দীপন হত্যা এবং রণদীপম, তারেক ও টুটুলের উপর আক্রমণ প্রসঙ্গে

সন্দেশ এর ছবি
লিখেছেন সন্দেশ (তারিখ: রবি, ০১/১১/২০১৫ - ১১:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সচলায়তনের ব্লগার রণদীপম বসু, তারেক রহিম এবং শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রধান ও সচল আহমেদুর রশীদ টুটুলের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে। এই আক্রমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দ্বিতীয় দফার আক্রমণে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রধান এবং ব্লগার ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আল কায়েদার মিডিয়া উইং গ্লোবাল ইসলামিক মিডিয়া ফ্রন্ট (জিআইএমএফ) হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। বর্তমানে রণদীপম, তারেক এবং টুটুল আশংকামুক্ত আছেন। এ বিষয়ে সচলায়তনে হাসিব মাহমুদের পোস্টে লাইভ আপডেট পাবেন।

কয়েক মাসের ব্যবধানে নিয়মিত ব্লগার এবং প্রগতিশীলদের হত্যা চলছে। অথচ এখন পর্যন্ত নামকাওয়াস্তে কিছু গ্রেফতার ছাড়া আর এব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তে রাজীব হায়দার হত্যার মাধ্যমে এই ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের শুরু হয়। সে সময় যুদ্ধাপরাধী রাজনীতিগোষ্ঠীদের মূল লক্ষ্য ছিল শাহবাগ আন্দোলন ভন্ডুল করা। শাহবাগ আন্দোলনের সংগঠকদের মধ্যে সিলেটে জগৎজ্যোতি দাস, ঢাকায় আরিফ রায়হান দীপ ও বগুড়ায় জাকারিয়া বাবুও ২০১৩ সালে নির্মমভাবে চাপাতির কোপে নিহত হন। পরবর্তীতে আল কায়েদার মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোর মদদে আওয়ামী সরকারকে বিব্রত করতে, ভবিষ্যৎ মুক্ত আন্দোলনের পথ রোধ করতে এবং আল কায়েদার ঘাঁটি শক্ত করতে একে একে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল হত্যা করা হয়েছে ফয়সাল আরেফিন দীপনকে এবং হত্যার চেষ্টা করা হয় আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপম বসু, তারেক রহিমকে।

প্রতিটি হত্যার পর স্বজন হারনোর বেদনার মধ্যেও বিবৃতি লিখতে লিখতে আমরা ক্লান্ত। রাজীব হত্যার পর আড়াই বছর পার হয়ে গেলো। অথচ আওয়ামী সরকার কিছুই করতে পারলো না। বিচার তো দূরে থাকুক, দায়ী ব্যক্তি এবং এই পরিকল্পনার মূল হোতা কাউকে ধরতে পারে নি তারা। এই দায় যেমন জঙ্গী ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর তেমনি এই ব্যর্থতা আওয়ামী সরকারেরও। বিশেষ করে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বজন হারানোর বেদনার সাথে অপরিচিত নন। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও প্রধানমন্ত্রী আইসিটি পরামর্শক সজীব ওয়াজেদ জয়ও এক সময় ব্লগ লিখতেন। এই দোষে জঙ্গী সংগঠনগুলো তার ক্ষতি করে ফেললেও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চুপ থাকবেন? এই সবকিছু বিবেচনায় এ বিষয়ে সরকার প্রধানের নির্লিপ্ততা ভীষণ পীড়াদায়ক।

আমরা দীপন হত্যাসহ এই ছয় হত্যাকাণ্ড এবং টুটুল, রণদীপম এবং তারেক হত্যা প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যারা দেশের বাইরে আছেন তারা তাদের স্থানীয় সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানকে ফোন দিয়ে এবং চিঠি দিয়ে বাকস্বাধীনতার উপর এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানাতে পারেন। আমরা চিঠির একটি টেমপ্লেট এবং যোগাযোগের উপায় নিয়ে শীঘ্রই একটি পোস্ট দেবো। তাছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বদের সাথে যোগাযোগের উপায় থাকলে তাদের আপনার উদ্বেগের কথা জানান। এই বিষয়ে আরো কর্মপন্থা আপনার জানা থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

অনলাইনে এবং অফলাইনে এই আন্দোলনগুলোর পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সন্দেহজনক গতিবিধি টের পেলে আইন সংস্থাকে জানান এবং বন্ধুদের সাহায্যের অনুরোধ করুন। প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণসহ অস্ত্র সাথে রাখার ব্যবস্থা করুন। মনে রাখবেন আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা অস্ত্রই সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে।

আমাদের প্রতিবাদ চলবে। সেই সাথে চলবে আত্মরক্ষার লড়াই। ভালো থাকুন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আইনসংস্থাকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা থেকে জানানো যেতে পারে। এবং তারাও আনুষ্ঠািনকভাবে জানিয়ে দেবে, লেখালেখি পর্দার আড়ালে করেন নয়তো বিদেশ চলে যান।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাওয়াও তো কঠিন। যেসব দেশে মতপ্রকাশের "অপরাধে" বিচারহীন হত্যার সম্মুখীন হতে হয় না, সেসব দেশের সঙ্গে তাহলে বাংলাদেশের সরকার বন্দোবস্ত করুক যেন বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়।

Emran

মুস্তাফিজ এর ছবি

প্রতিবাদ চলবে। সেই সাথে চলবে আত্মরক্ষার লড়াই। ভালো থাকুন।

...........................
Every Picture Tells a Story

আইলসা এর ছবি

সব'চে ভালো প্রতিবাদ হতো যদি সব প্রকাশক ঘোষনা দিতেন, পরবর্তী বইমেলাতে তারা অভিজিত রায়ের বই ছাপবেন এবং সকল লেখক ঘোষনা দিতেন, অভিজিত রায়ের বই থেকে একটি পৃষ্ঠা/ কমপক্ষে একটি প্যারা তারা ছেপে দিবেন, তাদের প্রকাশিতব‌্য নতুন বইটির সাথে; দেখা যেতো কয়জন প্রকাশককে তারা আঘাত করে!!!, কয়জন লেখকে হত্যা করে!!!
হত্যার মাধ্যমে কন্ঠরোধ করার প্রতিবাদ হোক লেখনীকে আরো ছড়িয়ে দিয়ে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হাতে নিহতদের নামের তালিকাটা মনে হয় এমন হবে। এখানে কোন ভুল থাকলে দয়া করে সংশোধন করে দেবেনঃ

২৪/১২/২০০৪: অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস
০১/০২/২০০৬: অধ্যাপক এস তাহের
১৫/০২/২০১৩: রাজীব হায়দার শোভন
২৮/০২/২০১৩: মামুন হোসেন
০২/০৩/২০১৩: জগৎজ্যোতি তালুকদার
০৯/০৪/২০১৩ (০১/০৭/২০১৩): আরিফ রায়হান দ্বীপ
০৯/১২/২০১৩: জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু
০১/১০/২০১৪: আশরাফুল আলম
১৫/১১/২০১৪: অধ্যাপক এ.কে.এম শফিউল ইসলাম লিলন
০৭/০১/২০১৫: রিয়াজ মোর্শেদ বাবু
২৬/০২/২০১৫: অভিজিৎ রায়
৩০/০৩/২০১৫: ওয়াশিকুর রহমান বাবু
১২/০৫/২০১৫: অনন্ত বিজয় দাস উত্তম
০৭/০৮/২০১৫: নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় নীল
৩১/১০/২০১৫: ফয়সাল আরেফীন দীপন

স্যাম এর ছবি

চলুক

সজল এর ছবি

হুমায়ুন আজাদ

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

আয়নামতি এর ছবি

আমাদের প্রতিবাদ চলবে। সেই সাথে চলবে আত্মরক্ষার লড়াই।

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোট ছোট আরও ছোট আর কত ছোট হবে আজ, নীচে নীচে আরও নীচে আর কত নীচে নামবে সমাজ। হত্যায় কলম থামেনি কখনও বরঞ্চ জন্মে যায় আরও শত, সহস্র, লক্ষ কোটি...
--------------------
ইচ্ছে মত লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের প্রতিবাদ চলবে। সেই সাথে চলবে আত্মরক্ষার লড়াই।

সহমত।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

shamim miah এর ছবি

ব্লগারদের জন্য আত্তরক্ষার অভিনব কৌশল। প্রথম কথা আতংকিত হবেন না। সাভাবিক থাকুন। বাংলাদেশের রাস্তায় অনেক কুকুর আছে। কুকুর একটি অতি চমকপ্রদ প্রাণী। কুকুর ঘ্রান ক্ষমতার মাধ্যমে অনেক কিছু আগে থেকে বুঝতে পারে এবং নিজের মালিকের সুরক্ষারতে সে যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। কুকুর মানুষকে দেখলেই বুঝতে পারে। এটা একটি প্রমাণিত সত্য। সুতরাং একটি কুকুর পোষেন। আপনার অনেক ভাল সময় কাটবে এবং বডিগারড হিসাবে কাজ করবে। একবার ভেবে দেখুন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলের অফিসে যদি তার পোষা দুটি কুকুর থাকত তাহলে কি হামলাকারীরা পারত তাদের এভাবে চাপাতি দিয়ে মারতে? অভিজিতের সাথে যদি একটি পোষা কুকুর থাকত? আর একটি বিশেষ ব্যপার হল খারাপ প্রক্রিতির মানুষ কুকুরকে অনেক ভয় পায়। জি, এটিও একটি প্রমাণিত সত্য। পাশাপাশি আত্ত রক্ষার জন্য তাইচি মারশাল আরট শিখুন। এতে আপনার জীবনেও অনেক উন্নতি হবে। সরকারের আশায় বসে থেকে লাভ কি। আমরা নিজেরাই পারি নিজেদের রক্ষা করতে। রাস্তার কুকুর বলার কারণ হল এরা আমাদের দেশের মানুষের মনোভাব খুব ভাল করে বুঝে। আমি নিজে দেখেছি কুকুর মানুষের কথা বুঝে। রাস্তার কুকুরকে কিছু খাবার দিয়ে একটু আদর করলেই আপনার জন্য পাগল হয়ে যাবে। কারণ তারা এটি সাধারনত পায় না।

শিশিরকণা এর ছবি

মানুষ এর চেয়ে কুকুরের উপর অনেক বেশি ভরসা করা যায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।