চ্যানেল আইয়ের একটি পাশবিক রিপোর্ট !

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: শনি, ১১/০৪/২০০৯ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সিলেটের ওসমানী নগরের ৭ বছরের কিশোরীর উপর পাশবিক নির্যাতনের পর পুলিশ নির্যাতন কারীদের গ্রেফতার করতে না পেরে নির্যাতিত কিশোরীকে সেফ হোমে আটকে রাখার করুণ কাহিনী শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রচার করেছে চ্যানেল আই। পাঁচ মিনিট দীর্ঘ ঐ রিপোর্টটি করেছেন চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার তারিকুল ইসলাম মাসুম। রিপোর্টের বিষয় বস্তু নির্বাচন নিয়ে আমার এক শব্দের মন্তব্য হলো সেটি ছিলো অসাধারণ ! কিন্তু রিপোর্টের ভিভিও প্রচার ও সংবাদ পরিবেশনের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি যার ফলে রিপোর্ট টি হয়ে উঠেছে পাশবিক! এই পাশবিক রিপোর্টের কারণে ভবিষ্যতে মেয়েটির যে সামাজিক ক্ষতি হলো সেটি কোন ভাবেই পূরণ হবার নয়।

শিশুদের প্রাইভেসীর বেলায় সাংবাদিকতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গনমাধ্যম কর্মীদের মেনে চলতে হয়, যা ঐ রিপোর্টে মানা হয়নি।

টেলিভিশনে পাশবিক নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে সরাসরি দেখানো হয়েছে,প্রচার হয়েছে তার নাম , বাবার নাম, মায়ের বক্তব্য বড় ভাইয়ের নাম ও বক্তব্য ! যেখানে ইয়াং পারর্সন এ্যক্ট ১৯৩৩ ভঙ্গ করা হয়েছে। ইয়াং পারসন এ্যাক্ট ১৯৯৩ এর ৩৯ ধারায় বলা আছে শিশুদের বেলায় কোন সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদ পত্র বা টেলিভিশনে তাদের ছবি প্রচার করা যাবেনা। এমনকি কোন ভাবে তার বাড়ীর ঠিকানা প্রকাশ করা যাবেনা । কিন্তু রিপোর্টার ৭ বছরের ঐ কিশোরীকে কেয়ার হোমে বন্দী করে রাখা অবস্থায় ছবি তো দেখিয়েছেন সেই সাথে তার বাড়ীতে গিয়ে তার মা বোন আত্নীয় পরিজনের বক্তব্য প্রচার করেছেন, এখন যে কোন মানুষই তাদের সনাক্ত করতে পারবে। যা ঐ পরিবারটির প্রাইভেসী নষ্ট করেছে।

এনটিভির পাশবিক রিপোর্ট !

৭ এপ্রিল এনটিভি একটি সংবাদ প্রচার করেছে। আড়াই বছরের শিশুকে ধর্ষণের সেই লোম হর্ষক ঘটনা বাংলাদেশের সকল বিবেকবান মানুষকে তাড়িত করেছে। কিন্তু রিপোটার আর ক্যমেরাম্যানের সাংবাদিকতা নিয়ম বহিভূত কাজ একজন গনমাধ্যম কর্মী হিসাবে মেনে নেয়া ছিলো কষ্টকর।

রিপোটার ও ক্যমেরাম্যানকে/ফটোগ্রাফারকে প্রাইভেসী এ্যক্ট ভুলে গেলে চলবে না। এই ভুলের অপরাধে রিপোটারের জেল দন্ড ও হতে পারে, যদি অভিযুক্ত আইনের সহায়তা নেয়।

শিশুদের প্রাইভেসীর বেলায় সাংবাদিকতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গনমাধ্যম কর্মীদের মেনে চলতে হয়, যা ঐ রিপোর্টে মানা হয়নি।

টেলিভিশনে পাশবিক নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে সরাসরি দেখানো হয়েছে,প্রচার হয়েছে তার ছবি ও মায়ের সাক্ষাতকার, যেখানে ইয়াং পারর্সন এ্যক্ট ১৯৩৩ ভঙ্গ করা হয়েছে। ইয়াং পারসন এ্যাক্ট ১৯৯৩ এর ৩৯ ধারায় বলা আছে শিশুদের বেলায় কোন সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সংবাদ পত্র বা টেলিভিশনে তাদের ছবি প্রচার করা যাবেনা। এমনকি কোন ভাবে তার বাড়ীর ঠিকানা প্রকাশ করা যাবেনা ।

(www.opsi.gov.uk/RevisedStatutes/Acts/ukpga/1933/cukpga_19330012_en_5#pt3-pb2-l1g41)

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্যমেরাম্যান শিশুটি বিছানায় পরে কাতরাচ্ছে , এপাশ ওপাশ ঘুরছে এমন ছবি দেখিয়েছেন। শিশুটির পায়ের কাছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ও পাশবিকতার সাথে ক্যমেরায় ধারণ করা হয়েছ।

আমি ধরে নিব ঐ ক্যমেরাম্যন সংবাদিকতার 'স' জানে না। রিপোর্টার ও কি মূর্খ ছিলো ...?? সব কিছুর পর বার্তা সম্পাদক কোথায় ছিলেন ?
তাঁর কি দায়িত্ব নেই কতিপয় মূর্খ্য ক্যমেরাম্যান আর কথিত সাংবাদিকরা যা ইচ্ছে ক্যমেরায় ধারণ করবেন তাই তিনি অনএয়ার করে দেবেন ?
আমার গনমাধ্যম সহকর্মীদের একটু জানিয়ে রাখি এই ধরনের ভুল আমরা প্রতি নিয়ত করছি । কিছু দিন আগে চ্যানেল আই এধরনের একটি রিপোর্ট করেছিলো

সিলেটের ওসমানী নগরের ৭ বছরের কিশোরীর উপর পাশবিক নির্যাতনের উপর ভিত্তিকরে ঐ রিপোর্টেও শিশুটিকে সেফ হোমের ভেতর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিলো।

এই সকল কান্ড ঘটে চলেছে ...তথ্য মন্ত্রনালয় কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় ??


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই প্রাইভেসিটা বহু ক্ষেত্রেই লংঘন করা হচ্ছে বহু জায়গায়
আগে তো পত্রিকায় ধর্ষিতার ছবি ছাপা হতো
এখন অবশ্য তা বন্ধ হয়েছে

কিন্তু অনেক রিপোর্ট দেখেই মনে হয়
অনেক সাংবাদিকের আসোলেই বিষয়টি একেবারেই জানা নেই না হলে তারা একেবারেই তোয়াক্কা করেন না বিষয়টা
তারা শুধু দেখেন রিপোর্টের চমক

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রতিবেদনটি দেখেছি।
বার্তা সম্পাদক কোথায় ছিলেন?

চ্যানেল আইয়ের সব সংবাদকর্মী এই নিয়ম-রীতির কথা জানে। আমি একশত ভাগ নিশ্চিত। তবে মাথায় পর্যাপ্ত ঘিলু সবার থাকে না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

রণদীপম বসু এর ছবি

সংবাদ কর্মী ভাইদেরকে মনে হয় আবার মৌলিক অধিকার ও প্রাইভেসী এ্যাক্ট আইনগুলো নতুন করে শিখতে হবে। নইলে উপকারের চাইতে অপকারই বেশি করবেন তারা.....। কিন্তু শিখানোর মানুষ কি নাই....!!!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জাকির জাহামজেদ [অতিথি] এর ছবি

রিপোর্ট সমৃদ্ধ করার জন্য হয়তো রিপোর্টার ভুলে গিয়েছিলেন- ইয়াং পারর্সন এ্যক্ট ১৯৩৩ তিনি মানছেন না ! রিপোর্টার ভাইদের আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। এসব বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেয় জাতি হিসেবে আমরা এখনও হোঁচট খেয়ে পেছনেই পড়ে আছি। কারণ দেশের মিডিয়ার লোকজনের হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল। বিষয়টা তুলে আনার জন্য থার্ড আইকে ধন্যবাদ।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ব্যাপারটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।
এইসব ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্কতা কাম্য।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আনিস মাহমুদ এর ছবি

শুধু দুঃখ প্রকাশে লাভ কী? খুবই প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ এবং সরকার ও নিয়োগকর্তার দিক থেকে এ ধরনের হঠকারিতার শাস্তি দেবার ব্যবস্থা। না হলে এই অতি-উৎসাহী গাড়লদের শিক্ষা হবে না।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার ধারণা এই কাজগুলো ইচ্ছেকৃত। কারণ, এসব বিষয়ে কী করা যাবে, কতটুকু বলা যাবে, কতটুকু দেখানো যাবে এগুলো বহুবার বলা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। আমি যদি এখন একটা খুন করে বলি ফৌজদারী আইনের ৩০২ ধারাটা কী জিনিষ আমি জানি না তাহলে কী আমার শাস্তি মওকুফ হয়ে যাবে? কখনোই না। ব্যবসা বুদ্ধি যখন বিবেককে গ্রাস করে তখন এমনই হয়। যারা প্রফেশনাল অ্যাটিচুড আর কমার্শিয়াল অ্যাটিচুডকে এক মনে করেন তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যেতে পারে।

সাংবাদিকতা তা যে মাধ্যমেই হোক সেটি শিখে কাজ করার ব্যাপার। এমন একটি হাইলি টেকনিক্যাল ও সংবেদনশীল পেশায় যখন শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিবেচনা না করে পরিচিতি, সম্পর্ক ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয় তখন এমন অসহনীয় রিপোর্ট আরো আমাদের সহ্য করতে হবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

পেশাদারিত্ব আসার জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষন দরকার তার অভাব টিভি মিডিয়ায় বেশ প্রকট। দায়িত্বটা সংশ্লষ্ট চ্যানেলের বার্তা সম্পাদকের।

অতিথি লেখক এর ছবি

নিউজ এর থেকে চ্যানাল এর আর্থিক লাভ এর অংশটা বেশী প্রাধান্য পেলে ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে ফলে এ ধরনের রিপোর্টে পরের বার এমন উদারতা কেউ নাও দেখাতে পারে......
ভিকটিমকে ফোকাস না করে যার দ্বারা ভিকটিম হয়েছে তাকে ফোকাস করাটা বেশি জরুরী...

(জয়িতা)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই ধরণের ঘটনার কথা আগেও শুনেছি, মাঝে পত্রিকাগুলো এই বিষয়ে নিয়ম-নীতি মেনে চললেও মিডিয়া গুলো কখনোই এ আইনগুলোর প্রতি শ্রদ্বাশীল ছিলো বলে মনে পড়ে না...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

গণমাধ্যম নিজেই কিছু নিয়ম করে; আবার রথি-মহারথি গণমাধ্যমগুলো তা ভঙ্গও করে! এই তো দেখে আসছি দীর্ঘদিন। এই সব ঘটছে মূলত পেশাদারিত্বের অভাবে; আবার কখনো বাণিজ্যিক কারণে।

একা শুধু চ্যানেল আইকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। থার্ড আই যে ঘটনাটি বললেন, সেটি নিছক উদাহরণ মাত্র। আর টিভি সাংবাদিকতার এ হেন মারাত্নক নিয়ম-লঙ্খনের দৃষ্টান্তের অভাব নেই। চ্যানেল আইয়ের ওই স্টার রিপোর্টার নিউজের সঙ্গে যে ধর্ষণের একটি ফাইল-ফুটেজ জুড়ে দেননি, এই যেনো ঢের!

বিষয়টি অবতারণা করার জন্য থার্ডআইকে বিশেষ ধন্যবাদ।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

আজ রাতে এই রিপোর্টের ফলো আপ দেখাতে গিয়ে দেখানো হয়েছে মেয়েটি সেফ হোম থেকে ছাড়া পেয়েছে। তার ক্লোজ আপ ছবি সহ ইন্টার ভিউ ও নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মেয়েটির মাকেও দেখিয়েছে। এটা সম্ভবত আগের রিপোর্টের পর মিডিয়ার সাফল্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তাই রিপোর্টার মাসুম যথারীতি লাইম লাইটে এসেছেন।
এই বিষযটির স্পর্শকাতরতার দিকটি কি সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের বার্তা বিভাগকে কেউ জানাতে পারেন?

যাচিত বিবেক [অতিথি] এর ছবি

খুবই দু:খজনক, আমরা সবাই কোয়ালিটি বাদ দিয়ে কোয়ানটিটির উপর বেচে আছি।

রিম্মী চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

সত্যিই নাকে তেল দিয়া ঘুমায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।