তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/১২/২০০৯ - ২:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভেতরে আপস আলোচনার ঝড়, রাঘব বোয়ালদের রাজনীতি, আমাদের মত ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাদের ভিক্ষার ঝুলি হাতে অহেতুক লাফানো, বাইরে আন্দোলনরত শত সহস্র পরিবেশকর্মীর স্লোগান আর জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ও আসন্ন প্রভাবে জর্জরিত ও আশঙ্কিত পৃথিবীর এক বিলিয়ন মানুষকে আশা নিরাশার দোটানায় রেখে শেষ হলো কোপেনহেগেন সম্মেলন ২০০৯। সারা বিশ্বকে সাড়া জাগানো ১২ দিন ব্যাপী এই সম্মেলনের শেষের দিনে বিশ্বনেতারা আমাদেরকে উপহাসভরে উপহার দিলেন ‘কোপেনহেগেন একর্ড’। এই অংগীকারনামা নিয়ে যখন সারা বিশ্বের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে[১], চলছে এর চুলচেরা বিশ্লেষন, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সবচাইতে দুর্ভগা দেশটির প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন শেষ হবার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে বলে বেড়াচ্ছেন কোপেনহেগেনের সফল সমাপ্তির কথা[২]। দরিদ্র দেশগুলোর আশা নিরাশার বিচারে কোপেনহেগেন সম্মেলন যে সফল নয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা তবে কতটুকু বিফল তা বলার সময়ও এখনো আসেনি কারন এখনো এই অংগীকারনামার সংযুক্তিগুলো পূর্ণ হয়নি যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর জানুয়ারির শেষ নাগাদ।

কি আছে এই অঙ্গীকারনামায়ঃ

১২ টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত কোপেনহেগেন একর্ডের[৩] মূল অংশগুলি নিম্নরূপঃ

  • পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন সময়ের (১৯ শতক) থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকা উচিৎ। তবে ২০১৫ সালে এই অংগীকারনামা যখন মুল্যায়ন করা হবে তখন দীর্ঘমেয়াদী পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন লক্ষ্যমাত্রা যেমন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিবেচনা করা হতে পারে।
  • এনেক্স ১ (Annex I) দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কতটুকু কমাবে তা ২০১০ এর ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে জাতিসংঘ সচিবালয়ে জানাবে যা পরবর্তিতে কোপেনহেগেন চুক্তির সংযুক্তি ১ এ থাকবে। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে যারা কিয়োটো প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে তারা তাদের ‘কার্বন নিঃসরন কমানোর হার’ কিয়োটো প্রটোকলে উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে আরো বাড়াবে।
  • যেসব দেশ এনেক্স ১ (Annex I)এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা ২০১০ এর ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে জাতিসংঘ সচিবালয়ে জানাবে যা পরবর্তিতে কোপেনহেগেন চুক্তির সংযুক্তি ২ এ থাকবে। এই দেশগুলো কার্বন নিঃসরন কমাতে গৃহীত জাতীয় পদক্ষেপসমুহের রিপোর্ট এমনভাবে প্রদান করবে যাতে তাদের সার্বভৌমত্ত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবের প্রশমনের জন্য উন্নত দেশগুলো সমন্বিত ভাবে ২০১০ থেকে ২০১২ এই তিন বছরের জন্য ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো যেমন স্বল্পোন্নত দেশসমুহ, ক্ষুদ্র দ্বীপবিশিষ্ট উন্নয়নশীল দেশসমুহ, এবং আফ্রিকার দেশসমুহ এই অর্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে।জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনে এই দেশগুলোর পরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন পরিকল্পনার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে এই অনুদানের হার বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার অঙ্গীকার করছে।

এনেক্স ১ অন্তর্ভুক্ত দেশঃ

আলোচনায় যাবার পূর্বে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নেয়া উচিৎ বলে মনে করিঃ

এনেক্স ১ এর অন্তর্ভুক্ত দেশ-এরা মূলত শিল্পোন্নত দেশ সমূহ। UNFCC এর তথ্যমতে মোট ৪০ টি দেশ এর অন্তর্ভুক্ত। এরা হলো অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, বেলারুস, বেলজিয়াম, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া,চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ইষ্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, হাঙ্গেরী, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইটালী,জাপান, লাটভিয়া,লিক্টেনেস্টাইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মোনাকো, নেদারল্যান্ডস,নিউজিল্যান্ড,নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রুশ ফেডারেশন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

সমালোচকের দৃষ্টিকোন থেকেঃ

যেকোন চুক্তি বা সন্ধিরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক থাকে তবে বৃহত্তর স্বার্থের বিচারে যে চুক্তিটির ইতিবাচক দিকটা ভারী হয় তাকেই আমরা সফল একটি চুক্তি বলতে পারি। কোপেনহেগেন একর্ডের বিশ্লেষনে যেতেই প্রথমেই চোখে পড়ে যে এর কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ ‘কিয়োটো প্রটোকল’ নিয়ে যে অভিযোগ ছিল যে উন্নত দেশগুলো তাদের নির্ধারিত কার্বন নিঃসরন হার মেনে চলছেনা সেই একই অভিযোগ ‘কোপেনহেগেন একর্ড’ এর বিরুদ্ধেও থাকবে। উপরন্তু আমরা ৩১ জানুয়ারী ২০১০ এর পূর্বে আদৌ জানিনা উন্নত দেশগুলো তাদের নিঃসরন কমানোর হার কততে নিয়ে আসবে। তার থেকেও বড় কথা বেইজ ইয়ার বা যে বছরের ভিত্তিতে দেশগুলো কার্বন নিঃসরন কমানোর অঙ্গীকার করবে তাও নির্দীষ্ট করে দেয়া হয়নি বরং সংশ্লিষ্ট দেশের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই অঙ্গীকারনামা এখনো বিশ্বের ১৯৩ টি দেশ কতৃক গৃহীত হয়নি বরং স্বীকৃত হয়েছে [৪]।

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে এখনো আমরা দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কার্বন নিঃসরন দিন দিন বাড়িয়েই চলেছি। কোপেনহেগেনে এবারের আলোচনা জুড়ে তাই ছিল পিকিং ইয়ার অর্থাৎ কত সালের মধ্যে আমরা দেশীয় ও বৈশ্বিক মাপকাঠিতে সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণ হারে পৌঁছব। যদিও সবাই বুঝি অতিশীঘ্রই এই লক্ষ্যে আমাদের পৌঁছানো উচিৎ কিন্তু অতিব দুঃখজনক হলেও সত্য এইবারো আমরা নির্দীষ্ট করতে পারলামনা পিকিং ইয়ারকে।

এক্ষেত্রে মূল সমস্যা সেই দেশগুলোকে নিয়ে যারা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের বোরখা পড়ে উন্নত দেশের খাতায় নিজেদের নাম লেখাতে যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেঃ ভারত, চীন দক্ষিন আফ্রিকা ও ব্রাজিল। এই দেশগুলো যেহেতু কিয়োটো প্রটোকলের আওয়ায় এনেক্স ১ এর বহির্ভুক্ত দেশ তাই এদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোন লক্ষ্যমাত্রা নেই। এবার কোপেনহেগেনে প্রশ্ন উঠেছিল এই দেশগুলোর জন্য অন্তত পিকিং ইয়ার নির্দীষ্ট করা যায় কিনা কিন্তু সেটা সফল হয়নি। এই দেশগুলোর দাবী তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আরো বেশ কিছু বছর তাদের কার্বন নিঃসরণ বাড়ানো উচিৎ। সুতরাং দেশীয় স্বার্থ বিচারে তাদের দাবী যুক্তিযুক্ত হলেও বৈশ্বিক দৃষ্টিকোন থেকে এর নেতিবাচক প্রভাব বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশের মত সল্পোন্নত দরিদ্র দেশগুলোকে।

এই চুক্তির দুর্বলতম আরেকটি দিক হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা নিয়ে গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা যা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে এই লক্ষ্যমাত্রার কিন্তু কোন বাধ্যবাধকতা নেই। চুক্তির ইংরেজী অংশটুকু থেকে উদ্ধৃত করছি দেখুন আসলে কি লেখা আছে,

To achieve the ultimate objective of the Convention to stabilize greenhouse gas concentration in the atmosphere at a level that would prevent dangerous anthropogenic interference with the climate system, we shall, recognizing the scientific view that the increase in global temperature should be below 2 degrees Celsius, on the basis of equity and in the context of sustainable development, enhance our long-term cooperative action to combat climate change.

লক্ষ্য করুন এই অংশটি, ‘we shall, recognizing the scientific view that the increase in global temperature should be below 2 degrees Celsius’ , অর্থাৎ এই চুক্তি স্বীকার করছে কিন্তু বাধ্য করছেনা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে। উপরন্তু IPCC এর পঞ্চম রিপোর্ট বের হবার দেড় বছর পরে ২০১৫ সালের এই চুক্তির মূল্যায়ন করা হবে এবং তখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমান ১.৫ ডিগ্রিতে আনার কথা বিবেচনা করা হবে কিন্তু এই পাঁচ বছরে কার্বন নিঃসরণ না কমালে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।

IPCC এর তথ্যমতে কার্বন নিঃসরণ কমানো না হলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ১. ১ থেকে ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে সেক্ষেত্রে এবার কোপেনহেগেনে সবার আশাবাদ ছিল দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনার যেমন প্রস্তাব এসেছিল ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ১৯৯০ সালের মাত্রার শতকরা ৮০ ভাগে কমিয়ে আনা কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব গুলোরো মৃত্যু ঘটেছে সম্মেলনের শেষদিনে।

এবার আসি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থ সাহায্যের প্রসংগে। অন্তত পক্ষে আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্য রথী মহিরথীদের বুকে কিছুটা হলেও মায়া আছে আর সেজন্য এরা কিছু অর্থও বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এই দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া বা তা রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের তুলনায় এই অর্থ নগন্য। তার থেকেও বড় কথা দীর্ঘমেয়াদী কোন কিছুর পরিকল্পনা এই চুক্তিতে নেই।২০১২ সাল পর্যন্ত এই অনুদান ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে যা ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ইচ্ছে তাদের আছে তবে এক্ষেত্রে এই দেশগুলোকে তাদের প্রশমন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে আরো স্বচ্ছ হতে হবে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমনের পরিকল্পনা অন্তত ২০৫০ সাল পর্যন্ত করা উচিৎ।আমার মতে অনুদানের প্রস্তাব এরকম না হয়ে বরং এই দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ তা জেনে সেই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন তার যোগান উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ক্রমান্বয়ে আসা উচিৎ।

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিঃ

সম্মেলনের শুরুতে UNFCC এর নির্বাহী সচিব ইভো দা বুর (Yvo de Boer) এনভায়রনমেন্ট এন্ড এনার্জি পাবলিশিং এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি এই সম্মেলন থেকে মূলত চারটি আবশ্যিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছেন।তার প্রথম প্রত্যাশা অর্থাৎ ‘শিল্পোন্নত দেশগুলি কি পরিমান গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করবে’ পুরোপুরি না হলেও সিংহভাগ ব্যার্থ হয়েছে কারন এখন পর্যন্ত এই দেশগুলো উল্লেখযোগ্য কোন অংগীকার করেনি। দ্বিতীয় প্রত্যাশা অর্থাৎ ‘প্রধান উন্নয়নশীল দেশ যেমন চীন ও ভারত তাদের গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কতটুকু নিয়ন্ত্রন করবে’ পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছে কারন এই দেশগুলি তাদের কার্বন নিঃসরন কমাতে বাধ্য নয় কারন তারা এনেক্স-১ এর বহির্ভুক্ত দেশ।তৃতীয় প্রত্যাশা অর্থাৎ ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে উঠার জন্য কি পরিমান আর্থিক সহায়তা লাগবে’, এটিও আংশিক সফল এবং সিংহভাগ ব্যার্থ কারন এই দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ তা না জেনে কি পরিমান অর্থ প্রয়োজন তা বলা যাবেনা।এক্ষেত্রে উচিৎ ছিল একটি প্রত্যেকটি দেশের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সমীক্ষা উপস্থাপন করা।যাই হোক অন্তত ৩১ জানুয়ারী ২০১০ সাল পর্যন্ত তার সময় পাওয়া গেল। চতুর্থ ও শেষ প্রত্যাশা অর্থাৎ ‘প্রয়োজনীয় অর্থ কিভাবে যোগাড় ও ব্যবস্থাপনা করা হবে’ মোটামুটি সফল কারন অন্ততপক্ষে উন্নতবিশ্বের দেশগুলো এই ক্ষেত্রে একটি অঙ্গীকারে এসেছে।

শেষকথাঃ

সাধারন মানুষ রাজনীতি বুঝেনা, জানেনা বৈশ্বিক উষ্ণতার কথা, তারা খবর রাখেনা জলবায়ুর, তারা শুধু জানে বেঁচে থাকার জন্য কি পরিমান লড়াই করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভুত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করার মত শক্তি এই মানুষগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে পাল্লা দিয়ে। এত শুধু বললাম বাংলাদেশের কথা, একবার ভাবুন পৃথিবীর দরিদ্র ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর কথা বা আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর কথা। এই বিপন্ন মানুষগুলো ধনী রাষ্ট্রগুলোর দয়ায় বেচে থাকবে। এই মানুষগুলো এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। কিছু সাহায্য দিয়ে ধনী দেশগুলো ভাবছে তারা এদেরকে উদ্ধার করে ফেলছে অথচ প্রাকৃতির নিষ্ঠুর বাস্তবতা থেকে এই মানুষগুলির তাতে মুক্তি আসবেনা।

অনেক আশায় বুক বেঁধে ছিলাম এই সম্মেলনকে ঘিরে কিন্তু আমাদের মত অসংখ্য মানুষের আশার বলি ঘটেছে এই সম্মেলনের শেষভাগে।জীবন মৃত্যুর দোটানায় থাকা অসংখ্য মানুষ তাই চেয়ে আছে বিধাতার পানে তাতেও যদি তাদের মুক্তি মেলেঃ

তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে
তব পুণ্য কিরণ দিয়ে যাক মোর মোহ কালিমা ঘুচায়ে
লক্ষ্য শূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে
জানিনা কখন ডুবে যাবে কোন্ অকুল গরল পাথারে
প্রভু, বিশ্ব বিপদ হন্তা, তুমি দাঁড়াও রুধিয়া পন্থা
তব শ্রীচরণ তলে নিয়ে এসো মোর মত্ত বাসনা ঘুচায়ে
আছ অনল অনিলে, চির নভোনীলে, ভূধর, সলিলে, গহনে
আছ বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশী তারকায় তপনে।
আমি নয়নে বসন বাঁধিয়া, ব’সে আঁধারে মরি গো কাঁদিয়া
আমি দেখি নাই কিছু বুঝি নাই কিছু দাও হে দেখায়ে বুঝায়ে

তথ্যসুত্রঃ

[১] NGOs and scientists are largely shell shocked

[২] Worst hit country satisfied with climate deal

[৩] Copenhagen Accord

[৪] Copenhagen deal: Key points


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

হতাশ। সহমত।

আরো খারাপ খবর হল কপ ১৫ এর পরে কার্বনের দাম এমিশান মার্কেটে হঠাত করে পড়তে শুরু করেছে। ৩০ ডলার থেকে এখন ৯/১০ এ চলে এসেছে।
উন্নয়নশীল দেশের প্রচুর পরিবেশবান্ধব প্রকল্প সরাসরি কার্বন বেচা টাকার ওপর নির্ভর করে। ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় কিছু সৌরবিদ্যুত প্রকল্প কথা বলতে পারি, যেগুলো কার্বনের দাম ২০ ডলারের নিচে হলে আর পোশাবে না, দোকান বন্ধ করে বাড়ী চলে আসতে হবে। উত্তর সাগরের বায়ুশক্তি প্রকল্পগুলোও ২৫ ইউরোর ওপরে কার্বনের দাম ও ৩০ ইউরোর ওপরে বিদ্যুতের দাম ধরে গড়া। এতদিন বিদ্যুতের দাম কমে এলেও কার্বনের দামে চলে যাচ্ছিল। ২০১০ এর ওপারেও যদি কার্বনের দাম <১০ ডলার এ থেকে যায় তাহলে বেশকিছু বায়ুশক্তি প্রকল্পকে সরকারের কাছে হাত পাততে হবে।

কপ ১৫ নতুন কিছু তো দেয়ইনি, বরং অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, নেবে।

সচল জাহিদ এর ছবি

এটি ভয়াবহ চিত্র যা চলতে থাকলে উন্নয়নশীল দেশগুলো আরো সমস্যায় পড়বে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

আলমগীর এর ছবি

এরা গাঞ্জা-টাঞ্জার ব্যাপারে নমনীয় শুনছি।
আপারে কেউ সাপ্লাই দিছে নিশ্চয়ই।

সচল জাহিদ এর ছবি

হা হা হা ...

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শুভ [অতিথি] এর ছবি

কপ ১৫ র শেষ কয়েকদিন ধরে পত্রিকার শিরোনামে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনের হতাশাজনক সমাপ্তির কথা শুনে আসছিলাম। আজকে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কথা থেকেও তা কিছুটা বোঝা গিয়েছে। আর জাহিত ভাইয়ার বিশ্লেষন থেকে এর পূর্ণ সত্যতা বোঝা যাচ্ছে। এই সম্মেলনে নব্য উচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো যেমন ভারত, চীন এবং ব্রাজিল কে এনেক্স-১ এ অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস নিয়ে তাদের জন্যে কার্বন নির্গমনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া উচিত ছিল।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং বন-পরিবেশ মন্ত্রী ২ জনেই বলছেন আমরা ক্ষতিগ্রস্থ এটা বিশ্বকে বুঝাতে পারাটাই বাংলাদেশের বড় সাফল্য- এটা একটা হাস্যকর কথা। আমরা যে জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্থ দেশ সেটা নিদেনপক্ষে ৫/৭ বছর আগেই উন্নত দেশে আলোচিত হয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা (বিবিসি, ডব্লিউ ডব্লিউ এফ) কয়েক বছর আগে থেকেই এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে আসছে। বিশ্ব জলবায়ুর সাথে সাথে আমরা যে আঞ্চলিকভাবেও পরিবেশগত নিগ্রহনের স্বীকার হচ্ছি বা ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা আছে বিশেষ করে চীন এবং ভারতের ডাউনষ্ট্রীমে আমাদের অবস্থান এবং তাদের নদীশাসন প্রকল্পের কারনে -এ ব্যাপারগুলো কি তুলে ধরা উচিত ছিল না বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল কর্তৃক??

সচল জাহিদ এর ছবি

শুভ কোপেনহেগেন সফল হয়নি। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি ৭৭ এর নেতাদের বিশেষ করে ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমুহ ও দরিদ্র দেশগুলোর দাবী ছিল এই চুক্তির একটি আইনগত বাধ্যবাধকতার দিকে যা ভেস্তে গেছে। অনেক চাপাচাপিতে ২০১৫ সালে যখন মূল্যায়ন করা হবে এই চুক্তির তখন ১,৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে মাথায় রাখা হবে বলে এই চুক্তিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এটাকেই আমাদের দেশের ডেলিগেটরা সফল বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে কোপেনহেগেনের সফলতা বা ব্যার্থতা কোনটারই দায়ভার বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের উপর বর্তায়না তারপরও কাকে খুশি করার জন্য এই ধরনের বক্তব্য প্রদর্শন? চাটুকারীতা করতে করতে আমাদের নেতাদের বাঁকা হয়ে যাওয়া মেরুদন্ড দেখে আসলেই মায়া হয়। দেশের মানুষকে কি এরা দেখানোর চেষ্টা করছে যে কোপেনহেগেনে বাংলাদেশ গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূলিকা রেখেছে ? আমরাত সবাই জানি তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলো এই জাতীয় সম্মেলনে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চায় মত লাফানো ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা তাহলে বক্তব্য দিয়ে নিজেদেরকে আরো সমালোচিত করার কি প্রয়োজন জানিনা।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দুর্দান্ত এর ছবি

আমাদের বন-পরিবেশ মন্ত্রী যত সহযে ব্রাসেলসের একটি বিশেষ ভাতীয় রেস্টুরেন্টের কথা ভাবতে পারবেন, তত তড়াতাড়ি পরিবেশের কথা ভাবতে পারবেন না। বেলজিয়ামে তার ১০ বছরের ছাত্রজীবনের পুরোটাই গেছে ক্লাসরুমের বাইরে, আর তার দুইবছর গেছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য অনারারী ডক্টরেট এর কাগজপত্র নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট দেয়া হয়েছিল, সেটা এখন উঠে গেছে। তবে তাতে কি, হাসানের সাধনা পূর্ন হয়েছে।

দেশের ক্ষতিগ্রস্ততা বোঝাতেই যদি প্রধানমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রীকে লাগে - তাহলে কপ ১৫ থেকে বিশ্ববাসী এটাও বুঝে গেছে যে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি শুধু পরিবেশ থেকে নয়, এর নেতৃত্ব থেকেও বটে।

অনিকেত এর ছবি

বার বার আমাদের রাষ্ট্র প্রধানরা তাদের অন্তঃসারশূন্যতা প্রদর্শন করে এসেছেন---দেশে এবং দেশের বাইরে সমান ভাবে। কিন্তু সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বলে বেড়ানো যে, সম্মিলন সফল হয়েছে বা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এইটা বোঝানোই একটা বিরাট সাফল্য----এইটা ক্ষমার অযোগ্য।
অশিক্ষা অসচেতনতা মূর্খতা একজন সাধারণ নাগরিককে মানালেও রাস্ট্র প্রধানের এহেন অবিমৃষ্যকারীতার ফলাফল তো আত্মঘাতী।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধ করার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত এহেন আকাট মূর্খ রাস্ট্র নায়কদের হাত থেকে দেশটাকে মুক্ত করা।

সচল জাহিদ এর ছবি

অনিকেতদা আমারো সেই একই কথা, এই সম্মেলনের ব্যার্থতা বা সফলতা কোনটাই আমাদের কার্যকারনে হয়নি তাহলে শুধু শুধু বোকার মত বক্তব্য দিয়ে হাস্যকর হবার চেষ্টা কেন?

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমি জানি এইসব সম্মেলন থেকে কিছু আসবে না। যা করার আমাদের নিজেদের করা লাগবে।

স্যার উইলিয়াম উইলকক্‌সের বইয়ের প্রথম অধ্যায় তাড়াতাড়ি অনুবাদ করে ছাপাও। আমি বাকিটা স্ক্যান করে পাঠাবো।

এই কাজগুলো আমরা করতে থাকি।

সচল জাহিদ এর ছবি

শুভাশীষ এই সম্মেলনকে ঘিরে ভালই সময় দিয়েছে কিন্তু এতটা বিফল হবে ভাবিনি আর তাই শেষ পোষ্ট দিতে অনেক দেরী হল।

যাই হোক তোমার কাজ শুরু করেছি, দেখা যাক ক্রিসমাসের বন্ধে কি হয়। ভালো থেক।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শেখ নজরুল এর ছবি

কেন্দ্রকে না ভাঙলে এখন আর বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।