো না এই ভেবে, ওরা সব ঘুমোচ্ছিল আমি একা উঠে বাদাম খেয়ে নিয়েছি জানতে পারলে ওরা কি ভাবে! প্রত্যেকেই একই কথা ভেবে নিজের নিজের খাওয়ার কথা কেউ কাওকে বললো না। ঝোলার বাদামগুলোকে বের করে ৬ভাগে ভাগ করে একভাগ বাদাম বানরকে দিয়ে বাদবাকি বাদাম পাঁচজনে মিলে খেল। কারোরই পেট ভরলো না কিন্তু চুপচাপ সবাই উঠে আবার হাঁটা দিল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। যদিও কেউ কিছু বললো না কিন্তু এই সন্দেহটা সবার মনেই জাগলো, বাদাম তো এত কম ছিলো না, কেউ কী রাতে উঠে বাদাম খেল?

প্রশ্নটা হচ্ছে সব মিলিয়ে কত বাদাম ছিল ঝোলায়?

২৬পাতা খরচ করে তিনি অংকটা শেষ করেছেন, যার উত্তর; ঝোলায় বাদাম ছিল ২৫হাজার ২শো ২৩টা!

আমি টুক করে বইয়ের পেছনদিকে পাতা উল্টে উত্তর মিলিয়ে নিচ্ছি দেখে আবারও একগাল হেসে বললেন, মিলিয়ে নাও, আমি অবশ্য উত্তর মেলাই না হাসি

লজ্জ্বায় তাড়াতাড়ি কিছু একটা বলতে গেলাম দেখে হাত নেড়ে বারণ করলেন বললেন, ঠিক আছে ঠিক আছে লজ্জ্বা পাওয়ার কোন কারণ নেই হাসি


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এতো বাদাম খেয়ে কারো পেট খারাপ করে নি তো? চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

২৫২২৩টা বাদামকে সমান ৬ ভাগে ভাগ করা সম্ভব? (বাদাম আস্ত রেখে)

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অথিতি এর ছবি

অংক মনে হয় ভূল হইছে।

শ্যাজা এর ছবি

সুশান্ত,
এক্কেবারে ঠিক কইসেন.. উনি আসলেই বস মানুষ।

বিপ্লব'দা,াংকের লগে কোথাও লেখা নাই কারোর পেট খারাপ হইসিলো কিনা হাসি

অচ্ছুত্ বলাই,
কেমনে কী হয় আমি জানি না, বেশি কিছু জিগাইতেও ডরাই, খালি শুনি মন খারাপ


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

বজলুর রহমান এর ছবি

আমি এ ধরনের অঙ্কে কাঁচা, এবং ৫ মিনিটের বেশি সময় দেবার ধৈর্য নেই। ৭ লাইনে উত্তর হলো ঃ ৪৬৬৫৬
হাসপাতাল কেস।

দ্রোহী এর ছবি

ইশৃ, পঁচিশ হাজার বাদাম আমার কাছে থাকলে পুরা বাদাম ব্যাপারী হয়ে যেতে পারতাম!! পড়ালেখা আর ভালো লাগে না। এর চাইতে বাদাম বেচা অনেক আনন্দদায়ক।


কি মাঝি? ডরাইলা?

শেখ জলিল এর ছবি

মস্তিষ্কের ব্যায়াম আর সময় কাটানোর উৎকৃষ্ট পন্থা হলো অংক কষা..

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অনিকেত এর ছবি

সম্পুর্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে বলছি, আপনারা কি খেয়াল করেছেন যে আমরা সব সময় বলি 'অংক কষা'। কখনো বলি না (বা, খুব কম বলি) অঙ্ক 'করা'।

আমার ব্যক্তিগত Theory হচ্ছেঃ
১। অঙ্ক খুবই 'কষা' (স্বাদ অর্থে)। সেই জন্য ঐটা 'করা' যায় না। 'কষতে' হয়। আমরা 'ভাল' জিনিস করি, 'কষি' না।

২। অঙ্ক করার সময় অধিকাংশ মানুষের মুখ দেখলে একটি বিশেষ রোগে ভোগা মানুষের কথা মনে পড়ে যায়। সকাল বেলা যারা 'প্রকৃতির ডাকে' অনেক ক্ষন ধরে বিরস বদনে সাড়া দিতে থাকেন, তারা নিশ্চয়ি ধরে ফেলেছেন আমি কি বলতে চাইছি।

কারো কোনো নুতুন Idea?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।