লিখি, কিন্তু লেখা এলো কীভাবে?

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: শনি, ০৪/০৪/২০০৯ - ৬:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা যারা লিখি, যারা পড়ি এবং যারা অন্যদের লিখতে-পড়তে দেখি আমাদের সবার মনেই নিশ্চই কখনো না কখনো প্রশ্ন জেগেছে- ‘লেখা আবিষ্কার করলো কে?’ বা ‘মানুষ প্রথম লিখতে শিখলো কী করে?’। আগেই বলে রাখি, ‘মানুষ কীভাবে ভাষা শিখলো’ বা ‘ভাষার সৃষ্টি কীভাবে হলো’ এটা কিন্তু এই লেখার আলোচ্য নয়। এই লেখার আলোচ্য হচ্ছে ‘লেখা’। কোন সিম্বল দেখে আমরা কী বুঝবো, সেটা আমাদের বেশ কষ্টকর একটা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিখতে হয়। তাহলে এরকম একটা জটিল জিনিস প্রথম বানালো কীভাবে মানুষ? তার উপর কেউ একজন বানালো আর সেটা অন্যরা সবাই মেনে নিলোইবা কেন? আপনি হয়তো বলবেন, ‘কেউ একজন নিশ্চই বানায়নি, ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ পেয়েছে।’ হুম, কথাটা সত্যি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আজকাল আমি ‘বিবর্তন’ আর ‘আপেক্ষিক’ শব্দ দুটি ভয় পেতে শুরু করেছি। আমি প্রশ্নবাজ মানুষ। কিন্তু আমার বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরই আজকাল পাই, ‘ব্যাপারটা আপেক্ষিক’ অথবা ‘এটা ঘটেছে বিবর্তনের মাধ্যমে’। এ ধরণের উত্তর আমাকে ঠিক সন্তুষ্ট করতে পারে না। আমি আরো একটু জানতে চাই। কিন্তু হতাশ হই যখন দেখি উত্তরদাতা- হয় নিজে শেখার সময়ও এই উত্তরেই সন্তুষ্ট ছিলো। অথবা তার এক্সপ্রেশন হয়- এক কথায় পুরো ব্যাপারটা বলে দেওয়ার পরও আরো ব্যাখ্যা চাচ্ছি! (কত বড়ো গাধা আমি), এমন। যাই হোক, কথা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে আমরা মূল প্রসঙ্গে ফিরি।

চীনা ভাষা সম্পর্কে শুনেছিলাম ওদের নাকি হাজার হাজার বর্ণ। প্রতি শব্দের জন্যই নাকি একটা করে আলাদা সিম্বল! ঘটনা আসলেই সত্যি। কানজি নামক একটা প্রভবশালী জাপানি লিখন কৌশলও এরকম। এ ধরণের লেখাকে বলে ‘লোগোগ্রাম’। বর্ণমালার সাহায্যে লেখার আবিষ্কারের আগে এধরনের লিখন কৌশলই প্রচলিত ছিলো। যেমন মিশরীয় হাইরোগ্লিফ, সুমেরীয় কিউনিফর্ম, এবং মায়া গ্লিফ। ব্যাপারটাকে বেশি কঠিন ভাবার কারণ নেই। এমনকি আমরা বাংলা পড়ার সময়ও পুরো একটা শব্দকে একটা সিম্বল হিসেবে একবারেই পড়ি! এটা ঠিক, আমাদের শব্দগুলো বর্ণমালার বর্ণ দিয়ে গঠিত হওয়ায় নতুন শব্দ দেখলে একটু থেমে বানান করে শব্দটা পড়ে নিতে পারি। কিন্তু ‘লোগোগ্রাম’ পদ্ধতির ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পাবেনা। আগে থেকে শব্দের সিম্বল না জানলে তাদের পক্ষে সেটা পড়া অসম্ভব।

একটা সংকেত (সিম্বল) দিয়ে একটা কথার ঠিক কতটুকু বোঝানো হবে, তার উপর নির্ভর করে লিখন-কৌশল কে মোটামুঠি তিনটি মূল কৌশলে ভাগ করা যায়। যেমন একটা সংকেত দিয়ে কখনো একটা ধ্বনি, কখনো একটা পুরো সিলেবাল আবার কখনো পুরো একটা শব্দ নির্দেশ করা হয়। এই তিনটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত সেটা হলো বর্ণমালা কৌশল। যেখানে সাধারণত প্রতিটা মৌলিক ধ্বনির(ফেনম) জন্য একেকটা বর্ণ নির্ধারণ করা থাকে। ইংরেজী, বাংলা, এরা এধরণের লিখন কৌশল অনুসরণ করে। অবশ্য বেশিরভাগ সময়ই বর্ণ সল্পতার কারণে এসব ভাষা একটা সিম্বল দিয়ে একাধিক ধ্বনি প্রকাশে বাধ্য হয়। যেমন ‘একটা’ এবং ‘এভাবে’ শব্দ দুটিতে ‘এ’ এর উচ্চারণ।

তৃতীয় কৌশল যেটা আমাদের একটু কম পরিচিত, সেটার নাম ‘সিলেবারিজ’। এখানে শব্দের প্রতিটা সিলেবালকে একটা একক সিম্বল দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আমাদের পরিচিত বর্ণমালা কৌশলে আমরা একটা সিলেবাল প্রকাশে বেশিরভাগ সময় একটা ব্যাঞ্জনবর্ণের সাথে একটা স্বরবর্ণ ব্যবহার করি। যেমন- ‘কী-ভা-বে’। প্রাচীন কালে সিলেবারিজ কৌশল বেশ প্রচলিত ছিলো। যেমন প্রাচীন মাইসেনিয়ান গ্রিসে ‘লিনিয়ার বি’ নামক সিলেবারিজ কৌশল প্রচলিত ছিলো। এমনকি এই এখনো, জাপানিরা কানা নামক সিলেবারিজ পদ্ধতি ব্যবহার করে টেলিগ্রাম, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, আর অন্ধ পাঠকদের জন্য।

এই তিনটা লিখন কৌশল(স্ট্রাটেজী) কে লিখন পদ্ধতি(সিস্টেম) না বলার কারণ হলো কোনো যেকোনো পরিপূর্ণ লিখন পদ্ধতিই আসলে দুই বা ততোধিক লিখন কৌশলের সংমিশ্রন। যেমন আমারা বাংলা বর্ণমালা পদ্ধতিতেও লোগগ্রাফিক কৌশলে ‘+’, ‘%’ এসব শব্দ সূচক সিম্বল ব্যবহার করি।

যাই হোক, এ গেল পদ্ধতি পরিচিতি। আমাদের মূল প্রশ্ন- কোনো একটা ভাষার লেখ্যরূপ বা লিখন পদ্ধতি কীভাবে শুরু হয়- এর উত্তর এখনো এই আলোচনায় আসেনি।

একদম শুন্য থেকে লিখন পদ্ধতি তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মৌলিক বিষয় এর জন্য নির্ধারণ করা লাগে। একারণেই স্বাধীন ভাবে লেখার আবিষ্কার হয়েছিলো অল্প কিছু যায়গায়। একদম স্বাধীন ভাবে লেখা আবিষ্কারের নিশ্চিত দুটি ঘটনা ঘটেছে মেসপটেমিয়া অঞ্চলের সুমেরীয়দের দ্বারা খ্রিস্ট পূর্ব ৩০০০ আব্দে এবং মেক্সিকান ইন্ডিয়ান দের দ্বারা খ্রিস্ট পূর্ব ৬০০ আব্দে। এছাড়া মিশরীয় (৩০০০ খ্রিপূ) এবং চায়নিজ (১৩০০ খ্রিপূ) রাও হয়তো স্বাধীন ভাবেই লেখা আবিষ্কার করেছে। বাকিরা হয় এদের কাছ থেকে ধার করেছে, আত্মীকরণ করেছে অথবা এদের দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজেরা বানিয়ে নিয়েছে।

শুরুতে ‘লেখা’ ছিলো অনেকটা বাজারের ফর্দের মতো। কে কার কাছে কতো টাকা পায় এধরণের হিসাব মনে রাখতেই তার ব্যবহার হতো। কাব্য-সাহিত্যের চর্চা তখন হতো নিরক্ষর চারণ কবিদের দ্বারা মুখে মুখে (যেমন হোমারের ওডিসি, ইলিয়াড)। লিখন পদ্ধতি কাব্য-সাহিত্য চর্চার উপোযগী হতে সময় লেগেছে অনেক। সে ধরণের ভাষা শুরুর কাহিনী খুবই ইন্টারেস্টিং কিন্তু তার আলোচনা একটু বেশি টেকনিক্যাল মোড় নিতে পারে, আর বেশ দীর্ঘ্য হবারও সমূহ সম্ভবনা। তাই আমরা সেদিকে না গিয়ে বরং একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী শুনবো।

তার আগে বলে নিই, এখনকার দিনে বেশির ভাগ ভাষার লেখ্য রুপই এসেছে স্বাধীনভাবে শুরু হওয়া তিনচারটি লিখন পদ্ধতি থেকে ‘হুবহু প্রতিলিপি’ (ব্লু প্রিন্ট কপি) ‘কিছুটা পরিবর্তণ/পরিবর্ধন) (মডিফিকেশন) অথবা ‘ধারণার বিস্তৃতি’(আইডিয়া ডিফিউশন) পদ্ধতি তে। আমাদের কাহিনীটা আইডিয়া ডিফিউশন নিয়ে। আইডিয়া ডিফিউশন হচ্ছে একটা পদ্ধতি যেখানে কেউ একজন অন্যকে একটা জিনিস করতে দেখে। এরপর নিজেও সেটা করতে উদ্‌বুদ্ধ হয়। যেমন কেউ একটা রকেট বানালো। আমরা দেখলাম যে তারা রকেট ব্যাবহার করছে। কিন্তু কিভাবে তারা এটা বানিয়েছে। ঠিক কিভাবে তারা এটা ব্যবহার করে সেসব না জেনেও আমরা তখন রকেট বানানোর গবেষণা শুরু করতে পারি। এ ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য আমাদের জানা (যে সুবিধা মৌলিক আবিষ্কারকারী পায়নি)। তারপরো আমাদের এই মানসিক আশ্বাস (যে এটা বানানো সম্ভব) ছাড়া তেমন কোন সুবিধা আমরা পাইনা। তারমানে, আমাদেরকেও সেইসব সমস্যার সমাধান করতে হবে যেগুলো সম্মুখীন মৌলিক আবিষ্কারকারীকেও হতে হয়েছে। এই হলো আইডিয়া ডিফিউশন বা ধারণার বিস্তৃতি।

ধারণার বিস্তৃতির সাহায্যে লিখন পদ্ধতির উদ্ভবের সব চেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণটা ঘটেছে এই ১৮২০ সালের দিকে আমেরিকার আরকানসাস অঞ্চলে। সিকয়াহ্‌ নামের এক চেরোকিইন্ডিয়ান এ সময় তার মাতৃভাষা চেরোকি এর জন্য একটা লিখন পদ্ধতি তৈরি করেন। সিকয়াহ ছিলো একজন নিরক্ষর কামার। সে খেয়াল করেছিলো যে সাদারা কাগজে কী যেন সিম্বল একে রাখে, যেটার সাহায্যে তারা এমনকি দীর্ঘ্য বক্তৃতাও নির্ভুল ভাবে পুণরায় বলতে পারে। কিভাবে এই আঁকিবুকির সাহায্যে কথা রেকর্ড করে রাখা যায় সেটা ছিলো তার জন্য একটা রহস্য। তখনকার আর সব চারুকির মত সেও ইংরেজি ভাষা লেখা-পড়া তো দূরে থাক বুঝতোই না। সে যেহেতু কামার ছিলো তাই এই ঘটনা দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রথমে সে একটা অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম বানানোর চেষ্টা করলো। এই পদ্ধতিতে সে তার কোন গ্রাহকের কাছে কতো টাকা পায় মনে রাখার জন্য প্রথমে গ্রাহকের একটা ছবি আঁকতো তারপর বিভিন্ন আকারের বৃত্ত ও রেখা একে টাকার পরিমান নির্দেশ করত।

১৮১০ সালের দিকে সিকয়াহ্‌ সিদ্ধান্ত নিলো যে সে তার চেরোকিভাষার জন্যই একটা লিখন পদ্ধতি তৈরি করবে। প্রথমে সে ছবি আঁকা পদ্ধতিতে লেখা শুরু করলো। কিন্তু ব্যাপারটা জটিল আর একটু বেশি আর্টিস্টিক। তাই সে এর পর প্রতিটা শব্দের জন্য আলাদা আলাদা সিম্বল তৈরির চেষ্টা করতে থাকলো। কিন্তু এভাবেও বেশি দূর এগনো গেলো না। কারণ তার সিম্বল সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো এবং তাতেও কুলাচ্ছিলোনা।

এ পদ্ধতি বাদ দিতে হলেও হাল না ছেড়ে সিকয়াহ, লেগেই রইলো। এবং অবশেষে আবিষ্কার করলো যে প্রতিটা শব্দ আসলে এমন কিছু শব্দাংশের সমষ্টি যে সব শব্দাংশ আবার ঘুরে ফিরে অন্যান্য শব্দেও ব্যবহার হয়- আমরা যেটাকে বলি সিলেবাল। সে শুরুতে ২০০ সিলেবালিক সিম্বল বের করলো। এর পর সে এই সিম্বল একক গুলোকে কমিয়ে ৮৫ এ নিয়ে আসলো। এইসব এককের বেশিরভাগই ছিলো একটা ব্যাঞ্জনবর্ণ এবং একটা স্বরবর্ণের সমষ্টি। কিন্তু এতগুলো নতুন নতুন লেখার সিম্বল সে কোথায় পাবে? তাই বেশ কিছু সিম্বলের উৎস হিসেবে সে এক শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া একটা ইংরেজী বানান বই ব্যবহার করে। চেরোকিভাষার প্রায় দুইডজন সিম্বল ইংরেজী থেকে নেওয়া। আগেই বলেছি সে ছিলো নিরক্ষর। তার উপর ইংরেজী সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারণাও ছিলোনা।
চারুকি সংকেত: সিকয়াহ্‌র উদ্ভাবিত চেরোকি লেখনী সংকেত।(ছবি বড়ো করতে ক্লিক করুন)
তাই তার ইংরেজী বর্ণের চেরোকি ব্যবহার ইংরেজীর সাথে মোটেও মেলেনি। যেমন D, R, b, h এই বর্ণগুলো দিয়ে সে চেরোকি সিলেবালের এ, ই, সি, নি, বোঝাতো। ইংরেজি 4 দ্বারা বোঝাতো চারুকি সিলেবাল ‘সে’। এ ছাড়া অন্য অনেক সিম্বল ছিলো সম্পুর্ণ তার নিজস্ব উদ্ভাবন। সিকয়াহ্‌র তৈরি করা এই ‘সিলেবারিজ’ পদ্ধতি ভাষাবিদদের মধ্যেও প্রশংসি হয়েছিলো। মূলত চেরোকি ভাষার সাথে তার পদ্ধতির দারুণ মিল এবং সহজে শেখার উপযোগী হবার কারণে খুব দ্রুত চারুকিরা প্রায় ১০০ শতাংশ অক্ষরজ্ঞান লাভ করে। এর পরই তারা একটা প্রিন্টিং প্রেস কিনে নেয়, সিকয়াহ্‌র সিম্বল গুলোকে টাইপসেট করে এবং খবরের কাগজ প্রকাশ করা শুরু করে।

চেরোকি লিখন পদ্ধতি হচ্ছে আইডিয়া ডিফিউশন বা ধারণার বিস্তৃতির সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমরা জানি সিকয়াহ, কাগজ, কলম, অন্যান্য সরঞ্জাম, লিখন পদ্ধতির ধারণা, আলাদা-আলাদা সিম্বল ব্যবহারে ধারণা এ সবই বাইরে থেকে পেয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি নিরক্ষর হবার কারণে এবং ইংরেজী সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকাতে ইংরেজীর এইসব লেখালেখি দেখেও সে এসবের মূলনীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও পায়নি। পুরোটা সময় সে ছিলো এমন এক বর্ণমালার সংস্পর্শে যার একবিন্দুও সে বুঝতো না। কিন্তু একসময় সে নিজেই তাতে একটা অর্থ আরোপ করে নেয়। এবং সম্পুর্ণ স্বাধীন ভাবে(ইন্ডিপেন্ডেন্টলি) আরেকটি সিলেবালারিজ পদ্ধতি তৈরি করে। তার সম্পুর্ণ অজানা ছিলো যে প্রায় ৩৫০০ বছর আগে ক্রেট -গ্রীসের সবচেয়ে বড় ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ- অঞ্চলের মিনাওয়ানরা এ ধরণের সিলেবালারিজ লিখন পদ্ধতি তৈরি করেছে।

সিকয়াহ্‌র সুবিধা ছিলো সে কী চায় তা সে জানতো। একারণে তার পক্ষে একাই একটা ভাষার প্রমান লেখ্য রূপ দাঁড়া করানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু একটা ভাষা শুন্য থেকে গড়ে তুলতে গেলে এই পুরো প্রকৃয়াটা অনেক মানুষের শ্রমে অনেক পরিবর্তন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ্য সময় ধরে যেতে হয়। সিকয়াহ্‌ অতিসাধারণ ছিলো, ছিলো নিরক্ষর কামার, কিন্তু সে হতে পেরেছিলো 'অতি'অসাধারণ। সম্পুর্ণ নিজের চেষ্টায় শুধু নিজেরই নয় পুরো একটা মানবগোষ্ঠির জন্য যুগিয়েছিলো অক্ষর। তার প্রতি শ্রদ্ধা।

আমাদের মূল প্রশ্নের পুরো উত্তর অবশ্য আমরা পাইনি, কিন্তু এতক্ষণের আলোচনার মধ্য দিয়ে আশাকরি আমরা লেখন পদ্ধতির সৃষ্টির এবং এর বিবর্তনের উপর আরো একটু আলোকিত হলাম। ধন্যবাদ। আগ্রহীরা সূত্রে উল্লেখিত বইটি দেখতে পারেন।

সূত্রঃ জারেদ ডায়মন্ডের ‘গান্‌স জার্মস এন্ড স্টিল’ বইয়ের এর চ্যাপ্টার-১২ ‘ব্লু-প্রিন্ট আন্ড বরোড লেটারস’ এর আলোকে।


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন লাগলো। এরকম তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট আরো আশা করতেছি।
বইখানা পড়ার ইচ্ছা রাখি, কিন্তু পামু কই? লিঙ্ক দিতে পারবেন ইবুক এর?

স্পর্শ এর ছবি

ইবুক আমি টরেন্ট দিয়ে নামিয়েছি। আপনি সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

গৌতম এর ছবি

কপিরাইট আইনের ঝামেলা না থাকলে মিডিয়াফায়ার বা এ জাতীয় সাইটে রেখে লিংকটা দিতে পারেন, আমরা যাতে খুব সহজে নামিয়ে নিতে পারি।

লেখার জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু শিখলাম।

এখন আরেকটি লেখার আবদার। সেটি হলো- একই প্রাথমিক ভাষা থেকে উৎপন্ন পরবর্তী ভাষাগুলোর লিপি কীভাবে আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয় যায় সে সম্পর্কে লেখা চাই। যেমন- হিন্দি ও বাংলা ভাষার মূল একই- ইন্দো-ইউরোপিয়ান। কিন্তু হিন্দির ব আর বাংলার ব-এর গঠন আলাদা। এই আলাদা হওয়ার কারণ ও বিবর্তনটা কীরকম? সম্ভব হলে ইন্সপায়ারেশনের জন্য এরকম একটি লেখা ছাড়ুন।

ধন্যবাদ আবারও।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্পর্শ এর ছবি

দীর্ঘ্য মেয়াদি বিবর্তন কাজ করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা লেখন পদ্ধতি তে। যেমন একটা ‘বানানো’ উদাহরণ দেওয়া যায়। ধরেণ কোনো ভাষায় পাখি বোঝাতে তারা একটা পাখি আঁকে লোগোগ্রাম কৌশলে। এখন তারা যদি সিলেবালারিজ অথবা বর্ণমালা পদ্ধতি তে শিফট করতে চায় তাহলে ‘প’ ধ্বনির জন্য হয়তো তারা পাখির কাছাকাছি কোনো সিম্বল ব্যবহার করবে। অবশ্যই এই শিফটটা হবে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে।

কিন্তু আমরা যারা লেখনী পেয়েছি হয় আইডিয়া ডিফিউশন বা মডিফিকেশন বা এসবের মিশ্র পদ্ধতিতে (মৌলিক নয়) তাদের লেখনী ক্ষেত্রে আসলে এই কাজটা এক বা কিছু সংখ্যক লোক দিয়ে সম্পাদিত হয়। এবং সেটা হয় বেশ তাড়াতাড়ি এবং জেনে-শুনে। তাই ব্যাপারটাকে ঠিক ধীর বিবর্তনে ধারণায় ফেলা যায়না।
আর বাংলা বা হিন্দির ক্ষেত্রে কি ঘটেছে সেটা আসলে আমার জানা নেই।

আমার এই লেখাটা অতিসংক্ষিপ্ত এবং টেকনিক্যাল ডিটেইল যতটা পারি দূর করার চেষ্টা করেছি। আগ্রহী হলে বইটা দেখতে পারেন।

এই বইটার আসলে কপিরাইট প্রবলেম আছে! ইয়ে, মানে...
তবে এখান থেকে টররেন্ট নিতে পারেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

এনকিদু এর ছবি

গঠন কিন্তু খুব বেশি আলাদা না । অভিন্ন ইন্দো-ইউরোপিয় লেখনি থেকে বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বলেই দুই ভাষার লেকনিতে কিন্তু মিল বেশি । যেমন ধরেন মাত্রার ব্যবহার । স্বরবর্ন গুলোকে ছোট করে 'কার' ( আ-কার ই-কার ইত্যাদি) এর মাধ্যমে প্রকাশ । যুক্তাক্ষর । এইসব জিনিস কিন্তু ঠিকি আছে । বদলেছে শুধু ছোট ছোট প্রতীক গুলো, তাও খুব বেশি না ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নিবিড় এর ছবি

চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দারুণ ইন্টারেস্টিং জিনিস।
চিন্তা করলে তো আমাদের আশেপাশে আইডিয়া ডিফিউশন এর অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে। আমরা তো আসলেই তাই করি প্রায় সময়। একটা লক্ষ্য জানা থাকে। এরপর হাঁটা দাও নিজের মত। নিজের বিবেচনায়।

সিকয়াহকে শ্রদ্ধা। মানুষের মধ্যে যে কখন কী থাকে? অদ্ভূত!

আইচ্ছ্যা। এ বিষয়ে বাংলা বই কী পাওয়া যাবে?

আমার আবার এত অল্প স্বল্পে কিছু হয় না। ঃ)

আর এই ইন্টারেস্টিং বিষয়টা নিয় লেখার জন্য আপনারে ধইন্যবাদ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্পর্শ এর ছবি

বাংলায় আছে কিনা জানা নেই ঠিক। তবে হুমায়ুন আজাদের 'কতো নদী সরোবর বা বাংলা ভাষার জীবনী' দেখতে পারো। অবশ্য বইটা মনে হয় ভাষা নিয়ে 'লেখনী' নিয়ে না!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

ধূর মিয়া!! অনেক তো আঁতলামী হইলো- এইবার একটা গল্প দেন।

স্পর্শ এর ছবি

ক্রিয়েটিভিটি লাগবে তো! সেইটার জন্য ইন্সপাইরেশন লাগবে। সেইটার জন্য ... লাগবে। অনেক প্রিকন্ডিশন। সেই দুঃখে আতলামী শুরু করছি। মন খারাপ


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

আহারে!! ইন্সপাইরেশনের জন্য চোখ টিপি কেউ "নাগরিক বিষণ্ণতায়" আক্রান্ত হয়, আর কেউ আঁতলামী শুরু করে দেঁতো হাসি

স্পর্শ এর ছবি

নিজেতো আছো ক্লাউড নাম্বার নাইন এ আমাদের দেখে তো দাত কেলাইয়া হাসবাই !! মন খারাপ তোমার মতো ছোটো ভাই হইয়া বড়ো ভাইদের জন্য কিছু করতে পারলা না। মিয়া... রেগে টং


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্পর্শ, চল মিয়া রায়হান বেটারে ধইরা মাইর লাগাই দুইজন। মাইরা তক্তা বানাইলে যদি একটু শিক্ষা হয় ওর। নিজে মহাসুখে আছে তো, তাই খালি অন্যরে এখন খোঁচা মাইরা বেড়ায় রেগে টং

লেখাটা অতি মাত্রায় ভাল হইসে। অনেক শিক্ষণীয় পোস্ট। চালায়া যাও... চলুক

রায়হান আবীর এর ছবি

আরে "নাগরিক বিষণ্ণতা" ভাই চলে এসেছে দেখা যায় খাইছে খাইছে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

'আছো তো সুখে, টোকা দিলেই বাজে' চোখ টিপি

সবজান্তা এর ছবি

এই নাম প্রতিবার উচ্চারণ কিংবা টাইপের সাথে সাথে এই নামের আবিষ্কর্তাকে পাঁচটাকা করিয়া ( অন্যথায় একখানা বেনসন ছিকারেট) দিতে বাধ্য থাকিবে।


অলমিতি বিস্তারেণ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কিন্তু ও যে যেখানে-সেখানে আজকাল এই নামে আমারে ডাকা শুরু করসে, তার কী হবে? মন খারাপ

আমিও টাকা(র ভাগ) চাই দেঁতো হাসি

স্পর্শ এর ছবি

রায়হান আছে মহা সুখে অট্টালিকা পরে,
আমরা কতো কষ্ট পাই রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রেনেট এর ছবি

ও স্পর্শ ভাই, আপনার পিলিজ লাগে...আমার মত গরু গাধাদের জন্য একটা আবজাব ছাড়েন।
আবজাব ছাড়া মাথায় কিছুই ঢুকে না মন খারাপ
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

উফ... এখন পড়ার সময় নাই... সংগ্রহে রেখে দিলাম... সময় করে পড়বোনে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুজন চৌধুরী এর ছবি
কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার তথ্যপূর্ন লেখা।

অনেক কিছু জানতে পারলাম।

ধন্যবাদ হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম।

এনকিদু এর ছবি

খুব ভাল লেখা ! এটা কে সিরিজ করে ফেললে কেমন হয় ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্পর্শ এর ছবি

আসলে শুধু এই বিষয় নিয়েই সিরিজ করে ফেলা যায় ঠিকই। কিন্তু আমার ধৈর্যে কুলাবেনা। ইয়ে, মানে...
তার চেয়ে এরকম বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং বিষয়ের চুম্বক অংশ নিয়ে এধরণে সিরিজ চালানোর ইচ্ছা। আর সূত্র যেহেতু দেওয়াই থাকে। কেউ চাইলে সেখান থেকে আরো ডিটেইল আইডিয়া পাবে।

btw. চারুকি রে চেরোকি করে দিচ্ছি।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সিরাত এর ছবি

'গানস, জার্মস এন্ড স্টীল' আমারো বেশ প্রিয় বই। ভাল লেখা, কিন্তু কেন জানি এসব পড়তে ধৈর্য লাগে, হাফওয়ে এসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তবে কয়েক দফায় পড়া হয়ে যায়। জেমস মিচেনারের মত লেখেন, গল্পে গল্পে শেখান!

ধন্যবাদ!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

স্পর্শ, দেখছি, রীতিমতো অভিজিত্-দিগন্ত-শিক্ষানবিস গ্রুপের সদস্য! অথচ আগে তাঁকে "আবজাব"-পাবলিক ভেবে কী ভুলই না করেছিলাম! হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্পর্শ এর ছবি

খাইসে! ইয়ে, মানে...
আমিতো আব্‌জাব ই।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

PagolKobi এর ছবি

লেখা ভাল হইছে। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

কঠিন লেখা। কমেন্ট দিতেও ডর লাগে। আমি বরং একটা কাটপেস্টই মারি।-

১৪ | সংসারে এক সন্ন্যাসী | সোম, ২০০৯-০৪-০৬ ১৬:০১

স্পর্শ, দেখছি, রীতিমতো অভিজিত্-দিগন্ত-শিক্ষানবিস গ্রুপের সদস্য! অথচ আগে তাঁকে "আবজাব"-পাবলিক ভেবে কী ভুলই না করেছিলাম!

----------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

স্পর্শ এর ছবি

রে রে রে রে রে...। ইয়ে, মানে...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।