এইসব দিন শেষে বৃষ্টি আসে

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: শনি, ২০/১০/২০০৭ - ৭:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে এখন ভালো ঠাণ্ডা পড়ে। দেশি কাঁথা আর একটা হালকা ব্লাংকেট গায়ে দিয়ে কাজ হয় না যদিও, তারপরো থোড়াই কেয়ার করি এইসব।

তিন ধাপের অ্যালার্মদেয়াল ব্যর্থ হয় না, সময়মতোনই ঘুম ভাঙে। প্রথমে বাজে সচল সেলফোন। তার পাঁচ মিনিট পর চিৎকার দেয় বিছানা থেকে একটু দূরে রাখা অচল সেলফোনের সেটটা, যেটা গত এপ্রিলে বদলানোর পর এখন অ্যালার্ম ছাড়া অন্য কোন কাজে আসে না। তারও দশ পনের মিনিট পরে বেজে ওঠে টেবিলঘড়ি, যেটাকে বন্ধ করতে বিছানা ছেড়ে কমপক্ষে চার পা হেঁটে যেতে হয়।

এতো কিছুর দরকার নেই আসলে, বেশিরভাগ দিনই প্রথম চিৎকারেই কাজ হয়, ঘরজুড়ে প্রফেসর শঙ্কু ধরনের এই চিৎকার ব্যবস্থা তৈরির পরও, মাঝে মাঝে অবশ্য অ্যালার্ম বন্ধ করে আরেকবার ঘুমুতে গিয়ে বিপদ ঘটেনি তা নয়। তারপরো এতো কিছু করা, কারণ - সকালে আন্ডারগ্রেডারদের এক্সপেরিমেন্টে কামলা খাটতে হয়। তাও একা। কোনভাবে মিস হয়ে গেলে লজ্জ্বার ব্যাপার। সেই সম্ভাব্য লজ্জ্বা থেকে বাঁচতে অগ্রীম ব্যবস্থা।

এক্সপেরিমেন্টের তিনঘন্টা পুরোপুরি ফাঁকি দেই, নিজের কাজ করে যাই, সচলায়তনে উঁকি দিয়ে সমন্বিত বাঘ ও অপরিণত ঘুড়া ক্যামনে কি কইরলো তাই পড়ে হাসতে থাকি, বিবিসিতে মিজ ভূট্টোর ভীতশংকিত চেহারা ও মৃতের সংখ্যার অবলীলায় তিন ঘর পার করে যাওয়া দেখে হতবাক হই। অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই, খুব বড়োজোর এক মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড পরে ভুলেই বসে থাকি যে, অল্প কিছু মুহূর্ত আগে আহত হওয়ার মতো কোন খবর পড়েছি এবং একদল ভীতসন্ত্রস্ত আহত মুখ ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তাক্ত মানুষের স্থিরচিত্র দেখেছি।

মানুষের শোকের আয়ু লগারিদমিক স্কেলে কমে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। মানুষ নিদারুণ স্যাডিস্টিক হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আমিও ব্যতিক্রম নই তার। অন্যের পিছলে পড়ায় মনে মনে হাসি আর পারলে নিজেই কলার খোসা ছড়িয়ে রাখি, যাতে পিছলে যায় সব্বাই।

এইরকম ভাবতে ভাবতেই দিনটা শেষ হয়ে যায়।
আজকের মনোরোগবিজ্ঞান এর ক্লাসে ডিপ্রেশন টেস্টটা অদ্ভূত ছিলো, কোনরকম বিস্তারিত নির্দেশনা ছাড়াই আপনাকে একটা ঘড়ির ছবি আঁকতে বলা হবে, এরপর ঘড়ির কাঁটা ও ডায়ালের অবিন্যস্ততা অথবা ঘড়ির বৃত্তের আকৃতি দেখে আপনাকে বিশ্লেষণ করা হবে। আমার ইচ্ছে করছিলো, একটা ডিজিটাল ঘড়ির ছবি আঁকতে। হিহি, এই টেস্টে ডিজিটাল ঘড়ি আঁকলে তাকে পজিটিভ বলে ধরা হবে। মজাই লাগলো। মানুষের মস্তিষ্ক পুরোটাই পাজল।

সন্ধ্যায় বৃষ্টি নেমে আসে, সেই সাথে মনে পড়ে, জমে থাকা কাজের পাহাড় আরও উঁচু হচ্ছে। মেইল এর রিপ্লাই দিতে হবে কিছু, কিছু মেইল চালাচালি শুরু করতে হবে নিজের থেকেই, মেইলের প্রস্তুতি হিসেবে জার্নাল পেপার এর লিস্টি বানাতে হবে - চাকুরির অনলাইন এন্ট্রিতে লেখার জন্যে একগাদা মিথ্যে সাজাতে হবে সুন্দর করে। এইসব জায়গায় আমার লিখতে ইচ্ছে করে - আমি আসলে খুব দুঃখবাদী মানুষ, আমার ঘুড়ি ওড়াতে ভাল্লাগে, আমি একা একা শঙ্খনীল নদীর তীরে সূর্যাস্ত দেখতে বসে থাকি অথবা আমি অনেক সময়ই অসুস্থ থাকি এবং আমি আপাদমস্তক আধাপাগল মানুষ । তা না লিখে রচনা করতে হয় নিজেকে বিক্রির জন্যে নিজের বানানো প্রশংসাপত্র। এইসব ভেবে আহে..ম - বলা ছাড়া কোন পথ দেখিনা।

এইভাবে, এইসব দ্বন্দ্ব আর দ্বিধার শেকলে নিজের আত্মার বাঁধা পড়া আর অনেক কষ্টে ভুলে থাকা আত্মজনের অসহায়তা মাখানো স্মৃতি নিয়ে এইসব দিন চলতেই থাকে। কোন কোন দিনশেষে বৃষ্টি নামে ঝরঝর। মধ্যরাতে যখন আমার ১২ মিটার স্কয়্যার এর ঠিকানায় ফেরার জন্যে পথে নামি, তখন ভিজে যাই কিংবা ভিজি না। সেইসব দিনে এইসব লিখতে ইচ্ছে করে।
তাই লিখে রাখি। সব্বার বিরক্তির উদ্রেক করেই।


সময়কাল : অক্টোবর ১৯ শুক্রবার এর দিন পেরিয়ে রাত দুটো মতোন
ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা : উইন্ডোশপার , সিসিএল এর আওতায় ব্যবহৃত


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

লগঅন করে এমন লেখা প্রথমেই পেলে কারনা ভাল লাগে? যথারিতি সুখপাঠ্য এবং নিজের কথা অন্যের জবানিতে পেয়ে যাওয়ার আনন্দ।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৌরভ এর ছবি

ফিরে আসলেন তাহলে?
কতোদিন নজমুল আলবাব পড়ি না।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

"বৃষ্টির আগে ঝড়,বৃষ্টির পরে বন্যা । বর্ষাকালে ,
অনেক দেশে যখন অজস্র জলে ঘরবাড়ী ভাঙবে,
ভাঙবে মুক পশু ও মুখর মানুষ,
শহরের রাস্তায় যখন
সদলবলে গাইবে দুর্ভিক্ষের স্বেচ্ছাসেবক,
তোমার মনে তখন মিলনের বিলাস,
ফিরে যাবে তুমি বিবাহিত প্রেমিকের কাছে ।
হে ম্লান মেয়ে প্রেমে কি আনন্দ পাও,
কি আনন্দ পাও সন্তান ধারনে?

--সমর সেন "

আমার এমন হয় । আমি অনেক লেখাতেই ভীষন আক্রান্ত হই । কিন্তু অস্বস্তিতে ভুগি । কারন, যতোটা আক্রান্ত হই আসলে-ততোটা মুখর হয়ে মন্তব্য করতে পারিনা ।

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

হুমম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তারেক এর ছবি

সেইসব দিনে এইসব লেখা পড়তেও ভাল লাগে হাসি

নজমুল নানাভাই, মোরশেদ ভাই, সৌরভ ভাই ঈদ মোবারক।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নজমুল আলবাব এর ছবি

ওই বেটা তারেইক্কা আমারে নানা ডাকস কেন?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তারেক এর ছবি

হিহিহি। এই যে এইখানে বলছিলাম। ভুলে গেছেন? খেলুম না! মন খারাপ
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নজমুল আলবাব এর ছবি

হু...হু...হু... হাসতেই আছি...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

জিফরান খালেদ এর ছবি

আপনার লিখা সবসময়ি ভালো লাগে... একটা দুঃখবোধ ফুটে ওঠে বারবার... এবং সেটাতেই যেন আপনি আরাম পান... আরামদায়ক দুঃখবোধ বোধহয় একেই বলে...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো লাগল।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বন্ধু তুমি এই তো সেদিন বললে ডেকে
নষ্ট হয়ে যাচ্ছো ব'লে কষ্ট লাগে
রূপসীর এক অহংকারীর অনাদরে
অসম্ভবের ফুল হয়ে আর ফুটলে না যে।
আমি তোমায় সাহস দিলাম বালক পিতা
সর্বনাশা নষ্ট জোয়ার ধ্বংস করো।

কার কবিতা মনে নেই।

এইভাবে দ্বন্ধ আর দ্বিধা নিয়ে যাপিত জীবন। একটা একটা করে দিন চলে যায়। যাক।

সৌরভ এর ছবি

তারেক, জিফরান খালেদ, প্রকৃতিপ্রেমিক
অসংখ্য ধন্যবাদ।

শিমুল, মাঝেমাঝে মনে হয় বেঁকে বসি। পারিনা।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মাঝেমাঝে ঠিক আছে। সবসময় যেন না হয়।

বিবাগিনী এর ছবি

"সব্বার বিরক্তি উদ্রেক" মানে???কে বিরক্ত হোলো?? তাকে বলবেন বিবাগিনী নামক ঢাকাইয়া গুণ্ডীর সাথে দেখা করতে।

পড়তে খুব ভাল লেগেছে।আরও পড়তে চাই।তাড়াতাড়ি লিখুন!বুঝছেন??

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

সৌরভ এর ছবি

ভরসা পাইলাম।
আপনার আগমনে সচল বাগ-ভাল্লুকেরা কেমন যেনো বেড়াল হয়ে গেছে। তাই কেউ আর বিরক্ত হচ্ছে না।
আপনার জয় হোক।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- যাক সিচুয়েশনের কিঞ্চিত্ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। চোখ টিপি
লেখা পইড়া নিজেরে ভিজুয়ালাইজ করছি, হের লাইগা কিছু কইলাম না। নাইলে এইবারো ডলা দেওয়ার ক্যাম্পেইন চালাইতাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সৌরভ এর ছবি

আমাকে ডলা দেওয়ার যে ক্যাম্পেইন, সেখানে আমিও চাঁদা দিয়েছি। হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নিঘাত তিথি এর ছবি

হুম, খুবই বিরক্ত হয়ে "অসাধারণ" বাটন টিপতে হলো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সৌরভ এর ছবি

আপনি ভুল বাটন টিপে ফেলেছেন, এই এরার মেসেজটা অগ্রাহ্য করার জন্যে কৃতজ্ঞতা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শ্যাজা এর ছবি

অদ্ভুত এক সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। মন যেন পার্মানেন্ট খারাপ। কেন খারাপ-কী খারাপ জানি না তবে খারাপ। হাসি যেন শুধুই হাসি। নেই কোন প্রাণের উত্তাপ। ঠোঁটের হাসি গড়ায় না এমনকি চোখ পর্যন্তও...

বৃষ্টি এখন শুধুই বৃষ্টি। মন খারাপ-মন ভালোর সাথে যেন কোন সম্পর্কই নেই এই বৃষ্টির। তবু তাকিয়ে থাকা একদৃষ্টিতে জানলার বাইরের ঐ বৃষ্টিরই দিকে...

রোদেলা এই দুপুরে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। আক্রান্ত হই স্মৃতিতে...

মা এখন কি করছে?


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সৌরভ এর ছবি

শ্যাজাদি, তোমার লেখা দেখি না কেনো?

জানো, প্রথম যখন দেশ ছাড়ি, তখন খালি ভাবতাম, দেশে এখন কয়টা বাজে - আচ্ছা, মা কী করছে - বোনটা কি ভার্সিটি থেকে ফিরেছে?

আর এখন,
মনটা মরে গেছে। এই ভাবনারাও নিখোঁজ।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।