স্কুল বয় !

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৭/২০০৮ - ৬:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদরা সাংবাদিকদের সাথে একান্ত সাক্ষাতকার দেয়ার সময় শুরুতেই বিড়াল মারতে চান। অথবা প্রশ্ন অপছন্দ হলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন। এমন উদাহরণ বহু আছে, মেয়র থাকা অবস্থায় কেন লিভিংস্টোন একবার এক সাংবাদিককে বলে বসেন তুমি নাৎসি বাহিনীর দারোয়ানের মতো প্রশ্ন করছো কেন ? এমন অপরাধের জন্য কেন লিভিং স্টোনকে সাসপেন্ড করার দাবী উঠেছিলো, পাশাপাশি তাঁকে একদিনের জরিমানা গুনতে হয়েছিলো। এমন বাদানুবাদ আমার সবচেয়ে বেশী হয়েছে লন্ডনের বেথনালগ্রীন আর বো নির্বাচনী এলাকার এমপি জর্জ গ্যালাওয়ের সাথে। ওর সাথে আমার খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবুও প্রফেশনের ক্ষেত্রে জর্জ যেমন প্রশ্নের উত্তর গুলো খুব গুছিয়ে দিতে পারে, বলেও দূর্দান্ত। ইরাক ইস্যূতে ওর অবস্থানের জন্য ব্লেয়ার সরকারতো রীতিমত নাকনি চুবানি খেয়েছে। তবুও আমি কখনও ওকে ফেবার করে প্রশ্ন করিনা। তবে জর্জকে নিয়ে আমি খেলতে বেশী পছন্দ করি। খেলতে শব্দটি ব্যবহার করলাম এই জন্য ওকে দেখলেই যে কোন সাংবাদিকের নেশা ধরে যাবে। এমন দৃশ্য আমি বহুবার দেখেছি, পার্লামেন্ট হাউজ থেকে একই সাথে টনী ব্লেয়ার আর জর্জ গ্যালাওয়ে বের হচ্ছেন মিডিয়া ছূটছে জর্জ গ্যালয়ের পেছনে। তো, একবার জর্জ আমার প্রশ্ন শুনে অনেকট উত্তেজিত হয়ে গেলো। গত সামারের কথা বলছি, সেদিন পার্লামেন্টে জর্জ ফাস্ট সলিউশনের অর্থ কেলেংকারী নিয়ে একটা প্রস্তাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছিলো। আবার একই দিনে জর্জ গ্যালাওয়েকে ম্যারিয়াম আপিল ট্রাষ্ট্রের অর্থ আতœসাতের দায়ে ১৮ দিনের বহিস্কার আদেশের সিদ্ধান্তের ব্যপারেও অপর একটি লবিতে আলোচনা হয়েছে। আমরা সেই বক্তব্য শুনবার জন্য পার্লামেন্ট গ্যালারীতে বসে আছি। তাঁর বক্তব্য শেষে তাঁকে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলো। প্রথমেই আমি সুযোগ পেলাম । জানতে চাইলাম জর্জ তোমার বিরুদ্ধে ম্যরিয়াম আপিল ট্রাষ্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে , তুমি আবার অপর একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে কথা বলছো বিষটাকে তুমি কিভাবে দেখো ? মুখ লাল হয়ে গেলো জর্জের। জর্জ বললো, তোমাকে তো স্কুল বয়ের মতো লাগছে, স্কুল বয়ের মতো প্রশ্ন করছো কেন ? আমি তার কটুক্তিতে মাথা গরম না করে বললাম, জর্জ আমাকে কেমন লাগছে সেটা আমি জানতে চাইনি , তুমি বরং আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, অথবা বল , তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাওনা । জর্জ আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো আজকে এইবিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। বললাম তোমার বিরুদ্ধে সংসদ থেকে ১৮ দিনের বহিস্কারাদেশের একটি ঘোষনা দেয়ার ব্যপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে এই বিষয়ে তোমার অনুভূতি কি ?
-আমি আর কথা বলতে পারছিনা আমার তাড়া আছে।
জর্জকে আর সেদিনের জন্য কোন প্রশ্ন করা গেলোনা।

গতপরশু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও এমন কথা বলে ফেললেন, যদি ও এরশাদকে আমি তখনও কোন প্রশ্ন করিনি।
আমাকে দেখেই এরশাদের প্রথম কথা,
-”বাহ, এতো ছোট সাংবাদিক, বয়স কতো ? তোমাকে তো স্কুল বয়ের মতো লাগছে ”

পরে অবশ্য ইন্টারভিউ শেষে এরশাদ হাত খানা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন , ”না আপনি অনেক স্মার্ট”

আমার মনে পড়ে ছোট বেলার কথা। আমি আসলেই তখন স্কুল বয়, আমরা তখন পটিয়া থাকি। এরশাদ তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান । চট্রগ্রামে ভিজিট করতে আসবে, স্কুলের অংসখ্য বাচ্চাদের সাথে আমিও ফুল নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। এরশাদ গেলে তার গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে দিতে হবে। হায় সেই এরশাদ সাহেবের সাথে দেখা হলো কুড়ি বছর পরে, তখনও আমি স্কুল বয় এখনও স্কুল বয়ই রয়ে গেলাম!


মন্তব্য

রাফি(লগইন করতে পারছি না) এর ছবি

এরশাদ সাহেবের ইন্টারভিউ এর কি কোন লিংক দেয়া যায়?
উনি কী বললেন পড়তে ইচ্ছা করতেছে?

থার্ড আই এর ছবি

চোখ রাখুন খুব শিঘ্রই আসিতেছে।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

আদিত্য এর ছবি

মেয়র কেন লিভিংস্টোন একবার এক সাংবাদিককে বলে বসেন তুমি নাৎসি বাহিনীর দারোয়ানের মতো প্রশ্ন করছো কেন ?

একটা ছোট্ট সংশোধনী জনাব, কেন এখন মেয়র নন, প্রাক্তন মেয়র। লেখা উপাদেয় হইছে।

থার্ড আই এর ছবি

আসলে ওনি যখন মেয়র ছিলেন তখনকার ঘটনা বলছিলাম। আপনার সংশোধনীর জন্য ধন্যবাদ।
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

হিমু এর ছবি

এরশাদের জন্যে আমি একবার থাপ্পড় খেয়েছিলাম হেডস্যারের হাতে। ঊননব্বইয়ে সম্ভবত। স্কুলের বাচ্চাগুলিকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, আজও হয়, এই বাটপারগুলিকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য। এরশাদের জন্যে পাঁচ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম সেদিন, চান্দুর আসার নামগন্ধ নাই। এদিকে যে কোন সময়ে সে চলে আসতে পারে, তাই আমরাও লাইন ছেড়ে যেতে পারছি না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, পানি পর্যন্ত খাইনি। একপর্যায়ে ধৈর্য হারিয়ে "আসে না কেন?" গোছের প্রশ্ন করে হেডস্যারের হাতে অযথা মার খেয়েছিলাম। হেড এর ওপর থেকে শ্রদ্ধা চলে গিয়েছিলো, আর এরশাদের ওপর কখনো শ্রদ্ধা জন্মায়নি, সবসময়ই দেখে ঘোড়ার মতো মনে হতো।

রাজনীতিবিদদের উচিত তাদের চ্যালাচামুন্ডাদের নিষেধ করে দেয়া, অযথা স্কুলের বাচ্চাদের কষ্ট না দিতে। তারা দেশ লুটপাট করছেন সমানে, আবার বাচ্চাদেরও রোদে দাঁড় করিয়ে রাখছেন, সেটা উপভোগও করছেন। এ ব্যাপারে তাদের কোন লজ্জাও নাই। গন্ডারও এদের ছাল দেখে লজ্জা পাবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

থার্ড আই এর ছবি

এইটা কি বললেন ! ঘোড়ার সাথে তুলনা !
ওনি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ট রোমান্টিক রাষ্ট্র নায়ক ছিলেন এটা আপনাকে মানতেই হবে।
আর ছোট বেলায় মনে হয় আমরা সবাই কম বেশী এই রকম ভাবে রাস্তায় আমাদের তথা কথিত রাষ্ট্র নায়ক/নায়িকাদের জন্য অপেক্ষা করছি।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

হিমু এর ছবি

হ্যাঁ ভাই, সবাই অপেক্ষা করেছি। কিন্তু ভালো লাগে নাই। আজও পিচ্চিদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে মেজাজ গরম হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

থার্ড আই এর ছবি

তবে একটা কথা সত্যি এখনকার বাবা মায়েরা অনেক সচেতন। এই সব ফাউল কাজে বাবা মায়েরা তাদের ছেলে মেয়েদের যেতে খুব একটা উতসাহ দেয়না। তবে মফস্বল শহরে এই বিষয়গুলো এখনও রয়ে গেছে।
সম্প্রতি এই বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। আশাকরি গন্ডারদের চামড়া ভেদ করে এই মেসেজগুলো প্রবেশ করবে।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা। পড়ে মজা পেলাম। কিন্ত আজ সেই এরশাদ আবারো রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ালো বলে।

থার্ড আই এর ছবি

কথা সত্য। এরশাদ সাহেব অনেকটা ফিলারের মতো কাজ করছেন। যখন যাদের দরকার তারা ওনাকে নিয়ে জোট বাঁধেন।
------------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহাহা ।।।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

থার্ড আই এর ছবি

মুমুর প্যাটেন্ট হাসি তো বুঝলাম, কিন্তু কোন জায়গায় এতো হাসির উপাদান পাওয়া গেলো বুঝলামনা।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

স্কুলবেলায় সবার জীবনে এ রকম ঘটনা মনে হয় আছে- রোদে পিস্ট হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের অধিপতিদের বরণ করা।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

আমি জিয়ার আমলের ছাত্রী-------তার কবরখানায় যাবার স্মৃতি আছে-------কিছুই বুঝি নাই তখন কেন দালানে ফুল দিলাম------

দুই নেতার কথা শুনে মনে হল প্রাচ্য পাশ্চাত্য প্রভেদ---একজন আগেই ভাবে আরেকজন পরে-----

তবে আপনার চেহারা আসলে কেমন?
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

থার্ড আই এর ছবি

দুই নেতা যেহেতু বলছেন তাহলে কথা ফেলনা নয়, আর আমার চেহারা আসলেই ক্যামন ?? তাইতো আমি নিজেই কনফিউজড !!
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

সবজান্তা এর ছবি

থার্ডু ভাই, আপনার থেকে অন্যরকম একটা পোস্ট আশা করছি।

বাজারে জোর কানাঘুষা যে, ইংল্যান্ডে এরশাদ এবং হাসিনার মধ্যে রাজনৈতিক এক সমঝোতা হয়েছে।

এ ব্যাপারে এক্সক্লুসিভ কিছু বলুন।


অলমিতি বিস্তারেণ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তখনও আমি স্কুল বয় এখনও স্কুল বয়ই রয়ে গেলাম!

এম আর আখতার মুকুলকে বলা শেখ মুজিবের সেই কমেন্টটা মনে পড়ছে
- মুকুল তুই ফুটিলি নারে....

থার্ড আই এর ছবি

- মুকুল তুই ফুটিলি নারে....

আহা সেই সব কাহিনী খুব পড়তে ইচ্ছে করছে, ঝুলি থেকে একটা দুইটা বিস্তারিত গল্প ছাড়েন না ভাইজান।
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।