বোলতা বোলতা

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৭/২০০৭ - ১:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাতে একটা বই এসেছে, রজত শুভ্র বন্দোপাধ্যায়ের বোলতা বোলতা। বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে লেখক লিখেছেন,
ছোটদের থেকে যারা বড় কিন্তু বড়দের থেকে ছোট, এ বইটি তাদের জন্য। অন্যরাও পড়তে পারেন, তবে বাকিরা বাদে।
এটি পড়া শোনার বই নয়, পড়ে শোনানোর বই। না পড়লেও চলে, কিন্তু পড়লে শুনতেই হয়।

( ভূমিকার সব কটি লাইনই লিখে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু লিখছি না সঙ্গত কারণে, প্রথম এবং শেষের কয়েকটি লাইন শুধু দিলাম )

এ বইতে নানান ধরনের মতামত রয়েছে, যা লেখকের নিজস্ব মতামত নাও হতে পারে। অবশ্য মতামত পছন্দ হলে তার প্রশংসা সলজ্জে গ্রহন করতে লেখক অনিচ্ছা সত্বেও রাজী।

লেখক বিশেষ ভাবে গর্ব প্রকাশ করেছেন এই বইয়ের বহু লেখার ধাঁচ সর্বশ্রী সুকুমার রায় ও অগডেন ন্যাশের বিভিন্ন লেখা থেকে নির্লজ্হভাবে চুরি করা বলে।

উৎসর্গ করেছেন সে সমস্ত মানুষকে, যারা এ বই পড়ে আনন্দ পাবেন।

আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন বোলতা বোলতা একটি রম্য রচনার বই। ছোট ছোট গল্পের মত কিছু লেখা, কিছু ছড়া, কিছু প্রবাদ, কিছু রচনা। পড়তে গিয়ে হাসতে হাসতে আপনার পেটে খিল ধরবেই ধরবে। গ্র্যান্টি! যদি না ধরে মানে আপনি যদি না হাসেন তবে লেখককের ভাষ্য অনুযায়ী আপনি ছোটদের থেকে বড় কিন্তু বড়ডের থেকে ছোট নন। তাহলে আপনি কী সেটি আপনি নিজেই বুঝে নিন।

গোটা বই নিয়ে আলোচনা করব অত বিদ্যে আমার নেই। আমি শুধু এই বই থেকে কয়েকটি লেখা তুলে দিচ্ছি। আলোচনা আপনারা করুন।

ছড়া- ফলে ফল ফলে

ফলে নাকি বীজ থাকে
ফল কেটে পাবে তাকে।
সেই বীজ পোঁতা হয়
মাটিতেই, জলে নয়।
মাটি খুঁড়ে সার ফেলে
তাতে কিছু জল ঢেলে
দিতে হয় রোদ্দুরে;
চারা হয় মাটি ফুঁড়ে।
সেই চারা বড় হলে
গাছরূপে পাতা খোলে,
হাওয়া খায় কৌশলে,
ফলে ফের ফল ফলে।

রচনা

রচনা মানুষের জীবনের এক মূল্যবান অংশ। যেই ইস্কুলে গিয়েছে, সেই রচনা লিখেছে। সেই রচনার ভিত্তিতে নম্বরও পেয়েছে। অনেকে অবশ্য গোল্লাও পেয়েছে, কিন্তু তাতে কি, গোল্লাও তো নম্বর।

( নিচে রচনার উদাহরন)

দিব্যেন্দু লিখল, 'কুকুর এক চারপাওয়ালা জন্তু। এর দুটো কান, দুটো চোখ,দুটো নাকের ফুটো, দুটো 'কু' আছে, আবার একটা লেজ, একটা দেহ,একটা আট্মা,একটা 'র'আছে, কিন্তি চারটে পা।" এর ফলে বোঝা গেল, দিব্যেন্দু ষ্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়ে বড় হবে।

পদু লিখল," কুকুর? ও খুব ভালো, খুব ভালো।আবার কামড়ে দিলে খুব খারাপ খুব খারাপ।" পদু হবে রাজনৈতীক নেতা।

গোপাল লিখল,"কুকুরের গায়ে লোম থাকে। সেই লোম উঠিয়ে দিলে ঘা হয়, ঘায়ে মলম দিতে হয়। কুকুরে কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। না কামড়ালেও জ্বর, পেট খারাপ, মাথা ব্যথা ইত্যাদি ব্যামো হতে পারে, তারও ওষুধ আছে।" বোঝা গেল, গোপাল ডাক্তার হবে।

এইরকম সব রচনায় সমৃদ্ধ এই বোলতা বোলতা। গরুর রচনাটি দিতে বড় সাধ যাইতেছে কিনতু থাক, সব আগি লিখে দিলে আপনারা পড়বেন কী?

তবে আরও দু-একটা উদা দেওয়া যাইতে পারে।

আত্মকাহিনী
আত্ম মানে স্ব, স্বয়ং। কাহিনী মানে বৃত্তান্ত, গল্প বা উপাখ্যান। তাই আত্মকাহিনী মানে স্বয়ং উপাখ্যান। আবার উপাখ্যান মানে কাল্পনিক কাহিনী বা রূপকথা; ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে আত্মকাহিনী মানেই নান ধরনের কাল্পনিক গল্প, যা কিনা আবার স্ব-রচিত। ফলে একটা আত্মকাহিনী নানা ধরনের গুলে ভরা থাকতেই পারে। এটিও তাই।

অধ্যায় -১।। খুব অল্প বয়সেই আমার জন্ম হয়, তারপর যথাসময়ে বড় হয়ে আমি নানা ধরনের কান্ড করে হঠাৎ একদিন মারা যাই।

অধ্যায়-২।। মৃত্যুর পর আমার মাথা খুলে যায়। তাই আমি স্কন্ধকাটা অশরীরী হয়ে ঘুরে বেড়াই। কি কি করি তা বলতে গেলে তা আর আত্মকাহিনী থাকবে না, আত্মাকাহিনী হয়ে যাবে এবং বলাই বাহুল্য তাই আর না বলাই ভাল।।

পরিশিষ্ট।। শুরুতেই আরম্ভ; তারপরে সব শেষ।

তো এই হল আত্মকাহিনী'র নমুনা বা ব্যাখ্যা। পাঠক একে যা খুশি নামে আখ্যায়িত করতে পারেন, লেখক মাইন্ড খাইবেন না।

একটি কবিতা দিয়ে এই পোষ্টের ইতি টানব, পড়ুন।

অদ্ভুত পাখি
এটা কি পাখি, কেউ তা জানে না।
এর অস্তিত্বই অনেকে মানে না।
এর কি নাম,
তা নিয়ে কেউ ফেলে না মাথার ঘাম।

এ ওড়ে কি না ওড়ে,
তা কেউ ভাবে না ঠিক করে।
এ দাড়ি কাময় কি কামায় না,
তা নিয়েও কেউ মাথা ঘামায় না।

এ কোথা থেকে এল,
তাতে সবার ভারি বয়েই গেল।
এ গান গায় না ডাকে,
তা কে বলবে কাকে?

এটা বক না দোয়েল না টার্কি,
তাতেই বা কার কি?
এর কথা জানতে সকলের বাকি।
এ বড় অদ্ভুত পাখি।

(সচলায়তন কতৃপক্ষের নিকট সবিনয় নিবেদন:- আপনাদের নীতিমালায় লিখে দেওয়া সত্বেও আমি আমার দুটি পোষ্টই প্রথম পাতায় দিলাম। যদি আপনাদের আপত্তি থাকে তবে প্লিজ একটা পোষ্ট প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেবেন। আমি কিছু মনে করব না।

ধন্যবাদান্তে
শ্যাজা।)


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বুঝা গেলো, ওই বইয়ের লেখক ধুম চাপাবাজ। তবে লিখাগুলো পুরা ধুন্দুমার!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়তে লোভ হচ্ছে। প্রকাশনীর নাম কি? কখনো সুযোগ হলে সংগ্রহ করে নেবো - - -

সৌরভ এর ছবি

পুরা মাথাখারাপ লেখক।
তয় বৈ পড়তে মন লয়।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসিব এর ছবি

আমারে এক কপি বই পাঠায়া দেন ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

শ্যাজা এর ছবি

সৌরভ,
পুরা মাথা খারাপ কিংবা পুরা মাথা ঠিক?!

হাসিব,
খোঁজ লাগামু নে। পাওয়া গেলে পাঠান যাইব।

শিমুল,
প্রকাশক - রায় মিত্র কনসার্ন।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

থ্যাংকস!

তীরন্দাজ এর ছবি

"ছোটদের থেকে যারা বড় কিন্তু বড়দের থেকে ছোট, এ বইটি তাদের জন্য। অন্যরাও পড়তে পারেন, তবে বাকিরা বাদে।"

খাটি কথা। মনটা সেরকম রাখতে না পারলে এ বই পড়ে মজাও পাবে না কেউ!

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অমিত এর ছবি

হ , গল্প শুনায়েই খালাস। তো আমি এখন এই পোড়ার দেশে বইসা এই বই পামু কই !!
_________________________________
Little by Little
the Night Turns Around...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পড়েই মজা লাগছে। আমাকেও এক কপি। দেঁতো হাসি
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

আত্মকাহিনী পড়ে বেশ খানিকক্ষন নিজে নিজেই হাসলাম হাসি


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

কারুবাসনা এর ছবি

পুরো রেটিং। তবে রজতবাবুর জন্য।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

রেজওয়ান এর ছবি

বাহ! বেশ মজার তো! লেখকের সাহস আছে বলতে হয়।

**********************************
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

তারেক এর ছবি

লেখক ব্যাটা যে বদের হাড্ডি তাতে আর সন্দ কি? তবে এইটা আমি চেটেপুটে খাইতে রাজি আছি! পামু কই?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব ভাল লাগলো পড়ে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।