ঐ লোকটা আসলে তো চেনা ছিল না!

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: সোম, ২৯/১০/২০০৭ - ৪:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার পতিদেব অনেকদিন পরে গতকাল বাসায় ছিলেন। প্রায় আড়াইমাস। না। উনি একেবারে বাসার বাইরে ছিলেন না, বাসায় আসতেন কোনদিন মাঝরাত্রে তো কোনদিন পরদিন ভোরবেলায়। মাঝেমাঝেই ৩-৪দিনের আউটডোর। ঘন্টা কয় ঘুমাইয়া আবার বাইর হইয়া যাইতেন ঘুম চোখে নিয়াই। আরো দিন দুই আগেই হাতের কাজ শেষ হওয়ার কথা কিন্তু হয় নাই, গড়ায়া গড়ায়া পরশু পর্যন্ত চলছে। তো কাল খানিকক্ষণ নেটে বইসা আর বেশিরভাগ সময় ঘুমাইয়া সন্ধ্যায় যখন উঠলেন কইলাম, একটু বাজারে যাওন লাগে যে! বাজারের নাম শুইনা প্রায় লাফ দিয়া উইঠা বইসা গেলেন তিনি, কইলেন, বাজার!! ওফফ! আমি বললাম, হুঁ বাজার! তয় তুমি যদি না যাইতে চাও তো ক্যাশবাক্সখানি এদিকে দিয়া দাও, আমিই যাই মন খারাপ । মুশকিল হইল, পকেট গড়ের মাঠ, টাকা তুইলা তারপরে বাজার আর টাকা তুলতে যাইতে হইব কোন একটা এটিএমে, যা কিনা আমাদের আশে-পাশে নাই, যাইতে হইব গাঙ পার হইয়া সেই শহরে!কইলাম, বাজারে যেই যাক, টাকা তো লাগবে, টাকা তো তুলে আনো তারপরে দেখা যাক কে যায়। তিনি বেজার মুখে শহরের দিকে বাইর হইলেন।

শহরে যাওয়ার জন্যে বাসষ্ট্যান্ড অব্দি না গিয়ে পায়ে হেঁটেই এগিয়ে গেলেন বিদ্যাসাগর সেতুর টোলের দিকে, উদ্দ্যেশ্য: টোল হইতে বাস ধরা। তো হন্ঠন প্রক্রিয়া চলাকালীন হঠাত্ খেয়াল হইল, নীলকে (ফটোগ্রফার বন্ধু) ফোন করে খোঁজ নেওয়া যাক, কোথায় আছে, অনেকদিন আড্ডা দেওয়া হয় না! নীলকে ফোন কইরা জানা গেল নীল, শুভ আর নীলের বউ শুক্লা অলিপাবে বইসা মস্তি করতেসে! ফোন আসে আমার কাছে, শোন না, তুমি কি বেরোবে এখন? প্রশন শুনেই আমার ভুরু কুঁচকায়, কেন? কী সমস্যা? না না। সমস্যা না। নীল,শুভ'রা সব অলিপাবে আছে, তুমি কী আসবে? আমি অলিপাবে আসব? তাইলে বাজার? রাতে খাবে কী? আজকে নাহয় কিছু খাবই না আর অলিতে তোমায় বীফষ্টেক খাইয়ে দেব!

অলিপাবে গিয়ে পৌঁছে দেখি আসরে একেবারে চাইর চাঁদ লাগাইয়া চারজনে বইসা আছে এক টেবিলের দুইধারে। টেবিলভর্তি গেলাস আর বোতলে। গ্লাসের পানীয়ের রঙ দেইখা বোঝা যায়, বস্তুটি রাম। শুক্লার সামনে দুইখানি বিয়ারের খালি বোতল। ফিশ টিক্কা জাতীয় কিছু একটার শেষাংশ পইড়া আছে একটা প্লেটে। লাল রঙের পানীয়তে আমার প্রবল অস্বস্তি বিধায় আমার জন্যে সর্বদাই অর্ডার হয় স্মার্নঅফ বা হোয়াইট মিসচিফ। কাল ঘুষ হিসাবে ছিল ওয়েলডান বীফষ্টেক হাসি

এইখানে একটু এই ওয়েলডানের গল্প বলি। কলকাতার একমাত্র এই বারেই বীফ পাওয়া যায় বিধায় ভোজনরসিক ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালী সদাই ভিড় করেন মদ্য সহযোগে বীফষ্টেকের লোভে। প্রায় সকল টেবিলেই দেখা যায় ইয়াব্বড় একখন্ড গোমাংসের উপর হইতে একখানি হলুদ কুসুমের পোচ করা ডিম তাকিয়ে আছে স্মিতহাস্যে মদ্যপায়ীর দিকে। অলিপাবের বেয়ারাকে বলে না দিলে সে আধকাঁচা মাংসও এনে হাজির করতে পারে আপনার সামনে, অনেকেই নাকি মাংসে কাঁচা রক্তও পেয়েছেন অনেকবার। কাজেই রিস্ক না নিয়ে বেয়ারাকে বলে দেয়াটাই সেফ, চাচা, বীফষ্টেক বানাকে লাইয়ে, আচ্ছাসে বানাইয়ে কাচ্চা নাহি রহ যায়ে! বেয়ারা চাচা তখন জিজ্ঞেস করে, ওয়েলডান? হ্যাঁ হ্যাঁ ওয়েলডান! নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাসে মন দিন, সুসিদ্ধ, সুস্বাদু, স্বর্গীয় এক জিনিস আসিতেছে এবারে হাসি

তুমুল আড্ডা। কে যে কী কয় কিসসু শোনা যায় না এত হল্লা-চিল্লা। লেখা-জোখা, সিনেমা, ফটোগ্রাফি আর দর্শন। সব হাজির একসাথে এই টেবিলে। মাঝে একবার আমার কত্তা উঠে গেলেন ওপাশের টেবিলে একজনকে চেনা মনে হওয়াতে। সত্যিই চেনা কিনা তাতে অবশ্য কিসসু যায় আসে না, মনে হয়েছে চেনা তো চেনা! অলিপাবে বসলে এরকম হয়, কেউ একজন চেনা মনে হল তো উঠে গিয়া খানিক আড্ডা দিয়ে আসা হল, যার কাছে গেলেন, সেও ধন্দে, একে কী চিনি? যিনি গেলেন তিনি অবশ্য কনফিডেন্টলিই যান কিন্তু নাম জিগানো যায় না, এও জিগায় না, যার কাছে গেলেন সেও জিগায় না! মান সন্মানের প্রশ্ন না? লোকে বলবে, ছ্যা: ছ্যা: ঐটুক খাইয়াই মাতাল হইয়া গ্যাসে মন খারাপ । পরেরদিন সকাল হইলে তবে মনে পড়ে, ঐ লোকটা আসলে তো চেনা ছিল না!


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

পানীয়ের প্রভাব থাকতে থাকতেই লেখাটা তৈরি, নাকি পরে। লেখাটা কিন্তু খুব সুস্বাদু হয়েছে।

ওয়েলডান স্টেক খেলে তো মাংসের আসল স্বাদটা মিলবে না। হাফডান খাওয়ার অভ্যাস করলে হয়তো জ্বলা-পোড়া ছাড়া আসল মাংসের রস জিহ্বায় জমবে। মাংসের আদি রস আর নিজস্ব গন্ধটা অবিকৃত রাখাটা খুব জরুরি। নতুবা স্কটিশ আর অস্ট্রেলিয়ান বিফের পার্থক্য থাকবে শুধু আঁশের মধ্যে, স্বাদে পাওয়া যাবে না।

সৃজনশীল মানুষটা বাড়িতে ফিরলো আড়াই মাস পর, আর বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিলেন। আপনি তো নবনীতা দেবসেন হয়ে যাচ্ছেন। অমর্ত্য বাজারে যেতে চাইতেন না বলে নবনীতা আফসোস করেছিলেন, তার নোবেল পাওয়ার পর। এই তথ্য মনে হয়ে গেলো।

জামাইবাবু নিজে তার কর্মকান্ডের কথা আমাদের একেবারেই বলেন না, এটা কি ঠিক? শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে সমীহ করা ভালো, তাই বলে একেবারে যোগাযোগহীন। তার কীর্তিকান্ড শুনলে আমাদেরও গর্ব হতো। আমাদের ছেলে-ছোঁকড়ারাও নতুন কিছু শিখতে পারতো।

সচলে লেখালেখি নিয়মিত চলছে। চলুক। এরকম সুস্বাদু লেখা আরো আরো চাই।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শ্যাজা এর ছবি

হে হে শো মো চৌ,
কাইল রাইতের পানীয়ের আসর এখন পর্যন্ত নাই, বিশ্বাস করেন!

ষ্টেকের কথা যা কইলেন, মাথায় রাইখা একবার টেষ্ট কইরা দেখা যাইতে পারে।

বাজরের ফর্দটা কি একেবারে ফ্যালইন্যা জিনিস হইল? মন খারাপ

তুলনাডা কার লগে করলেন মিঞা!

নিজের কর্মকান্ডের কথা একেবারেই বলেন না তা কিন্তু না। বলেন , তবে কম আর বেশির ভাগই ঘুরাইয়া ফিরাইয়া।

আপনেরে ধন্যবাদ হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

দিগন্ত এর ছবি

আপনি থাকেন কোথায়? আমাদের পুরোনো শিবপুর বি ই কলেজের কাছাকাছি কোথাও মনে হচ্ছে?
যাহোক আমাদের ছাত্রাবস্থায় অলিপাবে ড্রিংকাররা যেত আর আমরা যেতাম নিজামে গোমাংস ভক্ষ্যণার্থে ... মনে পড়ে গেল দিনগুলো ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শ্যাজা এর ছবি

বি ই কলেজের খুব কাছাকাছি...

আপনিও এদিককার নাকি?


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

দিগন্ত এর ছবি

না, তবে চার বছর কলেজ হস্টেলে কাটানোর সুবাদে আশেপাশের জায়গা চেনা হয়ে গেছে সবই। দানেশ শেখ লেন, কোলে মার্কেট থেকে আন্দুল অবধি অনেক কিছুই চিনি। এমনিতে আমার বাড়ি বর্দ্ধমান।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তীরন্দাজ এর ছবি

ওয়েলডান বা হাফডান যাই হোক না কেন, উপরে ডিমপোচের কথা শুনে কেমন যেন লাগছে। কি জানি, হয়তো খেতে ভালই লাগবে। কোলকাতা গেলে আলীপাবে এবার যেতেই হবে। জানুয়ারীতে খায়েস আছে যাবার।

তবে বাজারের বদলে পাব! বাউন্ডুলেপনার চুড়ান্ত! আপনারা আছেন ভাল! সত্যিই, হিংসে হচ্ছে। নিজেও বাউন্ডুলে কিনা, তাই।

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমিও সেটাই ভাবতেছিলাম। ওয়েলডান হলে জুস থাকে না কোন, মজা চইলা যায়। মিডিয়ামটাই বেশি স্বাদু।
পাবে কোন আয়না টায়না নাই তো? দেখো গিয়া, উনি হয়তো আয়নার সামনে গিয়া ঘুইরা আসছে, আর আইসা তোমারে কইছে, লোকটা চেনা ছিলো না তো!

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

রাম জিনিসটা কোনো ভদ্র জিনিস না। গন্ধ আর ধাক্কা দুইটাই অশিষ্ট ধরনের।
যদি একান্তই খাইতে হয় তবে ক্যারিবিয়ান হোয়াইট রাম খাওয়া যায়।
মালিবু- রাম উইথ কোকোনাট জুস- অবশ্য মেয়েরাও পছন্দ করে এর নারকেল নারকেল স্বাদের জন্য, মিষ্টি বলেও।
বাকার্ডি'র হোয়াইট রাম বাজারে চলে ভালোই।

তবে ভারতে বা অন্যান্য ট্রপিক্যাল দেশে যে খয়েরি রংয়ের রাম জনপ্রিয়, তা মনে হয় উষ্ণ আবহাওয়ায় কড়া জিনিস খেয়ে মাতলামি করার জন্য তৈরি।
(রাম যাদের প্রিয় তারা আপনাকে এখন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে ভক্ত বানানোর চেষ্টা করুক দেখি।)
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শ্যাজা এর ছবি

হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

শ্যাজা এর ছবি

মন্তব্যগুলো কেমন আগে পিছে যাচ্ছে! অন্য সব পোষ্টেও দেখলাম। মডুগনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

শ্যাজা এর ছবি

ধন্যবাদ অরূপ।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

কারুবাসনা এর ছবি

এখন একটু ঝিম মেরে আছি। পরে রাম গান গেয়ে শোনাবখন।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

রাম - লক্ষণের সন্ধানে অলিপাবে যেতেই হবে দেখছি! চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।