ফরাসি এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা বনাম এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা। দুই।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ০৯/০৪/২০১০ - ৬:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফ-টপিকঃ নগরীতে খুন বেড়ে গেলে নগর-লেখকদের ওপর কিছু দায় বর্তায়। তাঁরা কিছু থিয়োরি কষেন। ভয়ার্ত নগরবাসী নতুন আতংকে শিহরিত হয়। রসু খাঁ। গুলশানে প্রেমিকার পিতামাতা খুন। কর্পোরেট খুনোখুনির ঘটনাকে পণ্য করে- এই সুযোগে নগর লেখকদের পরিচিতি বাড়ে। অথচ গ্রামাঞ্চলে ঘটা অজস্র খুনোখুনি এঁদের নজর এড়িয়ে যায় মুনাফা বানানোর সুযোগ থাকে না বলে। নগরকে রাষ্ট্র ধরে নেয়া এঁদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়। সমাজের অবক্ষয়। মাদকাসক্তি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। নগর-মধ্যবিত্তের মধ্যে ঢুকে থাকা ফোবিয়ার নির্যাস কাজে লাগান আগপাশতলাহীন ক্লিশে কথার মারপ্যাঁচে। মধ্যবিত্তের ভয় বুদবুদ হয়। নগরে আবার নতুন খুনের ঘটনা ঘটে। নগর-লেখক আবার কলাম ফাকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

গোল্ডেন পাম জয়ী অস্ট্রিয়ান চিত্রনির্মাতা মাইকেল হানেকা ‘ফানি গেমস্’ দুইবার বানিয়েছেন। ২০০৮ সালে রিলিজ পাওয়া আমেরিকান ভার্সান ১৯৯৭ সালে তাঁর বানানো অস্ট্রিয়ান সিনেমা ‘ফানি গেমস্’ –এর শট-ফর-শট রিমেক। হলিউডি সিনেমার যেসব সাধারণ নিয়ম বেশিরভাগ পরিচালক মানেন, হানেকা সে জায়গায় ব্যতিক্রম দেখান। পশুদের ওপর অত্যাচার দেখানো যাবে না। শিশুদের ওপর পীড়ন দেখানো বারণ। হানেকা না মেনে দুটোই দেখান। এই সিনেমা দেখতে গিয়ে বেশিক্ষণ স্বস্তিতে থাকা যায় না। সিনেমা নিয়ে গড়ে ওঠা ঐন্দ্রজাল ভেঙ্গে দর্শকের মানসিক জগৎ উলটে দিতে চায় এক্সট্রিমিস্ট গোত্রের সিনেমা। নির্যাতনকারীদের ওপর দর্শকের ঘৃণা তীব্রতর হলে এক জায়গায় নির্যাতিত রুখে দাঁড়ায়, গুলি করে এক শয়তানকে মেরে ফেলে- এই তৃপ্তির অনুভূতি নিয়ে খেলা শুরু করেন হানেকা। ফানি রিমোট কন্ট্রোল আবির্ভূত হয়।

খুনের জন্য একটা কারণ লাগে। কারণ ছাড়া নিছক আনন্দের জন্য খুন কিছু সাইকোপ্যাথ করে থাকে। এই গোত্রের লোক পৃথিবীতে সব কালে কিছু কিছু ছিল। এদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে কিনা জানা নেই। তবে স্যাডিজম আর মেসৌকিজমের চর্চা বেড়ে গেছে। এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা নির্মাণের পেছনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়ানোর উদ্দেশ্য হয়ত পরিচালকদের থাকে না। তাঁরা সচরাচর চিন্তার মধ্যে শক থেরাপির তুফান তুলতে চান। কিন্তু বানানো ফিকশনের চেয়ে বাস্তবের ফিকশন কিছু জায়গায় আরো নির্মম। মাইকেল হানেকা ১৯৯৭ সালে সিনেমাটার অস্ট্রিয়ান ভাষ্য বানানোর শেষ পর্যায়ে রিলিজের আগে পত্রিকায় একটা খুনের ঘটনা পান। স্পেনের দুজন লোক রাস্তা থেকে তাদের মানুষকে তুলে নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে। কোন কারণ ছাড়া। পুলিশের হাতে ধরা পরার পর তারা কোন অনুশোচনা প্রকাশ করেনি। বরং কথায় কথায় তারা নীৎসে ঝাড়ছিল। ক্রিটিকেরা ‘ফানি গেমস্’-এর সাথে কুবরিকের ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ এর সাথে তুলনা করেন। হানেকার মতে কুবরিক তাঁর সিনেমায় দর্শককে ঠিকমত শক দিতে পারেননি। কুবরিক নিজেও এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরে এর গ্রহণযোগ্যতা দেখে বিরক্ত হয়েছিলেন। কুবরিক যেসব ফ্যান্টাসির মধ্যে দিয়ে কাহিনী এগিয়েছেন হানেকা সেই ভুল পথে এগোননি। নির্মমতার প্রশ্নে নিরাবেগ থেকেছেন, নির্যাতিতদের অনুভূতি দর্শকের মধ্যে সঞ্চার করতে চেয়েছেন। আর ‘ফানি গেমস্’-কে হানেকা কোন জঁরে ফেলতে চান না।

ভায়োলেন্সের চিত্রায়ন হানেকার প্রিয় বিষয়। বিশেষত কমবয়েসীদের মধ্যে এর প্রকোপ নিয়ে। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘বেনিজ ভিডিও’ একই প্রসঙ্গ নিয়ে। সিনেমা শুরু হয় একটা হোম ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে। ক্যাপটিভ বোল্ট পিস্তল দিয়ে একটা শুয়োর মারার ভিডিও স্লো মোশনে দেখছিল বেনি নামের এক কিশোর। বাবা মার অনুপস্থিতিতে বেনি এক কিশোরীকে তার বাসায় এনে সেই হত্যাকাণ্ডের ক্লিপ দেখায়।

মেয়েঃ এটা তুমি বানাইছো। পিগটার কেমন লাগতেছিল? মানে তুমি কি কাউরে চোখের সামনে মরতে দেখছ?
বেনঃ টিভিতে একবার দেখছিলাম। ধুস। সব কেচাপ আর প্লাস্টিক।

বেন একটা স্লটার পিস্তল লোড করে নিজের বুকে ঠেকিয়ে মেয়েটাকে বলে ট্রিগার টিপতে। মেয়েটা টিপে না। বেন মেয়েটাকে কাওয়ার্ড বলে। এবার মেয়েটা নিজের বুকে ঠেকিয়ে বেনকে বলে ট্রিগারে চাপ দিতে। বেনকে মেয়েটা কাপুরুষ গালি ফিরিয়ে দেয়। এবার বেন ট্রিগারে চাপ দিয়ে ফেলে।

ইডেন লেক। এই গোত্রের অন্য একটা সিনেমা। তবে পরিচালক হানেকার মতো সাইকো ড্রামার পথে না গিয়ে পরিচালক সরাসরি বডি হররের দিকে মনোযোগী ছিলেন। এখানেও সাইকোপ্যাথ হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া একদল ছাত্র-ছাত্রী। ভালো ভালো নির্মাতাদের এই দিকে ঝুঁকে পড়া অনেক সাধারণ মানের নির্মাতা পণ্য হিসেবে তরুণদের স্যাডিজম প্রবণতা ব্যবহার করছে। ফরাসি নির্মাতারা এক্সট্রিমিস্ট সিনেমার একটা ঘরানা তৈরি করে ফেলেছেন। ফ্রঁসোয়া ওজো, ব্রুনো ডুমন্ট,ক্যাথেরিন ব্রেলেট , গেসপার নোয়ি, ফিলিপ গ্র্যান্ডিক্স এই ধারায় সিনেমা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। গেসপার নোয়ির বেশিরভাগ ঘটনাক্রম বিভৎস। পাসোলিনি ‘সালো বা সডোমের ১২০ দিন’ নির্মাণ করে জার্মান নাজিদের নৃশংসতা দেখাতে চেয়েছিলেন বিশ্ববাসীকে। ভায়োলেন্সকে চরমভাবে দেখানো হয় নোয়ি’র ‘ইর্‌রিভারসিবল’, দর্শনের প্রফেসর ডুমন্টের ‘ঊনত্রিশ পাম’ সিনেমায়। প্রচণ্ড ঘৃণায় দর্শককে শিউরে ওঠানোর ব্যাপারে এঁরা সফল। ট্যাবু নিয়ে যা যা কিছু করা সম্ভব এক্সট্রিমিস্ট সিনেমায় তার দেখা মেলে। ওজো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার সিনেমায় আমি সেক্স আর ভায়োলেন্সকে দেখাতে চাই। দুর্বলদের সরিয়ে দিলে সবলদের সমাজে টিকে থাকার একটা জোর প্রবণতা আছে। তাই কিছু ট্যাবুকে প্রায়শ আক্রান্ত করি।’ কথাটা অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় না। তবে সব ট্যাবু উঠে যাওয়া আদিমতার দিকে চলে যাওয়ার নামান্তর। সিনেমায় দেখানো ভায়োলেন্সে শক না পেয়ে দর্শক শক দিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে না এই নিশ্চয়তা নেই। একটা উদাহরণ দিতে পারি। গাস ভ্যান জান্টের ‘এলিফেন্ট’ সিনেমা দেখার সতের দিন পর ষোল বছর বয়সী এক ছাত্র রেড লেক হাইস্কুল ম্যাসাকার করে। 'এলিফ্যান্ট' ২০০৩ সালের সোনা পাম জয়ী চলচ্চিত্র। পুরষ্কার দেয়ার মাধ্যমে এই সিনেমাকে প্রমোট করার কারণটা ঠিক বুঝি না। এই ঘরানার সিনেমা মানেই কানে কোন না কোন পুরষ্কার নিশ্চিত। অদ্ভুত!

হলিউডে এই জঁ'র সিনেমা বাজার করছে সত্তরের দশক থেকে। ১৯৭২ সালে বানানো ‘দা লাস্ট হাউজ অন দা ল্যাফট্’ –এর রিমেক তৈরি হয়েছে ২০০৯ সালে। ডাস্টিন হফম্যান অভিনীত ১৯৭১ সালের সিনেমা ‘স্ট্র ডগস্’ –এর রিমেক ছাড়া হবে ২০১১ সালে। ‘ফানি গেমস্’-এর সাথে কনসেপ্টে এই দুটো সিনেমার কিছু কিছু জায়গায় মিল আছে।

হানেকা বা অন্যান্য ফরাসি এক্সট্রিম ধারার পরিচালকদের সিনেমায় ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ টাইপ মেসেজ নাই। নিপীড়নকারীরা শেষ পর্যন্ত বহাল তবিয়তে থেকে যায়। দুষ্টকে দমন করার ইচ্ছাপূরণ হয় না বলে এসব সিনেমা এক্সট্রিম জঁর থেকে মুক্ত নয়। কুবরিকের ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’- এ তরুণদের অসুস্থ মানসিকতা দেখানোর পরে সমাজব্যবস্থার গলদের দিকে জোরালো চিত্র আসায় তাদের করা অপরাধ কিছু জাস্টিফিকেশনের আওতায় এসে যায়। এক্সট্রিমিস্ট নির্মাতারা সেই পথে পা মাড়ান না। কিন্তু তাও প্রশ্ন থেকে যায়। সমাজব্যবস্থায় যাবতীয় অপরাধকে শাস্তির পর্যায়ে না আনলে এই ধরণের চর্চা অনেকাংশে বেড়ে যেত। আশংকাজনক কথা হল বাংলাদেশে কি বাইরে এই ধারার চলচ্চিত্রের একটা বিশাল দর্শকশ্রেণী হচ্ছে তরুণেরা। কতোটা ফিল্ম সমঝদার হবার কারণে এসব সিনেমা সংগ্রহ করে দেখা হয় সেই ব্যাপারে সন্দেহ আছে। নিজের অচেতনের বিকৃতকামকে রসদ দিতে পারে সিনেমায় ব্যবহৃত নৃশংসতা। এসব সিনেমা ভায়োলেন্সের প্রতি সাধারণ দর্শককে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, অনাগ্রহী না করে আগ্রহী করে তুলে।

এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা মানুষের মধ্যকার অচেতন-মর্ষকামের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারলে নির্মাণের একটা সার্থকতা থাকে। নির্মাতারা নানা সাক্ষাৎকারে তাঁদের কাজের মধ্যে এই অন্তর্নিহিত মানে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাণিজ্য করার ধান্ধায় এই ট্রেন্ডকে কাজে লাগাচ্ছেন না এটা জোর গলায় বলার সুযোগ কম। জিজেকের কথা বিচার করলে সন্দেহ আরো দানা বাঁধে। ‘আমাদের বাসনা পূরণ হচ্ছে কি হচ্ছে না? এটা মূল সমস্যা না। সমস্যা হল- আমরা কিভাবে জানি আমাদের বাসনা কি? আমাদের কোন বাসনাই আর প্রকৃতিপ্রদত্ত নাই। সেগুলো মেকি হয়ে গেছে। আমরা শিখে গেছি কিভাবে কি কামনা করা লাগে। আর সিনেমা এই গোত্রে সবচে পারভার্ট শিল্প। এটা দিয়ে আপনি কি চান না শিখে কেমন করে কি চাইতে হয় সেটা শিখে যাবেন।’ তাহলে?

অফ-টপিক প্রসঙ্গে অন-টপিক কমার্শিয়াল।

ফরাসি এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা বনাম এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা। এক।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সিনেমার খুব একটা সমঝদার নই। এইসব সিনেমা খুবই বিশ্রী লাগে। লাইফে খারাপ জিনিসের কমতি নাই। সিনেমা, বই, বা এই জাতীয় ফিক্শনে তাই এমন কিছু দেখতে চাই যেটা আমার মন থেকে খারাপে ভরা দুনিয়াটাকে একটু সময়ের জন্যেও বের করে একটু রিল্যাক্সড হতে দেবে। কয়েকদিন আগে imdbতে কমেন্টে বিশাল প্রশংসা দেখে "Antichrist" নামে একটা মুভি দেখতে বসলাম। দেখে মনে হল, এইটা দেখার আগে আল্লাহয় আমাকে তুলে নিল না কেন? কি এমন পাপ করেছিলাম?! ভাল করে পরে imdbতে কমেন্ট দেখলাম, নানান রকম অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের কথা বলা, শেয়ালের মুখে "chaos reigns" কথা দিয়ে হেন বুঝান হয়েছে, শেয়ালের নিজের পেট কামড়ে ছিড়ে নিজের নাড়িভুড়ি খাওয়ানো নিয়ে তেন বুঝান হয়েছে। তারপর rottentomatoes এ গিয়ে দেখলাম মাত্র ৪৮%।

এইসব মুভির খেতা পুরি!

লেখা ভাল হয়েছে যদিও। এইসব মুভির নেগেটিভ এফেক্টটার কথাও পরিচালকদের মাথায় রাখা উচিত। "I spit on your grave" দেখেছেন? মুভিটায় চারজন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে, পরে মেয়েটা একে একে চারজনকেই খুন করে প্রতিশোধ নেয়। ধর্ষণের ভয়াবহতা বোঝাতে পুরো মুভির অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে পুরো ধর্ষণটাই দেখানো হয়। অনেকগুলো দেশে অনেকদিন নিষিদ্ধ ছিল মুভিটা। যদিও এখন অনেক সমালোচকই এটাকে ভাল বলছে, এই বছর হ্যালোউইনে রিমেক বের হবে। কিন্তু সেদিনই imdbতে আরেকটা মুভির কমেন্টে দেখলাম, সেটাকে i spit on your grave এর সাথে তুলনা করে খারাপ বলা হচ্ছে, কারণ সেটাতে "enjoyable rape-scene" নাই। কি বলব?!

===========
আশাহত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

'এন্টি-ক্রাইস্ট' দেখি নাই। লারস্‌ ভনের সিনেমার মেসেজ আমি কম বুঝি।

'আই স্পিট অন ইউর গ্রেভ' এক্সট্রিমিস্ট গোত্রের নয়। কারণ সেখানে রিভেঞ্জ দেখানো হয়। অপরাধীদের প্রতি ঘৃণা নিউট্রালাইজেসনের ব্যাপার তখন চলে আসে। এই গোত্রের সিনেমা শুধু ভাল্গার ট্যাগেই পড়ে।

আমার মতে সিনেমায় এক্সট্রিমিজমের মধ্যকার মেসেজ প্রচুর সাধারণ দর্শক ঠিকঠাক বোঝেন না। দর্শক কতোটা শক পান সেটা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। 'এলিফ্যান্ট' দেখে একজন হয়ত ম্যাসাকারে জড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে অনেকের মধ্যের অবদমিত বাসনা ঝিমিয়ে পড়ার পরিসংখ্যান জানার উপায় থাকে না।

একটা সাধারণ মানদণ্ডে বিচার করলে সমাজে চরমবাদী বেড়ে যাচ্ছে। একথা ও অস্বীকার করার উপায় নেই। এদিকে রিয়েলিটি হরর ট্যাগে ঢুকে পড়ায় সিনেমার এক্সট্রিমিজম বাণিজ্য করছে। এসব আশংকা বিবেচনা করে এই লেখা।

নাশতারান এর ছবি

কঃ
একটা এক্সট্রিমিস্ট সিনেমা সব মানুষের মধ্যকার অচেতন-মর্ষকামের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে না। একেক জনের মানসিক গড়ন একেক রকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের "অনুরণন গোলক" গল্পটা মনে পড়ে গেলো। মানুষের মর্ষকামকে অবদমন করে রাখা সভ্যতার অংশ। এই অবদমিত চেতনাকে উসকে দেয়াটা যে কোন অর্থে ঝুঁকিপূর্ণ।

ধরুন বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে আপনার চোখের সামনে মারা গেলেন কেউ। ঘটনার নৃশংসতা আর আকস্মিকতায় হতবিহ্বল আপনি। বাসায় ফিরে জ্বর, বমি। খেতে গেলেই গা গুলিয়ে ওঠা। অথচ আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী হয়তো বাসায় গিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে গল্প করবেন কীভাবে ট্রাকটা ছুটে এলো, কীভাবে ঐ লোকের ঘিলু পিচের ওপর লেপ্টে গেলো। একই ঘটনায় দুজনের মস্তিষ্ক কিন্তু দু’টো আলাদা মেসেজ নিয়ে ঘরে ফিরলো।

যারা এক্সট্রিমিস্ট মুভি বানাচ্ছেন তাঁরা আদৌ কোন বক্তব্য তুলে ধরার জন্য করছেন কীনা জানি না। হয়তোবা এটা তাঁরা ভালো পারেন বলেই করছেন। অনেকে খাচ্ছে, তাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে নিচ্ছেন এই সুযোগে।

খঃ
"নীৎসে" শুনেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম।

গঃ
"বেশী" বানানটা চোখে লাগলো। বহুদিন দেখি না। এখন বোধহয় "বেশি" লেখা হয়।
কিনা > কীনা, কিভাবে > কীভাবে
ভালো ভালো নির্মাতাদের এই দিকে ঝুঁকে পড়া(য়)

ঘঃ
"পাল্প ফিকশান" দেখে আমার হেরোইন সেবনের তীব্র বাসনা জেগেছিলো। কিন্তু রক্তারক্তির দৃশ্যগুলো দেখে খুনোখুনির ইচ্ছে জাগে নি।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

যারা এক্সট্রিমিস্ট মুভি বানাচ্ছেন তাঁরা আদৌ কোন বক্তব্য তুলে ধরার জন্য করছেন কীনা জানি না। হয়তোবা এটা তাঁরা ভালো পারেন বলেই করছেন।

আমি কিছু কিছু সাক্ষাৎকার পড়েছি। কেন এই ধারায় সিনেমা বানাচ্ছেন এই প্রসঙ্গে উনাদের কনফিউজড্‌ মনে হয়েছে।

একটা বেশি খুঁজে পেয়ে ঠিক্কর্লাম। এখন একটু বাইরে যাচ্ছি। পরে বাদবাকি বানান ঠিক্করে দিব।

সিনেমায় এক্সট্রিমিজমের প্রতি যাঁরা না বুঝে ঝুঁকে পড়ছেন তাঁদের কিছুটা সতর্ক করে দেয়ার জন্য এই লেখা, আকৃষ্ট করার জন্য নয়। লেখাটা পড়ে মেসেজ বুঝতে না পারায় কেউ অপছন্দ জানিয়েছেন। তাই নিজের ব্লগে রাখলাম।

নাশতারান এর ছবি

আমিও একটা বানান ভুল করেছি।

তাড়িয়ে > তারিয়ে

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

‘কীনা’ বলে কিছু কোথাও পেলাম না। 'কিনা' আছে সব ডিকশনারিতে।

আরো বলি, ‘কিনা’ এবং ‘কি না’-র মধ্যে পার্থক্য আছে। এই লেখার ওই বাক্যে ‘কি না’ প্রযোজ্য।

আপনার মন্তব্যে ব্যবহৃত ‘কীনা’-র স্থলেও ‘কি না’ হবে।

দুর্দান্ত এর ছবি

জানিনা কোথায় শুনেছিলাম
" we become what we fear" .

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমি এর কাছাকাছি কিছু শুনছিলাম। সোর্স জানি না।

খেকশিয়াল এর ছবি

কতোটা ফিল্ম সমঝদার হবার কারণে এসব সিনেমা সংগ্রহ করে দেখা হয় সেই ব্যাপারে সন্দেহ আছে। নিজের অচেতনের বিকৃতকামকে রসদ দিতে পারে সিনেমায় ব্যবহৃত নৃশংসতা। এসব সিনেমা ভায়োলেন্সের প্রতি সাধারণ দর্শককে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, অনাগ্রহী না করে আগ্রহী করে তুলে।

একদম ঠিক

লেখা ভাল্লাগলো।

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।