নেপাল পরিস্থিতি : রাজতন্ত্রের প্রতি অনুগত আমলারাই কি তবে "গণতন্ত্র" নির্মাণ করবে?

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ০৬/০৫/২০০৯ - ৫:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নেপালের গত কয়েকদিনের ঘটনাবলী খুব খিয়াল করে অনুসরণ করছিলাম। ইতিহাস গোল নয় ঠিক, তবে হোমোজিনিয়াস ঘটনায় পরিপূর্ণ। খবরের কাটপেস্ট করতে চাই না কারণ খবরটা ইতোমধ্যেই সবাই সংবাদ মাধ্যমের কৃপায় জেনে গেছেন। তবু সংক্ষেপে জানাচ্ছি, ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল(মাওবাদী) দলের নেতা প্রচন্ড পুস্প দহল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। বিশ্বাসঘাতকের ভুমিকায় বরাবরের মতো মধ্যপন্থী ভারতপ্রেমিক বামপন্থীগণ। ঘটনা খুব সহজ। ২০০৬ সালের শান্তিচুক্তি, যার ফসল আজকের রাজতন্ত্রমুক্ত গণতান্ত্রিক নেপাল, মেনে নিতে পৌনে তিন বছর পরে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন রাজতন্ত্রের প্রতি অনুগত সেনাপ্রধান। চুক্তি অনুসারে এবং আইন অনুসারেও এই ধরণের আচরণ তিনি করতে পারেন না। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে অপসারণ করেন। কিন্তু সংসদীয় রীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধানের পক্ষ অবলম্বন করেন। কোয়ালিশন সঙ্গী মধ্যপন্থী ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল(এম-এল দেঁতো হাসি) উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। অর্থাৎ রাজতন্ত্রের প্রতি অনুগত সামরিক আমলাতন্ত্রে তাঁদের কোন আপত্তি নেই। সর্বশেষ খবর হচ্ছে মরতেদম ভারতপন্থী নেপালী কংগ্রেস ঐ "মধ্যপন্থী" কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রস্তাব করেছে নতুন সরকার গঠণ করতে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ২০০৬ সালের শান্তিচুক্তি করার কী দরকার ছিল? মাওবাদীরা যদি ডাকাতই হয় তো মরতো ডাকাতের মতো! রাজতন্ত্রের সমর্থক মহান সেনাবাহিনি তো রাজা নিয়ন্ত্রিত এবং ভারত-মার্কিন সমর্থিত মিডিয়াতে নিয়মিতভাবেই বলে যাচ্ছিলেন মাওবাদী দমনে সেনাবাহিনির বীরত্বগাঁথা। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে দমন করতে করতে ২০০৬ এ এসে সেই মহান সেনাবাহিনির হুট করে এমন কী হলো যে ডাকাতদের সাথে শান্তিচুক্তি করতে হলো? আর নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত না মানবার এখতিয়ার সেনাবাহিনি কোত্থেকে পেল? তারপরের কথা হচ্ছে তাহলে ডাকাতরা এখন কী করবে? বোকা কৃষকরা এইসব ডাকাতদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে, এখন তারা কোথায় যাবে? আবার ডাকাতি করতে যাবে? সেনাপ্রধান কি শেষবারের মতো বীরত্ব জাহির করতে কোন আন্তর্জাতিক সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন? গণতন্ত্র কি তবে রাজতান্ত্রিক আমলাতন্ত্র ছাড়া অচল?

স্পেনের গৃহযুদ্ধ মনে পড়ে? মনে পড়ে দিয়েন বিয়েন ফু?


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমার তো মনে হয়- কেটে ছেটে বাঁটে ফেলা হলো মাওবাদীদের ।
শান্তিচুক্তির আগে এরা কাঠমুণ্ডু প্রায় দখল করছিলো । শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে গিয়ে অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে, ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির যে চেইন অফ কমান্ড সেটা ও নাই, সাবেক গেরিলারা কমাণ্ডাররা সামান্য হলে ও ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে এই দুই এক বছরে ।

আমার একটা এসাম্পশন- যার যা চরিত্র তার তেমনই থেকে যাওয়া ভালো। সশস্ত্র মাওবাদীরা বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে প্রচল ধারায় ভাসলে ফলাফল তথৈবচ ।

দেখা যাক পদত্যাগের পর প্রচন্ডপুষ্প ভূমিকা ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটা ব্যাপার হলো বিপ্লবী রাজনীতির ইতিহাসে মাওবাদীরা কিন্তু নতুন একটা কৌশল অবলম্বন করেছিল। রাজতন্ত্র বিলোপের শর্টরান কর্মসূচির সাথে ভূমি সংস্কারের লং রান কর্মসূচির একটা সমন্বয়ের প্রচেষ্টা। রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে যেহেতু মাওবাদী ক্যাডারদের বাইরে জনগণের মধ্যেও একটা জনপ্রিয় মত গড়ে উঠছিল সেই সুযোগ কাজে লাগাতে শান্তিচুক্তি এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ব্যবহার একভাবে কার্যকর হয়েছে বলতে হবে। নির্বাচনের পরে রাজাকে ঘাড় ধরে প্রাসাদ থেকে বের করে দেবার পরে কিছু হিন্দু মৌলবাদী ছাড়া আর কাউকে মাতম করতে দেখা যায়নি। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মাওবাদীরা ভারতকে এবং বিশ্ববাসীকে নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন দেখাতে পেরেছে। সশস্ত্র বিপ্লবীদের পক্ষে জনসমর্থন থাকার ব্যাপারটি কিন্তু উপমহাদেশের বামপন্থী রাজনীতিতে প্রচলিত জার্গনগুলির খোলমাংস পাল্টে দেয়। চারুবাবু বা সিরাজ শিকদারদের থেকে প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি এখানেই স্বতন্ত্র।



অজ্ঞাতবাস

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"সশস্ত্র মাওবাদীরা বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামাবলী গায়ে দিয়ে প্রচল ধারায় ভাসলে ফলাফল তথৈবচ"

একমত। কেউ যদি মনে করে ভোটযুদ্ধ দিয়ে শত শত বৎসর ধরে শিকড় গেড়ে থাকা এইসব আবর্জনা উপড়ে ফেলবে, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করে। বিপ্লবকে তার নিজস্ব ধারায়ই এগিয়ে নিতে হবে।

হের চৌধুরী, আমার ভুল না হলে কোন এক পোস্টে আপনিই বিপ্লবের বিপক্ষে "বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের" প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকার কথা বলেছিলেন। কথাটা আবারো প্রমাণিত হল।

অফটপিকঃ গতকাল কার্ল মার্ক্সের ১৯১তম জন্মবার্ষিকী ছিল। এ'নিয়ে কারো কোন পোস্ট পেলাম না। এ'ব্যাপারে আমার পোস্ট দেবার সামর্থ্য নেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

"বিদ্যমান আমলাতন্ত্র" যেকোন বিচারেই বিপ্লবের দুষমন। এটা ইতিহাসে অনবরত প্রমাণিত হতেই থাকবে।

আমার কেমন যেন মনে হয় প্রচন্ড নিজেও বিষয়টা বোঝেন। তবে বিপ্লব জাস্টিফাই করতে জনসমর্থন জরুরি। শুধু জরুরি না ফরজ। প্রচন্ডের কিছু সাক্ষাতকার দেখেছি। লেখাজোখা তেমন পড়া হয় নি। তবে দীর্ঘদিনের সংগ্রামী বলেই তাঁকে আমার কাছে খুব অর্বাচিন মনে হচ্ছে না। নেপালের সাম্প্রতিক রাজনীতিকে খুব সতর্কভাবে স্টাডি করা প্রয়োজন। খুব খিয়াল কৈরা...

মার্কস নিয়ে আপনার পোস্ট দেবার সামর্থ্য থাকবে না কেন? কালকে নানান ঝামেলায় ছিলাম। শরিরটাও ভালো যাচ্ছে না তেমন। ভেবেছিলাম কেউ না কেউ দেবে। তবে না দিলেও তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। দিবস কেন্দ্রিকতা কোন ভালো কথা নয়।



অজ্ঞাতবাস

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জনসমর্থন ছাড়া বিপ্লব সোনার পাথর-বাটি। তবে জনসমর্থন মানেই ভোট নয়। আমার আপত্তিটা সেখানেই। প্রচন্দ অর্বাচীন নন, কিন্তু সস্তা বা চটজলদির রাস্তা ধরার মত লোক কিন্তু তাঁর পার্টিতেও আছে। প্রাজ্ঞ নেতৃত্বকে চাপ দিয়ে ভুল পথে নিয়ে যাবার মত শুভাকাঙ্খীরা চিরকালই পার্টিতে বিদ্যমান।

দিবসকেন্দ্রিকতা বা ব্যক্তিপূজার পক্ষপাতী আমি নই। তবে সারা বৎসরে এক-আধবারও মার্ক্সকে নিয়ে আলোচনা করব না, তাতো হয় না। জন্মবার্ষিকী একটা উপলক্ষ্য মাত্র। আলোচনাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

আমার সামর্থ্যর ব্যাপারে আমি নিজে ভালই জানি। এ'ব্যাপারে ঝোলাঝুলি করলে হাটে আমার হাড়ি ভেঙ্গে যেতে পারে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনার কথা সত্য। তবে নেপালের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিচার করলে কংগ্রেস-ইউসিপিএনএমএলের কোটা পূরন করে খুব বেশী ফাস্টফুড সমর্থক অবশিষ্ট থাকার কথা না। আমি যা বলছি সবই অনুমানের কথা। ১৯৯০ থেকে এখন পর্যন্ত নেপালে ( বোধ হয় পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই) সিপিএন-মাওবাদীই একমাত্র দল আচরণে ভন্ডামী অনেক অল্প মনে হয়েছে। তাই একটু খিয়াল করে ঘটনা অনুসরনের কথা বলছিলাম।



অজ্ঞাতবাস

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শান্তিচুক্তি কিংবা নির্বাচন জয়ের পর প্রচন্ড'র একটা প্রচন্ড হাসিমুখ ছবি দেখেছিলাম- কপালে দীর্ঘ তিলক, বাল ঠাকরের মতো হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কপালে তিলক বোধহয় নেপালী ঐতিহ্যের ব্যাপার (আমি নিশ্চিত না)। ঐ তিলক ইউসিপিএনএমএলের সাবেক প্রধানমন্ত্রীও পড়েছিলেন।



অজ্ঞাতবাস

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সম্ভবতঃ ঐতিহ্যই । বালঠাকুরদের কপালে থাকায়- মনে পড়ে যায় হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তা ঠিক।

তবে উপমাহাদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গালে একটা প্রচন্ড চটকানা হতে পারে হিন্দু প্রধান নেপালে ভারতবিরোধী কমিউনিস্ট সরকার। সেই সাথে নিওলিবারেলদের গালেও।



অজ্ঞাতবাস

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমাদের অবস্থা হয়তো এত খারাপ না, তবে খুব ভালোও না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নেপাল এখন যে স্টেজে আছে সেখান থেকে অনেক অনেক ভালো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ধারণ করতে পারে। আমরা চোখের সামনে বাংলাদেশের যেই ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি তা মোটেও এখনকার থেকে ভালো নয়। এতোই খারাপ যে ভাবতেও ভয় করে।



অজ্ঞাতবাস

রেজওয়ান এর ছবি

সমস্যার মূলে ছিল প্রায় ১৮০০০ মাও গেরিলা যারা জাতিসংঘের তত্বাবধানে আছে। মাওবাদী দলের ইচ্ছা ছিল তাদের নেপালী সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত করতে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পালে হাওয়া দেয় নেপালী কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনীতিক দল। সেনাবাহিনী এদের সাথে কিছুদিন আগে যুদ্ধ করেছে তাই তাদেরও এর বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল। সেনাবাহিনীর প্রধানের সাথে সরকারের বনিবনা হচ্ছিল না আগে থেকেই। তিনি সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মাওবাদীদের না নিয়ে বাইরে থেকে লোক নেয়া শুরু করেন।

প্রচন্ডর পদত্যাগের ১০ দিন আগে সেনাপ্রধানকে শো কজ নোটিশ দেয়ার পর একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের খবর আসে। জেনারেলরা চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মত তত্বাবধায়ক সরকার টাইপের কিছু একটা করতে।

সেনাপ্রধানকে চাকুরিচ্যুত করার পর যা হয়েছে সেটি ঘটারই কথা ছিল। ক্ষমতার চাতক পাখীরা কলকাঠী নাড়ছে পেছন থেকে।

বর্তমানে নেপালের জন্যে সত্যিই এক খারাপ সময়। এই ১৮০০০ গেরিলা যদি আবার অস্ত্র হাতে নেয় তাহলে কি হবে কল্পনা করতে পারেন?

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সেটাই হয়তো মামারা চায়। প্রচন্ড যে এই কয় মাস টিকে থাকতে পারলো সেটাই অনেক। ২০০১ এর দিকেই বোঝা যাচ্ছিল হয় মামারা নিজেরা বা জাতিসংঘ বাহিনি নামবে ...নাইলে ১৯৬২'র মতো ভারত হস্তক্ষেপ করবে। ভারত সরাসরি ঢুকতে হলে রাজতন্ত্র থাকলে সুবিধা হতো। সেই সুযোগ আপাতত আর নেই। অথচ নেপালে মামাপ্রবেশ জরুরি। আসলেই কি?

আমি ভূগোলে লেটার পাই নাই দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হুম ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।