আপনি মরে বেঁচে গেলেন, আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়ে...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৭/০৬/২০০৭ - ১২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আর ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর- অনেকটা সময়। ৩৪টা বছর। ক্রমশ মুক্তিযুদ্ধ নামের প্রসববেদনা অস্বচ্ছ হয়ে আসে- যথারীতি দেশমাকে আমরা বিস্মৃত হই। মায়ের গায়ের গন্ধ হারিয়ে যায় ফরাসী সৌরভে!

মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ নামের খেলা হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে যান খেলুড়ে।

এমনই একজন মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়লগ্নে তিনি কি ভাবছিলেন? অন্য ভুবনের আনন্দ- জানা যায়নি? সুরুজ মিয়ারা তো সেলিব্রেটি নন, যে আমরা এইসব মুখস্ত করে বসে থাকব!

আচ্ছা, ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরে এই মানুষটাই দুম করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে যখন ঝুলে পড়লেন তখনই বা কি ভাবছিলেন? এটাও কখনও জানা হবে না।

জীবনান্দ দাশের ওই মানুষটার মরিবার সাধ, আমি আজও বুঝিনি কিন্তু এই মানুষটা মরিবার কেন হলো সাধ, এটা খানিকটা বোধগম্য হয়।
সুরুজ মিয়া মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিশ্চই। দারিদ্র, দীর্ঘ রোগভোগ, টাকার অভাবে সুচিকিৎসায় ব্যর্থতা, সরকারের দেয়া মুক্তিযুদ্ধ ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া। মানুষটা রাতের পর রাত পেটের অসহনীয় ব্যথায় জবাই করা পশুর মত চিৎকার করেছেন। সুচিকিৎসা হয়নি!
সব মিলিয়ে ৩৫তম বিজয় দিবস এই মানুষটা কাছে কোন অর্থই বহন করেনি। সমস্ত জাতি যখন প্রস্থত হচ্ছিল বিজয় দিবস পালন করার জন্য- মানুষটা দুর্দান্ত অভিমানে চলে গেলেন। ভোরের মোলায়েম সূর্যটা মোটেও আকর্ষণীয় মনে হয়নি তাঁর কাছে।

প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল, তিনি যেহেতু আত্মহত্যা করেছেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর দাফন হবে না।

আমাকে যেটা বিস্মিত করেছিল, হতভম্ব করেছিল , রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর দাফন নিয়ে সংশয়ের বিষয়টি। এই সংশয় পোকাটির উৎস কোথায়- কোন নিতল থেকে উঠে আসে এমন ভাবনা। যারা এমনটা ভাবে, তাঁদের এই ভাবনার উৎস কী! অজান্তেই কোথায় যেন ভারী একটা অসঙ্গতি আছে...!

আমার কেবলি মনে হয়, খুব বড়ো একটা ফাঁক আছে কোথাও- এই ফাঁকটা বিস্তৃত হচ্ছে ক্রমশ। আমাদের দেশে ব্রেভহার্টের মতো একটা মুভি কখনই হবে না। এ দেশে সুরুজ মিয়া, ১০ বছরের বালক লালু বা অপারেশন ‘জ্যাকপট’ নিয়ে কোন ডকুমেন্টারী কখ্খনই বানানো হবে না। আমাদের মহান নাট্যনির্মাতারা জাঁক করে বলবেন, এ দেশে ভাল স্ক্রিপ্ট কোথায়! তো, চলো ভারত থেকে আমদানী করি।
খোদা না খাস্তা, কেউ বানালেও, চলবে না- ছ্যা, এইসব বস্তাপচা জিনিস আবার মানুষ দেখে!
আবারও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বানানোও হবে বড়ো অযত্নে, হেলাফেলা করে- ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা...।

আমি নিজেকেই দিয়েই একটা উদাহরণ দেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলমবাজি করার চেষ্টা করি। অথচ মতিউর রহমানকে নিয়ে মুভি বানানো হয়েছে- সিনেপ্লেক্সে চলেছে, মিলি রহমান এসেছেন, এটা কসম আমার জানা ছিল না। শোহেইল ভাই বলায় জানলাম। এই লজ্জার কথা কাকে বলি!

তো, কেন যেন মনে হচ্ছে, আমরা কি ভুল রাস্তায় হাঁটছি? আমরা কি অবলীলায় আমাদের মায়ের গায়ের গন্ধটা ভুলে যেতে চাইছি···। কে জানে, হবে হয়তো বা!
একদিন নিশ্চিত আমরা আমাদের মাকে ভুলে যাব- শেকড়বিহীন, আকাশ থেকে টুপ করে পড়া একজন মানুষ। ভার্চুয়াল বেবী!


মন্তব্য

অরূপ এর ছবি

আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য শুভর ফ্লাডিং হালাল ঘোষিত হইল
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

নজমুল আলবাব এর ছবি

শুভ একটা ফ্লাডার, যদি এইটা বন্ধ করে তাইলে ওরে পিটাইতে হবে।

ঝরাপাতা এর ছবি

আরো ফ্লাডিং করেন . . .

_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।