কৃত্রিম জীবন

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: শনি, ২২/০৫/২০১০ - ৪:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কৃত্রিম জীবন সৃষ্টি করেছে মানুষ। এ নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে চারিদিকে। কী হবে না হবে সেই আশা-আশঙ্কায় দোদুল্যমান সবাই। গত ২০ মে সাইন্স জার্নালের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে একদল বিজ্ঞানী তাদের এই সাফল্যের কথা প্রকাশ করেন। ইন্টারনেট ও নিউজ মিডিয়ায় এ বিষয়ক খবরের অন্ত নেই। তাই সেদিকে আর যাচ্ছি না। তাহলে এই পোস্ট কেন? আসলে ‘সাইন্স’এ প্রকাশিত মূল গবেষণা নিবন্ধটি অনুবাদের চেষ্টা করলাম। প্রচণ্ড আগ্রহী কিছু পাঠক নিশ্চই আছেন। তারাই লক্ষ্য। মোটামুটি আগ্রহীদের জন্যও ‘অভয় বাণী’হিসাবে বলতে পারি, মূল গবেষকরা তাদের এই যুগান্তকারী কাজের কথা ঠিক কী ভাষায় প্রকাশ করছেন সেটাও নিশ্চই আগ্রহোদ্দীপক।

এই পোস্টে ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট, ইন্ট্রডাকশন, ডিসকাশন’এই তিনটি সেকশনের অনুবাদ প্রকাশিত হলো। অনুবাদে মূলানুগ থাকার সর্বাত্বক চেষ্টা করেছি। টেকনিক্যাল ডিটেইলের অনুবাদ পোস্টের পাঠযোগ্যতা রক্ষার্থে প্রকাশ করছি না। কপিরাইট ইস্যুও আছে কিছু। আসল কথা হলো পুরো অনুবাদকর্মটিই এখনো প্রক্রিয়াধীন।

বানান, পরিভাষা ও অনুবাদগত ত্রুটি সংশোধণ করে দিলে দ্রুততা ও কৃতজ্ঞতা সাথে সেটা শুধরে নেওয়া হবে। শুভ পাঠ-

 

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লেষিত জিনোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যাকটেরিয়া কোষের সৃষ্টি

 

অ্যাবস্ট্রাক্ট-

এই নিবন্ধে আমরা ১.০৮ Mbp Mycoplasma mycoides JCVI-syn1.0 জিনোমের নকশা, সংশ্লেষণ এবং সন্নিবেশন প্রকাশ করছি, যেখানে ডিজিটাইজড জিনোম সিকুয়েন্সের তথ্য একটি গ্রাহক Mycoplasma capricolumকোষের মধ্যে প্রতিস্থাপন পূর্বক একটি নতুন Mycoplasma mycoidesকোষ প্রস্তুত করা হয়েছে যে কোষটি শুধুমাত্র কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট ক্রোমোজম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কোষের একমাত্র ডিএনএটি কৃত্রিম ভাবে প্রস্তুতকৃত ডিএনএ যেটি গঠনের সময় তাতে সনাক্তকরণ জলছাপযোগ করা ছাড়াও অন্যান্য পরিকল্পিত ডিলিশন(মোচন), পলিমরফিজম (বহুরূপ) এবং মিউটেশন (পরিবর্তন) ঘটতে দেওয়া হয়েছে। এই নতুন কোষগুলোর প্রত্যাশিত ফেনোটাইপিক প্রপারটিসমূহ রেয়েছে এবং এরা ক্রমাগত বিভাজনের মাধ্যমে বংশবিস্তারে সক্ষম।

 

১৯৭৭ সালে স্যানজার এবং তার দল ফেজ φX174 (1) এর পরিপূর্ণ জিন সিকুয়েন্স (অনুক্রম) নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এটাই ছিলো প্রথম ডিএনএ যার পূর্ণ সিকুয়েন্স নির্নয় করা হয়। আঠারো বছর পর, ১৯৯৫ সালে আমাদের গবেষক দল সর্বপ্রথম Haemophilus influenzaeনামক বংশবিস্থার সক্ষম ব্যাকটেরিয়ার পুর্ণ জীন সংকেত পাঠোদ্ধারে সক্ষম হয়(২)। সেই প্রথমিক গবেষণার পর থেকে বহুবিধ প্রজাতির জিন সংকেত পাঠের পরিমান সুচকীয় হারে(এক্সপোনেনশিয়ালি) বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৫ বছরে আমাদের জিন সংকেত ডিজিটাল রুপান্তর করার ক্ষমতা প্রায় আট গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জিনোমিক তথ্য বোঝার ক্রমাগত প্রচেষ্টা থেকে বহু গননা (কম্পিউটেশনাল) ও পরীক্ষণ পদ্ধতির সুচনা হয়েছে, তবুও আমাদের জিনোম সম্পর্কিত জ্ঞান এখনো বেশ সীমিত। এখনো পর্যন্ত কোনো একক কোষীয় ব্যবস্থার সকল জিনের জৈবিক ভূমিকা পরিপূর্ণভাবে নির্ণিত হয়নি। একটা সাধারণ ব্যাকটেরিয়া কোষে শুধু মাত্র ক্রোমোজোমেই তার সম্পূর্ণ জেনেটিক তথ্য থাকে কিনা? যদি তাই থাকে, তাহলে ডিজিটাল কম্পিউটারে সংরক্ষিত সেই জিন সিকুয়েন্সের তথ্য থেকে কোনো রাসায়নিক প্রকৃয়ায় ডিএনএ প্রস্তুত করে সেটার সাহায্যে একটি জেনেটিক সিস্টেম প্রস্তুত করা কি সম্ভব?

শুধু মাত্র অপরিহার্য জিনসমূহ আছে এমন একটা ন্যুনতম (মিনিমাল) কোষ তৈরির আমাদের ১৫ বছর ব্যাপি প্রচেষ্টার ফল স্বরুপ বড় আকারের ডিএনএ এবং ক্রোমোজম সংশ্লেষণের প্রতি আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয় । এই গবেষণার সূচনা হয় ১৯৯৫ সালে Mycoplasma genitaliumনামক ব্যাকটেরিয়ার জিন সিকুয়েন্স নির্ণয়ের মধ্যদিয়ে। এই ব্যাকটেরিয়াই এখনো পর্যন্ত জানা সকল অনুজীবের মধ্যে স্বল্পতম সংখ্যক জিন বিশিষ্ট প্রাণি যেটা ল্যাবরেটরিতে স্বাধীন ভাবে বৃদ্ধি পেতে সক্ষম। M.genitaliumএর ৪৮৬টি প্রোটিন সংকেত ধারণকারী জিনের মধ্যে থেকে একে একে ১০০ টির অধিক জিনকে বাদ দিলেও এটি কর্মক্ষম থাকে।

আমরা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র টুকরো থেকে বৃহদাকার ডিএনএ অনু প্রস্তুত করার একটা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছি এর সাহায্যে আমরা রাসায়নিক ভাবে সংশ্লেষিত গড়ে ৬kb আকারের ডিএনএ ক্যাসেট থেকে চার ধাপে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম M.Genitaliumজিনোম প্রস্তুত করতে সক্ষম হই। এ কাজে Saccharomyces cerevisiaeএর মধ্যে ইন ভিট্রো (শরীরের বাইরে পরীক্ষণ পাত্রে সংঘঠিত) এনজাইমিক (উৎসেচকীয়) এবং ইন ভিভো (অনুজীবের মধ্যে সংঘটিত) পুনরুৎপাদন পদ্ধতির মিশ্র প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ কৃত্রিম জিনোমটি (৫৮২,৯৭০bp) ইস্টের সেন্ট্রোমেরিক প্লাজমিড হিসাবে সুস্থিত ভাবে গঠন করা হয় (7)।

গ্রাহক কোষে রাসায়নিক ভাবে প্রস্তুতকৃত ক্রোমোজম প্রতিস্থাপন করতে আমাদের বেশ কিছু বাধা পেরোতে হয়েছে। আমাদের ইস্ট থেকে অক্ষত অবস্থায় ক্রোমোজম বের করার পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হয়েছে। আমাদের শিখতে হয়েছে কিভাবে এই ক্রোমোজমকে কোনো গ্রাহক ব্যাকটেরিয়ার কোষে প্রতিস্থাপন করতে হয় যেন ব্যাকটেরিয়াটি শুধুমাত্র এই কৃত্রিম জিন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেহেতু M.Genitaliumএর বৃদ্ধির হার খুবই ধীর সেহেতু আমরা দুইটি দ্রুত বর্ধনশীল মাইকোপ্লাজমা mycoides subspecies capri (GM12) কে দাতা এবং capricolum subspecies capricolum(CK) কে গ্রাহক হিসেবে ব্যবহার করেছি।

ইস্টের অভ্যন্তর থেকে কৃত্রিম ভাবে প্রস্তুতকৃত জিনোম বের করে আনার পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে গিয়ে আমরা সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজমকে সেন্ট্রোমেট্রিক প্লাজমিড হিসাবে একটি অন্তস্থ M. mycoidesজিনোম সহ ক্লোন করার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছি। অবশ্য, আমাদের ইস্ট থেকে M. mycoidesজিনোম আহরণ করে সেটা M. capricolumএ প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। আমরা লক্ষ্যকরি যে দাতা ও গ্রহীতা মাইকোপ্লাজমসমূহের একটি সাধারণ রেস্ট্রিকশন সিস্টেম রয়েছে। দাতা জিনোমকে M. capricolumকোষের মধ্যে মিথিলেটেড করে আমরা পুনর্স্থাপন প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভুত রেস্ট্রিকশন থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হই। অবশ্য, ইস্টের মধ্যে প্রস্তুতকৃত ব্যাকটেরিয়াল জিনোমসমূহ আনমিথিলেটেড, তাই এটি রেস্ট্রিকশন সিস্টেম থেকে অরক্ষিত। আমরা দাতা ডিএনএকে পরিশুদ্ধ মিথাইলেজ বা অপোরিশোধিত M. mycoidesবাM. capricolumনির্জাসে মিথিলেটেড করে অথবা শুধু গ্রাহক কোষের রেস্ট্রিকশন সিস্টেমকে বিঘ্নিত করে এই রেস্ট্রিকশন ব্যারিয়ার অতিক্রম করতে সক্ষম হই(8)।

এভাবে আমরা আমাদের পুর্বগঠিত সকল গঠন প্রনালী একত্রিত করতে সক্ষম হই এবং সংশ্লেষণ, সন্নিবেশ, ক্লোনিং এবং সফল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে 1.08-Mbp M. mycoides JCVI-syn1.0 জিনোম সহ কোষ সৃষ্টিতে সক্ষম হই যেটি কেবল মাত্র এই কৃত্রিম জিনোম দ্বারা পরিচালিত।

 

রেজাল্ট-

[পোস্টের পাঠযোগ্যতা রক্ষার উদ্দেশ্যে টেকনিক্যাল সেকশনের অনুবাদ এখানে দেওয়া হলো না]

synthetic Gene

 

আলোচনা-

১৯৯৫ সালের মানদন্ড অনুযায়ী জিন সিকুয়েন্স নির্ণয়ের গ্রহনযোগ্য ভুলের হার ছিলো প্রতি ১০০০০ বেস পেয়ার (bp) তে একটি এবং এরকম একটা অনুজীবের জিনোম সিকুয়েন্স নির্ণয় করতে মাসের পর মাস লাগতো। এখন এ প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা বেড়েছে বহুগুনে। জিনোমের ৩০-৫০X ব্যপ্তি অস্বাভাবিক নয় এবং দুয়েক দিনের মধ্যেই জিন সিকোয়েন্স নির্ণয় করা সম্ভব। অবশ্য গ্রাহক কোষে জিনোম প্রতিস্থাপন করে একটি নতুন কোষ সৃষ্টি করা, যেটি শুধুমাত্র সেই কৃত্রিম জিনোম দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে, এরকম নির্ভুল জিন সিকোয়েন্স নির্ণয় করতে অনেকগুলো মান নিয়ন্ত্রন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যেমন আমাদের সাফল্য অনেক সপ্তাহের জন্য বিঘ্নিত হয়েছিল একটি অপরিহার্য জিনের ডিএনএতে শুধু মাত্র একটি বেস পেয়ার বাদ পড়ে যাওয়ায়। একটি অপরিহার্য জিনের এক মিলিয়ন বেস পেয়ারের মধ্যে মাত্র একটি বাদ পড়াতেই পুরো জিনোমটিই অকার্যকর হয়ে পড়ে, যেখানে ‘অপরিহার্য নয়’জিনোমের এমন অংশে প্রচুর অনুপ্রবেশ ঘটানো(ইনসারশন), মোচন (ডিলিশন) স্বত্তেও জিনোমটির টিকে থাকতে কোনো সমস্যা হয়নি।

আমাদের সংশ্লেষিত কৃত্রিম জিনোমের ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে  M. mycoidesএর বৈশিষ্ট্য সহ কোষের উদ্ভব হওয়া থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে- যে ডিএনএ সিকুয়েন্সের উপর ভিত্তি করে এই কোষের সৃষ্টি তা একটি জীবন্ত কোষের যথাযথ বৈশিষ্ট্যসমূহ যথেষ্ট নির্ভুল ভাবে ধারণ করতে সক্ষম।

আমাদের এই কৃত্রিম জিনোম সংশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে প্রচলিত জিনোম ইঞ্জিনিয়ারিংএর প্রাকৃতিক জিনোম কে বিভিন্ন সন্নিবেশন (ইনসারশন) প্রতিস্থাপন (সাবস্টিটিউশন) ও মোচন (ডিলিশন) মাধ্যমে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে (18-22)। আমাদের এই গবেষণায় এই নীতিটি প্রমাণিত হয় যে, কম্পিউটারে ডিজাইন করা জিনোম সিকুয়েন্সের সাহায্যে জীবন্ত কোষ প্রস্তুত করা সম্ভব। কোষীয় জিনোমের ডিএনএ সিকুয়েন্সিং এর সাহায্যে ডিজিটাল ফাইল আকারে জেনেটিক ইন্সট্রাকশন চিরকালের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। এই নিবন্ধে বর্ণিত কৃত্রিম জিনোমের সাথে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত M. mycoidesজিনোমের সীমিত পার্থক্য রয়েছে। অবশ্য যে পদ্ধতিসমূহ আমরা উদ্ভাবন করেছি তা ব্যবহার করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর উন্নয়নের সাথে সাথে নবতর জিনের সংশ্লেষণ ও প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে(23)।

রাসায়নিক ভাবে সংশ্লেষিত ডিএনএ খণ্ডসমূহ একত্রিত করে সৃষ্ট জিনোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোষকে আমরা বলছি ‘কৃত্রিম কোষ’যদিও এই গ্রাহক কোষের সাইটো প্লাজম কৃত্রিম নয়। সময়ের সাথে সাথে গ্রাহক কোষের সাইটোপ্লাজমে পূর্ব থেকে অবস্থিত প্রোটিন সমূহের ফেনোটাইপিক ইফেক্ট ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে কারণ নতুন কৃত্রিম জিনোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সময় নতুন করে সৃষ্ট প্রোটিন সমূহ কৃত্রিম নকশা অনুযায়ি সৃষ্টি হয়। আবার কৃত্রিম জিনোম ধারণকারী কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন কোষে আদি সাইটো প্লাজমে অবস্থিত প্রোটিন অনুর প্রভাব কমে যায়। এভাবে বিভাজনের সাথে সাথে তা কমতেই থাকে। জিনোম প্রতিস্থাপনের পরে বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট কলোনীতে (যেখানে >৩০ বিভাজন বা >১০গুন লঘুকরণ হয়েছে) সৃষ্ট নতুন কোষ সমূহে আদি গ্রাহক কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কোনো প্রটিন অনুই উপস্থিত থাকে না। পুর্বের একটি গবেষণায় আমরা যখন প্রথম জিনোম প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করি তখনই এই ঘটনা প্রদর্শিত হয়। কৃত্রিম ভাবে বানানো জিনোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই নতুন কোষের বৈশষ্ট্যসমূহ এমন যেন পুরো কোষটিই কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে (ডিএনএ সফটওয়্যার সফল ভাবে নিজের জন্য হার্ডওয়্যার তৈরি করে নিয়েছে)।

কৃত্রিম কোষ তৈরি করার ক্ষমতা অর্জনের সাথে সাথে এই নতুন সৃষ্ট কোষের ডিএনএ সমূহকে প্রাকৃতিক কোষে প্রাপ্ত ডিএনএ থেকে পৃথক করার জন্য গবেষকরা এসব ডিএনএতে ‘জলছাপ’দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। আমরা আমাদের এই গবেষণায় এবং পূর্বের গবেষণা সমূহে সৃষ্ট কৃত্রিম ক্রোমোজোমে জলছাপ প্রয়োগ করেছি।

এই পদ্ধতিসমূহকে যদি সাধারণীকরণ (জেনারালাইজ) করা যায় তাহলে, নকশা তৈরি, সংশ্লেষণ, সন্নিবেশ, এবং কৃত্রিম ক্রোমোজমের প্রতিস্থাপন সংশ্লেষণী জীববিজ্ঞানের উন্নয়নে বাধা হিসাবে থাকবে না। আমাদের প্রত্যাশা ডিএনএ সংশ্লেষণের খরচ পূর্বে উদ্ভাবিত ডিএনএ সিকুয়েন্সিংএর খরচের মত সূচকীয় হারে কমতে থাকবে। সংশ্লেষণের নিম্ন খরচ এবং যথেষ্ট পরিমান সয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা কৃত্রিম জিনোমিক্সের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত করবে।

এই গবেষণার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আমরা কৃত্রিম জীবন সৃষ্টির বিষয়ে নৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কৃত্রিম জিনোমিক্সের ব্যবহারিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে আমরা বহুবিধ দার্শনিক, সামাজিক এবং নৈতিক প্রশ্নের সম্মুখিন হব। এধরণের চলমান আলোচনাকে তাই আমরা উৎসাহিত করি।

 


মূল গবেষণাপত্রের লিঙ্ক

 

 

 

 


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

থ্যাঙ্কু। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

স্বাধীন এর ছবি

এত বড় বৈপ্লবিক আবিষ্কার অথচ সচলে কোন লেখা থাকবে না তা কি হয়? এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

স্পর্শ এর ছবি

আসলে খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো 'খুশিতে কিছু একটা করি'। শেষমেশ এই অনুবাদেই হাত দিলাম। আপনাকেও ধন্যবাদ। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অসাধারণ একটা কাজ কেরেছন। জীবেনর েডিফিনশান িনেয় মানুষ আবার ভাবুক। আপনােক অেনক ধন্যবাদ।

স্পর্শ এর ছবি

একটু কষ্টকর ছিলো। তবে এরকম একটা কাজের সামনে দাঁড়িয়ে অনুবাদ কর্মকে 'অসাধারণ' বললে... ইয়ে মানে... ইয়ে, মানে...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আমি এইসব ব্যাপারে রীতিমত নেশাগ্রস্থ!

দারুন!.
--------------------------------------------------------

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

স্পর্শ এর ছবি

ঠিকাসে হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

গৌতম এর ছবি

যদিও ব্যক্তিগত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু কিছু জায়গা বুঝতে পারি নি, কিন্তু অনুবাদ করে দারুণ একটি কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্পর্শ এর ছবি

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। হাসি নিচে কিংকং এর প্রশ্নের জবাবে নিজের 'বোঝাশোনা' অনুযায়ি কিছু বলার চেষ্টা করেছি। নজর বুলিয়ে দেখতে পারেন কিছু কিছু বোঝা যায় কিনা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

দ্রোহী এর ছবি

চলুকচলুকচলুকচলুকচলুক

লীন এর ছবি

ঠিকাছে চলুক
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

একটা নাইভ প্রশ্ন করি ...

আমার কাছে একটা ব্যপার একটু অস্পষ্ট ... প্রসেসটা পড়ে যেটুকু বুঝলাম [খুব বেশি যে বুঝছি তাও না], এখানে কৃত্রিমভাবে একটা ক্রোমোজোম তৈরি করে সেটা একটা পোষক কোষের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে ...

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পোষক কোষটা তো আগে থেকেই জীবিত, এ প্রক্রিয়ায় পোষক কোষকে সম্ভবত নতুন বৈষিষ্ট্য দেয়া হচ্ছে, বা এক প্রকার কোষ থেকে অন্য নতুন প্রজাতির কোষে পরিণত করা হচ্ছে; কিন্তু নতুন প্রাণ সৃষ্টি হচ্ছে তা কি বলা যায়?

................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

স্পর্শ এর ছবি

মূল গবেষণাপত্র থেকে

আমাদের এই কৃত্রিম জিনোম সংশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে প্রচলিত জিনোম ইঞ্জিনিয়ারিংএর প্রাকৃতিক জিনোম কে বিভিন্ন সন্নিবেশন (ইনসারশন) প্রতিস্থাপন (সাবস্টিটিউশন) ও মোচন (ডিলিশন) মাধ্যমে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে (18-22)

কেন কৃত্রিম জীবন?

অল্প স্বল্প পড়াশুনা থেকে যেটুকু বুঝেছি সে আলোকে আমিও নাইভলি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। (যেহেতু আমি নিজেও বিশেষজ্ঞ নই)

কোনো কোষের ক্রোমোজমে নিজের ইচ্ছা মত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটাকে বিবিধ কাজে ব্যবহার করার টেকনলজিটা মানুষ রপ্ত করেছে সেই ১৯৮০ সালেই। মানব ইনসুলিন প্রস্তুত করা হয়েছিলো ই কলাই আর ইস্ট ব্যবহার করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে।

তার মানে অন্য কোষের ক্রোমোজমে আরেকটা ক্রোমোজমের অংশ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া টাইপ ব্যাপার প্রচলিত অনেক আগে থেকেই। তাহলে এখন কার এই ‘কৃত্রিম জীবন’ সৃষ্টি বলতে আসলে কী বুঝাচ্ছি? নিশ্চই নতুন কিছু করা হয়েছে। সেটা কী?

১. যেহেতু ডিএনএ A-T, C-G নামক বেজ পেয়ার এর একটা অতি বৃহৎ বিন্যাস। এটাকে একটা কম্পিউটার স্ট্রিং আকারে সেভ করে রাখা যায়।
২. এঈ গবেষকরা এই স্ট্রিং থেকে দুবোতল বেস পেয়ার এর তরল ব্যবহার করে নতুন ডিএনএ (আসলে পুরো কার্যকর ক্রোমোজম) সৃষ্টি করতে পেরেছে।
৩. ক্রোমোজমেই সব কিছু লেখা থাকে।

এ পর্যায়ে আমি স্থুল উদাহরণের সাহায্য নিব।

ধরেন পৃথিবীতে সাপ নেই। কিন্তু ব্যাং ও অন্য অনেক প্রাণী আছে। আমরা জানলাম যে কোনটা কোন প্রাণী তা সেই প্রাণীর ক্রোমোজমে লেখা থাকে। শুধু লেখা থেকেই ক্ষান্ত হয় না বরং সেই ‘লেখা নকশা’ অনুযায়ীই পুরো প্রাণিটি গঠিত হয়। কোনো ভাবে আমি সেই লেখা পাঠোদ্ধার করে আমার কম্পিউটারে সেভ করে ফেললাম। তারপর ইচ্ছামত পরিবর্তন। বা সেই ‘ভাষায়’ আমি ইচ্ছামত আরেকটি বর্ণনা লিখলাম। যে বর্ণনাটা একটা নতুন প্রাণির ধরেন 'সাপ'। এখন সেই বর্ণনা অনুযায়ী আমি নতুন এবং কৃত্রিম ক্রোমোজোম তৈরি করতে সক্ষম হলাম। যা একেবারেই নতুন।

এখন কোনো একটা ব্যাং এর শরীর থেকে আমি তার ‘সব’ ক্রোমোজম বের করে নিলাম। এবং বিনিময়ে আমার তৈরি ‘সাপ’ এর ক্রোমোজম ভরে দিলাম। এবং দেখলাম ব্যাং টি বেঁচে উঠেছে ও বংশ বিস্তার করছে। এই ব্যাং এর বডিতে উপস্থিত ‘প্রোটিন’ সব তার আগেকার ‘ব্যাং’ ক্রোমোজম কর্তৃক তৈরি। তাই এই ব্যাং এর হাত পা আছে। কিন্তু এই ব্যাং এখন যখন বংশ বিস্থার করবে। (আমাদের ক্ষেত্রে জাস্ট সেল ডিভিশনের মত একটা ব্যাং থেকে দুইটা ব্যাং তৈরি হবে)। তখন সেই নতুন দুই বডি। তাদের সেই শুরুর বডির অর্থেক ‘অলরেডি এক্সিস্টিং প্রোটিন’ পেয়ে যাবে। যা কিনা ব্যাং প্রোটিন। কিন্তু পূর্নাঙ্গ প্রাণি হতে হলে তার আরো অনেক (সমপরিমান) নতুন প্রোটিন লাগবে। যা কিনা তৈরি হবে নতুন ‘সাপ’ ক্রোমোজমের নকশা অনুযায়ী। তার মানে নতুন ব্যাং এ অর্ধেক সাপ ও অর্ধেক ব্যাং প্রোটিন আছে। ও একটি পূর্ণাঙ্গ ‘সাপ’ ক্রোমোজম সেট আছে। এই নতুন মিশ্র প্রাণি আবার ডিভিশন হয়ে নতুন প্রাণি বানানোর সময় নতুন প্রানীতে ১/৪ অংশ থাকবে ‘ব্যাং’ ও ও ‘৩/৪’ অংশ থাকবে সাপ প্রোটিন। আমরা দেখতে পাবো আমাদের ব্যাং টি তার হাত পা হারাতে শুরু করেছে। ও তার একটি লেজ গজাতে শুরু হয়েছে। এই ব্যাং আবারো ডিভিশন হওয়ার সময় একই ভাবে তার ‘ব্যাং’ অংশ হয়ে যাবে ‘১/৮’ ও সাপ অংশ ‘৭/৮’ এভাবে মনে করেন গোটা তিরিশ ডিভিশন (এই পেপারে এই সংখ্যার কথা বলা হয়েছে)। হওয়ার পরে দেখা যাবে গানিতিক ভাবে তার ‘ব্যাং’ অংশ হয়ে যাবে ‘১/২^৩০’। (উল্লেখ্য যে তার ক্রোমোজম কিন্তু পূর্ণাঙ্গ 'সাপ'এর ক্রোমোজম) যেটা গাণিতিক ভাবে তার মধ্যে ‘কিছুটা হলেও’ ব্যাং এর উপস্থিতি প্রকাশ করলেও আমরা দেখবো। নতুন বাচ্চা গুলো পুরোপুরী একেকটা সাপ। কারণ

সেই আদি পিতার প্রোটিন সব তার কাছে থাকবে না। কোনো প্রাণি তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন্ কাজে তার প্রোটিন গুলো ক্ষয় করে ফেলে। নতুন প্রোটিন তৈরি হয় তার ক্রোমোজমে থাকা ‘ফরমায়েস’ অনুযায়ী। তাই প্রতি ধাপে ইনহেরিট করা এই অতি অল্প পরিমান ‘আদি ব্যাং’ প্রোটিনও সেই প্রাণিরা নিজের কাজেও ক্ষয় করবে। তাই তার সন্তান প্রোটিন পাবে আরো কম। এবং এক সময় সব ‘আদি প্রোটিনই’ সেই বংশধরদের কলোনি থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

তাহলে এভাবে ৩০ ধাপ পরে পাওয়া প্রাণিটির দিকে তাকিয়ে আমি দেখবো। যে সেটা একটুও ‘ব্যাং’ নয় বরং আমার ডিজাইন করা ‘সাপ’। তার রঙ আমি যদি ডিজাইনে ‘পার্পল’ দিয়ে থাকি তাইলে তাই। তার দুচোখের মাঝে ‘লেজার গান’ বসিয়ে দিলে সেটা তাইই। এই নতুন প্রাণিটি পূর্নাঙ্গ ভাবেই আমার কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে রক্ষিত ডিজিটাল সংকেতে রচিত প্রাণির ‘জীবন্ত’ রূপ। তার মানে আমি একটা নতুন ধরণের ‘জীব’ তৈরি করলাম।

তাহলে?

তাহলে আমরা একটা আদি কোষের ‘বডিতে’ আমার বানানো ক্রোমোজম প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে এই ‘তিরিশ ধাপে’ সেই আদি কোষের ‘সব কিছু’ ধুয়ে মুছে ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার পর্যন্ত এই পুরো প্রসেসটাকেই আমার ‘প্রস্তুত প্রণালী’ হিসেবে দেখতে পারি। তাহলেও আমি একটা নতুন ‘প্রাণি’ সৃষ্টি করেছি। যেটা আমার এই ‘ব্লগ’ লেখা বা অন্য কোণো প্রোগ্রাম লেখার মত করেই ‘কম্পিউটারে নিজহাতে লেখা’।

আর আসল পয়েন্টটা হলো। শুরুর ‘বডিটা’ এখানে ‘ব্যবহার’ করা হয়েছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং শর্টকাট’ হিসাবে। এবং ক্রোমোজমের মত একটা অতিব জটিল এবং কোষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যখন কৃত্রিম ভাবে সংশ্লেষণ করা গেছে কোষের বাকি উপাদানও যাবে না সেটা ভাবা বোকামি হবে। শেষ পর্যন্ত ওগুলো ক্রোমোজমের চেয়েও অনেক ‘কম বুদ্ধিমান’ কিছু রাসায়নিক উপাদান বৈ তো কিছু নয়।

বার্জেলিয়াসের 'প্রাণশক্তি' মতবাদের কথা শুনেছিলাম অর্গানিক কেমিস্ট্রি শিখতে গিয়ে। যে মতবাদ পরে ছুঁড়ে ফেলা হয়।

প্রাণ নিয়েও আমাদের কোনো ধরণের 'প্রাণশক্তি' মতবাদ ধরে রাখা যে অর্থহীন হবে সেটা ভাবার এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না।

হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

প্রসেসটা চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ধন্যবাদ ... অনেক ক্লিয়ার হইলো সিস্টেমটা ...

প্রসেসটা নিয়ে, বা প্রসেসটার গুরুত্ব কতখানি সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ নাই, কিন্তু আমি "প্রাণ সৃষ্টি করা" টার্মিনোলজিটা এইখানে ব্যবহার করা ঠিক হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে পুরাপুরি কনভিন্স হইতে পারলাম না ... আমার মনে হচ্ছে এটাকে "নতুন প্রাণি তৈরি" টাইপ কিছু বলাটা বেশি এপ্রোপ্রিয়েট হইতো; "প্রাণ তৈরি করা" আর "প্রাণি তৈরি করার" মধ্যে পার্থক্য আছে, তাই না?

চিন্তা করে দেখ, ভবিষ্যতে কখনো কোন বিজ্ঞানী কোন পোষক কোষ বা লাইভ বডির সাহায্য ছাড়াই সেল বডি, প্রোটিন, ক্রোমোজম সবকিছু কেমিক্যালি তৈরি করলেন; তারপর সেই কোষটা প্রাকৃতিক কোষের মত জীবনধারণ করা শুরু করলো ... সেই সিনারিওটা কি "প্রাণ তৈরি করা" টার্মিনোলজিটার জন্য বেশি উপযুক্ত হবে না?

................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

স্পর্শ এর ছবি

হুম, আসলে 'লাইভ'/জীবন্ত বলতে আমরা কী বুঝি সেটা নিয়েই প্রশ্ন। এই পেপারের শেষে গবেষকরাও কিন্তু বলেছে যে এ বিষয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে।

একটা বায়োলজিকাল বডি তখনই জীবিত যখন সেটা 'প্রপারলি ফাংশনাল' এবং এর কর্মকান্ড অন্য 'এক্সিস্টিং প্রাণির' মতো। (রাফলি বলছি, কারণ একটি প্রপারলি ফাংশনাল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টকে আমরা জীবন্ত বলি না)

প্রপারলি ফাংশনাল না হলে সেটাকে মৃত বলা যেতে পারে। (বডিটা হয়তো অক্ষতই আছে)

এখন ৩০ ধাপ পরে যে প্রাণিটা আমরা পাচ্ছি সেই প্রাণিটার দিকে তাকাই। মনে করেন আপনি জানেন না সেটা 'কেউ বানিয়েছে' নাকি 'ইভোলিসশনের মাধ্যমে' হয়েছে। এখন আপনি তার ক্রোমোজম অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখবেন এবং খেয়াল করবেন যার যা করার কথা সে তাই করছে। তার মানে এটা জীবিত। এবং আমি প্রমাণ করতে সক্ষম হলাম যে, আমার হার্ড ডিস্কে আমি নিজ হাতে যে 'জেনেটিক কোড' লিখেছি এই প্রাণিটি হুবহু সেই মতে তৈরি ও সেই মতে 'ফাংশনিং'।

তাহলে এটা কি আমার তৈরি করা না? এটা যদি এখন 'জীবিত' আখ্যা পায়। তাইলে এই 'জীবন' কার তৈরি করা?

তবে হ্যাঁ। কোনো বিজ্ঞানী কোষের সব উপাদানই নিজ হাতে বানিয়ে জুড়ে একটা 'প্রাণ' সৃষ্টি করলে। আমাদের কোনো 'কষ্টকর এবং কয়েক ধাপের' রিজনিং এর আশ্রয় নিতে হয় না। কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা যদি সেই কয়েকটা ধাপ নিই তাহলেই বা কী এমন ক্ষতি? এটাতো ঠিক যে কোষটা 'জীবিত' ও আমার নিজের ডিজাইন অনুযায়ীই তার সবকিছু নিয়ন্ত্রিত।

আর আমার কাছে এ গবেষণার সবচেয়ে বড় অবদান মনে হয়েছে কৃত্রিম ভাবে কোষ-জীবন-প্রাণি-কোষোপাদান সংশ্লেষণে/তৈরির 'থীয়োরেটিক্যাল লিমিট' বলে যে কিছু নেই, সেটা ভালো মত প্রদর্শিত হওয়া। তাই 'আমার মতে' সম্পূর্ণ স্ক্রাচ থেকে অন্য সব উপাদান প্রস্তুতি এখন আসলে শুধু 'সময়-শ্রমের ব্যাপার'।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

হিমু এর ছবি

আসলে ব্যাপারটা এখনও খুব খুব প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ব্যাকটিরিয়ার জিনোম অনেক সরল। ভেন্টার আর তাঁর সহকর্মীরা যে প্রশ্নটা নিয়ে কাজ করছিলেন, সেটা ছিলো এমন ... কিছু ব্যাকটিরিয়ার জিনোমে ৫০০ ভিন্ন জিন আছে, কয়েকটাতে ৬০০। তখন তাঁরা চিন্তা করলেন, একটা মিনিম্যাল জিনোম সেট কি তাহলে আছে, যেটা একটা ব্যাকটিরিয়াকে "বুট আপ" করতে পারবে? এ ক্ষেত্রে রেপ্লিকেশনকেই প্রাণের প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আমরা পছন্দমতো একটা মিনিম্যাল জিনোম সেট ব্যাকটিরিয়ার ভেতরে ঢুকিয়ে দেবো, সেটা যদি বংশবৃদ্ধি শুরু করে, তাহলে বলা যাবে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। তবে এই প্রাণ টিকতে পারবে কি না, সেটা নির্ভর করবে পরিবেশের ওপর।

এখন একটা ফাঁকা ব্যাকটিরিয়া কিন্তু মৃত, জড়বস্তু। ঠিক যেরকম ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মৃতদেহটা। ওটাতে যখন নতুন ইনস্ট্রাকশন কোড ঢোকানো হবে, তখন যদি সে নড়েচড়ে ওঠে, তাহলেই বলা যাবে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে এই ইনস্ট্রাকশন কোড কিন্তু মোটামুটি খামখেয়ালি। এটাকে একেবারে চারটা বেসিক অক্ষর জুড়ে জুড়ে বানানো হয়েছে [এই পদ্ধতির প্রায়োগিক সিলিং আছে একটা, যে কারণে ব্যাকটিরিয়াকে বেছে নেয়া হয়েছে]। এই কোডের মধ্যে এই ব্যাকটিরিয়ার ওয়েবসাইটের ঠিকানা এনকোড করে দেয়া হয়েছে, আছে তিনটা উদ্ধৃতি, একটা ইমেইল ঠিকানা। সোজা কথায়, এই ব্যাকটিরিয়ার জিনোম খসড়া খাতায় লেখা।

এমন পরিস্থিতি যদি আসে, ব্যাকটিরিয়ার ফাঁকা কোষটাও ইন্ডাস্ট্রিতে বানানো হচ্ছে, তখন হয়তো প্রাণ সৃষ্টির ব্যাপারটা কারখানায় সম্ভব হবে, প্রকৃতি থেকে কোনো কিছু ধার করতে হবে না। ভেন্টার ইতিমধ্যে একটা ফার্মা উইং খুলে ফেলেছেন।

তবে ব্যাকটিরিয়া থেকে ইউক্যারিওটিক কোষে [প্রাণীকোষ] যেতে অনেক সময় লাগবে। আইনগত বাধাও আরোপ করা হতে পারে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

রায়হান আবীর এর ছবি

লেখা আর আলোচনায় বহু কিছু জানতে পারলাম। বিশেষের ফাহিমভাইকে দেওয়া কমেন্টের জন্য জাঝা

স্পর্শ এর ছবি

থ্যাঙ্কু। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তুলিরেখা এর ছবি

দারুণ।
এনারা খুবই বড়ো কাজ করেছেন, তবে এটা বোধ হয় খুবই প্রাথমিক ধাপ। টুকরা টুকরা ডিএনে ডিজাইন করে জুড়ে সে জেনোম প্রতিস্থাপন করা ব্যাকটেরিয়ার কোষের জেনোমকে হটিয়ে দিয়ে। ও যে রেপ্লিকেট করবে তা নিশ্চয় জানা ছিলো না, নিশ্চয় অনেকগুলোকে নিয়ে ট্রায়াল দিয়েছে, কয়েকটা বেঁচেছে মানে রেপ্লিকেট করেছে।
এর পরে এই টেকনোলজি সড়গড় হয়ে গেলে ভয় হয় যদি ইচ্ছে করে ডেডলি ব্যাকটেরিয়া তৈরী করা হয় যার ভ্যাকসিন বানানো কঠিন তাহলে বায়োটেররিজম অন্য স্তরে চলে যাবে। অবশ্য এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবেই এপিডেমিক হয়, সদা পরিবর্তনশীল অণুজীবেরা চিরকালই তা করে চলেছে তবে কিনা সেক্ষেত্রে সান্ত্বনা থাকে যে প্রাকৃতিক ব্যাপার।
যাই হোক ভালো দিকটাই দেখা উচিত, ডিজাইন করা অণুজীবেরা শক্তি উৎপাদন করছে, পরিবেশ শুদ্ধ করছে, সমস্যা মিটিয়ে দিচ্ছে। সেই সুদিন আসুক।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্পর্শ এর ছবি

হ্যা প্রাথমিক তো অবশ্যই। কিন্তু যুগান্তকারী নিঃসন্দেহে। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।