ইচ্ছেঘুড়ি (পর্ব-৫)

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি
লিখেছেন সুলতানা সাদিয়া [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৬/০১/২০১৭ - ৫:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঁচ

রন্টু ভাইকে অনি যত দেখে তত ভালো লাগে। রন্টু ভাইয়ের গিটারটা আরো বেশি ভালো লাগে। অনির ভালোলাগা আর আগ্রহের দৃষ্টি পরিমাপ করে রন্টু অনিকে ডাক দেয়,
-অতো দূরে বসেছিস কেন? কাছে আয়। ধরবি গিটার? তোকে তো বলেছি ধীরে ধীরে সব শিখিয়ে দিবো। সপ্তাহে একদিন সময় ম্যানেজ করে চলে আসলেই হবে।

এই আহবান উপেক্ষা করা খুব কঠিন। রন্টু ভাইয়ের কাছে বসে গিটারটা ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেপূরণের কাছে মায়ের বকুনি তুচ্ছ। বাসায় ফেরার তাড়া মাথায়। তবু অনি বাসায় না ফিরে স্কুল থেকে সরাসরি রন্টুর বাড়িতে এসেছে। আজমানইন পিছু ডাকছিল। কি জানি কি আ্যাডভেঞ্চার করবে। কিন্তু অনির কাছে রন্টু ভাইয়ের সঙ্গই বেশি আরাধ্য। ভেবেছে বেশিক্ষণ থাকবে না। মা চিন্তা করবে ঠিক আছে, কিন্তু মা একটু বেশিই চিন্তা করে। চিন্তা থেকেই মায়ের সব কিছুতে বারণ। অনির অত বারণ, ভালো লাগে না।

রন্টু ভাইয়ের গিটারটা স্প্যানিশ গিটার, এ্যাকোস্টিক। ভাই বলে, গুরু আজম খানের গিটার। অনির শিক্ষাগুরু ছাত্রের মতো মনোযোগের সাথে শেখাচ্ছে।
-এই দেখ এটা হলো সাউন্ড হোল, এটা ফ্রেড বোর্ড, এটা নেক, এটা ব্রিজ আর এটা হেডস্টক।

রন্টু ভাইয়ের আঙুল গিটারের শরীরের বিভিন্ন অংশে মোলায়েম পরশ বোলাতে থাকে। অনি চুপচাপ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকে। মাঝে মাঝে গিটারে সুর তুলছে রন্টু ভাই। ভাইয়ের আঙুল গিটারের ধাতব তারে সুরের কম্পনের সাথে সাথে মায়ার ঘোর তৈরি করে। অনি সেই শব্দতরঙ্গ শুনতে থাকে। শুনতে থাকে না বলে গিলতে থাকে বলা ভালো।
-শোন এই যে সামনের দিকে দেখছিস ব্রিজ, এটার কাজ হলো গিটারের তারকে সাপোর্ট দেয়া। মানে ম্যানেজ করা আর কি।
-হুম বুঝেছি।
-গিটার বাজাতে দম লাগে বুঝলি অনি। গান গাইতে যেমন লাগে। আমি প্রথম যেদিন বাজাতে বসলাম তারের ঘষায় আমার আঙুল কেটে গিয়েছিল। মা তো হাউকাউ করে বাড়ি মাথায় তুলেছিল। মায়েদের কাজই হলো হাউকাউ করা।

অনি হাসে। রন্টু ভাই সত্যিই বলেছে। রন্টুর ঘরটা সাড়ে চারতলায়। চারতলা বিল্ডিং রন্টুর বাবা আনিসুজ্জামানের। চারতলার উপরে একপাশে দুটা ঘর। একটা বাংলালিংক মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের জন্য দেয়া। আরেকটা রন্টু ভাইয়ের গানের ঘর। রন্টুর গানের জন্য অবশ্য ঘরটা করা হয়নি। রন্টুর ভাষায়, মাকে ধরে ম্যানেজ করেছে। রন্টুর মুদ্রাদোষ হলো কথায় কথায় বলে ম্যানেজ করেছি। অবশ্য রন্টু ভাইয়ের সব কিছুর ম্যানেজার তার মা আর মামা।

আট ফিট বাই আট ফিট ঘরের বাম পাশের দেয়ালে গিবসন ব্রান্ডের একোস্টিক গিটার হাতে দাঁড়ানো জন ডেনভারের পোস্টার। জর্জ হ্যারিসনেরও একটা সাদাকালো পোস্টার। সেই বিখ্যাত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গানের। ব্যান্ড সোলস, মাইলস, এল.আর.বির গ্রুপ ছবিও আছে। দেয়ালে সাঁটা পোস্টারগুলোর দিকে স্বপ্নচোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে অনি। কেমন স্টাইলিশ আর রকিং সব!

-মামা না দিলে জীবনেও গিটারটা পেতাম নারে। এটা আমার জান। তুই লেগে থাক। তোকে আমি হাতে ধরে ধরে শিখিয়ে দিবো। তুই ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে। ঠিক ম্যানেজ করে ফেলবি।
রন্টুর কথায় অনির চোখ ঝলমল করে ওঠে।
-আমার ব্যান্ডে তুইও থাকবি। ব্যান্ড করলে ইলেকট্রিক গিটার কিনবো। সে এক এলাহী কারবার বুঝলি অনি। দামটামের সব খোঁজখবর করেছি। শুধু খেয়াল রাখবি, তোর কান আর আঙুল দুইটার ভালোবাসা হতে হবে মাখামাখি। কিরে ভালোবাসার কথা শুনে লজ্জা পেলি?
অনি হাসে।
-দূর।
রন্টুও হাসে।
-আরে ভালোবাসাই তো সব ম্যানেজ করেরে।
-হুম জানি। জানো রন্টু ভাই পপস্টার এলভিস প্রিসলির একটা গিটার নিউইয়র্কে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে। আহারে সেই গিটারটা যদি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারতাম!
ইচ্ছের ছেলেমানুষিতে অনি নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। যাহ্ বাবা, রন্টু ভাই কী না কী ভাবলো!
-হ্যারে ভালো বলছিস, আমারও খুব ছুঁতে ইচ্ছে করে রে!

এই জন্যই অনির রন্টু ভাইকে এত ভালো লাগে। রন্টু ভাই আর ওর মন যেন সমান ও সমান্তরাল। পরস্পরের বোঝাপরার আনন্দ নিয়ে অনি রন্টুর সাথে গল্পে মেতে ওঠে। মায়ের কথা, বাড়ি ফেরার কথা ভুলে যায়।

(চলবে)

ইচ্ছেঘুড়ি-১
ইচ্ছেঘুড়ি-২
ইচ্ছেঘুড়ি-৩
ইচ্ছেঘুড়ি-৪


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সোহেল ইমাম এর ছবি

ইচ্ছে ঘুড়ির পর্ব গুলো আবার নিয়মিত লিখছেন দেখে ভালো লাগছে। লিখে যান, পড়ছি। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি এর ছবি

কতদূর উড়ে গেছে তোমার ঘুড়ি! ইয়ে, মানে... সময় করে সবগুলো পড়ে নেবো। আজকে টুক্কি বলে গেলাম হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমার ছিল সুনীল আকাশ বয়ঃসন্ধির ঘুড়ি
যখন খুশি যেথায় খুশি অমল ওড়া-উড়ি !

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।