অনুগল্প - নিক্কন

সো এর ছবি
লিখেছেন সো [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৮/০৭/২০১৫ - ১১:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ট্যাক্সি ধরলাম রিসোর্টের সামনে থেকে। ক্লান্ত, তাই উঠেই সিটে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। অনেক রাত হয়ে গেল আজ। হঠাৎ ড্রাইভারের সিটের পেছনে লেখা ট্যাক্সির নম্বরটা চোখে পড়ল।

AB2F1979।

২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯। মিরার জন্মদিন। AB – আশা বোস। মিরার ভালো নাম। গা-টা কাঁটা দিয়ে উঠল হঠাৎ।

মিরা ডাকছে।

“ব্রিজের ও'পাশে চলো।“ আপনা আপনিই কথাটা বেড়িয়ে এল।

ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। মিরাটা বৃষ্টি পছন্দ করত খুব।

দমটা কেমন বন্ধ হয়ে আসছে। জানালাটা ওপরের দিকে একটু খোলা রাখলাম। হালকা ছাঁট পরুক চোখেমুখে।

সিনেমার রিলের মতো ছবিগুলো ভেসে উঠল চোখের সামনে। বাবার সাদা চাদর, মায়ের লাল টিপ, পুকুরপাড়ে বাড়ি, আর ছটফটে একটা মেয়ে।

আর বৃষ্টি। টিনের চালে বৃষ্টি। পুকুরের জলে বৃষ্টি।

হ্যাঁ। এমন একটা বৃষ্টির দিনেই তো…

মিরার দ্বিতীয় জন্মদিনটা কি ধুমধাম করেই না পালন করলাম। বাবা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিল। মা বানাচ্ছিল কেক। ওদের খুব শখ ছিল মেয়ের। মা নূপুর দিল ওকে একজোড়া।

আমি? আমি জ্বর হয়েছে বলে ঘরে শুয়ে ছিলাম।

সারাদিন নূপুর পরে ছুটে বেড়াত। ঝুমুর ঝুমুর শব্দ । ধরতে গেলেই মার আঁচলের নিচে পালাত। ভেংচি কেটে ওর রিনরিনে গলায় বলত, “আয়। আয়। আয়।“ অসহ্য লাগত আমার।

জানালা বন্ধ করে এসি ছাড়তে বললাম। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাবার অ্যাসমা ছিল। উফ। ওই লোকটার কথা কেন মনে এল?

"এই ব্যাটা, তুই কত বছর বয়সে কথা বলতে শিখেছিলি জানিস? দেড়। আর আমার মিরা? এক বছর দু' মাস। তুই হাঁটলি ন’মাসে, আর মিরা সাত মাসে।“ গা জ্বালা করতো কথাগুলো শুনে।

বুকটা এমন চেপে আছে কেন? জানালাটা খুলে দিলাম পুরোটা। আহ, ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে যাব – কাশির দমকে কেঁপে উঠলাম।

ব্রিজের মাঝখানে আসতেই ট্যাক্সিটা থামালাম। বৃষ্টির দমকে গা কাঁপছে। ব্রিজের রেলিং ধরে উঠে দাঁড়ালাম।

মিরাও দম নিতে পারছিল না, জলের নিচে মাথাটা চেপে ধরেছিলাম যখন। মিরার ছায়ার নিচে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না আর।

নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আর। যমুনার কালো জল ঘুরপাক খাচ্ছে নিচে। পা বাড়ালাম শূন্যে।

রিনরিনে গলায় আওয়াজ আসছে। মিরা ডাকছে - আয়। আয়। আয়।

----শেষ -----

আগের লেখাগুলো :

১. ত্রিপি যদি মানুষ হত (১)
২. কর্নেল সেয়ানার বিজ্ঞান মেলা, প্রফেসর শমশেরের গাড়ি, আর হাবুলের বিজ্ঞান স্বপ্ন । (১)
৩. কর্নেল সেয়ানার বিজ্ঞান মেলা, প্রফেসর শমশেরের গাড়ি, আর হাবুলের বিজ্ঞান স্বপ্ন । (২)
৪. বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী
৫. কাঁটা নামানোর গল্প - How to swallow a fishbone (১)
৬. কাঁটা নামানোর গল্প - How to swallow a fishbone (২)


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এত চিপা ভয় দেখান কেনু? অ্যাঁ

সো এর ছবি

ভয় পাইছেন আসলেই ? অ্যাঁ

এক লহমা এর ছবি

"গা-টা কাঁটা দিয়ে উঠল হঠাৎ।" - আমারও দিল। কিন্তু গল্পটা ক্রমাগত পরিচিত বাঁকের অভিমুখে চলল। প্লটটি যেহেতু অপ্রত্যাশিত নয়, একটা উপায় ছিল পরিণতিতে কিছু টানাপড়েন আনার। আর একটি কথা - অপরাধীর শাস্তি জুটবে, গল্প-পড়া মনের এরকম একটা প্রত্যাশা থাকে। মিলে গেলে, প্রত্যাশা তৃপ্ত হয়। কিন্তু সেটায় সবসময় পাঠকের উত্তেজনা বাড়ে না। বিপরীতে ঐ শাস্তি আশাতে দোলাচল এসে গেলে তা পাঠককেও দোলাতে থাকে। আর কিছু বলছিনা। হাসি

পরের গল্পের সাগ্রহ অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সো এর ছবি

ভয় দেখানো অনেক কঠিন ব্যাপার। বড় হবার পরে খুব অল্প বাংলা/ ইংরেজি গল্প পড়ে ভয় পেয়েছি। এর মধ্যে একটা গল্প রবীন্দ্রনাথের "নিশীথে "; কোনো ভূত পেত্নী ছাড়াও যে ভুতের গল্প লেখা যায় তা ভদ্রলোক বাংলা সাহিত্যের শৈশবেই করে দেখিয়েছেন। মিসির আলী পড়ে প্রথমে ভয় লাগত, তারপর লাগতো বিরক্ত।
সচলে হিমুদার লেখা একটা গল্প পড়ে বেশ ভয় লেগেছিল। একটা টুইস্ট আগেই ভাবলাম ধরে ফেলেছি, কিন্তু পরে অন্য আরেকজায়গায় চমকে গেলাম। ড্রাগন নিয়ে ছিল গল্পটা। এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না।
আমার গল্পটা মোটামুটি মেইনস্ট্রীম; যা বলেছেন আমারও একই মতামত। শেষমেষ আরেকটু ঝোলানো যেত, কিন্তু কেন যেন ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে ইচ্ছা করলো। এ ধরনের গল্পে দুটোই মোটামুটি ক্লিশে হয়ে গেছে।
উত্সাহের জন্য ধন্যবাদ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

সারাদিন নূপুর পরে ছুটে বেড়াতো... গল্পের শেষটা এখানে এসেই যেনো টের পাওয়া যাচ্ছিলো। তবু খারাপ লাগেনি। আপনি লিখেছেন ভালো।

গল্পের শুরুটা খুব পরিচিত ঠেকছে... কোথায় যেনো দেখেছি... এই গল্পটা আর কোথাও দিয়েছিলেন আপনি? অথবা অন্য কোন গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

সো এর ছবি

ভালো ধরেছেন। চলুক
প্রথম প্যারাটা আনন্দমেলা না আনন্দবাজারে একটা থিম থেকে নিয়েছিলাম। গল্প লেখ প্রতিযোগিতা টাইপের কিছু ছিল। এখন আরেকটু ঘষামাজা করে দিলাম।
অন্যটা যেখানে পড়েছিলেন সেটার লিংক পেলে একটু দেবেন প্লিজ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার লেখা ছিলো প্রথমটা? নাহলে প্লেজারাইজ করা হয়ে গেলো না?

সো এর ছবি

আরেকটু খোলসা করা উচিত ছিল। প্রতিযোগিতার থিম ছিল প্রথম প্যারাগ্রাফটা দিয়ে একটা রহস্য থিমের একটা গল্প লেখা।
ওতে পাঠানোর জন্যে কয়েকটা গল্প লিখেছিলাম, কিন্তু পাঠিয়েছিলাম কিনা এখন আর মনে নেই। শুরুটা এক হলেও গল্পগুলো আলাদা ছিল।
সমস্যাটা হচ্ছে যে সেই প্রতিযোগিতাটা আর পরে খুঁজে পাইনি। আবার গুগল করে দেখলাম। পেলে বাকি গল্পগুলো পড়ার ইচ্ছা আছে আছে।
গল্পের প্রথম লাইন দুটো ছাড়া বাকিটা আমার মস্তিস্কপ্রসূত, যদিও একটু ক্লিশেড।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আচ্ছা। বিষয়টি খোলাসা করার জন্য ধন্যবাদ। চলুক

নজমুল আলবাব এর ছবি

এখানে একটা পেলাম। এরকম হলে একটা ফুটনোট দিয়ে দেবেন। সবসময়তো আর খোলাসা করার সুজোগ নাও পেতে পারেন। ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। বাংলা লেখালেখির দুনিয়া খুব বড় না আসলে।

অনেক ধন্যবাদ।

সো এর ছবি

নোটেড।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কল্যাণ এর ছবি

হড়ড় ভাল্লাগে। আরো লেখা দিন, লিখতে লিখতেই জমে উঠবে চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সো এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

১৩-র গল্প বলেন। জাতি জানতে চায়।

কল্যাণ এর ছবি

তেমন কোন গল্পটল্প আসলে নাই। ঘটমা বড়ই অকিঞ্চিৎকর, এক দুর্বল মুহুর্তে হাবুডুবু খেতেখেতে খেয়াল করেছিলাম ইংরেজীতে আমার নাম লিখতে ১৩টা অক্ষর লাগে তাই এই সিগনেচার।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কি নিষ্ঠুর!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সো এর ছবি

মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

পা বাড়ালাম শূন্যে।

রিনরিনে গলায় আওয়াজ আসছে। মিরা ডাকছে - আয়। আয়। আয়।

‌চমৎকার গল্প, চমৎকার প্লট, সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাওয়া, সবই ঠিক আছে। ভালো লেগেছে তবে শেষ পরিণতিটা যেনো ছোটগল্পের সাথে ঠিক খাপ খায়না। একটু অপূর্ণতা থাকলে ভালো হতো।
আমার কাছে গল্পটি ভুতের গল্প মনে হয়নি। ব্যক্তির টানাপোড়েনের গল্প মনে হয়েছে এবং ভালো লেগেছে
Jaraahzabin

সো এর ছবি

শেষটা ঝোলানো যেতো, কিন্তু শেষমেষ ইচ্ছে করলো না।

সাফি এর ছবি

সাংঘাতিক হয়েছে গল্পটা।

সো এর ছবি

দেঁতো হাসি

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সো এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দারুণ। গল্প চলুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সো এর ছবি

লইজ্জা লাগে

রানা মেহের এর ছবি

এটা ভুতের গল্প কীকরে হলো?

আপনার লেখার হাত ভালো। আশা করি প্লটের ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হবেন।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সো এর ছবি

এই 'ভূত' সেই 'ভূত' না। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রথম হাচল পোস্টের অভিনন্দন! হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সো এর ছবি

হাসি

গৌতম হালদার এর ছবি

চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এক পর্যায়ে সমাপ্তি অনুমান করা যাচ্ছিল। তারপরও পড়তে খারাপ লাগেনি। লিখতে থাকুন আরও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।