টিপাইমুখ বাঁধ ও আমাদের করণীয়

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৮/২০০৯ - ৬:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[লেখাটি লিখেছিলাম নিজের ব্লগে প্রকাশ করবো বলে। তারপর জাহিদের লেখার পর সেটি মন্তব্যের আকারে দিই। কিন্তু জাহিদের আরেকটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে লেখাটি আবার সকলের জন্য তুলে দিচ্ছি। সকলের সুচিন্তিত মতামত হতে যেন আমরা কিছু একটি করণীয় ঠিক করতে পারি সেটাই লেখার মূল উদ্দেশ্য।]

জাহিদের লেখাটি টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব কি কি হতে পারে তার উপর এ পর্যন্ত পড়া সকল লেখার মধ্যে সেরা। লেখাটিতে অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং একজন পানি প্রকৌশলি হিসেবে লেখকের নিজের মতামতও এসেছে। সে জন্য জাহিদকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আমার মতে লেখাটি স্টিকি করে রাখা উচিত যেন কেউ লেখাটি কোনভাবে মিস্‌ না করে। আমি নিজেও একজন পানি প্রকৌশলি এবং জাহিদের সকল বক্তব্যের সাথেই সহমত প্রকাশ করছি। আজকের লেখায় আমি আমাদের কি কি করণীয় হতে পারে সে সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত কিছু মতামত দিচ্ছি। আশা করি আমরা সকলেই যার যার মতামত গুলো তুলে ধরি যেন সেখান হতে আমরা একটি গাইডলাইন দাঁড় করাতে পারি। আমরা আমাদের সেই স্বীদ্ধান্তগুলো আমাদের সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠাতে পারি।

বাঁধ বা ব্যারাজ এর ফলে কি হবে তা আমাদের সংসদীয় কমিটি অল্প বিস্তর জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। IWM এর অপ্রকাশিত রিপোর্ট করা হয়েছে সরকারের নির্দেশে এবং সেটার রিপোর্ট একমাত্র সরকারের কাছেই আছে। তাছাড়া সংসদীয় কমিটিতে মনোয়ার স্যার আছেন যিনি নিজে একজন morphology বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়া আরো অনেক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য এর মাঝেই বেশ কিছু পত্রিকায় এসেছে। সুতরাং বাঁধের প্রভাব আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কি হবে তা তাঁরা জানেন। তারপরও জাহিদের লেখার কপি আমরা তাঁদের কাছে পাঠাতে পারি। সে ক্ষেত্রে জাহিদকে বলবো লেখাটিকে পরিমার্জিত করে দশ পাতার মধ্যে নিয়ে এসে মূল কথাগুলো তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন বানাতে।

কথা হল সমাধাণ বিশেষজ্ঞদের হাতে খুব বেশি নয়। সমাধাণ রাজনীতিবিদ বা দেশের নেতৃত্বের হাতে। তাঁরা যদি দেশের পরিণাম জেনেও কিছু না করতে চায় তবে আমাদের বিকল্প পথ চিন্তা করতে হবে। আমরা বরং বিকল্প গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।

আমি যদি ধাঁপে ধাঁপে চিন্তা করি –

প্রথমতঃ ইন্ডিয়ার কাছে বিদ্যুতের জন্য বা বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ বিকল্প কোন পথ আছে কিনা সেটা বের করা।

দ্বিতীয়তঃ বিদ্যুতের জন্য আমাদের কোন বিকল্প আছে কিনা সেটা জানা। বা বাঁধ যদি দেওয়াই হয় তবে আমাদের বিকল্প বা করণীয় কি হতে পারে?

তৃতীয়তঃ আন্ত নদী গুলো সম্পর্কে দু'দেশের অবস্থান। তাঁরা সেঁচ করবেই কিনা বা ব্রম্মপুত্র হতেও পানি সরাবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। মোট কথা এক সাথে সকল আন্ত নদী সম্পর্কে একটি চুক্তিতে আসা। সেই চুক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান কি হবে তা ঠিক করা। আমরা একবার বরাক নিয়ে তারপর ব্রম্মপুত্র নিয়ে আন্দোলন করবো, এভাবে বারবার সময় নষ্ট করতে পারি না।

চতুর্থতঃ ইন্ডিয়া আমাদের কথা কেন শুনবে? ইন্ডিয়াকে কিভাবে আমাদের মতামত গ্রহন করানো / বা শুনানো যায় তার জন্য সম্ভাব্য পথ গুলো চিন্তা করা। তারপর ইন্ডিয়া যদি আমাদের কথা একদমই না মানতে চায় তবে আমাদের শেষ বিকল্প কি হতে পারে তা চিন্তা করা।

পঞ্চমতঃ আমাদের দেশের সরকার বা বিরোধী দল কি দেশের স্বার্থ দেখছে? যদি না দেখে তবে আমাদের কি করণীয়। এটা দুঃখজনক যে আমাদেরকেই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদের বুঝানোর কথা চিন্তা করতে হচ্ছে।

আর কোন পয়েন্ট প্রয়োজন মনে করলে দয়া করে জানাবেন।

প্রথম পয়েন্টের জবাবে বলতে পারি ইন্ডিয়া আমেরিকার সাথে নিউক্লিয়ার এনার্জির চুক্তি করেছে বলে পেপারে দেখেছি, যেটা জাহিদের লেখায়ও এসেছে। যদি বিদ্যুতের সমাধাণ অন্যখাত হতে পাওয়া যায় তবে শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। জাহিদের লেখায় যেটা এসেছে বাঁধ সাময়িক ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও, লং টার্মে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ বাঁধের ফলে যে অতিরিক্ত ক্ষয় হবে তা আবার ভাটিতে জমে নদীর ভূমির তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে দিবে। তখন আগে যে প্রবাহতে বন্যা হতো না, তাতেই এখন বন্যা হবে। মনে রাখতে হবে যে বন্যা অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে হয় না, হয় পানির উচ্চতার জন্য। নদীর তলদেশ উচ্চে উঠে আসার কারণে এখন অল্প প্রবাহেই পানির উচ্চতা আগের মতই হতে পারে এবং বন্যা হতে পারে। এ কারণেই এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধের কথা না বলে বলা হয় বন্যার সাথে বসবাস উপযোগী ব্যবস্থা নেওয়াই হল সবচেয়ে উত্তম। যেমন উচ্চস্থানে বাড়ি করা বা বেশি পানি উপযোগী ধান বা উচু রাস্তা এবং রাস্তার মাঝে মাঝে কালভার্ট করা যেন বন্যার পানির প্রবাহ ঠিক থাকে, নদীর তলদেশ খনন করে নদীর প্রবাহশক্তি বাড়ানো, হাওর, বিল বা পুকুর খনন করে বন্যার পানি সংরক্ষন ইত্যাদি। যেটাকে আমরা বলি non-structural measure। তবে পরিবেশের ক্ষতি কম করে বাঁধ বানানো সম্ভব বলে আমার জানা নেই। যে কারণে আজ উন্নত বিশ্বে আর কোন নতুন বাঁধ তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় না। ইউরোপ বা আমেরিকায় যত বাঁধ হয়েছে তা হয়েছে তখন যখন জলবিদ্যুত ভিন্ন অন্য কোন বিকল্প ছিল না।

দ্বিতীয় পয়েন্টের জবাবে বলতে পারি বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বিকল্প হিসেবে সচলে বেশ কিছু লেখা এসেছে। নিউক্লিয়ার এনার্জির কথা আমরাও চিন্তা করতে পারি। নিউক্লিয়ার এনার্জির প্রধান সমস্যা প্রাথমিক বিনোয়গের অর্থ এবং নিউক্লিয়ার বর্জ্য। প্রয়োজন মনে করলে আমেরিকার সাথে আমরাও চুক্তি করতে পারি নিউক্লিয়ার এনার্জির জন্য। আমাদের দেশে বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে আমাদেরকে বিকপ্ল কিছু চিন্তা করতেই হবে। সবচেয়ে খারাপ যদি হয় যে আমরা কোনভাবেই ইন্ডিয়াকে বাঁধ করা থেকে বিরত রাখতে পারছি না তবে যেন মন্দের ভাল হিসেবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমরা স্বল্প দামে বিদ্যুত কিনতে পারি তার জন্য নেগোসিয়েশন করা যেতে পারে। আমি বলেছি এটা হতে পারে একদম শেষ বিকল্প, এখানে ভারত প্রেম কিংবা আমেরিকা প্রেম আবিষ্কারের চিন্তা আমাদের আলোচনাকে শুধু ভিন্ন পথেই প্রবাহিত করবে। বাঁধ যদি দেওয়াই হয় তবে বাঁধের প্রভাব কি হবে তার জন্য পর্যাপ্ত ও নির্দিষ্ট ডাটা নিয়ে two-dimensional hydrodynamic and morphological model দিয়ে দেখতে হবে আমাদের হাওড় গুলো এবং নদী গুলোর কি হবে। IWM যে স্টাডি করেছিল তা শুধু হাইড্রোলজিকাল এবং হাইড্রোডাইনামিকাল মডেল এবং তারও তথ্য কল্পনা করে। কোন মর্ফোলজিকাল এন্যালাইসিস করা হয়নি। কিন্ত মর্ফোলজিকাল মডেল চালানো খুবই জরুরী। মর্ফোলজিকাল মডেল এর মাধ্যমে জানা যাবে নদীর কোথায় কোথায় ভাংগতে পারে আর কোথায় পলি পড়তে পারে। যদি শহরের আশে পাশে ভাঙ্গনের প্রেডিকশন থাকে তবে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য চিন্তা করতে হবে। যেখানে পলি জমবে সেখানে ড্রেজিং করতে হবে। দরকার হলে হাওর এর পানি প্রবাহের জন্য কৃত্রিম খাল খনন করা যেতে পারে। মোট কথা যদি বাঁধ দেওয়াই হয় সেটাকে মোকাবেলা করার জন্য এ ধরণের স্টাডি করতেই হবে। এবং সেটা প্রতি বছর করতে হবে যতদিন না নদী তার নতুন প্রবাহের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। এ ধরণের স্টাডি সরকার লুকিয়ে না করে IWM এবং বুয়েটের পানি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করতে পারেন। এবং স্টাডি থেকে আমাদের ক্ষয় ক্ষতির একটি আনুমানিক আর্থিক হিসেব করা প্রয়োজনীয়। যদি ইন্ডিয়াকে বাঁধ বানানো থেকে বিরত না রাখা যায় তবে সে ক্ষেত্রে এসব ক্ষতি পূরণ আদায়ের জন্য নেগোসোশিয়েন করা যেতে পারে। এই সব করণীয়র প্রশ্ন আসবে তখনই যদি ইন্ডিয়া বাঁধ বানায়ই তবে।

তৃতীয় পয়েন্টের জবাবে আন্তনদী সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান হচ্ছে আন্তঅর্জাতিক আইনে যা বলা আছে সে আলোকে দু’দেশের মধ্য সকল আন্তনদী নিয়ে চুক্তি করা বিশেষ প্রয়োজন। এবং সেটা এখন করাই সবচেয়ে উত্তম। এটা করার জন্য দু’দেশের সকল রাজনীতিবিদ দের নিয়ে করতে হবে কারণ চুক্তির মূল বিষয় থাকে সকল সরকারের সময় চুক্তির ধারাবাহিকতা। চুক্তি যেন অবশ্যই পাঁচ বা দশ বছর পর পর পর্যালোচনা করা হয় এবং তা নবায়ণ করা হয়।

চতুর্থ পয়েন্ট হল সবচেয়ে কঠিন আমার মতে। এ ব্যাপারে সকলের বাস্তব সম্মত মতামত কামনা করছি। এ ব্যাপারে আমার মতামত হল সময় এসেছে ইন্ডিয়াকে মেসেজ দেওয়া যে দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন কিছু মেনে নেওয়ার দিন ফুঁরিয়ে গেছে। প্রথমত করণীয় সকল রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, পেশাজীবি, সুর্ব সাধারণের বিরোধ ভুলে দেখানো যে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছুতে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে। আমাদের মাঝের হাসিনা বা খালেদা, বাম বা ডান এই সব বিরোধের ফায়দা লুটে বহিরাশক্তিরা। একদিকে পাকি মারে অন্যদিকে ভারত মারে। মাঝখানে নিরীহ মানুষ মরে। আমি মনে করি বহিরাশক্তি যদি দেখে যে দেশ স্বার্থ বিরোধী যে কোন কিছুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ তখন যে কোন কিছু করার আগে দু’বার ভাববে। সমস্যা হল রাজনীতিবিদদের সকলকে এক সুঁরে কথা বলাতে বাধ্য করা। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেটার জন্যই আমার পঞ্চম পয়েন্টের অবতারণা। আশা করি আরো কিছু মতামত আসবে সকলের মন্তব্য হতে। আমরা কি হার্ড লাইনে যেতে পারি কিনা সেটাও আলোচনায় আসতে পারে। মনে রাখতে হবে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সুতরাং আমরা আসলে কতটুকু করতে পারি সেটা আলোচনায় আসতে পারে। হার্ড লাইন সম্পর্কে আমার নিজের বক্তব্য হল ভাটির পনের কোটি মানুষকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলার কোন যুক্তি ইন্ডীয়ার থাকতে পারে না। এটা মানবিধাকারের চরম লঙ্ঘন। ফারাক্কার কারনে আজ দেশের একাংশ মরুভুমিতে পরিণত। এখন এই বাঁধ ও ফুলরতলের ব্যারাজের কারণে বাকি অংশও মরুভুমিতে পরিণত হবে। তারপর ব্রম্মপুত্র থেকে পানি সরালে এই পনের কোটি মানুষ এমনিতেই না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরবে। আমাদেরকে যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকাতে তারা বাধ্য করেই তবে আমাদেরও যুদ্ধ বিনা কোন গতি নেই। আমি বলছি না আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি, কিন্তু ইন্ডিয়াকে মেসেজ দেওয়া যে আমরা দেশের স্বার্থে সেটি চিন্তা করতে পিছপা হব না। এখন ইন্ডিয়ার ডিসিশন নেবার পালা তারা প্রতিবেশি দু’ই দেশের সাথে যুদ্ধে যাবার ঝুকি নিবে কি নিবে না। অনেকটা বল তাঁদের কোর্টে ঠেলে দিয়ে দেখা তারা কি করে। এই ব্যাপারে সকলের আরো সুচিন্তিত মতামত কামণা করছি। তবে হার্ড লাইনে যাবার আগে আর্ন্তজাতিক আদালতে যাবার বিকল্প আমাদের হাতে আছে, যদিও সেটা কতটুকু ফলপ্রসু হবে আমার ধারণা নেই।

সবশেষে, কিভাবে সরকারকে এবং বিরোধী দলকে এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদ বা সুশীল সমাজকে বাধ্য করা যায় জনগণের কথা শুনতে। জনগণের মেসেজটা কিভাবে সরকারের কানে প্রবেশ করা যায়। আমার মতে মিডিয়া চেষ্ট কছে, প্রতিটী ব্লগ মাধ্যম চেষ্টা করছে । বাম দল গুলো ও চেষ্টা করছে। সবাই বিচ্ছিন্ন ভাবে চিন্তা করছে এবং চেষ্টা করছে তাদের কথাগুলো বলার জন্য।

সচলের পক্ষ থেকে আমরা কি কিছু করতে পারি? আমরা যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরব হতে পারি, মুক্তিযোদ্ধার সাহায্যে এক হতে পারি, তবে দেশের এ রকম ক্রান্তি লগ্নে কিছু করার চেষ্টা করতেই পারি।

একবারেই সফলতা চলে আসবে এমন ভাবনা করিনা। কিন্তু নিজেকে তো বুঝাতে পারবো চেষ্টাতো করেছি। প্রথমত যেটা করতে পারি, এই আলোচনায় অংশগ্রহন করে নিজেদের মতামত দিতে পারি। আগামী এক মাসের বা দু’সপ্তাহের মাঝে আমরা সকলের মতামতের উপর ভিক্তি করে আমাদের দেশের কি কি করণীয় তার উপর একটি রিপোর্ট তৈরী করতে পারি। রিপোর্টে জাহিদের লেখাটির মূল বক্তব্য এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কিত বক্তব্য থাকবে। এ জন্য জাহিদকে প্রধান করে তিন বা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করতে পারি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের সুবাদে আমি জাহিদকে এ ব্যাপারে যথাসম্ভব সাহায্য করতে পারি। ইশতির যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি ইশতিকেও বলবো আমাদের সাথে থাকতে। আর কেউ আগ্রহী হলে জানাতে পারেন বা অন্য কারোর নাম প্রস্তাব করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত যেটা করতে পারি আমরা একটি দিন ঠিক করতে পারি, যে দিন বিশ্বের প্রতিটি শহরে বাজ্ঞালীরা গ্রিনিচ সময়ে এক সাথে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারি এবং সে দিন আমাদের রিপোর্টটি সংসদীয় কমিটি বা সরকারের কাছে ও সকল পত্রিকায় পৌঁছে দিতে পারি। সেটা দশ জনের হোক বা একশত জনের হোক। আমরা সবাই যার যার পক্ষ থেকে জনসংযোগ শুরু করতে পারি। আমরা সকল মিডিয়ার কাছে যেতে পারি সাহায্যের জন্য, সকল ব্লগের সাহায্য নিতে পারি। আমরা সকল রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, পেশাজীবি, সর্ব সাধারণ এর কাছে আমাদের বার্তা পৌছে দিতে পারি। দিনটি আজ থেকে এক মাস পর হলে ভাল হয়। এর মাঝে আমরা জনসংযোগ করতে পারি এবং আমাদের রিপোর্টটি প্রস্তুত করতে পারি। প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে শনি বা রোববার করতে পারি। বাংলাদেশের সকল বিভাগে বা জেলায় করতে পারি। যেখানেই সচলেরা আছেন তাঁরা দ্বায়িত্ব নিতে পারেন। এডমন্টণ শহরের দ্বায়িত্ব আমি এবং জাহিদ হাতে নিতে পারি।

আমার উদ্দেশ্য সকলের আলোচনা হতে একটি করণীয় ঠিক করা, যেটাকে আমরা সামনে রেখে এগোতে পারি। যে কোন কিছুতে নামার আগে সর্বপ্রথম লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আসুন আমরা সকলে আগে সেই লক্ষ্যটি ঠিক করি, ঠিক করি আমরা আসলে কি চাই। দ্বিতীয়টি যদি আমাদের পক্ষে আয়োজন করা সম্ভব নাও হয় ক্ষতি নেই। আমরা রিপোর্টটি তৈরি করি এবং সেই রিপোর্ট আমরা সকল পত্রিকায় ও সরকারে কাছে এক সাথে তুলে দিব। তারপর দেশের জনগণ নিজেদের ভাগ্য বেছে নিক।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

নিউক্লিয়ার এনার্জি এই অঞ্চলে খুব বিপদজনক হবে বলে আমি মনে করি। এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটা ফেইলিওর কোটি কোটি মানুষের জীবনকে মুহূর্তের মধ্যে বিপন্ন করবে। অন্য কোনো বিকল্প খুঁজতে হবে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

অঞ্চলের দোষ কি? দেশ ভেদে নিউক্লিয়ার পাওয়ারের চার্ট-এ আমাদের আশেপাশের প্রায় সবাই তা করছে - আমরাই শুধু প্লানিং পর্যায়ে থেমে গেছি. বিকল্প কিছু আছে কিনা তা জানি না - তবে আমরা যদি প্রাইমারি কস্ট এফোর্ড করতে পারি - তাহলে আর কি সমস্যা? মেইনটেইনএন্স পরের কথা - আমাদের সেই টাকা আছে তা আগের কথা.

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশের সবচে কাছে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরটা কত দূরে?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

আগের দেয়া লিঙ্কে চার্ট কি বলে?

হিমু এর ছবি

কিছুই বলে না। দেশ ধরে পাইকারি হারে ম্যাপ রং করে। গুজরাটে রিয়্যাক্টর থাকা আর ত্রিপুরায় রিয়্যাক্টর থাকা এক কথা না, কিন্তু আপনার চার্ট তো দুইটার মধ্যে তফাত করতে পারে না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

বুঝি নাই - আলাদা কথা বলছেন কেন? 'অঞ্চল' বলতে আমি দেশ মনে করেছিলাম. রিয়াক্টর রংপুরে বা রাঙামাটিতে বসানোর মধ্যে পার্থক্য কি হবে? বড় দেশের বৈচিত্র বেশি মানলাম - কিন্তু এদ্মিনিসট্রেটিভ হুজ্জত তো সেই একই হওয়ার কথা (হায়পথেটিকালি ).

হিমু এর ছবি

টিপাইমুখে রিয়্যাক্টর বসালে আপনি মানবেন?

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে ফেইলিওর হলে ইমপ্যাক্ট এরিয়া কদ্দূর হতে পারে, চিন্তা করে দেখেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

যদি ফেইলীয়রের কথা চিন্তা করেন, তাহলে সে তো যে কোনো খানেই হতে পারে - তবে আমার ধারণা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের সতর্কতা অনেক বেশি.
কাছাকাছি সময়ে এজাতীয় এক্সিদেন্তের পরিসংখ্যান পেলাম না. কেউ পেলে লিন্কটা একটু শেয়ার করবেন প্লিজ.

হিমু এর ছবি

টিপাইমুখ বাঁধ ফেইল করলে তার প্রভাব থাকতে পারে কয়েক মাস। এইবার ঐখানে একটা রিয়্যাক্টর ফেইল করলে তার প্রভাব কয় হাজার বছর থাকে, ভেবে দেখবেন। সব ফেইলিওর কি সমান? আঙুল কাটা পড়া আর মাথা কাটা পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে না?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

থুক্কু :
আমাদের সেই টাকা আছে তা আগের কথা = আমাদের সেই টাকা আছে "কিনা" তা আগের কথা.

হিমু এর ছবি

চীনের রিয়্যাক্টরগুলি কোথায়, নিচের ম্যাপে দেখেন।

আপনার চার্টটা এবার আরেকবার দেখে নেন।



auto
হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

ইন্ডিয়ারটা এইখানে দিলাম - খুব কি দুরে?
auto
সূত্র: http://www.atomicarchive.com/Reports/India/IndianFacilities_static.shtml

হিমু এর ছবি

এখানে দেখেন। দিল্লী বহুত দূর। আপনার ম্যাপে রিসার্চ রিয়্যাক্টর দেখানো আছে কয়েকটা।

auto



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সচল জাহিদ এর ছবি

আমার মনে হয় আমরা মূল প্রসংগ থেকে কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছি। স্বাধীন ভাই টিপাইমুখ নিয়ে বেশ কিছু ভাল দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, বিশেষ করে কিভাবে সাধারণ মানুষদের মাঝের এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায় সেই ব্যাপারে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই বিষয়টা নিজে আজকাল সবাই ( সংবাদপত্র, মিডিয়া, ব্লগ) একটু ঝিমিয়ে গেছে। এর দুটো অর্থ হতে পারেঃ

এক, আমরা মেনে নিচ্ছি ( এমনকি আমাদের সরকার) যে এই বাঁধ হবে অর্থাৎ এটি বাঁধা দেবার ক্ষমতা বা ইচ্ছে আমাদের সরকারের নেই।

দুই, আমরা ধরে নিচ্ছি এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য তেমন ক্ষতিকর কিছু হবেনা।

শুধু বলে রাখছি এই বাঁধ যদি হয় তাহলে এর কুফল আমরা আমাদের জীবদ্দশায়ই দেখে যাব তখন তার কিছুটা দায়ভার কিন্তু আমাদেরও নিতে হবে।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিদ্যুৎ নিয়ে লেখা এই প্রবন্ধটি বেশ বাস্তববাদী—
মোহাম্মাদ জাফর ইকবাল: বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র
(প্রকাশিতঃ প্রথম আলো, ১১ই জুন ২০০৯)

_______
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)

হিমু এর ছবি

ওনার নাম মুহম্মদ, মোহাম্মাদ নয়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধরে দেবার জন্য ধন্যবাদ। হাসি

_______
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)

বন্যরানা এর ছবি

জাহিদ ভাইয়ের থিয়োরিটিকাল লেখার পরে আপনার প্রাকটিকাল অ্যাকশন বিষয়ক বিষয়ক লেখার জন্য ধন্যবাদ।

বাঁধ যদি দেওয়াই হয় তবে আমাদের বিকল্প বা করণীয় কি হতে পারে?

'বাঁধ যদি দেওয়াই হয়' এরকম চিন্তা এখন মাথায় না ঢুকানোই বেটার, তা নাহলে আমাদের এফিসিয়েন্সি ডাইভারটেড হয়ে যাবে এবং পরাজয় মেনে নেয়ার মত টেন্ডেন্সি জন্মাবে। 'বাঁধ ঠেকানো'ই এখন একমাত্র 'প্রাকটিকাল অ্যাকশন'।

স্বাধীন এর ছবি

অবশ্যই। আমিও বলেছি যে "বাঁধ যদি দেওয়াই হয়" এটা হবে সবচেয়ে শেষ বিকল্পের কথা। কিন্তু আমাদের সবধরণের সম্ভাবনার কথাই চিন্তা রাখতে হবে যদিও প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।

'বাঁধ ঠেকানো'ই এখন একমাত্র 'প্রাকটিকাল অ্যাকশন'।

বাঁধ কিভাবে ঠেকানো যেতে পারে সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করলে আরো ভাল হত। অন্তত আলোচনার পথ শুরু হত।

গৌতম এর ছবি

টিপাইমুখ নিয়ে এখন অনেকেই উচ্চকিত, যদিও তাঁদের একটা বিরাট অংশ বিষয়টা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন। তাঁরা অপরের কাছ থেকে শুনে, কিছুটা মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এর বিরোধিতা করছেন। আমার মনে হয়, জাহিদ ভাইয়ের এই লেখাগুলোকে ই-বুক আকারে ছাড়া দরকার, যাতে ইমেইলের মাধ্যমে প্রচুর মানুষের কাছে ছড়ানো যায়। এখানে যারা আছেন, যারা টিপাইমুখ নিয়ে কাজ করছেন, তারা সবাই পরিচিত মানুষদের কাছে ইবুকটি পাঠালে অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন।

না জেনে লাফানোর চাইতে জেনে দু-একটি কথা বলাও ভালো।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্বাধীন এর ছবি

সর্ব সাধারণের কাছে লেখাটি যত বেশি করে প্রচার করা যায় ততই মঙ্গল। জাহিদ এর মধ্যেই তাঁর লেখাটি ই-বুক করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আমার মতে লেখাটি এখনও কিছুটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার অভাবে। যে কারণেই এই আলোচনার প্রয়াশ। আমি মনে করি বাঁধের প্রভাব আলোচনা ছাড়াও, সমস্যাটি সমাধাণের জন্য কিছু পথও আমাদের দেওয়া উচিত। এখানে আমি শুধু মাত্র কিছু পয়েন্টের অবতারনা করেছি। কিন্তু স্বীদ্ধান্ত সকলের আলোচনা হতে আসা উচিত, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের মাধ্যমে।

হিমু যেমন অন্তত বলেছেন যে নিউক্লিয়ার শক্তি আমাদের মত ঘনবসতি পূর্ণ এলাকার জন্য মনে হয় উপযুক্ত হবে না। জাফর ইকবাল যেমন তাঁর লেখায় নিউক্লিয়ার বর্জ নিয়ে প্রচন্ড উদ্বিগ্ন থাকা সত্বেও মনে করছেন যদি বিদ্যুতের অন্য কোন বিকল্প না থাকে তবে নিউক্লিয়ার শক্তির কথা আমাদের চিন্তা করা উচিত। হিমু নিউক্লিয়ার প্লান্ট ফেইলিয়রের রিস্ক এর কথা বলেছেন। এ ধরণের রিস্ক আছে এবং সেটা মেনেই উন্নত বিশ্বগুলো তারপরও বিদ্যুতের প্রয়োজনে তারা রিস্ক নিচ্ছে। টিপাইমুখ বাঁধের রিস্ক নিয়ে আমরা যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বাঁধের ফলে আমাদের নদী, হাওড়, পরিবেশের উপর প্রভাব নিয়ে। রিস্ক এর জন্য সেটা আমরা সমুদ্র সীমানায় করতে পারি। তবে হ্যাঁ নিউক্লিয়ার শক্তিই করতে হবে এমন কথাও তো নেই। বিদ্যুতের জন্য অন্য বিকল্প গুলো থাকলে সেগুলোর লিঙ্ক আসলে তা আমাদের জন্য ভাল হবে ই-বুকটি করার ক্ষেত্রে।

সকলের আরো অনেক মতামত প্রত্যাশা করছি। যে যেকোন জায়গা থেকে কোন ইনফরমেশন যদি মনে করেন যে এটা আমাদের কাজে লাগতে পারে তবে সেটা শেয়ার করুন। যদি আপনার নিজস্ব কোন মতামত থাকে তবে তা জানান।

সকলকে মন্তব্যে অংশগ্রহণের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।